জাহীদ রেজা নূর

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁর জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
তার আগে কিছু কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করতে। ওয়াহিদুল হকের পরামর্শমতো কৃষিবিজ্ঞান পরিবর্তন করে রুশ ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে ছিল বিদেশি সাহিত্য। ফলে রুশ সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য আর ভাষা—এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ঘটেছে। বিদেশি সাহিত্য শুরু হয়েছিল হোমার থেকে। এসে ঠেকেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। রুশ সাহিত্যও সে রকম একটা জায়গায় এসে ভিড়িয়েছিল তার নৌকা। ফলে, সোভিয়েত আমলের সাহিত্য এবং সাহিত্য নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদের হাঙ্গামার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলাম। তারও আগে পুশকিন, গোগল, তুর্গেনিয়েভ, দস্তইয়েভস্কি, তলস্তোয়েরা এসে জানান দিচ্ছিলেন, ‘রোসো বাছা, কত ধরনের জীবন নিয়ে খেল দেখাব, তা বুঝতেও পারবে না।’
তখন থেকেই নামগুলোয় কার পরে কে, সেটা জানা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। লেরমন্তভ যে পুশকিন আর গোগলের মাঝখানে বসবে, সেটাও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। রুশ স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল পুশকিনকে দিয়ে, শেষ হয়েছিল চেখভে এসে। এর পর পড়ানো হতো সোভিয়েত সাহিত্য। মাক্সিম গোর্কি আর মায়াকোভ্স্কির পর আমরা কিন্তু রূপালি যুগের কবি ও সাহিত্যিকদের পেয়েছি, যার মধ্যে আন্না আখমাতোভা, মারিনা স্তেতায়েভা, মান্দেলশ্তাম, গুমিলভদের পেয়েছি।
কেন এত কথা বলা? বলা এই কারণে যে, কারামজিন, রাদিশেভদের কাল পেরিয়ে আমরা যখন আধুনিক রুশ সাহিত্যে প্রবেশ করেছি, তখন তলস্তোয়কে আলাদা করে না চিনে বরং রুশ সাহিত্যের ইতিহাস দিয়ে রুশদের বোঝার চেষ্টা করেছি। আর তাই একটু একটু করে যখন শুধুই তলস্তোয় নিয়ে পড়াতে এলেন একজন শিক্ষক, তখন জানা ছিল না, তাঁর ঝুলিতে কী আছে।
১৯৮৬ সালে দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘শিল্প ও সাহিত্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী। সে অনুষ্ঠানেই বোধ হয় প্রথম শুনেছিলাম ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর নাম। কিংবা এমনও হতে পারে, বিটিভিতে যখন ধারাবাহিকভাবে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ দেখানো শুরু হলো, তখন কবির চৌধুরী ছবিটি শুরু হওয়ার আগে ভূমিকায় কিছু কথা বলেছিলেন। এখন আর মনে নেই, অনুষ্ঠানে নাকি ধারাবাহিক সিরিয়ালের আগে কবির চৌধুরীর বলা কথায় তলস্তোয়ের এই সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে পেরেছিলাম।
এর পর তো হাতে এল ‘পুনরুজ্জীবন’। প্রগতির বই। কিন্তু সেটা পড়া হয়ে ওঠেনি তখন। নেখলিউদোভ আর মাসলায়েভার নামগুলোই শুধু ঘুরেফিরে আসত মাথায়। কিন্তু বইয়ের দু মলাটের ভেতর আসলে কী রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতাম না কিছুই। আর আন্না কারেনিনা? না, বইটির নাম শুনেছিলাম কিনা, তা আর মনে পড়ে না।
রাশিয়ায় হলো তলস্তোয়ের প্রথম পাঠ। বিশাল বিশাল উপন্যাস পড়ার মতো সময় ছিল না। শিক্ষক বলে দিতেন, আমরা খুঁজে খুঁজে উপন্যাসের সে জায়গাগুলো পড়ে আসতাম। শিক্ষক বৈঠকি আড্ডার মতো সেই অধ্যায়ের আলোকে পুরো বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে আগ্রহ জাগলে লাইব্রেরি থেকে বই ধার নিয়ে পড়ে নেওয়া যেত।
একটা কথা বলব বলে এই ইতিহাস বর্ণনা। বলতে চাইছি, সোভিয়েত ইউনিয়নে না গেলে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশালতার সঙ্গে পরিচিত না হলে, সোভিয়েত জনগণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হলে রুশ উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। পশ্চিমা দুনিয়ার মতো তো নয় রুশ, ইউক্রেনীয়, বেলারুশের নাগরিকেরা। তাদের রক্তে স্লাভ জাতীয়তার যে বীজ রয়েছে, সেটা অন্যদের থেকে এদের আলাদা করে দেয়। এ কারণেই রুশ চরিত্রগুলোকে বোঝার জন্য রুশ জীবনের সংস্পর্শে আসতে পারলে ভালো। না এলে কি উপন্যাসের মজা পাওয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদি না-ই যেত, তাহলে তো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা বোঝার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকতে হতো দিনের পর দিন। তাতে এক জীবনে আর উপন্যাস পড়া হতো না। আসলে বলতে চেয়েছি, কাছে থেকে দেশটাকে দেখলে চরিত্রগুলো বোঝা সহজ হয়। না দেখলেও কল্পনার ভেলায় চড়ে ঘুরেই আসা যায় দেশটা।
অনেক হয়েছে। এবার অন্যদিকে মন দিই। এই স্বল্প পরিসরে তলস্তোয়কে নিয়ে সাহিত্য আলোচনা হতে পারে না। এক আন্না কারেনিনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই তো রাত পোহাবে। সে চেষ্টায় যাওয়ার একেবারেই চেষ্টা করব না। বুড়োর জন্মদিনে আমরা বুড়োকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু ভুল তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরাব।
প্রথম কিংবদন্তি
লিয়েফ তলস্তোয় জুয়ার তাশ পেটাতে গিয়ে বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৫৪ সালে তিনতলা বাগানবাড়িটি পাশের জমিদার গোরোখোভের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়িতেই কোনো এক সময় জন্মেছিলেন তলস্তোয়। কেন বিক্রি করা হয়েছিল বাড়িটা? বাড়িটা ছিল জীর্ণ। মেরামত করানো না হলে এ বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু মেরামত করানোর মতো টাকা তখন পরিবারে ছিল না। বাড়ি বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা পোক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
লিয়েফ তলস্তোয় তখন যুদ্ধের ময়দানে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলছে তখন। তলস্তোয়কে তাঁর বড় ভাই সের্গেই চিঠি পাঠাল, ‘বাড়িটা যদি মেরামতহীনভাবে আরও কয়েক বছর থাকে, তাহলে এই বাড়িকে শুধু সুভেনির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, আর কিছু নয়। তোমার হাতে যদি কখনো টাকা আসে, তুমি নতুন বাড়ি তৈরি করে নিতে পারবে। আমাদের অবস্থা তো এতটা খারাপ হয়ে যায়নি যে, থাকার জায়গা নেই। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের থাকার জায়গা আছে।’
বাড়ি যখন বিক্রি হচ্ছে, তখন লিয়েফের চাচাতো ভাই ভালেরিয়ান পেত্রোভিচ তলস্তোয় টাকার লেনদেন, আইনি কাগজপত্র ইত্যাদি তৈরি করেছেন। সে সময় ৫০০০ রুবল মানে ১৫০০ রৌপ্যমুদ্রায় বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছিল। সেনা অফিসারদের নিয়ে লিয়েফ তলস্তোয় যখন একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা বের করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন সেই টাকা তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাগাজিন বের করার জন্য সরকারি অনুমতি চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই ১৮৫৫ সালে সেই টাকা দিয়ে তাসের জুয়ার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। অর্থাৎ, বাগানবাড়িটা বিক্রি করার কোনো ইচ্ছাই কখনো ছিল না লিয়েফের। কিন্তু বিক্রির পর ম্যাগাজিন বের করতে না পেরে দেনা শোধ করেন।
দ্বিতীয় কিংবদন্তি
বিয়ের আগে ও পরে তলস্তোয়ের রয়েছে অনেক অনেক অবৈধ সন্তান।
আসলে যা ঘটেছিল
বিয়ের আগে দিনলিপিতে তলস্তোয় কৃষাণী, বেদে, বড়লোকের মেয়েদের ব্যাপারে তাঁর লোভাতুর দৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। তাদের নিয়ে তৃষ্ণার কথা জানিয়েছেন। তবে তলস্তোয়ের জীবনে খুবই কষ্টের ঘটনা হলো ২৩ বছর বয়সী বিবাহিত নারী আকসিনিয়া বাজিকিনায়ার সঙ্গে সম্পর্ক। ১৮৬০ সালে আকসিনিয়া তলস্তোয়ের ঔরসে জন্ম দেন তিমাফেই নামে ছেলের। সে যুগের ধারণায় তিমাফেই ছিলেন তলস্তোয়ের অবৈধ সন্তান। এর দুবছর পর তলস্তোয় বিয়ে করেন সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না বের্সকে।
১৮৮৯ সালে প্রকাশিত ‘ডেভিল’ নামের উপন্যাসে বিবাহিত জীবনের আগের জীবনের গল্প আছে। সে গল্প পড়ে পাড়াপড়শিরা বলতে থাকে, এ গল্প কাউন্ট তলস্তোয়ের বউয়ের সঙ্গে প্রতারণার গল্প। অথচ আসলে গল্পটা ছিল তুলার একজন আইনজীবীর জীবন থেকে নেওয়া। এই আইনজীবীর নাম ছিল ন ন ফিদরিখস। যে মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার নাম স্তেপানিদা মুনিৎসিনা। বিয়ের আগে এই মেয়ের সঙ্গে ছিল ফিদরিখসের সম্পর্ক। দিনলিপিতে তলস্তোয় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ফিদরিখসের কাহিনি’।
বিয়ের পর তলস্তোয় কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েননি। ১৯০৮ সালের ‘গোপন দিনলিপি’-তে স্বাধীনভাবে তলস্তোয় লিখেছেন। আর বিয়ের ২৫ বছর পূর্তির পর তিনি বন্ধু পাভলো বিরুকোভকে বলেন, ‘তোমাকে বলছি, আমি কিংবা সোফিয়া, কেউ পরস্পরের বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি।’
তৃতীয় কিংবদন্তি
তলস্তোয়ের স্ত্রী সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না শুধু স্বামীর লেখাগুলো কপিই করতেন না, তিনি তার কিছু কিছুর লেখকও।
আসলে যা ঘটেছিল
সোফিয়া আন্দ্রেয়েভনা কিছু সমালোচনামূলক রচনা এবং স্মৃতিকথা লিখেছেন সত্য, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে একই উপন্যাসে তাঁরও অংশগ্রহণ আছে, এ রকম গুজবে কান দেবেন না। তবে এ কথা ঠিক, কপি করার সময় খুবই মনোযোগ দিয়ে স্বামীর লেখা পড়তেন তিনি। লেখা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতেন, কিংবা মার্জিনে মন্তব্য করতেন। তলস্তোয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং কখনো কখনো সেগুলো নতুন করে লিখতেন। তলস্তোয়ের লেখায় এত বৈচিত্র্য থাকত যে, সেটা পড়ার সময় রোমাঞ্চিত থাকতেন সোফিয়া।
কিন্তু লেখা শেষ হলে মূল সম্পাদনার কাজটা করতেন লিয়েফ তলস্তোয়ই।
চতুর্থ কিংবদন্তি
নিজের সন্তানদের ভালোবাসতেন না তলস্তোয়।
আসলে যা ঘটেছিল
তরুণ তলস্তোয় তাঁর পরিবারকে খুব ভালো বাসতেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি নিজের একটা পরিবার হবে, এই ভাবনাটি ভাবতেন। ১৮৬২ সালে বিয়ের পর থেকেই তাঁদের ঘরে সন্তান আসতে থাকে। মোট ১৩টি সন্তানের জনক-জননী হয়েছিলেন লিয়েফ আর সোফিয়া। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিল মোট আটজন। স্ত্রী সোফিয়ার সঙ্গে সন্তানদের লালনপালনের ভার লিয়েফও নিয়েছিলেন। তাদের পড়াশোনা করানো, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলা করা—সবই করতেন তিনি। বাচ্চাদের ভাষা সহজেই বুঝে নিতেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো—তিনি সরাসরি সন্তানদের আদর করতেন না। সন্তানেরা বুঝত, বাবা তাদের ভালোবাসেন, কিন্তু সম্ভবত সামনাসামনি আদর করতে লজ্জা পান।
পঞ্চম কিংবদন্তি
কোথাও যেতে হলে তলস্তোয় সবচেয়ে ভালোবাসতেন হাঁটতে।
আসলে যা ঘটেছিল
হাঁটতে তিনি পছন্দ করতেন, এটা ঠিক। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য নয়।
অনেকেই জানে, তিনি একবার মস্কো থেকে হাঁটতে হাটতে ইয়াস্নায়া পালইয়ানায় গিয়েছিলেন। অপতিন পুস্তিনেও গিয়েছিলেন একবার। কেন এতটা পথ হাঁটাহাঁটি? এ প্রশ্নের জবাবে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘আমি দেখতে চেয়েছি, কেমন আছে ঈশ্বরের পৃথিবী। সত্যিকারের খাঁটি পৃথিবী। আমি সেই পৃথিবী দেখতে যাইনি, যেটা আমরা গড়েছি নিজের হাতে, যে পৃথিবী থেকে আমরা নড়তেই চাই না। (তলস্তোয়ের লেখা চিঠি, ১৮৮১ সালের ১১ জুন)।
এবার বলা যাক, হাঁটাহাঁটি ছাড়াও তিনি পছন্দ করতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতে। ৬৭ বছর বয়সে বাইসাইকেল চালিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। বহু দূরের পথে যেতে হলে পোস্ট অফিসের গাড়ি কিংবা রেলগাড়ি ছিল তাঁর পছন্দ।
১৮৯৫ সালের ২২ নভেম্বর দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’
ষষ্ঠ কিংবদন্তি
তলস্তোয় থাকতেন খালি পায়, পরতেন কৃষকের পোশাক।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৯১ সালে ইলিয়া রেপিন স্কেচ করেছিলেন তলস্তোয়ের পুরো অবয়ব। এর ১০ বছর পর তিনি সেই স্কেচ থেকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন ছবি, যার নাম ‘খালি পায়ে লিয়েভ নিকোলায়েভিচ তলস্তোয়’। তলস্তোয়ের বড় ছেলে সের্গেই লেভাভভিচ সে সময় ছিল বাবার পাশে। তিনি লিখেছেন, ‘রেপিন বাবাকে খালি পায়ে এঁকেছে বলে মেজাজ খারাপ হয়েছিল বাবার। বাবা খুব কম সময়ই খালি পায়ে থাকতেন। তিনি বলেছিলেন, রেপিন কখনোই আমাকে খালি পায়ে দেখেনি। আরেকটু হলেই তো আমাকে প্যান্ট ছাড়া এঁকে ফেলত! সেটাই বাকি রেখেছে। (সের্গেই ল্ভোভোভিচ, পুরোনো দিনের কথা)। এ রকমই একটা ঘটনার দেখা পাওয়া যায় ১৯০৩ সালে পিতেরবুর্গে শিল্পীদের একটি প্রদর্শনীতে। সেখানে বুনিনের একটি ছবির দেখা মিলল, যার নাম ‘মাছ ধরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তলস্তোয় আর রেপিন একটা জামার ভিতরে, এবং তারা মাছ ধরছেন। ‘নোভোয়ে ভ্রেমিয়া’ পত্রিকার সাংবাদিককে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘বহুদিন ধরেই আমি জনগণের সম্পদ, তাই কিছুতেই এখন আর অবাক হই না।’
কৃষকের পোশাক তিনি পরতেন তখন, যখন মাঠে কাজ করতেন কিংবা পায়ে হেঁটে কোথাও যেতেন, কারণ, তিনি চাইতেন না, তিনি যে কাউন্ট তলস্তোয়, সেটা কারও চোখে পড়ুক। সবাই তাঁকে সাধারণ মানুষই ভাবুক। ইউরোপীয় পোশাক পরতেন মস্কো বা পিতেরবুর্গে বেড়াতে গেলে, সেখানকার অভিজাত সমাজের সঙ্গে পার্টিতে গেলে। সে পোশাক ছিল একটি ফ্রক কোট, নিখুঁত মাড় দেওয়া শার্ট, একটি কোট আর একটি টুপি। এগুলো তৈরি হতো নামীদামি টেইলারিং হাউসে। ‘আমার মনে আছে, কোনো এক কাজে বাবা মস্কো যাচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ফ্রককোট। সেটা তিনি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ফরাসি টেইলারিং হাউসে। (ই ল তলস্তোয়, আমার স্মৃতি)।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁর জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
তার আগে কিছু কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলাম পড়াশোনা করতে। ওয়াহিদুল হকের পরামর্শমতো কৃষিবিজ্ঞান পরিবর্তন করে রুশ ভাষা ও সাহিত্যে পড়াশোনা করেছি। সেই সঙ্গে ছিল বিদেশি সাহিত্য। ফলে রুশ সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য আর ভাষা—এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ঘটেছে। বিদেশি সাহিত্য শুরু হয়েছিল হোমার থেকে। এসে ঠেকেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। রুশ সাহিত্যও সে রকম একটা জায়গায় এসে ভিড়িয়েছিল তার নৌকা। ফলে, সোভিয়েত আমলের সাহিত্য এবং সাহিত্য নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদের হাঙ্গামার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলাম। তারও আগে পুশকিন, গোগল, তুর্গেনিয়েভ, দস্তইয়েভস্কি, তলস্তোয়েরা এসে জানান দিচ্ছিলেন, ‘রোসো বাছা, কত ধরনের জীবন নিয়ে খেল দেখাব, তা বুঝতেও পারবে না।’
তখন থেকেই নামগুলোয় কার পরে কে, সেটা জানা হয়ে গিয়েছিল আমাদের। লেরমন্তভ যে পুশকিন আর গোগলের মাঝখানে বসবে, সেটাও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। রুশ স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল পুশকিনকে দিয়ে, শেষ হয়েছিল চেখভে এসে। এর পর পড়ানো হতো সোভিয়েত সাহিত্য। মাক্সিম গোর্কি আর মায়াকোভ্স্কির পর আমরা কিন্তু রূপালি যুগের কবি ও সাহিত্যিকদের পেয়েছি, যার মধ্যে আন্না আখমাতোভা, মারিনা স্তেতায়েভা, মান্দেলশ্তাম, গুমিলভদের পেয়েছি।
কেন এত কথা বলা? বলা এই কারণে যে, কারামজিন, রাদিশেভদের কাল পেরিয়ে আমরা যখন আধুনিক রুশ সাহিত্যে প্রবেশ করেছি, তখন তলস্তোয়কে আলাদা করে না চিনে বরং রুশ সাহিত্যের ইতিহাস দিয়ে রুশদের বোঝার চেষ্টা করেছি। আর তাই একটু একটু করে যখন শুধুই তলস্তোয় নিয়ে পড়াতে এলেন একজন শিক্ষক, তখন জানা ছিল না, তাঁর ঝুলিতে কী আছে।
১৯৮৬ সালে দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যাওয়ার আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘শিল্প ও সাহিত্য’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন অধ্যাপক কবির চৌধুরী। সে অনুষ্ঠানেই বোধ হয় প্রথম শুনেছিলাম ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর নাম। কিংবা এমনও হতে পারে, বিটিভিতে যখন ধারাবাহিকভাবে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ দেখানো শুরু হলো, তখন কবির চৌধুরী ছবিটি শুরু হওয়ার আগে ভূমিকায় কিছু কথা বলেছিলেন। এখন আর মনে নেই, অনুষ্ঠানে নাকি ধারাবাহিক সিরিয়ালের আগে কবির চৌধুরীর বলা কথায় তলস্তোয়ের এই সৃষ্টির ব্যাপারে জানতে পেরেছিলাম।
এর পর তো হাতে এল ‘পুনরুজ্জীবন’। প্রগতির বই। কিন্তু সেটা পড়া হয়ে ওঠেনি তখন। নেখলিউদোভ আর মাসলায়েভার নামগুলোই শুধু ঘুরেফিরে আসত মাথায়। কিন্তু বইয়ের দু মলাটের ভেতর আসলে কী রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতাম না কিছুই। আর আন্না কারেনিনা? না, বইটির নাম শুনেছিলাম কিনা, তা আর মনে পড়ে না।
রাশিয়ায় হলো তলস্তোয়ের প্রথম পাঠ। বিশাল বিশাল উপন্যাস পড়ার মতো সময় ছিল না। শিক্ষক বলে দিতেন, আমরা খুঁজে খুঁজে উপন্যাসের সে জায়গাগুলো পড়ে আসতাম। শিক্ষক বৈঠকি আড্ডার মতো সেই অধ্যায়ের আলোকে পুরো বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে আগ্রহ জাগলে লাইব্রেরি থেকে বই ধার নিয়ে পড়ে নেওয়া যেত।
একটা কথা বলব বলে এই ইতিহাস বর্ণনা। বলতে চাইছি, সোভিয়েত ইউনিয়নে না গেলে, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশালতার সঙ্গে পরিচিত না হলে, সোভিয়েত জনগণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হলে রুশ উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। পশ্চিমা দুনিয়ার মতো তো নয় রুশ, ইউক্রেনীয়, বেলারুশের নাগরিকেরা। তাদের রক্তে স্লাভ জাতীয়তার যে বীজ রয়েছে, সেটা অন্যদের থেকে এদের আলাদা করে দেয়। এ কারণেই রুশ চরিত্রগুলোকে বোঝার জন্য রুশ জীবনের সংস্পর্শে আসতে পারলে ভালো। না এলে কি উপন্যাসের মজা পাওয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদি না-ই যেত, তাহলে তো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা বোঝার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকতে হতো দিনের পর দিন। তাতে এক জীবনে আর উপন্যাস পড়া হতো না। আসলে বলতে চেয়েছি, কাছে থেকে দেশটাকে দেখলে চরিত্রগুলো বোঝা সহজ হয়। না দেখলেও কল্পনার ভেলায় চড়ে ঘুরেই আসা যায় দেশটা।
অনেক হয়েছে। এবার অন্যদিকে মন দিই। এই স্বল্প পরিসরে তলস্তোয়কে নিয়ে সাহিত্য আলোচনা হতে পারে না। এক আন্না কারেনিনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই তো রাত পোহাবে। সে চেষ্টায় যাওয়ার একেবারেই চেষ্টা করব না। বুড়োর জন্মদিনে আমরা বুড়োকে নিয়ে ছড়িয়ে থাকা কিছু ভুল তথ্যের দিকে দৃষ্টি ফেরাব।
প্রথম কিংবদন্তি
লিয়েফ তলস্তোয় জুয়ার তাশ পেটাতে গিয়ে বাগানবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৫৪ সালে তিনতলা বাগানবাড়িটি পাশের জমিদার গোরোখোভের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়িতেই কোনো এক সময় জন্মেছিলেন তলস্তোয়। কেন বিক্রি করা হয়েছিল বাড়িটা? বাড়িটা ছিল জীর্ণ। মেরামত করানো না হলে এ বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু মেরামত করানোর মতো টাকা তখন পরিবারে ছিল না। বাড়ি বিক্রি করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা পোক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
লিয়েফ তলস্তোয় তখন যুদ্ধের ময়দানে, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলছে তখন। তলস্তোয়কে তাঁর বড় ভাই সের্গেই চিঠি পাঠাল, ‘বাড়িটা যদি মেরামতহীনভাবে আরও কয়েক বছর থাকে, তাহলে এই বাড়িকে শুধু সুভেনির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, আর কিছু নয়। তোমার হাতে যদি কখনো টাকা আসে, তুমি নতুন বাড়ি তৈরি করে নিতে পারবে। আমাদের অবস্থা তো এতটা খারাপ হয়ে যায়নি যে, থাকার জায়গা নেই। ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের থাকার জায়গা আছে।’
বাড়ি যখন বিক্রি হচ্ছে, তখন লিয়েফের চাচাতো ভাই ভালেরিয়ান পেত্রোভিচ তলস্তোয় টাকার লেনদেন, আইনি কাগজপত্র ইত্যাদি তৈরি করেছেন। সে সময় ৫০০০ রুবল মানে ১৫০০ রৌপ্যমুদ্রায় বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছিল। সেনা অফিসারদের নিয়ে লিয়েফ তলস্তোয় যখন একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা বের করবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন সেই টাকা তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাগাজিন বের করার জন্য সরকারি অনুমতি চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। তাই ১৮৫৫ সালে সেই টাকা দিয়ে তাসের জুয়ার টাকা পরিশোধ করেন তিনি। অর্থাৎ, বাগানবাড়িটা বিক্রি করার কোনো ইচ্ছাই কখনো ছিল না লিয়েফের। কিন্তু বিক্রির পর ম্যাগাজিন বের করতে না পেরে দেনা শোধ করেন।
দ্বিতীয় কিংবদন্তি
বিয়ের আগে ও পরে তলস্তোয়ের রয়েছে অনেক অনেক অবৈধ সন্তান।
আসলে যা ঘটেছিল
বিয়ের আগে দিনলিপিতে তলস্তোয় কৃষাণী, বেদে, বড়লোকের মেয়েদের ব্যাপারে তাঁর লোভাতুর দৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। তাদের নিয়ে তৃষ্ণার কথা জানিয়েছেন। তবে তলস্তোয়ের জীবনে খুবই কষ্টের ঘটনা হলো ২৩ বছর বয়সী বিবাহিত নারী আকসিনিয়া বাজিকিনায়ার সঙ্গে সম্পর্ক। ১৮৬০ সালে আকসিনিয়া তলস্তোয়ের ঔরসে জন্ম দেন তিমাফেই নামে ছেলের। সে যুগের ধারণায় তিমাফেই ছিলেন তলস্তোয়ের অবৈধ সন্তান। এর দুবছর পর তলস্তোয় বিয়ে করেন সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না বের্সকে।
১৮৮৯ সালে প্রকাশিত ‘ডেভিল’ নামের উপন্যাসে বিবাহিত জীবনের আগের জীবনের গল্প আছে। সে গল্প পড়ে পাড়াপড়শিরা বলতে থাকে, এ গল্প কাউন্ট তলস্তোয়ের বউয়ের সঙ্গে প্রতারণার গল্প। অথচ আসলে গল্পটা ছিল তুলার একজন আইনজীবীর জীবন থেকে নেওয়া। এই আইনজীবীর নাম ছিল ন ন ফিদরিখস। যে মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার নাম স্তেপানিদা মুনিৎসিনা। বিয়ের আগে এই মেয়ের সঙ্গে ছিল ফিদরিখসের সম্পর্ক। দিনলিপিতে তলস্তোয় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ফিদরিখসের কাহিনি’।
বিয়ের পর তলস্তোয় কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েননি। ১৯০৮ সালের ‘গোপন দিনলিপি’-তে স্বাধীনভাবে তলস্তোয় লিখেছেন। আর বিয়ের ২৫ বছর পূর্তির পর তিনি বন্ধু পাভলো বিরুকোভকে বলেন, ‘তোমাকে বলছি, আমি কিংবা সোফিয়া, কেউ পরস্পরের বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি।’
তৃতীয় কিংবদন্তি
তলস্তোয়ের স্ত্রী সোফিয়া আন্দ্রেয়েভ্না শুধু স্বামীর লেখাগুলো কপিই করতেন না, তিনি তার কিছু কিছুর লেখকও।
আসলে যা ঘটেছিল
সোফিয়া আন্দ্রেয়েভনা কিছু সমালোচনামূলক রচনা এবং স্মৃতিকথা লিখেছেন সত্য, কিন্তু স্বামীর সঙ্গে একই উপন্যাসে তাঁরও অংশগ্রহণ আছে, এ রকম গুজবে কান দেবেন না। তবে এ কথা ঠিক, কপি করার সময় খুবই মনোযোগ দিয়ে স্বামীর লেখা পড়তেন তিনি। লেখা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে সেখানে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতেন, কিংবা মার্জিনে মন্তব্য করতেন। তলস্তোয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতেন এবং কখনো কখনো সেগুলো নতুন করে লিখতেন। তলস্তোয়ের লেখায় এত বৈচিত্র্য থাকত যে, সেটা পড়ার সময় রোমাঞ্চিত থাকতেন সোফিয়া।
কিন্তু লেখা শেষ হলে মূল সম্পাদনার কাজটা করতেন লিয়েফ তলস্তোয়ই।
চতুর্থ কিংবদন্তি
নিজের সন্তানদের ভালোবাসতেন না তলস্তোয়।
আসলে যা ঘটেছিল
তরুণ তলস্তোয় তাঁর পরিবারকে খুব ভালো বাসতেন। তরুণ বয়স থেকেই তিনি নিজের একটা পরিবার হবে, এই ভাবনাটি ভাবতেন। ১৮৬২ সালে বিয়ের পর থেকেই তাঁদের ঘরে সন্তান আসতে থাকে। মোট ১৩টি সন্তানের জনক-জননী হয়েছিলেন লিয়েফ আর সোফিয়া। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিল মোট আটজন। স্ত্রী সোফিয়ার সঙ্গে সন্তানদের লালনপালনের ভার লিয়েফও নিয়েছিলেন। তাদের পড়াশোনা করানো, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলা করা—সবই করতেন তিনি। বাচ্চাদের ভাষা সহজেই বুঝে নিতেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো—তিনি সরাসরি সন্তানদের আদর করতেন না। সন্তানেরা বুঝত, বাবা তাদের ভালোবাসেন, কিন্তু সম্ভবত সামনাসামনি আদর করতে লজ্জা পান।
পঞ্চম কিংবদন্তি
কোথাও যেতে হলে তলস্তোয় সবচেয়ে ভালোবাসতেন হাঁটতে।
আসলে যা ঘটেছিল
হাঁটতে তিনি পছন্দ করতেন, এটা ঠিক। কিন্তু এটাই একমাত্র সত্য নয়।
অনেকেই জানে, তিনি একবার মস্কো থেকে হাঁটতে হাটতে ইয়াস্নায়া পালইয়ানায় গিয়েছিলেন। অপতিন পুস্তিনেও গিয়েছিলেন একবার। কেন এতটা পথ হাঁটাহাঁটি? এ প্রশ্নের জবাবে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘আমি দেখতে চেয়েছি, কেমন আছে ঈশ্বরের পৃথিবী। সত্যিকারের খাঁটি পৃথিবী। আমি সেই পৃথিবী দেখতে যাইনি, যেটা আমরা গড়েছি নিজের হাতে, যে পৃথিবী থেকে আমরা নড়তেই চাই না। (তলস্তোয়ের লেখা চিঠি, ১৮৮১ সালের ১১ জুন)।
এবার বলা যাক, হাঁটাহাঁটি ছাড়াও তিনি পছন্দ করতেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ভ্রমণ করতে। ৬৭ বছর বয়সে বাইসাইকেল চালিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। বহু দূরের পথে যেতে হলে পোস্ট অফিসের গাড়ি কিংবা রেলগাড়ি ছিল তাঁর পছন্দ।
১৮৯৫ সালের ২২ নভেম্বর দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে পথ পাড়ি দিচ্ছি।’
ষষ্ঠ কিংবদন্তি
তলস্তোয় থাকতেন খালি পায়, পরতেন কৃষকের পোশাক।
আসলে যা ঘটেছিল
১৮৯১ সালে ইলিয়া রেপিন স্কেচ করেছিলেন তলস্তোয়ের পুরো অবয়ব। এর ১০ বছর পর তিনি সেই স্কেচ থেকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন ছবি, যার নাম ‘খালি পায়ে লিয়েভ নিকোলায়েভিচ তলস্তোয়’। তলস্তোয়ের বড় ছেলে সের্গেই লেভাভভিচ সে সময় ছিল বাবার পাশে। তিনি লিখেছেন, ‘রেপিন বাবাকে খালি পায়ে এঁকেছে বলে মেজাজ খারাপ হয়েছিল বাবার। বাবা খুব কম সময়ই খালি পায়ে থাকতেন। তিনি বলেছিলেন, রেপিন কখনোই আমাকে খালি পায়ে দেখেনি। আরেকটু হলেই তো আমাকে প্যান্ট ছাড়া এঁকে ফেলত! সেটাই বাকি রেখেছে। (সের্গেই ল্ভোভোভিচ, পুরোনো দিনের কথা)। এ রকমই একটা ঘটনার দেখা পাওয়া যায় ১৯০৩ সালে পিতেরবুর্গে শিল্পীদের একটি প্রদর্শনীতে। সেখানে বুনিনের একটি ছবির দেখা মিলল, যার নাম ‘মাছ ধরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তলস্তোয় আর রেপিন একটা জামার ভিতরে, এবং তারা মাছ ধরছেন। ‘নোভোয়ে ভ্রেমিয়া’ পত্রিকার সাংবাদিককে তলস্তোয় বলেছিলেন, ‘বহুদিন ধরেই আমি জনগণের সম্পদ, তাই কিছুতেই এখন আর অবাক হই না।’
কৃষকের পোশাক তিনি পরতেন তখন, যখন মাঠে কাজ করতেন কিংবা পায়ে হেঁটে কোথাও যেতেন, কারণ, তিনি চাইতেন না, তিনি যে কাউন্ট তলস্তোয়, সেটা কারও চোখে পড়ুক। সবাই তাঁকে সাধারণ মানুষই ভাবুক। ইউরোপীয় পোশাক পরতেন মস্কো বা পিতেরবুর্গে বেড়াতে গেলে, সেখানকার অভিজাত সমাজের সঙ্গে পার্টিতে গেলে। সে পোশাক ছিল একটি ফ্রক কোট, নিখুঁত মাড় দেওয়া শার্ট, একটি কোট আর একটি টুপি। এগুলো তৈরি হতো নামীদামি টেইলারিং হাউসে। ‘আমার মনে আছে, কোনো এক কাজে বাবা মস্কো যাচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল ফ্রককোট। সেটা তিনি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ফরাসি টেইলারিং হাউসে। (ই ল তলস্তোয়, আমার স্মৃতি)।

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৪ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।
পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৪ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

বড় বড় মানুষদের নিয়ে কত কিংবদন্তি যে ছড়িয়ে থাকে! তলস্তোয় তো বড় মানুষই ছিলেন, তাঁকে নিয়েও তাই রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। অনেকেই সেগুলোকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রশ্ন করেননি। পড়ে দেখেননি। খোঁজ নেননি। আজ তাঁত জন্মদিনে সে রকমই কিছু কিংবদন্তি নিয়ে কথা বলব। হয়তো এরই মধ্যে অনেকে তা জেনে গেছেন।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
৪ ঘণ্টা আগে
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১ দিন আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৫ দিন আগে