ইমদাদুল হক মিলন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো!
১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। আমাদের সঙ্গে এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। মাওয়া হয়ে চলে যাব বরিশালে। মাওয়ার আগের গ্রামটি মেদিনীমণ্ডল। আমার জন্মের গ্রাম।
১২ বছর বয়স পর্যন্ত ওই গ্রামে নানির কাছে ছিলাম। ছেলেবেলা আচ্ছন্ন করে রাখা গ্রাম। সড়কের পাশেই আমার নানাবাড়ি। সেই বাড়ি বরাবর গাড়ি আসতেই সুনীলদাকে হাত তুলে দেখালাম, ওই যে সুনীলদা, ওটা আমার নানাবাড়ি। গ্রামের নামটাও বললাম।
আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি সুনীলদার। গ্রামের নাম শুনে বললেন, মণীন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি কোনটা?
মণীন্দ্র ঠাকুরের নাম শুনে আমি অবাক। আপনি কী করে এই নাম জানলেন?
সুনীলদা হাসলেন। তোমার একটা গল্প পড়েছিলাম। ‘জীবনযাত্রা’। সেই গল্পের মূল চরিত্র মণীন্দ্র ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িটাও দেখালাম।
বরিশালে তেমন কোনো ভালো হোটেল তখন ছিল না। তারপরও সবচেয়ে ভালো যে হোটেল, সেখানে আমাদের তোলা হলো। পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
প্রথমে বরিশালের ডিসি অফিসে গেলাম। ডিসি ভদ্রলোকের ওখানে চা খেয়ে হোটেলে। আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে তরুণ কর্মকর্তা চলে গেলেন তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই থাকবেন। সকালবেলা আমাদের নিয়ে বেরোবেন।
কাল ইলেকশন।
রুমে ঢুকে সুনীলদা একটা হাঁফ ছাড়লেন। ব্যাগ থেকে দ্রব্য বের করে নিজেই দুটো গ্লাসে ঢাললেন। এসো, শুরু করা যাক।
দ্রব্য চলার ফাঁকেই নাক ডাকার কথাটা বললেন। আমি গায়েই মাখলাম না।
মাঝারি সাইজের একটাই ভালো রুম পাওয়া গেছে হোটেলে। দুটো সিঙ্গেল বেড পাতা। একটা উত্তর-দক্ষিণে, একটা পুবে-পশ্চিমে। সুনীলদা উত্তর-দক্ষিণের বেডে বসেছেন; অর্থাৎ এই বেডেই তিনি ঘুমাবেন। অন্যটা আমার।
পানাহার শেষ করে সাড়ে ১১টার দিকে শুয়ে পড়লাম। শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে শুরু হলো সুনীলদার নাকডাকা। ক্রমে এমন অবস্থা, আমি হতভম্ব।
নেশাফেসা উধাও হয়ে গেল। একজন মানুষ শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারে, এটা এক বিস্ময় আর হচ্ছে নাকডাকা। এ রকম শব্দে নাক ডাকেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি!
রাতটা যে আমার কেমন করে কাটল!
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি, আচমকা জেগে যাই। মনে হচ্ছে সুনীলদার নাকডাকার শব্দে আমি তো বটেই, এই হোটেলের অন্যান্য রুমের লোকজনও ঘুমাতে পারছে না।
মাঝরাতের দিকে সুনীলদার নাকডাকার শব্দটা যেন আরেকটু বাড়ল। শুনে মনে হলো, শুধু এই হোটেলের না, বোধ হয় পুরো বরিশাল শহরের ঘুম ভেঙে গেছে।
সকালবেলা কথাটা বললাম সুনীলদাকে। শুনে বললেন, টর্পেডো তো বলে, আমার নাকডাকার শব্দে নাকি পুরো জাতি জেগে যায়।
টর্পেডো মানে তারাপদ রায়। তারাপদ রায়ের টর্পেডো নামটা দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
আমরা তারপর নির্বাচন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, দেখতে বেরিয়েছিলাম। গাবখান নামের ছোট্ট এক নদীর এপারে আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা। একটা চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চে আমু সাহেব মাঝখানে, সুনীলদা আর আমি দুপাশে। চা খেতে খেতে কথা হলো। দুয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে দেখার পরেই সুনীলদা বললেন, অনেক হয়েছে। চলো, এবার ধানসিঁড়ি নদীটা দেখে আসি।
নদীর প্রতি আশ্চর্য এক টান ছিল সুনীলদার। তাঁর কবিতায় আছে, ‘নদীটির স্বাস্থ্য ছিল ভালো/হঠাৎ বনের পাশে সে আমাকে/ একটুখানি চমকে দেয়’।
বন-পাহাড় আর পৃথিবী চষে বেড়ানো মানুষ সুনীলদা। একবার এক পাহাড়ি নদী দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়েছিলেন, সেই নদীতে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে তাঁর মনে হয়েছিল তিনি যেন রমণসুখ অনুভব করছেন।
ধানসিঁড়ি জীবনানন্দের নদী। বরিশালে এসে এই নদী না দেখে তিনি কি পারেন?
আশ্চর্য ব্যাপার। ধানসিঁড়ির সন্ধান কেউ আমাদের দিতে পারছিল না। এলাকার কেউ নদীটা চেনেই না।
শেষ পর্যন্ত এক যুবক ধানসিঁড়ির কাছে নিয়ে এল আমাদের। দুটো বসতবাড়ির মাঝখান দিয়ে নদীতীরে এলাম আমরা। সেখানে পুরোনো পাকা ঘাটলা। একটা ছইঅলা নৌকা বাঁধা আছে। খালি গায়ের মাঝি উদাস ভঙ্গিতে বসে বিড়ি টানছে। হাফপ্যান্ট পরা একটি কিশোর ছেলে আছে সঙ্গে। রোগা পটকা, রোদে পোড়া শরীর। ছেলেটিকে দেখে আমার মনে পড়ল সুনীলদার কবিতার লাইন,
‘নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম
ভুবনডাঙার মাঠ!’
সেই নৌকা ভাড়া করে আমরা ধানসিঁড়ি দেখতে বেরোলাম। খালের মতো চিরল নদী। এপারে মানুষের বসতি, ওপারে বাবলাগাছের বন। মাঝিটি গ্রাম্য কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে নদী দেখছি, বাবলাগাছগুলো দেখিয়ে সে বলল, খুব গরম গাছ।
গাছ কী করে গরম হয় বুঝতে পারলাম না। দুজনেই তাকালাম তার মুখের দিকে।
বিড়ি খাওয়া কালো ঠোঁট মেলে হাসল মাঝি। রাইত-বিরাইতে এই দিকটায় চলাফিরা ঠিক না আরকি!
বুঝলাম তেনাদের কথা বলতে চাইছে। কিন্তু ওসবে আমাদের মন নেই। আমরা মুগ্ধ চোখে দেখছি জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি। সুনীলদার মধ্যে কী রকম যেন একটা ঘোর তৈরি হয়েছে। আমি আগেও লক্ষ করেছি অনেকের মধ্যে থেকেও, তুমুল হইহল্লা আর আড্ডার মধ্যে থেকেও সুনীলদা কোন ফাঁকে যেন আলাদা হয়ে যান। কোন ফাঁকে যেন চলে যান নিজের তৈরি করা ভুবনে। চারপাশে সবাই আছে, তিনি থেকেও নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।
নৌকায় বসেই ঠিক করলাম ঢাকায় ফিরে এই ভ্রমণ নিয়ে একটা লেখা লিখব। সুনীলদার কবিতার লাইন হবে লেখার শিরোনাম। ‘বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ’। সেই লেখা আর লেখা হলো না। সুনীলদা ঠিকই কলকাতায় ফিরে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলেন ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে’। সেই লেখার সঙ্গে আরও কিছু লেখা একত্র করে ‘আনন্দ’ থেকে বই বেরোল। ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে ও অন্যান্য’।
দুপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম ভান্ডারিয়ার দিকে। সঙ্গে গাড়ি আর সেই তরুণ কর্মকর্তা। ভান্ডারিয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী এলাকা। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে। ইত্তেফাকের সম্পাদক। সুনীলদা বেশ উৎসাহ দেখালেন তাঁর এলাকায় যেতে।
ভান্ডারিয়া এলাকার একটা ভোটকেন্দ্রে ঘোরার সময় সুনীলদা আমাদের সঙ্গের তরুণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখান থেকে চাখার কত দূর? শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বাড়িটা একটু দেখতে চাই। এলাকাটা দেখতে চাই।
ওই তরুণ কর্মকর্তাও আমাদের মতোই উৎসাহী। বললেন, চলুন।
আমরা চাখারের দিকে রওনা দিলাম।
চাখার ভান্ডারিয়ার মতো উন্নত এলাকা নয়। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। শেরেবাংলার বাড়িতে ঢুকলাম। পুরোনো আমলের বনেদি দালানবাড়ি। লালচে রঙের।
সামনের দিককার লম্বা মতন একটা রুমে শেরেবাংলার ব্যবহারের জিনিসপত্র ইত্যাদি নিয়ে একটা মিউজিয়াম। মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখছি। পুরোনো টেবিলের ওপর বিশাল আকৃতির, মোটা কাচের সবুজাভ একটা গ্লাস। এ রকম গ্লাস আমি আমার নানাবাড়িতে দেখেছি। কিন্তু এত বড় দেখিনি। গ্লাসের গায়ে একটা কাগজ সাঁটা। গোটা গোটা হাতে লেখা, ‘এই গ্লাসে শেরেবাংলা ইসবগুলের শরবত খেতেন’।
শেরেবাংলা বিশালদেহী মানুষ ছিলেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়ার নানা রকমের কাহিনি আমরা শুনেছি। চল্লিশটা ফজলি আম নাকি এক বসায় খেতে পারতেন।
অবিভক্ত বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার বরিশালে। ততক্ষণে বরিশালে রটে গেছে এই শহরে এসেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
পরদিন সকালবেলা দলে দলে লোকজন আসতে লাগল। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর। অনেকের হাতেই সুনীলদার বই। তারা অটোগ্রাফ নেবে। শিশু-কিশোরদের হাতে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের বই। ভালো রকম একটা ভিড় লেগে গেল হোটেলে। আমাদের রুমে জায়গায়ই হয় না। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাংবাদিক নেতারা এলেন। প্রেসক্লাবে একবার যেতেই হবে। সেদিনই ফেরার কথা আমাদের। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াল, ফেরার পথ বন্ধ। অন্তত একটা দিন বরিশালবাসীকে দিতেই হবে।
সেই দিনটা আমরা রয়ে গেলাম।
এক ফাঁকে বরিশাল শহরে জীবনানন্দ দাশের বাড়িটি দেখা হলো। বিকেলে প্রেসক্লাবে জমল ভালোরকমের আড্ডা। ঘন দুধের চা আর শিঙাড়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে আছেন শহরের শ্রদ্ধেয়জনেরা। সুনীলদার পাঠক সবাই। গল্পে আড্ডায় অনেকটা রাত হলো। চমৎকার কাটল সময়টা।
পরদিন সকালে ঢাকার পথে রওনা।
গাড়িতে সুনীলদার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি আর ছোটদের লেখা নিয়ে অনেক রকমের কথা হলো। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম, তিনি তাঁর মতো করে বলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা কবিতার কথা মনে এল আমার।
‘মহারাজ, আমি তোমার সেই পুরোনো বালকভৃত্য/ মহারাজ, মনে পড়ে না?’
আমি কবিতার অতি নগণ্য একজন পাঠক। কিন্তু কোনো কোনো কবিতার ভেতরকার রহস্য বুঝে উঠতে পারি না। তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারি না। সুনীলদার এ কবিতাটি তেমন এক কবিতা।
কথাটা বললাম সুনীলদাকে। তিনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন। কবিতাটির আসলে কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো অর্থহীন কবিতাও লেখা হয়।
বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে, সুন্দর সুন্দর শব্দ বসিয়ে অর্থহীন কবিতাও কবিরা লেখেন।
শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম।
ঢাকায় সুনীলদার থাকার ব্যবস্থা ছিল শেরাটন হোটেলে। সন্ধ্যাবেলা শেরাটনের গেট দিয়ে যখন গাড়ি ঢুকছে, সুনীলদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, একটা অধ্যায় শেষ হলো।
প্রিয় সুনীলদা, আপনার জীবনের কোনো অধ্যায় কি আসলে শেষ হয়েছে! বাংলা সাহিত্যের সব অধ্যায়েই তো রয়ে গেছেন আপনি। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের এক লেখায় আপনি লিখেছিলেন, ‘আকাশ কখনও পুরনো হয় না। আকাশ প্রতিদিন নতুন।’ বাংলা সাহিত্যের এক আকাশ আপনি। আপনার কোনো শেষ নেই।
আপনি প্রতিদিন নতুন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো!
১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। আমাদের সঙ্গে এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। মাওয়া হয়ে চলে যাব বরিশালে। মাওয়ার আগের গ্রামটি মেদিনীমণ্ডল। আমার জন্মের গ্রাম।
১২ বছর বয়স পর্যন্ত ওই গ্রামে নানির কাছে ছিলাম। ছেলেবেলা আচ্ছন্ন করে রাখা গ্রাম। সড়কের পাশেই আমার নানাবাড়ি। সেই বাড়ি বরাবর গাড়ি আসতেই সুনীলদাকে হাত তুলে দেখালাম, ওই যে সুনীলদা, ওটা আমার নানাবাড়ি। গ্রামের নামটাও বললাম।
আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি সুনীলদার। গ্রামের নাম শুনে বললেন, মণীন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি কোনটা?
মণীন্দ্র ঠাকুরের নাম শুনে আমি অবাক। আপনি কী করে এই নাম জানলেন?
সুনীলদা হাসলেন। তোমার একটা গল্প পড়েছিলাম। ‘জীবনযাত্রা’। সেই গল্পের মূল চরিত্র মণীন্দ্র ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িটাও দেখালাম।
বরিশালে তেমন কোনো ভালো হোটেল তখন ছিল না। তারপরও সবচেয়ে ভালো যে হোটেল, সেখানে আমাদের তোলা হলো। পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
প্রথমে বরিশালের ডিসি অফিসে গেলাম। ডিসি ভদ্রলোকের ওখানে চা খেয়ে হোটেলে। আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে তরুণ কর্মকর্তা চলে গেলেন তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই থাকবেন। সকালবেলা আমাদের নিয়ে বেরোবেন।
কাল ইলেকশন।
রুমে ঢুকে সুনীলদা একটা হাঁফ ছাড়লেন। ব্যাগ থেকে দ্রব্য বের করে নিজেই দুটো গ্লাসে ঢাললেন। এসো, শুরু করা যাক।
দ্রব্য চলার ফাঁকেই নাক ডাকার কথাটা বললেন। আমি গায়েই মাখলাম না।
মাঝারি সাইজের একটাই ভালো রুম পাওয়া গেছে হোটেলে। দুটো সিঙ্গেল বেড পাতা। একটা উত্তর-দক্ষিণে, একটা পুবে-পশ্চিমে। সুনীলদা উত্তর-দক্ষিণের বেডে বসেছেন; অর্থাৎ এই বেডেই তিনি ঘুমাবেন। অন্যটা আমার।
পানাহার শেষ করে সাড়ে ১১টার দিকে শুয়ে পড়লাম। শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে শুরু হলো সুনীলদার নাকডাকা। ক্রমে এমন অবস্থা, আমি হতভম্ব।
নেশাফেসা উধাও হয়ে গেল। একজন মানুষ শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারে, এটা এক বিস্ময় আর হচ্ছে নাকডাকা। এ রকম শব্দে নাক ডাকেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি!
রাতটা যে আমার কেমন করে কাটল!
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি, আচমকা জেগে যাই। মনে হচ্ছে সুনীলদার নাকডাকার শব্দে আমি তো বটেই, এই হোটেলের অন্যান্য রুমের লোকজনও ঘুমাতে পারছে না।
মাঝরাতের দিকে সুনীলদার নাকডাকার শব্দটা যেন আরেকটু বাড়ল। শুনে মনে হলো, শুধু এই হোটেলের না, বোধ হয় পুরো বরিশাল শহরের ঘুম ভেঙে গেছে।
সকালবেলা কথাটা বললাম সুনীলদাকে। শুনে বললেন, টর্পেডো তো বলে, আমার নাকডাকার শব্দে নাকি পুরো জাতি জেগে যায়।
টর্পেডো মানে তারাপদ রায়। তারাপদ রায়ের টর্পেডো নামটা দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
আমরা তারপর নির্বাচন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, দেখতে বেরিয়েছিলাম। গাবখান নামের ছোট্ট এক নদীর এপারে আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা। একটা চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চে আমু সাহেব মাঝখানে, সুনীলদা আর আমি দুপাশে। চা খেতে খেতে কথা হলো। দুয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে দেখার পরেই সুনীলদা বললেন, অনেক হয়েছে। চলো, এবার ধানসিঁড়ি নদীটা দেখে আসি।
নদীর প্রতি আশ্চর্য এক টান ছিল সুনীলদার। তাঁর কবিতায় আছে, ‘নদীটির স্বাস্থ্য ছিল ভালো/হঠাৎ বনের পাশে সে আমাকে/ একটুখানি চমকে দেয়’।
বন-পাহাড় আর পৃথিবী চষে বেড়ানো মানুষ সুনীলদা। একবার এক পাহাড়ি নদী দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়েছিলেন, সেই নদীতে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে তাঁর মনে হয়েছিল তিনি যেন রমণসুখ অনুভব করছেন।
ধানসিঁড়ি জীবনানন্দের নদী। বরিশালে এসে এই নদী না দেখে তিনি কি পারেন?
আশ্চর্য ব্যাপার। ধানসিঁড়ির সন্ধান কেউ আমাদের দিতে পারছিল না। এলাকার কেউ নদীটা চেনেই না।
শেষ পর্যন্ত এক যুবক ধানসিঁড়ির কাছে নিয়ে এল আমাদের। দুটো বসতবাড়ির মাঝখান দিয়ে নদীতীরে এলাম আমরা। সেখানে পুরোনো পাকা ঘাটলা। একটা ছইঅলা নৌকা বাঁধা আছে। খালি গায়ের মাঝি উদাস ভঙ্গিতে বসে বিড়ি টানছে। হাফপ্যান্ট পরা একটি কিশোর ছেলে আছে সঙ্গে। রোগা পটকা, রোদে পোড়া শরীর। ছেলেটিকে দেখে আমার মনে পড়ল সুনীলদার কবিতার লাইন,
‘নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম
ভুবনডাঙার মাঠ!’
সেই নৌকা ভাড়া করে আমরা ধানসিঁড়ি দেখতে বেরোলাম। খালের মতো চিরল নদী। এপারে মানুষের বসতি, ওপারে বাবলাগাছের বন। মাঝিটি গ্রাম্য কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে নদী দেখছি, বাবলাগাছগুলো দেখিয়ে সে বলল, খুব গরম গাছ।
গাছ কী করে গরম হয় বুঝতে পারলাম না। দুজনেই তাকালাম তার মুখের দিকে।
বিড়ি খাওয়া কালো ঠোঁট মেলে হাসল মাঝি। রাইত-বিরাইতে এই দিকটায় চলাফিরা ঠিক না আরকি!
বুঝলাম তেনাদের কথা বলতে চাইছে। কিন্তু ওসবে আমাদের মন নেই। আমরা মুগ্ধ চোখে দেখছি জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি। সুনীলদার মধ্যে কী রকম যেন একটা ঘোর তৈরি হয়েছে। আমি আগেও লক্ষ করেছি অনেকের মধ্যে থেকেও, তুমুল হইহল্লা আর আড্ডার মধ্যে থেকেও সুনীলদা কোন ফাঁকে যেন আলাদা হয়ে যান। কোন ফাঁকে যেন চলে যান নিজের তৈরি করা ভুবনে। চারপাশে সবাই আছে, তিনি থেকেও নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।
নৌকায় বসেই ঠিক করলাম ঢাকায় ফিরে এই ভ্রমণ নিয়ে একটা লেখা লিখব। সুনীলদার কবিতার লাইন হবে লেখার শিরোনাম। ‘বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ’। সেই লেখা আর লেখা হলো না। সুনীলদা ঠিকই কলকাতায় ফিরে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলেন ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে’। সেই লেখার সঙ্গে আরও কিছু লেখা একত্র করে ‘আনন্দ’ থেকে বই বেরোল। ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে ও অন্যান্য’।
দুপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম ভান্ডারিয়ার দিকে। সঙ্গে গাড়ি আর সেই তরুণ কর্মকর্তা। ভান্ডারিয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী এলাকা। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে। ইত্তেফাকের সম্পাদক। সুনীলদা বেশ উৎসাহ দেখালেন তাঁর এলাকায় যেতে।
ভান্ডারিয়া এলাকার একটা ভোটকেন্দ্রে ঘোরার সময় সুনীলদা আমাদের সঙ্গের তরুণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখান থেকে চাখার কত দূর? শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বাড়িটা একটু দেখতে চাই। এলাকাটা দেখতে চাই।
ওই তরুণ কর্মকর্তাও আমাদের মতোই উৎসাহী। বললেন, চলুন।
আমরা চাখারের দিকে রওনা দিলাম।
চাখার ভান্ডারিয়ার মতো উন্নত এলাকা নয়। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। শেরেবাংলার বাড়িতে ঢুকলাম। পুরোনো আমলের বনেদি দালানবাড়ি। লালচে রঙের।
সামনের দিককার লম্বা মতন একটা রুমে শেরেবাংলার ব্যবহারের জিনিসপত্র ইত্যাদি নিয়ে একটা মিউজিয়াম। মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখছি। পুরোনো টেবিলের ওপর বিশাল আকৃতির, মোটা কাচের সবুজাভ একটা গ্লাস। এ রকম গ্লাস আমি আমার নানাবাড়িতে দেখেছি। কিন্তু এত বড় দেখিনি। গ্লাসের গায়ে একটা কাগজ সাঁটা। গোটা গোটা হাতে লেখা, ‘এই গ্লাসে শেরেবাংলা ইসবগুলের শরবত খেতেন’।
শেরেবাংলা বিশালদেহী মানুষ ছিলেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়ার নানা রকমের কাহিনি আমরা শুনেছি। চল্লিশটা ফজলি আম নাকি এক বসায় খেতে পারতেন।
অবিভক্ত বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার বরিশালে। ততক্ষণে বরিশালে রটে গেছে এই শহরে এসেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
পরদিন সকালবেলা দলে দলে লোকজন আসতে লাগল। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর। অনেকের হাতেই সুনীলদার বই। তারা অটোগ্রাফ নেবে। শিশু-কিশোরদের হাতে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের বই। ভালো রকম একটা ভিড় লেগে গেল হোটেলে। আমাদের রুমে জায়গায়ই হয় না। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাংবাদিক নেতারা এলেন। প্রেসক্লাবে একবার যেতেই হবে। সেদিনই ফেরার কথা আমাদের। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াল, ফেরার পথ বন্ধ। অন্তত একটা দিন বরিশালবাসীকে দিতেই হবে।
সেই দিনটা আমরা রয়ে গেলাম।
এক ফাঁকে বরিশাল শহরে জীবনানন্দ দাশের বাড়িটি দেখা হলো। বিকেলে প্রেসক্লাবে জমল ভালোরকমের আড্ডা। ঘন দুধের চা আর শিঙাড়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে আছেন শহরের শ্রদ্ধেয়জনেরা। সুনীলদার পাঠক সবাই। গল্পে আড্ডায় অনেকটা রাত হলো। চমৎকার কাটল সময়টা।
পরদিন সকালে ঢাকার পথে রওনা।
গাড়িতে সুনীলদার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি আর ছোটদের লেখা নিয়ে অনেক রকমের কথা হলো। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম, তিনি তাঁর মতো করে বলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা কবিতার কথা মনে এল আমার।
‘মহারাজ, আমি তোমার সেই পুরোনো বালকভৃত্য/ মহারাজ, মনে পড়ে না?’
আমি কবিতার অতি নগণ্য একজন পাঠক। কিন্তু কোনো কোনো কবিতার ভেতরকার রহস্য বুঝে উঠতে পারি না। তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারি না। সুনীলদার এ কবিতাটি তেমন এক কবিতা।
কথাটা বললাম সুনীলদাকে। তিনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন। কবিতাটির আসলে কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো অর্থহীন কবিতাও লেখা হয়।
বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে, সুন্দর সুন্দর শব্দ বসিয়ে অর্থহীন কবিতাও কবিরা লেখেন।
শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম।
ঢাকায় সুনীলদার থাকার ব্যবস্থা ছিল শেরাটন হোটেলে। সন্ধ্যাবেলা শেরাটনের গেট দিয়ে যখন গাড়ি ঢুকছে, সুনীলদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, একটা অধ্যায় শেষ হলো।
প্রিয় সুনীলদা, আপনার জীবনের কোনো অধ্যায় কি আসলে শেষ হয়েছে! বাংলা সাহিত্যের সব অধ্যায়েই তো রয়ে গেছেন আপনি। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের এক লেখায় আপনি লিখেছিলেন, ‘আকাশ কখনও পুরনো হয় না। আকাশ প্রতিদিন নতুন।’ বাংলা সাহিত্যের এক আকাশ আপনি। আপনার কোনো শেষ নেই।
আপনি প্রতিদিন নতুন।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫