শাহাদুজ্জামান

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম বিলাতে পাঠানো হয়েছিল ১৮৭৮ সালে, ব্যারিস্টারি পড়তে। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। তখনকার ভারতীয় অভিজাত পরিবারের অনেকেই বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে আসতেন। সে সময়ে বিলাতের নানা শহরেই ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ছড়িয়ে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন ব্রাইটন শহরে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সে বাড়ি ব্রাইটন শহরেরই প্রান্তে হোভ এলাকায়। বাড়ির নাম ছিল ‘মেডিনা ভিলা’। পাঠক হিসেবে এ তথ্য জানা ছিল আমার। এ ব্যাপারে আমার বিশেষ কৌতূহল ছিল এই কারণে, এ শহরেই আমার কর্মস্থল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়। থাকি ব্রাইটনের গা-ঘেঁষা এক শহরে। নিত্যদিন বিলাতের যে শহরে আসা-যাওয়া করি, সে শহরের যে বাড়িটাতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, তার সামনে দাঁড়াবার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু মেডিনা ভিলার খোঁজ কেউ দিতে পারে না। প্রথম বিলাতযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, তিনি যখন জানলেন ব্রাইটনের মেডিনা ভিলা নামে এক বাড়িতে থাকবেন, তখন তিনি বেশ উত্তেজিত ছিলেন এই ভেবে, এ নিশ্চয়ই গাছগাছালি, পাখপাখালি ঘেরা এক বিশাল বাড়ি হবে। কিন্তু এসে হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, সে বাড়িটা ছিল সারি বাঁধা অসংখ্য বাড়ির একটি মাত্র। এর আশপাশে গাছপালা বিশেষ ছিল না। তবে তাঁর একটাই সান্ত্বনা ছিল, বাড়িটা সমুদ্রের ধারে। এ ধরনের গায়ে গায়ে লাগোয়া বাড়ির সারিকে বিলাতে বলে ‘ট্যারেস হাউস’।
গাছগাছালি ভরা একক ভিলাও বিস্তর আছে। তবে ভারতে ধনবান হলেও বিলাতে তেমন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকার সংগতি বা ইচ্ছা হয়তো ছিল না ঠাকুর পরিবারের। আর ব্রাইটন তো সমুদ্রেরই শহর। পাথুরে সৈকতে ভ্রমণ করতে সে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ সুযোগ পেলেই চলে আসে ব্রাইটনে। বোঝা যায়, বাড়ির পাশের সমুদ্র রবীন্দ্রনাথের জন্য ছিল স্বস্তির। সেই সমুদ্রের পাড়ে আমি হাঁটি প্রায়ই, দেখি সমুদ্রের দিকে মুখ করা সারি সারি বাড়ি। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা যে সেই বিশেষ বাড়ি, সেটা জানার তো উপায় নেই।
কিন্তু ভবের লীলা বলে কথা। কাকতালীয় ঘটনা ঘটে একদিন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মীর সুবাদে ঘটনাক্রমে একদিন পরিচয় ঘটে ব্রাইটনবাসী ব্রিটিশ বাউলবিষয়ক গবেষক জান ওপেনশের (Jeanne Openshow) সঙ্গে। তাঁর নামের উচ্চারণ ঠিক কী হবে, এ নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলাম। জিজ্ঞেস করাতে চমৎকার বাংলা বলতে পারা ওই ব্রিটিশ নারী ঠাট্টা করে বললেন, ‘জান আমার নাম। প্রাণের কথা মনে থাকলে জানের কথাও মনে থাকবে।’ জান বেশির ভাগ সময়ই গবেষণার কাজে শান্তিনিকেতনের কাছে বোলপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে ব্রাইটনে আসেন তাঁর বাড়িতে। পরে দেখেছি বাউলদের ওপর Seeking Baul’s of Bengal নামে চমৎকার গবেষণামূলক বই আছে জানের। তাঁকে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমি ব্রাইটনবাসী, থাকি শান্তিনিকেতনে আর রবীন্দ্রনাথের ব্রাইটের বাড়ি নিয়ে আমার কৌতূহল থাকবে না, তা কি হয়?’ তারপর জান আমাকে জানালেন অভিযানের বিস্তারিত কাহিনি এবং আমাদের এই পরিচয় যে বেশ এক অদ্ভুত কাকতালীয় মুহূর্তে ঘটল, জানালেন সেটাও।
ঘটনা এই, আমার মতোই জান দীর্ঘদিন হোভের সেই মেডিনা ভিলা খুঁজে বেরিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিচারণায় মেডিনা ভিলা নাম লিখলেও তার কোনো সুনির্দিষ্ট ঠিকানা লেখেননি। জান এই শহরের পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটেও এই বাড়ির কোনো হদিস করতে পারেননি। হয়তো ভেঙেই ফেলা হয়েছে সেই বাড়ি। কিন্তু জান নাছোড়বান্দা। তাঁরই শহরে রবীন্দ্রনাথ দিন কাটিয়ে গেছেন অথচ রবীন্দ্রনাথের কোনো স্মৃতিচিহ্ন এই শহরে থাকবে না, সেটা তিনি মানতে পারছিলেন না। জান তখন বিকল্প পথ ধরলেন। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা গেছে, ব্যারিস্টারি পড়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁকে প্রথম ভর্তি করানো হয়েছিল ব্রাইটন প্রিপারেটরি নামে একটা স্কুলে। তিনি সেই স্কুলের সন্ধানে নামলেন। সে স্কুল এখন নেই কিন্তু স্কুলটির ইতিহাস পাওয়া গেল। জানা গেল সেই স্কুলের নির্দিষ্ট ঠিকানাও। স্কুলটি ছিল ব্রাইটন শহরের একেবারে কেন্দ্রেই, ৭ নম্বর শিপ স্ট্রিটে। সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পেলেন এখন সেটা একটা পুরোদস্তুর চার তারকা হোটেল, নাম ডু ভিন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের স্বার্থে সেই স্কুলের একটা ক্লাসরুম এবং কিছু অংশ গত শতাব্দীর মতোই অবশ্য অক্ষত রেখেছে। জান এই আবিষ্কারে যারপরনাই উত্তেজিত। হোটেল কর্তৃপক্ষকে এই তথ্য দেওয়াতে তাদের ভেতর বিশেষ কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।

কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলে কারও নাম তারা কখনো শোনেনি। এরপর শুরু হলো জানের ভিন্নতর যাত্রা। তিনি ঠিক করলেন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, এই স্কুলটিতেই তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা ফলক বসাবেন। ইউরোপের কোনো শহরে জগৎখ্যাত কোনো ব্যক্তির পদচারণা থাকলে সেখানে একটা ফলক লাগিয়ে তাঁকে স্মরণ করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু জান চাইলেই তো আর ব্যক্তিগতভাবে এমন একটা ফলক বসিয়ে দিতে পারেন না। শহরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। সে নানা জটিল প্রক্রিয়া। জান ব্রাইটন শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর এই প্রস্তাব দিতে মেয়র সাহেব টেগোর নামটিকে খানিকটা স্মরণ করতে পারলেও তার গুরুত্ব ঠিক অনুধাবন করলেন না। বলা বাহুল্য, ভারত বিষয়ে উৎসাহী কিছু মানুষের বাইরে রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রতিক ইউরোপের কোনো পরিচিত নাম নন। কিন্তু জান মেয়রকে নানা রকম তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন।
মেয়র নিজেও তখন খোঁজখবর করতে শুরু করেন। তিনি জানতে পারেন, ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী। আরও জানতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব টালমাটাল ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রীতিমতো এক তারকা ব্যক্তিত্ব। একপর্যায়ে ব্রাইটনের মেয়র নিজেই উদ্যোগী হন রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর শহরে একটা ফলক বসানোর ব্যাপারে। তিনি এর মাধ্যমে তাঁর শহরের একটা পর্যটন গুরুত্বও অনুধাবন করেন। ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে ৭ শিপ রোডের ‘ডু ভিন’ হোটেল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা টের পায় এতে করে মুহূর্তে তাদের এই সাধারণ হোটেলটি পেয়ে যাবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মেয়র ঘোষণা দেন, বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনিই এই ফলক উন্মোচন করবেন। মেয়র জানকেই অনুরোধ করেন এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব নিতে এবং জানান, তাঁকে সব রকম প্রশাসনিক এবং আর্থিক সহায়তা দেবেন। জান ব্যাপক উৎসাহে নেমে পড়েন অনুষ্ঠান আয়োজনে। আমার সঙ্গে জানের পরিচয় সেই কাকতালীয় মুহূর্তে, যখন তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ-ও জানলাম, সেই ফলক উন্মোচনের তারিখ পরের মাসেই।
পুরো বিষয়টার এই অদ্ভুত সমাপতনে আমি স্বভাবতই আনন্দিত, বিস্মিত। কিন্তু জানতাম না, আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। পরিচয়ের পরের সপ্তাহেই জানের কাছ থেকে মেইল পেলাম। জান আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে। আমার সহকর্মী মারফত এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ইতিমধ্যে আমার লেখক পরিচয়ের খোঁজ পেয়ে গেছেন জান। তিনি জানালেন, অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেবেন লন্ডনের টেগোর সেন্টারের পরিচালক ড. কল্যাণ কুণ্ডু। অনুষ্ঠানের ফলক উন্মোচন করবেন ব্রাইটনের মেয়র, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই হাইকমিশনারকে। জান বললেন, ব্রাইটনবাসী বাংলাদেশি একজন লেখক হিসেবে আমার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখা প্রাসঙ্গিক হবে। এ আমন্ত্রণকে আমি বিশেষ সম্মান হিসেবেই গ্রহণ করি এবং সাগ্রহে রাজি হই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সেই দিনটির।
অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর হয় সেই ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের দিনের নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে হাজির হই ৭ শিপ স্ট্রিটে। একটা চাপা উত্তেজনায় হোটেলের করিডর দিয়ে ধীরে ঢুকে পড়ি অক্ষত রাখা শতাব্দীপ্রাচীন সেই স্কুলের ক্লাসরুমে। আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে এই ক্লাসরুমেই বসে থাকা কিশোর রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবি। এই স্কুলে কয়েক মাস পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পড়াশোনায় বিশেষ অগ্রগতি হচ্ছিল না দেখে তাঁকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিলাত ভ্রমণে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার সবই সুখকর ছিল না। তবে এই ব্রাইটন প্রিপারেটরি স্কুল নিয়ে আনন্দের স্মৃতির কথাই লিখেছেন তিনি। লিখেছেন, এই স্কুলের ছেলেরা তাঁর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি বরং মাঝে মাঝে তাঁর কোটের পকেটে আপেল কিংবা কমলা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
ব্রিটিশ কায়দায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে, পতাকা তুলে মেয়র উন্মোচন করলেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিফলক। তারপর ব্রাইটনের সেই রাজপথে হঠাৎ যেন জমল এক মিলনমেলা। সমবেত ব্রিটিশ, ভারতীয়, বাংলাদেশি অধিকাংশই একে অন্যকে চেনেন না কিন্তু এক জায়গায় তাঁদের আত্মার মিল। তাঁরা সবাই রবীন্দ্রপ্রেমী। তাঁরা আলাপ জুড়লেন। এক বয়স্ক ব্রিটিশ নারী উৎসাহে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, তিনি আমাকে একটা জিনিস দেখাতে চান। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলেন। দেখলাম রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির অনুবাদের বহু পুরোনো একটা সংস্করণ। জানালেন, এটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ। এরপর তিনি বইটির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টে আমাকে দেখালেন কালো কালিতে উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা স্বাক্ষর। মহিলা বললেন, এই বই পারিবারিক সম্পদ হিসেবে তাঁরা সংরক্ষণ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ফাউন্টেন কলমে লেখা রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফটি একটু ম্লান হয়েছে, আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। মিলনমেলা ভাঙলে ফিরতি পথে ব্রাইটনের সমুদ্রপাড়ে হাঁটি।
গায়ে এসে লাগে সমুদ্রের হাওয়া। বিদেশ-বিভূঁইয়ের এই অচেনা সৈকতে তাঁর গানই জেগে ওঠে মনে: ‘আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাঁধন যে তার গেল খুলে/তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন্ অচেনার ধারে।।’

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম বিলাতে পাঠানো হয়েছিল ১৮৭৮ সালে, ব্যারিস্টারি পড়তে। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। তখনকার ভারতীয় অভিজাত পরিবারের অনেকেই বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে আসতেন। সে সময়ে বিলাতের নানা শহরেই ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ছড়িয়ে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন ব্রাইটন শহরে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সে বাড়ি ব্রাইটন শহরেরই প্রান্তে হোভ এলাকায়। বাড়ির নাম ছিল ‘মেডিনা ভিলা’। পাঠক হিসেবে এ তথ্য জানা ছিল আমার। এ ব্যাপারে আমার বিশেষ কৌতূহল ছিল এই কারণে, এ শহরেই আমার কর্মস্থল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়। থাকি ব্রাইটনের গা-ঘেঁষা এক শহরে। নিত্যদিন বিলাতের যে শহরে আসা-যাওয়া করি, সে শহরের যে বাড়িটাতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, তার সামনে দাঁড়াবার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু মেডিনা ভিলার খোঁজ কেউ দিতে পারে না। প্রথম বিলাতযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, তিনি যখন জানলেন ব্রাইটনের মেডিনা ভিলা নামে এক বাড়িতে থাকবেন, তখন তিনি বেশ উত্তেজিত ছিলেন এই ভেবে, এ নিশ্চয়ই গাছগাছালি, পাখপাখালি ঘেরা এক বিশাল বাড়ি হবে। কিন্তু এসে হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, সে বাড়িটা ছিল সারি বাঁধা অসংখ্য বাড়ির একটি মাত্র। এর আশপাশে গাছপালা বিশেষ ছিল না। তবে তাঁর একটাই সান্ত্বনা ছিল, বাড়িটা সমুদ্রের ধারে। এ ধরনের গায়ে গায়ে লাগোয়া বাড়ির সারিকে বিলাতে বলে ‘ট্যারেস হাউস’।
গাছগাছালি ভরা একক ভিলাও বিস্তর আছে। তবে ভারতে ধনবান হলেও বিলাতে তেমন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকার সংগতি বা ইচ্ছা হয়তো ছিল না ঠাকুর পরিবারের। আর ব্রাইটন তো সমুদ্রেরই শহর। পাথুরে সৈকতে ভ্রমণ করতে সে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ সুযোগ পেলেই চলে আসে ব্রাইটনে। বোঝা যায়, বাড়ির পাশের সমুদ্র রবীন্দ্রনাথের জন্য ছিল স্বস্তির। সেই সমুদ্রের পাড়ে আমি হাঁটি প্রায়ই, দেখি সমুদ্রের দিকে মুখ করা সারি সারি বাড়ি। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা যে সেই বিশেষ বাড়ি, সেটা জানার তো উপায় নেই।
কিন্তু ভবের লীলা বলে কথা। কাকতালীয় ঘটনা ঘটে একদিন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মীর সুবাদে ঘটনাক্রমে একদিন পরিচয় ঘটে ব্রাইটনবাসী ব্রিটিশ বাউলবিষয়ক গবেষক জান ওপেনশের (Jeanne Openshow) সঙ্গে। তাঁর নামের উচ্চারণ ঠিক কী হবে, এ নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলাম। জিজ্ঞেস করাতে চমৎকার বাংলা বলতে পারা ওই ব্রিটিশ নারী ঠাট্টা করে বললেন, ‘জান আমার নাম। প্রাণের কথা মনে থাকলে জানের কথাও মনে থাকবে।’ জান বেশির ভাগ সময়ই গবেষণার কাজে শান্তিনিকেতনের কাছে বোলপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে ব্রাইটনে আসেন তাঁর বাড়িতে। পরে দেখেছি বাউলদের ওপর Seeking Baul’s of Bengal নামে চমৎকার গবেষণামূলক বই আছে জানের। তাঁকে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমি ব্রাইটনবাসী, থাকি শান্তিনিকেতনে আর রবীন্দ্রনাথের ব্রাইটের বাড়ি নিয়ে আমার কৌতূহল থাকবে না, তা কি হয়?’ তারপর জান আমাকে জানালেন অভিযানের বিস্তারিত কাহিনি এবং আমাদের এই পরিচয় যে বেশ এক অদ্ভুত কাকতালীয় মুহূর্তে ঘটল, জানালেন সেটাও।
ঘটনা এই, আমার মতোই জান দীর্ঘদিন হোভের সেই মেডিনা ভিলা খুঁজে বেরিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিচারণায় মেডিনা ভিলা নাম লিখলেও তার কোনো সুনির্দিষ্ট ঠিকানা লেখেননি। জান এই শহরের পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটেও এই বাড়ির কোনো হদিস করতে পারেননি। হয়তো ভেঙেই ফেলা হয়েছে সেই বাড়ি। কিন্তু জান নাছোড়বান্দা। তাঁরই শহরে রবীন্দ্রনাথ দিন কাটিয়ে গেছেন অথচ রবীন্দ্রনাথের কোনো স্মৃতিচিহ্ন এই শহরে থাকবে না, সেটা তিনি মানতে পারছিলেন না। জান তখন বিকল্প পথ ধরলেন। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা গেছে, ব্যারিস্টারি পড়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁকে প্রথম ভর্তি করানো হয়েছিল ব্রাইটন প্রিপারেটরি নামে একটা স্কুলে। তিনি সেই স্কুলের সন্ধানে নামলেন। সে স্কুল এখন নেই কিন্তু স্কুলটির ইতিহাস পাওয়া গেল। জানা গেল সেই স্কুলের নির্দিষ্ট ঠিকানাও। স্কুলটি ছিল ব্রাইটন শহরের একেবারে কেন্দ্রেই, ৭ নম্বর শিপ স্ট্রিটে। সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পেলেন এখন সেটা একটা পুরোদস্তুর চার তারকা হোটেল, নাম ডু ভিন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের স্বার্থে সেই স্কুলের একটা ক্লাসরুম এবং কিছু অংশ গত শতাব্দীর মতোই অবশ্য অক্ষত রেখেছে। জান এই আবিষ্কারে যারপরনাই উত্তেজিত। হোটেল কর্তৃপক্ষকে এই তথ্য দেওয়াতে তাদের ভেতর বিশেষ কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।

কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলে কারও নাম তারা কখনো শোনেনি। এরপর শুরু হলো জানের ভিন্নতর যাত্রা। তিনি ঠিক করলেন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, এই স্কুলটিতেই তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা ফলক বসাবেন। ইউরোপের কোনো শহরে জগৎখ্যাত কোনো ব্যক্তির পদচারণা থাকলে সেখানে একটা ফলক লাগিয়ে তাঁকে স্মরণ করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু জান চাইলেই তো আর ব্যক্তিগতভাবে এমন একটা ফলক বসিয়ে দিতে পারেন না। শহরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। সে নানা জটিল প্রক্রিয়া। জান ব্রাইটন শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর এই প্রস্তাব দিতে মেয়র সাহেব টেগোর নামটিকে খানিকটা স্মরণ করতে পারলেও তার গুরুত্ব ঠিক অনুধাবন করলেন না। বলা বাহুল্য, ভারত বিষয়ে উৎসাহী কিছু মানুষের বাইরে রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রতিক ইউরোপের কোনো পরিচিত নাম নন। কিন্তু জান মেয়রকে নানা রকম তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন।
মেয়র নিজেও তখন খোঁজখবর করতে শুরু করেন। তিনি জানতে পারেন, ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী। আরও জানতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব টালমাটাল ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রীতিমতো এক তারকা ব্যক্তিত্ব। একপর্যায়ে ব্রাইটনের মেয়র নিজেই উদ্যোগী হন রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর শহরে একটা ফলক বসানোর ব্যাপারে। তিনি এর মাধ্যমে তাঁর শহরের একটা পর্যটন গুরুত্বও অনুধাবন করেন। ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে ৭ শিপ রোডের ‘ডু ভিন’ হোটেল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা টের পায় এতে করে মুহূর্তে তাদের এই সাধারণ হোটেলটি পেয়ে যাবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মেয়র ঘোষণা দেন, বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনিই এই ফলক উন্মোচন করবেন। মেয়র জানকেই অনুরোধ করেন এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব নিতে এবং জানান, তাঁকে সব রকম প্রশাসনিক এবং আর্থিক সহায়তা দেবেন। জান ব্যাপক উৎসাহে নেমে পড়েন অনুষ্ঠান আয়োজনে। আমার সঙ্গে জানের পরিচয় সেই কাকতালীয় মুহূর্তে, যখন তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ-ও জানলাম, সেই ফলক উন্মোচনের তারিখ পরের মাসেই।
পুরো বিষয়টার এই অদ্ভুত সমাপতনে আমি স্বভাবতই আনন্দিত, বিস্মিত। কিন্তু জানতাম না, আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। পরিচয়ের পরের সপ্তাহেই জানের কাছ থেকে মেইল পেলাম। জান আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে। আমার সহকর্মী মারফত এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ইতিমধ্যে আমার লেখক পরিচয়ের খোঁজ পেয়ে গেছেন জান। তিনি জানালেন, অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেবেন লন্ডনের টেগোর সেন্টারের পরিচালক ড. কল্যাণ কুণ্ডু। অনুষ্ঠানের ফলক উন্মোচন করবেন ব্রাইটনের মেয়র, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই হাইকমিশনারকে। জান বললেন, ব্রাইটনবাসী বাংলাদেশি একজন লেখক হিসেবে আমার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখা প্রাসঙ্গিক হবে। এ আমন্ত্রণকে আমি বিশেষ সম্মান হিসেবেই গ্রহণ করি এবং সাগ্রহে রাজি হই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সেই দিনটির।
অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর হয় সেই ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের দিনের নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে হাজির হই ৭ শিপ স্ট্রিটে। একটা চাপা উত্তেজনায় হোটেলের করিডর দিয়ে ধীরে ঢুকে পড়ি অক্ষত রাখা শতাব্দীপ্রাচীন সেই স্কুলের ক্লাসরুমে। আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে এই ক্লাসরুমেই বসে থাকা কিশোর রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবি। এই স্কুলে কয়েক মাস পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পড়াশোনায় বিশেষ অগ্রগতি হচ্ছিল না দেখে তাঁকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিলাত ভ্রমণে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার সবই সুখকর ছিল না। তবে এই ব্রাইটন প্রিপারেটরি স্কুল নিয়ে আনন্দের স্মৃতির কথাই লিখেছেন তিনি। লিখেছেন, এই স্কুলের ছেলেরা তাঁর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি বরং মাঝে মাঝে তাঁর কোটের পকেটে আপেল কিংবা কমলা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
ব্রিটিশ কায়দায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে, পতাকা তুলে মেয়র উন্মোচন করলেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিফলক। তারপর ব্রাইটনের সেই রাজপথে হঠাৎ যেন জমল এক মিলনমেলা। সমবেত ব্রিটিশ, ভারতীয়, বাংলাদেশি অধিকাংশই একে অন্যকে চেনেন না কিন্তু এক জায়গায় তাঁদের আত্মার মিল। তাঁরা সবাই রবীন্দ্রপ্রেমী। তাঁরা আলাপ জুড়লেন। এক বয়স্ক ব্রিটিশ নারী উৎসাহে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, তিনি আমাকে একটা জিনিস দেখাতে চান। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলেন। দেখলাম রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির অনুবাদের বহু পুরোনো একটা সংস্করণ। জানালেন, এটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ। এরপর তিনি বইটির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টে আমাকে দেখালেন কালো কালিতে উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা স্বাক্ষর। মহিলা বললেন, এই বই পারিবারিক সম্পদ হিসেবে তাঁরা সংরক্ষণ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ফাউন্টেন কলমে লেখা রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফটি একটু ম্লান হয়েছে, আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। মিলনমেলা ভাঙলে ফিরতি পথে ব্রাইটনের সমুদ্রপাড়ে হাঁটি।
গায়ে এসে লাগে সমুদ্রের হাওয়া। বিদেশ-বিভূঁইয়ের এই অচেনা সৈকতে তাঁর গানই জেগে ওঠে মনে: ‘আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাঁধন যে তার গেল খুলে/তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন্ অচেনার ধারে।।’

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫