Ajker Patrika

কার হাতে সেরা যুদ্ধবিমান

জাহাঙ্গীর আলম
কার হাতে সেরা যুদ্ধবিমান

ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে অনেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুনতে পাচ্ছেন অনেকে। অনিবার্যভাবেই উঠে আসছে সাবেক দুই পরাশক্তির শক্তিমত্তার তুলনা। সোভিয়েত যুগের পর এই পরাশক্তি দুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু দেশ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আকাশযুদ্ধে সক্ষমতার হিসাব-নিকাশ। সেদিক দিয়ে সোভিয়েত যুগ থেকেই অনেকখানি এগিয়ে আছে রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের কালে যুক্তরাষ্ট্রও সমর কৌশল ও প্রযুক্তিতে বেশ এগিয়েছে। 

কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার যখন যুদ্ধবিমান, তখন সেই অস্ত্রে দুই পরাশক্তি কে কাকে ছাড়িয়ে গেল? প্রতিরক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট এয়ারফোর্স-টেকনোলজি ডটকমে সেরা যুদ্ধবিমানের একটি তুলনামূলক চিত্র দেওয়া হয়েছে। 

ক্ষিপ্রতা ও তৎপরতায় আকাশে আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে থাকা কয়েকটি যুদ্ধবিমানের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল তুলে ধরা হলো। বিশ্বের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র বাহিনীতে রয়েছে এসব বিমান।

এখানে সুপারসনিক যুদ্ধবিমানের গতির একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মাক’। নির্দিষ্ট মাধ্যমে শব্দের গতির সঙ্গে বিমানের গতির অনুপাতকেই মাক এককে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ একটি স্বাভাবিক আবহাওয়ার দিনে সমুদ্রপৃষ্ঠে একটি বিমানের সর্বোচ্চ গতি মাক ১ বলতে বোঝায় বিমানটির গতি শব্দের গতির সমান। যেখানে শব্দের গতি ঘণ্টায় ৭৬০ মাইল।

মিগ-৩১ই ফাইটার–মাক ২.৮৩ মিগ-৩১ই ফাইটার–মাক ২.৮৩ 
মিগ-৩১ই ফাইটার হলো মিগ-৩১ বিমানের একটি রপ্তানিযোগ্য সংস্করণ। রাশিয়ান এয়ারক্রাফট করপোরেশন (আরএসি ‘মিগ’) এই বিমান বানায়। এটির সর্বোচ্চ গতি মাক ২ দশমিক ৮৩। এই বিমান দিনে এবং রাতে যে কোনো উচ্চতা থেকে লক্ষ্যবস্তুকে প্রতিহত করার পাশাপাশি ধ্বংস করে ফেলতে পারে। 

মিগ-৩১ বর্তমানে রুশ এবং কাজাখ বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে। এটি বিশ্বের প্রথম ধারাবাহিক উৎপাদনে থাকা যুদ্ধবিমান। এতে রয়েছে শক্তিশালী রাডার। বিমানটিতে আরও রয়েছে ৩০ এমএম জিএএইচ-৬-২৩ এম বিল্ট-ইন বন্দুক, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আর-৩৩ ই, মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আর-৪০ টিডি ১ (এএ-৬ অ্যাক্রিড) এবং স্বল্পপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য আর-৬০ এমকে ক্ষেপণাস্ত্র। 

একবার জ্বালানি ভরলে এই মিগ-৩১ ই টানা ৩ হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে। আর আকাশে ফুয়েল নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এটির সর্বোচ্চ উড্ডয়ন সক্ষমতা ৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। 

এতে রয়েছে দুটি ডি-৩০ এফ ৬ টার্বোজেট ইঞ্জিন। প্রতিটির টেক-অফ থ্রাস্ট ১৫ হাজার ৫০০ কেজি-ফোর্স। মিগ-৩১ ই এর ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশ উচ্চতায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩ হাজার কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। 

মিগ-২৫ ফক্সব্যাট মাক ২.৮৩ মিগ-২৫ ফক্সব্যাট মাক ২.৮৩ 
মিগ-২৫ যুদ্ধবিমানকে ন্যাটো বলে ফক্সব্যাট। এটি তৈরি করেছে রুশ কোম্পানি মিকোয়ান-কুরেভিট ওকেবি। বর্তমান নাম আরএসি মিগ। এটি মূলত ইন্টারসেপ্টর এবং গোয়েন্দা বিমান। বর্তমানে রাশিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশে সীমিত আকারে এটি রয়েছে। 

আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া, সিরিয়া, বুলগেরিয়া, ভারত, ইরাক এবং লিবিয়ার বিমান বাহিনীসহ আরও কয়েকটি দেশ মিগ-২৫-এর গ্রাহক। এ বিমানে অস্ত্রসজ্জায় রয়েছে— দুটি ক্ষেপণাস্ত্র রাখার ব্যবস্থা। এর মধ্যে দুটি দূরপাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এএ-৬ অ্যাক্রিড এবং একই সক্ষমতার দুটি আর-৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র। 

দুটি তুমানস্কি আর-১৫ বি-৩০০ টার্বোজেট ইঞ্জিন একত্রে মিগ-২৫-কে মাক ২ দশমিক ৮৩ গতি দিতে সক্ষম। প্রতিটি ইঞ্জিন ২২ হাজার ৫০০ পাউন্ড-ফোর্স থ্রাস্ট তৈরি করে। 

এফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল-মাক ২.৫ ক্লাসএফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল-মাক ২.৫ ক্লাস
এফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল বানিয়েছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি। একসঙ্গে বহু কাজের কাজি এ যুদ্ধবিমান মার্কিন বিমানবাহিনীর মেরুদণ্ড। স্ট্রাইক ঈগল আছে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান বাহিনীসহ আরও কয়েকটি দেশের বাহিনীতে। 

এফ-১৫ই বিমানে রয়েছে—একটি ২০ এমএম কামান, জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশনস (জেডিএএম), স্ট্যান্ডঅফ ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল এক্সপ্যান্ডেড রেসপন্স (এসএলএএম-ইআর), আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মাঝারি পাল্লার এআইএম-১২০ এএমআরএএএম এবং এআইএম-৯ এক্স সাইডউইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া ছোট আকারের বোমাও বহন করে এটি। 

এফ-১৫ই বিমান দিনে বা রাতে যে কোনো আবহাওয়ায় কম উচ্চতায় ওড়ার সময় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। 

এফ-১৫ই বিমানে রয়েছে দুটি পিঅ্যান্ডডব্লিউ এফ ১০০ অথবা দুটি জিই এফ ১১০ টারবোফ্যান জেট ইঞ্জিন। প্রতিটির থ্রাস্ট রেটিং ২৯ হাজার পাউন্ড-ফোর্স। কনফরমাল ফুয়েল ট্যাংক (সিএফটি) এবং তিনটি ড্রপ ট্যাংক লাগানো অবস্থায় বিমানটি এক টানা ৩ হাজার ৮৪০ কিলোমিটার উড়তে পারে। 

এসইউ-২৭ এসকে-মাক ২.৩৫ এসইউ-২৭ এসকে-মাক ২.৩৫ 
এসইউ-২৭ এসকে মাল্টি-রোল ফাইটারটি আসলে এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের রপ্তানিযোগ্য সংস্করণ। ন্যাটো এটির নাম দিয়েছে ফ্ল্যাঙ্কার। এটি তৈরি করেছে রুশ কোম্পানি সুখোই ডিজাইন ব্যুরো। বিমানটির সর্বোচ্চ গতি মাক ২ দশমিক ৩৫। 

১৯৯১ সালে কমসোমলস্ক-অন-আমুর এবং ইরকুৎস্ক প্ল্যান্টে এসইউ-২৭ একে বিমানের ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু হয়। 

এর অস্ত্রসজ্জায় রয়েছে—একটি বিল্ট-ইন ৩০ এমএম-এর জিএসএইচ-৩০১ স্বয়ংক্রিয় কামান, মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ছয়টি আর-২৭ আর ১ (আর-২৭ এআর১) ক্ষেপণাস্ত্র, দুটি আর-২৭ টি১ মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ছয়টি আরভিভি-এই স্বয়ংক্রিয় রাডার চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, ছয়টি আর-৭৩ই স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ক্লাস্টার বোমা এবং রকেট। 

দুটি এএল-৩১ এফ জেট ইঞ্জিন এ বিমানের পাওয়ার প্ল্যান্ট। ইঞ্জিন দুটি ১২ হাজার ৫০০ কেজি-ফোর্স থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় এ বিমানের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। এটির অভ্যন্তরীণ জ্বালানি ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৪০০ কেজি। 

বিমানটি ক্রুজিং উচ্চতায় (উড়োজাহাজের উড্ডয়ন উচ্চতা—৩৩ হাজার থেকে ৪২ হাজার ফুট) একটানা সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার উড়তে পারে। 

শেনিয়াং জে-টু ফাইটার-মাক ২.৩৫শেনিয়াং জে-টু ফাইটার-মাক ২.৩৫ 
শেনিয়াং জে-টু মূলত রাশিয়ার তৈরি এসইউ-২৭ এসকে মাল্টি-রোল ফাইটার বিমানের চীনা সংস্করণ। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের বহরে এই বিমান রয়েছে। দেশে তৈরি এ বিমানের সর্বোচ্চ গতি মাক ২ দশমিক ৩৫। 

মূল জে-১১ বিমানটিতে রাশিয়ার তৈরি সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়। আর জে-১১বি সংস্করণটিতে চীনে নির্মিত উড্ডয়ন যন্ত্রাংশ এবং অস্ত্রসজ্জা যুক্ত করা হয়। অস্ত্রসজ্জায় রয়েছে—একটি ৩০ এমএম বন্দুক, আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, ক্লাস্টার বোমা এবং রকেট লাঞ্চার। 

পাওয়ার-প্ল্যান্টে রয়েছে লিউলকা এএল-৩১ এফ অথবা উশান ডব্লিউএস-১০এ তাইহাং টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন। প্রতিটি ইঞ্জিন ১২৩ কিলোনিউটন অথবা ১৩২ কিলোনিউটন থ্রাস্ট তৈরি করতে পারে। জে-১১ একটানা উড়তে পারে ৩ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার। 

মিগ-২৩ ফ্লোগার-মাক ২.৩৫ মিগ-২৩ ফ্লোগার-মাক ২.৩৫ 
বিশ্বের দ্রুততম যুদ্ধবিমানের অন্যতম একটি হলো মিগ-২৩। ন্যাটো এটির নাম দিয়েছে ফ্লোগার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫ হাজার ইউনিটের বেশি এই বিমান রপ্তানি করেছে রাশিয়া। 

ইরান-ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধ এবং উপসাগরীয় যুদ্ধে মিগ-২৩ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিমানটি বর্তমানে রাশিয়ার বাইরে সীমিত পরিসেবায় রয়েছে। 

এই বিমানে রয়েছে জিএসএইচ-২৩ বেলি-মাউন্টেড কামান, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ভিম্পেল আর-২৩ এবং আর-৬০ ক্ষেপণাস্ত্র। 

তুমানস্কি আর-২৯বি টার্বোজেট ইঞ্জিন চালিত এ বিমানের সর্বোচ্চ গতি মাক ২ দশমিক ৩৫। ইঞ্জিনের থ্রাস্ট ৮ হাজার কেজি-ফোর্স (৭৮ দশমিক ৪ কিলো নিউটন)। আফটারবার্নিং থ্রাস্ট দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫০০ কেজি-ফোর্স বা ১১২ দশমিক ৮ কিলোনিউটন। 

টর্নেডো এডিভি-মাক ২.২৭ টর্নেডো এডিভি-মাক ২.২৭ 
প্যানাভিয়া এয়ারক্রাফট কোম্পানির নির্মিত টর্নেডো যুদ্ধবিমানের ইন্টারসেপ্টর ভেরিয়েন্টটিই টর্নেডো এয়ার ডিফেন্স ভেরিয়েন্ট (এডিভি)। এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২ দশমিক ২৭। 

জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং সৌদি আরবের বিমানবাহিনীর কাছে ৯৫০টির বেশি টর্নেডো যুদ্ধবিমান রয়েছে। 

টর্নেডো এডিভির অস্ত্রসজ্জার মধ্যে রয়েছে—একটি ২৭ এমএম মাউসার বিকে-২৭ কামান, এআইএম ৭ স্কাইফ্ল্যাশ এবং এআইএম-১২০ এএমআরএএএম বা এআইএম-১৩২ এএসআরএএএম আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। 

দুটি টার্বো-ইউনিয়ন আরবি ১৯৯ টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিনের প্রতিটির ড্রাই থ্রাস্ট ৪০ দশমিক ৫ কিলো নিউটন। প্রতিটি ইঞ্জিন আফটারবার্নিং থ্রাস্ট ৭০ কিলো নিউটন। টর্নেডো এডিভির একটানা সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৯০ কিলোমিটার উড়তে পারে। 

মিগ-৩৫ ফালক্রাম-এফ-মাক ২.২৫ মিগ-৩৫ ফালক্রাম-এফ-মাক ২.২৫ 
মিগ-৩৫ (ন্যাটো এর কোড নাম দিয়েছে: ফালক্রাম-এফ) ৪ প্লাস প্লাস প্রজন্মের এক আসনের মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান। এটি তৈরি করেছে আরএইস মিগ। এ বিমানের সর্বোচ্চ গতি মাক ২ দশমিক ২৫। মিগ-৩৫-এর দুই সিটের একটি সংস্করণ আছে—মিগ-৩৫ডি। 

মূলত মিগ-২৯ ফাইটারের ওপর ভিত্তি করেই বানানো হয় মিগ-৩৫। এটি ২০০৭ সালে ভারতের এয়ার শোতে প্রথম দেখা যায়। ২০১৯ সালের জুনে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর বহরে এটি যুক্ত করা হয়। 

বিমানটিতে রয়েছে—একটি ৩০ এমএম জিএসএইচ-৩০-১ কামান, আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, গাইডেড এবং আনগাইডেড বোমা এবং রকেট রয়েছে। 

এতে রয়েছে দুটি আরডি-৩৩ এমকে জেট ইঞ্জিনে রয়েছে একটি ধোঁয়াবিহীন দহন চেম্বার এবং নতুন ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

ডগফাইট পরিস্থিতির জন্য বিমানটিতে অল-অ্যাসপেক্ট থ্রাস্ট-ভেক্টর কন্ট্রোল (টিভিসি) আরডি-৩৩ এমকে ইঞ্জিনও যুক্ত করা হয়েছে।

এসইউ-৩৫ ফ্ল্যাঙ্কার-ই-মাক ২.২৫ এসইউ-৩৫ ফ্ল্যাঙ্কার-ই-মাক ২.২৫ 
এই যুদ্ধবিমান বানিয়েছে রুশ কমসমোলস্ক-না-আমুর এভিয়েশন প্রোডাকশন অ্যাসোসিয়েশন। এসইউ-৩৫ মাল্টিরোল ফাইটার মূলত এসইউ-২৭ বিমানের আধুনিক সংস্করণ। অত্যন্ত কৌশলী বিমানটি সর্বোচ্চ মাক ২ দশমিক ২৫ গতিতে উড়তে পারে। 

এসইউ-৩৫ বর্তমানে রাশিয়ান এয়ার ফোর্স এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সে রয়েছে। বিমানটিতে রয়েছে—একটি ৩০০ এমএম জিএসএইচ-৩০ কামান, বোমা, আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এবং গাইডেড ও আনগাইডেড রকেট। 

বিমানটিতে দুটি স্যাটার্ন ১১৭এস টার্বোফ্যান ইঞ্জিন চালিত। প্রতিটি ইঞ্জিন আফটারবার্নিং ১৪ হাজার ৫০০ কেজি-ফোর্স (১৪২ কিলো নিউটন) থ্রাস্ট উৎপন্ন করতে পারে। এসইউ-৩৫ একবার জ্বালানি ভরে টানা ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার উড়তে পারে। 

এফ-২২ র‍্যাপটরএফ-২২ র‍্যাপটর
এফ-২২ র‍্যাপটর পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট। এটি বানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন। ইউএস এয়ার ফোর্সের জন্য এটি তৈরি করে তারা। দুই ইঞ্জিনের বিমানটি আফটারবার্নার ব্যবহার না করেই সুপারসনিক গতি পেতে সক্ষম। এটি মাক ২-এর বেশি গতিতে উড়তে পারে। 

যুদ্ধবিমানটিতে রয়েছে একটি এম ৬১ এ ২ ভালকান ২০ এমএম কামান, এআইএম-১২০ এএমএএএম এবং এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, জয়েন্ট ডাইরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন কিট এবং ছোট ব্যাসের জিবিইউ-৩৯ বোমা। 

দুটি প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি এফ ১১৯-পিডব্লিউ-১০০ টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন চালিত বিমানটিতে রয়েছে দ্বি-মাত্রিক থ্রাস্ট ভেক্টরিং অগ্রভাগ। ফাইটার বিমানটি সর্বোচ্চ ২০ হাজার মিটার উচ্চতায় এবং সর্বাধিক ২ হাজার ৯৬৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ভেসে আসা কোরালে ‘কপাল খুলল’ আনোয়ারের

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কোন আইএসকে আঘাত করল মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে আইএস আস্তানা লক্ষ্য করে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসলামিক স্টেট কী

ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।

লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল

আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।

আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা

কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।

নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ভেসে আসা কোরালে ‘কপাল খুলল’ আনোয়ারের

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালাল মার্কিন বাহিনী, খ্রিষ্টান নিপীড়নের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’

গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।

কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।

তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে

নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।

নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান

ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।

নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।

এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’

এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।

দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ভেসে আসা কোরালে ‘কপাল খুলল’ আনোয়ারের

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ভেসে আসা কোরালে ‘কপাল খুলল’ আনোয়ারের

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২৪৩ আসনে প্রার্থী দিল জি এম কাদেরের জাপা

‘অনলাইনে জুয়ার টাকা ভাগাভাগি’ নিয়ে খুন হন বগুড়ার সেই ব্যবসায়ী

সূর্যাস্তের আগে স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারলেন না তারেক রহমান, তাঁর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কেন্দ্রীয় নেতাদের

ভেসে আসা কোরালে ‘কপাল খুলল’ আনোয়ারের

‘প্রশ্ন ফাঁসের’ অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত