ইশতিয়াক হাসান

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘মেলায় যাই রে...’। বুঝতেই পারছেন গল্পটা মাকসুদুল হক বা মাকসুদের।
আজ আসলে আড্ডার ছলেই বলব মাকসুদের গল্প। তাই তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বলছি। তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি, আব্বুর চাকরি সূত্রে। ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। পাশের বাসায় খালাতো ভাইরা ব্যান্ডের গান শুনতেন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা গান খুব ভালো লাগত। মৌসুমি, মাঝি তোর রেডিও নাই, আজ তোমার চিঠি...। কৌতূহলী হয়ে রিজভী ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই শিল্পীর নামটা জানতে পারলাম। তারপরই ‘অঞ্জলি’ সিনেমায় ‘তোমাকে দেখলে একবার মরিতে পারি শতবার’ গানটা শুনে আগাগোড়া ভক্ত বনে গেলাম মাকসুদুল হকের।
এসএসসি পাসের পর সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে থিতু হই ঢাকায়। একদিন পল্লবীতে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পৈতৃক বাড়িটাও পেয়ে গেলাম। বিধি বাম, সেখানে কনসার্টের কিছু পোস্টার মিললেও তাঁর দেখা পাইনি। তবে কেয়ারটেকারের স্ত্রীকে এটা-সেটা বুঝিয়ে প্রিয় মাকসুদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বরটা ঠিকই জোগাড় করে ফেলি। তারপর প্রথম ফোনালাপের রোমাঞ্চ। ইতিমধ্যে ভক্তদের চমকে দিয়ে ফিডব্যাক ছেড়ে গড়ে তুলেছেন নতুন ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকা। ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের গানগুলো রীতিমতো মুখস্থ তখন।
মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলার আগে বরং পরে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাকসুদুল হকের মুখ থেকে শোনা তাঁর গানের যাত্রা শুরুর বিষয়ে বলছি। মাকসুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। পড়াশোনা শুরু নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি ইংলিশ স্কুলে। সেটি ছিল মিশনারি স্কুল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মিসেস হাবার্ট নামের এক স্কটিশ ভদ্রমহিলা। পিয়ানো বাজিয়ে গান শেখাতেন। তাঁর কাছেই প্রথম গান শেখেন মাকসুদ। বয়স যখন চার-পাঁচ বছর, স্কুলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। সেটি ছিল ধর্মীয় সংগীত। সেই কোরাসের লিড অংশটি ছিল ১০ লাইনের মতো। প্রধান শিক্ষিকা সেই অংশ গাওয়ার জন্য ছোট্ট মাকসুদকেই মনোনীত করলেন। এর জন্য সাত দিন রিহার্সেল করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, অনুষ্ঠানের দিনই প্রবল জ্বরে পড়লেন। তবু ওষুধ খেয়ে চলে গেলেন অনুষ্ঠানে।
পরের চমকটা বরং মাকসুদ ভাইয়ের জবানিতে শুনি, ‘পুরস্কার বিতরণীর সময় হঠাৎ আমার নাম ডাকা হলো। অবাক হলাম। যেহেতু আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি, তা ছাড়া ক্লাসের মেধাতালিকায় প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানেরও অধিকারী নই, তাই কোনো ক্যাটাগরিতে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়! পরে দেখলাম গানের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেটিই মঞ্চে আমার প্রথম গান গাওয়া এবং প্রথম কোনো পুরস্কার পাওয়া। সেই থেকে আমার গানের যাত্রা শুরু।’
এবার আবার পুরোনো প্রসঙ্গে। মাকসুদ ভাইয়ের ফোন নম্বর পাওয়ার পর মাঝে মাঝে আলাপ হতো। এর মধ্যেই কোনো এক সময় প্রথম দেখা করলাম। সেটা পুরানা পল্টনে, ইনটেক অনলাইনের অফিসে। কনসালট্যান্ট হিসেবে ছিলেন মাকসুদ ভাই সেখানে। প্রথমবার দেখা হওয়ার সেই ভালো লাগার অনুভূতি এখনো মনে পড়ছে। উল্টো পাশে ঋজু হয়ে বসে থাকা প্রিয় মানুষটির সামনে কেমন নার্ভাস লাগছিল।
মজার ঘটনা, বহু বছর পর ঐতিহ্য থেকে আমার বই বের হওয়ার শুরুতে পল্টনে তাদের অফিসে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, এখানে তো আগেও এসেছি। আরে, এটাই তো ইনটেক অনলাইনের সেই অফিস, যেখানে মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা! ঐতিহ্যের কর্ণধার আরিফুর রহমান নাইম ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই খোলাসা হলো, আমার ওই প্রিয় শিল্পী তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সূত্রে এই অফিসেও কিছুদিন সময় দিয়েছিলেন।
আজ পয়লা বৈশাখ। মাকসুদ ভাইকে নিয়ে লেখার অবতারণা ‘পয়লা বৈশাখ’ ও ‘মেলায় যাইরে’ নিয়ে। এবার বরং ১৯৯০ সালের মেগা হিট অ্যালবামের টাইটেল গান ‘মেলায় যাইরে’ প্রসঙ্গেই আসি। ২০১৮ সালে রুদ্র আরিফসহ মাকসুদ ভাইয়ের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘গানটির ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল নববর্ষকে ঘিরে। আমাদের রণসংগীত আছে, জাতীয় সংগীত আছে, অনেক ধরনের বিশেষ সংগীতই হয়তো আছে, কিন্তু কোনো উৎসব সংগীত ছিল না। “মেলা”ই সম্ভবত আমাদের একমাত্র উৎসব সংগীত।’
ছোটবেলা থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মকসুদ। তখন ঢাকায় ব্যাপক পরিসরে পয়লা বৈশাখ একমাত্র রমনা বটমূলেই হতো। গ্রামগুলোতে সরগরম হলেও ঢাকায় বৈশাখী মেলা ছিল নিষ্প্রাণ। তখনই তাঁর মনে হলো, বৈশাখী উৎসবে মানুষের ঢল নামাতে হবে। “এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বলতে পারব—এমন ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস, এই গানের মাধ্যমে মানুষের সব ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি; যেমন ধরুন, ‘পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন’ কিংবা ‘বিদেশি সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা...’। এখানে আমরা রং দেখাচ্ছি; আবার ঘ্রাণ শোঁকাচ্ছি। এমনকি জাগাতে পেরেছি আবেগও। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আবেগ ও ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারলে একটি গানের পক্ষে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এ কারণেই ‘মেলা’ এমন শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে।”
আবার পুরোনো প্রসঙ্গ। মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখার পর কেটে গেছে আরও অনেকগুলো বছর। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। মনে পড়ে আদাবরে তাঁর বাসা কাম অফিসে যাওয়ার ঘটনাটা। ‘ইয়াং মানুষ, পেটের এক কোণে ফেলে দাও’ বলে বলে, অন্তত ডজনখানেক পুরি গিলিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল তাঁকে নিয়ে বড় একটা কাজ করার। সেটা পূরণ হয় ২০১৮ সালে। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে রুদ্র ভাই, আসাদ ভাইসহ তাঁর বাড়িতে দারুণ আড্ডা হয়। আমার ধারণা, এখন যেখানে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানেই দুই যুগ আগে তাঁকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
মাকসুদুল হক সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু তথ্য দিয়ে রাখছি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই, ১৯৭৩-৭৪ সালে বন্ধুরা মিলে একটি শৌখিন ব্যান্ড দল গড়ে তুলেছিলেন, নাম ‘ফিয়াস্কো’। ততদিনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে চলে আসেন। পরে মালীবাগ চৌধুরীপাড়ায় আর্লি বার্ডের সদস্য হয়ে যান। পরে যোগ দেন ফিডব্যাকে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়মিত ইংরেজি গান করেছেন।
মাকসুদ ভাইয়ের বাংলা গানে আসাটা পপ গুরু আজম খানের মাধ্যমেই। মাকসুদ ভাইয়ের মুখেই শুনি ঘটনটি, ‘মাঝেমধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসতেন (আজম খান), আমাদের গান শুনতে। একদিন প্রোগ্রাম শেষে রাতের বেলায় রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একসময় তিনি বলে উঠলেন, ‘তুই বাংলা গানে আয়। এসব হোটেলফোটেল ছেড়ে রাস্তায় নাম, ফাইট দে...!’ উন্নাসিক ভাব নিয়ে আমি জবাব দিলাম, ‘গুরু, বাংলা গানটান আমাকে দিয়ে হবে না!’ শুনেই ঠাস করে এক চড় মেরে বসলেন! আসলে আমাকে খুব আদর করতেন তিনি। কথায় কথায় বলতেন, ‘ফাইট দিতে হবে, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।’ মূলত তাঁর স্নেহেই বাংলা গানে মন দিয়েছি।’
তারপরের অংশ ইতিহাস। ‘মৌসুমি-১’ দিয়েই বাংলা গানের যাত্রা শুরু মাকসুদুল হকের। ১৯৮৭ সালে ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উল্লাসে’ ছিল এটি। মাকসুদুল হক তাঁর জাত চেনালেন এই গান দিয়েই। তারপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক, রাজনীতি নিয়ে প্রতিবাদী গান, বাউল ও ফোক গান—একজনের গানে যে এত ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে, তা মাকসুদ ভাইয়ের গান না শুনলে বুঝতেই পারতাম না। ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদ ও ঢাকা গঠন করার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকল মাকসুদের। ১৯৯৬ সালের ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামটি দারুণ সাড়া ফেলে তরুণদের মধ্যে। চমৎকার কিছু সাহসী গান ছিল এতে। মাকসুদ নিজেই বলেন, ‘মেগা হিট এই অ্যালবামটির জন্য তখন নানা আলোচনা-সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এখনো যখন বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তরুণ প্রজন্মের কানে অ্যালবামের গানগুলো বাজে, আমার খুব ভালো লাগে।’
এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখছি, মাকসুদুল হক বাংলা গানের জগতে এসেছেন আজম খানের জন্য আর ওয়ারফেজকে বাংলা গান গাওয়ায় অনুপ্রাণিত করেন মাকসুদুল হক।
মাকসুদুল হক একাধারে একজন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, লেখক। মেলায় যাইরের গীতিকার ও সুরকারও কিন্তু তিনি। তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায় সময় প্রকাশনী থেকে। নাম ছিল ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’। এই বই নিয়েও একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বইটি কাছের কোনো বইয়ের দোকানে পাচ্ছিলাম না। চলে গেলাম বাংলাবাজারের সময়ের বিক্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু বই কিনতে গিয়ে দেখলাম যে কোনো কারণে ৪০-৫০ টাকা কম আছে। আসলে তখন পড়াশোনা করি, হাতে খুব বেশি টাকা থাকত না। তা ছাড়া বইটির দাম ধারণার চেয়ে একটু বেশি ছিল। যদ্দুর মনে পড়ে, তখন বিক্রয়কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সময়ের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। তাঁরা বললেন, বইটি নিয়ে যান। পরে কখনো সময়-সুযোগ হলে দিয়েন। পরে অবশ্য বাংলাবাজার গেলে বাকি টাকাটা দিয়ে এসেছিলাম।
এখানে মাকসুদ ভাই সম্পর্ক আরও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বাম্বা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি বাম্বার আয়োজনে গান পরিবেশন করে ১২টি ব্যান্ড। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ওপেন এয়ার কনসার্ট। এই কনসার্ট আয়োজনের বাম্বার সভাপতি মাকসুদুল হকের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী খালিদের। ওই সময় চাইমের লিড ভোকাল খালিদ ছিলেন বাম্বার সাধারণ সম্পাদক।
মাকসুদুল হককে নিয়ে বলতে গেলে, লিখতে গেলে শেষ করাটা মুশকিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে অনেক তারকাই এসেছেন, কিন্তু আমার কাছে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বলতে মাকসুদুল হক মানেই বিশেষ কিছু। ‘মাকসুদ ভাই আপনার গীতি কবিতা, মাঝি, মৌসুমি, মেলায় যাই রে, হেসে খেলে এই মনটা আমার, খুঁজি তোমাকে খুঁজি, একটু পরে নামবে সন্ধ্যা, বাংলাদেশ ৯৫, পরওয়ারদেগারসহ বেশির ভাগ গানই এখনো আমাকে শিহরিত করে। মাকসুদ ভাই, আপনি সব সময়ই সময়কে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, এ কারণে ঝড়-ঝাপটাও কম সহ্য করতে হয়নি। আমার ধারণা, আপনার তৈরি করা মসৃণ পথেই পরের প্রজন্মের বহু বিখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী এগিয়ে যেতে পেরেছেন।’
আর আজ অবশ্যই আমাদের বাঙালিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পয়লা বৈশাখ, আমাদের বাংলা নববর্ষের দিন। আর এই দিনের জন্য ‘মেলায় যাইরে’র মতো চমৎকার একটি গান শ্রোতাদের উপহার দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় মাকসুদুল হক।

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘মেলায় যাই রে...’। বুঝতেই পারছেন গল্পটা মাকসুদুল হক বা মাকসুদের।
আজ আসলে আড্ডার ছলেই বলব মাকসুদের গল্প। তাই তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বলছি। তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি, আব্বুর চাকরি সূত্রে। ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। পাশের বাসায় খালাতো ভাইরা ব্যান্ডের গান শুনতেন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা গান খুব ভালো লাগত। মৌসুমি, মাঝি তোর রেডিও নাই, আজ তোমার চিঠি...। কৌতূহলী হয়ে রিজভী ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই শিল্পীর নামটা জানতে পারলাম। তারপরই ‘অঞ্জলি’ সিনেমায় ‘তোমাকে দেখলে একবার মরিতে পারি শতবার’ গানটা শুনে আগাগোড়া ভক্ত বনে গেলাম মাকসুদুল হকের।
এসএসসি পাসের পর সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে থিতু হই ঢাকায়। একদিন পল্লবীতে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পৈতৃক বাড়িটাও পেয়ে গেলাম। বিধি বাম, সেখানে কনসার্টের কিছু পোস্টার মিললেও তাঁর দেখা পাইনি। তবে কেয়ারটেকারের স্ত্রীকে এটা-সেটা বুঝিয়ে প্রিয় মাকসুদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বরটা ঠিকই জোগাড় করে ফেলি। তারপর প্রথম ফোনালাপের রোমাঞ্চ। ইতিমধ্যে ভক্তদের চমকে দিয়ে ফিডব্যাক ছেড়ে গড়ে তুলেছেন নতুন ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকা। ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের গানগুলো রীতিমতো মুখস্থ তখন।
মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলার আগে বরং পরে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাকসুদুল হকের মুখ থেকে শোনা তাঁর গানের যাত্রা শুরুর বিষয়ে বলছি। মাকসুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। পড়াশোনা শুরু নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি ইংলিশ স্কুলে। সেটি ছিল মিশনারি স্কুল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মিসেস হাবার্ট নামের এক স্কটিশ ভদ্রমহিলা। পিয়ানো বাজিয়ে গান শেখাতেন। তাঁর কাছেই প্রথম গান শেখেন মাকসুদ। বয়স যখন চার-পাঁচ বছর, স্কুলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। সেটি ছিল ধর্মীয় সংগীত। সেই কোরাসের লিড অংশটি ছিল ১০ লাইনের মতো। প্রধান শিক্ষিকা সেই অংশ গাওয়ার জন্য ছোট্ট মাকসুদকেই মনোনীত করলেন। এর জন্য সাত দিন রিহার্সেল করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, অনুষ্ঠানের দিনই প্রবল জ্বরে পড়লেন। তবু ওষুধ খেয়ে চলে গেলেন অনুষ্ঠানে।
পরের চমকটা বরং মাকসুদ ভাইয়ের জবানিতে শুনি, ‘পুরস্কার বিতরণীর সময় হঠাৎ আমার নাম ডাকা হলো। অবাক হলাম। যেহেতু আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি, তা ছাড়া ক্লাসের মেধাতালিকায় প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানেরও অধিকারী নই, তাই কোনো ক্যাটাগরিতে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়! পরে দেখলাম গানের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেটিই মঞ্চে আমার প্রথম গান গাওয়া এবং প্রথম কোনো পুরস্কার পাওয়া। সেই থেকে আমার গানের যাত্রা শুরু।’
এবার আবার পুরোনো প্রসঙ্গে। মাকসুদ ভাইয়ের ফোন নম্বর পাওয়ার পর মাঝে মাঝে আলাপ হতো। এর মধ্যেই কোনো এক সময় প্রথম দেখা করলাম। সেটা পুরানা পল্টনে, ইনটেক অনলাইনের অফিসে। কনসালট্যান্ট হিসেবে ছিলেন মাকসুদ ভাই সেখানে। প্রথমবার দেখা হওয়ার সেই ভালো লাগার অনুভূতি এখনো মনে পড়ছে। উল্টো পাশে ঋজু হয়ে বসে থাকা প্রিয় মানুষটির সামনে কেমন নার্ভাস লাগছিল।
মজার ঘটনা, বহু বছর পর ঐতিহ্য থেকে আমার বই বের হওয়ার শুরুতে পল্টনে তাদের অফিসে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, এখানে তো আগেও এসেছি। আরে, এটাই তো ইনটেক অনলাইনের সেই অফিস, যেখানে মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা! ঐতিহ্যের কর্ণধার আরিফুর রহমান নাইম ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই খোলাসা হলো, আমার ওই প্রিয় শিল্পী তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সূত্রে এই অফিসেও কিছুদিন সময় দিয়েছিলেন।
আজ পয়লা বৈশাখ। মাকসুদ ভাইকে নিয়ে লেখার অবতারণা ‘পয়লা বৈশাখ’ ও ‘মেলায় যাইরে’ নিয়ে। এবার বরং ১৯৯০ সালের মেগা হিট অ্যালবামের টাইটেল গান ‘মেলায় যাইরে’ প্রসঙ্গেই আসি। ২০১৮ সালে রুদ্র আরিফসহ মাকসুদ ভাইয়ের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘গানটির ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল নববর্ষকে ঘিরে। আমাদের রণসংগীত আছে, জাতীয় সংগীত আছে, অনেক ধরনের বিশেষ সংগীতই হয়তো আছে, কিন্তু কোনো উৎসব সংগীত ছিল না। “মেলা”ই সম্ভবত আমাদের একমাত্র উৎসব সংগীত।’
ছোটবেলা থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মকসুদ। তখন ঢাকায় ব্যাপক পরিসরে পয়লা বৈশাখ একমাত্র রমনা বটমূলেই হতো। গ্রামগুলোতে সরগরম হলেও ঢাকায় বৈশাখী মেলা ছিল নিষ্প্রাণ। তখনই তাঁর মনে হলো, বৈশাখী উৎসবে মানুষের ঢল নামাতে হবে। “এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বলতে পারব—এমন ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস, এই গানের মাধ্যমে মানুষের সব ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি; যেমন ধরুন, ‘পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন’ কিংবা ‘বিদেশি সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা...’। এখানে আমরা রং দেখাচ্ছি; আবার ঘ্রাণ শোঁকাচ্ছি। এমনকি জাগাতে পেরেছি আবেগও। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আবেগ ও ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারলে একটি গানের পক্ষে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এ কারণেই ‘মেলা’ এমন শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে।”
আবার পুরোনো প্রসঙ্গ। মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখার পর কেটে গেছে আরও অনেকগুলো বছর। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। মনে পড়ে আদাবরে তাঁর বাসা কাম অফিসে যাওয়ার ঘটনাটা। ‘ইয়াং মানুষ, পেটের এক কোণে ফেলে দাও’ বলে বলে, অন্তত ডজনখানেক পুরি গিলিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল তাঁকে নিয়ে বড় একটা কাজ করার। সেটা পূরণ হয় ২০১৮ সালে। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে রুদ্র ভাই, আসাদ ভাইসহ তাঁর বাড়িতে দারুণ আড্ডা হয়। আমার ধারণা, এখন যেখানে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানেই দুই যুগ আগে তাঁকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
মাকসুদুল হক সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু তথ্য দিয়ে রাখছি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই, ১৯৭৩-৭৪ সালে বন্ধুরা মিলে একটি শৌখিন ব্যান্ড দল গড়ে তুলেছিলেন, নাম ‘ফিয়াস্কো’। ততদিনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে চলে আসেন। পরে মালীবাগ চৌধুরীপাড়ায় আর্লি বার্ডের সদস্য হয়ে যান। পরে যোগ দেন ফিডব্যাকে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়মিত ইংরেজি গান করেছেন।
মাকসুদ ভাইয়ের বাংলা গানে আসাটা পপ গুরু আজম খানের মাধ্যমেই। মাকসুদ ভাইয়ের মুখেই শুনি ঘটনটি, ‘মাঝেমধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসতেন (আজম খান), আমাদের গান শুনতে। একদিন প্রোগ্রাম শেষে রাতের বেলায় রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একসময় তিনি বলে উঠলেন, ‘তুই বাংলা গানে আয়। এসব হোটেলফোটেল ছেড়ে রাস্তায় নাম, ফাইট দে...!’ উন্নাসিক ভাব নিয়ে আমি জবাব দিলাম, ‘গুরু, বাংলা গানটান আমাকে দিয়ে হবে না!’ শুনেই ঠাস করে এক চড় মেরে বসলেন! আসলে আমাকে খুব আদর করতেন তিনি। কথায় কথায় বলতেন, ‘ফাইট দিতে হবে, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।’ মূলত তাঁর স্নেহেই বাংলা গানে মন দিয়েছি।’
তারপরের অংশ ইতিহাস। ‘মৌসুমি-১’ দিয়েই বাংলা গানের যাত্রা শুরু মাকসুদুল হকের। ১৯৮৭ সালে ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উল্লাসে’ ছিল এটি। মাকসুদুল হক তাঁর জাত চেনালেন এই গান দিয়েই। তারপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক, রাজনীতি নিয়ে প্রতিবাদী গান, বাউল ও ফোক গান—একজনের গানে যে এত ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে, তা মাকসুদ ভাইয়ের গান না শুনলে বুঝতেই পারতাম না। ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদ ও ঢাকা গঠন করার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকল মাকসুদের। ১৯৯৬ সালের ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামটি দারুণ সাড়া ফেলে তরুণদের মধ্যে। চমৎকার কিছু সাহসী গান ছিল এতে। মাকসুদ নিজেই বলেন, ‘মেগা হিট এই অ্যালবামটির জন্য তখন নানা আলোচনা-সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এখনো যখন বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তরুণ প্রজন্মের কানে অ্যালবামের গানগুলো বাজে, আমার খুব ভালো লাগে।’
এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখছি, মাকসুদুল হক বাংলা গানের জগতে এসেছেন আজম খানের জন্য আর ওয়ারফেজকে বাংলা গান গাওয়ায় অনুপ্রাণিত করেন মাকসুদুল হক।
মাকসুদুল হক একাধারে একজন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, লেখক। মেলায় যাইরের গীতিকার ও সুরকারও কিন্তু তিনি। তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায় সময় প্রকাশনী থেকে। নাম ছিল ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’। এই বই নিয়েও একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বইটি কাছের কোনো বইয়ের দোকানে পাচ্ছিলাম না। চলে গেলাম বাংলাবাজারের সময়ের বিক্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু বই কিনতে গিয়ে দেখলাম যে কোনো কারণে ৪০-৫০ টাকা কম আছে। আসলে তখন পড়াশোনা করি, হাতে খুব বেশি টাকা থাকত না। তা ছাড়া বইটির দাম ধারণার চেয়ে একটু বেশি ছিল। যদ্দুর মনে পড়ে, তখন বিক্রয়কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সময়ের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। তাঁরা বললেন, বইটি নিয়ে যান। পরে কখনো সময়-সুযোগ হলে দিয়েন। পরে অবশ্য বাংলাবাজার গেলে বাকি টাকাটা দিয়ে এসেছিলাম।
এখানে মাকসুদ ভাই সম্পর্ক আরও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বাম্বা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি বাম্বার আয়োজনে গান পরিবেশন করে ১২টি ব্যান্ড। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ওপেন এয়ার কনসার্ট। এই কনসার্ট আয়োজনের বাম্বার সভাপতি মাকসুদুল হকের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী খালিদের। ওই সময় চাইমের লিড ভোকাল খালিদ ছিলেন বাম্বার সাধারণ সম্পাদক।
মাকসুদুল হককে নিয়ে বলতে গেলে, লিখতে গেলে শেষ করাটা মুশকিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে অনেক তারকাই এসেছেন, কিন্তু আমার কাছে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বলতে মাকসুদুল হক মানেই বিশেষ কিছু। ‘মাকসুদ ভাই আপনার গীতি কবিতা, মাঝি, মৌসুমি, মেলায় যাই রে, হেসে খেলে এই মনটা আমার, খুঁজি তোমাকে খুঁজি, একটু পরে নামবে সন্ধ্যা, বাংলাদেশ ৯৫, পরওয়ারদেগারসহ বেশির ভাগ গানই এখনো আমাকে শিহরিত করে। মাকসুদ ভাই, আপনি সব সময়ই সময়কে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, এ কারণে ঝড়-ঝাপটাও কম সহ্য করতে হয়নি। আমার ধারণা, আপনার তৈরি করা মসৃণ পথেই পরের প্রজন্মের বহু বিখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী এগিয়ে যেতে পেরেছেন।’
আর আজ অবশ্যই আমাদের বাঙালিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পয়লা বৈশাখ, আমাদের বাংলা নববর্ষের দিন। আর এই দিনের জন্য ‘মেলায় যাইরে’র মতো চমৎকার একটি গান শ্রোতাদের উপহার দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় মাকসুদুল হক।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।
ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা।
৮ ঘণ্টা আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে