Ajker Patrika

আল–জাজিরার নিবন্ধ /এবার ইসরায়েলের টার্গেট কি তুরস্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন আগামী দিনে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সংঘাত প্রায় অনিবার্য। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন আগামী দিনে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সংঘাত প্রায় অনিবার্য। ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহ খানেক আগেই ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ‘প্রধান মিত্র’ কাতারে হামলা চালায়। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরায়েলপন্থী ভাষ্যকারেরা হঠাৎ নজর ঘুরিয়ে নেন তুরস্কের দিকে। ওয়াশিংটনে ডানপন্থী থিংক ট্যাংক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন মন্তব্য করেন, ইসরায়েলের ‘পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে তুরস্ক।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশটির নিজেকে রক্ষায় কেবল ন্যাটোর ওপর ভরসা করা উচিত হবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেইর মাসরি লিখেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’ এর পরপরই আঙ্কারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কঠোর ভাষায় লিখেছেন, ‘জায়োনিস্ট ইসরায়েলের কুকুর...খুব শিগগিরই তোমাকে মানচিত্র থেকে মুছে দিলে বিশ্ব শান্তি পাবে।’

বিগত কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলপন্থী গণমাধ্যমগুলো ধারাবাহিকভাবে তুরস্কের বিরুদ্ধে কঠোর আওয়াজ তুলছে। তারা তুরস্ককে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। ইসরায়েলি ভাষ্যকারেরা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতিকে ‘হুমকি’ এবং যুদ্ধ পরবর্তী সিরিয়া পুনর্গঠনে আঙ্কারার ভূমিকা ‘নতুন উদীয়মান বিপদ’ বলে মনে করছেন।

ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন এবং গাজায় চলমান যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ না দেখে গত আগস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করে পাল্টা জবাব দেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। এই বিষয়ে মার্কিন থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওমের ওজকিজিলচিক বলেন, ‘আঙ্কারায় এই (তুরস্ক বিরোধী) কথাবার্তাকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়। তুরস্ক মনে করে, ইসরায়েল আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে।’

ওজকিজিলচিক আরও বলেন, ‘তুরস্ক ক্রমশ মনে করছে—ইসরায়েলি আগ্রাসনের কোনো সীমা নেই এবং এই আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ সমর্থন ভোগ করছে।’ সোজা কথায়, তুরস্ক মনে করছে—তারা যেকোনো সময় ইসরায়েলের টার্গেট হতে পারে।

কাতারে ইসরায়েলি হামলা তুরস্কের ন্যাটো জোটে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা নিয়েও সন্দেহ জোরালো করেছে। কারণ, দোহা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মিত্র হলেও ইসরায়েলি হামলার পর ওয়াশিংটনের কোনো দৃশ্যমান প্রতিবাদ দেখা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ন্যাটো সনদের অনুচ্ছেদ–৫ এ যেমন বলা আছে—তুরস্কে হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই সেটাকে নিজের ওপর হামলা হিসেবে দেখবে?

তবে ওজকিজিলচিক মনে করেন, অনেক আরব রাষ্ট্রের মতো দেরিতে নয়, তুরস্ক বহু আগেই বুঝে গেছে যে—নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন প্রকাশ্যেই দেশের আঞ্চলিক সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্য নিয়ে গর্ব করেন। গত আগস্টে তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণায় বিশ্বাস করেন, তখন তিনি উত্তর দেন, ‘অবশ্যই।’ আঙ্কারার কাছে এ ধরনের বক্তব্য কেবল প্রতীকী নয়—এটি ইসরায়েলের আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে এবং সরাসরি তুরস্কের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল–জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলের এই ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ স্বপ্নের লক্ষ্য হলো—‘অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর করে রাখা এবং বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত অবস্থায় রাখা।’ —যা কিছু ধর্মীয় জায়োনিস্ট মনে করেন, এই বৃহত্তর ইসরায়েল আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, মিসর ও জর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত

সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহেই ইসরায়েল গাজায় চলমান গণহত্যা ও পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিনের সামরিক অভিযানের পাশাপাশি ইয়েমেন ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে এবং তিউনিসিয়ায় গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহরে আক্রমণের অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্ক ও ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ জড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন ওজকিজিলচিক। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড তুরস্কের সেই লক্ষ্যকে ব্যাহত করছে—যেখানে আঙ্কারা শক্তিশালী একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে চায় বিভক্ত রাষ্ট্র নয়।’

ইসরায়েল অঞ্চলের একক পরাশক্তি হতে চাইছে—এই ধারণা দৃঢ় হয় গত জুলাইয়ে। সে সময় তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল চায় ‘একটি খণ্ডিত ও বিভক্ত সিরিয়া।’ তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী জাতিরাষ্ট্রগুলোকে হুমকি হিসেবে দেখা হয় (ইসরায়েলে)—বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলোকে। সেগুলো ইসরায়েলের কাছে সরাসরি হুমকি।’

এই বক্তব্য থেকে আঙ্কারা স্পষ্ট বার্তা লাভ করে যে, ইসরায়েল মনে করে—নিরাপদ থাকতে হলে তাকে অবশ্যই অঞ্চলের একক অধিপতি হতে হবে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডও তা প্রমাণ করে। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গত ৮ ডিসেম্বর মস্কোয় পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশটিতে ডজন ডজন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল এবং সিরিয়ার ভূমি দখল করেছে।

এর আগে, ২০২৪ সালে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশকে হত্যা করেছে এবং এখনো লেবাননের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে, যদিও সেখানে যুদ্ধবিরতি চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীটিকে দুর্বল বা ধ্বংস করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। এরপর, চলতি বছরের জুনে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল, যা ১২ দিন যুদ্ধের পর শেষ হয়। এ সময় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু হয়, নিহত হন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা। এতে যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে।

এই হামলার লক্ষ্য কেবল তেহরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক সক্ষমতা দুর্বল করা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের রেজিম পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দেওয়া। কারণ, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। যদিও ইরানে ইসরায়েল সেই অর্থে সফল হয়নি, এবং এই অবস্থায় মনে হচ্ছে—ইসরায়েল হয়তো তুরস্ককে তার আঞ্চলিক আধিপত্যের পরবর্তী বাধা হিসেবে দেখছে। এ কারণেই আঙ্কারার সিরিয়ায় নতুন ঘাঁটি স্থাপনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছে তেল আবিব এবং নেতানিয়াহু বলেছেন, এই ঘাঁটিগুলো ‘ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে।’

তুরস্কের সাবেক অ্যাডমিরাল ও ব্লু হোমল্যান্ড নীতির রূপকার সেম গুরদিনিজ এই বিষয়ে আঙ্কারাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তুরস্ক-ইসরায়েল সংঘাতের প্রথম প্রকাশ দেখা যাবে সম্ভবত সিরিয়ার স্থল ও আকাশ সীমান্তে।’ ব্লু হোমল্যান্ড নীতি অনুযায়ী, তুরস্ককে এজিয়ান, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরে নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করতে হবে এবং স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

গুরদিনিজ আল–জাজিরাকে আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে, সাইপ্রাসে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতি আঙ্কারার কাছে ব্লু হোমল্যান্ড নীতি বাধাগ্রস্ত করার ও তুরস্ককে এবং ঘিরে রাখার কৌশল বলে মনে হয়।’ তাঁর মতে, এই খেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং গ্রিস ও গ্রিক নিয়ন্ত্রিত সাইপ্রাস প্রশাসনও এতে জড়িত।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আঙ্কারার কাছে এটি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নয়, বরং আক্রমণাত্মক বেষ্টনী তৈরির কৌশল হিসেবে বিবেচিত।’ তাঁর মতে, এটি ‘তুরস্কের সামুদ্রিক স্বাধীনতা ও তুর্কি সাইপ্রাসবাসীর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

সাইপ্রাসের বিভাজন আজও তুরস্ক, গ্রিস ও সাইপ্রাসের মধ্যে বড় ধরনের অস্বস্তি ও অস্থিরতার উৎস। গত সপ্তাহে সাইপ্রাস ইসরায়েলের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে—এমন খবর প্রকাশের পর আঙ্কারায় উদ্বেগের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সিরিয়া ইস্যুতেও ইসরায়েল পরিষ্কার জানিয়েছে, তাদের দৃষ্টিতে স্থিতিশীল সিরিয়া কেবল তখনই সম্ভব, যদি দেশটি ‘বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসনভিত্তিক একটি ফেডারেল রাষ্ট্রে’ রূপ নেবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’র এ কথা বলেন।

অন্যদিকে তুরস্ক নতুন সিরিয়ার প্রশাসনকে সমর্থন দিচ্ছে। এই প্রশাসন অবশ্য কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত ও একক কাঠামোর রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপরই জোর দিচ্ছে। এ মুহূর্তে ইসরায়েল ও তুরস্কের সম্পর্ককে ‘নিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা’ বলা যায়—বলে মনে করেন তুরস্কের নেজমেত্তিন এরবাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক গোকান চিনকারা।

চিনকারা আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বর্তমানে তুরস্কের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি হবে—যদি সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই আঙ্কারা সম্ভবত নতুন সিরিয়ার প্রশাসনকে যুক্তিসংগত বাস্তবতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিরিয়ার সিকিউরিটি অ্যাপারেটাস বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো অপরিণত। ফলে কোনো আন্তঃগোষ্ঠী সংঘাত শুরু হলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। স্বল্পমেয়াদে তাই একক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চাইছেন ‘বলকানাইজড’ সিরিয়া। অর্থাৎ, ধর্মীয় ও জাতিগত ভিত্তিতে বলকান দেশগুলো যেভাবে বিভাজিত হয়েছিল—সেরকম একটি সিরিয়া। তিনি সিরিয়ার দক্ষিণাংশকে নিরস্ত্রীকরণের দাবিও তুলেছেন। এই অঞ্চলে প্রধানত দ্রুজ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে, তা দেশটির অন্যান্য গোষ্ঠীর—যেমন কুর্দি ও আলভীদের—মধ্যেও আলাদা স্বায়ত্তশাসনের দাবি উসকে দিতে পারে।

আঙ্কারাভিত্তিক সরকারি ঘনিষ্ঠ থিংক ট্যাংক এসইটিএর পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা বিভাগের পরিচালক মুরাত ইয়েসিলতাস বলেন, তবে ‘সিরিয়া ইস্যুতে তুরস্কের স্পষ্ট বিপৎসীমা আছে।’ তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আঞ্চলিক অর্ডার বা ব্যবস্থা নতুনভাবে সাজানোর প্রচেষ্টা নানা ধরনের বিপদ ও ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ভাঙন আরও গভীর হতে পারে।’

গত মার্চে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। সেখানে তারা তুরস্ক ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) মধ্যে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সতর্ক করে। পিকেকে চার দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালাচ্ছে, যেখানে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

আইএনএসএস সতর্ক করে বলে, এই শান্তি প্রক্রিয়া সিরিয়ার কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার সক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে এবং আঙ্কারার প্রভাব দক্ষিণ সিরিয়ায় বিস্তৃত করতে পারে, যা ইসরায়েলের স্বাধীনভাবে অভিযান চালানোর ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, সিরিয়ার দক্ষিণে নতুন করে দখল করা অঞ্চলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েল দখল করে রাখবে। এই সময় তুরস্ক নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত দামেস্ক সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে হোমস প্রদেশে সামরিক ঘাঁটি ও হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু ইসরায়েল এসব স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এই প্রসঙ্গে ইয়েসিলতাস বলেন, ‘যদি তেলআবিব এ অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে আঙ্কারা ও তেলআবিবের মধ্যে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। তুরস্ক তার দক্ষিণ সীমান্তে অস্থিতিশীলতা বজায় রাখার মতো কোনো নীতি মেনে নিতে পারে না।’

লন্ডনের কিংস কলেজের নিরাপত্তা অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, ‘তবে পরিস্থিতি একেবারে পূর্ণমাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গড়াবে—এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। বরং, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিষয়টি আমলে নিলে বলা যায়, উভয় পক্ষই সম্ভাব্য সংঘাতের মূল্যের বিষয়ে সচেতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্কের জন্য ইসরায়েলের হুমকি সরাসরি সামরিক আগ্রাসন নয়, বরং পরোক্ষ পথে আঘাত হানা। যেমন তুরস্কের সিরিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও দক্ষিণ ককেশাসে স্বার্থকে টার্গেট করা ইসরায়েলের তরফ থেকে হুমকি হবে।’

তাঁর মতে, ওয়াশিংটনের নিঃশর্ত সমর্থন যেহেতু নেতানিয়াহুর আঞ্চলিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনায় আছে, তাই আঙ্কারার করণীয় হলো—‘কৌশলগত প্রতিরোধ শক্তিশালী করা।’ বিশেষ করে, আকাশ প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি কাতার, জর্ডান ও ইরাকের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট তৈরি করা এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে খোলা যোগাযোগ রক্ষা করা—যাতে কৌশলগত বিচ্ছিন্নতায় পড়তে না হয়। ক্রিগ আরও বলেন, ‘তুরস্ককে বুঝতে হবে, ভবিষ্যতের সংঘাত সরাসরি যুদ্ধ বা কূটনৈতিক বিবৃতির আকারে নাও আসতে পারে। বরং তা ধূসর এলাকায় ঘটতে পারে—যেমন গোপন অভিযান, বিমান হামলা ও প্রক্সি প্রতিযোগিতা।’

আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত