ইজাজুল হক, ঢাকা

ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের বেড়ে ওঠা এবং তাঁর কবি হয়ে ওঠার পথটি নিয়ে গেল পর্বেই আলাপ হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে এই কবিকে আলাদা করা যায় না। আবির্ভাব দিয়েই বুঝিয়েছিলেন নিজের উচ্চতা।
কবিতাশৈলীতে গাসসান জাকতান পঞ্চাশের দশক থেকে আরবি কবিতার নেতৃত্ব দিয়ে আসা কবি প্রজন্মকে ছাড়িয়ে গেছেন এরই মধ্যে। যেসব আরবি কবির কবিতা আধুনিক চিন্তা ও প্রযুক্তির মৌলিক চিহ্নবাহী, তাঁদের মধ্যে সেরা কবি গাসসান জাকতান। তাঁর কবিতা উজ্জ্বল চকচকে মনোরম দৃশ্যে সজ্জিত, যা কবিতার শরীরকে জীবন্ত করে তোলে। তাতে ফুটে ওঠে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনাপ্রবাহ; মানুষের যাপিত জীবনের সবকিছুই। ফলে তাঁর কবিতা সাধারণভাবে সমকালীন আরবদের জীবনের ওপর আলো ফেললেও বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি মানুষের জীবনপ্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করে।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণে, ভাষা ও উপস্থাপনের অকৃত্রিমতাই গাসসান জাকতানের কবিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতা যথাসম্ভব অলংকার ও রূপক থেকে মুক্ত। মুক্ত ছন্দে লেখা পঙ্ক্তিগুলো উচ্চাঙ্গ ভাব ও অতি দুঃখবোধের ঊর্ধ্বে। বেশি আবেগমথিত ও অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো হুজুগেও নেই তাঁর কবিতার মর্ম। তাঁর কবিতা মানেই স্রেফ বুদ্ধিবৃত্তিক আধুনিকতম পদ্য। রূপক থেকে বেরিয়ে এসে, শব্দসংখ্যা কমিয়ে, চারপাশের ছোট ছোট উপাদানগুলো মহান করে তোলাই তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান। দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম আখ্যান দিয়ে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছেন তিনি, যা আজকের তরুণ আরব কবিদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় সমকালীন কবিদের ছাপও রয়েছে। কবি আমজাদ নাসের, কবি নুরি আল-জাররাহ্, কবি আব্বাস ইয়াবদুন, কবি বাসসাম হাজজার, কবি ইনায়া জাবির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
দুই.
গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের অন্যতম বিচারক চাইনিজ-আমেরিকান কবি ওয়াং পিং (১৯৫৭-বর্তমান) গাসসানের কবিতায় দারুণ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, গাসসানের দুর্বার কাব্যপ্রতিভা তাঁকেও ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করে। গাসসানের কবিতার মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, ‘কবিতার কাজ কী? কিছুই না; আবার কবিতাই সবকিছু। এই মাটি, বাতাস, জল, পাখি, মাছ, বৃক্ষ, প্রেম, হৃদয় থেকে শুরু করে সবকিছুই কবিতা। কবিতা নিয়ত আমাদের সঙ্গে বসবাস করে; আমাদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র বিরাজ করে। এত কিছুর পরেও আমরা প্রায়ই কবিতার মতো মূল্যবান উপহারের কথা ভুলে যাই। তাই কবিতাকে উপহারের মতো করে পরিবেশন করাই কবিদের কাজ। কবির শব্দই আমাদের ফের মানুষ করে তোলে। গাসসান সে কাজই করেছেন। তাঁর কবিতা ফুলের বাগানে, হৃদয়ে কিংবা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের গভীরে সমাহিত আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধ, হতাশা ও বৈশ্বিক বিবর্তনের মধ্যেও আমরা কেন বাঁচি এবং কীভাবে—গাসসানের আবৃত্তি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর কথা অন্ধকারকে আলোয়, ঘৃণাকে ভালোবাসায় এবং মৃত্যুকে জীবনে পরিণত করে। তাঁর কবিতার জাদু আমাদের একটি আশাজাগানিয়া পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গির পথ দেখায়।...এটিই জাকতানের একমাত্র ‘পেশা’ এবং এখন থেকে তা আমাদেরও পেশা।’
মার্কিন কবি ও সাহিত্য সমালোচক লরেন্স জোসেফ (১৯৪৮-বর্তমান) গাসসানকে ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যে শুধু সেরাই মনে করেন না, বরং বিশ্বসাহিত্যেরও অনিবার্য কবিসত্তাও মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জাকতান ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যেই কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি নন, বরং তিনি একালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। উত্তরাধুনিক কবিতার ধারায় আবেগ-অনুভূতি, প্রাত্যহিক জটিলতা ও জীবনের গভীরতাকে তিনি তুলনারহিত সর্বজনীন ভাষায় মূর্ত করে তোলেন।’
ইউক্রেন বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি ও সমালোচক ইলিয়া কামিনস্কি (১৯৭৭-বর্তমান) গাসসানকে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার (১৯২২-১৯৯১) সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফাদি জাওদাহর অসাধারণ অনুবাদে গাসসান জাকতানকে পড়ে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও সহিংসতা দেখেছিলেন এবং জাতির স্বপ্নের সময়টি কবিতায় তুলে এনেছিলেন। পোপার মতো জাকতানও তাঁর শেকড়ের পরিচয় দিতে ভয় পান না। যখন “ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা/পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল”, তখন তারা কবিরই বালিশ দিয়ে তা খোঁড়া শুরু করে—এমন দৃশ্য দেখতেও কবি ভয় পান না। তাঁর এমন সাহসিকতা ও কাব্যিক দক্ষতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ‘ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা...’ বলে ইলিয়া কামিনস্কি এখানে গাসসানের একটি কবিতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ক্যাভাফি ছিলেন গ্রিক কবি, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা। পুরো নাম কনস্টান্টাইন পিটার ক্যাভাফি (১৮৬৩-১৯৩৩)। ইহুদি দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রমকে কবিতায় তিনি ক্যাভাফির উসকিয়ে দেওয়া নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘ক্যাভাফির নির্মাতারা’ শিরোনামের কবিতাটির অনুবাদ—
আমার কণ্ঠে এক সুর আছে
কখনো তার স্পর্শ পাইনি আমি—
তবে তা-ই আমার একমাত্র সোনার টুকরো
এবং তা-ই আমার অবলম্বন
তাতে আছে উপস্থিত রচনার সম্ভাবনা
আছে ক্রিয়াপদের কোমলতা
এবং আছে বর্ণনার দৃঢ়তা
যেন ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল
এবং তা খোঁড়া শুরু করে দেয় আমারই বালিশ দিয়ে!
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
তিন.
ইলিয়া কামিনস্কির কথার সূত্র ধরে গাসসানের সাহসী কণ্ঠের আরেকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছি। মোটেও আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগেন না তিনি। ইস্পাতসম দৃঢ়তার সঙ্গেই তাঁর ফিলিস্তিনি হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন কবিতায়। কানাডার গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের সম্মাননা অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি গাসসান তাঁর ভরাট কণ্ঠে এমন বার্তা দিয়ে আবৃত্তি করা কবিতাটির অনুবাদ পাঠকদের পাতে তুলে দিচ্ছি। তার আগে কবিতার সারাংশটি বলে যাই—
পশ্চিম তীরের অধিকৃত পার্বত্য এলাকা ‘জাবালে নাজমা’র এক বিশেষ আবহে কবিতাটি লেখা হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যকল্পের পাশাপাশি ফিলিস্তিন অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের অনুসন্ধান করেন তিনি। আজকের দখলদারদের বীভৎস চেহারাও বুড়ো সাইপ্রাস বৃক্ষের ওপর প্রেতাত্মার রূপে দেখতে পান কবি। শেষের দিকে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। বাবা খলিল জাকতান, উমাইয়া যুগের বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি মালিক আর-রাইব এবং বিশ শতকের বিখ্যাত কবি ও সমালোচক হুসাইন জামিল বারগৌসির পরম্পরায় নিজের পরিচয়হীন হওয়ার অভিযোগ বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সুরে উড়িয়ে দেন।
চলুন এবার কবিতাটি পড়া যাক—
একা নও তুমি বিজন বনে
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে, জাদুকর পথ আগলে দাঁড়াবে আমার
কালো মাস্তুলের নৌকা চলে যে পথে
খড়ের মুখোশ আর শোকের বসনে মৃতেরা যেখানে বসে থাকে ভোরের আগ থেকে,
যে পথ পাড়ি দেয় পাখি
যেখানে সাঁতরে বেড়ায় সাদা কুয়াশা আর ঝোপেরা খুলে রাখে দরজা সকল
যেখানে ঢাল থেকে ভেসে আসে কারও কণ্ঠ
এবং শোনা যায় ঘণ্টাধ্বনি, ডানা ঝাপটানোর শব্দ
রাতের খাঁজ কেটে এ বন যেন উড়ে চলেছে সব পর্বত বেয়ে!
...কৃষক, জেলে, শিকারি ও বিস্মিত সৈন্য,
মোয়াবি, আসিরি, কুর্দি, মামলুক,
মিসর থেকে আসা কথিত হিব্রু,
সোনার রথে চড়া মিসরি,
সাদা দ্বীপের জাতিগোষ্ঠী, কালো পাগড়িপরা পারসিয়ান,
বেত-ভাঁজ-করা মূর্তিপূজক দার্শনিক
এবং অসুখের শেকড় খুঁজে-ফেরা সুফির দল…
ডানার ঝাপটানি বনকে টেনে নেয় অন্ধকারের ধারে!
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
যেখানে অনুপস্থিতের নামাজ বিছিয়ে দেয় শুদ্ধতার জায়নামাজ
এবং দেখা যায় গিরিখাতটির শেষ প্রান্ত,
অতি সন্তর্পণে পাশ দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের ঘ্রাণ
ফাটলগুলি যেন জিনের ফসল
এবং আলো ছড়ায় সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা—
তখন আমি জীর্ণ সাইপ্রাসের ওপর ঘুমিয়ে থাকা কুষ্ঠরোগীদের ভূত দেখি
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
পুরোনো এক চেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পাব,
আমার দিকে পাশা ছুড়ে দেওয়া আমার বাবার কণ্ঠস্বর
কিংবা মালিকের—
এপিটাফে তিনি হাঁকাচ্ছেন স্বর্ণকেশী ঘোড়া
অথবা হুসাইন আল-বারগৌসির কণ্ঠস্বর—
বাদামগাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন যিনি
তাঁর লিখে যাওয়া অসিয়ত মোতাবেক
এবং আমার কণ্ঠস্বর—
একা নও তুমি বিজন বনে।
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু

ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের বেড়ে ওঠা এবং তাঁর কবি হয়ে ওঠার পথটি নিয়ে গেল পর্বেই আলাপ হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে এই কবিকে আলাদা করা যায় না। আবির্ভাব দিয়েই বুঝিয়েছিলেন নিজের উচ্চতা।
কবিতাশৈলীতে গাসসান জাকতান পঞ্চাশের দশক থেকে আরবি কবিতার নেতৃত্ব দিয়ে আসা কবি প্রজন্মকে ছাড়িয়ে গেছেন এরই মধ্যে। যেসব আরবি কবির কবিতা আধুনিক চিন্তা ও প্রযুক্তির মৌলিক চিহ্নবাহী, তাঁদের মধ্যে সেরা কবি গাসসান জাকতান। তাঁর কবিতা উজ্জ্বল চকচকে মনোরম দৃশ্যে সজ্জিত, যা কবিতার শরীরকে জীবন্ত করে তোলে। তাতে ফুটে ওঠে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনাপ্রবাহ; মানুষের যাপিত জীবনের সবকিছুই। ফলে তাঁর কবিতা সাধারণভাবে সমকালীন আরবদের জীবনের ওপর আলো ফেললেও বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি মানুষের জীবনপ্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করে।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণে, ভাষা ও উপস্থাপনের অকৃত্রিমতাই গাসসান জাকতানের কবিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতা যথাসম্ভব অলংকার ও রূপক থেকে মুক্ত। মুক্ত ছন্দে লেখা পঙ্ক্তিগুলো উচ্চাঙ্গ ভাব ও অতি দুঃখবোধের ঊর্ধ্বে। বেশি আবেগমথিত ও অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো হুজুগেও নেই তাঁর কবিতার মর্ম। তাঁর কবিতা মানেই স্রেফ বুদ্ধিবৃত্তিক আধুনিকতম পদ্য। রূপক থেকে বেরিয়ে এসে, শব্দসংখ্যা কমিয়ে, চারপাশের ছোট ছোট উপাদানগুলো মহান করে তোলাই তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান। দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম আখ্যান দিয়ে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছেন তিনি, যা আজকের তরুণ আরব কবিদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় সমকালীন কবিদের ছাপও রয়েছে। কবি আমজাদ নাসের, কবি নুরি আল-জাররাহ্, কবি আব্বাস ইয়াবদুন, কবি বাসসাম হাজজার, কবি ইনায়া জাবির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
দুই.
গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের অন্যতম বিচারক চাইনিজ-আমেরিকান কবি ওয়াং পিং (১৯৫৭-বর্তমান) গাসসানের কবিতায় দারুণ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, গাসসানের দুর্বার কাব্যপ্রতিভা তাঁকেও ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করে। গাসসানের কবিতার মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, ‘কবিতার কাজ কী? কিছুই না; আবার কবিতাই সবকিছু। এই মাটি, বাতাস, জল, পাখি, মাছ, বৃক্ষ, প্রেম, হৃদয় থেকে শুরু করে সবকিছুই কবিতা। কবিতা নিয়ত আমাদের সঙ্গে বসবাস করে; আমাদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র বিরাজ করে। এত কিছুর পরেও আমরা প্রায়ই কবিতার মতো মূল্যবান উপহারের কথা ভুলে যাই। তাই কবিতাকে উপহারের মতো করে পরিবেশন করাই কবিদের কাজ। কবির শব্দই আমাদের ফের মানুষ করে তোলে। গাসসান সে কাজই করেছেন। তাঁর কবিতা ফুলের বাগানে, হৃদয়ে কিংবা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের গভীরে সমাহিত আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধ, হতাশা ও বৈশ্বিক বিবর্তনের মধ্যেও আমরা কেন বাঁচি এবং কীভাবে—গাসসানের আবৃত্তি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর কথা অন্ধকারকে আলোয়, ঘৃণাকে ভালোবাসায় এবং মৃত্যুকে জীবনে পরিণত করে। তাঁর কবিতার জাদু আমাদের একটি আশাজাগানিয়া পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গির পথ দেখায়।...এটিই জাকতানের একমাত্র ‘পেশা’ এবং এখন থেকে তা আমাদেরও পেশা।’
মার্কিন কবি ও সাহিত্য সমালোচক লরেন্স জোসেফ (১৯৪৮-বর্তমান) গাসসানকে ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যে শুধু সেরাই মনে করেন না, বরং বিশ্বসাহিত্যেরও অনিবার্য কবিসত্তাও মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জাকতান ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যেই কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি নন, বরং তিনি একালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। উত্তরাধুনিক কবিতার ধারায় আবেগ-অনুভূতি, প্রাত্যহিক জটিলতা ও জীবনের গভীরতাকে তিনি তুলনারহিত সর্বজনীন ভাষায় মূর্ত করে তোলেন।’
ইউক্রেন বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি ও সমালোচক ইলিয়া কামিনস্কি (১৯৭৭-বর্তমান) গাসসানকে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার (১৯২২-১৯৯১) সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফাদি জাওদাহর অসাধারণ অনুবাদে গাসসান জাকতানকে পড়ে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও সহিংসতা দেখেছিলেন এবং জাতির স্বপ্নের সময়টি কবিতায় তুলে এনেছিলেন। পোপার মতো জাকতানও তাঁর শেকড়ের পরিচয় দিতে ভয় পান না। যখন “ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা/পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল”, তখন তারা কবিরই বালিশ দিয়ে তা খোঁড়া শুরু করে—এমন দৃশ্য দেখতেও কবি ভয় পান না। তাঁর এমন সাহসিকতা ও কাব্যিক দক্ষতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ‘ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা...’ বলে ইলিয়া কামিনস্কি এখানে গাসসানের একটি কবিতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ক্যাভাফি ছিলেন গ্রিক কবি, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা। পুরো নাম কনস্টান্টাইন পিটার ক্যাভাফি (১৮৬৩-১৯৩৩)। ইহুদি দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রমকে কবিতায় তিনি ক্যাভাফির উসকিয়ে দেওয়া নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘ক্যাভাফির নির্মাতারা’ শিরোনামের কবিতাটির অনুবাদ—
আমার কণ্ঠে এক সুর আছে
কখনো তার স্পর্শ পাইনি আমি—
তবে তা-ই আমার একমাত্র সোনার টুকরো
এবং তা-ই আমার অবলম্বন
তাতে আছে উপস্থিত রচনার সম্ভাবনা
আছে ক্রিয়াপদের কোমলতা
এবং আছে বর্ণনার দৃঢ়তা
যেন ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল
এবং তা খোঁড়া শুরু করে দেয় আমারই বালিশ দিয়ে!
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
তিন.
ইলিয়া কামিনস্কির কথার সূত্র ধরে গাসসানের সাহসী কণ্ঠের আরেকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছি। মোটেও আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগেন না তিনি। ইস্পাতসম দৃঢ়তার সঙ্গেই তাঁর ফিলিস্তিনি হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন কবিতায়। কানাডার গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের সম্মাননা অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি গাসসান তাঁর ভরাট কণ্ঠে এমন বার্তা দিয়ে আবৃত্তি করা কবিতাটির অনুবাদ পাঠকদের পাতে তুলে দিচ্ছি। তার আগে কবিতার সারাংশটি বলে যাই—
পশ্চিম তীরের অধিকৃত পার্বত্য এলাকা ‘জাবালে নাজমা’র এক বিশেষ আবহে কবিতাটি লেখা হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যকল্পের পাশাপাশি ফিলিস্তিন অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের অনুসন্ধান করেন তিনি। আজকের দখলদারদের বীভৎস চেহারাও বুড়ো সাইপ্রাস বৃক্ষের ওপর প্রেতাত্মার রূপে দেখতে পান কবি। শেষের দিকে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। বাবা খলিল জাকতান, উমাইয়া যুগের বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি মালিক আর-রাইব এবং বিশ শতকের বিখ্যাত কবি ও সমালোচক হুসাইন জামিল বারগৌসির পরম্পরায় নিজের পরিচয়হীন হওয়ার অভিযোগ বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সুরে উড়িয়ে দেন।
চলুন এবার কবিতাটি পড়া যাক—
একা নও তুমি বিজন বনে
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে, জাদুকর পথ আগলে দাঁড়াবে আমার
কালো মাস্তুলের নৌকা চলে যে পথে
খড়ের মুখোশ আর শোকের বসনে মৃতেরা যেখানে বসে থাকে ভোরের আগ থেকে,
যে পথ পাড়ি দেয় পাখি
যেখানে সাঁতরে বেড়ায় সাদা কুয়াশা আর ঝোপেরা খুলে রাখে দরজা সকল
যেখানে ঢাল থেকে ভেসে আসে কারও কণ্ঠ
এবং শোনা যায় ঘণ্টাধ্বনি, ডানা ঝাপটানোর শব্দ
রাতের খাঁজ কেটে এ বন যেন উড়ে চলেছে সব পর্বত বেয়ে!
...কৃষক, জেলে, শিকারি ও বিস্মিত সৈন্য,
মোয়াবি, আসিরি, কুর্দি, মামলুক,
মিসর থেকে আসা কথিত হিব্রু,
সোনার রথে চড়া মিসরি,
সাদা দ্বীপের জাতিগোষ্ঠী, কালো পাগড়িপরা পারসিয়ান,
বেত-ভাঁজ-করা মূর্তিপূজক দার্শনিক
এবং অসুখের শেকড় খুঁজে-ফেরা সুফির দল…
ডানার ঝাপটানি বনকে টেনে নেয় অন্ধকারের ধারে!
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
যেখানে অনুপস্থিতের নামাজ বিছিয়ে দেয় শুদ্ধতার জায়নামাজ
এবং দেখা যায় গিরিখাতটির শেষ প্রান্ত,
অতি সন্তর্পণে পাশ দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের ঘ্রাণ
ফাটলগুলি যেন জিনের ফসল
এবং আলো ছড়ায় সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা—
তখন আমি জীর্ণ সাইপ্রাসের ওপর ঘুমিয়ে থাকা কুষ্ঠরোগীদের ভূত দেখি
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
পুরোনো এক চেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পাব,
আমার দিকে পাশা ছুড়ে দেওয়া আমার বাবার কণ্ঠস্বর
কিংবা মালিকের—
এপিটাফে তিনি হাঁকাচ্ছেন স্বর্ণকেশী ঘোড়া
অথবা হুসাইন আল-বারগৌসির কণ্ঠস্বর—
বাদামগাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন যিনি
তাঁর লিখে যাওয়া অসিয়ত মোতাবেক
এবং আমার কণ্ঠস্বর—
একা নও তুমি বিজন বনে।
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু
ইজাজুল হক, ঢাকা

ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের বেড়ে ওঠা এবং তাঁর কবি হয়ে ওঠার পথটি নিয়ে গেল পর্বেই আলাপ হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে এই কবিকে আলাদা করা যায় না। আবির্ভাব দিয়েই বুঝিয়েছিলেন নিজের উচ্চতা।
কবিতাশৈলীতে গাসসান জাকতান পঞ্চাশের দশক থেকে আরবি কবিতার নেতৃত্ব দিয়ে আসা কবি প্রজন্মকে ছাড়িয়ে গেছেন এরই মধ্যে। যেসব আরবি কবির কবিতা আধুনিক চিন্তা ও প্রযুক্তির মৌলিক চিহ্নবাহী, তাঁদের মধ্যে সেরা কবি গাসসান জাকতান। তাঁর কবিতা উজ্জ্বল চকচকে মনোরম দৃশ্যে সজ্জিত, যা কবিতার শরীরকে জীবন্ত করে তোলে। তাতে ফুটে ওঠে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনাপ্রবাহ; মানুষের যাপিত জীবনের সবকিছুই। ফলে তাঁর কবিতা সাধারণভাবে সমকালীন আরবদের জীবনের ওপর আলো ফেললেও বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি মানুষের জীবনপ্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করে।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণে, ভাষা ও উপস্থাপনের অকৃত্রিমতাই গাসসান জাকতানের কবিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতা যথাসম্ভব অলংকার ও রূপক থেকে মুক্ত। মুক্ত ছন্দে লেখা পঙ্ক্তিগুলো উচ্চাঙ্গ ভাব ও অতি দুঃখবোধের ঊর্ধ্বে। বেশি আবেগমথিত ও অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো হুজুগেও নেই তাঁর কবিতার মর্ম। তাঁর কবিতা মানেই স্রেফ বুদ্ধিবৃত্তিক আধুনিকতম পদ্য। রূপক থেকে বেরিয়ে এসে, শব্দসংখ্যা কমিয়ে, চারপাশের ছোট ছোট উপাদানগুলো মহান করে তোলাই তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান। দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম আখ্যান দিয়ে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছেন তিনি, যা আজকের তরুণ আরব কবিদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় সমকালীন কবিদের ছাপও রয়েছে। কবি আমজাদ নাসের, কবি নুরি আল-জাররাহ্, কবি আব্বাস ইয়াবদুন, কবি বাসসাম হাজজার, কবি ইনায়া জাবির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
দুই.
গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের অন্যতম বিচারক চাইনিজ-আমেরিকান কবি ওয়াং পিং (১৯৫৭-বর্তমান) গাসসানের কবিতায় দারুণ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, গাসসানের দুর্বার কাব্যপ্রতিভা তাঁকেও ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করে। গাসসানের কবিতার মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, ‘কবিতার কাজ কী? কিছুই না; আবার কবিতাই সবকিছু। এই মাটি, বাতাস, জল, পাখি, মাছ, বৃক্ষ, প্রেম, হৃদয় থেকে শুরু করে সবকিছুই কবিতা। কবিতা নিয়ত আমাদের সঙ্গে বসবাস করে; আমাদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র বিরাজ করে। এত কিছুর পরেও আমরা প্রায়ই কবিতার মতো মূল্যবান উপহারের কথা ভুলে যাই। তাই কবিতাকে উপহারের মতো করে পরিবেশন করাই কবিদের কাজ। কবির শব্দই আমাদের ফের মানুষ করে তোলে। গাসসান সে কাজই করেছেন। তাঁর কবিতা ফুলের বাগানে, হৃদয়ে কিংবা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের গভীরে সমাহিত আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধ, হতাশা ও বৈশ্বিক বিবর্তনের মধ্যেও আমরা কেন বাঁচি এবং কীভাবে—গাসসানের আবৃত্তি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর কথা অন্ধকারকে আলোয়, ঘৃণাকে ভালোবাসায় এবং মৃত্যুকে জীবনে পরিণত করে। তাঁর কবিতার জাদু আমাদের একটি আশাজাগানিয়া পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গির পথ দেখায়।...এটিই জাকতানের একমাত্র ‘পেশা’ এবং এখন থেকে তা আমাদেরও পেশা।’
মার্কিন কবি ও সাহিত্য সমালোচক লরেন্স জোসেফ (১৯৪৮-বর্তমান) গাসসানকে ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যে শুধু সেরাই মনে করেন না, বরং বিশ্বসাহিত্যেরও অনিবার্য কবিসত্তাও মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জাকতান ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যেই কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি নন, বরং তিনি একালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। উত্তরাধুনিক কবিতার ধারায় আবেগ-অনুভূতি, প্রাত্যহিক জটিলতা ও জীবনের গভীরতাকে তিনি তুলনারহিত সর্বজনীন ভাষায় মূর্ত করে তোলেন।’
ইউক্রেন বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি ও সমালোচক ইলিয়া কামিনস্কি (১৯৭৭-বর্তমান) গাসসানকে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার (১৯২২-১৯৯১) সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফাদি জাওদাহর অসাধারণ অনুবাদে গাসসান জাকতানকে পড়ে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও সহিংসতা দেখেছিলেন এবং জাতির স্বপ্নের সময়টি কবিতায় তুলে এনেছিলেন। পোপার মতো জাকতানও তাঁর শেকড়ের পরিচয় দিতে ভয় পান না। যখন “ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা/পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল”, তখন তারা কবিরই বালিশ দিয়ে তা খোঁড়া শুরু করে—এমন দৃশ্য দেখতেও কবি ভয় পান না। তাঁর এমন সাহসিকতা ও কাব্যিক দক্ষতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ‘ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা...’ বলে ইলিয়া কামিনস্কি এখানে গাসসানের একটি কবিতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ক্যাভাফি ছিলেন গ্রিক কবি, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা। পুরো নাম কনস্টান্টাইন পিটার ক্যাভাফি (১৮৬৩-১৯৩৩)। ইহুদি দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রমকে কবিতায় তিনি ক্যাভাফির উসকিয়ে দেওয়া নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘ক্যাভাফির নির্মাতারা’ শিরোনামের কবিতাটির অনুবাদ—
আমার কণ্ঠে এক সুর আছে
কখনো তার স্পর্শ পাইনি আমি—
তবে তা-ই আমার একমাত্র সোনার টুকরো
এবং তা-ই আমার অবলম্বন
তাতে আছে উপস্থিত রচনার সম্ভাবনা
আছে ক্রিয়াপদের কোমলতা
এবং আছে বর্ণনার দৃঢ়তা
যেন ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল
এবং তা খোঁড়া শুরু করে দেয় আমারই বালিশ দিয়ে!
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
তিন.
ইলিয়া কামিনস্কির কথার সূত্র ধরে গাসসানের সাহসী কণ্ঠের আরেকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছি। মোটেও আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগেন না তিনি। ইস্পাতসম দৃঢ়তার সঙ্গেই তাঁর ফিলিস্তিনি হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন কবিতায়। কানাডার গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের সম্মাননা অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি গাসসান তাঁর ভরাট কণ্ঠে এমন বার্তা দিয়ে আবৃত্তি করা কবিতাটির অনুবাদ পাঠকদের পাতে তুলে দিচ্ছি। তার আগে কবিতার সারাংশটি বলে যাই—
পশ্চিম তীরের অধিকৃত পার্বত্য এলাকা ‘জাবালে নাজমা’র এক বিশেষ আবহে কবিতাটি লেখা হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যকল্পের পাশাপাশি ফিলিস্তিন অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের অনুসন্ধান করেন তিনি। আজকের দখলদারদের বীভৎস চেহারাও বুড়ো সাইপ্রাস বৃক্ষের ওপর প্রেতাত্মার রূপে দেখতে পান কবি। শেষের দিকে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। বাবা খলিল জাকতান, উমাইয়া যুগের বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি মালিক আর-রাইব এবং বিশ শতকের বিখ্যাত কবি ও সমালোচক হুসাইন জামিল বারগৌসির পরম্পরায় নিজের পরিচয়হীন হওয়ার অভিযোগ বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সুরে উড়িয়ে দেন।
চলুন এবার কবিতাটি পড়া যাক—
একা নও তুমি বিজন বনে
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে, জাদুকর পথ আগলে দাঁড়াবে আমার
কালো মাস্তুলের নৌকা চলে যে পথে
খড়ের মুখোশ আর শোকের বসনে মৃতেরা যেখানে বসে থাকে ভোরের আগ থেকে,
যে পথ পাড়ি দেয় পাখি
যেখানে সাঁতরে বেড়ায় সাদা কুয়াশা আর ঝোপেরা খুলে রাখে দরজা সকল
যেখানে ঢাল থেকে ভেসে আসে কারও কণ্ঠ
এবং শোনা যায় ঘণ্টাধ্বনি, ডানা ঝাপটানোর শব্দ
রাতের খাঁজ কেটে এ বন যেন উড়ে চলেছে সব পর্বত বেয়ে!
...কৃষক, জেলে, শিকারি ও বিস্মিত সৈন্য,
মোয়াবি, আসিরি, কুর্দি, মামলুক,
মিসর থেকে আসা কথিত হিব্রু,
সোনার রথে চড়া মিসরি,
সাদা দ্বীপের জাতিগোষ্ঠী, কালো পাগড়িপরা পারসিয়ান,
বেত-ভাঁজ-করা মূর্তিপূজক দার্শনিক
এবং অসুখের শেকড় খুঁজে-ফেরা সুফির দল…
ডানার ঝাপটানি বনকে টেনে নেয় অন্ধকারের ধারে!
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
যেখানে অনুপস্থিতের নামাজ বিছিয়ে দেয় শুদ্ধতার জায়নামাজ
এবং দেখা যায় গিরিখাতটির শেষ প্রান্ত,
অতি সন্তর্পণে পাশ দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের ঘ্রাণ
ফাটলগুলি যেন জিনের ফসল
এবং আলো ছড়ায় সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা—
তখন আমি জীর্ণ সাইপ্রাসের ওপর ঘুমিয়ে থাকা কুষ্ঠরোগীদের ভূত দেখি
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
পুরোনো এক চেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পাব,
আমার দিকে পাশা ছুড়ে দেওয়া আমার বাবার কণ্ঠস্বর
কিংবা মালিকের—
এপিটাফে তিনি হাঁকাচ্ছেন স্বর্ণকেশী ঘোড়া
অথবা হুসাইন আল-বারগৌসির কণ্ঠস্বর—
বাদামগাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন যিনি
তাঁর লিখে যাওয়া অসিয়ত মোতাবেক
এবং আমার কণ্ঠস্বর—
একা নও তুমি বিজন বনে।
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু

ফিলিস্তিনি কবি গাসসান জাকতানের বেড়ে ওঠা এবং তাঁর কবি হয়ে ওঠার পথটি নিয়ে গেল পর্বেই আলাপ হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে এই কবিকে আলাদা করা যায় না। আবির্ভাব দিয়েই বুঝিয়েছিলেন নিজের উচ্চতা।
কবিতাশৈলীতে গাসসান জাকতান পঞ্চাশের দশক থেকে আরবি কবিতার নেতৃত্ব দিয়ে আসা কবি প্রজন্মকে ছাড়িয়ে গেছেন এরই মধ্যে। যেসব আরবি কবির কবিতা আধুনিক চিন্তা ও প্রযুক্তির মৌলিক চিহ্নবাহী, তাঁদের মধ্যে সেরা কবি গাসসান জাকতান। তাঁর কবিতা উজ্জ্বল চকচকে মনোরম দৃশ্যে সজ্জিত, যা কবিতার শরীরকে জীবন্ত করে তোলে। তাতে ফুটে ওঠে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ঘটনাপ্রবাহ; মানুষের যাপিত জীবনের সবকিছুই। ফলে তাঁর কবিতা সাধারণভাবে সমকালীন আরবদের জীবনের ওপর আলো ফেললেও বিশেষভাবে ফিলিস্তিনি মানুষের জীবনপ্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করে।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণে, ভাষা ও উপস্থাপনের অকৃত্রিমতাই গাসসান জাকতানের কবিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতা যথাসম্ভব অলংকার ও রূপক থেকে মুক্ত। মুক্ত ছন্দে লেখা পঙ্ক্তিগুলো উচ্চাঙ্গ ভাব ও অতি দুঃখবোধের ঊর্ধ্বে। বেশি আবেগমথিত ও অনুভূতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো হুজুগেও নেই তাঁর কবিতার মর্ম। তাঁর কবিতা মানেই স্রেফ বুদ্ধিবৃত্তিক আধুনিকতম পদ্য। রূপক থেকে বেরিয়ে এসে, শব্দসংখ্যা কমিয়ে, চারপাশের ছোট ছোট উপাদানগুলো মহান করে তোলাই তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য।
গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান। দৈনন্দিন জীবনের সূক্ষ্ম আখ্যান দিয়ে নতুন একটি ধারা তৈরি করেছেন তিনি, যা আজকের তরুণ আরব কবিদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ছাড়া তাঁর কবিতায় সমকালীন কবিদের ছাপও রয়েছে। কবি আমজাদ নাসের, কবি নুরি আল-জাররাহ্, কবি আব্বাস ইয়াবদুন, কবি বাসসাম হাজজার, কবি ইনায়া জাবির প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
দুই.
গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের অন্যতম বিচারক চাইনিজ-আমেরিকান কবি ওয়াং পিং (১৯৫৭-বর্তমান) গাসসানের কবিতায় দারুণ মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তাঁর দাবি, গাসসানের দুর্বার কাব্যপ্রতিভা তাঁকেও ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করে। গাসসানের কবিতার মূল্যায়ন করে তিনি বলেন, ‘কবিতার কাজ কী? কিছুই না; আবার কবিতাই সবকিছু। এই মাটি, বাতাস, জল, পাখি, মাছ, বৃক্ষ, প্রেম, হৃদয় থেকে শুরু করে সবকিছুই কবিতা। কবিতা নিয়ত আমাদের সঙ্গে বসবাস করে; আমাদের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র বিরাজ করে। এত কিছুর পরেও আমরা প্রায়ই কবিতার মতো মূল্যবান উপহারের কথা ভুলে যাই। তাই কবিতাকে উপহারের মতো করে পরিবেশন করাই কবিদের কাজ। কবির শব্দই আমাদের ফের মানুষ করে তোলে। গাসসান সে কাজই করেছেন। তাঁর কবিতা ফুলের বাগানে, হৃদয়ে কিংবা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের গভীরে সমাহিত আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধ, হতাশা ও বৈশ্বিক বিবর্তনের মধ্যেও আমরা কেন বাঁচি এবং কীভাবে—গাসসানের আবৃত্তি আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর কথা অন্ধকারকে আলোয়, ঘৃণাকে ভালোবাসায় এবং মৃত্যুকে জীবনে পরিণত করে। তাঁর কবিতার জাদু আমাদের একটি আশাজাগানিয়া পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গির পথ দেখায়।...এটিই জাকতানের একমাত্র ‘পেশা’ এবং এখন থেকে তা আমাদেরও পেশা।’
মার্কিন কবি ও সাহিত্য সমালোচক লরেন্স জোসেফ (১৯৪৮-বর্তমান) গাসসানকে ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যে শুধু সেরাই মনে করেন না, বরং বিশ্বসাহিত্যেরও অনিবার্য কবিসত্তাও মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জাকতান ফিলিস্তিনের জীবন্ত কবিদের মধ্যেই কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবি নন, বরং তিনি একালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিদের একজন। উত্তরাধুনিক কবিতার ধারায় আবেগ-অনুভূতি, প্রাত্যহিক জটিলতা ও জীবনের গভীরতাকে তিনি তুলনারহিত সর্বজনীন ভাষায় মূর্ত করে তোলেন।’
ইউক্রেন বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি ও সমালোচক ইলিয়া কামিনস্কি (১৯৭৭-বর্তমান) গাসসানকে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার (১৯২২-১৯৯১) সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফাদি জাওদাহর অসাধারণ অনুবাদে গাসসান জাকতানকে পড়ে যুগোস্লাভিয়ার মহান কবি ভাস্কো পোপার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও সহিংসতা দেখেছিলেন এবং জাতির স্বপ্নের সময়টি কবিতায় তুলে এনেছিলেন। পোপার মতো জাকতানও তাঁর শেকড়ের পরিচয় দিতে ভয় পান না। যখন “ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা/পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল”, তখন তারা কবিরই বালিশ দিয়ে তা খোঁড়া শুরু করে—এমন দৃশ্য দেখতেও কবি ভয় পান না। তাঁর এমন সাহসিকতা ও কাব্যিক দক্ষতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
উল্লেখ্য, ‘ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা...’ বলে ইলিয়া কামিনস্কি এখানে গাসসানের একটি কবিতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ক্যাভাফি ছিলেন গ্রিক কবি, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা। পুরো নাম কনস্টান্টাইন পিটার ক্যাভাফি (১৮৬৩-১৯৩৩)। ইহুদি দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রমকে কবিতায় তিনি ক্যাভাফির উসকিয়ে দেওয়া নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘ক্যাভাফির নির্মাতারা’ শিরোনামের কবিতাটির অনুবাদ—
আমার কণ্ঠে এক সুর আছে
কখনো তার স্পর্শ পাইনি আমি—
তবে তা-ই আমার একমাত্র সোনার টুকরো
এবং তা-ই আমার অবলম্বন
তাতে আছে উপস্থিত রচনার সম্ভাবনা
আছে ক্রিয়াপদের কোমলতা
এবং আছে বর্ণনার দৃঢ়তা
যেন ক্যাভাফির জাগিয়ে তোলা গুপ্ত নির্মাতারা
পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল
এবং তা খোঁড়া শুরু করে দেয় আমারই বালিশ দিয়ে!
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
তিন.
ইলিয়া কামিনস্কির কথার সূত্র ধরে গাসসানের সাহসী কণ্ঠের আরেকটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছি। মোটেও আত্মপরিচয়ের সংকটে ভোগেন না তিনি। ইস্পাতসম দৃঢ়তার সঙ্গেই তাঁর ফিলিস্তিনি হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন কবিতায়। কানাডার গ্রিফিন পোয়েট্রি প্রাইজের সম্মাননা অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবি গাসসান তাঁর ভরাট কণ্ঠে এমন বার্তা দিয়ে আবৃত্তি করা কবিতাটির অনুবাদ পাঠকদের পাতে তুলে দিচ্ছি। তার আগে কবিতার সারাংশটি বলে যাই—
পশ্চিম তীরের অধিকৃত পার্বত্য এলাকা ‘জাবালে নাজমা’র এক বিশেষ আবহে কবিতাটি লেখা হয়। প্রাকৃতিক দৃশ্যকল্পের পাশাপাশি ফিলিস্তিন অঞ্চলের পূর্বপুরুষদের অনুসন্ধান করেন তিনি। আজকের দখলদারদের বীভৎস চেহারাও বুড়ো সাইপ্রাস বৃক্ষের ওপর প্রেতাত্মার রূপে দেখতে পান কবি। শেষের দিকে তিনি দৃপ্তকণ্ঠে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। বাবা খলিল জাকতান, উমাইয়া যুগের বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি মালিক আর-রাইব এবং বিশ শতকের বিখ্যাত কবি ও সমালোচক হুসাইন জামিল বারগৌসির পরম্পরায় নিজের পরিচয়হীন হওয়ার অভিযোগ বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সুরে উড়িয়ে দেন।
চলুন এবার কবিতাটি পড়া যাক—
একা নও তুমি বিজন বনে
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে, জাদুকর পথ আগলে দাঁড়াবে আমার
কালো মাস্তুলের নৌকা চলে যে পথে
খড়ের মুখোশ আর শোকের বসনে মৃতেরা যেখানে বসে থাকে ভোরের আগ থেকে,
যে পথ পাড়ি দেয় পাখি
যেখানে সাঁতরে বেড়ায় সাদা কুয়াশা আর ঝোপেরা খুলে রাখে দরজা সকল
যেখানে ঢাল থেকে ভেসে আসে কারও কণ্ঠ
এবং শোনা যায় ঘণ্টাধ্বনি, ডানা ঝাপটানোর শব্দ
রাতের খাঁজ কেটে এ বন যেন উড়ে চলেছে সব পর্বত বেয়ে!
...কৃষক, জেলে, শিকারি ও বিস্মিত সৈন্য,
মোয়াবি, আসিরি, কুর্দি, মামলুক,
মিসর থেকে আসা কথিত হিব্রু,
সোনার রথে চড়া মিসরি,
সাদা দ্বীপের জাতিগোষ্ঠী, কালো পাগড়িপরা পারসিয়ান,
বেত-ভাঁজ-করা মূর্তিপূজক দার্শনিক
এবং অসুখের শেকড় খুঁজে-ফেরা সুফির দল…
ডানার ঝাপটানি বনকে টেনে নেয় অন্ধকারের ধারে!
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
যেখানে অনুপস্থিতের নামাজ বিছিয়ে দেয় শুদ্ধতার জায়নামাজ
এবং দেখা যায় গিরিখাতটির শেষ প্রান্ত,
অতি সন্তর্পণে পাশ দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের ঘ্রাণ
ফাটলগুলি যেন জিনের ফসল
এবং আলো ছড়ায় সন্ন্যাসীদের প্রার্থনা—
তখন আমি জীর্ণ সাইপ্রাসের ওপর ঘুমিয়ে থাকা কুষ্ঠরোগীদের ভূত দেখি
জাবালে নাজমায়, বনের ধারে
পুরোনো এক চেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পাব,
আমার দিকে পাশা ছুড়ে দেওয়া আমার বাবার কণ্ঠস্বর
কিংবা মালিকের—
এপিটাফে তিনি হাঁকাচ্ছেন স্বর্ণকেশী ঘোড়া
অথবা হুসাইন আল-বারগৌসির কণ্ঠস্বর—
বাদামগাছের নিচে ঘুমিয়ে আছেন যিনি
তাঁর লিখে যাওয়া অসিয়ত মোতাবেক
এবং আমার কণ্ঠস্বর—
একা নও তুমি বিজন বনে।
(খড়ের পাখির মতো তা আমার পিছু নেয়, ২০০৮)
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল: গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৫ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
১ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?
...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।
আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...
সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
১ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।
ছবি: সংগৃহীত

গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৫ ঘণ্টা আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
২ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৫ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
১ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

গাসসান তাঁর কবিতা রচনার ক্ষেত্রে মাহমুদ দারবিশ দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। তবে তাঁর প্রভাব খুব একটা সাদাসিধে, সরল বা গল্প বলার ঢঙে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার চেয়ে আরও গভীর ও জটিল। মাহমুদ দারবিশ ও আদোনিসের মতো খ্যাতিমান পূর্বসূরিদের সুষম নান্দনিকতাকেও ছাড়িয়ে যান গাসসান।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!
৫ ঘণ্টা আগে
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের।
১ দিন আগে
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
২ দিন আগে