আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আজকের দিনে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, যা আগে খুব কমই দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে বেইজিং মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।
এর ফলাফল ও প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। সামনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসতে পারে। এমনকি চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড কেনা বন্ধও করে দিতে পারে। অন্যান্য দেশ নতুন মার্কিন শুল্ক থেকে ৯০ দিনের জন্য ছাড় পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ক্রয় ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে দ্বিধায় ভুগছেন। ওয়াশিংটনের বারবার নীতি পরিবর্তন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে খুব ধীরে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল আমদানি করা সব পণ্যের ওপর নতুন ও কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পরই বোঝা গেল, পরিস্থিতি কত দ্রুত খারাপ হতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যেই আর্থিক বাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারে আস্থা হারিয়েছেন ও মার্কিন বন্ড বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এতে আর্থিক বিপর্যয়ের সংকেত দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প কিংবা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। আর তাই এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
এই ছয়টি মন্দার মধ্যে পাঁচটি সরাসরি শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে হয়েছিল, অথবা এগুলোর কারণে মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপের দিকে গিয়েছিল। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ধ্বংসাত্মক হবে—যদি না কেউ তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং এটি ঠেকিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হলো ‘কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজেস’ বা ‘তুলনামূলক সুবিধা’। এর মাধ্যমে কোনো দেশ গম উৎপাদন, কাপড় তৈরি বা সফটওয়্যার কোডিংয়ের মতো বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করে লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব পণ্যের ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ তাদের সীমিত সম্পদকে সেসব জিনিস উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে যা তাদের কৃষক, খনি শ্রমিক ও কারিগর সবচেয়ে কম খরচে তৈরি করতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে সবাই উপকৃত হয়।
এই তত্ত্বটি বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ১৮৪৬ সালে যখন মহাদেশব্যাপী ‘আলুর দুর্ভিক্ষ’ যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে খাদ্যপণ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু করতে বাধ্য করে, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সমৃদ্ধি আসে। এ সময় অবশ্য কিছু গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপের ভূস্বামীরা অভিযোগ করেন যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।
তাদের অভিযোগের ভিত্তি ছিল—রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর সমভূমি এত সস্তায় গম উৎপাদন করত যে ইউরোপে কৃষিজমির দামই কমে যায়। ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ শহরের দিকে যাত্রা করে, যা নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ঢেউ সৃষ্টি করে।
অবশ্যই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় এবং শক্তিশালী অর্থনীতি অভিন্ন বাজার মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে পারে। তারা মুদ্রা বিনিময় হার নিজেদের রপ্তানির পক্ষে নিতে পারে। আবার বিশেষ কোনো বাণিজ্যকে সুবিধা দিতে ভর্তুকি দিতে পারে। যেমন—গম বাদ দিয়ে ভুট্টা, টেক্সটাইলের চেয়ে কম্পিউটার চিপস অথবা চালের চেয়ে টেক্সটাইলকে তারা সুবিধা দিতে পারে।
পরিবেশ ও শ্রম আইনও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অনেক সময় অপ্রত্যাশিত হয়। বড় দেশের মনোপলিস্ট বা একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বিভিন্ন নিয়মকানুন ও শুল্কের পক্ষে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতা এড়িয়ে নিজেদের মূল্যবান সম্পদ আরও বাড়াতে পারেন।
একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বহু শতাব্দী ধরে ব্রিটেন তার উপনিবেশগুলোর বাণিজ্যকে নিজ দেশের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছিল। নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলিনার উপনিবেশগুলো থেকে আশা করা হতো যে, তারা ভার্জিনিয়া এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে দাস-শ্রমিক নির্ভর তামাক ও চিনির খামারগুলোর জন্য আটা ও চাল সরবরাহ করবে।
ব্রিটেন উপনিবেশগুলোকে নিজেদের বস্ত্র, লোহা ও কাগজ তৈরি করতে বাধা দিয়েছে। উপনিবেশগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ শেষ পর্যন্ত আমেরিকান বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে। শুরু থেকেই, ব্রিটিশ কনফেডারেশন আর্টিকেলস এবং পরে দেশটির সংবিধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত বা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এমন নির্বাহী পদক্ষেপ সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। রাজস্ব বিলগুলো হাউসে উত্থাপন করা হতো, সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ভেটোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আমেরিকার প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় ১৮১৬ সালে। এর কারণ ছিল ব্রিটেন। ব্রিটেন তখন নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে জিতেছিল। জয়ের পর ব্রিটেন বিপুল পরিমাণে উলের পোশাক বাজারে ছাড়ে। এই কাপড়গুলো মূলত ইউরোপের সৈন্য ও নাবিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এটি ছিল ব্রিটেনের প্রথম সেনা ও নৌবাহিনীর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির ঘটনা। আমেরিকার ব্যবসায়ী ও পশম উৎপাদনকারীরা এত সস্তা পশমের কাপড় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে, ১৮১৭ সালের মার্চে কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। আইনের নাম ছিল ‘নেভিগেশন অ্যাক্ট’। এই আইন ব্রিটিশ জাহাজ এবং সস্তা পণ্য আসা বন্ধ করে দেয়।
জবাবে, মে মাসে ব্রিটেনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারাও একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের ফলে মার্কিন জাহাজগুলো ব্রিটেনের ক্যারিবিয়ান উপনিবেশে শস্য সরবরাহ করতে পারত না। ফলে, মার্কিন কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারান। এই বাজারে তারা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। ১৮১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম ৫০ শতাংশ কমে যায়। কৃষকেরা জমির বন্ধকি ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই ঋণ তারা ইউএস ল্যান্ড অফিস থেকে নিয়েছিলেন। কৃষকেরা মুদি দোকানগুলোতে দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। ফলে গ্রামের দোকানগুলোও সরবরাহকারী বণিকদের পাওনা মেটাতে পারেনি।
১৮১৯ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে রীতিমতো আতঙ্ক শুরু হয় এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা কানাডায় গম চোরাচালান করে নিজেদের রক্ষা করে। সেখানে টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের মিল মালিকেরা সেই গম দিয়ে ব্রিটিশদের জন্য আটা তৈরি করত। সেই আটা আবার ক্যারিবীয় এলাকায় বিক্রি করা হতো।
ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার মতো অঙ্গরাজ্যগুলো কেবল গম ও ধান উৎপাদন ছেড়ে দাসভিত্তিক তুলা উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে। এক দশকের মধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ ক্যারিবীয় দ্বীপের কৃষি খামারগুলোতে খাদ্য সরবরাহের খরচ এত বাড়িয়ে দেয় যে, সেখানকার দাস মালিকেরা ক্রীতদাসদের ক্ষতিপূরণসহ দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিপরীতে, ১৮১৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদন আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সঙ্গে দাসপ্রথারও বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এর পরের মন্দা শুরু হয় মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের দ্রুত নির্বাহী পদক্ষেপের কারণে। ১৮১৯ সালের মহামন্দার পর থেকে দীর্ঘ সময়ের ক্রেডিট চেইন বা ঋণ শৃঙ্খল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে অর্থায়ন করে আসছিল।
সেকেন্ড ব্যাংক অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত সাতটি ব্রিটিশ ব্যাংক ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ধার করত। এরপর তারা ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’ ইস্যু করত। এর মাধ্যমে ছোট, আঞ্চলিক মার্কিন ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া হতো। এই ব্যাংকগুলো আবার দক্ষিণাঞ্চলের ওপরের অংশের দাস ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিত। দাস ব্যবসায়ীরা ভার্জিনিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে দাস কিনত এবং জর্জিয়া, মিসিসিপি ও লুইজিয়ানার তুলার খামারে বিক্রি করত। সুদের হার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নির্ধারণ করত। ফলে লন্ডনে সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি পেলে নিউ অরলিন্সে দাস মালিকদের জমি বা দাস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন বিশ্বাস করতেন, সেকেন্ড ব্যাংক এবং সেভেন সিস্টারস তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ১৮৩৪ ও ১৮৩৬ সালে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই আদেশগুলোর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ঋণের ওপর থেকে দাস মালিকদের নির্ভরতা কমানো।
এক আদেশে জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেন। সেই অর্থ তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি পছন্দের ব্যাংকে জমা দেন। অন্য এক আদেশে কৃষকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের বন্ধকি অর্থ ইউএস ল্যান্ড অফিসে পরিশোধ করতে নিষেধ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের বাধ্য হয়ে স্বর্ণ ব্যবহার করতে হয়, যা সেই সময়ের মুদ্রা ছিল। এই পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের দাস মালিকেরা লাভবান হয়। এসব মালিকদের উত্তর জর্জিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনায় সোনার খনি ছিল। তবে, হঠাৎ করে সোনার চাহিদা বেড়ে গেলেও সরবরাহ অনেক কম ছিল।
এই অবস্থায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড দেখতে পায়, তাদের সোনা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ব্যাংক রেট তথা সুদহার বাড়াল। একই সঙ্গে তারা কিছু সময়ের জন্য ‘সেভেন সিস্টার্সকে’ আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করল। এর ফলস্বরূপ ১৮৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফের মহামন্দা শুরু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে জমিদারেরা ঋণ পরিশোধ না করে পালিয়ে গেল। তারা চাষের জমি ফেলে ক্রীতদাসদের নিয়ে (তৎকালীন) টেক্সাসের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে চলে গেল। সেখানে তারা ঋণদাতাদের হাত থেকে বেঁচে যায়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। উৎপাদনকারীরা দেউলিয়া হয়ে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে সাতটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যু করা বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলো।
এর পরের মহামন্দা শুরু হয় ১৮৭৩ সালে। এই অর্থনৈতিক মন্দা আন্তর্জাতিক পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে হয়েছিল। তবে এর জন্য তড়িঘড়ি করে শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ১৮৯৩ সালের মন্দার ক্ষেত্রে তেমনটা বলা যাবে না। ১৮৯০ সালে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস আইন প্রণয়নের নিয়ম সংশোধন করে। এর ফলে কংগ্রেস অপ্রত্যাশিতভাবে কার্যকর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সুযোগে রিপাবলিকানরা ১৮৯০ সালের ম্যাককিনলে ট্যারিফ অ্যাক্ট পাস করে।
এই আইনে বিদেশে তৈরি পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে। একই সঙ্গে আধা-পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়। চিনি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। কারণ সে সময় আপেল, স্যামন ও গরুর মাংসের মতো খাদ্য সংরক্ষণে চিনি ব্যবহার করা হতো।
তবে, বেশি শুল্ক আরোপের ফলে প্রায়শই যা হয়—তেমনিভাবে মার্কিন রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দুই বছরের মধ্যে এটি প্রায় মার্কিন ট্রেজারির সোনা শেষ করে ফেলে। এর ফলে বিদেশি ঋণদাতারা মার্কিন বন্ড বিক্রি করতে শুরু করে, বিশেষ করে রেল কোম্পানিগুলোর বন্ড। ঋণগ্রহীতারা আশঙ্কা করেছিল যে, ট্রেজারিতে সোনা না থাকলে ওয়াশিংটন মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণমান ত্যাগ করবে। তখন বন্ডের অর্থ হয়তো দুর্বল মার্কিন মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।
এরপর, ১৯৩০–এর দশকের মহামন্দায় স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন বড় ভূমিকা রেখেছিল। যদিও কিছু অর্থনীতি ঐতিহাসিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা সরবরাহ, শেয়ারবাজারে তেজ–মন্দা চক্র এবং ইউরোপের অমীমাংসিত যুদ্ধকালীন ঋণ—এর প্রধান কারণ ছিল। উনিশ শতকের একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে শুধু বলব, শুল্কে দ্রুত পরিবর্তন বিশ্বকে বদলে দেয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন পরিবর্তন আনে, যার প্রভাব মোকাবিলা করতে বহু বছর লেগে যায় এবং এর ফলস্বরূপ অপ্রত্যাশিত ঘটনার একটি দীর্ঘ ধারা তৈরি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত দুই শতাব্দীর মহামন্দা–মন্দার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারি। বর্তমানে ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক অনেক কোম্পানিকে তাদের পূর্বনির্ধারিত চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। উনিশ শতকে কৃষক, গ্রামের দোকানদার, বণিক এবং দাস ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গিয়েছিল।
পিটসবার্গভিত্তিক উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানি হাউমেট এরই মধ্যেই ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ বা নিজেদের এমন অবস্থানে ঘোষণা করেছে যেখানে কেউ তাদের জোর করে চুক্তি পরিপালনে বাধ্য করতে পারবে না। তারা শুল্কের কারণে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা বিভিন্ন খাতের আরও অনেক কোম্পানি সম্ভবত এখন চুক্তি বাতিল করবে, কারণ শুল্ক কার্যকর হতে শুরু করেছে। এসব কোম্পানির বাতিল করা অনেক লেনদেনই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। এই ঋণের বেশির ভাগই ব্যাংক, হেজ ফান্ড, বিমা কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে থাকে। এর কিছু ঋণ আবার অসংখ্য বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়। শেয়ারবাজার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে খুব দ্রুত সক্ষম। তবে এর চেয়ে অনেক বড় এবং জটিল ঋণবাজার, এটি দ্রুত ধাক্কা সামলাতে পারে না। যারা ২০০৮ সালের সংকটের কথা মনে রেখেছেন, তারা এটা জানেন। ২০০৮ সালে ফেডারেল রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত বন্ড কিনেছিল। এর মাধ্যমে তারা জমে যাওয়া বাজারে তারল্য ফিরিয়ে এনেছিল।
যদিও আমি কেবলই একজন ইতিহাসবিদ, তবে আমার বিশ্বাস ফেডারেল রিজার্ভ (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এ পর্যন্ত যে বিশৃঙ্খলা দেখেছে তা সামাল দিতে পারবে। তবে চীন–মার্কিন বাণিজ্য স্থগিতের সম্পূর্ণ প্রভাব আমাদের এখনো মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া, বিশ্বের বাকি অংশের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের পরে কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট।
যদি কংগ্রেস শুল্কের ওপর তার সাংবিধানিক অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারে এবং যদি মার্কিন বাণিজ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়—যেমনটা ১৮৩০–এর দশকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ক্ষেত্রে ছিল—তাহলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মন্দার ফলে সৃষ্ট তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না, যে মন্দার আশঙ্কা আমি করছি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক স্কট রেনল্ডস নেলসন
অনুবাদ করেছেন: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান

আজকের দিনে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, যা আগে খুব কমই দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে বেইজিং মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।
এর ফলাফল ও প্রভাব এখনো সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। সামনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আসতে পারে। এমনকি চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ড কেনা বন্ধও করে দিতে পারে। অন্যান্য দেশ নতুন মার্কিন শুল্ক থেকে ৯০ দিনের জন্য ছাড় পেয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ক্রয় ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে দ্বিধায় ভুগছেন। ওয়াশিংটনের বারবার নীতি পরিবর্তন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা ঘুরছে খুব ধীরে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল আমদানি করা সব পণ্যের ওপর নতুন ও কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পরই বোঝা গেল, পরিস্থিতি কত দ্রুত খারাপ হতে পারে। কয়েক দিনের মধ্যেই আর্থিক বাজার থেকে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার উধাও হয়ে গেছে।
বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলারে আস্থা হারিয়েছেন ও মার্কিন বন্ড বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এতে আর্থিক বিপর্যয়ের সংকেত দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প কিংবা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। আর তাই এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
এই ছয়টি মন্দার মধ্যে পাঁচটি সরাসরি শুল্ক এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে হয়েছিল, অথবা এগুলোর কারণে মন্দা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপের দিকে গিয়েছিল। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ধ্বংসাত্মক হবে—যদি না কেউ তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং এটি ঠেকিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তি হলো ‘কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজেস’ বা ‘তুলনামূলক সুবিধা’। এর মাধ্যমে কোনো দেশ গম উৎপাদন, কাপড় তৈরি বা সফটওয়্যার কোডিংয়ের মতো বিশেষায়িত দক্ষতা অর্জন করে লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব পণ্যের ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ তাদের সীমিত সম্পদকে সেসব জিনিস উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে যা তাদের কৃষক, খনি শ্রমিক ও কারিগর সবচেয়ে কম খরচে তৈরি করতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে সবাই উপকৃত হয়।
এই তত্ত্বটি বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ১৮৪৬ সালে যখন মহাদেশব্যাপী ‘আলুর দুর্ভিক্ষ’ যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে খাদ্যপণ্যের অবাধ বাণিজ্য চালু করতে বাধ্য করে, তখন অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সমৃদ্ধি আসে। এ সময় অবশ্য কিছু গোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপের ভূস্বামীরা অভিযোগ করেন যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।
তাদের অভিযোগের ভিত্তি ছিল—রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর সমভূমি এত সস্তায় গম উৎপাদন করত যে ইউরোপে কৃষিজমির দামই কমে যায়। ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ শহরের দিকে যাত্রা করে, যা নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ঢেউ সৃষ্টি করে।
অবশ্যই, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় এবং শক্তিশালী অর্থনীতি অভিন্ন বাজার মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে পারে। তারা মুদ্রা বিনিময় হার নিজেদের রপ্তানির পক্ষে নিতে পারে। আবার বিশেষ কোনো বাণিজ্যকে সুবিধা দিতে ভর্তুকি দিতে পারে। যেমন—গম বাদ দিয়ে ভুট্টা, টেক্সটাইলের চেয়ে কম্পিউটার চিপস অথবা চালের চেয়ে টেক্সটাইলকে তারা সুবিধা দিতে পারে।
পরিবেশ ও শ্রম আইনও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অনেক সময় অপ্রত্যাশিত হয়। বড় দেশের মনোপলিস্ট বা একচেটিয়া ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বিভিন্ন নিয়মকানুন ও শুল্কের পক্ষে থাকেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিযোগিতা এড়িয়ে নিজেদের মূল্যবান সম্পদ আরও বাড়াতে পারেন।
একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বহু শতাব্দী ধরে ব্রিটেন তার উপনিবেশগুলোর বাণিজ্যকে নিজ দেশের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছিল। নিউইয়র্ক, মেরিল্যান্ড ও সাউথ ক্যারোলিনার উপনিবেশগুলো থেকে আশা করা হতো যে, তারা ভার্জিনিয়া এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে দাস-শ্রমিক নির্ভর তামাক ও চিনির খামারগুলোর জন্য আটা ও চাল সরবরাহ করবে।
ব্রিটেন উপনিবেশগুলোকে নিজেদের বস্ত্র, লোহা ও কাগজ তৈরি করতে বাধা দিয়েছে। উপনিবেশগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্রিটেনের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধ শেষ পর্যন্ত আমেরিকান বিপ্লবের দিকে ধাবিত করে। শুরু থেকেই, ব্রিটিশ কনফেডারেশন আর্টিকেলস এবং পরে দেশটির সংবিধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্রুত বা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এমন নির্বাহী পদক্ষেপ সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। রাজস্ব বিলগুলো হাউসে উত্থাপন করা হতো, সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ভেটোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
আমেরিকার প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় ১৮১৬ সালে। এর কারণ ছিল ব্রিটেন। ব্রিটেন তখন নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে জিতেছিল। জয়ের পর ব্রিটেন বিপুল পরিমাণে উলের পোশাক বাজারে ছাড়ে। এই কাপড়গুলো মূলত ইউরোপের সৈন্য ও নাবিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
এটি ছিল ব্রিটেনের প্রথম সেনা ও নৌবাহিনীর উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির ঘটনা। আমেরিকার ব্যবসায়ী ও পশম উৎপাদনকারীরা এত সস্তা পশমের কাপড় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে, ১৮১৭ সালের মার্চে কংগ্রেস একটি আইন পাস করে। আইনের নাম ছিল ‘নেভিগেশন অ্যাক্ট’। এই আইন ব্রিটিশ জাহাজ এবং সস্তা পণ্য আসা বন্ধ করে দেয়।
জবাবে, মে মাসে ব্রিটেনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। তারাও একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের ফলে মার্কিন জাহাজগুলো ব্রিটেনের ক্যারিবিয়ান উপনিবেশে শস্য সরবরাহ করতে পারত না। ফলে, মার্কিন কৃষকেরা গুরুত্বপূর্ণ বাজার হারান। এই বাজারে তারা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। ১৮১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম ৫০ শতাংশ কমে যায়। কৃষকেরা জমির বন্ধকি ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই ঋণ তারা ইউএস ল্যান্ড অফিস থেকে নিয়েছিলেন। কৃষকেরা মুদি দোকানগুলোতে দেনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। ফলে গ্রামের দোকানগুলোও সরবরাহকারী বণিকদের পাওনা মেটাতে পারেনি।
১৮১৯ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে রীতিমতো আতঙ্ক শুরু হয় এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্কিনরা কানাডায় গম চোরাচালান করে নিজেদের রক্ষা করে। সেখানে টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের মিল মালিকেরা সেই গম দিয়ে ব্রিটিশদের জন্য আটা তৈরি করত। সেই আটা আবার ক্যারিবীয় এলাকায় বিক্রি করা হতো।
ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনার মতো অঙ্গরাজ্যগুলো কেবল গম ও ধান উৎপাদন ছেড়ে দাসভিত্তিক তুলা উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করে। এক দশকের মধ্যে ইঙ্গ-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ ক্যারিবীয় দ্বীপের কৃষি খামারগুলোতে খাদ্য সরবরাহের খরচ এত বাড়িয়ে দেয় যে, সেখানকার দাস মালিকেরা ক্রীতদাসদের ক্ষতিপূরণসহ দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিপরীতে, ১৮১৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা পাস হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদন আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সঙ্গে দাসপ্রথারও বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এর পরের মন্দা শুরু হয় মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের দ্রুত নির্বাহী পদক্ষেপের কারণে। ১৮১৯ সালের মহামন্দার পর থেকে দীর্ঘ সময়ের ক্রেডিট চেইন বা ঋণ শৃঙ্খল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে অর্থায়ন করে আসছিল।
সেকেন্ড ব্যাংক অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত সাতটি ব্রিটিশ ব্যাংক ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ধার করত। এরপর তারা ‘বিল অব এক্সচেঞ্জ’ ইস্যু করত। এর মাধ্যমে ছোট, আঞ্চলিক মার্কিন ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়া হতো। এই ব্যাংকগুলো আবার দক্ষিণাঞ্চলের ওপরের অংশের দাস ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দিত। দাস ব্যবসায়ীরা ভার্জিনিয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে দাস কিনত এবং জর্জিয়া, মিসিসিপি ও লুইজিয়ানার তুলার খামারে বিক্রি করত। সুদের হার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড নির্ধারণ করত। ফলে লন্ডনে সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি পেলে নিউ অরলিন্সে দাস মালিকদের জমি বা দাস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন বিশ্বাস করতেন, সেকেন্ড ব্যাংক এবং সেভেন সিস্টারস তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ১৮৩৪ ও ১৮৩৬ সালে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই আদেশগুলোর লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ ঋণের ওপর থেকে দাস মালিকদের নির্ভরতা কমানো।
এক আদেশে জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেন। সেই অর্থ তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি পছন্দের ব্যাংকে জমা দেন। অন্য এক আদেশে কৃষকদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের বন্ধকি অর্থ ইউএস ল্যান্ড অফিসে পরিশোধ করতে নিষেধ করা হয়। এর ফলে কৃষকদের বাধ্য হয়ে স্বর্ণ ব্যবহার করতে হয়, যা সেই সময়ের মুদ্রা ছিল। এই পদক্ষেপের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের দাস মালিকেরা লাভবান হয়। এসব মালিকদের উত্তর জর্জিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনায় সোনার খনি ছিল। তবে, হঠাৎ করে সোনার চাহিদা বেড়ে গেলেও সরবরাহ অনেক কম ছিল।
এই অবস্থায় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড দেখতে পায়, তাদের সোনা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ব্যাংক রেট তথা সুদহার বাড়াল। একই সঙ্গে তারা কিছু সময়ের জন্য ‘সেভেন সিস্টার্সকে’ আন্তর্জাতিক লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন করল। এর ফলস্বরূপ ১৮৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফের মহামন্দা শুরু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে জমিদারেরা ঋণ পরিশোধ না করে পালিয়ে গেল। তারা চাষের জমি ফেলে ক্রীতদাসদের নিয়ে (তৎকালীন) টেক্সাসের স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে চলে গেল। সেখানে তারা ঋণদাতাদের হাত থেকে বেঁচে যায়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। উৎপাদনকারীরা দেউলিয়া হয়ে গেল। পাঁচ বছরের মধ্যে সাতটি মার্কিন অঙ্গরাজ্য আন্তর্জাতিকভাবে ইস্যু করা বন্ডের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলো।
এর পরের মহামন্দা শুরু হয় ১৮৭৩ সালে। এই অর্থনৈতিক মন্দা আন্তর্জাতিক পণ্যের দামের আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে হয়েছিল। তবে এর জন্য তড়িঘড়ি করে শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ১৮৯৩ সালের মন্দার ক্ষেত্রে তেমনটা বলা যাবে না। ১৮৯০ সালে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস আইন প্রণয়নের নিয়ম সংশোধন করে। এর ফলে কংগ্রেস অপ্রত্যাশিতভাবে কার্যকর ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সুযোগে রিপাবলিকানরা ১৮৯০ সালের ম্যাককিনলে ট্যারিফ অ্যাক্ট পাস করে।
এই আইনে বিদেশে তৈরি পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক ৩৮ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে। একই সঙ্গে আধা-পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হয়। চিনি রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। কারণ সে সময় আপেল, স্যামন ও গরুর মাংসের মতো খাদ্য সংরক্ষণে চিনি ব্যবহার করা হতো।
তবে, বেশি শুল্ক আরোপের ফলে প্রায়শই যা হয়—তেমনিভাবে মার্কিন রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দুই বছরের মধ্যে এটি প্রায় মার্কিন ট্রেজারির সোনা শেষ করে ফেলে। এর ফলে বিদেশি ঋণদাতারা মার্কিন বন্ড বিক্রি করতে শুরু করে, বিশেষ করে রেল কোম্পানিগুলোর বন্ড। ঋণগ্রহীতারা আশঙ্কা করেছিল যে, ট্রেজারিতে সোনা না থাকলে ওয়াশিংটন মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণমান ত্যাগ করবে। তখন বন্ডের অর্থ হয়তো দুর্বল মার্কিন মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।
এরপর, ১৯৩০–এর দশকের মহামন্দায় স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন বড় ভূমিকা রেখেছিল। যদিও কিছু অর্থনীতি ঐতিহাসিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা সরবরাহ, শেয়ারবাজারে তেজ–মন্দা চক্র এবং ইউরোপের অমীমাংসিত যুদ্ধকালীন ঋণ—এর প্রধান কারণ ছিল। উনিশ শতকের একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে শুধু বলব, শুল্কে দ্রুত পরিবর্তন বিশ্বকে বদলে দেয়। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন পরিবর্তন আনে, যার প্রভাব মোকাবিলা করতে বহু বছর লেগে যায় এবং এর ফলস্বরূপ অপ্রত্যাশিত ঘটনার একটি দীর্ঘ ধারা তৈরি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত দুই শতাব্দীর মহামন্দা–মন্দার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারি। বর্তমানে ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক অনেক কোম্পানিকে তাদের পূর্বনির্ধারিত চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। উনিশ শতকে কৃষক, গ্রামের দোকানদার, বণিক এবং দাস ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গিয়েছিল।
পিটসবার্গভিত্তিক উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানি হাউমেট এরই মধ্যেই ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ বা নিজেদের এমন অবস্থানে ঘোষণা করেছে যেখানে কেউ তাদের জোর করে চুক্তি পরিপালনে বাধ্য করতে পারবে না। তারা শুল্কের কারণে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে ব্যবসা করা বিভিন্ন খাতের আরও অনেক কোম্পানি সম্ভবত এখন চুক্তি বাতিল করবে, কারণ শুল্ক কার্যকর হতে শুরু করেছে। এসব কোম্পানির বাতিল করা অনেক লেনদেনই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়। এই ঋণের বেশির ভাগই ব্যাংক, হেজ ফান্ড, বিমা কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে থাকে। এর কিছু ঋণ আবার অসংখ্য বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়। শেয়ারবাজার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে খুব দ্রুত সক্ষম। তবে এর চেয়ে অনেক বড় এবং জটিল ঋণবাজার, এটি দ্রুত ধাক্কা সামলাতে পারে না। যারা ২০০৮ সালের সংকটের কথা মনে রেখেছেন, তারা এটা জানেন। ২০০৮ সালে ফেডারেল রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত বন্ড কিনেছিল। এর মাধ্যমে তারা জমে যাওয়া বাজারে তারল্য ফিরিয়ে এনেছিল।
যদিও আমি কেবলই একজন ইতিহাসবিদ, তবে আমার বিশ্বাস ফেডারেল রিজার্ভ (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) এ পর্যন্ত যে বিশৃঙ্খলা দেখেছে তা সামাল দিতে পারবে। তবে চীন–মার্কিন বাণিজ্য স্থগিতের সম্পূর্ণ প্রভাব আমাদের এখনো মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া, বিশ্বের বাকি অংশের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের পরে কী হবে তা এখনো অস্পষ্ট।
যদি কংগ্রেস শুল্কের ওপর তার সাংবিধানিক অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে না পারে এবং যদি মার্কিন বাণিজ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়—যেমনটা ১৮৩০–এর দশকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ক্ষেত্রে ছিল—তাহলে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মন্দার ফলে সৃষ্ট তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না, যে মন্দার আশঙ্কা আমি করছি।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার ইতিহাসের অধ্যাপক স্কট রেনল্ডস নেলসন
অনুবাদ করেছেন: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
২০ এপ্রিল ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
২০ এপ্রিল ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
২০ এপ্রিল ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
২০ এপ্রিল ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে