তামান্না-ই-জাহান

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বছর পার হতে চললেও যুদ্ধ শিগগির শেষ হবে এমন সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মেলেনি। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরও যে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না, তা ভবিতব্য।
২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাত কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনোদন- এই খাতগুলি চলতি বছর ঠিক কেমন যেতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জ্বালানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দামও। ফলে সংকটে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো। এরই মধ্যে আবার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল ও গ্যাস উৎপাদন কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই ২০২৩ সালে জ্বালানির ব্যবহারও কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক-মহামারির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উৎপাদন কিছুটা বাড়ানোয় দাম কমলেও তা হবে নামমাত্র।
প্রযুক্তি
২০২০ ও ২০২১ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দা থাকলেও প্রযুক্তি খাত ভালো করেছিল। তবে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এবং সুদের হার বৃদ্ধির মতো বিষয় ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতের ব্যয় কমাতে পারবে না। এ বছর প্রযুক্তিগত ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, যন্ত্রাংশ বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ফুলে ফেঁপে ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
প্রতিরক্ষা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট শক্তিশালী করবে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে এই খাতে প্রায় ৯ শতাংশ ব্যয় বাড়াবে। এবছর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৮০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আভাস মিলেছে, যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গিয়ে সংকুচিত হতে পারে মার্কিনীদের বাজেট। জাপান এবং জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য অনুসরণ করবে। এ ছাড়া ন্যাটো উদ্ভাবনী তহবিল প্রসারিত করলে আমেরিকা গবেষণা ব্যয় বাড়াতে পারে। তবে ২০২৩ সালে জনশক্তিও গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে।
গাড়ি নির্মাণ
২০২৩ সালে নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়বে মাত্র এক শতাংশ। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির হার বাড়তে পারে ২৫ শতাংশ। অটোমোটিভ বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়বে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে এককোটি ৮ লাখে। এ বিক্রি প্রাক-মহামারি পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য অনেক খাতের মতো এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেবে চীন। আগামী এক বছরের মধ্যে চীনের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
খাদ্য ও কৃষি
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০২৩ সালে খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে আর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। অনেক অঞ্চলে ফসলের ফলন কমে যাবে। গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমবে, তবে চালের উৎপাদন বাড়বে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য ও পানীয় এবং পশুখাদ্যের মূল্য সূচক ১২ শতাংশ কমতে পারে। ব্যয় কমাতে ভোক্তারা গমের বদলে বাজরা কিংবা সূর্যমুখী তেলের পরিবর্তে অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলে স্বাদ পরিবর্তন করবে। খাদ্য সরবরাহ ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু দেশ নতুন খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে পারে। ফলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে খাদ্য ও কৃষি খাতে। আর এতে লাভবান হবে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের ৮৩ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
পর্যটন খাত
বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গেল বছর থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ খাতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তবে পর্যটন খাত প্রাক-মহামারির পর্যায়ে ফিরবে না বলে জানিয়েছে অনেক সংস্থা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনে করোনার বিধিনিষেধ, অর্থনীতির শ্লথগতি—এসব কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যাহত হবে। এ ছাড়া এখনো অনেকে সশরীরে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে সাক্ষাৎ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তবে সেটি প্রাক-মহামারির পর্যায়ের নিচেই থাকবে।
বিজ্ঞাপন
মহামারি পরবর্তী ব্যয় বৃদ্ধির পর বিজ্ঞাপন ব্যবসা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে বলতে হয়। তবে বিজ্ঞাপন জায়ান্ট ডেন্টসু আশা করছে, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের আয় ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭৮ হাজার কোটিতে উন্নীত হবে। এ ছাড়া মহামারির সময়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে, জনপ্রিয় বিভিন্ন গেম এবং ছোট ভিডিওর জন্য মোবাইল বিজ্ঞাপনের ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং ভারত—এই খাতে নেতৃত্ব দেবে। তবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সুরক্ষা নিয়ে আগের তুলনায় উদ্বেগ বাড়বে।
বিনোদন
নতুন সাবস্ক্রাইবার পাওয়া কঠিন হওয়ায় এবং প্রতিযোগিতার বাজার কঠিন হয়ে উঠলেও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো কনটেন্ট তৈরিতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে এ বছর। যেমন-স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স বার্ষিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনায় অবিচল থাকতে পারে। করোনা আতঙ্ক কমে যাওয়ার সাথে সাথে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ খাতে আরও বেশি অর্থ লগ্নিতে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে বক্স অফিস আয় ২০১৯ সালের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো মাসিক ফি বৃদ্ধির কারণে সাবস্ক্রাইবার হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে নতুন নতুন পরিষেবা যুক্ত করতে পারে কোম্পানিগুলো। যেমন, ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি প্লাস ও এইচবিও ম্যাক্সের সমন্বয়ে একটি পরিষেবা চালু করবে। এরই মধ্যে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও বিশ্বকাপের মতো খেলা সম্প্রচারে বেশ সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সাল থেকে অ্যাপল টিভি প্লাস আমেরিকার মেজর লিগ সকার সরাসরি সম্প্রচার করবে। সব মিলিয়ে এ বছর বিনোদন খাত যে বেশ ভালোই ব্যবসা করবে, তার আভাস মিলছে।
স্বাস্থ্যসেবা
২০২৩ সালেও করোনাভাইরাস আরও অনেকের প্রাণ নিতে পারে। যদি কোনো বিপজ্জনক নতুন ধরন না বের হয় তবে এ সংখ্যা ফ্লুতে মৃতের সংখ্যার চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসতে পারে। ২০২৩ সালে জন্মহার বৃদ্ধি ও শিশু মৃত্যুহার কমতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে ব্যয় বাড়াতে অন্য খাতে অর্থায়ন কমানোর চেষ্টা করবে। ভারত থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ার মতো দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করবে। এ ছাড়া ওষুধের দাম নামমাত্র বৃদ্ধি ও গড়ে একজন মানুষে চিকিৎসা ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর্থিক খাত
চলতি বছর বিশ্বে একটি মন্থর অর্থনীতি বিরাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ব্যাংক খাত ২০২৩ সালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিমা খাত, তহবিল ব্যবস্থাপনার মতো আর্থিক খাতের জন্যও এ পূর্বাভাস প্রযোজ্য। প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্টরাও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঁজিবাজারে নতুন ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। চীন যদি ২০২৩ সালে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে এ বছর মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়তে পারে।

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বছর পার হতে চললেও যুদ্ধ শিগগির শেষ হবে এমন সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মেলেনি। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরও যে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না, তা ভবিতব্য।
২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাত কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনোদন- এই খাতগুলি চলতি বছর ঠিক কেমন যেতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জ্বালানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দামও। ফলে সংকটে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো। এরই মধ্যে আবার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল ও গ্যাস উৎপাদন কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই ২০২৩ সালে জ্বালানির ব্যবহারও কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক-মহামারির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উৎপাদন কিছুটা বাড়ানোয় দাম কমলেও তা হবে নামমাত্র।
প্রযুক্তি
২০২০ ও ২০২১ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দা থাকলেও প্রযুক্তি খাত ভালো করেছিল। তবে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এবং সুদের হার বৃদ্ধির মতো বিষয় ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতের ব্যয় কমাতে পারবে না। এ বছর প্রযুক্তিগত ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, যন্ত্রাংশ বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ফুলে ফেঁপে ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
প্রতিরক্ষা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট শক্তিশালী করবে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে এই খাতে প্রায় ৯ শতাংশ ব্যয় বাড়াবে। এবছর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৮০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আভাস মিলেছে, যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গিয়ে সংকুচিত হতে পারে মার্কিনীদের বাজেট। জাপান এবং জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য অনুসরণ করবে। এ ছাড়া ন্যাটো উদ্ভাবনী তহবিল প্রসারিত করলে আমেরিকা গবেষণা ব্যয় বাড়াতে পারে। তবে ২০২৩ সালে জনশক্তিও গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে।
গাড়ি নির্মাণ
২০২৩ সালে নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়বে মাত্র এক শতাংশ। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির হার বাড়তে পারে ২৫ শতাংশ। অটোমোটিভ বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়বে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে এককোটি ৮ লাখে। এ বিক্রি প্রাক-মহামারি পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য অনেক খাতের মতো এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেবে চীন। আগামী এক বছরের মধ্যে চীনের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
খাদ্য ও কৃষি
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০২৩ সালে খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে আর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। অনেক অঞ্চলে ফসলের ফলন কমে যাবে। গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমবে, তবে চালের উৎপাদন বাড়বে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য ও পানীয় এবং পশুখাদ্যের মূল্য সূচক ১২ শতাংশ কমতে পারে। ব্যয় কমাতে ভোক্তারা গমের বদলে বাজরা কিংবা সূর্যমুখী তেলের পরিবর্তে অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলে স্বাদ পরিবর্তন করবে। খাদ্য সরবরাহ ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু দেশ নতুন খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে পারে। ফলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে খাদ্য ও কৃষি খাতে। আর এতে লাভবান হবে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের ৮৩ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
পর্যটন খাত
বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গেল বছর থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ খাতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তবে পর্যটন খাত প্রাক-মহামারির পর্যায়ে ফিরবে না বলে জানিয়েছে অনেক সংস্থা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনে করোনার বিধিনিষেধ, অর্থনীতির শ্লথগতি—এসব কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যাহত হবে। এ ছাড়া এখনো অনেকে সশরীরে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে সাক্ষাৎ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তবে সেটি প্রাক-মহামারির পর্যায়ের নিচেই থাকবে।
বিজ্ঞাপন
মহামারি পরবর্তী ব্যয় বৃদ্ধির পর বিজ্ঞাপন ব্যবসা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে বলতে হয়। তবে বিজ্ঞাপন জায়ান্ট ডেন্টসু আশা করছে, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের আয় ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭৮ হাজার কোটিতে উন্নীত হবে। এ ছাড়া মহামারির সময়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে, জনপ্রিয় বিভিন্ন গেম এবং ছোট ভিডিওর জন্য মোবাইল বিজ্ঞাপনের ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং ভারত—এই খাতে নেতৃত্ব দেবে। তবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সুরক্ষা নিয়ে আগের তুলনায় উদ্বেগ বাড়বে।
বিনোদন
নতুন সাবস্ক্রাইবার পাওয়া কঠিন হওয়ায় এবং প্রতিযোগিতার বাজার কঠিন হয়ে উঠলেও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো কনটেন্ট তৈরিতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে এ বছর। যেমন-স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স বার্ষিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনায় অবিচল থাকতে পারে। করোনা আতঙ্ক কমে যাওয়ার সাথে সাথে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ খাতে আরও বেশি অর্থ লগ্নিতে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে বক্স অফিস আয় ২০১৯ সালের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো মাসিক ফি বৃদ্ধির কারণে সাবস্ক্রাইবার হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে নতুন নতুন পরিষেবা যুক্ত করতে পারে কোম্পানিগুলো। যেমন, ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি প্লাস ও এইচবিও ম্যাক্সের সমন্বয়ে একটি পরিষেবা চালু করবে। এরই মধ্যে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও বিশ্বকাপের মতো খেলা সম্প্রচারে বেশ সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সাল থেকে অ্যাপল টিভি প্লাস আমেরিকার মেজর লিগ সকার সরাসরি সম্প্রচার করবে। সব মিলিয়ে এ বছর বিনোদন খাত যে বেশ ভালোই ব্যবসা করবে, তার আভাস মিলছে।
স্বাস্থ্যসেবা
২০২৩ সালেও করোনাভাইরাস আরও অনেকের প্রাণ নিতে পারে। যদি কোনো বিপজ্জনক নতুন ধরন না বের হয় তবে এ সংখ্যা ফ্লুতে মৃতের সংখ্যার চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসতে পারে। ২০২৩ সালে জন্মহার বৃদ্ধি ও শিশু মৃত্যুহার কমতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে ব্যয় বাড়াতে অন্য খাতে অর্থায়ন কমানোর চেষ্টা করবে। ভারত থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ার মতো দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করবে। এ ছাড়া ওষুধের দাম নামমাত্র বৃদ্ধি ও গড়ে একজন মানুষে চিকিৎসা ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর্থিক খাত
চলতি বছর বিশ্বে একটি মন্থর অর্থনীতি বিরাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ব্যাংক খাত ২০২৩ সালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিমা খাত, তহবিল ব্যবস্থাপনার মতো আর্থিক খাতের জন্যও এ পূর্বাভাস প্রযোজ্য। প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্টরাও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঁজিবাজারে নতুন ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। চীন যদি ২০২৩ সালে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে এ বছর মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়তে পারে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় বিশ্বের ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাতের পরিস্থিতি কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনো
১৩ জানুয়ারি ২০২৩
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় বিশ্বের ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাতের পরিস্থিতি কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনো
১৩ জানুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় বিশ্বের ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাতের পরিস্থিতি কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনো
১৩ জানুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় বিশ্বের ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাতের পরিস্থিতি কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনো
১৩ জানুয়ারি ২০২৩
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে