মামুনুর রশীদ

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লাগে প্রবল মুখস্থনির্ভর স্মরণশক্তি। দেশে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এই কোচিং সেন্টারগুলো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। কোভিডের কারণে ইতিমধ্যে যেহেতু ক্লাস করা সম্ভব হয়নি, তাই অনলাইনে কোচিং মাস্টাররা অনর্গল বক্তৃতা ঝেড়ে থাকেন এবং ছাত্রছাত্রীরা যথাসাধ্য গলাধঃকরণ করে।
শেখার মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয় এবং এঁদের মধ্যে যাঁরা না বুঝে মুখস্থবিদ্যায় পটু, তাঁরা পাস করে যান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার—অঙ্কও নাকি মুখস্থ করে নেন। একই কায়দায় পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায়ও এঁরা পাস করে যান। শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এঁদের কেউ কেউ কৃতকার্য হয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং ব্যাংকের পরীক্ষায় পাস করে নিয়োগ পেয়ে যান। এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, বছরের পর বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা এবং অন্য নিয়োগকর্তারা ভেবে দেখেননি। যে সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে, তা-ও খুব অবাস্তব। উচ্চতর গণিত, উচ্চতর ইংরেজি চাকরিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা-ও তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি।
পাকিস্তান আমলে এ ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সীমিত ও প্রয়োজনীয় সিলেবাসের মধ্যেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হতো এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে প্রশাসনে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতেন। বাংলাদেশেও ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। যার ফলে অনেক মেধাবী কর্মকর্তাকে পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে, এই বিশাল সিলেবাস হজম করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই মনোবৈকল্য দেখা দেয়। একটি চাকরির কারণে প্রার্থীরা অমানবিক হয়ে পড়েন এবং এই রকম একটি মানসিকতা নিয়ে পরবর্তীকালে কেউ কেউ চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা প্রবল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বিবেকহীন এবং অমানবিক আচরণে প্রশাসন দুর্নাম কুড়াচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যায় কোনো শিক্ষা হয় না। শিক্ষার প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে বিষয়টিকে বোঝা এবং সেই ক্ষেত্রে যতবার বোঝা না যায় ততবারই চেষ্টা করে যাওয়া। আর অঙ্কের বিষয় তো বুঝতেই হবে। অঙ্কের মূল সূত্র হচ্ছে—যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। এই চারটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে কোনো অঙ্কই মিলবে না। প্রাথমিক শিক্ষায় এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা খুব একটা নজর দেন না। এ থেকেই মুখস্থবিদ্যার সূচনা। এটাও অসম্ভব মনে হয়, অনেক ছাত্রই নাকি অঙ্কে মুখস্থবিদ্যা প্রয়োগ করে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে যায়, এমনকি ইংরেজিও।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক নেই। প্রচুর পরিমাণে বলা ভুল হবে। খুবই নগণ্যসংখ্যক শিক্ষক দক্ষ হয়ে ছাত্রদের পড়াতে পারেন। সেখানেও মুখস্থবিদ্যার প্রয়োগ। বাক্যগঠন এবং বানানের সূত্রগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইংরেজিতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। বাংলা মাতৃভাষা; কিন্তু প্রমিত বাংলায় একটি বাক্যগঠন অত সহজ নয়। বাংলায় দেখা গেছে, কলেজ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত সঠিক বাংলা বাক্য রচনা করতে পারেন না। বানানবিভ্রাট থেকে যায় এবং সেই সঙ্গে বাক্যগঠনের এক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। মুখস্থনির্ভর এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তাঁদের স্মৃতিশক্তির ওপর যে প্রবল চাপ পড়ছে, তাতে কেউ কেউ হয়তো কৃতকার্য হতে পারেন; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার মধ্য থেকে যে মেধা বাছাই করার বিষয়, তা একেবারেই অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। আশির দশকের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একটা অংশ অমানবিক, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কেউ কেউ সাজা ভোগ করছেন আবার কেউ কেউ ভাগ্যগুণে বেঁচে যাচ্ছেন। এ কথা প্রায় সবাই বলে থাকেন, এমনকি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলে থাকেন, নিয়োগের ত্রুটির এবং শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রশাসনিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব দেখভাল করার জন্য সরকার তার বিবেচনায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অত্যন্ত মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেই নিয়োগগুলোও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। জানা গেছে, অতীতে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল।
সেই বিবেচনার কারণে পরীক্ষায়ও দুর্নীতি হয়েছে। দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ভ্রান্তপথে নিয়োগ কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ-বাণিজ্য একটি নির্মম সত্যে পরিণত হয়েছে। কোভিডের কারণে অনেক দিন নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ-বাণিজ্যের দালালেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনই সক্রিয় যে, পদ অনুযায়ী ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ওই টাকা দিলে পরীক্ষায় শুধু অবতীর্ণ হতে হবে; কিন্তু লেখা যাবে না। লেখার কাজটা ওই দালালের লোকজনই করে ফেলবেন। এই দালালেরা খুবই সততার সঙ্গে চাকরিগুলোর ব্যবস্থা করে থাকেন। বছরের পর বছর তাই এসব দালাল তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চলেছেন। পুলিশ, প্রাথমিক শিক্ষক, ব্যাংক কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন অফিস-আদালতে ড্রাইভার, পিয়ন, নিরাপত্তাকর্মীসহ সব জায়গার জন্যই একটা অর্থমূল্য প্রচলিত হয়ে আছে। অনেক প্রার্থী বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে এই অর্থের সংস্থান করে থাকেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কৃতকার্য হন। তবে এর মধ্যে একটা অংশ যে দুর্ভাগ্যে পতিত হয় না, তা নয়। আদর্শ ব্যাপারীর হাতে নিঃস্ব হয়ে তাঁরা পথে পথে ঘুরতে থাকেন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া একটা ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেছে।
সরকার এ বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য একটি সাজাও ঘোষণা করেছে। সাজার ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নয়। এর চেয়েও গুরুতর ব্যবস্থার কথা ভাবা প্রয়োজন। কারণ, আইনের সঙ্গে সঙ্গে আইনের ফাঁকও থাকে প্রচুর। যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গর্হিত কাজ করতে পারেন, তাঁদের পক্ষে আইনের ফাঁক বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়।
যাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্যের বদৌলতে চাকরি পান, তাঁদের পক্ষে যেকোনো অনৈতিক কাজ করার অধিকার জন্মে যায়। কারণ, অর্থের বিনিময়ে তিনি চাকরিটি পেয়েছেন এবং চাকরিদাতাদের নৈতিকতা সম্পর্কে প্রথমেই তাঁর একটা ধারণা জন্মে যায়। সেই ধারণা তাঁকে উচ্চতর দুর্নীতি করার সাহস জোগায়। এখানে ওই মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। জীবনের শুরু থেকে তিনি কোনো প্রকৃত শিক্ষা পাননি। যে শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্যের ফলে চাকরি পেয়েছেন, সেই অর্থ তাঁকে যেকোনোভাবেই হোক তুলতে হবে। এখানে কোনো নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। বিষয়টি যেকোনো অর্থে রাজনৈতিক। কারণ, ভ্রান্ত রাজনীতিই এসব লোককে যুক্ত করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংসদদের মনোনয়ন নিতে প্রকারভেদে লাখ থেকে কোটি টাকা লাগে শোনা যায় এবং হয়তো সত্য। কোটি কোটি টাকা দিয়ে যেহেতু তাঁকে মনোনয়ন নিতে হয়, ক্ষমতায় বসার পর তিনি যেকোনো অনৈতিক কাজের অধিকার পেয়ে যান। নিয়োগ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। বর্তমান রাজনীতি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনো কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি ঠিক না হলে একটি পঙ্গু প্রশাসনেরই জন্ম হতে থাকবে।

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লাগে প্রবল মুখস্থনির্ভর স্মরণশক্তি। দেশে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এই কোচিং সেন্টারগুলো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। কোভিডের কারণে ইতিমধ্যে যেহেতু ক্লাস করা সম্ভব হয়নি, তাই অনলাইনে কোচিং মাস্টাররা অনর্গল বক্তৃতা ঝেড়ে থাকেন এবং ছাত্রছাত্রীরা যথাসাধ্য গলাধঃকরণ করে।
শেখার মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয় এবং এঁদের মধ্যে যাঁরা না বুঝে মুখস্থবিদ্যায় পটু, তাঁরা পাস করে যান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার—অঙ্কও নাকি মুখস্থ করে নেন। একই কায়দায় পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায়ও এঁরা পাস করে যান। শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এঁদের কেউ কেউ কৃতকার্য হয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং ব্যাংকের পরীক্ষায় পাস করে নিয়োগ পেয়ে যান। এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, বছরের পর বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা এবং অন্য নিয়োগকর্তারা ভেবে দেখেননি। যে সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে, তা-ও খুব অবাস্তব। উচ্চতর গণিত, উচ্চতর ইংরেজি চাকরিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা-ও তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি।
পাকিস্তান আমলে এ ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সীমিত ও প্রয়োজনীয় সিলেবাসের মধ্যেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হতো এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে প্রশাসনে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতেন। বাংলাদেশেও ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। যার ফলে অনেক মেধাবী কর্মকর্তাকে পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে, এই বিশাল সিলেবাস হজম করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই মনোবৈকল্য দেখা দেয়। একটি চাকরির কারণে প্রার্থীরা অমানবিক হয়ে পড়েন এবং এই রকম একটি মানসিকতা নিয়ে পরবর্তীকালে কেউ কেউ চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা প্রবল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বিবেকহীন এবং অমানবিক আচরণে প্রশাসন দুর্নাম কুড়াচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যায় কোনো শিক্ষা হয় না। শিক্ষার প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে বিষয়টিকে বোঝা এবং সেই ক্ষেত্রে যতবার বোঝা না যায় ততবারই চেষ্টা করে যাওয়া। আর অঙ্কের বিষয় তো বুঝতেই হবে। অঙ্কের মূল সূত্র হচ্ছে—যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। এই চারটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে কোনো অঙ্কই মিলবে না। প্রাথমিক শিক্ষায় এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা খুব একটা নজর দেন না। এ থেকেই মুখস্থবিদ্যার সূচনা। এটাও অসম্ভব মনে হয়, অনেক ছাত্রই নাকি অঙ্কে মুখস্থবিদ্যা প্রয়োগ করে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে যায়, এমনকি ইংরেজিও।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক নেই। প্রচুর পরিমাণে বলা ভুল হবে। খুবই নগণ্যসংখ্যক শিক্ষক দক্ষ হয়ে ছাত্রদের পড়াতে পারেন। সেখানেও মুখস্থবিদ্যার প্রয়োগ। বাক্যগঠন এবং বানানের সূত্রগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইংরেজিতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। বাংলা মাতৃভাষা; কিন্তু প্রমিত বাংলায় একটি বাক্যগঠন অত সহজ নয়। বাংলায় দেখা গেছে, কলেজ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত সঠিক বাংলা বাক্য রচনা করতে পারেন না। বানানবিভ্রাট থেকে যায় এবং সেই সঙ্গে বাক্যগঠনের এক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। মুখস্থনির্ভর এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তাঁদের স্মৃতিশক্তির ওপর যে প্রবল চাপ পড়ছে, তাতে কেউ কেউ হয়তো কৃতকার্য হতে পারেন; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার মধ্য থেকে যে মেধা বাছাই করার বিষয়, তা একেবারেই অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। আশির দশকের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একটা অংশ অমানবিক, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কেউ কেউ সাজা ভোগ করছেন আবার কেউ কেউ ভাগ্যগুণে বেঁচে যাচ্ছেন। এ কথা প্রায় সবাই বলে থাকেন, এমনকি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলে থাকেন, নিয়োগের ত্রুটির এবং শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রশাসনিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব দেখভাল করার জন্য সরকার তার বিবেচনায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অত্যন্ত মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেই নিয়োগগুলোও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। জানা গেছে, অতীতে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল।
সেই বিবেচনার কারণে পরীক্ষায়ও দুর্নীতি হয়েছে। দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ভ্রান্তপথে নিয়োগ কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ-বাণিজ্য একটি নির্মম সত্যে পরিণত হয়েছে। কোভিডের কারণে অনেক দিন নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ-বাণিজ্যের দালালেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনই সক্রিয় যে, পদ অনুযায়ী ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ওই টাকা দিলে পরীক্ষায় শুধু অবতীর্ণ হতে হবে; কিন্তু লেখা যাবে না। লেখার কাজটা ওই দালালের লোকজনই করে ফেলবেন। এই দালালেরা খুবই সততার সঙ্গে চাকরিগুলোর ব্যবস্থা করে থাকেন। বছরের পর বছর তাই এসব দালাল তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চলেছেন। পুলিশ, প্রাথমিক শিক্ষক, ব্যাংক কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন অফিস-আদালতে ড্রাইভার, পিয়ন, নিরাপত্তাকর্মীসহ সব জায়গার জন্যই একটা অর্থমূল্য প্রচলিত হয়ে আছে। অনেক প্রার্থী বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে এই অর্থের সংস্থান করে থাকেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কৃতকার্য হন। তবে এর মধ্যে একটা অংশ যে দুর্ভাগ্যে পতিত হয় না, তা নয়। আদর্শ ব্যাপারীর হাতে নিঃস্ব হয়ে তাঁরা পথে পথে ঘুরতে থাকেন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া একটা ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেছে।
সরকার এ বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য একটি সাজাও ঘোষণা করেছে। সাজার ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নয়। এর চেয়েও গুরুতর ব্যবস্থার কথা ভাবা প্রয়োজন। কারণ, আইনের সঙ্গে সঙ্গে আইনের ফাঁকও থাকে প্রচুর। যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গর্হিত কাজ করতে পারেন, তাঁদের পক্ষে আইনের ফাঁক বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়।
যাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্যের বদৌলতে চাকরি পান, তাঁদের পক্ষে যেকোনো অনৈতিক কাজ করার অধিকার জন্মে যায়। কারণ, অর্থের বিনিময়ে তিনি চাকরিটি পেয়েছেন এবং চাকরিদাতাদের নৈতিকতা সম্পর্কে প্রথমেই তাঁর একটা ধারণা জন্মে যায়। সেই ধারণা তাঁকে উচ্চতর দুর্নীতি করার সাহস জোগায়। এখানে ওই মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। জীবনের শুরু থেকে তিনি কোনো প্রকৃত শিক্ষা পাননি। যে শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্যের ফলে চাকরি পেয়েছেন, সেই অর্থ তাঁকে যেকোনোভাবেই হোক তুলতে হবে। এখানে কোনো নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। বিষয়টি যেকোনো অর্থে রাজনৈতিক। কারণ, ভ্রান্ত রাজনীতিই এসব লোককে যুক্ত করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংসদদের মনোনয়ন নিতে প্রকারভেদে লাখ থেকে কোটি টাকা লাগে শোনা যায় এবং হয়তো সত্য। কোটি কোটি টাকা দিয়ে যেহেতু তাঁকে মনোনয়ন নিতে হয়, ক্ষমতায় বসার পর তিনি যেকোনো অনৈতিক কাজের অধিকার পেয়ে যান। নিয়োগ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। বর্তমান রাজনীতি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনো কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি ঠিক না হলে একটি পঙ্গু প্রশাসনেরই জন্ম হতে থাকবে।
মামুনুর রশীদ

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লাগে প্রবল মুখস্থনির্ভর স্মরণশক্তি। দেশে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এই কোচিং সেন্টারগুলো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। কোভিডের কারণে ইতিমধ্যে যেহেতু ক্লাস করা সম্ভব হয়নি, তাই অনলাইনে কোচিং মাস্টাররা অনর্গল বক্তৃতা ঝেড়ে থাকেন এবং ছাত্রছাত্রীরা যথাসাধ্য গলাধঃকরণ করে।
শেখার মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয় এবং এঁদের মধ্যে যাঁরা না বুঝে মুখস্থবিদ্যায় পটু, তাঁরা পাস করে যান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার—অঙ্কও নাকি মুখস্থ করে নেন। একই কায়দায় পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায়ও এঁরা পাস করে যান। শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এঁদের কেউ কেউ কৃতকার্য হয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং ব্যাংকের পরীক্ষায় পাস করে নিয়োগ পেয়ে যান। এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, বছরের পর বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা এবং অন্য নিয়োগকর্তারা ভেবে দেখেননি। যে সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে, তা-ও খুব অবাস্তব। উচ্চতর গণিত, উচ্চতর ইংরেজি চাকরিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা-ও তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি।
পাকিস্তান আমলে এ ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সীমিত ও প্রয়োজনীয় সিলেবাসের মধ্যেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হতো এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে প্রশাসনে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতেন। বাংলাদেশেও ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। যার ফলে অনেক মেধাবী কর্মকর্তাকে পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে, এই বিশাল সিলেবাস হজম করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই মনোবৈকল্য দেখা দেয়। একটি চাকরির কারণে প্রার্থীরা অমানবিক হয়ে পড়েন এবং এই রকম একটি মানসিকতা নিয়ে পরবর্তীকালে কেউ কেউ চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা প্রবল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বিবেকহীন এবং অমানবিক আচরণে প্রশাসন দুর্নাম কুড়াচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যায় কোনো শিক্ষা হয় না। শিক্ষার প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে বিষয়টিকে বোঝা এবং সেই ক্ষেত্রে যতবার বোঝা না যায় ততবারই চেষ্টা করে যাওয়া। আর অঙ্কের বিষয় তো বুঝতেই হবে। অঙ্কের মূল সূত্র হচ্ছে—যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। এই চারটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে কোনো অঙ্কই মিলবে না। প্রাথমিক শিক্ষায় এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা খুব একটা নজর দেন না। এ থেকেই মুখস্থবিদ্যার সূচনা। এটাও অসম্ভব মনে হয়, অনেক ছাত্রই নাকি অঙ্কে মুখস্থবিদ্যা প্রয়োগ করে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে যায়, এমনকি ইংরেজিও।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক নেই। প্রচুর পরিমাণে বলা ভুল হবে। খুবই নগণ্যসংখ্যক শিক্ষক দক্ষ হয়ে ছাত্রদের পড়াতে পারেন। সেখানেও মুখস্থবিদ্যার প্রয়োগ। বাক্যগঠন এবং বানানের সূত্রগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইংরেজিতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। বাংলা মাতৃভাষা; কিন্তু প্রমিত বাংলায় একটি বাক্যগঠন অত সহজ নয়। বাংলায় দেখা গেছে, কলেজ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত সঠিক বাংলা বাক্য রচনা করতে পারেন না। বানানবিভ্রাট থেকে যায় এবং সেই সঙ্গে বাক্যগঠনের এক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। মুখস্থনির্ভর এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তাঁদের স্মৃতিশক্তির ওপর যে প্রবল চাপ পড়ছে, তাতে কেউ কেউ হয়তো কৃতকার্য হতে পারেন; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার মধ্য থেকে যে মেধা বাছাই করার বিষয়, তা একেবারেই অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। আশির দশকের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একটা অংশ অমানবিক, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কেউ কেউ সাজা ভোগ করছেন আবার কেউ কেউ ভাগ্যগুণে বেঁচে যাচ্ছেন। এ কথা প্রায় সবাই বলে থাকেন, এমনকি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলে থাকেন, নিয়োগের ত্রুটির এবং শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রশাসনিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব দেখভাল করার জন্য সরকার তার বিবেচনায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অত্যন্ত মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেই নিয়োগগুলোও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। জানা গেছে, অতীতে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল।
সেই বিবেচনার কারণে পরীক্ষায়ও দুর্নীতি হয়েছে। দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ভ্রান্তপথে নিয়োগ কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ-বাণিজ্য একটি নির্মম সত্যে পরিণত হয়েছে। কোভিডের কারণে অনেক দিন নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ-বাণিজ্যের দালালেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনই সক্রিয় যে, পদ অনুযায়ী ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ওই টাকা দিলে পরীক্ষায় শুধু অবতীর্ণ হতে হবে; কিন্তু লেখা যাবে না। লেখার কাজটা ওই দালালের লোকজনই করে ফেলবেন। এই দালালেরা খুবই সততার সঙ্গে চাকরিগুলোর ব্যবস্থা করে থাকেন। বছরের পর বছর তাই এসব দালাল তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চলেছেন। পুলিশ, প্রাথমিক শিক্ষক, ব্যাংক কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন অফিস-আদালতে ড্রাইভার, পিয়ন, নিরাপত্তাকর্মীসহ সব জায়গার জন্যই একটা অর্থমূল্য প্রচলিত হয়ে আছে। অনেক প্রার্থী বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে এই অর্থের সংস্থান করে থাকেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কৃতকার্য হন। তবে এর মধ্যে একটা অংশ যে দুর্ভাগ্যে পতিত হয় না, তা নয়। আদর্শ ব্যাপারীর হাতে নিঃস্ব হয়ে তাঁরা পথে পথে ঘুরতে থাকেন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া একটা ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেছে।
সরকার এ বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য একটি সাজাও ঘোষণা করেছে। সাজার ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নয়। এর চেয়েও গুরুতর ব্যবস্থার কথা ভাবা প্রয়োজন। কারণ, আইনের সঙ্গে সঙ্গে আইনের ফাঁকও থাকে প্রচুর। যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গর্হিত কাজ করতে পারেন, তাঁদের পক্ষে আইনের ফাঁক বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়।
যাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্যের বদৌলতে চাকরি পান, তাঁদের পক্ষে যেকোনো অনৈতিক কাজ করার অধিকার জন্মে যায়। কারণ, অর্থের বিনিময়ে তিনি চাকরিটি পেয়েছেন এবং চাকরিদাতাদের নৈতিকতা সম্পর্কে প্রথমেই তাঁর একটা ধারণা জন্মে যায়। সেই ধারণা তাঁকে উচ্চতর দুর্নীতি করার সাহস জোগায়। এখানে ওই মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। জীবনের শুরু থেকে তিনি কোনো প্রকৃত শিক্ষা পাননি। যে শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্যের ফলে চাকরি পেয়েছেন, সেই অর্থ তাঁকে যেকোনোভাবেই হোক তুলতে হবে। এখানে কোনো নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। বিষয়টি যেকোনো অর্থে রাজনৈতিক। কারণ, ভ্রান্ত রাজনীতিই এসব লোককে যুক্ত করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংসদদের মনোনয়ন নিতে প্রকারভেদে লাখ থেকে কোটি টাকা লাগে শোনা যায় এবং হয়তো সত্য। কোটি কোটি টাকা দিয়ে যেহেতু তাঁকে মনোনয়ন নিতে হয়, ক্ষমতায় বসার পর তিনি যেকোনো অনৈতিক কাজের অধিকার পেয়ে যান। নিয়োগ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। বর্তমান রাজনীতি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনো কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি ঠিক না হলে একটি পঙ্গু প্রশাসনেরই জন্ম হতে থাকবে।

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লাগে প্রবল মুখস্থনির্ভর স্মরণশক্তি। দেশে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এই কোচিং সেন্টারগুলো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। কোভিডের কারণে ইতিমধ্যে যেহেতু ক্লাস করা সম্ভব হয়নি, তাই অনলাইনে কোচিং মাস্টাররা অনর্গল বক্তৃতা ঝেড়ে থাকেন এবং ছাত্রছাত্রীরা যথাসাধ্য গলাধঃকরণ করে।
শেখার মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয় এবং এঁদের মধ্যে যাঁরা না বুঝে মুখস্থবিদ্যায় পটু, তাঁরা পাস করে যান। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার—অঙ্কও নাকি মুখস্থ করে নেন। একই কায়দায় পরবর্তীকালে লিখিত পরীক্ষায়ও এঁরা পাস করে যান। শেষ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এঁদের কেউ কেউ কৃতকার্য হয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং ব্যাংকের পরীক্ষায় পাস করে নিয়োগ পেয়ে যান। এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, বছরের পর বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা এবং অন্য নিয়োগকর্তারা ভেবে দেখেননি। যে সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে, তা-ও খুব অবাস্তব। উচ্চতর গণিত, উচ্চতর ইংরেজি চাকরিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, তা-ও তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি।
পাকিস্তান আমলে এ ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিবেচনা করলে দেখা যাবে, সীমিত ও প্রয়োজনীয় সিলেবাসের মধ্যেই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হতো এবং যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়ে প্রশাসনে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করতেন। বাংলাদেশেও ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর ছিল। যার ফলে অনেক মেধাবী কর্মকর্তাকে পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে, এই বিশাল সিলেবাস হজম করতে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেরই মনোবৈকল্য দেখা দেয়। একটি চাকরির কারণে প্রার্থীরা অমানবিক হয়ে পড়েন এবং এই রকম একটি মানসিকতা নিয়ে পরবর্তীকালে কেউ কেউ চাকরিজীবনে প্রবেশ করেন। সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা প্রবল দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বিবেকহীন এবং অমানবিক আচরণে প্রশাসন দুর্নাম কুড়াচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যায় কোনো শিক্ষা হয় না। শিক্ষার প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে বিষয়টিকে বোঝা এবং সেই ক্ষেত্রে যতবার বোঝা না যায় ততবারই চেষ্টা করে যাওয়া। আর অঙ্কের বিষয় তো বুঝতেই হবে। অঙ্কের মূল সূত্র হচ্ছে—যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। এই চারটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে কোনো অঙ্কই মিলবে না। প্রাথমিক শিক্ষায় এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা খুব একটা নজর দেন না। এ থেকেই মুখস্থবিদ্যার সূচনা। এটাও অসম্ভব মনে হয়, অনেক ছাত্রই নাকি অঙ্কে মুখস্থবিদ্যা প্রয়োগ করে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে যায়, এমনকি ইংরেজিও।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক নেই। প্রচুর পরিমাণে বলা ভুল হবে। খুবই নগণ্যসংখ্যক শিক্ষক দক্ষ হয়ে ছাত্রদের পড়াতে পারেন। সেখানেও মুখস্থবিদ্যার প্রয়োগ। বাক্যগঠন এবং বানানের সূত্রগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইংরেজিতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। বাংলা মাতৃভাষা; কিন্তু প্রমিত বাংলায় একটি বাক্যগঠন অত সহজ নয়। বাংলায় দেখা গেছে, কলেজ তো বটেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পর্যন্ত সঠিক বাংলা বাক্য রচনা করতে পারেন না। বানানবিভ্রাট থেকে যায় এবং সেই সঙ্গে বাক্যগঠনের এক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। মুখস্থনির্ভর এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। তাঁদের স্মৃতিশক্তির ওপর যে প্রবল চাপ পড়ছে, তাতে কেউ কেউ হয়তো কৃতকার্য হতে পারেন; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার মধ্য থেকে যে মেধা বাছাই করার বিষয়, তা একেবারেই অনুপস্থিত থেকে যাচ্ছে। আশির দশকের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একটা অংশ অমানবিক, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কেউ কেউ সাজা ভোগ করছেন আবার কেউ কেউ ভাগ্যগুণে বেঁচে যাচ্ছেন। এ কথা প্রায় সবাই বলে থাকেন, এমনকি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলে থাকেন, নিয়োগের ত্রুটির এবং শিক্ষাব্যবস্থার কারণে প্রশাসনিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব দেখভাল করার জন্য সরকার তার বিবেচনায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে অত্যন্ত মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। সেই নিয়োগগুলোও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। জানা গেছে, অতীতে এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল।
সেই বিবেচনার কারণে পরীক্ষায়ও দুর্নীতি হয়েছে। দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় ভ্রান্তপথে নিয়োগ কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে আছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ-বাণিজ্য একটি নির্মম সত্যে পরিণত হয়েছে। কোভিডের কারণে অনেক দিন নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ-বাণিজ্যের দালালেরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনই সক্রিয় যে, পদ অনুযায়ী ঘুষের পরিমাণ নির্ধারিত হয়ে যায় এবং ওই টাকা দিলে পরীক্ষায় শুধু অবতীর্ণ হতে হবে; কিন্তু লেখা যাবে না। লেখার কাজটা ওই দালালের লোকজনই করে ফেলবেন। এই দালালেরা খুবই সততার সঙ্গে চাকরিগুলোর ব্যবস্থা করে থাকেন। বছরের পর বছর তাই এসব দালাল তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে চলেছেন। পুলিশ, প্রাথমিক শিক্ষক, ব্যাংক কর্মচারী-কর্মকর্তা, বিভিন্ন অফিস-আদালতে ড্রাইভার, পিয়ন, নিরাপত্তাকর্মীসহ সব জায়গার জন্যই একটা অর্থমূল্য প্রচলিত হয়ে আছে। অনেক প্রার্থী বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে, ধারদেনা করে এই অর্থের সংস্থান করে থাকেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা কৃতকার্য হন। তবে এর মধ্যে একটা অংশ যে দুর্ভাগ্যে পতিত হয় না, তা নয়। আদর্শ ব্যাপারীর হাতে নিঃস্ব হয়ে তাঁরা পথে পথে ঘুরতে থাকেন। শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া একটা ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেছে।
সরকার এ বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য একটি সাজাও ঘোষণা করেছে। সাজার ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নয়। এর চেয়েও গুরুতর ব্যবস্থার কথা ভাবা প্রয়োজন। কারণ, আইনের সঙ্গে সঙ্গে আইনের ফাঁকও থাকে প্রচুর। যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গর্হিত কাজ করতে পারেন, তাঁদের পক্ষে আইনের ফাঁক বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়।
যাঁরা নিয়োগ-বাণিজ্যের বদৌলতে চাকরি পান, তাঁদের পক্ষে যেকোনো অনৈতিক কাজ করার অধিকার জন্মে যায়। কারণ, অর্থের বিনিময়ে তিনি চাকরিটি পেয়েছেন এবং চাকরিদাতাদের নৈতিকতা সম্পর্কে প্রথমেই তাঁর একটা ধারণা জন্মে যায়। সেই ধারণা তাঁকে উচ্চতর দুর্নীতি করার সাহস জোগায়। এখানে ওই মুখস্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থাই দায়ী। জীবনের শুরু থেকে তিনি কোনো প্রকৃত শিক্ষা পাননি। যে শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্যের ফলে চাকরি পেয়েছেন, সেই অর্থ তাঁকে যেকোনোভাবেই হোক তুলতে হবে। এখানে কোনো নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। বিষয়টি যেকোনো অর্থে রাজনৈতিক। কারণ, ভ্রান্ত রাজনীতিই এসব লোককে যুক্ত করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংসদদের মনোনয়ন নিতে প্রকারভেদে লাখ থেকে কোটি টাকা লাগে শোনা যায় এবং হয়তো সত্য। কোটি কোটি টাকা দিয়ে যেহেতু তাঁকে মনোনয়ন নিতে হয়, ক্ষমতায় বসার পর তিনি যেকোনো অনৈতিক কাজের অধিকার পেয়ে যান। নিয়োগ-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। বর্তমান রাজনীতি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কোনো কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টি ঠিক না হলে একটি পঙ্গু প্রশাসনেরই জন্ম হতে থাকবে।

কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
১১ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১১ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি ইউনিভার্সিটি অব বার্গেন, নরওয়ে থেকে এমফিল, ডিএএডি স্কলারশিপসহ জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের পর্যালোচনাকারী। সম্প্রতি দেশের নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেন পথ হারাল?
গণ-অভ্যুত্থানের প্রাথমিক অর্জন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ও শাসনব্যবস্থার পতন, সেই পতনের পূর্ণ লক্ষ্য কিন্তু অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেষ হয়নি। একটা শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রে যে বা যাঁরা ছিলেন, শুধু তাঁর বা তাঁদেরই পতন হয়েছে।
কিন্তু এটা তো শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। এই ব্যক্তিকে সমর্থন করেছে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। যারা এই ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রেখেছিল তাদের সবকিছু ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই শক্তিগুলো আপাতত একটু পেছনে সরে গেছে, কিন্তু তারা তো নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাদের যে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাও কিন্তু না। ফলে তারা চোখের সামনে থেকে খানিকটা সরেছে, কিন্তু এই শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় আছে। যদি ব্যবসায়ীদের কথা ধরা যায়, যে ব্যবসায়ীরা বিগত রেজিমকে সমর্থন করতেন, সেই ব্যবসায়ীদের তো পতন হয়নি। তাঁরা যে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দখল করতেন, সেগুলো তো এখনো বলবৎ আছে।
সিভিল প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন ‘ক’ সচিবের জায়গায় ‘জ’ সচিব এসেছেন। কিন্তু ‘জ’ সচিব আসার মধ্য দিয়ে আমলাতান্ত্রিকতার নিয়মতান্ত্রিকতা, ন্যায্যতা, গণমুখিতা ও দায়বদ্ধতা—এই চারটিকে উল্লেখযোগ্য মনে করি, সেগুলো তো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আমলাতন্ত্রের মধ্যে বস্তুত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এটা না হওয়ার কারণ কী?
এটা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের যে শক্তিগুলো ছিল, সেই শক্তিগুলোর এই নতুন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অর্থাৎ আমরা আমলাতন্ত্রের বদল চাই, সেই বদলের পদ্ধতিটা কী হবে, সেটার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ছিল না। আবার রাতারাতি যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, সেই পরিবর্তনগুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাখতে হবে, সেটার বিকল্প পদ্ধতি কোনো পক্ষই অফার করতে পারেনি। ফলে যারা সংগঠিত ছিল, অচিরেই তারা সেটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মানে ‘ক’-এর জায়গায় ‘ঙ’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এটা তো আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আকাঙ্ক্ষা ছিল ব্যবস্থাটার বদল। সেটা তো হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন, নতুন স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি শোনা বা অনুমান করা যাচ্ছে। আপনার কী মতামত?
নতুন স্বৈরতন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা আমার কাছে অতি সরলীকরণ মনে হয়। তবে আমার বিশ্বাস, এই বাংলাদেশ আর ২০২৪-এর আগের বাংলাদেশ—এটার মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। নতুন বাংলাদেশে কারও পক্ষে, কোনো দলের পক্ষে এবং কোনো শক্তির পক্ষে আগের মতো আর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হবে না। নতুন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবার যে আসবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিও না।
একটা উদাহরণ দিই, এখনকার মাঠটা দুর্বল। ধরেন, আমি একটা সুন্দর শার্ট পরে আছি, তখন অনেকে বলবেন, আমি তো ধনী। কিন্তু সত্যিকারভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর শার্ট পরে থাকব কি না, সেটার নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। ফলে এখন যে শক্তিগুলোর উত্থান এবং যে শক্তিগুলোর পতন দেখা যাচ্ছে—এটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। আসলে আমাদের অভ্যুত্থান পর্বটা এখনো শেষ হয়নি। ফলে এটা থিতু হওয়া এবং শক্তিগুলোর মধ্যে বোঝাপড়াও ঠিক হয়নি। সেটার জন্য আরও সময় লাগবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলো। নতুন একটি ছাত্রসংগঠন এখন এর পরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখছেন?
প্রথমত একটা নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে একটা ছাত্রসংগঠন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। খেয়াল করার বিষয় যে, ডাকসুর ভূমিকা কী? ডাকসু আসলে কী করতে পারে? ডাকসুর কাজের পরিধি কতটুকু? সে বিষয়ে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং যারা নতুন করে ডাকসু পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে—তাদের কারোরই ডাকসু কার্যপ্রণালি নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ধারণা করার দরকার নেই। কারণ, আমাদের কাছে তো পুরো ডকুমেন্টস আছে। ডকুমেন্টসটা হলো ডাকসুর গঠনতন্ত্র। সেই গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে লেখা আছে, কে, কী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কতটুকু করতে পারে। সেখানে কী লেখা আছে—আমার ধারণা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থাৎ ভিসি থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা আছেন এবং ডাকসুর ভিপি, জিএসসহ কেউ-ই ডাকসুর গঠনতন্ত্র ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারেননি।
তবে একটা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের এ রকম একটা সংস্থা থাকা দরকার। কারণ, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এর একটা অন্যতম কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিজমও। এটা অবশ্যই থাকতে হবে। ফলে সেটা আছে। কিন্তু ডাকসুকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও সচেতনতা থাকা দরকার, সেসবের কিছুই নতুন নেতৃত্বের মধ্যে নেই। তাঁদের কার্যকলাপের মধ্যে এখনো তা প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমার কাছে মনে হয়, এখনো দায়িত্ব পালনের জন্য সামনে যে কয়েক মাস আছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের আগে সেটা আত্মস্থ করা দরকার। এরপর একটা উদাহরণ তৈরি করা দরকার, পরবর্তী সময়ে যাঁরা ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে তাঁদের যতটুকু করার কথা, সেই কাজের মধ্যে তাঁরা সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন—সেই শিক্ষাটা নেওয়া খুব জরুরি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কি আমরা কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাব বলে মনে করেন?
প্রথম কথা হলো, বাংলাদেশের যে পরিবর্তন সেটার জন্য নির্বাচন করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচন দুটি কাজ করবে। প্রথমত, নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধ শক্তির বৈধতা পাবে জনগণের কাছ থেকে। ফলে তাদের আইনগত শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি যুক্ত হলে সেটা আরও বড় শক্তি আকারে হাজির হবে। ওই শক্তিটা প্রয়োগ করে স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন এমন একটা প্রক্রিয়া—যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে এবং সেটাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে।
মাজার-দরগা ভাঙা, বাউলদের প্রতি নিগ্রহ—এ ঘটনাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন। এসব ঘটনায় আমাদের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ কি সংকটের মধ্যে পড়ছে না।
আমাদের যে সংবিধান এখনো কার্যকর আছে এবং এর বাইরেও আমরা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আছি, সে জায়গায় বহুত্ববাদ মানে বহু চিন্তা, বহু ধারণা, বহু মত আমাদের জীবন-যাত্রার অংশ। এখন আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা বহুত্ববাদী এবং ভিন্নতার প্রতি পরিষ্কারভাবে একটা আক্রমণ। সম্প্রতি বাউলদের প্রতি আক্রমণের ঘটনা, সেটা কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সেটা একটা কনক্রিট আকার ধারণ করেছে।
এটা পরিষ্কারভাবে মানুষের চিন্তা, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির অধিকারের পরিচিতির ওপর বিশাল একটা আক্রমণ। তবে আক্রমণগুলো ঠেকানো এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। আশ্চর্যজনকভাবে রাষ্ট্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যত ধরনের ঘটনা ঘটছে—অমুকের বাড়ি ভাঙা হোক, তমুককে ঘেরাও করে দাবি আদায় করা হোক, মাজার ভাঙা হোক—সব ঘটনায় মানুষ তার নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে, যেটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না। এখানে অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী?
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অবশ্যই আমাদের কাছে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা এক দিনে অর্জন করা যাবে না। কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছি, এখানে যারা আইন ভঙ্গ করে এবং নাগরিকদের অধিকার ভঙ্গ করে—এ রকম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম রাস্তা হলো সংবিধান। সংবিধানের মধ্য দিয়ে সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দায়বদ্ধ করতে হবে। যেমন পুলিশ, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র, স্থানীয় সরকার—এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই নিয়ন্ত্রণ করার রুলস বা সূত্র হলো, অবশ্যই মানতে হবে মানে অলঙ্ঘনীয় আইন হলো আমাদের সংবিধান।
বর্তমান সংবিধানের অনেক বিষয় আছে, যেটা এই সুবিধাগুলো দিতে পারে না। তাই এই সংবিধান সংস্কারে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর যদি পূর্ণ বাস্তবায়ন নতুন সরকার এসে করে, তাহলে আমাদের একটা অগ্রগতি হতে পারে।
তবে মোটের ওপর একটা সাংস্কৃতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবহ তৈরি করা দরকার বহু মতের, বহু পথের। সেই পরিসর তৈরি করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, সিভিল সোসাইটির একটা কনসার্টেন্ট এফোর্ট লাগবে। সবার জায়গা থেকে বহুত্ববাদ, ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রান্তিক মানুষ যেমন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, ভিন্ন মত-পথ ও সংস্কৃতির এবং ভিন্ন পরিচয়ের মানুষকে যদি আমরা আমাদের পরিসরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে ক্রমেই তারা তাদের কণ্ঠগুলোকে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে। এভাবে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কেন পথ হারাল?
গণ-অভ্যুত্থানের প্রাথমিক অর্জন একটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ও শাসনব্যবস্থার পতন, সেই পতনের পূর্ণ লক্ষ্য কিন্তু অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেষ হয়নি। একটা শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রে যে বা যাঁরা ছিলেন, শুধু তাঁর বা তাঁদেরই পতন হয়েছে।
কিন্তু এটা তো শুধু একজন ব্যক্তির ব্যাপার ছিল না। এই ব্যক্তিকে সমর্থন করেছে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। যারা এই ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রেখেছিল তাদের সবকিছু ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই শক্তিগুলো আপাতত একটু পেছনে সরে গেছে, কিন্তু তারা তো নিশ্চিহ্ন হয়নি। তাদের যে বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাও কিন্তু না। ফলে তারা চোখের সামনে থেকে খানিকটা সরেছে, কিন্তু এই শক্তিগুলো এখনো সক্রিয় আছে। যদি ব্যবসায়ীদের কথা ধরা যায়, যে ব্যবসায়ীরা বিগত রেজিমকে সমর্থন করতেন, সেই ব্যবসায়ীদের তো পতন হয়নি। তাঁরা যে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দখল করতেন, সেগুলো তো এখনো বলবৎ আছে।
সিভিল প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন ‘ক’ সচিবের জায়গায় ‘জ’ সচিব এসেছেন। কিন্তু ‘জ’ সচিব আসার মধ্য দিয়ে আমলাতান্ত্রিকতার নিয়মতান্ত্রিকতা, ন্যায্যতা, গণমুখিতা ও দায়বদ্ধতা—এই চারটিকে উল্লেখযোগ্য মনে করি, সেগুলো তো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আমলাতন্ত্রের মধ্যে বস্তুত কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এটা না হওয়ার কারণ কী?
এটা না হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের যে শক্তিগুলো ছিল, সেই শক্তিগুলোর এই নতুন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। অর্থাৎ আমরা আমলাতন্ত্রের বদল চাই, সেই বদলের পদ্ধতিটা কী হবে, সেটার কোনো পূর্ব প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ছিল না। আবার রাতারাতি যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, সেই পরিবর্তনগুলোকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাখতে হবে, সেটার বিকল্প পদ্ধতি কোনো পক্ষই অফার করতে পারেনি। ফলে যারা সংগঠিত ছিল, অচিরেই তারা সেটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মানে ‘ক’-এর জায়গায় ‘ঙ’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এটা তো আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। আকাঙ্ক্ষা ছিল ব্যবস্থাটার বদল। সেটা তো হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন, নতুন স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি শোনা বা অনুমান করা যাচ্ছে। আপনার কী মতামত?
নতুন স্বৈরতন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা আমার কাছে অতি সরলীকরণ মনে হয়। তবে আমার বিশ্বাস, এই বাংলাদেশ আর ২০২৪-এর আগের বাংলাদেশ—এটার মধ্যে গুণগত পার্থক্য আছে। নতুন বাংলাদেশে কারও পক্ষে, কোনো দলের পক্ষে এবং কোনো শক্তির পক্ষে আগের মতো আর স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হবে না। নতুন স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আবার যে আসবে, সেটা নিয়ে আমি ভাবছিও না।
একটা উদাহরণ দিই, এখনকার মাঠটা দুর্বল। ধরেন, আমি একটা সুন্দর শার্ট পরে আছি, তখন অনেকে বলবেন, আমি তো ধনী। কিন্তু সত্যিকারভাবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর শার্ট পরে থাকব কি না, সেটার নিশ্চয়তা তৈরি হয়নি। ফলে এখন যে শক্তিগুলোর উত্থান এবং যে শক্তিগুলোর পতন দেখা যাচ্ছে—এটাই কিন্তু শেষ কথা নয়। আসলে আমাদের অভ্যুত্থান পর্বটা এখনো শেষ হয়নি। ফলে এটা থিতু হওয়া এবং শক্তিগুলোর মধ্যে বোঝাপড়াও ঠিক হয়নি। সেটার জন্য আরও সময় লাগবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলো। নতুন একটি ছাত্রসংগঠন এখন এর পরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখছেন?
প্রথমত একটা নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে একটা ছাত্রসংগঠন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। খেয়াল করার বিষয় যে, ডাকসুর ভূমিকা কী? ডাকসু আসলে কী করতে পারে? ডাকসুর কাজের পরিধি কতটুকু? সে বিষয়ে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং যারা নতুন করে ডাকসু পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে—তাদের কারোরই ডাকসু কার্যপ্রণালি নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ধারণা করার দরকার নেই। কারণ, আমাদের কাছে তো পুরো ডকুমেন্টস আছে। ডকুমেন্টসটা হলো ডাকসুর গঠনতন্ত্র। সেই গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট করে লেখা আছে, কে, কী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কতটুকু করতে পারে। সেখানে কী লেখা আছে—আমার ধারণা, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অর্থাৎ ভিসি থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা আছেন এবং ডাকসুর ভিপি, জিএসসহ কেউ-ই ডাকসুর গঠনতন্ত্র ভালোভাবে আত্মস্থ করতে পারেননি।
তবে একটা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের এ রকম একটা সংস্থা থাকা দরকার। কারণ, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এর একটা অন্যতম কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিজমও। এটা অবশ্যই থাকতে হবে। ফলে সেটা আছে। কিন্তু ডাকসুকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও সচেতনতা থাকা দরকার, সেসবের কিছুই নতুন নেতৃত্বের মধ্যে নেই। তাঁদের কার্যকলাপের মধ্যে এখনো তা প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমার কাছে মনে হয়, এখনো দায়িত্ব পালনের জন্য সামনে যে কয়েক মাস আছে, এই সময়ের মধ্যে তাদের আগে সেটা আত্মস্থ করা দরকার। এরপর একটা উদাহরণ তৈরি করা দরকার, পরবর্তী সময়ে যাঁরা ডাকসুর নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে তাঁদের যতটুকু করার কথা, সেই কাজের মধ্যে তাঁরা সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন—সেই শিক্ষাটা নেওয়া খুব জরুরি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কি আমরা কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাব বলে মনে করেন?
প্রথম কথা হলো, বাংলাদেশের যে পরিবর্তন সেটার জন্য নির্বাচন করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচন দুটি কাজ করবে। প্রথমত, নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার বৈধ শক্তির বৈধতা পাবে জনগণের কাছ থেকে। ফলে তাদের আইনগত শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি যুক্ত হলে সেটা আরও বড় শক্তি আকারে হাজির হবে। ওই শক্তিটা প্রয়োগ করে স্থিতিশীলতা অর্জনে কাজ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচন এমন একটা প্রক্রিয়া—যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হবে এবং সেটাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে।
মাজার-দরগা ভাঙা, বাউলদের প্রতি নিগ্রহ—এ ঘটনাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন। এসব ঘটনায় আমাদের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ কি সংকটের মধ্যে পড়ছে না।
আমাদের যে সংবিধান এখনো কার্যকর আছে এবং এর বাইরেও আমরা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আছি, সে জায়গায় বহুত্ববাদ মানে বহু চিন্তা, বহু ধারণা, বহু মত আমাদের জীবন-যাত্রার অংশ। এখন আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা বহুত্ববাদী এবং ভিন্নতার প্রতি পরিষ্কারভাবে একটা আক্রমণ। সম্প্রতি বাউলদের প্রতি আক্রমণের ঘটনা, সেটা কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পরে সেটা একটা কনক্রিট আকার ধারণ করেছে।
এটা পরিষ্কারভাবে মানুষের চিন্তা, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির অধিকারের পরিচিতির ওপর বিশাল একটা আক্রমণ। তবে আক্রমণগুলো ঠেকানো এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। আশ্চর্যজনকভাবে রাষ্ট্র এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যত ধরনের ঘটনা ঘটছে—অমুকের বাড়ি ভাঙা হোক, তমুককে ঘেরাও করে দাবি আদায় করা হোক, মাজার ভাঙা হোক—সব ঘটনায় মানুষ তার নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে, যেটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না। এখানে অন্তর্বর্তী সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী?
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অবশ্যই আমাদের কাছে স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা এক দিনে অর্জন করা যাবে না। কিন্তু প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছি, এখানে যারা আইন ভঙ্গ করে এবং নাগরিকদের অধিকার ভঙ্গ করে—এ রকম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম রাস্তা হলো সংবিধান। সংবিধানের মধ্য দিয়ে সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দায়বদ্ধ করতে হবে। যেমন পুলিশ, বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র, স্থানীয় সরকার—এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই নিয়ন্ত্রণ করার রুলস বা সূত্র হলো, অবশ্যই মানতে হবে মানে অলঙ্ঘনীয় আইন হলো আমাদের সংবিধান।
বর্তমান সংবিধানের অনেক বিষয় আছে, যেটা এই সুবিধাগুলো দিতে পারে না। তাই এই সংবিধান সংস্কারে যে প্রস্তাবগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর যদি পূর্ণ বাস্তবায়ন নতুন সরকার এসে করে, তাহলে আমাদের একটা অগ্রগতি হতে পারে।
তবে মোটের ওপর একটা সাংস্কৃতিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবহ তৈরি করা দরকার বহু মতের, বহু পথের। সেই পরিসর তৈরি করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, সিভিল সোসাইটির একটা কনসার্টেন্ট এফোর্ট লাগবে। সবার জায়গা থেকে বহুত্ববাদ, ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধা, প্রান্তিক মানুষ যেমন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ, ভিন্ন মত-পথ ও সংস্কৃতির এবং ভিন্ন পরিচয়ের মানুষকে যদি আমরা আমাদের পরিসরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে ক্রমেই তারা তাদের কণ্ঠগুলোকে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবে। এভাবে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লা
২৮ অক্টোবর ২০২১
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১১ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় নামলে যদি সেগুলো ভেঙে পড়ে! ভেঙে না পড়লেও যদি একটা ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে! রাস্তায় থাকা তো সেই ঝুঁকিরই ব্যাপার। মুহূর্তের মধ্যে চিন্তা করলাম, আশপাশে ফাঁকা বড় মাঠ কোথায়? কাছাকাছি তার একটিও নেই। তার চেয়ে ঘরে কোনো মজবুত বিমের নিচে থাকাটাই নিরাপদ ভেবে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম একটি কলাম ধরে। কাঁপাকাঁপি করে ফ্রিজ সরল, আলমারি নড়ল। আর একটু জোরে হলে রক্ষে ছিল না। ঢাকা শহর থেকে লাশ উদ্ধারের মানুষ পাওয়া যেত না। এই হলো আমাদের প্রিয় ঢাকা শহর।
একটু খালি জায়গাও আমরা আমাদের রক্ষার জন্য ছেড়ে দিইনি। নিজেদের জন্য যখন ছাড়িনি, তখন গাছপালার জন্য কেন আর ছাড়ব? মহল্লায় মহল্লায় কোনো বড় মাঠ নেই। যে রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাই, সে রাস্তাতেই কেবল দালানকোঠার জঞ্জাল, পাকা রাস্তা আর ফুটপাত। যেসব রাস্তার ধারেও যে গাছপালা আছে, সেগুলোরও গোড়া পর্যন্ত পাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ যেন একটি গাছকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তার গলা টিপে হত্যার সব আয়োজন আমরা সেরে রেখেছি। গাছটা যে আকাশের দিকে বাড়বে তারও জো নেই। রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার গাছপালার সে সাধকেও খুন করেছে। বৃষ্টি হলে সে বৃষ্টির পানিতে যে মাটি ভিজবে, চারদিকে কংক্রিটে চাপা পড়া মাটির সে সুযোগও নেই। গাছগুলো তো দিনের পর দিন পানির পিপাসায় ধুঁকছে। রাস্তায় বা সরকারি জায়গাগুলোয় লাগানো গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না, খাবার দেয় না। মানুষ গাছকে না দেখলেও গাছ তো মানুষকে না দেখে পারে না। তাই সে তার সব শক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ সেই উপকারী বন্ধুদেরই আমরা জায়গা না দিয়ে জায়গা করে দিচ্ছি দালানকোঠাদের। দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সব শহরের সবুজ এলাকা। কেবল কংক্রিট আর কঠিন মমতাহীনতার গল্পই যেন রোজ আমরা লিখে যাচ্ছি। অথচ একটি শহরকে ভালো রাখতে হলে, শহরের মানুষকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিটি শহরেই পরিমিত পরিমাণে খোলা জায়গা থাকা দরকার।
শহরে মানুষ বাড়লে সে অনুপাতে তাদের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণও বাড়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। শহরে মানুষ যত বাড়ছে, খালি বা খোলা জায়গা তত কমছে, জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে, খাল সরু হতে হতে একসময় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে থাকছে না। অথচ প্রতিটি শহর ও শহরের মানুষকে ভালো রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ ও উন্মুক্ত পাবলিক স্পেস থাকা দরকার। এসব খোলা জায়গা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া এগুলো নগরবাসীকে সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে। এমনকি এরূপ খোলা জায়গা ও সবুজ অঞ্চল থাকলে তা নগরের বায়ুদূষণ কমায় ও মানুষকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা দেয়। কেননা, মানুষ সুস্থ থাকলে স্বভাবতই সে চিকিৎসকের কাছে যাবে না। ফলে নগরবাসী প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ টাকা চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করছে তা সাশ্রয় হবে, যা তাদের জীবনমান বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন বাস করে শহরে। এই সংখ্যা ২০৩০ সালে হবে ৬০ শতাংশ ও ২০৫০ সালে হবে ৭০ শতাংশ। শহর এলাকার অবস্থা ও মান তাই বিশ্বের অনেক মানুষের সুস্থতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। স্বাস্থ্য সচেতন নগর গড়তে না পারলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অসুস্থ থাকবে। শহর কেবল শুধু মানুষের থাকার স্থানই না, বরং সেটি উদ্ভাবন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি চর্চারও কেন্দ্রস্থল। তাই শহরের মানুষেরা ভালো না থাকলে এসব বিষয়ও বিকশিত হবে না, সভ্যতার বিকাশও রুদ্ধ হবে। তাই প্রতিটি শহরেই প্রয়োজনীয় পরিমাণে পাবলিক স্পেস থাকতে হবে।
পাবলিক স্পেস হলো যেখানে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত এবং সে জায়গাকে উপভোগ করার জন্য জনগণকে কোনো মূল্য দিতে হয় না। এসব স্থান হলো জনসাধারণের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও বিনোদনের একটি কেন্দ্র। ঢাকা শহরের প্রধান পাবলিক স্পেসগুলো হলো রমনা, সোহরাওয়ার্দী, ওসমানী, চন্দ্রিমা, বলধা ও উদ্ভিদ উদ্যান এবং ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও গুলশান লেক। দুটি সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তার মানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ঢাকা শহরে বাস করে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অথচ এ শহরে খেলার মাঠ আছে মাত্র ৩৩২ একরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ তথা খোলা জায়গা নেই। শহরে একজন মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গার প্রয়োজন। ঢাকা শহরে যা আছে ১ বর্গমিটারেরও কম। ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটের হিসাবে যেখানে জমি বেচাকেনা হয় সেখানে বর্গকিলোমিটারের হিসাবে ফাঁকা জায়গা বা পাবলিক স্পেস থাকা দুরাশা।
জাতিসংঘের ইউএন-হ্যাবিটেটের তথ্য অনুযায়ী একটি শহরে মোট আয়তনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ জায়গা পাবলিক স্পেস হিসেবে থাকা উচিত, যার মধ্যে ৩০-৩৫ শতাংশ থাকবে রাস্তাঘাট ও ফুটপাত এবং ১৫-২০ শতাংশ জায়গা থাকবে পাবলিক স্পেস। প্রাচীনকালে ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস ছিল অবারিত, ধানখেতও ছিল। মোগল আমলের আগে পুরান ঢাকা একটি সহজাত পদ্ধতিতে বিকশিত হয়েছিল। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকাবাসী খোলামেলা জায়গায় সামাজিকীকরণের অভ্যাস পেয়েছিল। এর ফলে একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক স্থানবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। গলি (রাস্তা), মোড় (নোড), মহল্লা (পাড়া) ও চক (বাজার)। রাস্তার ধারে মহল্লাগুলো রৈখিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো ছিল মহল্লার কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো ছিল আঁকাবাঁকা, অনিয়ত এক জটিল নেটওয়ার্ক, যেগুলো গিয়ে মিশেছিল চকে। ঢাকা একসময় প্রশান্তির শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে শহরে ছিল মনোরম উদ্যান, পরিষ্কার রাস্তা ও সবুজের সমারোহ। এখন তা হয়েছে ইট ও কংক্রিটের জঙ্গল। শহরের পুরোনো অংশে ৫ শতাংশেরও কম খোলা জায়গা রয়েছে, নতুন অংশে রয়েছে ১২ শতাংশ। মোট খোলা জায়গার পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি হবে না।
এখানে দুটি বিষয়, একটি হলো খোলা জায়গা বাড়ানো বা রাখা, অন্যটি হলো খোলা জায়গার সদ্ব্যবহার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা। একটি সুস্থ শহর গড়ে তুলতে হলে একটি আদর্শ স্বাস্থ্যবান শহরের প্রায় অর্ধেকটায় থাকবে মানুষ, বাকি অর্ধেকে থাকবে রাস্তাঘাট, উদ্যান, জলাশয়, খেলার মাঠ ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় ঢাকা শহরে যা অসম্ভব। তাই নজর দিতে হবে যতটুকু খোলা জায়গা আছে সেটুকুও যেন সংকুচিত না হয় এবং সেসব জায়গা যেন প্রকৃত পাবলিক স্পেস হয়ে ওঠে, যেখানে থাকবে সবার সহজ প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য। বিশেষজ্ঞজনেরা ঢাকা শহরের পাবলিক স্পেস নিশ্চিত করতে চারটি মুখ্য পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলো হলো, বিদ্যমান উন্মুক্ত স্থান পুনরুদ্ধার, উদ্যানগুলোর উন্নয়ন, রাস্তাগুলোকে নাগরিক স্থান হিসেবে তৈরি করা এবং জলাশয়গুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা। নগরবিদেরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লা
২৮ অক্টোবর ২০২১
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
১১ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মারের ঝড়টা ছিল যথেষ্ট বেগবান, সে কারণে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিসি পাহারায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জিনের ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে কখনো কখনো। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট টাঙ্গাইলে জিনের ভয় দেখিয়ে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এরপর তাঁদের কোনো শাস্তি হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।
রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার যিনি শিক্ষক, তিনিও ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদ্রাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এই খবর বেরিয়েছিল পত্রিকায়। মতলববাজ এই ইমাম ধরাও পড়েছিলেন পুলিশের হাতে।
মাদ্রাসাশিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার শিশুর তালিকা করা হলে তা হয়ে উঠবে দীর্ঘ। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করার এই প্রবণতা শুধু মাদ্রাসাশিক্ষকদের মধ্যেই নয়, ক্ষমতা আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। বড়দের যৌনলিপ্সার শিকার হয় শিশুরা। এর প্রতিকার কী করে হবে, তা খুঁজে বের করা সহজ নয়। তবে, এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। নিজ এলাকায় যে সব মাদ্রাসা রয়েছে, সে মাদ্রাসাগুলোয় শিশুদের সঙ্গে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে কি না, সেদিকে থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যাঁরা জড়িত হন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর বিচারালয়ে তাঁরা যেন শাস্তি পান, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।
যৌনলিপ্সা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়া। ভালো কিছুর সঙ্গে সেখানে মন্দ কিছুরও সদ্ভাব গড়ে তোলা যায়। গোপনে এই দুনিয়ায় ঢুকে বিপথে যাওয়ার অনেক তরিকা খুঁজে পাওয়া যায়। আরেকটি কারণ হলো, শিশুদের অসহায়ত্ব। ক্ষমতাবান শিক্ষক যদি কিছু চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।
যে শিক্ষার্থীটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে একজন মাদ্রাসাশিক্ষকের লিপ্সার কাছে পরাজিত হলো, তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন অসৎ, যৌন-উন্মাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়তো তাঁদের কিছুটা শান্তি দেবে, কিন্তু তাঁরা কি আর তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাবেন? ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে শিক্ষার্থীটি এই নৃশংস পাশবিকতার কথা জানিয়েছিল মা-বাবাকে। সেই ভারও সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের—এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে?

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মারের ঝড়টা ছিল যথেষ্ট বেগবান, সে কারণে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিসি পাহারায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জিনের ভয় দেখিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করার অভিযোগও উঠেছে কখনো কখনো। বেশি দূরে যেতে হবে না, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট টাঙ্গাইলে জিনের ভয় দেখিয়ে ও বাথরুমে গোপন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এরপর তাঁদের কোনো শাস্তি হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি।
রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার যিনি শিক্ষক, তিনিও ১৮ বছর ধরে স্থানীয় অনেকের অসুস্থতায় ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিতেন। বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে ঝাড়ফুঁক ও জিনের ভয় দেখিয়ে সুন্দরী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। বাদ যায়নি মাদ্রাসা ও মসজিদে আসা শিশুরাও। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই এই খবর বেরিয়েছিল পত্রিকায়। মতলববাজ এই ইমাম ধরাও পড়েছিলেন পুলিশের হাতে।
মাদ্রাসাশিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার শিশুর তালিকা করা হলে তা হয়ে উঠবে দীর্ঘ। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করার এই প্রবণতা শুধু মাদ্রাসাশিক্ষকদের মধ্যেই নয়, ক্ষমতা আছে, এমন যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। বড়দের যৌনলিপ্সার শিকার হয় শিশুরা। এর প্রতিকার কী করে হবে, তা খুঁজে বের করা সহজ নয়। তবে, এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। নিজ এলাকায় যে সব মাদ্রাসা রয়েছে, সে মাদ্রাসাগুলোয় শিশুদের সঙ্গে কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ড ঘটছে কি না, সেদিকে থাকতে হবে তীক্ষ্ণ নজর। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যাঁরা জড়িত হন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর বিচারালয়ে তাঁরা যেন শাস্তি পান, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।
যৌনলিপ্সা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়া। ভালো কিছুর সঙ্গে সেখানে মন্দ কিছুরও সদ্ভাব গড়ে তোলা যায়। গোপনে এই দুনিয়ায় ঢুকে বিপথে যাওয়ার অনেক তরিকা খুঁজে পাওয়া যায়। আরেকটি কারণ হলো, শিশুদের অসহায়ত্ব। ক্ষমতাবান শিক্ষক যদি কিছু চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে তা থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজে বের করা কঠিন।
যে শিক্ষার্থীটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে একজন মাদ্রাসাশিক্ষকের লিপ্সার কাছে পরাজিত হলো, তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন অসৎ, যৌন-উন্মাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়তো তাঁদের কিছুটা শান্তি দেবে, কিন্তু তাঁরা কি আর তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাবেন? ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে শিক্ষার্থীটি এই নৃশংস পাশবিকতার কথা জানিয়েছিল মা-বাবাকে। সেই ভারও সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদের—এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে?

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লা
২৮ অক্টোবর ২০২১
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
১১ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১১ ঘণ্টা আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

বিসিএসসহ সব পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা বড় ধরনের সংকট দেখা দিচ্ছে। ব্যাংক, অডিটসহ সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লাখ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং একটি এমসিকিউর নিয়মে এই পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। প্রাথমিক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলোর একটি সহজ উপায় বের করা হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে লা
২৮ অক্টোবর ২০২১
কাজী মারুফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের সিনিয়র ফেলো।
১১ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরে পাঁচতলা ভবনের একটি বাসায় থাকি। কয়েক দিন আগে ভূমিকম্পের একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে মনে হলো, এক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়া উচিত। পরক্ষণেই মনে হলো, নিচে যাব ঠিক আছে, কিন্তু নিচে গিয়ে দাঁড়াব কোথায়? গায়ে গায়ে দালানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
১১ ঘণ্টা আগে
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ১৪ বছর বয়সী সেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধর্ষণের আট দিন পরে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে এলাকাবাসী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে