ইশতিয়াক হাসান

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘মেলায় যাই রে...’। বুঝতেই পারছেন গল্পটা মাকসুদুল হক বা মাকসুদের।
আজ আসলে আড্ডার ছলেই বলব মাকসুদের গল্প। তাই তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বলছি। তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি, আব্বুর চাকরি সূত্রে। ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। পাশের বাসায় খালাতো ভাইরা ব্যান্ডের গান শুনতেন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা গান খুব ভালো লাগত। মৌসুমি, মাঝি তোর রেডিও নাই, আজ তোমার চিঠি...। কৌতূহলী হয়ে রিজভী ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই শিল্পীর নামটা জানতে পারলাম। তারপরই ‘অঞ্জলি’ সিনেমায় ‘তোমাকে দেখলে একবার মরিতে পারি শতবার’ গানটা শুনে আগাগোড়া ভক্ত বনে গেলাম মাকসুদুল হকের।
এসএসসি পাসের পর সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে থিতু হই ঢাকায়। একদিন পল্লবীতে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পৈতৃক বাড়িটাও পেয়ে গেলাম। বিধি বাম, সেখানে কনসার্টের কিছু পোস্টার মিললেও তাঁর দেখা পাইনি। তবে কেয়ারটেকারের স্ত্রীকে এটা-সেটা বুঝিয়ে প্রিয় মাকসুদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বরটা ঠিকই জোগাড় করে ফেলি। তারপর প্রথম ফোনালাপের রোমাঞ্চ। ইতিমধ্যে ভক্তদের চমকে দিয়ে ফিডব্যাক ছেড়ে গড়ে তুলেছেন নতুন ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকা। ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের গানগুলো রীতিমতো মুখস্থ তখন।
মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলার আগে বরং পরে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাকসুদুল হকের মুখ থেকে শোনা তাঁর গানের যাত্রা শুরুর বিষয়ে বলছি। মাকসুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। পড়াশোনা শুরু নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি ইংলিশ স্কুলে। সেটি ছিল মিশনারি স্কুল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মিসেস হাবার্ট নামের এক স্কটিশ ভদ্রমহিলা। পিয়ানো বাজিয়ে গান শেখাতেন। তাঁর কাছেই প্রথম গান শেখেন মাকসুদ। বয়স যখন চার-পাঁচ বছর, স্কুলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। সেটি ছিল ধর্মীয় সংগীত। সেই কোরাসের লিড অংশটি ছিল ১০ লাইনের মতো। প্রধান শিক্ষিকা সেই অংশ গাওয়ার জন্য ছোট্ট মাকসুদকেই মনোনীত করলেন। এর জন্য সাত দিন রিহার্সেল করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, অনুষ্ঠানের দিনই প্রবল জ্বরে পড়লেন। তবু ওষুধ খেয়ে চলে গেলেন অনুষ্ঠানে।
পরের চমকটা বরং মাকসুদ ভাইয়ের জবানিতে শুনি, ‘পুরস্কার বিতরণীর সময় হঠাৎ আমার নাম ডাকা হলো। অবাক হলাম। যেহেতু আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি, তা ছাড়া ক্লাসের মেধাতালিকায় প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানেরও অধিকারী নই, তাই কোনো ক্যাটাগরিতে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়! পরে দেখলাম গানের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেটিই মঞ্চে আমার প্রথম গান গাওয়া এবং প্রথম কোনো পুরস্কার পাওয়া। সেই থেকে আমার গানের যাত্রা শুরু।’
এবার আবার পুরোনো প্রসঙ্গে। মাকসুদ ভাইয়ের ফোন নম্বর পাওয়ার পর মাঝে মাঝে আলাপ হতো। এর মধ্যেই কোনো এক সময় প্রথম দেখা করলাম। সেটা পুরানা পল্টনে, ইনটেক অনলাইনের অফিসে। কনসালট্যান্ট হিসেবে ছিলেন মাকসুদ ভাই সেখানে। প্রথমবার দেখা হওয়ার সেই ভালো লাগার অনুভূতি এখনো মনে পড়ছে। উল্টো পাশে ঋজু হয়ে বসে থাকা প্রিয় মানুষটির সামনে কেমন নার্ভাস লাগছিল।
মজার ঘটনা, বহু বছর পর ঐতিহ্য থেকে আমার বই বের হওয়ার শুরুতে পল্টনে তাদের অফিসে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, এখানে তো আগেও এসেছি। আরে, এটাই তো ইনটেক অনলাইনের সেই অফিস, যেখানে মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা! ঐতিহ্যের কর্ণধার আরিফুর রহমান নাইম ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই খোলাসা হলো, আমার ওই প্রিয় শিল্পী তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সূত্রে এই অফিসেও কিছুদিন সময় দিয়েছিলেন।
আজ পয়লা বৈশাখ। মাকসুদ ভাইকে নিয়ে লেখার অবতারণা ‘পয়লা বৈশাখ’ ও ‘মেলায় যাইরে’ নিয়ে। এবার বরং ১৯৯০ সালের মেগা হিট অ্যালবামের টাইটেল গান ‘মেলায় যাইরে’ প্রসঙ্গেই আসি। ২০১৮ সালে রুদ্র আরিফসহ মাকসুদ ভাইয়ের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘গানটির ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল নববর্ষকে ঘিরে। আমাদের রণসংগীত আছে, জাতীয় সংগীত আছে, অনেক ধরনের বিশেষ সংগীতই হয়তো আছে, কিন্তু কোনো উৎসব সংগীত ছিল না। “মেলা”ই সম্ভবত আমাদের একমাত্র উৎসব সংগীত।’
ছোটবেলা থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মকসুদ। তখন ঢাকায় ব্যাপক পরিসরে পয়লা বৈশাখ একমাত্র রমনা বটমূলেই হতো। গ্রামগুলোতে সরগরম হলেও ঢাকায় বৈশাখী মেলা ছিল নিষ্প্রাণ। তখনই তাঁর মনে হলো, বৈশাখী উৎসবে মানুষের ঢল নামাতে হবে। “এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বলতে পারব—এমন ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস, এই গানের মাধ্যমে মানুষের সব ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি; যেমন ধরুন, ‘পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন’ কিংবা ‘বিদেশি সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা...’। এখানে আমরা রং দেখাচ্ছি; আবার ঘ্রাণ শোঁকাচ্ছি। এমনকি জাগাতে পেরেছি আবেগও। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আবেগ ও ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারলে একটি গানের পক্ষে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এ কারণেই ‘মেলা’ এমন শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে।”
আবার পুরোনো প্রসঙ্গ। মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখার পর কেটে গেছে আরও অনেকগুলো বছর। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। মনে পড়ে আদাবরে তাঁর বাসা কাম অফিসে যাওয়ার ঘটনাটা। ‘ইয়াং মানুষ, পেটের এক কোণে ফেলে দাও’ বলে বলে, অন্তত ডজনখানেক পুরি গিলিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল তাঁকে নিয়ে বড় একটা কাজ করার। সেটা পূরণ হয় ২০১৮ সালে। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে রুদ্র ভাই, আসাদ ভাইসহ তাঁর বাড়িতে দারুণ আড্ডা হয়। আমার ধারণা, এখন যেখানে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানেই দুই যুগ আগে তাঁকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
মাকসুদুল হক সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু তথ্য দিয়ে রাখছি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই, ১৯৭৩-৭৪ সালে বন্ধুরা মিলে একটি শৌখিন ব্যান্ড দল গড়ে তুলেছিলেন, নাম ‘ফিয়াস্কো’। ততদিনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে চলে আসেন। পরে মালীবাগ চৌধুরীপাড়ায় আর্লি বার্ডের সদস্য হয়ে যান। পরে যোগ দেন ফিডব্যাকে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়মিত ইংরেজি গান করেছেন।
মাকসুদ ভাইয়ের বাংলা গানে আসাটা পপ গুরু আজম খানের মাধ্যমেই। মাকসুদ ভাইয়ের মুখেই শুনি ঘটনটি, ‘মাঝেমধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসতেন (আজম খান), আমাদের গান শুনতে। একদিন প্রোগ্রাম শেষে রাতের বেলায় রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একসময় তিনি বলে উঠলেন, ‘তুই বাংলা গানে আয়। এসব হোটেলফোটেল ছেড়ে রাস্তায় নাম, ফাইট দে...!’ উন্নাসিক ভাব নিয়ে আমি জবাব দিলাম, ‘গুরু, বাংলা গানটান আমাকে দিয়ে হবে না!’ শুনেই ঠাস করে এক চড় মেরে বসলেন! আসলে আমাকে খুব আদর করতেন তিনি। কথায় কথায় বলতেন, ‘ফাইট দিতে হবে, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।’ মূলত তাঁর স্নেহেই বাংলা গানে মন দিয়েছি।’
তারপরের অংশ ইতিহাস। ‘মৌসুমি-১’ দিয়েই বাংলা গানের যাত্রা শুরু মাকসুদুল হকের। ১৯৮৭ সালে ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উল্লাসে’ ছিল এটি। মাকসুদুল হক তাঁর জাত চেনালেন এই গান দিয়েই। তারপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক, রাজনীতি নিয়ে প্রতিবাদী গান, বাউল ও ফোক গান—একজনের গানে যে এত ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে, তা মাকসুদ ভাইয়ের গান না শুনলে বুঝতেই পারতাম না। ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদ ও ঢাকা গঠন করার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকল মাকসুদের। ১৯৯৬ সালের ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামটি দারুণ সাড়া ফেলে তরুণদের মধ্যে। চমৎকার কিছু সাহসী গান ছিল এতে। মাকসুদ নিজেই বলেন, ‘মেগা হিট এই অ্যালবামটির জন্য তখন নানা আলোচনা-সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এখনো যখন বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তরুণ প্রজন্মের কানে অ্যালবামের গানগুলো বাজে, আমার খুব ভালো লাগে।’
এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখছি, মাকসুদুল হক বাংলা গানের জগতে এসেছেন আজম খানের জন্য আর ওয়ারফেজকে বাংলা গান গাওয়ায় অনুপ্রাণিত করেন মাকসুদুল হক।
মাকসুদুল হক একাধারে একজন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, লেখক। মেলায় যাইরের গীতিকার ও সুরকারও কিন্তু তিনি। তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায় সময় প্রকাশনী থেকে। নাম ছিল ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’। এই বই নিয়েও একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বইটি কাছের কোনো বইয়ের দোকানে পাচ্ছিলাম না। চলে গেলাম বাংলাবাজারের সময়ের বিক্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু বই কিনতে গিয়ে দেখলাম যে কোনো কারণে ৪০-৫০ টাকা কম আছে। আসলে তখন পড়াশোনা করি, হাতে খুব বেশি টাকা থাকত না। তা ছাড়া বইটির দাম ধারণার চেয়ে একটু বেশি ছিল। যদ্দুর মনে পড়ে, তখন বিক্রয়কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সময়ের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। তাঁরা বললেন, বইটি নিয়ে যান। পরে কখনো সময়-সুযোগ হলে দিয়েন। পরে অবশ্য বাংলাবাজার গেলে বাকি টাকাটা দিয়ে এসেছিলাম।
এখানে মাকসুদ ভাই সম্পর্ক আরও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বাম্বা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি বাম্বার আয়োজনে গান পরিবেশন করে ১২টি ব্যান্ড। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ওপেন এয়ার কনসার্ট। এই কনসার্ট আয়োজনের বাম্বার সভাপতি মাকসুদুল হকের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী খালিদের। ওই সময় চাইমের লিড ভোকাল খালিদ ছিলেন বাম্বার সাধারণ সম্পাদক।
মাকসুদুল হককে নিয়ে বলতে গেলে, লিখতে গেলে শেষ করাটা মুশকিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে অনেক তারকাই এসেছেন, কিন্তু আমার কাছে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বলতে মাকসুদুল হক মানেই বিশেষ কিছু। ‘মাকসুদ ভাই আপনার গীতি কবিতা, মাঝি, মৌসুমি, মেলায় যাই রে, হেসে খেলে এই মনটা আমার, খুঁজি তোমাকে খুঁজি, একটু পরে নামবে সন্ধ্যা, বাংলাদেশ ৯৫, পরওয়ারদেগারসহ বেশির ভাগ গানই এখনো আমাকে শিহরিত করে। মাকসুদ ভাই, আপনি সব সময়ই সময়কে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, এ কারণে ঝড়-ঝাপটাও কম সহ্য করতে হয়নি। আমার ধারণা, আপনার তৈরি করা মসৃণ পথেই পরের প্রজন্মের বহু বিখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী এগিয়ে যেতে পেরেছেন।’
আর আজ অবশ্যই আমাদের বাঙালিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পয়লা বৈশাখ, আমাদের বাংলা নববর্ষের দিন। আর এই দিনের জন্য ‘মেলায় যাইরে’র মতো চমৎকার একটি গান শ্রোতাদের উপহার দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় মাকসুদুল হক।

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘মেলায় যাই রে...’। বুঝতেই পারছেন গল্পটা মাকসুদুল হক বা মাকসুদের।
আজ আসলে আড্ডার ছলেই বলব মাকসুদের গল্প। তাই তাঁর গানের সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বলছি। তখন আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকি, আব্বুর চাকরি সূত্রে। ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ি। পাশের বাসায় খালাতো ভাইরা ব্যান্ডের গান শুনতেন। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা গান খুব ভালো লাগত। মৌসুমি, মাঝি তোর রেডিও নাই, আজ তোমার চিঠি...। কৌতূহলী হয়ে রিজভী ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই শিল্পীর নামটা জানতে পারলাম। তারপরই ‘অঞ্জলি’ সিনেমায় ‘তোমাকে দেখলে একবার মরিতে পারি শতবার’ গানটা শুনে আগাগোড়া ভক্ত বনে গেলাম মাকসুদুল হকের।
এসএসসি পাসের পর সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে থিতু হই ঢাকায়। একদিন পল্লবীতে খুঁজতে খুঁজতে তাঁর পৈতৃক বাড়িটাও পেয়ে গেলাম। বিধি বাম, সেখানে কনসার্টের কিছু পোস্টার মিললেও তাঁর দেখা পাইনি। তবে কেয়ারটেকারের স্ত্রীকে এটা-সেটা বুঝিয়ে প্রিয় মাকসুদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বরটা ঠিকই জোগাড় করে ফেলি। তারপর প্রথম ফোনালাপের রোমাঞ্চ। ইতিমধ্যে ভক্তদের চমকে দিয়ে ফিডব্যাক ছেড়ে গড়ে তুলেছেন নতুন ব্যান্ড মাকসুদ ও ঢাকা। ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের গানগুলো রীতিমতো মুখস্থ তখন।
মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার গল্পটা বলার আগে বরং পরে এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাকসুদুল হকের মুখ থেকে শোনা তাঁর গানের যাত্রা শুরুর বিষয়ে বলছি। মাকসুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। পড়াশোনা শুরু নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরি ইংলিশ স্কুলে। সেটি ছিল মিশনারি স্কুল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মিসেস হাবার্ট নামের এক স্কটিশ ভদ্রমহিলা। পিয়ানো বাজিয়ে গান শেখাতেন। তাঁর কাছেই প্রথম গান শেখেন মাকসুদ। বয়স যখন চার-পাঁচ বছর, স্কুলের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। সেটি ছিল ধর্মীয় সংগীত। সেই কোরাসের লিড অংশটি ছিল ১০ লাইনের মতো। প্রধান শিক্ষিকা সেই অংশ গাওয়ার জন্য ছোট্ট মাকসুদকেই মনোনীত করলেন। এর জন্য সাত দিন রিহার্সেল করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, অনুষ্ঠানের দিনই প্রবল জ্বরে পড়লেন। তবু ওষুধ খেয়ে চলে গেলেন অনুষ্ঠানে।
পরের চমকটা বরং মাকসুদ ভাইয়ের জবানিতে শুনি, ‘পুরস্কার বিতরণীর সময় হঠাৎ আমার নাম ডাকা হলো। অবাক হলাম। যেহেতু আমি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি, তা ছাড়া ক্লাসের মেধাতালিকায় প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানেরও অধিকারী নই, তাই কোনো ক্যাটাগরিতে আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়! পরে দেখলাম গানের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সেটিই মঞ্চে আমার প্রথম গান গাওয়া এবং প্রথম কোনো পুরস্কার পাওয়া। সেই থেকে আমার গানের যাত্রা শুরু।’
এবার আবার পুরোনো প্রসঙ্গে। মাকসুদ ভাইয়ের ফোন নম্বর পাওয়ার পর মাঝে মাঝে আলাপ হতো। এর মধ্যেই কোনো এক সময় প্রথম দেখা করলাম। সেটা পুরানা পল্টনে, ইনটেক অনলাইনের অফিসে। কনসালট্যান্ট হিসেবে ছিলেন মাকসুদ ভাই সেখানে। প্রথমবার দেখা হওয়ার সেই ভালো লাগার অনুভূতি এখনো মনে পড়ছে। উল্টো পাশে ঋজু হয়ে বসে থাকা প্রিয় মানুষটির সামনে কেমন নার্ভাস লাগছিল।
মজার ঘটনা, বহু বছর পর ঐতিহ্য থেকে আমার বই বের হওয়ার শুরুতে পল্টনে তাদের অফিসে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, এখানে তো আগেও এসেছি। আরে, এটাই তো ইনটেক অনলাইনের সেই অফিস, যেখানে মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা! ঐতিহ্যের কর্ণধার আরিফুর রহমান নাইম ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই খোলাসা হলো, আমার ওই প্রিয় শিল্পী তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সূত্রে এই অফিসেও কিছুদিন সময় দিয়েছিলেন।
আজ পয়লা বৈশাখ। মাকসুদ ভাইকে নিয়ে লেখার অবতারণা ‘পয়লা বৈশাখ’ ও ‘মেলায় যাইরে’ নিয়ে। এবার বরং ১৯৯০ সালের মেগা হিট অ্যালবামের টাইটেল গান ‘মেলায় যাইরে’ প্রসঙ্গেই আসি। ২০১৮ সালে রুদ্র আরিফসহ মাকসুদ ভাইয়ের এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেন, ‘গানটির ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল নববর্ষকে ঘিরে। আমাদের রণসংগীত আছে, জাতীয় সংগীত আছে, অনেক ধরনের বিশেষ সংগীতই হয়তো আছে, কিন্তু কোনো উৎসব সংগীত ছিল না। “মেলা”ই সম্ভবত আমাদের একমাত্র উৎসব সংগীত।’
ছোটবেলা থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মকসুদ। তখন ঢাকায় ব্যাপক পরিসরে পয়লা বৈশাখ একমাত্র রমনা বটমূলেই হতো। গ্রামগুলোতে সরগরম হলেও ঢাকায় বৈশাখী মেলা ছিল নিষ্প্রাণ। তখনই তাঁর মনে হলো, বৈশাখী উৎসবে মানুষের ঢল নামাতে হবে। “এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বলতে পারব—এমন ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস, এই গানের মাধ্যমে মানুষের সব ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি; যেমন ধরুন, ‘পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন’ কিংবা ‘বিদেশি সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা...’। এখানে আমরা রং দেখাচ্ছি; আবার ঘ্রাণ শোঁকাচ্ছি। এমনকি জাগাতে পেরেছি আবেগও। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আবেগ ও ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারলে একটি গানের পক্ষে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এ কারণেই ‘মেলা’ এমন শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে।”
আবার পুরোনো প্রসঙ্গ। মাকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখার পর কেটে গেছে আরও অনেকগুলো বছর। তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। মনে পড়ে আদাবরে তাঁর বাসা কাম অফিসে যাওয়ার ঘটনাটা। ‘ইয়াং মানুষ, পেটের এক কোণে ফেলে দাও’ বলে বলে, অন্তত ডজনখানেক পুরি গিলিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল তাঁকে নিয়ে বড় একটা কাজ করার। সেটা পূরণ হয় ২০১৮ সালে। সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে রুদ্র ভাই, আসাদ ভাইসহ তাঁর বাড়িতে দারুণ আড্ডা হয়। আমার ধারণা, এখন যেখানে তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট, সেখানেই দুই যুগ আগে তাঁকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
মাকসুদুল হক সম্পর্কে অল্প কথায় কিছু তথ্য দিয়ে রাখছি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই, ১৯৭৩-৭৪ সালে বন্ধুরা মিলে একটি শৌখিন ব্যান্ড দল গড়ে তুলেছিলেন, নাম ‘ফিয়াস্কো’। ততদিনে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে চলে আসেন। পরে মালীবাগ চৌধুরীপাড়ায় আর্লি বার্ডের সদস্য হয়ে যান। পরে যোগ দেন ফিডব্যাকে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়মিত ইংরেজি গান করেছেন।
মাকসুদ ভাইয়ের বাংলা গানে আসাটা পপ গুরু আজম খানের মাধ্যমেই। মাকসুদ ভাইয়ের মুখেই শুনি ঘটনটি, ‘মাঝেমধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসতেন (আজম খান), আমাদের গান শুনতে। একদিন প্রোগ্রাম শেষে রাতের বেলায় রাস্তায় তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। একসময় তিনি বলে উঠলেন, ‘তুই বাংলা গানে আয়। এসব হোটেলফোটেল ছেড়ে রাস্তায় নাম, ফাইট দে...!’ উন্নাসিক ভাব নিয়ে আমি জবাব দিলাম, ‘গুরু, বাংলা গানটান আমাকে দিয়ে হবে না!’ শুনেই ঠাস করে এক চড় মেরে বসলেন! আসলে আমাকে খুব আদর করতেন তিনি। কথায় কথায় বলতেন, ‘ফাইট দিতে হবে, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে।’ মূলত তাঁর স্নেহেই বাংলা গানে মন দিয়েছি।’
তারপরের অংশ ইতিহাস। ‘মৌসুমি-১’ দিয়েই বাংলা গানের যাত্রা শুরু মাকসুদুল হকের। ১৯৮৭ সালে ফিডব্যাকের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উল্লাসে’ ছিল এটি। মাকসুদুল হক তাঁর জাত চেনালেন এই গান দিয়েই। তারপর অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক, রাজনীতি নিয়ে প্রতিবাদী গান, বাউল ও ফোক গান—একজনের গানে যে এত ভ্যারিয়েশন থাকতে পারে, তা মাকসুদ ভাইয়ের গান না শুনলে বুঝতেই পারতাম না। ফিডব্যাক ছেড়ে মাকসুদ ও ঢাকা গঠন করার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত থাকল মাকসুদের। ১৯৯৬ সালের ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ অ্যালবামটি দারুণ সাড়া ফেলে তরুণদের মধ্যে। চমৎকার কিছু সাহসী গান ছিল এতে। মাকসুদ নিজেই বলেন, ‘মেগা হিট এই অ্যালবামটির জন্য তখন নানা আলোচনা-সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এখনো যখন বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে তরুণ প্রজন্মের কানে অ্যালবামের গানগুলো বাজে, আমার খুব ভালো লাগে।’
এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখছি, মাকসুদুল হক বাংলা গানের জগতে এসেছেন আজম খানের জন্য আর ওয়ারফেজকে বাংলা গান গাওয়ায় অনুপ্রাণিত করেন মাকসুদুল হক।
মাকসুদুল হক একাধারে একজন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, লেখক। মেলায় যাইরের গীতিকার ও সুরকারও কিন্তু তিনি। তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায় সময় প্রকাশনী থেকে। নাম ছিল ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’। এই বই নিয়েও একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বইটি কাছের কোনো বইয়ের দোকানে পাচ্ছিলাম না। চলে গেলাম বাংলাবাজারের সময়ের বিক্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু বই কিনতে গিয়ে দেখলাম যে কোনো কারণে ৪০-৫০ টাকা কম আছে। আসলে তখন পড়াশোনা করি, হাতে খুব বেশি টাকা থাকত না। তা ছাড়া বইটির দাম ধারণার চেয়ে একটু বেশি ছিল। যদ্দুর মনে পড়ে, তখন বিক্রয়কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন সময়ের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ। তাঁরা বললেন, বইটি নিয়ে যান। পরে কখনো সময়-সুযোগ হলে দিয়েন। পরে অবশ্য বাংলাবাজার গেলে বাকি টাকাটা দিয়ে এসেছিলাম।
এখানে মাকসুদ ভাই সম্পর্ক আরও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বাম্বা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি বাম্বার আয়োজনে গান পরিবেশন করে ১২টি ব্যান্ড। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম ওপেন এয়ার কনসার্ট। এই কনসার্ট আয়োজনের বাম্বার সভাপতি মাকসুদুল হকের পাশাপাশি বড় ভূমিকা ছিল সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী খালিদের। ওই সময় চাইমের লিড ভোকাল খালিদ ছিলেন বাম্বার সাধারণ সম্পাদক।
মাকসুদুল হককে নিয়ে বলতে গেলে, লিখতে গেলে শেষ করাটা মুশকিল। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে অনেক তারকাই এসেছেন, কিন্তু আমার কাছে বাংলা ব্যান্ড সংগীত বলতে মাকসুদুল হক মানেই বিশেষ কিছু। ‘মাকসুদ ভাই আপনার গীতি কবিতা, মাঝি, মৌসুমি, মেলায় যাই রে, হেসে খেলে এই মনটা আমার, খুঁজি তোমাকে খুঁজি, একটু পরে নামবে সন্ধ্যা, বাংলাদেশ ৯৫, পরওয়ারদেগারসহ বেশির ভাগ গানই এখনো আমাকে শিহরিত করে। মাকসুদ ভাই, আপনি সব সময়ই সময়কে ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, এ কারণে ঝড়-ঝাপটাও কম সহ্য করতে হয়নি। আমার ধারণা, আপনার তৈরি করা মসৃণ পথেই পরের প্রজন্মের বহু বিখ্যাত ব্যান্ডশিল্পী এগিয়ে যেতে পেরেছেন।’
আর আজ অবশ্যই আমাদের বাঙালিদের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পয়লা বৈশাখ, আমাদের বাংলা নববর্ষের দিন। আর এই দিনের জন্য ‘মেলায় যাইরে’র মতো চমৎকার একটি গান শ্রোতাদের উপহার দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ প্রিয় মাকসুদুল হক।

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৯ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।
অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।
তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।
কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।
সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

জনপ্রিয় সব গানের গায়ক তিনি। সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশে ব্যান্ড সংগীত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে যে কয়েকজন মানুষের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, তিনি তাঁদের একজন। বামবার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। আর পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিতে-গলিতে শোনা যায় তাঁর অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘ম
১৪ এপ্রিল ২০২৪
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৯ ঘণ্টা আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৪ দিন আগে
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল...
৫ দিন আগে