রাজীব সরকার

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তাঁর জগৎজোড়া বিস্তৃত খ্যাতির প্রধান উৎস ‘সিদ্ধার্থ’।
উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে তরুণ ব্রাহ্মণ সিদ্ধার্থের অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়ে। গোবিন্দ তাঁর অন্তরঙ্গ সহচর। সিদ্ধার্থের মেধা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, দৃঢ় সংকল্প ও জীবনের মহৎ লক্ষ্য গোবিন্দকে মুগ্ধ করে। তাঁর নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দেখে পিতা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন অসাধারণ পণ্ডিত ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হবেন। সুদর্শন সিদ্ধার্থের সুকুমার কান্তি ও পরিশীলিত চলাফেরা দেখে মায়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। তাঁর উন্নত ললাট, রাজোচিত চোখ, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ জাগায়। কিন্তু সিদ্ধার্থের মনে শান্তি নেই। এক অতৃপ্তির বীজ তিনি বহন করে চলেছেন।
সিদ্ধার্থ লক্ষ করেছেন, পুরুষানুক্রমে ব্রাহ্মণেরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু কোথায় সেই ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও পণ্ডিত, যাঁরা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় সুগভীর জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করেননি, জীবনেও তাদের উপলব্ধি করেছেন? তাঁর পিতা ধর্মপরায়ণ ও বিদ্বান। সূক্ষ্ম ও মহৎ চিন্তায় তাঁর মস্তিষ্ক পূর্ণ। এত জেনেও কি তিনি অতৃপ্ত তত্ত্বানুসন্ধানী নন? এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত সিদ্ধার্থকে উদ্বেলিত করে। তাঁর মনে হয় নিজের গভীর সত্তার মধ্যেই তো সবকিছুর মূল কারণ রয়েছে। তাঁকে জানতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে সিদ্ধার্থ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পিতা অমত করলেও পরে তিনি সম্মতি দেন। গোবিন্দ সিদ্ধার্থের অনুগামী হয়।
সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুই বন্ধু জানতে পারেন গৌতম বুদ্ধ নামে একজন মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি জয় করেছেন জীবনের সব দুঃখ এবং রুদ্ধ করে দিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর চক্রাকার গতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ছেড়ে বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করার। গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দ বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। বুদ্ধের মহত্ত্ব এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেতে চান নতুন কোনো তীর্থে। গোবিন্দ চিরকাল সিদ্ধার্থকে অনুসরণ করে এসেছেন। এই প্রথম তাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন। গোবিন্দ নিজের পথ খুঁজে নেওয়ায় সিদ্ধার্থ খুশি হন। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে গোবিন্দ বিদায় নেন। নিজের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসাকে বুদ্ধের কাছে উপস্থাপন করে সংশয়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্ধার্থ। যেহেতু বুদ্ধের ধর্মশিক্ষাই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, তাই অন্য কারও ধর্মোপদেশও তা পারবে না। বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সিদ্ধার্থ অনুভব করেন, ‘বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমার সবকিছু হরণ করেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে মূল্যবান জিনিস। তিনি অপহরণ করেছেন আমার বন্ধুকে। গোবিন্দের আস্থা ছিল আমার ওপর, সে এখন নির্ভর করবে বুদ্ধের ওপর। একদিন গোবিন্দ ছিল আমার ছায়া, সে এখন হয়েছে গৌতমের ছায়া। কিন্তু তিনি আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।’
বুদ্ধের মতো মহাত্মা ও শ্রেষ্ঠ পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত জানতে তৎপর হয় সিদ্ধার্থ। আত্মাকে, ব্রহ্মকে খুঁজতে গিয়ে নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, অগ্রাহ্য করেছেন নিজের অস্তিত্বকে। দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভ্রান্তির নাগপাশ মোচন করে সিদ্ধার্থ জেগে ওঠেন। নবজন্ম হয় তাঁর। বুদ্ধের অন্যতম বাণী ছিল, ‘আত্মদীপো ভব’, অর্থাৎ নিজেই নিজের প্রদীপ হও। বুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও এই বাণীই যেন পরিচালিত করেছেন সিদ্ধার্থকে। সন্ন্যাসী, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ—কোনো পরিচয়েই আর নিজেকে খুঁজে পান না তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অন্যের উপদেশ থেকে কিছু শেখা যায় না। নিজের জীবন ক্ষয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। নিজের পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।
নদী পার হতে গিয়ে মাঝি বাসুদেবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিদ্ধার্থের। তাঁর কাছে নদীর অসামান্য তাৎপর্য সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নদী পার হয়ে সন্ধ্যায় নগরে উপস্থিত হন। নগরে ঢুকেই সুপরিচিতা বীরাঙ্গনা কমলার মুখোমুখি হন তিনি। লাস্যময়ী কমলার অপূর্ব দেহসৌন্দর্য সিদ্ধার্থকে আকৃষ্ট করে। তাকে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে চান সিদ্ধার্থ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কমলাকে নিজের তিনটি গুণের কথা বলেন—ধ্যান, অপেক্ষা ও ধৈর্য। অসাধারণ আবৃত্তির বিনিময়ে কমলা তাঁকে চুম্বনসিক্ত করে। কমলার উদ্যোগে বণিক কামস্বামীর কাছে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন সিদ্ধার্থ। এভাবে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবতার সম্মুখীন হন। কামকলানিপুণা কমলার সান্নিধ্যে সিদ্ধার্থ যৌন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য অর্জন করেন। তাঁদের মিলনে একসময়ে কমলা সন্তানসম্ভবা হয়। এই সংবাদ জানার আগেই সিদ্ধার্থ কামিনী কাঞ্চনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কমলার রমণীয় উদ্যান ত্যাগ করেন।
পথ চলতে চলতে সিদ্ধার্থ আবার এসে দাঁড়ান সেই সুন্দর নদীতীরে। একদিন এই নদী পার হয়ে নগরে পৌঁছেছিলেন তিনি। পুরোনো মাঝি বাসুদেবের সাক্ষাৎ পান। তাঁর কুটিরে রাত কাটিয়ে মাঝিকে নিজের জীবনের গল্প বলেন সিদ্ধার্থ। নদীর তীরে বছরের পর বছর কেটে যায় সিদ্ধার্থ ও বাসুদেবের। একসময় খবর এল ভগবান বুদ্ধ শয্যাশায়ী, তাঁর মহানির্বাণ লাভ আসন্ন।
দলে দলে পুণ্যার্থী, ভক্ত ও শিষ্যরা ছুটে আসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখার আশায়। মাঝি তাঁদের নৌকায় পারাপার করে। এককালের প্রসিদ্ধ বীরাঙ্গনা কমলা তার সব ঐশ্বর্য ও উদ্যান দান করেছে বুদ্ধের শিষ্যদের সেবার জন্য। সে নিজেও বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বুদ্ধের দেহত্যাগ আসন্ন জেনে সে-ও পৌঁছে যায় নদীতীরে একমাত্র পুত্রের হাত ধরে। সাপের কামড়ে আহত হয় কমলা। ঘটনাচক্রে তার সেবায় এগিয়ে আসেন বাসুদেব ও সিদ্ধার্থ। কমলা ও নিজের পুত্রকে চিনতে পারেন সিদ্ধার্থ। শেষ মিলনের ক্ষণে কমলা ও সিদ্ধার্থের কথোপকথনের ভাষা হৃদয়স্পর্শী। বুদ্ধের দেখা না পাওয়ার অতৃপ্তি ঘুচে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে। কমলার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।
পুত্রকে কাছে পেয়ে সিদ্ধার্থ নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি বলে অনুভব করে কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভাঙে। পুত্র মায়ের বিলাসী জীবনধারায় বড় হয়েছে। সিদ্ধার্থের দরিদ্র কুটিরে কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। সিদ্ধার্থ সর্বোচ্চ ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দেন পুত্রের হৃদয় জয় করার জন্য। কিন্তু পুত্রের ঔদ্ধত্য ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সিদ্ধার্থের উদ্দেশে পুত্র বলে, ‘তুমি আমার মায়ের প্রেমিক হলেও তোমাকে আমি পিতা বলে স্বীকার করি না, তোমাকে ঘৃণা করি।’ কুটির থেকে পালিয়ে যায় পুত্র।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সিদ্ধার্থ জীবনের শেষ পর্বে আবারও মুখোমুখি হন গোবিন্দের। দুই অকৃত্রিম বন্ধু নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা বিনিময় করেন পরস্পরের সঙ্গে। মাঝি বাসুদেব ও নদীকে নিজের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ নিঃসংকোচে বলেন, ‘গোবিন্দ, আমার মনে হয় ভালোবাসা সংসারের সবচেয়ে বড় জিনিস। বড় বড় দার্শনিক পৃথিবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন, সংসার-কর্মকাণ্ডের চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে পারেন, ত্রিশটি বিচ্যুতির জন্য পৃথিবীকে ঘৃণাও করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় কথা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা, তাকে ঘৃণা করা নয়। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসব, এখানকার প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে ভালোবাসব, সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব এই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে।’ সিদ্ধার্থের অনন্ত জীবনতৃষ্ণা এভাবেই তৃপ্ত হয়। প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসাই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। সন্দেহ নেই, সিদ্ধার্থের এই শিক্ষা লেখক হেরমান হেসেরও জীবনদর্শন।

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তাঁর জগৎজোড়া বিস্তৃত খ্যাতির প্রধান উৎস ‘সিদ্ধার্থ’।
উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে তরুণ ব্রাহ্মণ সিদ্ধার্থের অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়ে। গোবিন্দ তাঁর অন্তরঙ্গ সহচর। সিদ্ধার্থের মেধা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, দৃঢ় সংকল্প ও জীবনের মহৎ লক্ষ্য গোবিন্দকে মুগ্ধ করে। তাঁর নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দেখে পিতা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন অসাধারণ পণ্ডিত ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হবেন। সুদর্শন সিদ্ধার্থের সুকুমার কান্তি ও পরিশীলিত চলাফেরা দেখে মায়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। তাঁর উন্নত ললাট, রাজোচিত চোখ, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ জাগায়। কিন্তু সিদ্ধার্থের মনে শান্তি নেই। এক অতৃপ্তির বীজ তিনি বহন করে চলেছেন।
সিদ্ধার্থ লক্ষ করেছেন, পুরুষানুক্রমে ব্রাহ্মণেরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু কোথায় সেই ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও পণ্ডিত, যাঁরা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় সুগভীর জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করেননি, জীবনেও তাদের উপলব্ধি করেছেন? তাঁর পিতা ধর্মপরায়ণ ও বিদ্বান। সূক্ষ্ম ও মহৎ চিন্তায় তাঁর মস্তিষ্ক পূর্ণ। এত জেনেও কি তিনি অতৃপ্ত তত্ত্বানুসন্ধানী নন? এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত সিদ্ধার্থকে উদ্বেলিত করে। তাঁর মনে হয় নিজের গভীর সত্তার মধ্যেই তো সবকিছুর মূল কারণ রয়েছে। তাঁকে জানতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে সিদ্ধার্থ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পিতা অমত করলেও পরে তিনি সম্মতি দেন। গোবিন্দ সিদ্ধার্থের অনুগামী হয়।
সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুই বন্ধু জানতে পারেন গৌতম বুদ্ধ নামে একজন মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি জয় করেছেন জীবনের সব দুঃখ এবং রুদ্ধ করে দিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর চক্রাকার গতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ছেড়ে বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করার। গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দ বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। বুদ্ধের মহত্ত্ব এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেতে চান নতুন কোনো তীর্থে। গোবিন্দ চিরকাল সিদ্ধার্থকে অনুসরণ করে এসেছেন। এই প্রথম তাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন। গোবিন্দ নিজের পথ খুঁজে নেওয়ায় সিদ্ধার্থ খুশি হন। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে গোবিন্দ বিদায় নেন। নিজের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসাকে বুদ্ধের কাছে উপস্থাপন করে সংশয়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্ধার্থ। যেহেতু বুদ্ধের ধর্মশিক্ষাই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, তাই অন্য কারও ধর্মোপদেশও তা পারবে না। বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সিদ্ধার্থ অনুভব করেন, ‘বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমার সবকিছু হরণ করেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে মূল্যবান জিনিস। তিনি অপহরণ করেছেন আমার বন্ধুকে। গোবিন্দের আস্থা ছিল আমার ওপর, সে এখন নির্ভর করবে বুদ্ধের ওপর। একদিন গোবিন্দ ছিল আমার ছায়া, সে এখন হয়েছে গৌতমের ছায়া। কিন্তু তিনি আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।’
বুদ্ধের মতো মহাত্মা ও শ্রেষ্ঠ পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত জানতে তৎপর হয় সিদ্ধার্থ। আত্মাকে, ব্রহ্মকে খুঁজতে গিয়ে নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, অগ্রাহ্য করেছেন নিজের অস্তিত্বকে। দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভ্রান্তির নাগপাশ মোচন করে সিদ্ধার্থ জেগে ওঠেন। নবজন্ম হয় তাঁর। বুদ্ধের অন্যতম বাণী ছিল, ‘আত্মদীপো ভব’, অর্থাৎ নিজেই নিজের প্রদীপ হও। বুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও এই বাণীই যেন পরিচালিত করেছেন সিদ্ধার্থকে। সন্ন্যাসী, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ—কোনো পরিচয়েই আর নিজেকে খুঁজে পান না তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অন্যের উপদেশ থেকে কিছু শেখা যায় না। নিজের জীবন ক্ষয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। নিজের পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।
নদী পার হতে গিয়ে মাঝি বাসুদেবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিদ্ধার্থের। তাঁর কাছে নদীর অসামান্য তাৎপর্য সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নদী পার হয়ে সন্ধ্যায় নগরে উপস্থিত হন। নগরে ঢুকেই সুপরিচিতা বীরাঙ্গনা কমলার মুখোমুখি হন তিনি। লাস্যময়ী কমলার অপূর্ব দেহসৌন্দর্য সিদ্ধার্থকে আকৃষ্ট করে। তাকে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে চান সিদ্ধার্থ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কমলাকে নিজের তিনটি গুণের কথা বলেন—ধ্যান, অপেক্ষা ও ধৈর্য। অসাধারণ আবৃত্তির বিনিময়ে কমলা তাঁকে চুম্বনসিক্ত করে। কমলার উদ্যোগে বণিক কামস্বামীর কাছে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন সিদ্ধার্থ। এভাবে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবতার সম্মুখীন হন। কামকলানিপুণা কমলার সান্নিধ্যে সিদ্ধার্থ যৌন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য অর্জন করেন। তাঁদের মিলনে একসময়ে কমলা সন্তানসম্ভবা হয়। এই সংবাদ জানার আগেই সিদ্ধার্থ কামিনী কাঞ্চনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কমলার রমণীয় উদ্যান ত্যাগ করেন।
পথ চলতে চলতে সিদ্ধার্থ আবার এসে দাঁড়ান সেই সুন্দর নদীতীরে। একদিন এই নদী পার হয়ে নগরে পৌঁছেছিলেন তিনি। পুরোনো মাঝি বাসুদেবের সাক্ষাৎ পান। তাঁর কুটিরে রাত কাটিয়ে মাঝিকে নিজের জীবনের গল্প বলেন সিদ্ধার্থ। নদীর তীরে বছরের পর বছর কেটে যায় সিদ্ধার্থ ও বাসুদেবের। একসময় খবর এল ভগবান বুদ্ধ শয্যাশায়ী, তাঁর মহানির্বাণ লাভ আসন্ন।
দলে দলে পুণ্যার্থী, ভক্ত ও শিষ্যরা ছুটে আসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখার আশায়। মাঝি তাঁদের নৌকায় পারাপার করে। এককালের প্রসিদ্ধ বীরাঙ্গনা কমলা তার সব ঐশ্বর্য ও উদ্যান দান করেছে বুদ্ধের শিষ্যদের সেবার জন্য। সে নিজেও বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বুদ্ধের দেহত্যাগ আসন্ন জেনে সে-ও পৌঁছে যায় নদীতীরে একমাত্র পুত্রের হাত ধরে। সাপের কামড়ে আহত হয় কমলা। ঘটনাচক্রে তার সেবায় এগিয়ে আসেন বাসুদেব ও সিদ্ধার্থ। কমলা ও নিজের পুত্রকে চিনতে পারেন সিদ্ধার্থ। শেষ মিলনের ক্ষণে কমলা ও সিদ্ধার্থের কথোপকথনের ভাষা হৃদয়স্পর্শী। বুদ্ধের দেখা না পাওয়ার অতৃপ্তি ঘুচে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে। কমলার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।
পুত্রকে কাছে পেয়ে সিদ্ধার্থ নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি বলে অনুভব করে কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভাঙে। পুত্র মায়ের বিলাসী জীবনধারায় বড় হয়েছে। সিদ্ধার্থের দরিদ্র কুটিরে কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। সিদ্ধার্থ সর্বোচ্চ ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দেন পুত্রের হৃদয় জয় করার জন্য। কিন্তু পুত্রের ঔদ্ধত্য ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সিদ্ধার্থের উদ্দেশে পুত্র বলে, ‘তুমি আমার মায়ের প্রেমিক হলেও তোমাকে আমি পিতা বলে স্বীকার করি না, তোমাকে ঘৃণা করি।’ কুটির থেকে পালিয়ে যায় পুত্র।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সিদ্ধার্থ জীবনের শেষ পর্বে আবারও মুখোমুখি হন গোবিন্দের। দুই অকৃত্রিম বন্ধু নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা বিনিময় করেন পরস্পরের সঙ্গে। মাঝি বাসুদেব ও নদীকে নিজের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ নিঃসংকোচে বলেন, ‘গোবিন্দ, আমার মনে হয় ভালোবাসা সংসারের সবচেয়ে বড় জিনিস। বড় বড় দার্শনিক পৃথিবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন, সংসার-কর্মকাণ্ডের চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে পারেন, ত্রিশটি বিচ্যুতির জন্য পৃথিবীকে ঘৃণাও করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় কথা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা, তাকে ঘৃণা করা নয়। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসব, এখানকার প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে ভালোবাসব, সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব এই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে।’ সিদ্ধার্থের অনন্ত জীবনতৃষ্ণা এভাবেই তৃপ্ত হয়। প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসাই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। সন্দেহ নেই, সিদ্ধার্থের এই শিক্ষা লেখক হেরমান হেসেরও জীবনদর্শন।
রাজীব সরকার

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তাঁর জগৎজোড়া বিস্তৃত খ্যাতির প্রধান উৎস ‘সিদ্ধার্থ’।
উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে তরুণ ব্রাহ্মণ সিদ্ধার্থের অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়ে। গোবিন্দ তাঁর অন্তরঙ্গ সহচর। সিদ্ধার্থের মেধা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, দৃঢ় সংকল্প ও জীবনের মহৎ লক্ষ্য গোবিন্দকে মুগ্ধ করে। তাঁর নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দেখে পিতা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন অসাধারণ পণ্ডিত ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হবেন। সুদর্শন সিদ্ধার্থের সুকুমার কান্তি ও পরিশীলিত চলাফেরা দেখে মায়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। তাঁর উন্নত ললাট, রাজোচিত চোখ, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ জাগায়। কিন্তু সিদ্ধার্থের মনে শান্তি নেই। এক অতৃপ্তির বীজ তিনি বহন করে চলেছেন।
সিদ্ধার্থ লক্ষ করেছেন, পুরুষানুক্রমে ব্রাহ্মণেরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু কোথায় সেই ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও পণ্ডিত, যাঁরা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় সুগভীর জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করেননি, জীবনেও তাদের উপলব্ধি করেছেন? তাঁর পিতা ধর্মপরায়ণ ও বিদ্বান। সূক্ষ্ম ও মহৎ চিন্তায় তাঁর মস্তিষ্ক পূর্ণ। এত জেনেও কি তিনি অতৃপ্ত তত্ত্বানুসন্ধানী নন? এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত সিদ্ধার্থকে উদ্বেলিত করে। তাঁর মনে হয় নিজের গভীর সত্তার মধ্যেই তো সবকিছুর মূল কারণ রয়েছে। তাঁকে জানতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে সিদ্ধার্থ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পিতা অমত করলেও পরে তিনি সম্মতি দেন। গোবিন্দ সিদ্ধার্থের অনুগামী হয়।
সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুই বন্ধু জানতে পারেন গৌতম বুদ্ধ নামে একজন মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি জয় করেছেন জীবনের সব দুঃখ এবং রুদ্ধ করে দিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর চক্রাকার গতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ছেড়ে বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করার। গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দ বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। বুদ্ধের মহত্ত্ব এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেতে চান নতুন কোনো তীর্থে। গোবিন্দ চিরকাল সিদ্ধার্থকে অনুসরণ করে এসেছেন। এই প্রথম তাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন। গোবিন্দ নিজের পথ খুঁজে নেওয়ায় সিদ্ধার্থ খুশি হন। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে গোবিন্দ বিদায় নেন। নিজের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসাকে বুদ্ধের কাছে উপস্থাপন করে সংশয়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্ধার্থ। যেহেতু বুদ্ধের ধর্মশিক্ষাই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, তাই অন্য কারও ধর্মোপদেশও তা পারবে না। বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সিদ্ধার্থ অনুভব করেন, ‘বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমার সবকিছু হরণ করেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে মূল্যবান জিনিস। তিনি অপহরণ করেছেন আমার বন্ধুকে। গোবিন্দের আস্থা ছিল আমার ওপর, সে এখন নির্ভর করবে বুদ্ধের ওপর। একদিন গোবিন্দ ছিল আমার ছায়া, সে এখন হয়েছে গৌতমের ছায়া। কিন্তু তিনি আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।’
বুদ্ধের মতো মহাত্মা ও শ্রেষ্ঠ পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত জানতে তৎপর হয় সিদ্ধার্থ। আত্মাকে, ব্রহ্মকে খুঁজতে গিয়ে নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, অগ্রাহ্য করেছেন নিজের অস্তিত্বকে। দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভ্রান্তির নাগপাশ মোচন করে সিদ্ধার্থ জেগে ওঠেন। নবজন্ম হয় তাঁর। বুদ্ধের অন্যতম বাণী ছিল, ‘আত্মদীপো ভব’, অর্থাৎ নিজেই নিজের প্রদীপ হও। বুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও এই বাণীই যেন পরিচালিত করেছেন সিদ্ধার্থকে। সন্ন্যাসী, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ—কোনো পরিচয়েই আর নিজেকে খুঁজে পান না তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অন্যের উপদেশ থেকে কিছু শেখা যায় না। নিজের জীবন ক্ষয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। নিজের পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।
নদী পার হতে গিয়ে মাঝি বাসুদেবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিদ্ধার্থের। তাঁর কাছে নদীর অসামান্য তাৎপর্য সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নদী পার হয়ে সন্ধ্যায় নগরে উপস্থিত হন। নগরে ঢুকেই সুপরিচিতা বীরাঙ্গনা কমলার মুখোমুখি হন তিনি। লাস্যময়ী কমলার অপূর্ব দেহসৌন্দর্য সিদ্ধার্থকে আকৃষ্ট করে। তাকে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে চান সিদ্ধার্থ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কমলাকে নিজের তিনটি গুণের কথা বলেন—ধ্যান, অপেক্ষা ও ধৈর্য। অসাধারণ আবৃত্তির বিনিময়ে কমলা তাঁকে চুম্বনসিক্ত করে। কমলার উদ্যোগে বণিক কামস্বামীর কাছে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন সিদ্ধার্থ। এভাবে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবতার সম্মুখীন হন। কামকলানিপুণা কমলার সান্নিধ্যে সিদ্ধার্থ যৌন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য অর্জন করেন। তাঁদের মিলনে একসময়ে কমলা সন্তানসম্ভবা হয়। এই সংবাদ জানার আগেই সিদ্ধার্থ কামিনী কাঞ্চনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কমলার রমণীয় উদ্যান ত্যাগ করেন।
পথ চলতে চলতে সিদ্ধার্থ আবার এসে দাঁড়ান সেই সুন্দর নদীতীরে। একদিন এই নদী পার হয়ে নগরে পৌঁছেছিলেন তিনি। পুরোনো মাঝি বাসুদেবের সাক্ষাৎ পান। তাঁর কুটিরে রাত কাটিয়ে মাঝিকে নিজের জীবনের গল্প বলেন সিদ্ধার্থ। নদীর তীরে বছরের পর বছর কেটে যায় সিদ্ধার্থ ও বাসুদেবের। একসময় খবর এল ভগবান বুদ্ধ শয্যাশায়ী, তাঁর মহানির্বাণ লাভ আসন্ন।
দলে দলে পুণ্যার্থী, ভক্ত ও শিষ্যরা ছুটে আসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখার আশায়। মাঝি তাঁদের নৌকায় পারাপার করে। এককালের প্রসিদ্ধ বীরাঙ্গনা কমলা তার সব ঐশ্বর্য ও উদ্যান দান করেছে বুদ্ধের শিষ্যদের সেবার জন্য। সে নিজেও বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বুদ্ধের দেহত্যাগ আসন্ন জেনে সে-ও পৌঁছে যায় নদীতীরে একমাত্র পুত্রের হাত ধরে। সাপের কামড়ে আহত হয় কমলা। ঘটনাচক্রে তার সেবায় এগিয়ে আসেন বাসুদেব ও সিদ্ধার্থ। কমলা ও নিজের পুত্রকে চিনতে পারেন সিদ্ধার্থ। শেষ মিলনের ক্ষণে কমলা ও সিদ্ধার্থের কথোপকথনের ভাষা হৃদয়স্পর্শী। বুদ্ধের দেখা না পাওয়ার অতৃপ্তি ঘুচে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে। কমলার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।
পুত্রকে কাছে পেয়ে সিদ্ধার্থ নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি বলে অনুভব করে কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভাঙে। পুত্র মায়ের বিলাসী জীবনধারায় বড় হয়েছে। সিদ্ধার্থের দরিদ্র কুটিরে কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। সিদ্ধার্থ সর্বোচ্চ ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দেন পুত্রের হৃদয় জয় করার জন্য। কিন্তু পুত্রের ঔদ্ধত্য ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সিদ্ধার্থের উদ্দেশে পুত্র বলে, ‘তুমি আমার মায়ের প্রেমিক হলেও তোমাকে আমি পিতা বলে স্বীকার করি না, তোমাকে ঘৃণা করি।’ কুটির থেকে পালিয়ে যায় পুত্র।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সিদ্ধার্থ জীবনের শেষ পর্বে আবারও মুখোমুখি হন গোবিন্দের। দুই অকৃত্রিম বন্ধু নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা বিনিময় করেন পরস্পরের সঙ্গে। মাঝি বাসুদেব ও নদীকে নিজের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ নিঃসংকোচে বলেন, ‘গোবিন্দ, আমার মনে হয় ভালোবাসা সংসারের সবচেয়ে বড় জিনিস। বড় বড় দার্শনিক পৃথিবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন, সংসার-কর্মকাণ্ডের চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে পারেন, ত্রিশটি বিচ্যুতির জন্য পৃথিবীকে ঘৃণাও করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় কথা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা, তাকে ঘৃণা করা নয়। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসব, এখানকার প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে ভালোবাসব, সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব এই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে।’ সিদ্ধার্থের অনন্ত জীবনতৃষ্ণা এভাবেই তৃপ্ত হয়। প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসাই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। সন্দেহ নেই, সিদ্ধার্থের এই শিক্ষা লেখক হেরমান হেসেরও জীবনদর্শন।

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তাঁর জগৎজোড়া বিস্তৃত খ্যাতির প্রধান উৎস ‘সিদ্ধার্থ’।
উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে তরুণ ব্রাহ্মণ সিদ্ধার্থের অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়ে। গোবিন্দ তাঁর অন্তরঙ্গ সহচর। সিদ্ধার্থের মেধা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, দৃঢ় সংকল্প ও জীবনের মহৎ লক্ষ্য গোবিন্দকে মুগ্ধ করে। তাঁর নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দেখে পিতা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন অসাধারণ পণ্ডিত ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হবেন। সুদর্শন সিদ্ধার্থের সুকুমার কান্তি ও পরিশীলিত চলাফেরা দেখে মায়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। তাঁর উন্নত ললাট, রাজোচিত চোখ, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ জাগায়। কিন্তু সিদ্ধার্থের মনে শান্তি নেই। এক অতৃপ্তির বীজ তিনি বহন করে চলেছেন।
সিদ্ধার্থ লক্ষ করেছেন, পুরুষানুক্রমে ব্রাহ্মণেরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু কোথায় সেই ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও পণ্ডিত, যাঁরা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় সুগভীর জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করেননি, জীবনেও তাদের উপলব্ধি করেছেন? তাঁর পিতা ধর্মপরায়ণ ও বিদ্বান। সূক্ষ্ম ও মহৎ চিন্তায় তাঁর মস্তিষ্ক পূর্ণ। এত জেনেও কি তিনি অতৃপ্ত তত্ত্বানুসন্ধানী নন? এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত সিদ্ধার্থকে উদ্বেলিত করে। তাঁর মনে হয় নিজের গভীর সত্তার মধ্যেই তো সবকিছুর মূল কারণ রয়েছে। তাঁকে জানতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে সিদ্ধার্থ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পিতা অমত করলেও পরে তিনি সম্মতি দেন। গোবিন্দ সিদ্ধার্থের অনুগামী হয়।
সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুই বন্ধু জানতে পারেন গৌতম বুদ্ধ নামে একজন মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি জয় করেছেন জীবনের সব দুঃখ এবং রুদ্ধ করে দিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর চক্রাকার গতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ছেড়ে বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করার। গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দ বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। বুদ্ধের মহত্ত্ব এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেতে চান নতুন কোনো তীর্থে। গোবিন্দ চিরকাল সিদ্ধার্থকে অনুসরণ করে এসেছেন। এই প্রথম তাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন। গোবিন্দ নিজের পথ খুঁজে নেওয়ায় সিদ্ধার্থ খুশি হন। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে গোবিন্দ বিদায় নেন। নিজের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসাকে বুদ্ধের কাছে উপস্থাপন করে সংশয়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্ধার্থ। যেহেতু বুদ্ধের ধর্মশিক্ষাই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, তাই অন্য কারও ধর্মোপদেশও তা পারবে না। বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সিদ্ধার্থ অনুভব করেন, ‘বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমার সবকিছু হরণ করেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে মূল্যবান জিনিস। তিনি অপহরণ করেছেন আমার বন্ধুকে। গোবিন্দের আস্থা ছিল আমার ওপর, সে এখন নির্ভর করবে বুদ্ধের ওপর। একদিন গোবিন্দ ছিল আমার ছায়া, সে এখন হয়েছে গৌতমের ছায়া। কিন্তু তিনি আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।’
বুদ্ধের মতো মহাত্মা ও শ্রেষ্ঠ পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত জানতে তৎপর হয় সিদ্ধার্থ। আত্মাকে, ব্রহ্মকে খুঁজতে গিয়ে নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, অগ্রাহ্য করেছেন নিজের অস্তিত্বকে। দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভ্রান্তির নাগপাশ মোচন করে সিদ্ধার্থ জেগে ওঠেন। নবজন্ম হয় তাঁর। বুদ্ধের অন্যতম বাণী ছিল, ‘আত্মদীপো ভব’, অর্থাৎ নিজেই নিজের প্রদীপ হও। বুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও এই বাণীই যেন পরিচালিত করেছেন সিদ্ধার্থকে। সন্ন্যাসী, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ—কোনো পরিচয়েই আর নিজেকে খুঁজে পান না তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অন্যের উপদেশ থেকে কিছু শেখা যায় না। নিজের জীবন ক্ষয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। নিজের পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।
নদী পার হতে গিয়ে মাঝি বাসুদেবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিদ্ধার্থের। তাঁর কাছে নদীর অসামান্য তাৎপর্য সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নদী পার হয়ে সন্ধ্যায় নগরে উপস্থিত হন। নগরে ঢুকেই সুপরিচিতা বীরাঙ্গনা কমলার মুখোমুখি হন তিনি। লাস্যময়ী কমলার অপূর্ব দেহসৌন্দর্য সিদ্ধার্থকে আকৃষ্ট করে। তাকে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে চান সিদ্ধার্থ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কমলাকে নিজের তিনটি গুণের কথা বলেন—ধ্যান, অপেক্ষা ও ধৈর্য। অসাধারণ আবৃত্তির বিনিময়ে কমলা তাঁকে চুম্বনসিক্ত করে। কমলার উদ্যোগে বণিক কামস্বামীর কাছে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন সিদ্ধার্থ। এভাবে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবতার সম্মুখীন হন। কামকলানিপুণা কমলার সান্নিধ্যে সিদ্ধার্থ যৌন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য অর্জন করেন। তাঁদের মিলনে একসময়ে কমলা সন্তানসম্ভবা হয়। এই সংবাদ জানার আগেই সিদ্ধার্থ কামিনী কাঞ্চনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কমলার রমণীয় উদ্যান ত্যাগ করেন।
পথ চলতে চলতে সিদ্ধার্থ আবার এসে দাঁড়ান সেই সুন্দর নদীতীরে। একদিন এই নদী পার হয়ে নগরে পৌঁছেছিলেন তিনি। পুরোনো মাঝি বাসুদেবের সাক্ষাৎ পান। তাঁর কুটিরে রাত কাটিয়ে মাঝিকে নিজের জীবনের গল্প বলেন সিদ্ধার্থ। নদীর তীরে বছরের পর বছর কেটে যায় সিদ্ধার্থ ও বাসুদেবের। একসময় খবর এল ভগবান বুদ্ধ শয্যাশায়ী, তাঁর মহানির্বাণ লাভ আসন্ন।
দলে দলে পুণ্যার্থী, ভক্ত ও শিষ্যরা ছুটে আসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখার আশায়। মাঝি তাঁদের নৌকায় পারাপার করে। এককালের প্রসিদ্ধ বীরাঙ্গনা কমলা তার সব ঐশ্বর্য ও উদ্যান দান করেছে বুদ্ধের শিষ্যদের সেবার জন্য। সে নিজেও বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বুদ্ধের দেহত্যাগ আসন্ন জেনে সে-ও পৌঁছে যায় নদীতীরে একমাত্র পুত্রের হাত ধরে। সাপের কামড়ে আহত হয় কমলা। ঘটনাচক্রে তার সেবায় এগিয়ে আসেন বাসুদেব ও সিদ্ধার্থ। কমলা ও নিজের পুত্রকে চিনতে পারেন সিদ্ধার্থ। শেষ মিলনের ক্ষণে কমলা ও সিদ্ধার্থের কথোপকথনের ভাষা হৃদয়স্পর্শী। বুদ্ধের দেখা না পাওয়ার অতৃপ্তি ঘুচে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে। কমলার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।
পুত্রকে কাছে পেয়ে সিদ্ধার্থ নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি বলে অনুভব করে কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভাঙে। পুত্র মায়ের বিলাসী জীবনধারায় বড় হয়েছে। সিদ্ধার্থের দরিদ্র কুটিরে কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। সিদ্ধার্থ সর্বোচ্চ ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দেন পুত্রের হৃদয় জয় করার জন্য। কিন্তু পুত্রের ঔদ্ধত্য ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সিদ্ধার্থের উদ্দেশে পুত্র বলে, ‘তুমি আমার মায়ের প্রেমিক হলেও তোমাকে আমি পিতা বলে স্বীকার করি না, তোমাকে ঘৃণা করি।’ কুটির থেকে পালিয়ে যায় পুত্র।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সিদ্ধার্থ জীবনের শেষ পর্বে আবারও মুখোমুখি হন গোবিন্দের। দুই অকৃত্রিম বন্ধু নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা বিনিময় করেন পরস্পরের সঙ্গে। মাঝি বাসুদেব ও নদীকে নিজের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ নিঃসংকোচে বলেন, ‘গোবিন্দ, আমার মনে হয় ভালোবাসা সংসারের সবচেয়ে বড় জিনিস। বড় বড় দার্শনিক পৃথিবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন, সংসার-কর্মকাণ্ডের চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে পারেন, ত্রিশটি বিচ্যুতির জন্য পৃথিবীকে ঘৃণাও করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় কথা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা, তাকে ঘৃণা করা নয়। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসব, এখানকার প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে ভালোবাসব, সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব এই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে।’ সিদ্ধার্থের অনন্ত জীবনতৃষ্ণা এভাবেই তৃপ্ত হয়। প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসাই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। সন্দেহ নেই, সিদ্ধার্থের এই শিক্ষা লেখক হেরমান হেসেরও জীবনদর্শন।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছি
১০ ডিসেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছি
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছি
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছি
১০ ডিসেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫