Ajker Patrika

গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু

ইজাজুল হক
গাসসানের কবিতার বিষয়বস্তু

আগের পর্বেই বলা হয়েছে, গাসসান সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফিলিস্তিনি-জর্ডানি কবি মুহাম্মাদ আজ-জাহিরের (১৯৫২-২০২০) সঙ্গে যৌথকাব্য রচনার মাধ্যমে তাঁর কবিতাজীবন শুরু করেন। ‘দেশের হালচাল’ নামের কাব্যগ্রন্থটি ১৯৭৭ সালে ‘জর্ডানিয়ান রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ প্রকাশ করে। সেই সংকলনে আমরা তাঁদের যৌথ কর্মপ্রয়াস, কাছাকাছি সুর-ছন্দ, একই ধরনের কাব্যছাপ এবং ফিলিস্তিনি সাহিত্যের থিমের সঙ্গে পরিচিত হই—যেমনটি আধুনিক ফিলিস্তিনি কবিতার উৎকর্ষের সময়টিতে বিপুলসংখ্যক কবিদের দেখতে পাই। 

এসব থিম, ছন্দ, ছাপ ও কবিতার শরীর নির্মাণের পদ্ধতি ভালোভাবেই উপস্থিত রয়েছে তাঁর পরবর্তী কাব্য সংকলন ‘প্রত্যুষ’-এ। বইটি সত্তরের দশকের শেষদিকে জর্ডান থেকে প্রকাশিত হয়। ফলে এটিও একই সময়ের একই চিত্র ফুটিয়ে তোলে। শরণার্থীশিবির, পরদেশি জীবন, দেশান্তর, মৃত্যু, গেরিলা যুদ্ধ ও প্রতিরোধ, যা ১৯৬৭ সালের পরাজয়ের পর প্রায় দুই দশক ধরে চলা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধের তীব্রতার সময় ফিলিস্তিনি সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল। গাসসান সে কথাই বলেছেন এভাবে—

‘গেরিলারা আমাকে ক্যাম্পের চায়ের গল্প বলে
এবং স্বপ্ন বিস্ফোরণের...
আমি নিজেকে আবিষ্কার করিনি
ক্যাম্পই আমাকে কবি বানিয়ে ছাড়ে...
ফিলিস্তিনিদের পরিচয়-তিলক তো এই ক্যাম্পই
কত কিছু ঘটে চলে, তাই আমি শুরু করি।’

গাসসানের কবিতায় মাহমুদ দারবিশের ভাষাশৈলীর স্পষ্ট ছাপ আমরা দেখতে পাই। কবিতার ভিত, বাক্যশৈলী, ছন্দ ও অলংকার—সব দিক থেকেই। ফিলিস্তিনি মানসের উর্বরতা, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, আত্মোৎসর্গের প্রেরণা এবং বীরত্বের সংজ্ঞায় টইটম্বুর সেই পদ্যগুলো। দারবিশের মতো গীত-নাটকীয়তার সঙ্গে দুঃখগাথার অপূর্ব মিথস্ক্রিয়ায় নির্মিত হতে থাকে গাসসানের কবিতার ভুবন। গাসসান বলেন—

‘এবং সে সাগরে আসে—আরিহায় কলা চাষ করবে বলে
এ মাটি তো ফলায় কেবল 
কবিতা ও রক্তের ফসল
এ মাটি প্রত্যুষে জন্ম দেয় ফুটফুটে এক বাচ্চা
এবং সন্ধ্যায় সে ঘরে ফেরে শহীদ হয়ে।’ 

 ইসরায়েলের দখলদারির কারণে অনেকের মতো কবি গাসসানকেও এভাবেই ফিলিস্তিন ছাড়তে হয়এ কবিতা দারবিশের দুই কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসি তোমাকে অথবা ভালোবাসি না’ এবং ‘প্রয়াস নম্বর ৭ ’-এর কথা মনে করিয়ে দেয়। নির্দিষ্ট করে বললে ‘ক্যাফেটেরিয়ায় কফি খায় সিরহান’ কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়, যা দারবিশের কবিতা এবং গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের ফিলিস্তিনি কবিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট ছিল। গাসসানের ‘পুরোনো কারণ’ কাব্যেও এই ছাপ অনেকটা পাওয়া যায়। এই পর্যায়ে এসে তিনি দারবিশের বাক্যেরই প্রতিধ্বনি করেন—

‘মা গো
শহরগুলো আমাকে তাড়াতে পারেনি
বরং আমি আমার শিরায়-শিরায় শহরগুলোকে ছড়িয়ে দিই।’ 

চির নির্বাসিত ফিলিস্তিনিদের ভবঘুরে জীবনের কাতর অভিব্যক্তি প্রকাশ করেই গাসসান এ কথা বলেন। 

দুই. 
দারবিশের প্রভাব এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্যের স্পষ্ট ছাপ থাকা সত্ত্বেও গাসসানের কবিতায় আমরা ‘পুরোনো কারণ’ কাব্য থেকে শুরু করে পরবর্তী কবিতাগুলোতে আরবি ও বিশ্বসাহিত্যের নানা স্বাদের কবিতাশৈলীর নতুন ছাপ প্রত্যক্ষ করি। গদ্য কবিতার প্রভাব, এর ভাষাকাঠামো, আকস্মিক সূচনা, বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব, সাধারণ চালচিত্র, বর্ণনামূলক উপস্থাপনা, দৈনন্দিন জীবনের হালচাল, অন্তরঙ্গতা, ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, অদ্ভুত ও আনকোরা বিষয়ের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার যে প্রবণতা আধুনিক কবিতায় দেখা যায়, তা গাসসানের কবিতায়ও অবাধে প্রবেশ করে। গাসসানের কবিতার রং যেভাবেই বদলাক না কেন, কিংবা গদ্যের কথাই বলুন, তিনি এ ধাঁচের গভীরে ঢুকে পড়েন। তিনি বলেন—

‘এটি গির্জার ঘণ্টা নয় যে বাজবে...
এটি সেই তামা
পুরুষের শিরা থেকে বেরিয়ে 
যা মিলিত হয় 
খনিজ পদার্থদের মিছিলে।’ 

অথবা বলেন—

‘আমাদের নিগ্রো প্রতিবেশী টাঙিয়েছে
ভারী পর্দা 
ফলে আমরা আর দেখতে পাই না
কাপড়ের থান থেকে 
কীভাবে বেরোয় আবলুস কাঠ।’ 

এসব প্রভাব গাসসান জাকতানের কবিতাকে আরও পরিণত-মার্জিত করে তোলে; কবিতার বিষয়বস্তুকে করে আরও সুনির্দিষ্ট-মূর্ত এবং অনুভবের কাছাকাছি। 

তিন. 
এখান থেকেই, ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ কাব্যের মাধ্যমে গাসসানের স্পষ্ট বাঁক প্রতিভাত হয়। ১৯৮২ সালে পিএলওর বৈরুত ছেড়ে যাওয়ার পর, কবি নিজের ও ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি ও বিপর্যয় বিষয়ে কবিতা রচনায় আরও পরিপক্ব হয়ে ওঠেন। ‘বস্তুর বীরত্বগাথা’ কাব্যের যে শিরোনাম কবি দিয়েছেন, তা হয়তো তাঁর পাঠকের সেই কবিতাশৈলীতে প্রবেশের একটি প্রান্ত, যা প্রকৃতির উপাদান, যুদ্ধের স্মৃতি, রণাঙ্গনের বীরপুরুষ, পরাজয় ও ক্ষতির জন্য বিলাপ করে। কবি বলেন—

‘আঙুল তুলে দেখায় সে আমাদের…
এই যে, এখান থেকে…
পরক্ষণেই সে বাড়ি ও বিস্ফোরণের ধ্বংসস্তূপে অদৃশ্য হয়
আঙুল রাখে দেয়ালের শূন্যে
আমাদের দেখায়
এই যে, এখান থেকে
এখান থেকে।’ 

অন্য স্থানে গাসসান বলেন—

‘সবকিছু আগের মতোই আছে
যখন থেকে আমরা যুদ্ধে গিয়েছি
সেই শৈশব থেকে…

সবকিছু আগের মতোই আছে
পাল্টায়নি মোটেও, 
শুধু আমরাই
আমরাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি যুদ্ধে
ইশকুলের ঘণ্টাধ্বনি শুনে...

এর পর কোনো দিন ফিরে আসিনি…’

এটি তাঁর কবিতাকে প্রকৃতির উপাদান ও বিশ্ববাস্তবতার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করে একটি দৃঢ়, স্বচ্ছ ও গভীর কাব্যিক রূপ দেয়। 

চার. 
গাসসানের পরবর্তী কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তুতে প্রথম পর্যায়ের থেকে কিছুটা বিষণ্নতা দেখা যায়। আগে তিনি অন্যদের জীবন ও অভিজ্ঞতার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ব্যক্তির বীরত্বগাথা চিত্রিত করেছিলেন এবং ব্যক্তিজীবনের বাইরের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে এসে কবি নিজের অভিজ্ঞতার উৎকর্ষ সাধনে সচেষ্ট হন। নিজের গভীরে ডুব দিয়ে আত্মানুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। একান্ত ব্যক্তিগত অতীতে ফিরতে চেয়েছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সেসব স্মৃতিকে পাঠকের সামনে পরিবেশন করেছেন। এই পর্যায় থেকে জাকতানের কাব্যিক অভিযাত্রা ব্যক্তিগত স্মৃতিকে ঘিরে নতুন মাত্রা পায়। জন্ম, শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলোর কথা তিনি স্মরণ করেছেন। 

জন্মের পর থেকে যেসব স্থানে পাড়ি দিয়েছেন এবং যেসব স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, তাঁর সেই জন্মস্থান—বেইত জালা, ১৯৪৮ সালে নাকাবার (ইহুদিদের দ্বারা বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় থেকে ফিলিস্তিনিরা নাকাবা দিবস পালন করে) পর তাঁর পরিবার যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল—প্রথমে ফিলিস্তিনের জেরিকো শহরের পাশের শরণার্থীশিবির, এর পর জর্ডানের আল-কারামাহ শরণার্থীশিবির, এর পর দামেস্ক, বৈরুত ও তিউনিসিয়ার দিনগুলোর কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন কবিতায়। প্রথম নাকাবার পর থেকে, লাগাতার ছুটে চলা একজন ফিলিস্তিনি মুসাফিরের সংগ্রামের বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে তাঁর কবিতায়। একসময় তা আজকের ধূসর অজানার পথে অবিরাম ছুটতে থাকা বর্তমানের বিন্দুও স্পর্শ করে নেয়। তিনি বলেন—

‘যেন আমিই এটি প্রস্তুত করেছি
এবং আগেও, কোনো এক সময় এই স্থান আমি স্পর্শ করেছি
এবং স্পর্শ করেছি এই প্রতিধ্বনি
যেন সতত দেখছি আমি, ফেলে আসা দিনগুলো…’

জর্ডানের এমনই এক শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠেন কবি গাসসান জাকতানএভাবেই কবি ‘আমার কারণে নয়’ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতায় ফেলে আসা অতীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। এই বিলাপধ্বনিতে পরিবর্তন আসে ‘ভাইদের ডাকে পথচারীরা’ কাব্যগ্রন্থে, যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর শোনা সেই প্রতিধ্বনি বাঁক নেয় মৃত্যু উপত্যকা ভ্রমণে, মৃতদেহগুলোর আর্তনাদ পুনরুদ্ধার করতে। 

‘ভাইদের ডাকে পথচারীরা’ কাব্যে মৃতদের মধ্যস্থতায় স্মৃতির জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন গাসসান। তিনি লিখেছেন—

‘নরোম খেজুরের শরীর থেকে
বীজ বের করার মতো করে 
তারা হৃদয়ের ভাঁজ খুলে 
স্মৃতি বের করে।’ 

আঁধারের চাদরে ঢাকা কোনা থেকে 
ময়লা সরাতে তারা শুরু করে স্মৃতিযাপন…।’ 

গাসসান এখানে ক্লান্ত হন। নিঃশেষ হয়ে আসা স্বপ্ন ও ইচ্ছেগুলো আঁকতে শুরু করেন এবার। মৃতদের স্থান-কালকে চিত্রিত করেন। স্মৃতির বিবর্ণ জগৎকে স্মরণ করেন। শুরুর সঙ্গে শেষকে মিলিয়ে নেন। এখানে নির্বাসন ও দেশান্তরের প্রতিধ্বনি শোনা যায় অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীনভাবে। এ কাব্যগ্রন্থের ‘কল্পনার বিবর্তন’ কিংবা ‘ঈষৎ পরিবর্তন’-এর মতো কবিতাগুলো সাধারণভাবে মৃতদের অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ জাতীয় কবিতার অন্তর্ভুক্ত। আমরা কবির সঙ্গেই আছি—এমন আবহ এনে তিনি প্রাত্যহিক জীবনের কোলাহলে ডুব দিয়ে এবং মৌলিক ও সর্বজনীন সমস্যাগুলোর পেছনে সময় কাটিয়ে, অতীতের অবহেলা ও বৈষম্যগুলো জানতে পথে পথে ঘোরেন। অতীতের ধূসর স্মৃতি এবং অস্পষ্ট ঘটনায় ফিরে যান তিনি। সেসবকে সাগরসেঁচা মুক্তোর মতো করে তুলে আনেন, এবং ইচ্ছেমতো সাজান কবিতার পরতে পরতে। তাতে তাঁর কবিতার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য প্রতিভাত হয়; প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যপ্রতিভার হাড়-মাংস। 

পাঁচ. 
২০১৯ সালে প্রকাশিত গাসসানের কবিতার বই ‘কথা বলো হে পথিক কথা বলো’-তেও তিনি অতীতের স্মৃতিযাপন অব্যাহত রাখেন। ব্যক্তিগত জীবন, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর হালচাল এবং আরবদের উত্থান-পতনের আলাপ করেছেন অত্যন্ত নির্মোহভাবে। এ কাব্যগ্রন্থে যে পথিককে সম্বোধন করেছেন তিনি, তা গাসসানের ভিন্ন একটি রূপ। সেই পথিক নিজের পরিচয় হারিয়ে ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকে মরুর বালুকাবেলায়। কবি নিজেকে কাছে ডাকেন এবং জেগে ওঠার আহ্বান জানান। তিনি বলেন—

‘এখানে একটু থামো
হে পথিক
মোটেও জানতে চাইব না কী নাম তোমার 
কিংবা কোথায় তোমার গন্তব্য। 

শুধু একবার এ মোমের আলোয় বসো
তোমার জন্যই জ্বালিয়েছি তা
তোমার হারানো অতীত স্মরণ করিয়ে দিতে। 

কথা বলো, কথা বলো
কথা বলো হে পথিক, কথা বলো
ফিরে পেতে চাই আমি
ধুলোওড়া মরুঝড়ে ছিনতাই হওয়া
আমার দরাজ কণ্ঠস্বর।’ 

এ গ্রন্থে জেগে ওঠার প্রেরণার পাশাপাশি তাঁর কণ্ঠে হতাশার ছাপও আমরা দেখতে পাই। শেষে এসে পথিক তথা নিজেকে গাসসান এমন এক প্রশ্ন করে বসেন, যার উত্তর সম্ভবত এই পৃথিবীর কারও জানা নেই; কিংবা সবার জানা। তিনি বলেন—

‘কীভাবে তোমাকে পথ দেখাব, হে পথিক? 
তোমার গন্তব্য যে অনেক দূরে 
এবং তোমার পথ বেশ বন্ধুর!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোচির ইহুদি পরিবারের ঐতিহ্য যেভাবে বাঁচিয়ে রাখছেন এক মুসলিম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কোচির ইহুদি পাড়ায় সারা আন্টির রেখে যাওয়া দোকানের সামনে ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

দক্ষিণ ভারতের কোচি শহরের সরু, নুড়ি-পাথর বিছানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ফলক। তাতে লেখা, ‘সারা কোহেনের বাড়ি।’ জনাকীর্ণ এই রাস্তাটির নাম জু টাউন। কয়েক দশক আগেও এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বসবাস করত ইহুদি পরিবার। প্রাচীন সামগ্রী, পারস্যের কার্পেট আর মসলার দোকানে ঠাসা এই এলাকাই একসময় পরিচিত ছিল কোচির ইহুদি পাড়া হিসেবে।

এই রাস্তাতেই রয়েছে থাহা ইব্রাহিমের দোকান। কোচির শেষ ইহুদি নকশার দোকান। এক তপ্ত দুপুরে কয়েকজন মার্কিন পর্যটক দোকানে ঢুকতেই দেখা গেল, ৫৫ বছর বয়সী থাহা মনোযোগ দিয়ে একটি কিপ্পা (ইহুদি পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী ছোট, বৃত্তাকার টুপি যা তারা ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এবং নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করতে পরে থাকে) সেলাই করছেন। দোকানের দেয়ালে ঝোলানো একটি ছবির সামনে পর্যটকেরা ভিড় জমালেন। ছবিটি ২০১৩ সালের। তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ (বর্তমানে রাজা) চার্লস জু টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

ছবির দিকে আঙুল তুলে থাহা বললেন, ‘ওই ইনিই সারা আন্টি।’ এরপর যোগ করলেন, ‘এটা ছিল সারা কোহেনের বাড়ি ও তাঁর সেলাইয়ের দোকান।’

আরব সাগরের রানি নামে পরিচিত কোচি একসময় ছিল বন্দর আর মসলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কয়েক শতাব্দী আগে এখানেই গড়ে উঠেছিল ইহুদিদের একটি নিবিড় জনগোষ্ঠী। সেই জনগোষ্ঠীর একজন ছিলেন সারা কোহেন। ২০০০ সাল থেকে এই দোকান চালাচ্ছেন থাহা। সারা জীবিত থাকাকালে তাঁর পক্ষ থেকে, আর ২০১৯ সালে সারা ৯৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি দায়িত্ব নেন তিনি।

থাহা বলেন, ‘আমি ছিলাম তাঁর ছেলের মতো। নিজের মায়ের চেয়েও বেশি সময় তাঁর দেখাশোনা করেছি। আমি তাঁর জন্য কোশার (ইহুদিদের এক ধরনের খাবার) আর মাছ কিনে আনতাম। সময় কাটাতাম আর দোকান বন্ধ করার পরই কেবল ফিরতাম।’

এক ইহুদি নারী আর ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমির এক মুসলমান পুরুষের এই বন্ধুত্ব প্রায় চার দশক ধরে টিকে ছিল। মৃত্যুর আগে সারা তাঁর দোকানটি থাহার নামে উইল করে যান। থাহা প্রতিজ্ঞা করেন, জু টাউনে তিনি সারার স্মৃতি আর ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখবেন। যেখানে আঠারো শতকে প্রায় আড়াই হাজার ইহুদি বাস করতেন, সেখানে এখন কেবল একজন অবশিষ্ট। থাহা বলেন, ‘এক দিক থেকে, এখানকার ইহুদি সম্প্রদায় যাতে বিস্মৃত না হয়, আমিও সেই চেষ্টাই করছি।’

কেরালায় ইহুদিদের আগমনের সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত রাজা সোলোমনের সময়ের, প্রায় দুই হাজার বছর আগেকার। প্রথমে তাঁরা মালাবার উপকূলে ক্রাঙ্গানোরে, বর্তমান কোডুঙ্গাল্লুরের কাছে প্রাচীন বন্দরের আশপাশে বণিক হিসেবে বসতি গড়েন। পরে তাঁরা কোচিতে চলে আসেন। এই প্রাচীন বসতির কারণে তাঁরা পরিচিত হন মালাবারি ইহুদি নামে।

এর বহু পরে, ১৫৯২ সালে, স্প্যানিশ নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সেফার্ডিক ইহুদিরা কেরালায় পৌঁছান। পর্তুগাল, তুরস্ক আর বাগদাদ হয়ে তাঁরা কোচিতে বসতি গড়ে তোলেন এবং পরিচিত হন পারাদেসি বা বিদেশি ইহুদি নামে। মালাবারি ও পারাদেসি—এই দুই ধারার মানুষ মিলেই পরিচিত হন কোচিন ইহুদি নামে।

ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে
ইব্রাহিম থাহার সারা আন্টি তাঁর পরিণত বয়সে। ছবি: ইব্রাহিম থাহার সৌজন্যে

পর্তুগিজ, আরব, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের দীর্ঘদিনের বাণিজ্যকেন্দ্র কোচিতে তাঁরা রাজাদের সুরক্ষায় নিরাপদে বসবাস করতেন। বিশ শতকের গোড়ায় সারা কোহেনের জন্ম। তখন জু টাউন ছিল প্রাণবন্ত। সারা আর তাঁর স্বামী জ্যাকব—যাঁর জন্মও এখানেই—১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন।

আশির দশকের গোড়ায় আচমকাই থাহার সঙ্গে কোহেন দম্পতির পরিচয় হয়। তেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়া থাহা তখন পর্যটকদের কাছে পোস্টকার্ড বিক্রি করে জীবিকা চালাতেন। জু টাউনে আসা পর্যটকেরা নিয়মিতই যেতেন পারাদেসি সিনাগগে, যা ১৫৬৮ সালে কোচিনের রাজার দেওয়া জমিতে নির্মিত।

থাহা বলেন, ‘তখন প্রচুর পর্যটক আসত আর আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পোস্টকার্ড বেচতাম।’ এক রোববার, যে গুদামঘরে থাহা পোস্টকার্ড রাখতেন, তার মালিক না আসায় জ্যাকব তাঁকে তাঁদের বাড়িতে জায়গা দেন। সারা এতে খুশি ছিলেন না। থাহার মনে আছে, প্রায় তিন বছর তিনি তাঁর সঙ্গে তেমন কথা বলেননি।

ইব্রাহিম থাহা বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমি তাঁর স্বামীর ছোটখাটো কাজ করে দিতাম। অথবা যখন তাঁদের জানালার বাইরে থেকে টিভিতে ক্রিকেট দেখতাম, তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বলতেন।’ একদিন সারা তাঁকে সিনাগগের জন্য একটি কুশন কভার সেলাই করতে সাহায্য করতে বলেন। তখনই বোঝা যায়, থাহার মধ্যে সেলাই ও নকশার সহজাত দক্ষতা আছে। সম্ভবত দরজি বাবাকে ছোটবেলা থেকে সাহায্য করার ফলেই। তিনি বলেন, ‘আমি যে নকশা আঁকতে আর সেলাই করতে পারি, তা জানতামই না।’

উনিশ বছর বয়সে থাহা সারাকে সাহায্য করেন তাঁদের বৈঠকখানা থেকে ‘সারার হস্ত-সেলাই’ নামে একটি দোকান খুলতে। দোকানটি আজও সেই নামেই পরিচিত। সেখানে বিক্রি হতো কিপ্পাহ, চাল্লাহ কভার আর মেনোরাহ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আমাকে সব শিখিয়েছেন।’

এই বন্ধুত্ব নিয়ে থাহা বেশ দার্শনিক। তিনি বলেন, ‘জু টাউনে ইহুদি আর মুসলমানেরা একে অপরের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তাঁরা একে অপরের প্রতি সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু সারা আন্টি আর জ্যাকব আংকেল কখনোই আমাকে বহিরাগত মনে করতে দেননি, যদিও আমাদের পটভূমি আলাদা ছিল।’

সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সারা আন্টির দোকানে কিপ্পা সেলাই করছেন ইব্রাহিম থাহা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

থাহার বাবা-মা এই সম্পর্কে আপত্তি করেননি। তাঁরা দেখেছিলেন, কোহেন পরিবার তাঁদের ছেলেকে জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করছে। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতার সময়েই কোচির ইহুদি জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। চল্লিশের দশকে যেখানে ছিল প্রায় ২৫০ জন, নব্বইয়ের দশকে তা নেমে আসে ২০ জনে। এখন মাত্র একজন আছেন—৬৭ বছর বয়সী কিথ হ্যালেগুয়া।

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অনেক পরিবার সেখানে চলে যায়। কেরালার ইহুদিদের ওপর ডক্টরেট থিসিস করা আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘কোচিন ইহুদিরা হয়তো স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ধারণায় ইসরায়েলে গিয়েছিলেন। তবে উন্নত জীবনের আকর্ষণের মতো অর্থনৈতিক কারণও ছিল। তাঁরা এটাও অনুভব করেছিলেন যে কেরালায় উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর অভাব ছিল।’

ধর্মীয় নিপীড়ন কখনোই তাঁদের কোচি ছাড়ার কারণ ছিল না। শহরটি শত শত বছর ধরে তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বয়স্ক ইহুদি থেকে গিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে নিঃসন্তান কোহেন দম্পতিও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জ্যাকব মারা যাওয়ার আগে থাহাকে সারার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে যান। তখন থাহা বিবাহিত, তিন সন্তানের জনক।

থাহা বলেন, ‘আমি জ্যাকব আংকেলকে বলেছিলাম, সারা আন্টি যদি আমাকে সুযোগ দেন, তবে আমি তাঁর দেখাশোনা করব। আমি তাঁকে সুযোগ দিতে বলেছিলাম, কারণ ইসলামে মৃতপ্রায় ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। না করলে পাপ হয়।’

সারার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে থাহা তাঁর পরিবারকে জু টাউনের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। সারা মারা গেলে তিনি তাঁর কফিনের জন্য স্টার অব ডেভিড (ইসরায়েলি পতাকায় অঙ্কিত তারকা) আঁকা একটি কফিন কভার তৈরি করান। আজও তিনি নিয়মিত ইহুদি কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে যান। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক কোচি ঘুরতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অনেক ইহুদিও থাকেন। আনা জাখারিয়াস বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা জু টাউনে আসেন এক ধরনের আপন অনুভব করার জন্য।’

তিনি বলেন, এখানকার ইহুদিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের মধ্যেও নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেছিলেন। একই সঙ্গে সমাজের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। স্থানীয় ভাষা মালয়ালমই ছিল তাঁদের দৈনন্দিন ভাষা। থাহা যেভাবে সারা কোহেনের ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন, তা তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘একজন মুসলমান কীভাবে এক ইহুদি নারীর যত্ন নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। তিনি এখনো সারা-র ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো বজায় রেখেছেন।’

থাহা দোকানটিকে ঠিক সেভাবেই রেখেছেন, যেমনটি সারা চালাতেন। ইহুদিদের সাব্বাথ উপলক্ষে তিনি শনিবার দোকান বন্ধ রাখেন। ইব্রাহিম থাহা আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমান, কিন্তু সারা আন্টির জন্য এটা খুব জরুরি ছিল বলে আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রদীপ জ্বালাই। কারণ, এই ক্ষণ সাব্বাথের শুরু হওয়াকে চিহ্নিত করে। এই বিষয়টি আমার কাছে এটা ধর্ম সংক্রান্ত নয়, পুরোটাই মানবিক।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত