সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

বাতাসে ভেজা মাটির চেনা গন্ধ। ভোরে বৃষ্টি হয়েছিল, তাই এমন ভেজা রূপে সেজেছে চারদিক। এমন দিনে বসে আড্ডাটা ভালোই জমে; তা যদি হয় কবিতা আর গানের, তবে তো কথাই নেই! আর বুকের ভেতর যদি জাগে একাত্তরের শিহরণ? সেদিন গান, কবিতা আর একাত্তরের আড্ডায় মনে হচ্ছিল এখনই রণক্ষেত্রে নেমে যাই, গুঁড়িয়ে দিই রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের! মনে হবে না কেন, সাহস আর প্রেরণা হয়ে যে সামনে ছিলেন কাজী রোজী স্বয়ং। তিনি কবি এবং আরও অনেক কিছু। বলছি ২০১৪ সালের জুন মাসের একদিনের কথা। সেদিন প্রথমবারের মতো কবির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকতার শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমি। ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টের জন্যই ছিল সেদিনের আয়োজন।
আজ সেই দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। না, বয়স ও বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বিচারে তাঁর চলে যাওয়াকে ‘অবেলায়’ শব্দ দিয়ে ঠিক বাঁধা যাবে না। তবে কিছু মানুষ তো থাকেন, যাঁদের প্রস্থান মাত্রই ‘অবেলার ডাক’ বলে মনে হয়। মন বিষণ্ন হয়ে যায়। আর কী আশ্চর্য, সেই প্রথম সাক্ষাতের মতো তাঁর এই চলে যাওয়া দিনও কেমন মেদুর হয়ে আছে বৃষ্টির ছাঁটে। বসন্তের এই বৃষ্টি প্রস্তুতিহীন তো বটেই। তবু প্রশ্ন জাগে, এ কী কবি কাজী রোজীর প্রস্থানকে বিশেষ করে তুলতে প্রকৃতির কোনো আয়োজনও? সে যা-ই হোক, তাঁর প্রস্থান ও প্রথম সাক্ষাতের সঙ্গে এই সময়ের এমন মিলে যাওয়া—মনকে কেমন বিষাদে ভরিয়ে দেয়। সে বিষাদে ডুব দিয়ে মনে মনে খুঁড়ে চলি স্মৃতির প্রান্তর।
সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
মানুষটাকে দেখেই বোঝা যায় যে কত ঝড়-তুফানের মোকাবিলা করে কত কঠিন একটা ব্যক্তিত্ব নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। অথচ হৃদয়টা যেন একদম শিশুর মতো। অল্প সময়ের মধ্যেই এমনভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, যেন আমি তাঁর কত দিনের চেনা বন্ধু। এর মধ্যে কিছুটা মান-অভিমানের পর্বও সেরে নিয়েছিলেন। কেননা তাঁর পরিবেশন করা নাশতা খেতে দেরি করছিলাম!
যা হোক, গল্প শুরু করেছিলেন তাঁর জীবনের কঠোর সংগ্রাম দিয়ে। ‘জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারিনি, সেই থেকে আমার সংগ্রাম শুরু। আমি একাত্তরে সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি। কিন্তু অস্ত্র হাতে নিয়ে নয়। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে। তবে আমি ছিলাম শব্দসৈনিক। স্বাধীন বাংলা বেতারে আবৃত্তি করতাম। বেলাল মাহমুদের হাত ধরেই সেখানে যাওয়া। কিছু গান, কবিতা আর নাটকও লিখেছি।’
এভাবে নতুন করে নিজের পরিচয় দিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল স্মৃতিতে—‘যুদ্ধ শুরুর আগের কিছু কথা বলে নিই। আমরা থাকতাম মিরপুরে। আমার প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল মেহেরুন্নেসা। মিরপুরে ছিল বিহারিদের আস্তানা। সেখানে উর্দুভাষী অবাঙালিরা বাস করত। তারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করত। কারও ডিমের খাঁচা ভেঙে ফেলত, কারও পান-সিগারেটের দোকান ভেঙে ফেলত, এমনকি শিশু ও মেয়েদেরও ধরে নিয়ে যেত। আমার চোখের সামনেই ঘটত এসব ঘটনা। আগে ভেবেছিলাম এদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করব। কিন্তু না, পরে চিন্তা করলাম এদের সঙ্গে ঠিকভাবে বসবাস হবে না। কারণ, আমরা বাঙালি, বাংলায় কথা বলি। আর ওদের ভাষা উর্দু। তখন আমরা কয়েকজন তরুণ এসবের প্রতিবাদ করতাম। আমাদের সঙ্গে বন্ধু মেহেরুন্নেসাও ছিল।’
সেসব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতেই চলে এলেন অবধারিত সেই কালরাতে, যেখানে তাঁর প্রজন্মের সবাইকেই অন্তত একবার দাঁড়াতে হয় চুপচাপ, থমকে যেতে হয়, টানতে হয় দীর্ঘশ্বাস। বলতে থাকলেন, ‘২৫ মার্চ বিকেলে খবর পেলাম আমার বাসায় হামলা হবে। আমাকে মেরে ফেলা হবে। তখনো জানি না সেই রাত হতে চলেছে ভয়ংকর কালরাত। এর আগেও আমাকে বিহারিরা হত্যা করতে এসেছিল। কিন্তু পারেনি। আমাদের এক মামা ছিলেন। পাড়ার সবাই তাঁকে শহীদ মামা ডাকত। সেই শহীদ মামা আমাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলেন। নইলে এই কাজী রোজীকে তোমরা দেখতে পেতে না।’
বিপদ টের পেয়ে রোজী চলে যান কলাবাগানে। বন্ধু মেহেরুন্নেসাকেও অন্য কোথাও চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি শোনেননি। রোজী বলছেন, ‘মেহেরকেও বলেছিলাম যে এখান (মিরপুর) থেকে অন্য কোথাও চলে যাও। কিন্তু ও বলেছিল, “কোথায় যাব, আমার তো পরিবার ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ” সেদিন আমি চলে গিয়েছিলাম কলাবাগানে আমার খালার বাসায়। এর দুদিন পর ২৭ মার্চ খবর পাই মেহেরুন্নেসাকে সপরিবারে কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানের দোসররা জবাই করে হত্যা করেছে। আমি ওঁকে বাঁচাতে পারলাম না।’
কবি বন্ধু মেহেরুন্নেসার কথা বলতে বলতে কাজী রোজীর বুক থেকে বেরিয়ে আসে অবধারিত দীর্ঘশ্বাস। পরক্ষণেই চোখে মুখে সতেজ হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আমি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সংগ্রাম করেছি। আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বলেছি আমি এ কথা। ওরা বারবার বলেছে, আপনি তো দেখেননি। আর আমি বারবার বলেছি, হ্যাঁ আমি দেখিনি, শুনেছি। কিন্তু আমি জানি কাদের মোল্লা কী করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর যখন ২০১২ সালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, তখন বেশ হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি কখনো। এ নিয়ে বলছিলেন, ‘সব টেলিভিশন চ্যানেল আর পত্রিকা আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, এই রায় আমার নয়, জনগণের নয়, দেশের নয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি আপিল হবে, রায় হবে। ঠিকই আপিল হয়েছে, ফাঁসির রায় হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লৌহমানবের মতো সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বলেই এই রায় কার্যকর হয়েছে।’ বলেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছিলেন, যেন কত বছরের ঋণ বহু কষ্টে শোধ করতে পারলেন। তার পর একটা প্রশান্তির হাসি হাসলেন।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে কাজী রোজীকে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুরই পরোয়া করেননি। এমনকি সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নিতে চাননি।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর আবার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে যোগ দেন। অভিভূত কবি রোজী জানিয়েছিলেন, ‘আমি সংসদে যেতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’ সংসদে তিনি বাজেট নিয়ে নিজের লেখা কবিতাও আবৃত্তি করেছেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি আবদার করেছেন তাঁর কাছে, সব সময় যেন তিনি কবিতা লিখে যান।
বয়সী কিন্তু তারুণ্যদীপ্ত প্রাণোচ্ছল এই মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি তখন ২১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে ছিলেন। তাঁর ভাষায় বলি, ‘আমাকে দেখলে কি মনে হয় আমার ক্যানসার? আমি তো দিব্যি ভালো আছি।’ এভাবে ভালো থাকতে কেমন করে মানসিক শক্তি পাওয়া যায়, তা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে সব সময়। একা একা খারাপ লাগলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে চলে যাবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করবে। এর চেয়ে আর বড় ওষুধ নাই।’ তিনিও নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সাহিত্যে আর সংসদে, কখনো প্রতিবন্ধীদের মাঝে, আবার কখনো আদিবাসীদের সঙ্গে। এটাই ছিল তাঁর ক্যানসারের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রেরণা।
আর কবি পরিচয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কণ্ঠে শাণিত শব্দ নিয়ে যে যুদ্ধ, তার কথা এ সবের উল্লেখ এখন তো বাতুলতা। স্বাধীন বাংলা বেতারে কবিতা আবৃত্তি করে কত শত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের সাহস জুগিয়েছেন তিনি! লিখেছেন গান, কবিতা, নাটক, আর জীবনী। কত যে লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পথ ঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘ভালোবাসার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘মানুষের গল্প’, ‘খানিকটা গল্প তোমার’, ‘আমার পিরানের কোন মাপ নেই’, ‘লড়াই’, ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ ইত্যাদি। পেয়েছেন বহু সম্মাননা। আর ভালোবাসা, ভালোবাসা। সে ভালোবাসার জোরেই পাকিস্তানের দোসরদের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম করেছেন বহুদিন। বন্ধু কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যার দায়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক বছর কাজ করেছেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। যুক্ত ছিলেন ডিজেবল রাইটস গ্রুপ, সাবা, লারা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সঙ্গে। বহু বছর কাজ করেছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের নিয়েও।
সেদিনের আলাপে তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘স্বপ্নের পথে বাধা আসবেই, হোঁচট খাবেই। কিন্তু কখনো মুখ থুবড়ে পড়ে যেও না। কোনো পথই সরল নয়। পথে কাঁটা থাকবেই। সেই কাঁটা সরিয়ে সরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ এ যেন নিজের চলার পথেরই এক সারসংক্ষেপ তুলে ধরলেন তিনি মাত্র কয়েকটি শব্দে। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম এই মহিরুহের বচন-বুলি। আরও মুগ্ধ হয়ে গেলাম যখন আড্ডার শেষ মুহূর্তে এসে স্বাধীন বাংলা বেতারের এই শব্দ সৈনিকের ভরাট কণ্ঠে শুনছিলাম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে লেখা নিজের একটি কবিতা। এখনো কানে বাজছে শেষ তিনটি বাক্য—
‘আমি: বাবা, রঙের শরীরে আলাদা গন্ধ থাকে। সে তো মানুষের চেয়ে কঠিন নয়!
বাবা: তুই ঠিক বলেছিস-মানুষ ভয়াবহ কঠিন।
আমি: আমি কঠিনেরে ভালোবাসিলাম বাবা।’

বাতাসে ভেজা মাটির চেনা গন্ধ। ভোরে বৃষ্টি হয়েছিল, তাই এমন ভেজা রূপে সেজেছে চারদিক। এমন দিনে বসে আড্ডাটা ভালোই জমে; তা যদি হয় কবিতা আর গানের, তবে তো কথাই নেই! আর বুকের ভেতর যদি জাগে একাত্তরের শিহরণ? সেদিন গান, কবিতা আর একাত্তরের আড্ডায় মনে হচ্ছিল এখনই রণক্ষেত্রে নেমে যাই, গুঁড়িয়ে দিই রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের! মনে হবে না কেন, সাহস আর প্রেরণা হয়ে যে সামনে ছিলেন কাজী রোজী স্বয়ং। তিনি কবি এবং আরও অনেক কিছু। বলছি ২০১৪ সালের জুন মাসের একদিনের কথা। সেদিন প্রথমবারের মতো কবির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকতার শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমি। ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টের জন্যই ছিল সেদিনের আয়োজন।
আজ সেই দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। না, বয়স ও বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বিচারে তাঁর চলে যাওয়াকে ‘অবেলায়’ শব্দ দিয়ে ঠিক বাঁধা যাবে না। তবে কিছু মানুষ তো থাকেন, যাঁদের প্রস্থান মাত্রই ‘অবেলার ডাক’ বলে মনে হয়। মন বিষণ্ন হয়ে যায়। আর কী আশ্চর্য, সেই প্রথম সাক্ষাতের মতো তাঁর এই চলে যাওয়া দিনও কেমন মেদুর হয়ে আছে বৃষ্টির ছাঁটে। বসন্তের এই বৃষ্টি প্রস্তুতিহীন তো বটেই। তবু প্রশ্ন জাগে, এ কী কবি কাজী রোজীর প্রস্থানকে বিশেষ করে তুলতে প্রকৃতির কোনো আয়োজনও? সে যা-ই হোক, তাঁর প্রস্থান ও প্রথম সাক্ষাতের সঙ্গে এই সময়ের এমন মিলে যাওয়া—মনকে কেমন বিষাদে ভরিয়ে দেয়। সে বিষাদে ডুব দিয়ে মনে মনে খুঁড়ে চলি স্মৃতির প্রান্তর।
সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
মানুষটাকে দেখেই বোঝা যায় যে কত ঝড়-তুফানের মোকাবিলা করে কত কঠিন একটা ব্যক্তিত্ব নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। অথচ হৃদয়টা যেন একদম শিশুর মতো। অল্প সময়ের মধ্যেই এমনভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, যেন আমি তাঁর কত দিনের চেনা বন্ধু। এর মধ্যে কিছুটা মান-অভিমানের পর্বও সেরে নিয়েছিলেন। কেননা তাঁর পরিবেশন করা নাশতা খেতে দেরি করছিলাম!
যা হোক, গল্প শুরু করেছিলেন তাঁর জীবনের কঠোর সংগ্রাম দিয়ে। ‘জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারিনি, সেই থেকে আমার সংগ্রাম শুরু। আমি একাত্তরে সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি। কিন্তু অস্ত্র হাতে নিয়ে নয়। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে। তবে আমি ছিলাম শব্দসৈনিক। স্বাধীন বাংলা বেতারে আবৃত্তি করতাম। বেলাল মাহমুদের হাত ধরেই সেখানে যাওয়া। কিছু গান, কবিতা আর নাটকও লিখেছি।’
এভাবে নতুন করে নিজের পরিচয় দিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল স্মৃতিতে—‘যুদ্ধ শুরুর আগের কিছু কথা বলে নিই। আমরা থাকতাম মিরপুরে। আমার প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল মেহেরুন্নেসা। মিরপুরে ছিল বিহারিদের আস্তানা। সেখানে উর্দুভাষী অবাঙালিরা বাস করত। তারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করত। কারও ডিমের খাঁচা ভেঙে ফেলত, কারও পান-সিগারেটের দোকান ভেঙে ফেলত, এমনকি শিশু ও মেয়েদেরও ধরে নিয়ে যেত। আমার চোখের সামনেই ঘটত এসব ঘটনা। আগে ভেবেছিলাম এদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করব। কিন্তু না, পরে চিন্তা করলাম এদের সঙ্গে ঠিকভাবে বসবাস হবে না। কারণ, আমরা বাঙালি, বাংলায় কথা বলি। আর ওদের ভাষা উর্দু। তখন আমরা কয়েকজন তরুণ এসবের প্রতিবাদ করতাম। আমাদের সঙ্গে বন্ধু মেহেরুন্নেসাও ছিল।’
সেসব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতেই চলে এলেন অবধারিত সেই কালরাতে, যেখানে তাঁর প্রজন্মের সবাইকেই অন্তত একবার দাঁড়াতে হয় চুপচাপ, থমকে যেতে হয়, টানতে হয় দীর্ঘশ্বাস। বলতে থাকলেন, ‘২৫ মার্চ বিকেলে খবর পেলাম আমার বাসায় হামলা হবে। আমাকে মেরে ফেলা হবে। তখনো জানি না সেই রাত হতে চলেছে ভয়ংকর কালরাত। এর আগেও আমাকে বিহারিরা হত্যা করতে এসেছিল। কিন্তু পারেনি। আমাদের এক মামা ছিলেন। পাড়ার সবাই তাঁকে শহীদ মামা ডাকত। সেই শহীদ মামা আমাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলেন। নইলে এই কাজী রোজীকে তোমরা দেখতে পেতে না।’
বিপদ টের পেয়ে রোজী চলে যান কলাবাগানে। বন্ধু মেহেরুন্নেসাকেও অন্য কোথাও চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি শোনেননি। রোজী বলছেন, ‘মেহেরকেও বলেছিলাম যে এখান (মিরপুর) থেকে অন্য কোথাও চলে যাও। কিন্তু ও বলেছিল, “কোথায় যাব, আমার তো পরিবার ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ” সেদিন আমি চলে গিয়েছিলাম কলাবাগানে আমার খালার বাসায়। এর দুদিন পর ২৭ মার্চ খবর পাই মেহেরুন্নেসাকে সপরিবারে কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানের দোসররা জবাই করে হত্যা করেছে। আমি ওঁকে বাঁচাতে পারলাম না।’
কবি বন্ধু মেহেরুন্নেসার কথা বলতে বলতে কাজী রোজীর বুক থেকে বেরিয়ে আসে অবধারিত দীর্ঘশ্বাস। পরক্ষণেই চোখে মুখে সতেজ হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আমি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সংগ্রাম করেছি। আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বলেছি আমি এ কথা। ওরা বারবার বলেছে, আপনি তো দেখেননি। আর আমি বারবার বলেছি, হ্যাঁ আমি দেখিনি, শুনেছি। কিন্তু আমি জানি কাদের মোল্লা কী করতে পারে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর যখন ২০১২ সালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, তখন বেশ হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি কখনো। এ নিয়ে বলছিলেন, ‘সব টেলিভিশন চ্যানেল আর পত্রিকা আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, এই রায় আমার নয়, জনগণের নয়, দেশের নয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি আপিল হবে, রায় হবে। ঠিকই আপিল হয়েছে, ফাঁসির রায় হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লৌহমানবের মতো সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বলেই এই রায় কার্যকর হয়েছে।’ বলেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছিলেন, যেন কত বছরের ঋণ বহু কষ্টে শোধ করতে পারলেন। তার পর একটা প্রশান্তির হাসি হাসলেন।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে কাজী রোজীকে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুরই পরোয়া করেননি। এমনকি সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নিতে চাননি।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর আবার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে যোগ দেন। অভিভূত কবি রোজী জানিয়েছিলেন, ‘আমি সংসদে যেতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’ সংসদে তিনি বাজেট নিয়ে নিজের লেখা কবিতাও আবৃত্তি করেছেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি আবদার করেছেন তাঁর কাছে, সব সময় যেন তিনি কবিতা লিখে যান।
বয়সী কিন্তু তারুণ্যদীপ্ত প্রাণোচ্ছল এই মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি তখন ২১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে ছিলেন। তাঁর ভাষায় বলি, ‘আমাকে দেখলে কি মনে হয় আমার ক্যানসার? আমি তো দিব্যি ভালো আছি।’ এভাবে ভালো থাকতে কেমন করে মানসিক শক্তি পাওয়া যায়, তা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে সব সময়। একা একা খারাপ লাগলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে চলে যাবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করবে। এর চেয়ে আর বড় ওষুধ নাই।’ তিনিও নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সাহিত্যে আর সংসদে, কখনো প্রতিবন্ধীদের মাঝে, আবার কখনো আদিবাসীদের সঙ্গে। এটাই ছিল তাঁর ক্যানসারের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রেরণা।
আর কবি পরিচয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কণ্ঠে শাণিত শব্দ নিয়ে যে যুদ্ধ, তার কথা এ সবের উল্লেখ এখন তো বাতুলতা। স্বাধীন বাংলা বেতারে কবিতা আবৃত্তি করে কত শত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের সাহস জুগিয়েছেন তিনি! লিখেছেন গান, কবিতা, নাটক, আর জীবনী। কত যে লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পথ ঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘ভালোবাসার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘মানুষের গল্প’, ‘খানিকটা গল্প তোমার’, ‘আমার পিরানের কোন মাপ নেই’, ‘লড়াই’, ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ ইত্যাদি। পেয়েছেন বহু সম্মাননা। আর ভালোবাসা, ভালোবাসা। সে ভালোবাসার জোরেই পাকিস্তানের দোসরদের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম করেছেন বহুদিন। বন্ধু কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যার দায়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক বছর কাজ করেছেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। যুক্ত ছিলেন ডিজেবল রাইটস গ্রুপ, সাবা, লারা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সঙ্গে। বহু বছর কাজ করেছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের নিয়েও।
সেদিনের আলাপে তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘স্বপ্নের পথে বাধা আসবেই, হোঁচট খাবেই। কিন্তু কখনো মুখ থুবড়ে পড়ে যেও না। কোনো পথই সরল নয়। পথে কাঁটা থাকবেই। সেই কাঁটা সরিয়ে সরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ এ যেন নিজের চলার পথেরই এক সারসংক্ষেপ তুলে ধরলেন তিনি মাত্র কয়েকটি শব্দে। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম এই মহিরুহের বচন-বুলি। আরও মুগ্ধ হয়ে গেলাম যখন আড্ডার শেষ মুহূর্তে এসে স্বাধীন বাংলা বেতারের এই শব্দ সৈনিকের ভরাট কণ্ঠে শুনছিলাম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে লেখা নিজের একটি কবিতা। এখনো কানে বাজছে শেষ তিনটি বাক্য—
‘আমি: বাবা, রঙের শরীরে আলাদা গন্ধ থাকে। সে তো মানুষের চেয়ে কঠিন নয়!
বাবা: তুই ঠিক বলেছিস-মানুষ ভয়াবহ কঠিন।
আমি: আমি কঠিনেরে ভালোবাসিলাম বাবা।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে