আব্দুর রহমান

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আব্দুর রহমান

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে