বিশ্বজিৎ চৌধুরী

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা
পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
স্কুলজীবনের শেষ দিকে কিংবা কলেজজীবনের শুরুতে, আজ আর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারি না, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন আবৃত্তিকারের ভরাট কণ্ঠে নজরুলের একটি চিঠির পাঠ শুনেছিলাম।
চিঠির সব কথা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারিনি, শুধু মনে পড়ে অদ্ভুত এক আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম সেদিন। বেশ কিছুকাল পর যখন নিজেরই সেই চিঠি পাঠের সুযোগ হলো, তখন আর আমি নবীন কিশোর নই, কিন্তু কী আশ্চর্য! পরিণত বয়সেও সেই চিঠি আমাকে যেন একইভাবে রোমাঞ্চিত করে তোলে, আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন—
“কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ-মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল—তা তুমিও স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার।...এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক্ তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে—আর তা মিথ্যা।
তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না—এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি—তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না—‘ধূমকেতু’র বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।”
দীর্ঘ চিঠির এটুকু অংশ পড়েই অজস্র প্রশ্ন জাগে মনে। কে এই নারী? কেন তাঁর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন কবি? সেই নারীর জন্য যদি সত্যিই তাঁর হৃদয়জুড়ে ‘গভীর ক্ষত’ ও ‘অসীম বেদনা’, তাহলে কেন বিচ্ছেদের করুণ পরিণতি পেয়েছিল এই সম্পর্ক? কেন বিয়ের সাজ ও স্বপ্নে সজ্জিতা একটি মেয়েকে বাসররাত ফুরোবার আগেই ফেলে রেখে এসেছিলেন কবি? ১৫ বছর পর এই পত্র কি নিজের অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা?
এসব প্রশ্নের সূত্র ধরে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের নার্গিসকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমি, তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব এই অভিপ্রায়ে। কিন্তু সেই পথ বড় অসহজ, দুর্গম। কবি নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক বহু গ্রন্থ পাঠ করে দেখি, এই নার্গিস প্রসঙ্গ কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন লেখকেরা। নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক ও তার পরিণতি সম্পর্কে গবেষকেরা রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত।
১৯২১ সালে আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নজরুল। সেখানে প্রায় আড়াই মাস অবস্থানকালে খান সাহেবের ভাগনি নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে—এ তথ্য নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ১৯২১ সালের ১৭ জুন নির্ধারিত তারিখে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, নাকি কাবিননামা বা অন্য কোনো মতবিরোধের কারণে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে উঠে চলে গিয়েছিলেন—এ নিয়েই যাবতীয় মতভিন্নতা।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও অভিভাবকতুল্য। তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে বিয়ের প্রসঙ্গটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা-ই যথার্থ বিবেচনা করেছেন রফিকুল ইসলাম, হায়াৎ মামুদ, জিয়াদ আলী ও শান্তনু কায়সারদের মতো বিজ্ঞ নজরুল গবেষকেরা; অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা শেষ অবধি হয়নি। বিয়ের আসর থেকেই উঠে চলে গিয়েছিলেন নজরুল। কিন্তু মুজফ্ফরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খোদ তাঁর জামাতা কবি আবদুল কাদির।
তিনি মুসলিম বিবাহ আইন উদ্ধৃত করে, ঘটনাপরম্পরা উল্লেখ করে বলেছিলেন, শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরদিন সকালে নজরুল কুমিল্লা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
নজরুল গবেষক আজহার আলী খান তো বটেই, সুফী জুলফিকার হায়দার, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন প্রমুখ নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্যও ছিল আবদুল কাদিরের অনুরূপ। তবে বিয়েতে কিছু একটা গোলযোগ হয়েছিল, এ বিষয়ে সবাই ছিলেন একমত।
উপন্যাস তো গবেষণা নয়, গবেষকদের দোটানার মধ্যে নিজের মতো করে পথ কেটে নিয়েছি আমি। তথ্য যেখানে শেষ, সেখানেই বিস্তৃতি ঘটেছে কল্পনার। এটুকু স্বাধীনতা ঔপন্যাসিকের প্রাপ্য বলেই মনে করি।
উপন্যাসে আমি সৈয়দা আসার খানম নামের একটি গ্রাম্য কিশোরীর কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাঁকে ভালোবেসে নজরুল তাঁর প্রিয় ফুলের নামে নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। আষাঢ় মাসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরদিন চলে যাওয়ার সময় কবি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, শ্রাবণ মাসে পরিবার-পরিজনসমেত এসে তুলে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, ১৭টি বছর কাটল, ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না।’
‘নার্গিস’ উপন্যাসটি লেখার সময় নজরুলের জীবনসংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। তখনই আরেকটি চরিত্র আমার মনে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ফজিলতুন্নেসা।
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় এসেছিলেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হয়ে। সেটা ১৯২৮ সাল। সেই সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন বিদূষী ফজিলতুন্নেসা। কিন্তু সেখানে নয়, এই শ্যামাঙ্গী মেধাবী তরুণীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় কাজী মোতাহের হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাড়িতে।
এই দীপ্তিময়ীর সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হন কবি এবং সেই মুগ্ধতা দ্রুত প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ফজিলতুন্নেসা তো নার্গিস নন। ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুখোড় ছাত্রীর সামনে তখন ভবিষ্যতের দিগন্ত অনেক দূর বিস্তৃত। কবির সান্নিধ্য, তাঁর গান ও কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু এই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়ার মতো হঠকারিতা তিনি করতে পারেন না। কোথাও হয়তো প্রশ্রয় কিছুটা ছিল, এদিকে নজরুলের ছিল নারীর হৃদয় জয় করার সহজাত ক্ষমতা।
তাই তিনি ভেবেছিলেন এখানেও সফল হবেন তিনি। তা হয়নি। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন। নজরুলের অনেক কালজয়ী কবিতা ও গানে আছে সেই বেদনার বয়ান।
ফজিলতুন্নেসা ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে পারত এই সম্পর্কের; ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ফজিলতুন্নেসাকে নিয়ে কবি যেমন কবিতা লিখেছিলেন ‘রহস্যময়ী’ নামে, আমাদেরও তাঁকে কিছুটা রহস্যময়ীই মনে হয়েছে। এই সম্পর্ক–বৈচিত্র্যকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি ‘কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসে।
নার্গিস বা ফজিলতুন্নেসা ছাড়াও নজরুলের জীবনে এসেছেন আরও অনেক নারী। এসব সম্পর্ক অনেকটা ‘ঘরেতে এল না সে তো মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া...’ গোছের।
কিন্তু আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের অসবর্ণ প্রেম সমাজের নানা ভ্রুকুটি বা আপত্তি সত্ত্বেও গৃহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাস লেখার সময় নজরুল-জীবনীতে আমি বারবার আশালতার দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়েছি। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে ঘর করা আর ঝড়কে নিজের ঘরে বন্দী করার চেষ্টা তো সমার্থক।
কখনো অভাব-দারিদ্র্য, কখনোবা প্রাচুর্য ও অপচয়—সবকিছুতেই লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত একটি মানুষকে নিজের শেষ দিনটি পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন যে নারী, তাঁকে নিয়ে না লিখলে বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ হয় না! সেই ভাবনা থেকে ‘আশালতা’ নামের একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। ২০২১ সালের একটি ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পূর্ণাঙ্গ ‘আশালতা’ প্রকাশ পাবে।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘নার্গিস’-এর সাতটি মুদ্রণ এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘কবি ও রহস্যময়ী’র দুটি মুদ্রণ এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এই আনুকূল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, নজরুলের কবিতা এখনো যেমন সমান আগ্রহে পাঠ করেন পাঠক, তেমনি তাঁর বর্ণময় ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসাও কমেনি। সে ক্ষেত্রে নিরেট ইতিহাস পাঠের চেয়ে আখ্যান পাঠের আনন্দ যে বেশি, তা তো বলাই বাহুল্য।

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা
পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
স্কুলজীবনের শেষ দিকে কিংবা কলেজজীবনের শুরুতে, আজ আর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারি না, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন আবৃত্তিকারের ভরাট কণ্ঠে নজরুলের একটি চিঠির পাঠ শুনেছিলাম।
চিঠির সব কথা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারিনি, শুধু মনে পড়ে অদ্ভুত এক আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম সেদিন। বেশ কিছুকাল পর যখন নিজেরই সেই চিঠি পাঠের সুযোগ হলো, তখন আর আমি নবীন কিশোর নই, কিন্তু কী আশ্চর্য! পরিণত বয়সেও সেই চিঠি আমাকে যেন একইভাবে রোমাঞ্চিত করে তোলে, আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন—
“কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ-মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল—তা তুমিও স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার।...এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক্ তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে—আর তা মিথ্যা।
তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না—এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি—তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না—‘ধূমকেতু’র বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।”
দীর্ঘ চিঠির এটুকু অংশ পড়েই অজস্র প্রশ্ন জাগে মনে। কে এই নারী? কেন তাঁর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন কবি? সেই নারীর জন্য যদি সত্যিই তাঁর হৃদয়জুড়ে ‘গভীর ক্ষত’ ও ‘অসীম বেদনা’, তাহলে কেন বিচ্ছেদের করুণ পরিণতি পেয়েছিল এই সম্পর্ক? কেন বিয়ের সাজ ও স্বপ্নে সজ্জিতা একটি মেয়েকে বাসররাত ফুরোবার আগেই ফেলে রেখে এসেছিলেন কবি? ১৫ বছর পর এই পত্র কি নিজের অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা?
এসব প্রশ্নের সূত্র ধরে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের নার্গিসকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমি, তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব এই অভিপ্রায়ে। কিন্তু সেই পথ বড় অসহজ, দুর্গম। কবি নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক বহু গ্রন্থ পাঠ করে দেখি, এই নার্গিস প্রসঙ্গ কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন লেখকেরা। নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক ও তার পরিণতি সম্পর্কে গবেষকেরা রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত।
১৯২১ সালে আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নজরুল। সেখানে প্রায় আড়াই মাস অবস্থানকালে খান সাহেবের ভাগনি নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে—এ তথ্য নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ১৯২১ সালের ১৭ জুন নির্ধারিত তারিখে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, নাকি কাবিননামা বা অন্য কোনো মতবিরোধের কারণে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে উঠে চলে গিয়েছিলেন—এ নিয়েই যাবতীয় মতভিন্নতা।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও অভিভাবকতুল্য। তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে বিয়ের প্রসঙ্গটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা-ই যথার্থ বিবেচনা করেছেন রফিকুল ইসলাম, হায়াৎ মামুদ, জিয়াদ আলী ও শান্তনু কায়সারদের মতো বিজ্ঞ নজরুল গবেষকেরা; অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা শেষ অবধি হয়নি। বিয়ের আসর থেকেই উঠে চলে গিয়েছিলেন নজরুল। কিন্তু মুজফ্ফরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খোদ তাঁর জামাতা কবি আবদুল কাদির।
তিনি মুসলিম বিবাহ আইন উদ্ধৃত করে, ঘটনাপরম্পরা উল্লেখ করে বলেছিলেন, শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরদিন সকালে নজরুল কুমিল্লা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
নজরুল গবেষক আজহার আলী খান তো বটেই, সুফী জুলফিকার হায়দার, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন প্রমুখ নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্যও ছিল আবদুল কাদিরের অনুরূপ। তবে বিয়েতে কিছু একটা গোলযোগ হয়েছিল, এ বিষয়ে সবাই ছিলেন একমত।
উপন্যাস তো গবেষণা নয়, গবেষকদের দোটানার মধ্যে নিজের মতো করে পথ কেটে নিয়েছি আমি। তথ্য যেখানে শেষ, সেখানেই বিস্তৃতি ঘটেছে কল্পনার। এটুকু স্বাধীনতা ঔপন্যাসিকের প্রাপ্য বলেই মনে করি।
উপন্যাসে আমি সৈয়দা আসার খানম নামের একটি গ্রাম্য কিশোরীর কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাঁকে ভালোবেসে নজরুল তাঁর প্রিয় ফুলের নামে নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। আষাঢ় মাসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরদিন চলে যাওয়ার সময় কবি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, শ্রাবণ মাসে পরিবার-পরিজনসমেত এসে তুলে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, ১৭টি বছর কাটল, ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না।’
‘নার্গিস’ উপন্যাসটি লেখার সময় নজরুলের জীবনসংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। তখনই আরেকটি চরিত্র আমার মনে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ফজিলতুন্নেসা।
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় এসেছিলেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হয়ে। সেটা ১৯২৮ সাল। সেই সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন বিদূষী ফজিলতুন্নেসা। কিন্তু সেখানে নয়, এই শ্যামাঙ্গী মেধাবী তরুণীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় কাজী মোতাহের হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাড়িতে।
এই দীপ্তিময়ীর সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হন কবি এবং সেই মুগ্ধতা দ্রুত প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ফজিলতুন্নেসা তো নার্গিস নন। ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুখোড় ছাত্রীর সামনে তখন ভবিষ্যতের দিগন্ত অনেক দূর বিস্তৃত। কবির সান্নিধ্য, তাঁর গান ও কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু এই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়ার মতো হঠকারিতা তিনি করতে পারেন না। কোথাও হয়তো প্রশ্রয় কিছুটা ছিল, এদিকে নজরুলের ছিল নারীর হৃদয় জয় করার সহজাত ক্ষমতা।
তাই তিনি ভেবেছিলেন এখানেও সফল হবেন তিনি। তা হয়নি। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন। নজরুলের অনেক কালজয়ী কবিতা ও গানে আছে সেই বেদনার বয়ান।
ফজিলতুন্নেসা ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে পারত এই সম্পর্কের; ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ফজিলতুন্নেসাকে নিয়ে কবি যেমন কবিতা লিখেছিলেন ‘রহস্যময়ী’ নামে, আমাদেরও তাঁকে কিছুটা রহস্যময়ীই মনে হয়েছে। এই সম্পর্ক–বৈচিত্র্যকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি ‘কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসে।
নার্গিস বা ফজিলতুন্নেসা ছাড়াও নজরুলের জীবনে এসেছেন আরও অনেক নারী। এসব সম্পর্ক অনেকটা ‘ঘরেতে এল না সে তো মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া...’ গোছের।
কিন্তু আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের অসবর্ণ প্রেম সমাজের নানা ভ্রুকুটি বা আপত্তি সত্ত্বেও গৃহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাস লেখার সময় নজরুল-জীবনীতে আমি বারবার আশালতার দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়েছি। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে ঘর করা আর ঝড়কে নিজের ঘরে বন্দী করার চেষ্টা তো সমার্থক।
কখনো অভাব-দারিদ্র্য, কখনোবা প্রাচুর্য ও অপচয়—সবকিছুতেই লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত একটি মানুষকে নিজের শেষ দিনটি পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন যে নারী, তাঁকে নিয়ে না লিখলে বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ হয় না! সেই ভাবনা থেকে ‘আশালতা’ নামের একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। ২০২১ সালের একটি ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পূর্ণাঙ্গ ‘আশালতা’ প্রকাশ পাবে।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘নার্গিস’-এর সাতটি মুদ্রণ এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘কবি ও রহস্যময়ী’র দুটি মুদ্রণ এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এই আনুকূল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, নজরুলের কবিতা এখনো যেমন সমান আগ্রহে পাঠ করেন পাঠক, তেমনি তাঁর বর্ণময় ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসাও কমেনি। সে ক্ষেত্রে নিরেট ইতিহাস পাঠের চেয়ে আখ্যান পাঠের আনন্দ যে বেশি, তা তো বলাই বাহুল্য।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা
পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
স্কুলজীবনের শেষ দিকে কিংবা কলেজজীবনের শুরুতে, আজ আর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারি না, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন আবৃত্তিকারের ভরাট কণ্ঠে নজরুলের একটি চিঠির পাঠ শুনেছিলাম।
চিঠির সব কথা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারিনি, শুধু মনে পড়ে অদ্ভুত এক আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম সেদিন। বেশ কিছুকাল পর যখন নিজেরই সেই চিঠি পাঠের সুযোগ হলো, তখন আর আমি নবীন কিশোর নই, কিন্তু কী আশ্চর্য! পরিণত বয়সেও সেই চিঠি আমাকে যেন একইভাবে রোমাঞ্চিত করে তোলে, আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন—
“কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ-মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল—তা তুমিও স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার।...এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক্ তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে—আর তা মিথ্যা।
তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না—এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি—তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না—‘ধূমকেতু’র বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।”
দীর্ঘ চিঠির এটুকু অংশ পড়েই অজস্র প্রশ্ন জাগে মনে। কে এই নারী? কেন তাঁর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন কবি? সেই নারীর জন্য যদি সত্যিই তাঁর হৃদয়জুড়ে ‘গভীর ক্ষত’ ও ‘অসীম বেদনা’, তাহলে কেন বিচ্ছেদের করুণ পরিণতি পেয়েছিল এই সম্পর্ক? কেন বিয়ের সাজ ও স্বপ্নে সজ্জিতা একটি মেয়েকে বাসররাত ফুরোবার আগেই ফেলে রেখে এসেছিলেন কবি? ১৫ বছর পর এই পত্র কি নিজের অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা?
এসব প্রশ্নের সূত্র ধরে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের নার্গিসকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমি, তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব এই অভিপ্রায়ে। কিন্তু সেই পথ বড় অসহজ, দুর্গম। কবি নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক বহু গ্রন্থ পাঠ করে দেখি, এই নার্গিস প্রসঙ্গ কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন লেখকেরা। নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক ও তার পরিণতি সম্পর্কে গবেষকেরা রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত।
১৯২১ সালে আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নজরুল। সেখানে প্রায় আড়াই মাস অবস্থানকালে খান সাহেবের ভাগনি নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে—এ তথ্য নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ১৯২১ সালের ১৭ জুন নির্ধারিত তারিখে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, নাকি কাবিননামা বা অন্য কোনো মতবিরোধের কারণে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে উঠে চলে গিয়েছিলেন—এ নিয়েই যাবতীয় মতভিন্নতা।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও অভিভাবকতুল্য। তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে বিয়ের প্রসঙ্গটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা-ই যথার্থ বিবেচনা করেছেন রফিকুল ইসলাম, হায়াৎ মামুদ, জিয়াদ আলী ও শান্তনু কায়সারদের মতো বিজ্ঞ নজরুল গবেষকেরা; অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা শেষ অবধি হয়নি। বিয়ের আসর থেকেই উঠে চলে গিয়েছিলেন নজরুল। কিন্তু মুজফ্ফরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খোদ তাঁর জামাতা কবি আবদুল কাদির।
তিনি মুসলিম বিবাহ আইন উদ্ধৃত করে, ঘটনাপরম্পরা উল্লেখ করে বলেছিলেন, শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরদিন সকালে নজরুল কুমিল্লা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
নজরুল গবেষক আজহার আলী খান তো বটেই, সুফী জুলফিকার হায়দার, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন প্রমুখ নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্যও ছিল আবদুল কাদিরের অনুরূপ। তবে বিয়েতে কিছু একটা গোলযোগ হয়েছিল, এ বিষয়ে সবাই ছিলেন একমত।
উপন্যাস তো গবেষণা নয়, গবেষকদের দোটানার মধ্যে নিজের মতো করে পথ কেটে নিয়েছি আমি। তথ্য যেখানে শেষ, সেখানেই বিস্তৃতি ঘটেছে কল্পনার। এটুকু স্বাধীনতা ঔপন্যাসিকের প্রাপ্য বলেই মনে করি।
উপন্যাসে আমি সৈয়দা আসার খানম নামের একটি গ্রাম্য কিশোরীর কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাঁকে ভালোবেসে নজরুল তাঁর প্রিয় ফুলের নামে নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। আষাঢ় মাসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরদিন চলে যাওয়ার সময় কবি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, শ্রাবণ মাসে পরিবার-পরিজনসমেত এসে তুলে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, ১৭টি বছর কাটল, ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না।’
‘নার্গিস’ উপন্যাসটি লেখার সময় নজরুলের জীবনসংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। তখনই আরেকটি চরিত্র আমার মনে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ফজিলতুন্নেসা।
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় এসেছিলেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হয়ে। সেটা ১৯২৮ সাল। সেই সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন বিদূষী ফজিলতুন্নেসা। কিন্তু সেখানে নয়, এই শ্যামাঙ্গী মেধাবী তরুণীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় কাজী মোতাহের হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাড়িতে।
এই দীপ্তিময়ীর সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হন কবি এবং সেই মুগ্ধতা দ্রুত প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ফজিলতুন্নেসা তো নার্গিস নন। ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুখোড় ছাত্রীর সামনে তখন ভবিষ্যতের দিগন্ত অনেক দূর বিস্তৃত। কবির সান্নিধ্য, তাঁর গান ও কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু এই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়ার মতো হঠকারিতা তিনি করতে পারেন না। কোথাও হয়তো প্রশ্রয় কিছুটা ছিল, এদিকে নজরুলের ছিল নারীর হৃদয় জয় করার সহজাত ক্ষমতা।
তাই তিনি ভেবেছিলেন এখানেও সফল হবেন তিনি। তা হয়নি। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন। নজরুলের অনেক কালজয়ী কবিতা ও গানে আছে সেই বেদনার বয়ান।
ফজিলতুন্নেসা ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে পারত এই সম্পর্কের; ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ফজিলতুন্নেসাকে নিয়ে কবি যেমন কবিতা লিখেছিলেন ‘রহস্যময়ী’ নামে, আমাদেরও তাঁকে কিছুটা রহস্যময়ীই মনে হয়েছে। এই সম্পর্ক–বৈচিত্র্যকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি ‘কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসে।
নার্গিস বা ফজিলতুন্নেসা ছাড়াও নজরুলের জীবনে এসেছেন আরও অনেক নারী। এসব সম্পর্ক অনেকটা ‘ঘরেতে এল না সে তো মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া...’ গোছের।
কিন্তু আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের অসবর্ণ প্রেম সমাজের নানা ভ্রুকুটি বা আপত্তি সত্ত্বেও গৃহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাস লেখার সময় নজরুল-জীবনীতে আমি বারবার আশালতার দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়েছি। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে ঘর করা আর ঝড়কে নিজের ঘরে বন্দী করার চেষ্টা তো সমার্থক।
কখনো অভাব-দারিদ্র্য, কখনোবা প্রাচুর্য ও অপচয়—সবকিছুতেই লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত একটি মানুষকে নিজের শেষ দিনটি পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন যে নারী, তাঁকে নিয়ে না লিখলে বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ হয় না! সেই ভাবনা থেকে ‘আশালতা’ নামের একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। ২০২১ সালের একটি ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পূর্ণাঙ্গ ‘আশালতা’ প্রকাশ পাবে।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘নার্গিস’-এর সাতটি মুদ্রণ এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘কবি ও রহস্যময়ী’র দুটি মুদ্রণ এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এই আনুকূল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, নজরুলের কবিতা এখনো যেমন সমান আগ্রহে পাঠ করেন পাঠক, তেমনি তাঁর বর্ণময় ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসাও কমেনি। সে ক্ষেত্রে নিরেট ইতিহাস পাঠের চেয়ে আখ্যান পাঠের আনন্দ যে বেশি, তা তো বলাই বাহুল্য।

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা
পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
স্কুলজীবনের শেষ দিকে কিংবা কলেজজীবনের শুরুতে, আজ আর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারি না, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন আবৃত্তিকারের ভরাট কণ্ঠে নজরুলের একটি চিঠির পাঠ শুনেছিলাম।
চিঠির সব কথা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারিনি, শুধু মনে পড়ে অদ্ভুত এক আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম সেদিন। বেশ কিছুকাল পর যখন নিজেরই সেই চিঠি পাঠের সুযোগ হলো, তখন আর আমি নবীন কিশোর নই, কিন্তু কী আশ্চর্য! পরিণত বয়সেও সেই চিঠি আমাকে যেন একইভাবে রোমাঞ্চিত করে তোলে, আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন—
“কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ-মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল—তা তুমিও স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার।...এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক্ তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে—আর তা মিথ্যা।
তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না—এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি—তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না—‘ধূমকেতু’র বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।”
দীর্ঘ চিঠির এটুকু অংশ পড়েই অজস্র প্রশ্ন জাগে মনে। কে এই নারী? কেন তাঁর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন কবি? সেই নারীর জন্য যদি সত্যিই তাঁর হৃদয়জুড়ে ‘গভীর ক্ষত’ ও ‘অসীম বেদনা’, তাহলে কেন বিচ্ছেদের করুণ পরিণতি পেয়েছিল এই সম্পর্ক? কেন বিয়ের সাজ ও স্বপ্নে সজ্জিতা একটি মেয়েকে বাসররাত ফুরোবার আগেই ফেলে রেখে এসেছিলেন কবি? ১৫ বছর পর এই পত্র কি নিজের অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা?
এসব প্রশ্নের সূত্র ধরে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের নার্গিসকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমি, তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব এই অভিপ্রায়ে। কিন্তু সেই পথ বড় অসহজ, দুর্গম। কবি নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক বহু গ্রন্থ পাঠ করে দেখি, এই নার্গিস প্রসঙ্গ কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন লেখকেরা। নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক ও তার পরিণতি সম্পর্কে গবেষকেরা রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত।
১৯২১ সালে আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নজরুল। সেখানে প্রায় আড়াই মাস অবস্থানকালে খান সাহেবের ভাগনি নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে—এ তথ্য নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ১৯২১ সালের ১৭ জুন নির্ধারিত তারিখে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, নাকি কাবিননামা বা অন্য কোনো মতবিরোধের কারণে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে উঠে চলে গিয়েছিলেন—এ নিয়েই যাবতীয় মতভিন্নতা।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও অভিভাবকতুল্য। তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে বিয়ের প্রসঙ্গটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা-ই যথার্থ বিবেচনা করেছেন রফিকুল ইসলাম, হায়াৎ মামুদ, জিয়াদ আলী ও শান্তনু কায়সারদের মতো বিজ্ঞ নজরুল গবেষকেরা; অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা শেষ অবধি হয়নি। বিয়ের আসর থেকেই উঠে চলে গিয়েছিলেন নজরুল। কিন্তু মুজফ্ফরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খোদ তাঁর জামাতা কবি আবদুল কাদির।
তিনি মুসলিম বিবাহ আইন উদ্ধৃত করে, ঘটনাপরম্পরা উল্লেখ করে বলেছিলেন, শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরদিন সকালে নজরুল কুমিল্লা ছেড়ে গিয়েছিলেন।
নজরুল গবেষক আজহার আলী খান তো বটেই, সুফী জুলফিকার হায়দার, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন প্রমুখ নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্যও ছিল আবদুল কাদিরের অনুরূপ। তবে বিয়েতে কিছু একটা গোলযোগ হয়েছিল, এ বিষয়ে সবাই ছিলেন একমত।
উপন্যাস তো গবেষণা নয়, গবেষকদের দোটানার মধ্যে নিজের মতো করে পথ কেটে নিয়েছি আমি। তথ্য যেখানে শেষ, সেখানেই বিস্তৃতি ঘটেছে কল্পনার। এটুকু স্বাধীনতা ঔপন্যাসিকের প্রাপ্য বলেই মনে করি।
উপন্যাসে আমি সৈয়দা আসার খানম নামের একটি গ্রাম্য কিশোরীর কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাঁকে ভালোবেসে নজরুল তাঁর প্রিয় ফুলের নামে নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। আষাঢ় মাসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরদিন চলে যাওয়ার সময় কবি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, শ্রাবণ মাসে পরিবার-পরিজনসমেত এসে তুলে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, ১৭টি বছর কাটল, ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না।’
‘নার্গিস’ উপন্যাসটি লেখার সময় নজরুলের জীবনসংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। তখনই আরেকটি চরিত্র আমার মনে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ফজিলতুন্নেসা।
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় এসেছিলেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হয়ে। সেটা ১৯২৮ সাল। সেই সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন বিদূষী ফজিলতুন্নেসা। কিন্তু সেখানে নয়, এই শ্যামাঙ্গী মেধাবী তরুণীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় কাজী মোতাহের হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাড়িতে।
এই দীপ্তিময়ীর সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হন কবি এবং সেই মুগ্ধতা দ্রুত প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ফজিলতুন্নেসা তো নার্গিস নন। ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুখোড় ছাত্রীর সামনে তখন ভবিষ্যতের দিগন্ত অনেক দূর বিস্তৃত। কবির সান্নিধ্য, তাঁর গান ও কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু এই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়ার মতো হঠকারিতা তিনি করতে পারেন না। কোথাও হয়তো প্রশ্রয় কিছুটা ছিল, এদিকে নজরুলের ছিল নারীর হৃদয় জয় করার সহজাত ক্ষমতা।
তাই তিনি ভেবেছিলেন এখানেও সফল হবেন তিনি। তা হয়নি। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন। নজরুলের অনেক কালজয়ী কবিতা ও গানে আছে সেই বেদনার বয়ান।
ফজিলতুন্নেসা ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে পারত এই সম্পর্কের; ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ফজিলতুন্নেসাকে নিয়ে কবি যেমন কবিতা লিখেছিলেন ‘রহস্যময়ী’ নামে, আমাদেরও তাঁকে কিছুটা রহস্যময়ীই মনে হয়েছে। এই সম্পর্ক–বৈচিত্র্যকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি ‘কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসে।
নার্গিস বা ফজিলতুন্নেসা ছাড়াও নজরুলের জীবনে এসেছেন আরও অনেক নারী। এসব সম্পর্ক অনেকটা ‘ঘরেতে এল না সে তো মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া...’ গোছের।
কিন্তু আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের অসবর্ণ প্রেম সমাজের নানা ভ্রুকুটি বা আপত্তি সত্ত্বেও গৃহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাস লেখার সময় নজরুল-জীবনীতে আমি বারবার আশালতার দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়েছি। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে ঘর করা আর ঝড়কে নিজের ঘরে বন্দী করার চেষ্টা তো সমার্থক।
কখনো অভাব-দারিদ্র্য, কখনোবা প্রাচুর্য ও অপচয়—সবকিছুতেই লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত একটি মানুষকে নিজের শেষ দিনটি পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন যে নারী, তাঁকে নিয়ে না লিখলে বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ হয় না! সেই ভাবনা থেকে ‘আশালতা’ নামের একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। ২০২১ সালের একটি ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পূর্ণাঙ্গ ‘আশালতা’ প্রকাশ পাবে।
২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘নার্গিস’-এর সাতটি মুদ্রণ এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘কবি ও রহস্যময়ী’র দুটি মুদ্রণ এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এই আনুকূল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, নজরুলের কবিতা এখনো যেমন সমান আগ্রহে পাঠ করেন পাঠক, তেমনি তাঁর বর্ণময় ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসাও কমেনি। সে ক্ষেত্রে নিরেট ইতিহাস পাঠের চেয়ে আখ্যান পাঠের আনন্দ যে বেশি, তা তো বলাই বাহুল্য।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।
২৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২৩ নভেম্বর ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫