Ajker Patrika

বিবিসির সবচেয়ে প্রভাবশালী সাময়িকী প্রকাশের দিন

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৩১
বিবিসির সবচেয়ে প্রভাবশালী সাময়িকী প্রকাশের দিন

ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ সাংবাদিকতায় স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রেখেছিল দ্য লিসেনার। ভার্জিনিয়া ওলফ, ফিলিপ লারকিন, টিএস ইলিয়টের মতো প্রতিভাধর মানুষদের লেখা ছাপা হতো এই সাময়িকীতে। ১৯২৯ সালের আজকের দিনে বিবিসির মহাপরিচালক জন রেইথের হাত ধরে সাপ্তাহিক এই সাময়িকীর প্রকাশ শুরু হয়। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে সাহিত্য, শিল্প, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে লেখালেখিতে অনন্য সাক্ষর রাখার পর ১৯৯১ সালের ৩ জানুয়ারি এর শেষ কিস্তি প্রকাশ পায়।

শুরুতে বরং দ্য লিসেনার প্রকাশের পটভূমিটা জেনে নেওয়া যাক। ১৯২৩ সালে জন রেইথের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে বিবিসির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন রেডিও টাইমসের। মূলত রেডিও ও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচি প্রকাশিত হতো সেখানে। এ ছাড়া সাক্ষাৎকার, চলচ্চিত্র সমালোচনা, লাইফ স্টাইল বিষয়ের নানা লেখা ছাপা হতো। তবে এ ধরনের লেখা সব ধরনের পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছিল না। তাই অনেক দিন টিকে থাকবে এমন সব লেখা প্রকাশ ও একটু সিরিয়াস ধরনের পাঠকদের কথা বিবেচনায় এনে প্রকাশ শুরু হয় দ্য লিসেনারের।

দ্য লিসেনারের জটিল সব ক্রিপটিক শব্দজব্দ পাঠকদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। জাতীয় কোনো সাপ্তাহিকে প্রকাশিত ক্রসওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে জটিল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এগুলোকে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টারের অধ্যাপক ও বিবিসির ইতিহাসবিদ জিন সিয়েটন জানান, ১৯৩০-র দশকে ব্রিটিশদের জীবনের অংশ হওয়ার জন্য বিবিসির যে প্রবল প্রচেষ্টা তার অংশ ছিল দ্য লিসেনার। 

১৯৪০-র দশকে ভারতে বিবিসি ইন্ডিয়ান সেকশনের সম্প্রচারিত বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে ম্যাগাজিনের পাতায়। ভারতীয় লেখকদের বিভিন্ন পর্যালোচনা প্রকাশের পাশাপাশি সেখানকার শিল্প, ইতিহাস, ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন লেখা ছাপা হয়।

লিসেনারের প্রথম সম্পাদক ছিলেন রিচার্ড এস ল্যাম্বার্ট। পরবর্তী সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন অ্যালান টমাস, মরিস প্রেসি অ্যাশলি, কার্ল মিলার, জর্জ এডউইন স্কট প্রমুখ। শেষ সম্পাদক ছিলেন পিটার ফিডিক।

অনেক অসাধারণ কাজ হয়েছে দ্য লিসেনারের মাধ্যমে। লিসেনারের বিখ্যাত প্রদায়কদের মধ্যে আছেন স্টিফেন ফ্রাই, ইয়ান হিলস্লপ, জন পিল প্রমুখ। ১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গুপ্তহত্যার ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন অ্যান্থনি বার্জেস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে রাজা ষষ্ঠ জর্জের পুরো ভাষণই স্থান পায় লিসেনারের পাতায়, এদিকে জাতীয় কোনো সাপ্তাহিকে লারকিনের লেখা প্রকাশের সূচনা হয় লিসেনারে ‘আলটিমেটাম’ কবিতার মাধ্যমে। তখন তাঁর বয়স কেবল ১৮।

তবে এক সময় পাঠকের আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়ায় এবং সাপ্তাহিক সব সংবাদপত্র ও তাদের সাময়িকীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ম্যাগাজিনটি। ১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় এর।

৬২ বছরে ৩১৯৭টি সংখ্যা প্রকাশিত হয় দ্য লিসেনার ম্যাগাজিনের। এতদিন পর্যন্ত এগুলোর পড়ার সুযোগ ছিল না। বিবিসি ওই সংখ্যাগুলো নিয়ে অনলাইন আর্কাইভ তৈরি করে ২০১১ সালে, ম্যাগাজিনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ২০ বছর পর। এখন চাইলেই সেখান থেকে কিনে পড়া যাবে। 

সূত্র: বিবিসি,গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ী বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রাজবাড়ী বধ্যভূমি

রাজবাড়ী শহরেই অবস্থিত বিনোদপুর লোকোশেড। বলা হয় রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এটি—রাজবাড়ী বধ্যভূমি বা বিনোদপুর লোকোশেড বধ্যভূমি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনোদপুরের লোকোশেড এলাকায় ক্যাম্প বসিয়েছিল। তারা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে লোকোশেডের পুকুরে ফেলে দিত। এমনকি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীবাহী ট্রেন থামলে সেই ট্রেন থেকেও সন্দেহভাজন মুক্তিকামী বাঙালিদের ধরে নিয়ে আসত লোকোশেড ক্যাম্পে। তাদের সহায়তা করতে দোসররা তো ছিলই। আর ক্যাম্পে আনা বাঙালিদের ভাগ্যে জুটত নির্মম নির্যাতন। এরপর হত্যা। এবং মৃতদেহগুলোর জায়গা হতো সেই পুকুরেই। দুই দশক আগে সরকারি অর্থায়নে সেই শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বধ্যভূমি এলাকায় নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিশৌধ।

ছবি: মো. সাকিবুল হাসান, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

সম্পাদকীয়
লেখা ছেড়ে দেওয়া বিষয়ে

ভালো-মন্দ সব জায়গাতেই আছে। সাহিত্য জগতেও যে ভালো মানুষ পাইনি, তা তো নয়। একজন লেখক অসম্ভব স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল মানুষ। লেখালেখি বিষয়টাই তো সাংঘাতিক স্পর্শকাতর—লেখক এবং লেখা উভয়েই সামান্য কারণে আহত হয়!

...লেখালেখি বিষয়টি একজন লেখকের কাছে সবচেয়ে কোমল আর সূক্ষ্ম অনুভূতি দাবি করে, সবচেয়ে গভীর মনোযোগ দাবি করে, আমার তো এ-ও মনে হয় যে ধ্যানমগ্নতা ছাড়া একজনের পক্ষে লেখকই হওয়া সম্ভব নয়। তো সতীর্থদের নোংরামি দেখে, ভণ্ডামি দেখে, বদমায়েশি দেখে কি একজন প্রকৃত লেখকের আহত হওয়ার কথা নয়?

...আমি তো সব সময় বিশ্বাস করে এসেছি—শিল্পীদের লোভ থাকতে নেই। লোভ থাকলে শিল্প হয় না, যেমন হয় না অসৎ মানুষেরও। শিল্পীর সততা থাকাটা খুব জরুরি, আমি বলব অপরিহার্য। যাই হোক, আমি শুধু সাহিত্য জগতের ভণ্ডামি দেখে লেখালেখি থেকে দূরে সরে এসেছি, সেটা বলা ঠিক হবে না। এটা একটা কারণ ছিল বটে, তবে আরও কারণ নিশ্চয়ই আছে।

আগেই তো তোমাকে বলেছি, আমি শেষের দিকে এসে একঘেয়েমিতে ভুগছিলাম। তা ছাড়া একটা সময় এসব কিছুকেই ভীষণ অর্থহীন মনে হলো আমার কাছে। কী করছি, কেন করছি, এসবের ফলাফল কী, আদৌ এসব করার কোনো অর্থ হয় কি না—এই সব আরকি! সব মিলিয়ে লেখালেখিটা আর ভালো লাগেনি। অবশ্য একবারে পরিকল্পনা করে, সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখালেখি বন্ধ করেছিলাম, তা নয়। এ রকম তো সব লেখকেরই হয় যে মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে, মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে, মাঝে মাঝে বন্ধ্যত্বও দেখা দেয়। আমার সেটাই হয়েছিল। কিন্তু সব লেখকই সেই সময়টি পেরিয়ে আবার লেখালেখিতে আসেন। আমার আর ফিরে আসা সম্ভব হয়নি। আর এখন তো শারীরিক কারণেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। যে উদ্দাম জীবন আমি যাপন করেছি, সেটা শুনলে তোমরা অবাক হয়ে যাবে, আর এখন তো দিনের পর দিন ঘরে বন্দী হয়ে থাকি, বেরুতেই পারি না...

সূত্র: আহমাদ মোস্তফা কামাল কর্তৃক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৯০-৯১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
ন্যাশনাল জুট মিলস বধ্যভূমি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহর। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ১ ডিসেম্বর চলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে খলাপাড়া গ্রামে ‘ন্যাশনাল জুট মিলস লি.’ নামে যে কারখানাটি অবস্থিত, সেখানেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিলের মুক্তিকামী শ্রমিক-কর্মচারীদের। শতাধিক বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। তাঁদের অপরাধ ছিল একটাই—মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করা। গণহত্যার পর হানাদার বাহিনী মিলের দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে চলে যায়। মরদেহগুলো তিন-চার দিন মিলের সুপারিবাগানে পড়ে থাকে। শিয়াল-শকুন খুবলে খায় সেগুলো। দেশ স্বাধীন হলে গ্রামবাসী মিলের ভেতরে গিয়ে ১৩৬ জনের লাশ পান। মিলের দক্ষিণ পাশে ১০৬ জনের মৃতদেহকে গণকবরে শায়িত করা হয়। বাকিদের মরদেহ নিয়ে যান স্বজনেরা। ১৯৯৬ সালে শহীদদের সম্মানে মিল কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ স্মরণে’ স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করে গণকবরের জায়গাটিতে।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বধ্যভূমি ৭১

সম্পাদকীয়
বধ্যভূমি ৭১

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সেক্টর হেডকোয়ার্টার্স-সংলগ্ন ভুরভুরিয়াছড়ার পাশেই বধ্যভূমি ৭১ পার্ক অবস্থিত। সেখানে প্রাচীন একটি বটগাছ রয়েছে, যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে। পাকিস্তান আমলে গাছটির নিচে ছিল এক সাধুর আস্তানা। চা-শ্রমিক ও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে এসে পূজা দিত, মনোবাসনা পূরণে মানত করত। সবাই জায়গাটিকে চিনত ‘সাধু বাবার থলি’ নামে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। হত্যার আগে বটগাছের ডালে ঝুলিয়ে তাঁদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষও বাদ যাননি। গাছের ডালে উল্টো করে বেঁধে রাখা হতো তাঁদের। নির্যাতনের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে তাঁরা শহীদ হন। সেই সব শহীদের ত্যাগকে অমর করে রাখতে এখানে নির্মিত হয় ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামের স্মৃতিস্তম্ভটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটিতে আরও রয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’ নামে একটি ভাস্কর্য।

ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত