জাহীদ রেজা নূর

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৩ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৫ দিন আগে