জাহীদ রেজা নূর

কুবান কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে প্রস্তুতিপর্ব শেষ করে যখন কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটে গেলাম, তখন হোস্টেলে আমার রুমমেট হিসেবে পেলাম রুশ আলেগকে। আলেগের বয়স তখনই ত্রিশ পেরিয়ে। স্কুলশিক্ষক। সুযোগ পেয়ে মাস্টার্স করতে এসেছেন। আমি তাঁকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতাম। তিন সিটের সেই রুমে আরেকজন ছিল ইয়েমেনের করিম। করিমও আমার সঙ্গে কৃষি ইনস্টিটিউটে প্রিপারেটরি শেষ করেছিল।
আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়ত্ত করার সুযোগ হতো।
কোলিয়ার বয়সও বেশি। তবে আলেগের মতো নয়। ওর মাথা থেকে একরাশ সোনালি চুল নেমে এসেছে ঘাড় বেয়ে। খুব লম্বা নয়। আমাদের মতোই। পড়বে আমাদের সঙ্গেই। আমি আর ইয়েমেনের ছেলেটা যে ভাষাতত্ত্ব বিভাগে পড়তাম, কোলিয়াও সেই বিভাগের ছাত্র। আমাদের ক্লাসেই ভর্তি হয়েছে।
কোলিয়া আর্মিতে বাধ্যতামূলক সেবাদানের পর কিছু সময় কাজ করেছে। এর পর ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই ওর বয়সও ত্রিশের কাছাকাছি। তবে সেটা ওকে দেখে বোঝা যায় না। আলেগকে দেখতে বুড়ো বলে মনে হতো। কোলিয়া সে রকম নয়।
কোলিয়া খুব ধীরে ধীরে কথা বলত। কয়েক দিনের মধ্যে কোলিয়া সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় বুঝে ফেললাম। এক. বিধিবদ্ধ পড়াশোনার চেয়ে সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ওর। নিজে কবিতা লেখে। বন্ধুদের নিয়ে যে আড্ডা দেয়, তাতে সিগারেটের আগুনের সঙ্গে পুড়তে থাকে পুশকিন, লেরমন্তভ, দস্তয়েভ্স্কিরা। নতুন সময় আসছে, গরবাচেভের নতুন ভাবনা নিয়ে হুলুস্থুল চলছে গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নে। তারও প্রভাব পড়ছে কোলিয়াদের আড্ডায়। দুই. কোলিয়া প্রচণ্ডভাবে সোভিয়েত–বিরোধী। গণতন্ত্রের প্রতি ওর টান প্রচণ্ড। তিন. কোলিয়া খুব গরিব। শুধু কালো রুটি আর চা খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারে দিনের পর দিন। আমি যখন বাঙালি রান্না করতাম, তখন কোলিয়াকে খেতে আমন্ত্রণ জানাতাম, কিন্তু খুব কম সময় ও আমার সঙ্গে খেত। ব্যক্তিত্ব ছিল টনটনে।
পরীক্ষার সময় ও আমাকে খুব সাহায্য করত। একেবারে শিশুকে যেভাবে পড়া বোঝায় কোনো ভালো শিক্ষক, কোলিয়াও আমাকে সেভাবেই পড়া বোঝাত।
ও খেত সবচেয়ে সস্তা বেলামোর কানাল সিগারেট। আমি তখন খেতাম বুলগেরিয়ার রদোপি। ওর সিগারেট ফুরিয়ে গেলে মাঝে মাঝে আমার কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেত।
একদিন আমাদের ক্লাসের রুশ ছেলেরা বসে আমাদের ঘরে আড্ডা মারছে। মাক্সিম, কোশেলিয়েভ, ভিতালি ছিল সে আড্ডায়, মনে পড়ে। ওদের আড্ডার সময় আমি কোনো কথা বললাম না। এর কারণ, আমার তখনো রুশ ভাষায় রুশ দেশের রাজনীতি বা সাহিত্য নিয়ে কথা বলার মতো মুরোদ হয়নি। একা একা সিগারেট খেতাম, মাঝে মাঝে ওদের চা বানিয়ে দিতাম। ওরা কালো রুটি, সসেজ, পেয়াজ পাতা খেত। আমাকেও চা বানিয়ে দিত।
একদিন কোলিয়ে এসে বলল, ‘আমি মনে হয় পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছি।’
‘কেন তুমি পড়ালেখা ছেড়ে দেবে?’
‘আর বোলো না। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ক্লাসে আজ টিচারের সঙ্গে ঝগড়া করেছি।’
‘কেন?’
‘আমি বলেছি, ভাষাতত্ত্ব পড়তে এসেছি, আমি তো কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস জানতে আসিনি। এ কথা শুনে খুব খেপে গেছেন প্রফেসর জানিন। আমাকে হয়তো ভার্সিটি (রুশ ভাষায় ‘য়ুনিভার’) থেকে বের করে দেবে।’
কোলিয়ার শঙ্কা ভিত্তি পেয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই ওকে বিভিন্ন ফোরামে ডাকা হলো। ওর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলো, কেন কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের প্রতি ওর এত অনীহা। হোস্টেলে ফিরে সে গল্প করত কোলিয়া। প্রথম দিকে বেশ বীরত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টির লোকদের মোকাবিলা করছিল কোলিয়া। কিন্তু যতই সময় যেতে থাকল, বোঝা গেল কোলিয়ার ভাগ্য আসলে তারের ওপর ঝুলছে।
তারপর একদিন, আমি যখন রান্নাঘরে গরুর মাংস রান্না করছি, কোলিয়া একটা সিগারেট মুখে দাঁড়াল। দরজায় হেলাল দিয়ে বলল, ‘রেজা, আজ তোমার সঙ্গে খাব।’
‘অবশ্যই খাবে।’ বললাম আমি।
‘আজ তোমার সঙ্গে শেষবারের মতো খাব।’
‘মানে কী?’
‘আমাকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। আমার আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলো না।’
আমি ভেবেছিলাম, কোলিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেবে। কিন্তু ১৯৮৮ সালেও কমিউনিস্ট পার্টির যে ক্ষমতা ছিল, সেটা ছিল ভয়াবহ। কোলিয়া তার আগুন থেকে রেহাই পায়নি।
আমার খুব খারাপ লাগল। কোলিয়াকে খুব আপন ভাবতে শুরু করেছিলাম। এর কারণ ছিল। ওর কাছে রুশ ইতিহাস জানতে চাইলে ও খুব সহজ করে তা বোঝাত। যেমন, ও বলত এ রকম, ‘বইয়ে যা লেখা আছে, সেটাই তোমাকে বোঝাচ্ছি। এ দেশে জার ছিল। জাররা ছিল খারাপ। এর পর তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষেপে উঠল। সাধারণ মানুষ ছিল গরিব। ওরা যখন রাগ করল. তখন ওদের সংগঠিত করল একদল মানুষ। এরা ছিল ভালো। ভালোরা খারাপদের বিরুদ্ধে একাট্টা হলো। বুঝতে পারছ?’
এভাবেই বলত কোলিয়া।
শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা কোলিয়াকে জিজ্ঞেস করোম, ‘এখন কী করবে?’
‘সেটা জানি না। কোনো একটা কাজ তো খুঁজে নিতে হবে। চলে যাব গ্রামে। তারপর কাজ খুঁজব।’
‘তোমার তো ডিগ্রি নেই। কী কাজ করবে?’
‘আইসক্রিম বিক্রি করব, চিবুরেকি (মাংসের পিঠা) বিক্রি করব। যৌথ খামারে গরু পালব, যখন যা পাব, তাই করব।’
‘আর কবিতা?’
এবার হাসল কোলিয়া। ‘কবিতা তো সাথে সাথে থাকে। ওটা চলবে।’
নিজের জিনিসপত্র নিয়ে কোলিয়া চলে গেল। এর পর আর কোনো দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। কোনো চিঠিও লেখেনি ও। প্রথম প্রথম ওর জন্য মন খারাপ হতো। ভাবতাম, কোথায় কী করছে কোলিয়া? এক সময় পড়াশোনার চাপে মন থেকে হারিয়ে গেল কোলিয়া।

কুবান কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে প্রস্তুতিপর্ব শেষ করে যখন কুবান কৃষি ইনস্টিটিউটে গেলাম, তখন হোস্টেলে আমার রুমমেট হিসেবে পেলাম রুশ আলেগকে। আলেগের বয়স তখনই ত্রিশ পেরিয়ে। স্কুলশিক্ষক। সুযোগ পেয়ে মাস্টার্স করতে এসেছেন। আমি তাঁকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতাম। তিন সিটের সেই রুমে আরেকজন ছিল ইয়েমেনের করিম। করিমও আমার সঙ্গে কৃষি ইনস্টিটিউটে প্রিপারেটরি শেষ করেছিল।
আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়ত্ত করার সুযোগ হতো।
কোলিয়ার বয়সও বেশি। তবে আলেগের মতো নয়। ওর মাথা থেকে একরাশ সোনালি চুল নেমে এসেছে ঘাড় বেয়ে। খুব লম্বা নয়। আমাদের মতোই। পড়বে আমাদের সঙ্গেই। আমি আর ইয়েমেনের ছেলেটা যে ভাষাতত্ত্ব বিভাগে পড়তাম, কোলিয়াও সেই বিভাগের ছাত্র। আমাদের ক্লাসেই ভর্তি হয়েছে।
কোলিয়া আর্মিতে বাধ্যতামূলক সেবাদানের পর কিছু সময় কাজ করেছে। এর পর ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই ওর বয়সও ত্রিশের কাছাকাছি। তবে সেটা ওকে দেখে বোঝা যায় না। আলেগকে দেখতে বুড়ো বলে মনে হতো। কোলিয়া সে রকম নয়।
কোলিয়া খুব ধীরে ধীরে কথা বলত। কয়েক দিনের মধ্যে কোলিয়া সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় বুঝে ফেললাম। এক. বিধিবদ্ধ পড়াশোনার চেয়ে সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ওর। নিজে কবিতা লেখে। বন্ধুদের নিয়ে যে আড্ডা দেয়, তাতে সিগারেটের আগুনের সঙ্গে পুড়তে থাকে পুশকিন, লেরমন্তভ, দস্তয়েভ্স্কিরা। নতুন সময় আসছে, গরবাচেভের নতুন ভাবনা নিয়ে হুলুস্থুল চলছে গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নে। তারও প্রভাব পড়ছে কোলিয়াদের আড্ডায়। দুই. কোলিয়া প্রচণ্ডভাবে সোভিয়েত–বিরোধী। গণতন্ত্রের প্রতি ওর টান প্রচণ্ড। তিন. কোলিয়া খুব গরিব। শুধু কালো রুটি আর চা খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারে দিনের পর দিন। আমি যখন বাঙালি রান্না করতাম, তখন কোলিয়াকে খেতে আমন্ত্রণ জানাতাম, কিন্তু খুব কম সময় ও আমার সঙ্গে খেত। ব্যক্তিত্ব ছিল টনটনে।
পরীক্ষার সময় ও আমাকে খুব সাহায্য করত। একেবারে শিশুকে যেভাবে পড়া বোঝায় কোনো ভালো শিক্ষক, কোলিয়াও আমাকে সেভাবেই পড়া বোঝাত।
ও খেত সবচেয়ে সস্তা বেলামোর কানাল সিগারেট। আমি তখন খেতাম বুলগেরিয়ার রদোপি। ওর সিগারেট ফুরিয়ে গেলে মাঝে মাঝে আমার কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেত।
একদিন আমাদের ক্লাসের রুশ ছেলেরা বসে আমাদের ঘরে আড্ডা মারছে। মাক্সিম, কোশেলিয়েভ, ভিতালি ছিল সে আড্ডায়, মনে পড়ে। ওদের আড্ডার সময় আমি কোনো কথা বললাম না। এর কারণ, আমার তখনো রুশ ভাষায় রুশ দেশের রাজনীতি বা সাহিত্য নিয়ে কথা বলার মতো মুরোদ হয়নি। একা একা সিগারেট খেতাম, মাঝে মাঝে ওদের চা বানিয়ে দিতাম। ওরা কালো রুটি, সসেজ, পেয়াজ পাতা খেত। আমাকেও চা বানিয়ে দিত।
একদিন কোলিয়ে এসে বলল, ‘আমি মনে হয় পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছি।’
‘কেন তুমি পড়ালেখা ছেড়ে দেবে?’
‘আর বোলো না। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ক্লাসে আজ টিচারের সঙ্গে ঝগড়া করেছি।’
‘কেন?’
‘আমি বলেছি, ভাষাতত্ত্ব পড়তে এসেছি, আমি তো কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস জানতে আসিনি। এ কথা শুনে খুব খেপে গেছেন প্রফেসর জানিন। আমাকে হয়তো ভার্সিটি (রুশ ভাষায় ‘য়ুনিভার’) থেকে বের করে দেবে।’
কোলিয়ার শঙ্কা ভিত্তি পেয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই ওকে বিভিন্ন ফোরামে ডাকা হলো। ওর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলো, কেন কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসের প্রতি ওর এত অনীহা। হোস্টেলে ফিরে সে গল্প করত কোলিয়া। প্রথম দিকে বেশ বীরত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টির লোকদের মোকাবিলা করছিল কোলিয়া। কিন্তু যতই সময় যেতে থাকল, বোঝা গেল কোলিয়ার ভাগ্য আসলে তারের ওপর ঝুলছে।
তারপর একদিন, আমি যখন রান্নাঘরে গরুর মাংস রান্না করছি, কোলিয়া একটা সিগারেট মুখে দাঁড়াল। দরজায় হেলাল দিয়ে বলল, ‘রেজা, আজ তোমার সঙ্গে খাব।’
‘অবশ্যই খাবে।’ বললাম আমি।
‘আজ তোমার সঙ্গে শেষবারের মতো খাব।’
‘মানে কী?’
‘আমাকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। আমার আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলো না।’
আমি ভেবেছিলাম, কোলিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে দেবে। কিন্তু ১৯৮৮ সালেও কমিউনিস্ট পার্টির যে ক্ষমতা ছিল, সেটা ছিল ভয়াবহ। কোলিয়া তার আগুন থেকে রেহাই পায়নি।
আমার খুব খারাপ লাগল। কোলিয়াকে খুব আপন ভাবতে শুরু করেছিলাম। এর কারণ ছিল। ওর কাছে রুশ ইতিহাস জানতে চাইলে ও খুব সহজ করে তা বোঝাত। যেমন, ও বলত এ রকম, ‘বইয়ে যা লেখা আছে, সেটাই তোমাকে বোঝাচ্ছি। এ দেশে জার ছিল। জাররা ছিল খারাপ। এর পর তাদের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষেপে উঠল। সাধারণ মানুষ ছিল গরিব। ওরা যখন রাগ করল. তখন ওদের সংগঠিত করল একদল মানুষ। এরা ছিল ভালো। ভালোরা খারাপদের বিরুদ্ধে একাট্টা হলো। বুঝতে পারছ?’
এভাবেই বলত কোলিয়া।
শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা কোলিয়াকে জিজ্ঞেস করোম, ‘এখন কী করবে?’
‘সেটা জানি না। কোনো একটা কাজ তো খুঁজে নিতে হবে। চলে যাব গ্রামে। তারপর কাজ খুঁজব।’
‘তোমার তো ডিগ্রি নেই। কী কাজ করবে?’
‘আইসক্রিম বিক্রি করব, চিবুরেকি (মাংসের পিঠা) বিক্রি করব। যৌথ খামারে গরু পালব, যখন যা পাব, তাই করব।’
‘আর কবিতা?’
এবার হাসল কোলিয়া। ‘কবিতা তো সাথে সাথে থাকে। ওটা চলবে।’
নিজের জিনিসপত্র নিয়ে কোলিয়া চলে গেল। এর পর আর কোনো দিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। কোনো চিঠিও লেখেনি ও। প্রথম প্রথম ওর জন্য মন খারাপ হতো। ভাবতাম, কোথায় কী করছে কোলিয়া? এক সময় পড়াশোনার চাপে মন থেকে হারিয়ে গেল কোলিয়া।

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়
২৪ এপ্রিল ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়
২৪ এপ্রিল ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়
২৪ এপ্রিল ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

আলেগ যখন মাস্টার্স করে ফিরে গেল গেলেনঝিকে, তখন হোস্টেলে আমার ঘরে এল নতুন অতিথি। ওর নাম কোলিয়া। নিকোলাই থেকে কোলিয়া। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নিয়ম চালু ছিল। টু–সিটেড রুমে একজন রুশ, একজন বিদেশি, আর থ্রি–সিটেড রুমে দুজন বিদেশি আর একজন রুশ থাকত। তাতে বিদেশিদের পক্ষে রুশ ভাষা দ্রুত আয়
২৪ এপ্রিল ২০২২
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
১৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
২ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৩ দিন আগে