Ajker Patrika

সাংবাদিক ফারজানা রুপা ও শাকিল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাংবাদিক ফারজানা রুপা ও শাকিল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

বেসরকারি চ্যানেল একাত্তর টিভি থেকে চাকরিচ্যুত প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী চ্যানেলটির প্রধান প্রতিবেদক ও উপস্থাপিকা ফারজানা রুপাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফ্রান্সে যাওয়ার উদ্দেশে আজ বুধবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তারা। কিন্তু সিটি এসবির ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পরবর্তীতে তাদেরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে উত্তরার পূর্ব থানার একটি মামলায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তারা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে আসলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আটক করে ডিবিতে হস্তান্তর করে।

এর আগে গত ৮ আগস্ট একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে মুস্তফা আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট থেকে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

উত্তরা পূর্ব থানার মামলা সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর বেস্ট শার্ট লি. প্রতিষ্ঠানের স্যাম্পল ম্যান হিসাবে কাজ করতেন ফজলুল করিম। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে উত্তরায় এসে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের জসিম উদ্দিন এলাকায় বিকেল সাড়ে ৪টায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেক ছাত্র জনতা আহত হন। ফজলুল করিমের বুকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 এ ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন আয়নাল বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি খসরু চৌধুরী, হাবিব হাসান, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার বড়ুয়া, সাবেক ডিআইজি খালিদ হাওলাদার, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুর রহমানসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানাজায় লাখো মানুষ: বিদ্রোহী কবির পাশে চিরঘুমে বিপ্লবী হাদি

  • জানাজায় সংসদ ভবন এলাকা লোকে লোকারণ্য
  • হাদির দেওয়া মন্ত্র মানুষ ভুলতে পারবে না: ড. ইউনূস
  • তদন্তের বিষয়ে জানাতে সময় বেঁধে দিল ইনকিলাব মঞ্চ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ২২
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁকে বিদায় জানান সতীর্থ, অনুসারীরা। গতকাল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁকে বিদায় জানান সতীর্থ, অনুসারীরা। গতকাল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর তারুণ্যদীপ্ত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে চিরঘুমে শায়িত হয়েছেন। সামাজিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র হাদি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ ও প্রথাগত রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। আততায়ীর হাতে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সামনে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজার পর তাঁকে দাফন করা হয়। অশ্রুসিক্ত চোখে তাঁকে বিদায় জানান সতীর্থ, অনুসারী ও শুভানুধ্যায়ীরা। ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুরাগী ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। মিছিল-সমাবেশে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত করতেন তিনি। কিন্তু ‘রণক্লান্ত’ হওয়ার আগেই ঘাতকের গুলিতে অকালে নিভে গেল তাঁর প্রাণপ্রদীপ। হাদির বয়স হয়েছিল ৩২ বছর। প্রসঙ্গত, নজরুলপ্রীতির সূত্রে হাদির পরিবার চেয়েছিল তাঁর শেষ শয্যা হোক কবির সমাধির পাশে।

হাদির জানাজায় অংশ নিতে গতকাল বেলা ১১টার পর থেকেই মানুষ জড়ো হতে থাকেন জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সামনের মাঠে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-সংলগ্ন সংসদ ভবনের ১১ ও ১২ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করেন মানুষ। নিরাপত্তার জন্য ছিল দুই স্তরের তল্লাশি। নিরাপত্তার কারণে মাঠের চারপাশে দেওয়া হয়েছিল বাঁশের ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেডের সামনেই মরদেহ রাখা হয়েছিল।

জানাজার নির্ধারিত সময় বেলা ২টা হলেও দুপুর সাড়ে ১২টার পরই মাঠ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় মাইকে ঘোষণা করা হয়, প্রয়োজনে পেছনের মাঠে জানাজা পড়া যাবে। জানাজার মাঠ ছাড়িয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশের মূল সড়কেও ছিল মানুষের সারি। পরে পেছনের মাঠের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে অবস্থান নেন মানুষ। দেড়টার দিকে আসা লোকজন ভেতরে ঢুকতে না পেরে অবস্থান নেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। তবে জনারণ্য ছাড়িয়ে যায় খামারবাড়ির মোড় হয়ে বিজয় সরণির দিকেও। মাঠেই জোহরের নামাজ পড়েন অনেকে।

প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও জানাজায় উপস্থিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, মো. তৌহিদ হোসেন, আদিলুর রহমান খান, আলী ইমাম মজুমদার, ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, ফারুক ই আজম, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, শেখ বশিরউদ্দীন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান প্রমুখ। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জানাজায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ দলগুলোর আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনও জানাজায় অংশ নেন। পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আল সিয়ামের সঙ্গে একাধিক কূটনীতিককে জানাজায় অংশ নিতে দেখা গেছে। আরও শরিক হয়েছিলেন রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার, সম্প্রতি পদত্যাগকারী দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জানাজায় আরও অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা।

১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণার সময় মোটরসাইকেল আরোহী আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাঁকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থা ওঠানামা করছিল। বৃহস্পতিবার আরেক দফা অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যুবরণ করেন হাদি। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে আসে।

হাদির মরদেহ শুক্রবার রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছিল। দাফনের আগে গতকাল সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

বক্তব্যে দ্রুত বিচারের দাবি

বেলা ২টার দিকে শরিফ ওসমান হাদির লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় উপস্থিত জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। হাদির জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন রাখা হয় মঞ্চে। এরপর জানাজায় অংশ নিতে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় হাদির জীবনী তুলে ধরেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

ইনকিলাব মঞ্চর পক্ষ থেকে সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘খুনি, খুনের পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারী এবং পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সহকারী উপদেষ্টা (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী) খোদা বখস চৌধুরী জনতার সম্মুখে এসে এই খুনের ব্যাপারে গত এক সপ্তাহে তাঁরা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা জানাতে হবে। যদি তাঁরা জানাতে না পারেন, তবে তাঁদের পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

এরপর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হাদির অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

পরে জানাজা পড়ান শরিফ ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। জানাজা শেষে হাদির কফিন নিয়ে সবাই রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ এলাকায় পৌঁছায় কফিন। তার অদূরেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি প্রাঙ্গণ। সেখানে হাদির কবরের বন্দোবস্ত আগেই করে রাখা হয়েছিল। সব প্রক্রিয়া শেষে সেই কবরে শায়িত করা হয় হাদিকে। পরে মোনাজাত করেন বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

দাফন শেষে ইনকিলাব মঞ্চ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন। তাঁদের উদ্দেশে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক এখানে থাকব। কিন্তু আপনাদের একটু রেস্ট (বিশ্রাম) দিতে চাই। আপনারা আজকের জন্য বাসায় যান। আগামীকাল বিকেল সোয়া ৫টার মধ্যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জবাব না আসে, আমরা আবার এখানে আসব। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছাড় দেব না।’

জাবেরের এ কথার পর অনেকেই শাহবাগ মোড় ছেড়ে যান। সড়ক দিয়ে ধীরে কিছু কিছু গাড়ি চলতে শুরু করে। তবে অনেক নেতা-কর্মী শাহবাগে অবস্থান করে স্লোগান দিতে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করছে: এমএসএফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করছে: এমএসএফ

গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। তারা মনে করে, সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী ‘মব’ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে দেশকে একটি অকার্যকর ও নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চাইছে।

আজ শনিবার এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সব কথা বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংবাদিকতার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রত্যেক সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়টি তুলে ধরে এমএসএফ বলেছে, অনেক সাংবাদিক আটকা পড়ে জীবন রক্ষার্থে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় ঘটনা দেখতে গেলে নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়। দেশের অন্য কয়েকটি জেলাতেও প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কোনো অবস্থাতেই ঘটনাগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

একই দিন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা ও ভাঙচুর এবং শুক্রবার রাতে উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয় উল্লেখ করে এমএসএফ বলেছে, সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তার চেয়েও বড় কথা, এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে সমাজে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা মানবাধিকার ও সুশাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যক্তি পর্যায়ে মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু সে কারণে যেকোনো অজুহাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার অর্থ দাঁড়ায় পুরো গণমাধ্যম অস্তিত্বের ওপর হামলা, যা মুক্তচিন্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অশনিসংকেত। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা তাঁদের বক্তব্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ব্যক্ত করে আসছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের বাধাগ্রস্ত করার একটি ভয়ংকর অপতৎপরতা ঘটে যাওয়ার পর সরকারের নির্লিপ্ততা ও অকার্যকর ভূমিকা তাদের আন্তরিকতা ও যোগ্যতার ব্যাপারে জনমনে প্রশ্ন জাগিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এ কে খন্দকারের জানাজা রোববার পৌনে ২টায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৩
বীর উত্তম এ কে খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত
বীর উত্তম এ কে খন্দকার। ছবি: সংগৃহীত

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তমের (এ কে খন্দকার) জানাজা বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে আগামীকাল রোববার বেলা ১টা ৪৫ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আগামীকাল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মরহুমের জানাজা এবং গার্ড অব অনার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে বেলা ১টা ৪৫ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হবে।

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, জাতির গর্বিত কৃতী সন্তান এবং সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তম (অব.) আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ ঘটিকায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর প্রয়াণে জাতি আজ গভীর শোকাহত।

এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীর উত্তম শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতাও। যিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অটুট নিষ্ঠা, কৌশলগত বুদ্ধি এবং অদম্য চেতনা জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি কঠোর মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে বিজয়ের দিকে পরিচালিত প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন এবং তাঁর যোগ্যতম পরিচালনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবাহিনী পুনর্গঠনে সক্ষম হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

এ ছাড়া, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তমকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর অনন্যসাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে সুসংগঠিত করা এবং দেশ গঠনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১’-এ ভূষিত করে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা, দুই পুত্র ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

জাতি তাঁর অসামান্য অবদানসমূহকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২: ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৭৮৩ জন, উদ্ধার ১৯ আগ্নেয়াস্ত্র

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ চলাকালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা করেছে। এ সময় উদ্ধার করা হয় ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বিশেষ এই অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানীসহ সারা দেশে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, পেশাদার অপরাধী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রয়েছে। উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পিস্তল ও রিভলবার।

জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ অব্যাহত থাকবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত