Ajker Patrika

সখীপুরের এক গ্রামজুড়ে তৈরি হয় মদ, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর (টাঙ্গাইল) 
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ২০
সখীপুরের এক গ্রামজুড়ে তৈরি হয় মদ, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

টাঙ্গাইলের সখীপুরের একটি গ্রামের আনাচে-কানাচে তৈরি হচ্ছে চোলাই মদ। ওই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোচ সম্প্রদায়ের কিছু লোক নিজেদের বসতবাড়িতে এসব মদ তৈরি করেন। শুধু নিজেরা সেবনের কথা বলে তৈরি করলেও গোপনে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ মদ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের মাদকাসক্তদের কাছে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের এই গ্রামের নাম ধোপারচালা। এখানকার কয়েকজন সচেতন যুবক আজকের পত্রিকাকে নিজ গ্রামের মাদকের ভয়াবহতার এই চিত্র বর্ণনা করেছেন। 

এই যুবকেরা জানান, হাতের কাছে মাদক পেয়ে গ্রামের উঠতি বয়সের যুবকেরা প্রতিনিয়ত আসক্ত হয়ে পড়ছে। নীরব যন্ত্রণায় দুর্বিষহ জীবন পার করছে পরিবারগুলো। এ নিয়ে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসছে গ্রামবাসী। এতে কখনো কখনো অভিযান চালিয়ে মদ ধ্বংস করা হলেও স্থায়ী কোনো প্রতিকার পায়নি গ্রামবাসী। 

ধোপারচালা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোচ সম্প্রদায়ের ২০-২৫টি পরিবার চোলাই মদ তৈরি করে আসছে। এসব মদ নিজেরা পান করার পাশাপাশি নিয়মিত বাজারজাত করা হয়। প্রতি রাতে শতাধিক লিটার চোলাই মদ উপজেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। এলাকার কোচ সম্প্রদায়ের কয়েকটি সচ্ছল পরিবার মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেও জানিয়েছে স্থানীয়রা। 

গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাদকাসক্তরা এসে এলাকায় অপরাধ করে যাচ্ছে। তাদের দ্বারা গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের শিকারও হয়। গত কয়েক বছরে মাদক প্রতিরোধে স্থানীয় মসজিদ ও মন্দির কমিটির সমন্বয়ে সভা-সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু এতে লাভ হয়নি। এখনো অবাধে চলছে মদ তৈরি ও বিক্রি। 

সখীপুরের ধোপারচালা গ্রামে ধ্বংস করা হচ্ছে চোলাই মদজোবায়ের শিকদার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘মাদকের ছড়াছড়িতে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামজুড়ে মদ তৈরির কারখানা থাকায় বিভিন্ন মহলে নিজ এলাকার পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। কেউ কেউ আমাদেরও মাদকাসক্ত মনে করেন।’ 

ওই এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা আদিবাসী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি সুরেশ চন্দ্র কোচ বলেন, ‘কয়েক দিন পরপরই এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চোখে পড়ছে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে মাদক বন্ধ করা সবার জন্যই জরুরি হয়ে পড়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য হুসাইন মাহমুদ এরশাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূলত কোচ সম্প্রদায়ের লোকজন বংশগতভাবেই মদ তৈরি করে নিজেরা সেবন করেন। কিন্তু কিছু পরিবার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পূজা-পার্বণ, বিয়ের অনুষ্ঠান ও সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে শ্মশানে যাওয়ার আগে আমাদের মদ্যপানের নিয়ম রয়েছে। কেউ কেউ এই সুযোগে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মদ তৈরি ও বিক্রি করেন। প্রশাসনের চাপে এসব এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।’ 

সখীপুর থানার উপপরিদর্শক মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ ও উপকরণ ধ্বংস করেছে। সম্প্রতি অভিযানে কিছুটা স্থবিরতা আসায় মদ তৈরি পুনরায় শুরু হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...