আব্দুর রহমান

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনাদের চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালেবান ক্ষমতায় ফেরে, তখন তৎকালীন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানরা ‘দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলেছে।’ তালেবানরা ২০০১ সালের পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ফের ক্ষমতা আরোহণ করে। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবানরা ক্ষমতায় আসায় দেশটির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে। কিন্তু ‘গভীর কৌশলগত’ এই অঞ্চলে পাকিস্তানের প্রভাব এখন তলানিতে ঠেকেছে।
পাকিস্তান এক সময় তালেবানদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। আর এ কারণেই তালেবানরা ক্ষমতায় আসায়, দেশটিতে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তা হয়নি, বরং উল্টোটা হয়েছে। পাকিস্তানের ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ নামে আফগানিস্তান ঘিরে যে ডকট্রিন বা চর্চিত তত্ত্ব আছে, সেটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পাকিস্তান ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবার কাবুলকে পাশে পাবে। কিন্তু তিন বছরেই মধ্যেই পাশার উল্টে গেছে। তালেবান সরকার ভারতকে দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে দূতাবাস খোলার অনুমতি দিয়েছে। কেবল তাই নয়, তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দিল্লি সফর করেছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তালেবান মন্ত্রী ভারতকে আফগানিস্তানের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন।
কাবুল-দিল্লি এমন মাখামাখি ইসলামাবাদকে ক্ষুব্ধ করেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তান কাবুল পর্যন্ত গিয়ে হামলা চালিয়ে এসেছে। এমনকি গতকাল শনিবার রাত থেকে পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘাত বেঁধেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানের ১৯টি সীমান্তচৌকি দখলের দাবি করেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য খোরাসান ডায়েরির’ সহপ্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ফিরদৌস সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি এই পরিবর্তনগুলো আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে, তবে তা ইসলামাবাদ-কাবুল সম্পর্ককে চাপের মুখে ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সীমান্তের ওপর নির্ভরশীল আফগান জনগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
পাকিস্তান–তালেবান–ভারত সম্পর্কের বর্তমান চালচিত্র বোঝার আগে তাদের পুরোনো ইতিহাসে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে এবং একুশ শতকের প্রথম দুই দশকে পশ্চিমাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের সময় তালেবান মুজাহিদীনদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা ও সমর্থক ছিল পাকিস্তান। সেই সময় তালেবানের অনেক নেতা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেতেন।
বিপরীতে, ভারত গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী প্রতিনিধি হিসেবে দেখত। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ভারত কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবান এবং বর্তমান সরকারে তাদের মিত্রদের—হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ—ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ধারাবাহিক হামলার জন্য দায়ী করে দিল্লি। এর মধ্যে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দূতাবাসে হামলা, ২০১৩ সালে জালালাবাদ, ২০১৪ সালে হেরাত এবং ২০১৫ সালে মাজার-ই-শরিফে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাচ্ছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান সরকার টিটিপির ‘খারেজি বা সন্ত্রাসীদের’ আশ্রয় দিচ্ছে।
কিন্তু ভারত তার কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করে এবং কূটনৈতিকভাবে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে, কাবুলে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান ডেস্কের যুগ্ম সচিব জেপি সিং আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
এক সপ্তাহ পর, তালেবান তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ইকরামুদ্দিন কামিলকে নয়াদিল্লিতে মনোনীত করে, যদিও ভারত এখনো কাবুলের বর্তমান শাসকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এরপর জানুয়ারির শুরুতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আমির খান মুত্তাকির বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এরপর, চলতি সপ্তাহে ভারত সফর করলেন আমির খান মুত্তাকি, যা কোনো শীর্ষ তালেবান নেতার প্রথম ভারত সফর।
ভারতের সঙ্গে তালেবানের এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে পাকিস্তানের আফগানিস্তান কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ডন সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘জয়শঙ্করের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক থেকে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ কমিটমেন্ট রয়েছে।’
সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, ‘জয়শঙ্কর-মুত্তাকি বৈঠক স্পষ্ট করেছে যে, তালেবান চায় ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখুক। তারা উল্লেখ করেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুই দেশের সভ্যতাগত ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে।’
ভারতের যোগাযোগ বাড়লেও, নয়াদিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু তাতে কী পাকিস্তানের উদ্বেগ কমছে?
কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে এসেছে। ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজেদের স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন।’
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মালিহা লোধানী এই মতকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত-সংলগ্ন আফগানিস্তান মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে—বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য। কাবুলের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ভূগোল বদলায় না।’
ভূগোল না বদলালেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কিছুই বদলেছে। ভারত গত দুই দশকে আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে আফগান সরকারের প্রধান বাণিজ্য পথ এখনো পাকিস্তান সীমান্ত। আর এই সীমান্তেই টিটিপির তৎপরতা নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টিটিপির সঙ্গে আফগান তালেবানের আদর্শগত বিভাজন আছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৬০০-এর বেশি হামলা চালিয়েছে টিটিপি, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় ৭০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দুবাইয়ে মিশ্রি-মুত্তাকি বৈঠকে এমন বিষয়ও আলোচিত হয়েছিল, যা পাকিস্তান সরকার ও আফগান তালেবানের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ইরানে ভারতের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকি ও মিশ্রির বৈঠক সম্পর্কিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁরা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বন্দরের ব্যবহার আফগানিস্তানকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে, যা ভূবেষ্টিত আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চাবাহার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পাশেই। বেলুচিস্তান খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই ইরানে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি পাকিস্তান এই অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুনের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করে।
সব মিলিয়ে সিস্তান–বেলুচিস্তানে ভারতের উপস্থিতি, চাবাহারে আফগানিস্তানের প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত পরাজয়েরই শামিল। এই প্রেক্ষাপটে পেশোয়ারভিত্তিক এক বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চাবাহার বন্দর এবং আফগান-ভারতীয় বাণিজ্যে এর ভূমিকার পাকিস্তান হস্তক্ষেপমূলক তৎপরতা হিসেবেই দেখবে।’
পাকিস্তান ভাবছেও তাই। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূখণ্ডে আফগান তালেবানের কোনো আগ্রাসন সহ্য করব না।’ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেখিয়েছে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কতটা গভীরে পৌঁছেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ক্রমবর্ধমান হামলা, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং তালেবানের পাল্টা আক্রমণ—সব মিলিয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং সংকট ঘিরে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি যোগ হলে বিষয়টা আরও অস্থির হয়ে উঠবে।’
কুগেলম্যান বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত এই সংকট, যতটা গুরুতরই হোক না কেন, খুব শিগগিরই প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তালেবান সরাসরি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সামরিক সক্ষমতা রাখে না। প্রতিশোধমূলক আক্রমণগুলো জনমতের ক্ষোভ প্রশমিত করলেই তারা পিছু হটবে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা ছিল দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা উত্তেজনার স্বাভাবিক পরিণতি। বিশেষ করে টিটিপির ঘাঁটিতে সামরিক হামলা ও আফগান সরকারের টিটিপির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনীহা—এই দুটি বিষয় পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছে।’
কুগেলম্যানের মতে, পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, ‘আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক হামলাগুলো টিটিপিকে প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আবার পাকিস্তানকে আরও কঠোর এবং বৃহত্তর অভিযান চালাতে বাধ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে সহিংসতার চক্র আবারও শুরু হতে পারে। এখানে কারও জেতার সুযোগ নেই, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহজ সমাধানও নেই।’
এই লড়াইয়ে কারও জেতার সুযোগ না থাকলেও ভারতের লাভ উভয় দিক থেকেই। আর এ লক্ষ্যেই ভারত ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকেই আফগানিস্তানকে নিয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সম্পাদকীয়তে ভারত–তালেবান সম্পর্কের সাম্প্রতিক মাত্রাকে ‘বড় অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সংবাদমাধ্যমটি সতর্কও করেছে যে, এই বাড়তে থাকা সহযোগিতার সঙ্গে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতাও যুক্ত আছে—তালেবান এখনো একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারকে খুব কমই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আবার তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ না করারও বিপদ আছে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। কারণ, চীন ইতিমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করেছে। ভারত আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে চীনের প্রভাবের মধ্যে ঢুকে যেতে দিতে পারে না। তাই নয়াদিল্লিকে ‘সাবধানে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার’ পরামর্শ দিয়েছে পত্রিকাটি।
কিন্তু এতে আফগানিস্তানের সমস্যা মিটছে না। কারণ, যতক্ষণ না ইসলামাবাদ তেহরিক–ই–তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) নিঃশেষ করতে পারছে, এবং এই কাজে তালেবান সরকারের সহায়তা না পাবে, ততক্ষণ দুই দেশের সীমান্তে এমন সংঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। এটি কোনোভাবেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জন্য সুখকর হবে না।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

কিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
১২ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে