Ajker Patrika

শিক্ষকদের কেন টার্গেট করা হচ্ছে

চিররঞ্জন সরকার
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৪৩
শিক্ষকদের কেন টার্গেট করা হচ্ছে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা। আর সবচেয়ে বেশি মব জাস্টিসের শিকার হয়েছেন শিক্ষকেরা। যে যেভাবে পেরেছে, শিক্ষকদের ওপর ঝাল মিটিয়েছে। এখনো মেটাচ্ছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্দোলনকারী ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সীমাহীন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে ক্ষোভ কমতে থাকে।

আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু একশ্রেণির সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্রদের উসকে দেয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। নতুন করে শুরু হয় মব জাস্টিস। আর এর অসহায় শিকার হন শিক্ষকেরা। পৃথিবীর আর কোনো দেশে শিক্ষকেরা এমন অপমান ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কি না সন্দেহ! অবশ্য নানা ছুতোয় শিক্ষকদের অপমান ও নির্যাতনের ধারা আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরেই চলছে। মনে পড়ছে নিকট-অতীতের কিছু ঘটনা। 

২০২২ সালের ১৮ জুন। কথিত এক ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজের তখনকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় পরানো হয় জুতার মালা। নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছিল হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে। সে সময় কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। তাঁদের সঙ্গে ছিল ২০০ থেকে ২৫০ পুলিশ। স্বপন কুমার বিশ্বাস প্রাণে বেঁচেছিলেন। কিন্তু ঢাকার আশুলিয়ার শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার প্রাণেও বাঁচতে পারেননি। তিনি ২০২২ সালের ২৫ জুন এক ছাত্রের অতর্কিত হামলায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে মারা যান। 

এই দুই ঘটনার কিছুদিন আগে, ২০২২ সালের ২০ মার্চ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ১৯ দিন কারাভোগের পর জামিন পান তিনি। 

শ্যামল কান্তি ভক্তের কথাও মনে পড়ে যায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৩ মে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। প্রধান শিক্ষক কান ধরে ওঠবস করছেন, আর জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান কয়বার তিনি ওঠবস করলেন, তা গুনছেন—এমন একটি ভিডিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ঘটনার পর শ্যামল কান্তিকে চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি। 

মনে পড়ে ২০১৬ সালে বাগেরহাটের দুই শিক্ষকের কথা। ধর্ম সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে চিতলমারীর হিজলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলী ও বিজ্ঞান শিক্ষক অশোক কুমার ঘোষালকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ধর্ম সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলে প্রধান শিক্ষকের কাছে। পরে প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞান শিক্ষকের পক্ষ নেন বলে জানায় তারা। শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের জানালে তাঁরা পরদিন ২৫ এপ্রিল স্কুলে আক্রমণ করেন এবং একপর্যায়ে দুই শিক্ষককে লাইব্রেরিকক্ষে আটকে রাখেন। পরে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। 

আওয়ামী লীগের শাসনামলের শিক্ষক নির্যাতনের চিত্র দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। প্রতিবাদ করেছি। তখন নানা অজুহাতে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন সংখ্যালঘু শিক্ষকেরা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষক নির্যাতন তীব্র হয়ে ওঠে। আক্রান্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন। প্রমোশন পেয়েছেন, পদ বাগিয়েছেন।

দাপট দেখিয়েছেন। দুর্নীতি করেছেন। তবে কোনো শিক্ষককেই কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ‘আপনি দালাল, দুর্নীতিবাজ, অতএব পদত্যাগ করুন’ এই ‘মব জাস্টিস’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষককে অপমান করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। কোথাও টেনেহিঁচড়ে বের করে দেওয়া হচ্ছে, কোথাও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, চড়-থাপ্পড় মেরে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। কোথাও আবার জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষককে ঘোরানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই অগণতান্ত্রিক এবং অরাজক পরিস্থিতিতে তাঁরা দাবি মানতে অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় অনেকে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখে জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন। সামাজিকমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা একটি সভ্য সমাজে অকল্পনীয়। 

এ কথা ঠিক যে আমাদের এই অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে শিক্ষকেরা ধোয়া তুলসী পাতা নন। অনেক শিক্ষকই সরকারি দলের নির্লজ্জ দালালি করেছেন। কেউ কেউ অন্যায়, দুর্নীতিসহ নানা দুষ্কর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপত্তির কিছু নেই। তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতেই পারে। দলবাজ শিক্ষকদের এটাও বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে দলবাজি শোভন নয়। সংগতও নয়। শিক্ষকের প্রধান ধ্যানজ্ঞান হবে শিক্ষা প্রদান। শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কল্যাণ। কোনো রাজনৈতিক দলের ভক্ত সেজে যদি কেউ কর্মকাণ্ড করতে চান, তাহলে শিক্ষকতা পেশা ত্যাগ করেই তা করা উচিত। শিক্ষকনেতা নন। তাঁরা নেতা তৈরি করেন। তৈরি করেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার প্রয়োজনীয় জনশক্তি। 

সমাজে এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। তাঁরা টিউশনি আর কোচিং সেন্টারে অধিক সময় দেন। যেসব শিক্ষার্থী তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়ে না বা তাঁর কোচিং সেন্টারে যায় না, তাদের কম নম্বর দেওয়া হয়। নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যেসব শিক্ষক যুক্ত, তাঁরা আসলে যেকোনো শাসনামলেই সুবিধা ভোগ করেন। তাঁদের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হওয়ার সংগত কারণ আছে। এসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, শিক্ষকদের যেকোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধে প্রাতিষ্ঠানিক বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষা সংস্কারে এসব বিষয়কে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে তাঁদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিও। 

কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন না করে ঢালাওভাবে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা, অপমান করা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উগ্র সমর্থকেরা ধরে নিয়েছেন যে বিগত সরকার সমর্থকদের ওপর যেকোনো অন্যায়-অত্যাচার করলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে না। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। যেন যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি কেবল শিক্ষকেরাই করে থাকেন। বিগত সরকারের যাবতীয় অনিয়ম-অপকর্মের সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিলেন দেশের আমলারা। তাঁরা কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া একেবারে দলীয় কর্মীর চেয়ে অধিক দলবাজ হয়ে সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন। নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। জনগণের ম্যান্ডেট না-থাকা সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেরাই হয়ে উঠেছেন এক-একজন মহাক্ষমতাবান। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কিন্তু তাঁদের দিকে কেউ আঙুল তুলছে না। সচিবালয়ের কোনো কর্মকর্তাকে তো নয়ই, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কোনো কর্মকর্তাকেও কেউ শাসায়নি। কেউ বলেনি, এক্ষুনি পদত্যাগ করুন। 

তাহলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষোভ? কেন তাঁদের জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে? তাঁরা দুর্বল বলে? দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য? একজন শিক্ষক হিসেবে যাঁদের দায়িত্ব সমাজকে আলোকিত করা, তাঁরা যদি এমন নিপীড়নের শিকার হন, তাহলে আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ কী হবে? 

এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যেকোনো মূল্যে মব জাস্টিস বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। ইতিমধ্যে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। যে শিক্ষকেরা অপমানিত হয়েছেন, লাঞ্ছিত হয়েছেন, তাঁদের পক্ষে ক্লাসরুমে ফিরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা খুব কঠিন। তারপরও প্রশাসন-শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী—সবাই মিলে চেষ্টা করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। প্রথমেই জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

কেননা, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভালো মানুষ আছেন। আর যাঁরা সত্যিই দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অভিভাবকদেরও ভূমিকা রয়েছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের নিষ্পাপ আবেগকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটা স্বার্থান্বেষী মহল ব্যবহার করছে। তাদের কারণেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। এখন তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনার মূল দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে।

লেখক:গবেষক, কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত