Ajker Patrika

আশায় বুক বাঁধা বিএনপির মনে নানা ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ০৬
আশায় বুক বাঁধা বিএনপির মনে নানা ভাবনা

দেড় দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের পর দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন দেখছে বিএনপি। দলটি আশায় বুক বাঁধছে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট সুযোগ নিয়ে আসবে তাদের জন্য। শিগগির হয়তো দেশে একটি নির্বাচন হবে, তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি হবে। কিন্তু এমন সুদিনেও নতুন শঙ্কা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে তাঁদের ভাবনায়।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখনো প্রশাসনের সব জায়গায় আগের সরকারের লোকজনই বসে আছেন। নির্বাচন কমিশনে এখনো তাঁদের লোকই আছেন। আওয়ামী লীগকে যাঁরা প্রতিষ্ঠা করেছেন, ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সরানো যায়নি। এসব লোক অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন। তাঁরা বিএনপির শক্তি খর্ব করতে চান।

এই চক্রের প্রভাবেই সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে ধীরলয়ে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির অনেকে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা প্রত্যাহারসহ নানা বিষয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

যদিও জনগণের শক্তির কাছে কোনো ষড়যন্ত্রই পাত্তা পাবে না বলে আত্মবিশ্বাসী রয়েছেন বিএনপির নেতারা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। তবে কেউ কাউকে ইচ্ছা করলে মাইনাস করতে পারবে না, আবার কেউ ইচ্ছা করলে প্লাসও করতে পারবে না। মাইনাস-প্লাস করার একমাত্র ক্ষমতা হলো জনগণের। জনগণ সরকারের ওপর আশা রেখেছে। আমি আশা করি, সরকার জনগণের সেই আশা পূরণ করবে।’

এদিকে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার কোনো ফর্মুলা যদি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়, সে ক্ষেত্রেও বিকল্প করণীয় ঠিক করে রেখেছে দলটি।

জানতে চাইলে দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার আরও কিছু সময়ের দাবি রাখে। এ জন্যই আমরা একটি যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছি।’

এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি না যে, এখানে আবার ওয়ান-ইলেভেন ফিরে আসবে। সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে, মানুষের ভোটাধিকারের পক্ষে কাজ করবে, এটিই আমরা প্রত্যাশা করি।’

৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে মাঠে নেই আওয়ামী লীগ, দেশ ছেড়ে গেছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

সরকারও বলছে, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি তারা একই সঙ্গে চালিয়ে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে পারলেই নির্বাচন দেওয়া হবে। 
গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আপনি রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। কবে নির্বাচনের জন্য আপনি প্রস্তুতি নিতে পারবেন। কবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা ফিরে যাব, মানুষ ইশারা পেতে চায়।’

গত দুই মাসে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিন দফায় সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সবশেষ ৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপ করে বিএনপি। ওই সংলাপে নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে এসেছে দলটি।

সেদিন সংলাপে বসার কিছুক্ষণ আগে মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে রাজধানীতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সমাবেশে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাঁর দল বিরাজনীতিকরণে বিশ্বাস করে না এবং আবার ‘মাইনাস টু’ দেখতে চায় না।

সূত্র বলছে, পটপরিবর্তনের পর এখন সরব উপস্থিতিতে মাঠে রয়েছে বিএনপি। সবদিক থেকে গুছিয়ে থাকা বিএনপির ধারেকাছে আর কোনো দল নেই। এখন নির্বাচন হলে সেখানে বিএনপি বিশাল জয় পাবে, এতে কোনো সন্দেহ আছে বলে তাঁদের নেতা-কর্মীরা মনে করেন না। 
জামায়াতে ইসলামীও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জোরেশোরে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। তবে দ্রুত নির্বাচন হলে সেভাবে গুছিয়ে ওঠা তাদের জন্য কঠিন বলে রাজনৈতিক মহলের আলোচনা। এমনকি তারা যে জোট গঠনের চেষ্টা করছে, তাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। জোট আদৌ হবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ আছে এখনো।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায় নতুন হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৈরি প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির। এই প্ল্যাটফর্মও ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির মনে হচ্ছে, রাজনীতির মাঠে তাঁদের প্রতিরোধের চক্রান্ত হচ্ছে। অন্তত নিদেনপক্ষে তাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্যই তাঁদের সমান্তরালে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগও দেখছেন দলটির নেতারা। এ সবকিছু করতেই নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে ধীরগতি বলে তাঁদের ধারণা।

সরকারের গতিবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘কোথায় যেন ঢিলেঢালে ভাব; এভাবে চলবে না। আমি শুধু বলে রাখতে চাই, আমরা আন্দোলন থেকে চূড়ান্ত ইস্তফা দিইনি। অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে কারও যদি অশুভ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আমরা আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ আপনাদের শোনাব। যদি সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে রহস্য থাকে, তাহলে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতিরোধের ঝড়ের বাক্য শোনাব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়া ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন: ডা. জাহিদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০০
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের ফটকে ব্রিফ করেন ডা. জাহিদ। ছবি: স্ক্রিনশট
বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের ফটকে ব্রিফ করেন ডা. জাহিদ। ছবি: স্ক্রিনশট

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন রোগীর শারীরিক অবস্থা যতটুকু ডিসক্লোজড (সাধারণকে জানানো) করা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় তা-ই করা হয়েছে। দেশবাসীকে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাই। মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দোয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে যেন বাংলাদেশে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন—এই কামনা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে তাঁর অবস্থা পূর্বের যে অবস্থায় ছিল, তাই রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকদের সমন্বয় রয়েছে। প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের সময়ের ব্যবধান থাকায় সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে মিটিং হয়। এখন পর্যন্ত যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন। আমরা আশাবাদী—দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাঁর বয়স, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং পরিকল্পিতভাবে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কারণে শারীরিক জটিলতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই—তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার সর্বক্ষণ উপস্থিত রয়েছেন। দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সব নেতা-কর্মী, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্য রোগীদের চিকিৎসা যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। সবার জন্যই এই হাসপাতাল উন্মুক্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কারণে আপনাদের চিকিৎসা সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। আমাদের নেতাকর্মীরাও কোনো বিঘ্ন ঘটাবেন না।’

ব্রিফিং শেষে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ওনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে—এটা বলতে পারেন।’

উল্লেখ্য, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে দ্রুত এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডন সফরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪১
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিমানবন্দরে পৌঁছেই সরাসরি যুক্তরাজ্যের নটিংহামে নেতা-কর্মীদের পূর্বনির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নিতেই ডা. শফিকুর রহমান লন্ডন সফর করছেন।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে জানান, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বৈঠকের নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় বুধবার সকালে শফিকুর রহমান লন্ডন সফর করছেন।

জামায়াতের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, লন্ডন সফর শেষে শফিকুর রহমান সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন। সৌদি আরব থেকে ২১ ডিসেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এর আগে ১৭ ডিসেম্বর সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন যাত্রা করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই মিত্র জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

  • ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড়ের ইঙ্গিত।
  • আজ বৈঠক হবে এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৫
দুই মিত্র জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

আসন ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ নিষ্পত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোটকে আরেকটি আসন ছাড় দেওয়া নিয়েও আলোচনা আছে। এই দুই জোটের অন্য দলগুলোকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভিন্নভাবে মূল্যায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বিকেলে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অংশ নেন।

সূত্র বলছে, ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন দেওয়ার ব্যাপারে সবুজসংকেত দেওয়া হয়েছে, যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে ২০ ডিসেম্বর।

এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ৬ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠকে বসবে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। সবশেষে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি।

১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোটের বৈঠক সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৫, কুষ্টিয়া-২ আসনসহ কয়েকটি আসনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে দুই জোটের মিত্ররা। বিএনপির হাইকমান্ড তাদের আশ্বস্ত করেছে, এই বিষয়গুলো ইতিবাচকভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন মিত্র জোটের নেতারা। তাঁদের দাবি, জাতীয় সরকারে যেন সব দলকেই মূল্যায়ন করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই জোটের নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, তাঁদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে। যাঁদের মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের সংসদের উচ্চকক্ষে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। তারা দীর্ঘ দিনের মিত্র হিসেবে সর্বোচ্চ মূল্যায়নের চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।’

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা ৯টা আসন চেয়েছি। বিএনপির পক্ষে সমমনা জোটকে আসন দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আর যাঁদের এবার মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও কবির সিগমা। ছবি: সংগৃহীত
ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও কবির সিগমা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হয়েছেন দুই সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী। তাঁরা হলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

আজ বুধবার তাঁরা আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দ্বারস্থ হন।

এলাকার কর্মী ও সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদক্ষেপ এবং নিজের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা।

সিগমা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

সিইসিকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে কাজী রেহা কবির সিগমা বলেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্য়য়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’

কাজী রেহা কবির সিগমা বলেন, ‘আমি কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। গণসংযোগের কাজে অনেক কর্মী-সমর্থক তৎপর হয়েছে। কিন্তু আমার আইনানুগ গণসংযোগের কাজে ত্রাস সৃষ্টি করে আমার কাজ দুরূহ করার কল্পে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার পুলিশ কর্তৃপক্ষ ন্যক্কারজনকভাবে তৎপর হয়েছে।’

রেহা কবির সিগমা সিইসিকে বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১টায় তারা এক নিরপরাধ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ভুয়া মামলায় কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায়। আমার কর্মীদের আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়েছে। যার ফলে নির্বাচনী কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

কবির সিগমা আরও বলেন, ‘আমার কর্মী মো. কিয়ামত আলী (৫০) একজন নিরীহ জনপ্রিয় লোক। তার নামে কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না। তাকে ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বরে করা একটি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই মামলায় আমার কর্মী মো. কিয়ামত আলী এজাহারভুক্ত আসামি নয়। কিয়ামত আলীর বাড়ি অষ্টগ্রাম থানা হতে মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটার পথ দূরত্বে হলেও গত এক বছরে কোনো কারণে কখনো পুলিশ কিয়ামতের খোঁজ করেনি। কিয়ামতের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হলেও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, শুধু আমার কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির জন্যই অষ্টগ্রাম থানা-পুলিশ কোনো বিশেষ স্বার্থ হাসিল করার জন্য এ কাজ করেছে।’

সিগমা অবিলম্বে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করে আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নাতীত ও সুষ্ঠু করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সিইসিকে অনুরোধ জানান।

পরে রেহা কবির সিগমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’

এদিকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

প্রার্থী নিরাপত্তার শঙ্কা নিয়ে ইসিতে আসছেন—এ বিষয়ে কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে—জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যারিস্টার ফুয়াদ এসেছিলেন। তাঁর অভিযোগ হচ্ছে, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না। আমরা সার্বিকভাবে সব প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।

সব প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন না। জনগণ যাঁকে বেশি ভোট দেবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন।’ তাই সচিব সব প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের আচরণ বিধিমালা মেনে চলার আহ্বান জানান ইসি সচিব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত