Ajker Patrika

মননরেখা: প্রান্তবাসী এক বড় কাগজের কথা

একলব্য 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৩
মননরেখা: প্রান্তবাসী এক বড় কাগজের কথা

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে। 

পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)। 

‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই। 

বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে। 

দুই. 
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে। 

মননরেখা, চলতি সংখ্যাসূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী? 

খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।

এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে। 

মননরেখার নয়টি সংখ্যাতিন. 
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।

মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)। 

মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক। 

জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রহনপুর গণকবর

সম্পাদকীয়
রহনপুর গণকবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

সম্পাদকীয়
ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শাহাদুজ্জামান

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।

আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।

বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।

তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।

সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।

তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত