জাহীদ রেজা নূর

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁর জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
তার আগে কিছু কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করতে। ওয়াহিদুল হকের পরামর্শমতো কৃষিবিজ্ঞান পরিবর্তন করে রুশ ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে ছিল বিদেশি সাহিত্য। ফলে রুশ সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য আর ভাষা—এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ঘটেছে। বিদেশি সাহিত্য শুরু হয়েছিল হোমার থেকে। এসে ঠেকেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। রুশ সাহিত্যও সে রকম একটা জায়গায় এসে ভিড়িয়েছিল তার নৌকা। ফলে, সোভিয়েত আমলের সাহিত্য এবং সাহিত্য নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদের হাঙ্গামার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলাম। তারও আগে পুশকিন, গোগল, তুর্গেনিয়েভ, দস্তইয়েভস্কি, তলস্তোয়েরা এসে জানান দিচ্ছিলেন, ‘রোসো বাছা, কত ধরনের জীবন নিয়ে খেল দেখাব, তা বুঝতেও পারবে না।’
তখন থেকেই নামগুলোয় কার পরে কে, সেটা জানা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। লেরমন্তভ যে পুশকিন আর গোগলের মাঝখানে বসবে, সেটাও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। রুশ স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল পুশকিনকে দিয়ে, শেষ হয়েছিল চেখভে এসে। এর পর পড়ানো হতো সোভিয়েত সাহিত্য। মাক্সিম গোর্কি আর মায়াকোভ্স্কির পর আমরা কিন্তু রূপালি যুগের কবি ও সাহিত্যিকদের পেয়েছি, যার মধ্যে আন্না আখমাতোভা, মারিনা স্তেতায়েভা, মান্দেলশ্তাম, গুমিলভদের পেয়েছি।
কেন এত কথা বলা? বলা এই কারণে যে, কারামজিন, রাদিশেভদের কাল পেরিয়ে আমরা যখন আধুনিক রুশ সাহিত্যে প্রবেশ করেছি, তখন তলস্তোয়কে আলাদা করে না চিনে বরং রুশ সাহিত্যের ইতিহাস দিয়ে রুশদের বোঝার চেষ্টা করেছি। আর তাই একটু একটু করে যখন শুধুই তলস্তোয় নিয়ে পড়াতে এলেন একজন শিক্ষক, তখন জানা ছিল না, তাঁর ঝুলিতে কী আছে।
১৯৮৬ সালে দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘শিল্প ও সাহিত্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী। সে অনুষ্ঠানেই বোধ হয় প্রথম শুনেছিলাম ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর নাম। কিংবা এমনও হতে পারে, বিটিভিতে যখন ধারাবাহিকভাবে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ দেখানো শুরু হলো, তখন কবির চৌধুরী ছবিটি শুরু হওয়ার আগে ভূমিকায় কিছু কথা বলেছিলেন। এখন আর মনে নেই, অনুষ্ঠানে নাকি ধারাবাহিক সিরিয়ালের আগে কবির চৌধুরীর বলা কথায় তলস্তোয়ের এই সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে পেরেছিলাম।
এর পর তো হাতে এল ‘পুনরুজ্জীবন’। প্রগতির বই। কিন্তু সেটা পড়া হয়ে ওঠেনি তখন। নেখলিউদোভ আর মাসলায়েভার নামগুলোই শুধু ঘুরেফিরে আসত মাথায়। কিন্তু বইয়ের দু মলাটের ভেতর আসলে কী রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতাম না কিছুই। আর আন্না কারেনিনা? না, বইটির নাম শুনেছিলাম কিনা, তা আর মনে পড়ে না।
রাশিয়ায় হলো তলস্তোয়ের প্রথম পাঠ। বিশাল বিশাল উপন্যাস পড়ার মতো সময় ছিল না। শিক্ষক বলে দিতেন, আমরা খুঁজে খুঁজে উপন্যাসের সে জায়গাগুলো পড়ে আসতাম। শিক্ষক বৈঠকি আড্ডার মতো সেই অধ্যায়ের আলোকে পুরো বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে আগ্রহ জাগলে লাইব্রেরি থেকে বই ধার নিয়ে পড়ে নেওয়া যেত।
একটা কথা বলব বলে এই ইতিহাস বর্ণনা। বলতে চাইছি, সোভিয়েত ইউনিয়নে না গেলে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশালতার সঙ্গে পরিচিত না হলে, সোভিয়েত জনগণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হলে রুশ উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। পশ্চিমা দুনিয়ার মতো তো নয় রুশ, ইউক্রেনীয়, বেলারুশের নাগরিকেরা। তাদের রক্তে স্লাভ জাতীয়তার যে বীজ রয়েছে, সেটা অন্যদের থেকে এদের আলাদা করে দেয়। এ কারণেই রুশ চরিত্রগুলোকে বোঝার জন্য রুশ জীবনের সংস্পর্শে আসতে পারলে ভালো। না এলে কি উপন্যাসের মজা পাওয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদি না-ই যেত, তাহলে তো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা বোঝার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকতে হতো দিনের পর দিন। তাতে এক জীবনে আর উপন্যাস পড়া হতো না। আসলে বলতে চেয়েছি, কাছে থেকে দেশটাকে দেখলে চরিত্রগুলো বোঝা সহজ হয়। না দেখলেও কল্পনার ভেলায় চড়ে ঘুরেই আসা যায় দেশটা।
অনেক হয়েছে। এবার অন্যদিকে মন দিই। এই স্বল্প পরিসরে তলস্তোয়কে নিয়ে সাহিত্য আলোচনা হতে পারে না। এক আন্না কারেনিনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই তো রাত পোহাবে। সে চেষ্টায় যাওয়ার একেবারেই চেষ্টা করব না। বুড়োর জন্মদিনে আমরা বুড়োকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু ভুল তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরাব।
প্রথম কিংবদন্তি
লিয়েফ তলস্তোয় জুয়ার তাশ পেটাতে গিয়ে বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৫৪ সালে তিনতলা বাগানবাড়িটি পাশের জমিদার গোরোখোভের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়িতেই কোনো এক সময় জন্মেছিলেন তলস্তোয়। কেন বিক্রি করা হয়েছিল বাড়িটা? বাড়িটা ছিল জীর্ণ। মেরামত করানো না হলে এ বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু মেরামত করানোর মতো টাকা তখন পরিবারে ছিল না। বাড়ি বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা পোক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
লিয়েফ তলস্তোয় তখন যুদ্ধের ময়দানে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলছে তখন। তলস্তোয়কে তাঁর বড় ভাই সের্গেই চিঠি পাঠাল, ‘বাড়িটা যদি মেরামতহীনভাবে আরও কয়েক বছর থাকে, তাহলে এই বাড়িকে শুধু সুভেনির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, আর কিছু নয়। তোমার হাতে যদি কখনো টাকা আসে, তুমি নতুন বাড়ি তৈরি করে নিতে পারবে। আমাদের অবস্থা তো এতটা খারাপ হয়ে যায়নি যে, থাকার জায়গা নেই। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের থাকার জায়গা আছে।’
বাড়ি যখন বিক্রি হচ্ছে, তখন লিয়েফের চাচাতো ভাই ভালেরিয়ান পেত্রোভিচ তলস্তোয় টাকার লেনদেন, আইনি কাগজপত্র ইত্যাদি তৈরি করেছেন। সে সময় ৫০০০ রুবল মানে ১৫০০ রৌপ্যমুদ্রায় বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছিল। সেনা অফিসারদের নিয়ে লিয়েফ তলস্তোয় যখন একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা বের করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন সেই টাকা তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাগাজিন বের করার জন্য সরকারি অনুমতি চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই ১৮৫৫ সালে সেই টাকা দিয়ে তাসের জুয়ার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। অর্থাৎ, বাগানবাড়িটা বিক্রি করার কোনো ইচ্ছাই কখনো ছিল না লিয়েফের। কিন্তু বিক্রির পর ম্যাগাজিন বের করতে না পেরে দেনা শোধ করেন।
দ্বিতীয় কিংবদন্তি
বিয়ের আগে ও পরে তলস্তোয়ের রয়েছে অনেক অনেক অবৈধ সন্তান।
আসলে যা ঘটেছিল
বিয়ের আগে দিনলিপিতে তলস্তোয় কৃষাণী, বেদে, বড়লোকের মেয়েদের ব্যাপারে তাঁর লোভাতুর দৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। তাদের নিয়ে তৃষ্ণার কথা জানিয়েছেন। তবে তলস্তোয়ের জীবনে খুবই কষ্টের ঘটনা হলো ২৩ বছর বয়সী বিবাহিত নারী আকসিনিয়া বাজিকিনায়ার সঙ্গে সম্পর্ক। ১৮৬০ সালে আকসিনিয়া তলস্তোয়ের ঔরসে জন্ম দেন তিমাফেই নামে ছেলের। সে যুগের ধারণায় তিমাফেই ছিলেন তলস্তোয়ের অবৈধ সন্তান। এর দুবছর পর তলস্তোয় বিয়ে করেন সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না বের্সকে।
১৮৮৯ সালে প্রকাশিত ‘ডেভিল’ নামের উপন্যাসে বিবাহিত জীবনের আগের জীবনের গল্প আছে। সে গল্প পড়ে পাড়াপড়শিরা বলতে থাকে, এ গল্প কাউন্ট তলস্তোয়ের বউয়ের সঙ্গে প্রতারণার গল্প। অথচ আসলে গল্পটা ছিল তুলার একজন আইনজীবীর জীবন থেকে নেওয়া। এই আইনজীবীর নাম ছিল ন ন ফিদরিখস। যে মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার নাম স্তেপানিদা মুনিৎসিনা। বিয়ের আগে এই মেয়ের সঙ্গে ছিল ফিদরিখসের সম্পর্ক। দিনলিপিতে তলস্তোয় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ফিদরিখসের কাহিনি’।
বিয়ের পর তলস্তোয় কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েননি। ১৯০৮ সালের ‘গোপন দিনলিপি’-তে স্বাধীনভাবে তলস্তোয় লিখেছেন। আর বিয়ের ২৫ বছর পূর্তির পর তিনি বন্ধু পাভলো বিরুকোভকে বলেন, ‘তোমাকে বলছি, আমি কিংবা সোফিয়া, কেউ পরস্পরের বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি।’
তৃতীয় কিংবদন্তি
তলস্তোয়ের স্ত্রী সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না শুধু স্বামীর লেখাগুলো কপিই করতেন না, তিনি তার কিছু কিছুর লেখকও।
আসলে যা ঘটেছিল
সোফিয়া আন্দ্রেয়েভনা কিছু সমালোচনামূলক রচনা এবং স্মৃতিকথা লিখেছেন সত্য, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে একই উপন্যাসে তাঁরও অংশগ্রহণ আছে, এ রকম গুজবে কান দেবেন না। তবে এ কথা ঠিক, কপি করার সময় খুবই মনোযোগ দিয়ে স্বামীর লেখা পড়তেন তিনি। লেখা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতেন, কিংবা মার্জিনে মন্তব্য করতেন। তলস্তোয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং কখনো কখনো সেগুলো নতুন করে লিখতেন। তলস্তোয়ের লেখায় এত বৈচিত্র্য থাকত যে, সেটা পড়ার সময় রোমাঞ্চিত থাকতেন সোফিয়া।
কিন্তু লেখা শেষ হলে মূল সম্পাদনার কাজটা করতেন লিয়েফ তলস্তোয়ই।
চতুর্থ কিংবদন্তি
নিজের সন্তানদের ভালোবাসতেন না তলস্তোয়।
আসলে যা ঘটেছিল
তরুণ তলস্তোয় তাঁর পরিবারকে খুব ভালো বাসতেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি নিজের একটা পরিবার হবে, এই ভাবনাটি ভাবতেন। ১৮৬২ সালে বিয়ের পর থেকেই তাঁদের ঘরে সন্তান আসতে থাকে। মোট ১৩টি সন্তানের জনক-জননী হয়েছিলেন লিয়েফ আর সোফিয়া। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিল মোট আটজন। স্ত্রী সোফিয়ার সঙ্গে সন্তানদের লালনপালনের ভার লিয়েফও নিয়েছিলেন। তাদের পড়াশোনা করানো, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলা করা—সবই করতেন তিনি। বাচ্চাদের ভাষা সহজেই বুঝে নিতেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো—তিনি সরাসরি সন্তানদের আদর করতেন না। সন্তানেরা বুঝত, বাবা তাদের ভালোবাসেন, কিন্তু সম্ভবত সামনাসামনি আদর করতে লজ্জা পান।
পঞ্চম কিংবদন্তি
কোথাও যেতে হলে তলস্তোয় সবচেয়ে ভালোবাসতেন হাঁটতে।
আসলে যা ঘটেছিল
হাঁটতে তিনি পছন্দ করতেন, এটা ঠিক। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য নয়।
অনেকেই জানে, তিনি একবার মস্কো থেকে হাঁটতে হাটতে ইয়াস্নায়া পালইয়ানায় গিয়েছিলেন। অপতিন পুস্তিনেও গিয়েছিলেন একবার। কেন এতটা পথ হাঁটাহাঁটি? এ প্রশ্নের জবাবে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘আমি দেখতে চেয়েছি, কেমন আছে ঈশ্বরের পৃথিবী। সত্যিকারের খাঁটি পৃথিবী। আমি সেই পৃথিবী দেখতে যাইনি, যেটা আমরা গড়েছি নিজের হাতে, যে পৃথিবী থেকে আমরা নড়তেই চাই না। (তলস্তোয়ের লেখা চিঠি, ১৮৮১ সালের ১১ জুন)।
এবার বলা যাক, হাঁটাহাঁটি ছাড়াও তিনি পছন্দ করতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতে। ৬৭ বছর বয়সে বাইসাইকেল চালিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। বহু দূরের পথে যেতে হলে পোস্ট অফিসের গাড়ি কিংবা রেলগাড়ি ছিল তাঁর পছন্দ।
১৮৯৫ সালের ২২ নভেম্বর দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’
ষষ্ঠ কিংবদন্তি
তলস্তোয় থাকতেন খালি পায়, পরতেন কৃষকের পোশাক।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৯১ সালে ইলিয়া রেপিন স্কেচ করেছিলেন তলস্তোয়ের পুরো অবয়ব। এর ১০ বছর পর তিনি সেই স্কেচ থেকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন ছবি, যার নাম ‘খালি পায়ে লিয়েভ নিকোলায়েভিচ তলস্তোয়’। তলস্তোয়ের বড় ছেলে সের্গেই লেভাভভিচ সে সময় ছিল বাবার পাশে। তিনি লিখেছেন, ‘রেপিন বাবাকে খালি পায়ে এঁকেছে বলে মেজাজ খারাপ হয়েছিল বাবার। বাবা খুব কম সময়ই খালি পায়ে থাকতেন। তিনি বলেছিলেন, রেপিন কখনোই আমাকে খালি পায়ে দেখেনি। আরেকটু হলেই তো আমাকে প্যান্ট ছাড়া এঁকে ফেলত! সেটাই বাকি রেখেছে। (সের্গেই ল্ভোভোভিচ, পুরোনো দিনের কথা)। এ রকমই একটা ঘটনার দেখা পাওয়া যায় ১৯০৩ সালে পিতেরবুর্গে শিল্পীদের একটি প্রদর্শনীতে। সেখানে বুনিনের একটি ছবির দেখা মিলল, যার নাম ‘মাছ ধরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তলস্তোয় আর রেপিন একটা জামার ভিতরে, এবং তারা মাছ ধরছেন। ‘নোভোয়ে ভ্রেমিয়া’ পত্রিকার সাংবাদিককে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘বহুদিন ধরেই আমি জনগণের সম্পদ, তাই কিছুতেই এখন আর অবাক হই না।’
কৃষকের পোশাক তিনি পরতেন তখন, যখন মাঠে কাজ করতেন কিংবা পায়ে হেঁটে কোথাও যেতেন, কারণ, তিনি চাইতেন না, তিনি যে কাউন্ট তলস্তোয়, সেটা কারও চোখে পড়ুক। সবাই তাঁকে সাধারণ মানুষই ভাবুক। ইউরোপীয় পোশাক পরতেন মস্কো বা পিতেরবুর্গে বেড়াতে গেলে, সেখানকার অভিজাত সমাজের সঙ্গে পার্টিতে গেলে। সে পোশাক ছিল একটি ফ্রক কোট, নিখুঁত মাড় দেওয়া শার্ট, একটি কোট আর একটি টুপি। এগুলো তৈরি হতো নামীদামি টেইলারিং হাউসে। ‘আমার মনে আছে, কোনো এক কাজে বাবা মস্কো যাচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ফ্রককোট। সেটা তিনি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ফরাসি টেইলারিং হাউসে। (ই ল তলস্তোয়, আমার স্মৃতি)।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁর জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
তার আগে কিছু কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করতে। ওয়াহিদুল হকের পরামর্শমতো কৃষিবিজ্ঞান পরিবর্তন করে রুশ ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে ছিল বিদেশি সাহিত্য। ফলে রুশ সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য আর ভাষা—এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ঘটেছে। বিদেশি সাহিত্য শুরু হয়েছিল হোমার থেকে। এসে ঠেকেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। রুশ সাহিত্যও সে রকম একটা জায়গায় এসে ভিড়িয়েছিল তার নৌকা। ফলে, সোভিয়েত আমলের সাহিত্য এবং সাহিত্য নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদের হাঙ্গামার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলাম। তারও আগে পুশকিন, গোগল, তুর্গেনিয়েভ, দস্তইয়েভস্কি, তলস্তোয়েরা এসে জানান দিচ্ছিলেন, ‘রোসো বাছা, কত ধরনের জীবন নিয়ে খেল দেখাব, তা বুঝতেও পারবে না।’
তখন থেকেই নামগুলোয় কার পরে কে, সেটা জানা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। লেরমন্তভ যে পুশকিন আর গোগলের মাঝখানে বসবে, সেটাও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। রুশ স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল পুশকিনকে দিয়ে, শেষ হয়েছিল চেখভে এসে। এর পর পড়ানো হতো সোভিয়েত সাহিত্য। মাক্সিম গোর্কি আর মায়াকোভ্স্কির পর আমরা কিন্তু রূপালি যুগের কবি ও সাহিত্যিকদের পেয়েছি, যার মধ্যে আন্না আখমাতোভা, মারিনা স্তেতায়েভা, মান্দেলশ্তাম, গুমিলভদের পেয়েছি।
কেন এত কথা বলা? বলা এই কারণে যে, কারামজিন, রাদিশেভদের কাল পেরিয়ে আমরা যখন আধুনিক রুশ সাহিত্যে প্রবেশ করেছি, তখন তলস্তোয়কে আলাদা করে না চিনে বরং রুশ সাহিত্যের ইতিহাস দিয়ে রুশদের বোঝার চেষ্টা করেছি। আর তাই একটু একটু করে যখন শুধুই তলস্তোয় নিয়ে পড়াতে এলেন একজন শিক্ষক, তখন জানা ছিল না, তাঁর ঝুলিতে কী আছে।
১৯৮৬ সালে দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘শিল্প ও সাহিত্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী। সে অনুষ্ঠানেই বোধ হয় প্রথম শুনেছিলাম ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর নাম। কিংবা এমনও হতে পারে, বিটিভিতে যখন ধারাবাহিকভাবে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ দেখানো শুরু হলো, তখন কবির চৌধুরী ছবিটি শুরু হওয়ার আগে ভূমিকায় কিছু কথা বলেছিলেন। এখন আর মনে নেই, অনুষ্ঠানে নাকি ধারাবাহিক সিরিয়ালের আগে কবির চৌধুরীর বলা কথায় তলস্তোয়ের এই সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে পেরেছিলাম।
এর পর তো হাতে এল ‘পুনরুজ্জীবন’। প্রগতির বই। কিন্তু সেটা পড়া হয়ে ওঠেনি তখন। নেখলিউদোভ আর মাসলায়েভার নামগুলোই শুধু ঘুরেফিরে আসত মাথায়। কিন্তু বইয়ের দু মলাটের ভেতর আসলে কী রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতাম না কিছুই। আর আন্না কারেনিনা? না, বইটির নাম শুনেছিলাম কিনা, তা আর মনে পড়ে না।
রাশিয়ায় হলো তলস্তোয়ের প্রথম পাঠ। বিশাল বিশাল উপন্যাস পড়ার মতো সময় ছিল না। শিক্ষক বলে দিতেন, আমরা খুঁজে খুঁজে উপন্যাসের সে জায়গাগুলো পড়ে আসতাম। শিক্ষক বৈঠকি আড্ডার মতো সেই অধ্যায়ের আলোকে পুরো বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে আগ্রহ জাগলে লাইব্রেরি থেকে বই ধার নিয়ে পড়ে নেওয়া যেত।
একটা কথা বলব বলে এই ইতিহাস বর্ণনা। বলতে চাইছি, সোভিয়েত ইউনিয়নে না গেলে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশালতার সঙ্গে পরিচিত না হলে, সোভিয়েত জনগণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হলে রুশ উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। পশ্চিমা দুনিয়ার মতো তো নয় রুশ, ইউক্রেনীয়, বেলারুশের নাগরিকেরা। তাদের রক্তে স্লাভ জাতীয়তার যে বীজ রয়েছে, সেটা অন্যদের থেকে এদের আলাদা করে দেয়। এ কারণেই রুশ চরিত্রগুলোকে বোঝার জন্য রুশ জীবনের সংস্পর্শে আসতে পারলে ভালো। না এলে কি উপন্যাসের মজা পাওয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদি না-ই যেত, তাহলে তো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা বোঝার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকতে হতো দিনের পর দিন। তাতে এক জীবনে আর উপন্যাস পড়া হতো না। আসলে বলতে চেয়েছি, কাছে থেকে দেশটাকে দেখলে চরিত্রগুলো বোঝা সহজ হয়। না দেখলেও কল্পনার ভেলায় চড়ে ঘুরেই আসা যায় দেশটা।
অনেক হয়েছে। এবার অন্যদিকে মন দিই। এই স্বল্প পরিসরে তলস্তোয়কে নিয়ে সাহিত্য আলোচনা হতে পারে না। এক আন্না কারেনিনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই তো রাত পোহাবে। সে চেষ্টায় যাওয়ার একেবারেই চেষ্টা করব না। বুড়োর জন্মদিনে আমরা বুড়োকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু ভুল তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরাব।
প্রথম কিংবদন্তি
লিয়েফ তলস্তোয় জুয়ার তাশ পেটাতে গিয়ে বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৫৪ সালে তিনতলা বাগানবাড়িটি পাশের জমিদার গোরোখোভের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়িতেই কোনো এক সময় জন্মেছিলেন তলস্তোয়। কেন বিক্রি করা হয়েছিল বাড়িটা? বাড়িটা ছিল জীর্ণ। মেরামত করানো না হলে এ বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু মেরামত করানোর মতো টাকা তখন পরিবারে ছিল না। বাড়ি বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা পোক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
লিয়েফ তলস্তোয় তখন যুদ্ধের ময়দানে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলছে তখন। তলস্তোয়কে তাঁর বড় ভাই সের্গেই চিঠি পাঠাল, ‘বাড়িটা যদি মেরামতহীনভাবে আরও কয়েক বছর থাকে, তাহলে এই বাড়িকে শুধু সুভেনির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, আর কিছু নয়। তোমার হাতে যদি কখনো টাকা আসে, তুমি নতুন বাড়ি তৈরি করে নিতে পারবে। আমাদের অবস্থা তো এতটা খারাপ হয়ে যায়নি যে, থাকার জায়গা নেই। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের থাকার জায়গা আছে।’
বাড়ি যখন বিক্রি হচ্ছে, তখন লিয়েফের চাচাতো ভাই ভালেরিয়ান পেত্রোভিচ তলস্তোয় টাকার লেনদেন, আইনি কাগজপত্র ইত্যাদি তৈরি করেছেন। সে সময় ৫০০০ রুবল মানে ১৫০০ রৌপ্যমুদ্রায় বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছিল। সেনা অফিসারদের নিয়ে লিয়েফ তলস্তোয় যখন একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা বের করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন সেই টাকা তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাগাজিন বের করার জন্য সরকারি অনুমতি চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই ১৮৫৫ সালে সেই টাকা দিয়ে তাসের জুয়ার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। অর্থাৎ, বাগানবাড়িটা বিক্রি করার কোনো ইচ্ছাই কখনো ছিল না লিয়েফের। কিন্তু বিক্রির পর ম্যাগাজিন বের করতে না পেরে দেনা শোধ করেন।
দ্বিতীয় কিংবদন্তি
বিয়ের আগে ও পরে তলস্তোয়ের রয়েছে অনেক অনেক অবৈধ সন্তান।
আসলে যা ঘটেছিল
বিয়ের আগে দিনলিপিতে তলস্তোয় কৃষাণী, বেদে, বড়লোকের মেয়েদের ব্যাপারে তাঁর লোভাতুর দৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। তাদের নিয়ে তৃষ্ণার কথা জানিয়েছেন। তবে তলস্তোয়ের জীবনে খুবই কষ্টের ঘটনা হলো ২৩ বছর বয়সী বিবাহিত নারী আকসিনিয়া বাজিকিনায়ার সঙ্গে সম্পর্ক। ১৮৬০ সালে আকসিনিয়া তলস্তোয়ের ঔরসে জন্ম দেন তিমাফেই নামে ছেলের। সে যুগের ধারণায় তিমাফেই ছিলেন তলস্তোয়ের অবৈধ সন্তান। এর দুবছর পর তলস্তোয় বিয়ে করেন সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না বের্সকে।
১৮৮৯ সালে প্রকাশিত ‘ডেভিল’ নামের উপন্যাসে বিবাহিত জীবনের আগের জীবনের গল্প আছে। সে গল্প পড়ে পাড়াপড়শিরা বলতে থাকে, এ গল্প কাউন্ট তলস্তোয়ের বউয়ের সঙ্গে প্রতারণার গল্প। অথচ আসলে গল্পটা ছিল তুলার একজন আইনজীবীর জীবন থেকে নেওয়া। এই আইনজীবীর নাম ছিল ন ন ফিদরিখস। যে মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার নাম স্তেপানিদা মুনিৎসিনা। বিয়ের আগে এই মেয়ের সঙ্গে ছিল ফিদরিখসের সম্পর্ক। দিনলিপিতে তলস্তোয় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ফিদরিখসের কাহিনি’।
বিয়ের পর তলস্তোয় কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েননি। ১৯০৮ সালের ‘গোপন দিনলিপি’-তে স্বাধীনভাবে তলস্তোয় লিখেছেন। আর বিয়ের ২৫ বছর পূর্তির পর তিনি বন্ধু পাভলো বিরুকোভকে বলেন, ‘তোমাকে বলছি, আমি কিংবা সোফিয়া, কেউ পরস্পরের বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি।’
তৃতীয় কিংবদন্তি
তলস্তোয়ের স্ত্রী সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না শুধু স্বামীর লেখাগুলো কপিই করতেন না, তিনি তার কিছু কিছুর লেখকও।
আসলে যা ঘটেছিল
সোফিয়া আন্দ্রেয়েভনা কিছু সমালোচনামূলক রচনা এবং স্মৃতিকথা লিখেছেন সত্য, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে একই উপন্যাসে তাঁরও অংশগ্রহণ আছে, এ রকম গুজবে কান দেবেন না। তবে এ কথা ঠিক, কপি করার সময় খুবই মনোযোগ দিয়ে স্বামীর লেখা পড়তেন তিনি। লেখা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতেন, কিংবা মার্জিনে মন্তব্য করতেন। তলস্তোয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং কখনো কখনো সেগুলো নতুন করে লিখতেন। তলস্তোয়ের লেখায় এত বৈচিত্র্য থাকত যে, সেটা পড়ার সময় রোমাঞ্চিত থাকতেন সোফিয়া।
কিন্তু লেখা শেষ হলে মূল সম্পাদনার কাজটা করতেন লিয়েফ তলস্তোয়ই।
চতুর্থ কিংবদন্তি
নিজের সন্তানদের ভালোবাসতেন না তলস্তোয়।
আসলে যা ঘটেছিল
তরুণ তলস্তোয় তাঁর পরিবারকে খুব ভালো বাসতেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি নিজের একটা পরিবার হবে, এই ভাবনাটি ভাবতেন। ১৮৬২ সালে বিয়ের পর থেকেই তাঁদের ঘরে সন্তান আসতে থাকে। মোট ১৩টি সন্তানের জনক-জননী হয়েছিলেন লিয়েফ আর সোফিয়া। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিল মোট আটজন। স্ত্রী সোফিয়ার সঙ্গে সন্তানদের লালনপালনের ভার লিয়েফও নিয়েছিলেন। তাদের পড়াশোনা করানো, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলা করা—সবই করতেন তিনি। বাচ্চাদের ভাষা সহজেই বুঝে নিতেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো—তিনি সরাসরি সন্তানদের আদর করতেন না। সন্তানেরা বুঝত, বাবা তাদের ভালোবাসেন, কিন্তু সম্ভবত সামনাসামনি আদর করতে লজ্জা পান।
পঞ্চম কিংবদন্তি
কোথাও যেতে হলে তলস্তোয় সবচেয়ে ভালোবাসতেন হাঁটতে।
আসলে যা ঘটেছিল
হাঁটতে তিনি পছন্দ করতেন, এটা ঠিক। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য নয়।
অনেকেই জানে, তিনি একবার মস্কো থেকে হাঁটতে হাটতে ইয়াস্নায়া পালইয়ানায় গিয়েছিলেন। অপতিন পুস্তিনেও গিয়েছিলেন একবার। কেন এতটা পথ হাঁটাহাঁটি? এ প্রশ্নের জবাবে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘আমি দেখতে চেয়েছি, কেমন আছে ঈশ্বরের পৃথিবী। সত্যিকারের খাঁটি পৃথিবী। আমি সেই পৃথিবী দেখতে যাইনি, যেটা আমরা গড়েছি নিজের হাতে, যে পৃথিবী থেকে আমরা নড়তেই চাই না। (তলস্তোয়ের লেখা চিঠি, ১৮৮১ সালের ১১ জুন)।
এবার বলা যাক, হাঁটাহাঁটি ছাড়াও তিনি পছন্দ করতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতে। ৬৭ বছর বয়সে বাইসাইকেল চালিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। বহু দূরের পথে যেতে হলে পোস্ট অফিসের গাড়ি কিংবা রেলগাড়ি ছিল তাঁর পছন্দ।
১৮৯৫ সালের ২২ নভেম্বর দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’
ষষ্ঠ কিংবদন্তি
তলস্তোয় থাকতেন খালি পায়, পরতেন কৃষকের পোশাক।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৯১ সালে ইলিয়া রেপিন স্কেচ করেছিলেন তলস্তোয়ের পুরো অবয়ব। এর ১০ বছর পর তিনি সেই স্কেচ থেকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন ছবি, যার নাম ‘খালি পায়ে লিয়েভ নিকোলায়েভিচ তলস্তোয়’। তলস্তোয়ের বড় ছেলে সের্গেই লেভাভভিচ সে সময় ছিল বাবার পাশে। তিনি লিখেছেন, ‘রেপিন বাবাকে খালি পায়ে এঁকেছে বলে মেজাজ খারাপ হয়েছিল বাবার। বাবা খুব কম সময়ই খালি পায়ে থাকতেন। তিনি বলেছিলেন, রেপিন কখনোই আমাকে খালি পায়ে দেখেনি। আরেকটু হলেই তো আমাকে প্যান্ট ছাড়া এঁকে ফেলত! সেটাই বাকি রেখেছে। (সের্গেই ল্ভোভোভিচ, পুরোনো দিনের কথা)। এ রকমই একটা ঘটনার দেখা পাওয়া যায় ১৯০৩ সালে পিতেরবুর্গে শিল্পীদের একটি প্রদর্শনীতে। সেখানে বুনিনের একটি ছবির দেখা মিলল, যার নাম ‘মাছ ধরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তলস্তোয় আর রেপিন একটা জামার ভিতরে, এবং তারা মাছ ধরছেন। ‘নোভোয়ে ভ্রেমিয়া’ পত্রিকার সাংবাদিককে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘বহুদিন ধরেই আমি জনগণের সম্পদ, তাই কিছুতেই এখন আর অবাক হই না।’
কৃষকের পোশাক তিনি পরতেন তখন, যখন মাঠে কাজ করতেন কিংবা পায়ে হেঁটে কোথাও যেতেন, কারণ, তিনি চাইতেন না, তিনি যে কাউন্ট তলস্তোয়, সেটা কারও চোখে পড়ুক। সবাই তাঁকে সাধারণ মানুষই ভাবুক। ইউরোপীয় পোশাক পরতেন মস্কো বা পিতেরবুর্গে বেড়াতে গেলে, সেখানকার অভিজাত সমাজের সঙ্গে পার্টিতে গেলে। সে পোশাক ছিল একটি ফ্রক কোট, নিখুঁত মাড় দেওয়া শার্ট, একটি কোট আর একটি টুপি। এগুলো তৈরি হতো নামীদামি টেইলারিং হাউসে। ‘আমার মনে আছে, কোনো এক কাজে বাবা মস্কো যাচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ফ্রককোট। সেটা তিনি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ফরাসি টেইলারিং হাউসে। (ই ল তলস্তোয়, আমার স্মৃতি)।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে। শহীদদের সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার! রহনপুর সরকারি এ বি উচ্চবিদ্যালয়ে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। এখানেও শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। বধ্যভূমির যে স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানেই শহীদদের সম্মানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এই বধ্যভূমিটি রহনপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর নামে পরিচিত।
ছবি: সংগৃহীত

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই। তাঁর সাক্ষাৎকারে এমন কিছু প্রসঙ্গে আলাপ করেছি, যা হয়তো অত স্বচ্ছন্দে হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে করতে পারতাম না। যেমন ধরেন যৌনতা-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো। তবে আড্ডাবাজ ব্যক্তিত্বের জন্যও তাঁর সাক্ষাৎকারটি হয়েছে অনেক প্রাণবন্ত। তাঁকে তো বাম ঘরানার লেখকই ধরা হয়, মার্ক্সবাদে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তবে তিনি কিন্তু গোঁড়া মার্ক্সবাদী ছিলেন না।
আমি এ ব্যাপারটিও তাঁর সঙ্গে খোলাসা করার জন্য আলাপ করেছি। সোশ্যালিস্ট রিয়েলিজমের নামে একসময় একধরনের যান্ত্রিক মার্ক্সবাদ চর্চা হয়েছে সাহিত্যে। তিনি এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি এ সাক্ষাৎকারেই বলেছেন, এ দেশের মার্ক্সবাদীদের অনেক জ্ঞান থাকলেও কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাঁর লেখায় জীবনকে একেবারে ভেতর থেকে ধরার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক শ্রমিকশ্রেণির জয়গান গাননি, লাল পতাকা ওঠাননি। আমার সাক্ষাৎকারে সেক্সের সঙ্গে ক্লাস পজিশনের সম্পর্ক নিয়ে কথা আছে। তিনি এও বলছেন, তাঁর চিলেকোঠার সেপাইয়ের রিকশাশ্রমিক হাড্ডি খিজির যে চরিত্র, তাকে তিনি মহান করে দেখাননি, শুধু শ্রমিকশ্রেণির বিজয়গাথা তিনি দেখাননি।
বরং হাড্ডি খিজির যে একটি লুম্পেন চরিত্র, তার ভেতর যে নানা জোচ্চুরি আছে, সেটাকেও দেখিয়েছেন। এই যে মানুষকে টোটালিটিতে দেখতে এবং দেখাতে পারা, এটাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তি।
তো এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হতো তাঁর সঙ্গে, সেটাকেই আমি সাক্ষাৎকারে ধরতে চেষ্টা করেছি।
সূত্র: মঞ্জুরুল আজিম পলাশ কর্তৃক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘দূরগামী কথার ভেতর’, পৃষ্ঠা: ২৭-২৮।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেসম্পাদকীয়

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। মিরপুরের প্রশিকা ভবন থেকে কমার্স কলেজের দিকে যেতে একটি কালভার্ট ছিল। এখন যদিও রাস্তার মাঝে ঢাকা পড়েছে। সেখানেই ৬০টি বস্তায় প্রায় ৩৫০টি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আলী জামে মসজিদের পাশের কুয়ায় পাওয়া গিয়েছিল অসংখ্য লাশ। ৬ নম্বর লেনের শেষ প্রান্তের মাঠে স্তূপাকারে পড়ে থাকা দুই শতাধিক লাশ শিয়ালবাড়ি গণকবরে কবর দেওয়া হয়। এটি ছিল ১০ কাঠা জমির ওপর। বেশির ভাগই দখল হয়ে গেছে। যেটুকু অংশ বাকি আছে, তা বর্তমানে মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। শিয়ালবাড়ির যেসব কুয়ায় শহীদদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এখন বহুতল ভবন, কারখানা, শপিং মল।
তথ্য ও ছবি: মিরপুরের ১০টি বধ্যভূমি, মিরাজ মিজু

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।
এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’
আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।
থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’
এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’
কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।
এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।
আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।
থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।
ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’
উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’
এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’
ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।
থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’
সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’
তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’
থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’
বিবিসি থেকে অনূদিত

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশনের কাছেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সহযোগীদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী রহনপুর ও আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং অনেক সাধারণ বাঙালিকে এই বধ্যভূমিতে বিভিন্ন সময় ধরে এনে হত্যা করে।
৪ দিন আগে
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার। হাসান আজিজুল হকের সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। পরে তাঁর সঙ্গে প্রচুর আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ মানুষ। আর তাঁর সঙ্গে জগৎ সংসারের যেকোনো বিষয়ে আলাপ করা যেত। এমন কোনো বিষয় নেই যাতে তাঁর আগ্রহ নেই।
৫ দিন আগে
১৯৭১ সালে পুরো বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু রাজধানীর মিরপুর তখনো শত্রুদের দখলে। পরের বছর জানুয়ারিতে শত্রুমুক্ত হলে একে একে সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে বধ্যভূমিগুলোর। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বধ্যভূমি মিরপুর অঞ্চলে। আর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায়...
৬ দিন আগে