আলতাফ পারভেজ

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
বাংলাদেশে একই সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের আগস্ট। সেই সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে ভাবুকেরা লিখছেন, বলছেন। পুরো দেশ এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মেতে আছে।
এর মাঝেই এল ‘১৫ আগস্ট’। আগে থেকেই এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্পর্শকাতর দিন। আলোচিত দিন। এবারের আগস্টে এই দিনকে ঘিরে মনোযোগ, আলোচনা ও উত্তেজনা আগের চেয়ে বেড়েছে।
এসব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ—কীভাবে আমরা দেখব তাঁকে, কীভাবে তাঁর জীবন ও মৃত্যুকে স্মরণ করব আমরা, ভবিষ্যতে তাঁকে কোথায় রাখব? এসব নিয়ে নতুন করে সমাজে বিতর্ক উঠেছে। আলোচনা-অনুমান হচ্ছে। সামনে এ রকম আলোচনা আরও হবে বলে মনে করছি।
বিতর্ক মানেই খারাপ নয়। ‘পাবলিক ফিগার’ বা জননেতাদের নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক থাকে। বিশ্বজুড়ে ইতিহাসবিদেরা এসবকে স্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখেন। অন্তত একটা উদাহরণ দিই। লেনিনকে পুঁজিবাদী বিশ্ব পছন্দ করছে না। বহু আগে তিনি মারাও গেছেন। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াও নেই। কিন্তু গত কয়েক বছর লেনিনকে নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি, খোদ আমেরিকায় তাঁকে নিয়ে শত শত একাডেমিক গবেষণা চলছে এখনো এবং সেসব গবেষণার মানও দুর্দান্ত। যতটুকু পড়েছি, প্রতিমুহূর্তে মনে হতো কত কম জানতাম ওনার সম্পর্কে।
একই কথা বলা যায়, এম কে গান্ধীর বেলায়। প্রতিবছর তাঁকে নিয়ে নতুন নতুন গবেষণাকাজ হচ্ছে। কেউ তথ্য-উপাত্ত হাজির করে দেখাচ্ছেন গান্ধী বর্ণবাদী ছিলেন, আবার অন্য কেউ দেখাচ্ছেন কীভাবে বিশ্বজুড়ে তাঁর আদর্শ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি এখনো বিপুলভাবে প্রাসঙ্গিক। ভারতবর্ষের গান্ধীকে নিয়ে আফ্রিকাজুড়ে কী পরিমাণ যে লেখালেখি ও গবেষণা হচ্ছে, সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় বসে আমরা অনুমানও করতে পারব না। এভাবে প্রতিদিন দুনিয়াজুড়ে ইতিহাসের গঠন ও পুনর্গঠন হয়। কোথাও কেউ সাইবার অ্যাক্ট করে সেই সব আটকানোর চেষ্টা করে না।
বাংলাদেশের পাকস্থলী এতটা শক্তিশালী নয়। এখানে বিতর্ক ও মতভেদকে নেতিবাচকভাবে দেখার রেওয়াজ। ইতিহাস নিয়ে, একাত্তর নিয়ে, মুজিবকে নিয়ে যেকোনো নতুন অনুসন্ধানের আগে ভাবতে হয় সমাজ কীভাবে নেবে সেটা, আওয়ামী লীগ কীভাবে নেবে, সাইবার অ্যাক্ট ঝামেলা করবে কি না, ডিজিটাল আইনে মামলা হবে কি না, মার খেতে হবে কি না।
অথচ বিশ্বের অন্যত্র রেওয়াজটা পুরোপুরি ভিন্ন। যে পাবলিক ফিগার বিশ্বের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতে যত প্রাসঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে তত বিতর্ক চলছে। আবার যাঁদের নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তাঁরা তত নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ‘বড় নেতা’কে নিয়ে হামেশা নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। সেসব গবেষণায় ওই মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন সত্য পাওয়া যাচ্ছে। সেসব ‘সত্য’ নিয়ে আবার পুনরায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। কেউ তাতে বাধা দেওয়ার নেই। তাতে ওই সব পাবলিক ফিগারকে নিয়ে পাঠ-পুনঃপাঠ ক্রমে বাড়ছেই। গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা পর্যন্ত বহুজনের বেলাতে এ রকমই ঘটছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বেলায়ও নিত্যনতুন সত্য খুঁজে আনছেন গবেষকেরা। প্রকাশ্যে সাবলীলভাবে সেসব প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে সেই সব ঘটনাবলি নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়ছে।
কিন্তু গত ১৫ বছর বাংলাদেশে আমরা কী দেখলাম? স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্রের আইনকানুনে রীতিমতো আবদ্ধ দেখলাম। তাঁকে নিয়ে স্তুতিই কেবল অনুমোদিত ছিল। বিপুল খরচাপাতি হয়েছে তাঁকে নিয়ে তৈরি নানান কর্মসূচিতে। টনে টনে কাগজ মুদ্রিত হয়েছে তাঁর কথায়। শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন নানা জন এসব কারবার থেকে। অথচ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ভালো একটা জীবনীও পেলাম না আমরা।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সিলেবাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর নাম ব্যবহার করে বহু বিভাগ, ‘চেয়ার’, ‘কর্নার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাঠ্যবইগুলোয় তাঁকে নিয়ে অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে এসব হয়েছে। এসবে যুক্ত থাকা, অংশ নেওয়া, উপস্থিত থাকা, সম্মতি জোগানো, অভিনন্দন জানানোকে আমলাতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় পরিণত করা হয়েছিল। তাতে ইন্ধন জোগানোর জন্য অনেক সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। এসব নিয়ে যেকোনো ভিন্নমতকে প্রায় দেশদ্রোহীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বহু বাঙালিকে তাদের নেতা মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির জনক’ ইত্যাদি না লেখার জন্য হেনস্তা করা হয়েছে। বহু আমলা এসব কাজে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দিয়ে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। যাঁদের সর্বোচ্চ যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা এসব করে সচিব, সিনিয়র সচিব হয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হয়েছেন।
কিন্তু শেষমেশ তার ফল কী হলো? নতুন প্রজন্মের ভেতর মুজিবকে স্বমহিমায় কি প্রতিষ্ঠা করা গেল? উত্তর নিশ্চয়ই সবার জানা।
গত ১৫ বছরে যারা স্কুল-কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এল, তারা তো আমলাতান্ত্রিক মুজিব-বর্ষগুলো পেরিয়ে আসা প্রাণ। তাদের কাছে তো মুজিবের কোনো সমালোচনা ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তারা তো মুজিব-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার ভেতরই বড় হওয়া মানুষ। কিন্তু তাদের এখনকার প্রতিক্রিয়া থেকে কী বার্তা পাই আমরা?
নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলা যায়, এ অবস্থার দায় কার এবং এ থেকে কোনো আত্মসমালোচনা করবে কি না তখনকার সংশ্লিষ্টরা? সেই সব আমলা এখন কোথায়? সচেতন বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এই অবস্থা তৈরির মাধ্যমে তাঁরা আসলে কার স্বার্থ হাসিল করেছেন? জীবন্ত মুজিবকে নিজেদের ইচ্ছার ফসিলে পরিণত করেছিলেন তাঁরা কার পৃষ্ঠপোষকতায়?
বিগত বছরগুলোর শেষ দিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আয়োজিত প্রায় সব কাজে সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল অতি ক্ষীণ। উচ্চপদস্থ একদল মানুষকে সামনে রেখে কিছু স্তুতিজীবী এসবে থাকতেন। প্রাণহীন এসব অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নির্ধারিত ছকে কৃত্রিমভাবে শেষ হতো।
১৯৭৫ সালে শারীরিকভাবে মারা যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নেতা থেকে তাঁকে দলীয় নেতায় পরিণত করা হয়। কার্যত তাঁকে জনগণ ও বাস্তব মানবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
স্বাধীনতাসংগ্রামী মুজিব প্রশাসকও ছিলেন কয়েক বছর। তাঁর প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনেক সমালোচনা আছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁর জীবনের সব দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলে সেসব থেকে তরুণেরা শিখতে পারত অনেক কিছু। বিশ্বে সমালোচনা ও ভুলের ঊর্ধ্বে কোনো নেতা নেই। ছিলেন না।
কিন্তু একদল তোষামোদকারী মুজিবকে সব ভুলের ঊর্ধ্বে দেখাতে গিয়ে দেবতার চরিত্র দানের চেষ্টায় তাঁকে মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এই ছিনিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল নাগরিকদের জন্য খুবই অমর্যাদাকর। তারই প্রতিক্রিয়া দেখেছি আমরা ২০২৪-এর আগস্টে।
সম্প্রতি গণ-আন্দোলনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপিত যেসব স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে, সেসব আসলে ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়া স্বাধীনতাসংগ্রামী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আক্রোশবশত হয়েছে ভাবলে ভুল হওয়ার শঙ্কা আছে। সেসব হয়েছে তাঁকে নিয়ে গত ১৫ বছর যেসব আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। তাঁকে জননেতার বদলে দেবতায় পরিণত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। তাঁকে বাংলার-মানব-সমাজ থেকে কেড়ে নেওয়ার আমলাতান্ত্রিক কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে আড়াল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। যাঁরা উল্লিখিত সাম্প্রতিক ভাঙচুরকে মুজিববিরোধী আক্রোশ আকারে দেখছেন, তাঁরা আসলে এখনকার সমাজ-মনস্তত্ত্ব পাঠ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ বলতে চাই।
প্রকৃতপক্ষে এবারের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্র ও একটা দলের হাত থেকে জনতার কাছে ফিরে আসার লক্ষণ দেখছি।
এই মুজিবকে নিয়ে মানুষ এখন ইচ্ছামতো কথা বলতে পারবে, লিখতে পারবে, প্রশংসা করতে পারবে, সমালোচনা করতে পারবে, নতুন করে অনুসন্ধান করতে পারবে, বিতর্ক করতে পারবে। কারণ তিনি তাঁদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ জন। তাঁকে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার কথা বলতে গিয়ে কাউকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে না।
মুজিবের জীবন অনুসন্ধানের বহু দিক এখনো বাকি। তরুণেরা এখন থেকে স্বাধীনভাবে সেসব খুঁজতে পারবে। বলা যায়, অবশেষে মুজিব মুক্তি পেলেন। এখন বরং দেখা দরকার এই মুজিব যেন বেহাত না হন।
একইভাবে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা ফজলুল হক, জিয়াউর রহমান, কর্নেল আবু তাহের, সিরাজ সিকদারসহ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেন সব সময় জনতার আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা-প্রশংসার জন্য উন্মুক্ত থাকেন। তাঁদের স্মরণ করার দায় যেন জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া না হয়। সেসব স্মরণ উদ্যোগ যেন সাইবার আইনের মতো সব কালো আইনের কারাগার থেকে মুক্ত থাকে।
আলতাফ পারভেজ, লেখক ও ইতিহাস গবেষক

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
বাংলাদেশে একই সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের আগস্ট। সেই সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে ভাবুকেরা লিখছেন, বলছেন। পুরো দেশ এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মেতে আছে।
এর মাঝেই এল ‘১৫ আগস্ট’। আগে থেকেই এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্পর্শকাতর দিন। আলোচিত দিন। এবারের আগস্টে এই দিনকে ঘিরে মনোযোগ, আলোচনা ও উত্তেজনা আগের চেয়ে বেড়েছে।
এসব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ—কীভাবে আমরা দেখব তাঁকে, কীভাবে তাঁর জীবন ও মৃত্যুকে স্মরণ করব আমরা, ভবিষ্যতে তাঁকে কোথায় রাখব? এসব নিয়ে নতুন করে সমাজে বিতর্ক উঠেছে। আলোচনা-অনুমান হচ্ছে। সামনে এ রকম আলোচনা আরও হবে বলে মনে করছি।
বিতর্ক মানেই খারাপ নয়। ‘পাবলিক ফিগার’ বা জননেতাদের নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক থাকে। বিশ্বজুড়ে ইতিহাসবিদেরা এসবকে স্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখেন। অন্তত একটা উদাহরণ দিই। লেনিনকে পুঁজিবাদী বিশ্ব পছন্দ করছে না। বহু আগে তিনি মারাও গেছেন। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াও নেই। কিন্তু গত কয়েক বছর লেনিনকে নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি, খোদ আমেরিকায় তাঁকে নিয়ে শত শত একাডেমিক গবেষণা চলছে এখনো এবং সেসব গবেষণার মানও দুর্দান্ত। যতটুকু পড়েছি, প্রতিমুহূর্তে মনে হতো কত কম জানতাম ওনার সম্পর্কে।
একই কথা বলা যায়, এম কে গান্ধীর বেলায়। প্রতিবছর তাঁকে নিয়ে নতুন নতুন গবেষণাকাজ হচ্ছে। কেউ তথ্য-উপাত্ত হাজির করে দেখাচ্ছেন গান্ধী বর্ণবাদী ছিলেন, আবার অন্য কেউ দেখাচ্ছেন কীভাবে বিশ্বজুড়ে তাঁর আদর্শ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি এখনো বিপুলভাবে প্রাসঙ্গিক। ভারতবর্ষের গান্ধীকে নিয়ে আফ্রিকাজুড়ে কী পরিমাণ যে লেখালেখি ও গবেষণা হচ্ছে, সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় বসে আমরা অনুমানও করতে পারব না। এভাবে প্রতিদিন দুনিয়াজুড়ে ইতিহাসের গঠন ও পুনর্গঠন হয়। কোথাও কেউ সাইবার অ্যাক্ট করে সেই সব আটকানোর চেষ্টা করে না।
বাংলাদেশের পাকস্থলী এতটা শক্তিশালী নয়। এখানে বিতর্ক ও মতভেদকে নেতিবাচকভাবে দেখার রেওয়াজ। ইতিহাস নিয়ে, একাত্তর নিয়ে, মুজিবকে নিয়ে যেকোনো নতুন অনুসন্ধানের আগে ভাবতে হয় সমাজ কীভাবে নেবে সেটা, আওয়ামী লীগ কীভাবে নেবে, সাইবার অ্যাক্ট ঝামেলা করবে কি না, ডিজিটাল আইনে মামলা হবে কি না, মার খেতে হবে কি না।
অথচ বিশ্বের অন্যত্র রেওয়াজটা পুরোপুরি ভিন্ন। যে পাবলিক ফিগার বিশ্বের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতে যত প্রাসঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে তত বিতর্ক চলছে। আবার যাঁদের নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তাঁরা তত নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ‘বড় নেতা’কে নিয়ে হামেশা নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। সেসব গবেষণায় ওই মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন সত্য পাওয়া যাচ্ছে। সেসব ‘সত্য’ নিয়ে আবার পুনরায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। কেউ তাতে বাধা দেওয়ার নেই। তাতে ওই সব পাবলিক ফিগারকে নিয়ে পাঠ-পুনঃপাঠ ক্রমে বাড়ছেই। গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা পর্যন্ত বহুজনের বেলাতে এ রকমই ঘটছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বেলায়ও নিত্যনতুন সত্য খুঁজে আনছেন গবেষকেরা। প্রকাশ্যে সাবলীলভাবে সেসব প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে সেই সব ঘটনাবলি নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়ছে।
কিন্তু গত ১৫ বছর বাংলাদেশে আমরা কী দেখলাম? স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্রের আইনকানুনে রীতিমতো আবদ্ধ দেখলাম। তাঁকে নিয়ে স্তুতিই কেবল অনুমোদিত ছিল। বিপুল খরচাপাতি হয়েছে তাঁকে নিয়ে তৈরি নানান কর্মসূচিতে। টনে টনে কাগজ মুদ্রিত হয়েছে তাঁর কথায়। শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন নানা জন এসব কারবার থেকে। অথচ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ভালো একটা জীবনীও পেলাম না আমরা।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সিলেবাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর নাম ব্যবহার করে বহু বিভাগ, ‘চেয়ার’, ‘কর্নার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাঠ্যবইগুলোয় তাঁকে নিয়ে অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে এসব হয়েছে। এসবে যুক্ত থাকা, অংশ নেওয়া, উপস্থিত থাকা, সম্মতি জোগানো, অভিনন্দন জানানোকে আমলাতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় পরিণত করা হয়েছিল। তাতে ইন্ধন জোগানোর জন্য অনেক সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। এসব নিয়ে যেকোনো ভিন্নমতকে প্রায় দেশদ্রোহীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বহু বাঙালিকে তাদের নেতা মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির জনক’ ইত্যাদি না লেখার জন্য হেনস্তা করা হয়েছে। বহু আমলা এসব কাজে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দিয়ে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। যাঁদের সর্বোচ্চ যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা এসব করে সচিব, সিনিয়র সচিব হয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হয়েছেন।
কিন্তু শেষমেশ তার ফল কী হলো? নতুন প্রজন্মের ভেতর মুজিবকে স্বমহিমায় কি প্রতিষ্ঠা করা গেল? উত্তর নিশ্চয়ই সবার জানা।
গত ১৫ বছরে যারা স্কুল-কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এল, তারা তো আমলাতান্ত্রিক মুজিব-বর্ষগুলো পেরিয়ে আসা প্রাণ। তাদের কাছে তো মুজিবের কোনো সমালোচনা ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তারা তো মুজিব-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার ভেতরই বড় হওয়া মানুষ। কিন্তু তাদের এখনকার প্রতিক্রিয়া থেকে কী বার্তা পাই আমরা?
নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলা যায়, এ অবস্থার দায় কার এবং এ থেকে কোনো আত্মসমালোচনা করবে কি না তখনকার সংশ্লিষ্টরা? সেই সব আমলা এখন কোথায়? সচেতন বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এই অবস্থা তৈরির মাধ্যমে তাঁরা আসলে কার স্বার্থ হাসিল করেছেন? জীবন্ত মুজিবকে নিজেদের ইচ্ছার ফসিলে পরিণত করেছিলেন তাঁরা কার পৃষ্ঠপোষকতায়?
বিগত বছরগুলোর শেষ দিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আয়োজিত প্রায় সব কাজে সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল অতি ক্ষীণ। উচ্চপদস্থ একদল মানুষকে সামনে রেখে কিছু স্তুতিজীবী এসবে থাকতেন। প্রাণহীন এসব অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নির্ধারিত ছকে কৃত্রিমভাবে শেষ হতো।
১৯৭৫ সালে শারীরিকভাবে মারা যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নেতা থেকে তাঁকে দলীয় নেতায় পরিণত করা হয়। কার্যত তাঁকে জনগণ ও বাস্তব মানবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
স্বাধীনতাসংগ্রামী মুজিব প্রশাসকও ছিলেন কয়েক বছর। তাঁর প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনেক সমালোচনা আছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁর জীবনের সব দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলে সেসব থেকে তরুণেরা শিখতে পারত অনেক কিছু। বিশ্বে সমালোচনা ও ভুলের ঊর্ধ্বে কোনো নেতা নেই। ছিলেন না।
কিন্তু একদল তোষামোদকারী মুজিবকে সব ভুলের ঊর্ধ্বে দেখাতে গিয়ে দেবতার চরিত্র দানের চেষ্টায় তাঁকে মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এই ছিনিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল নাগরিকদের জন্য খুবই অমর্যাদাকর। তারই প্রতিক্রিয়া দেখেছি আমরা ২০২৪-এর আগস্টে।
সম্প্রতি গণ-আন্দোলনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপিত যেসব স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে, সেসব আসলে ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়া স্বাধীনতাসংগ্রামী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আক্রোশবশত হয়েছে ভাবলে ভুল হওয়ার শঙ্কা আছে। সেসব হয়েছে তাঁকে নিয়ে গত ১৫ বছর যেসব আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। তাঁকে জননেতার বদলে দেবতায় পরিণত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। তাঁকে বাংলার-মানব-সমাজ থেকে কেড়ে নেওয়ার আমলাতান্ত্রিক কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে আড়াল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। যাঁরা উল্লিখিত সাম্প্রতিক ভাঙচুরকে মুজিববিরোধী আক্রোশ আকারে দেখছেন, তাঁরা আসলে এখনকার সমাজ-মনস্তত্ত্ব পাঠ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ বলতে চাই।
প্রকৃতপক্ষে এবারের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্র ও একটা দলের হাত থেকে জনতার কাছে ফিরে আসার লক্ষণ দেখছি।
এই মুজিবকে নিয়ে মানুষ এখন ইচ্ছামতো কথা বলতে পারবে, লিখতে পারবে, প্রশংসা করতে পারবে, সমালোচনা করতে পারবে, নতুন করে অনুসন্ধান করতে পারবে, বিতর্ক করতে পারবে। কারণ তিনি তাঁদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ জন। তাঁকে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার কথা বলতে গিয়ে কাউকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে না।
মুজিবের জীবন অনুসন্ধানের বহু দিক এখনো বাকি। তরুণেরা এখন থেকে স্বাধীনভাবে সেসব খুঁজতে পারবে। বলা যায়, অবশেষে মুজিব মুক্তি পেলেন। এখন বরং দেখা দরকার এই মুজিব যেন বেহাত না হন।
একইভাবে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা ফজলুল হক, জিয়াউর রহমান, কর্নেল আবু তাহের, সিরাজ সিকদারসহ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেন সব সময় জনতার আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা-প্রশংসার জন্য উন্মুক্ত থাকেন। তাঁদের স্মরণ করার দায় যেন জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া না হয়। সেসব স্মরণ উদ্যোগ যেন সাইবার আইনের মতো সব কালো আইনের কারাগার থেকে মুক্ত থাকে।
আলতাফ পারভেজ, লেখক ও ইতিহাস গবেষক
আলতাফ পারভেজ

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
বাংলাদেশে একই সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের আগস্ট। সেই সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে ভাবুকেরা লিখছেন, বলছেন। পুরো দেশ এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মেতে আছে।
এর মাঝেই এল ‘১৫ আগস্ট’। আগে থেকেই এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্পর্শকাতর দিন। আলোচিত দিন। এবারের আগস্টে এই দিনকে ঘিরে মনোযোগ, আলোচনা ও উত্তেজনা আগের চেয়ে বেড়েছে।
এসব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ—কীভাবে আমরা দেখব তাঁকে, কীভাবে তাঁর জীবন ও মৃত্যুকে স্মরণ করব আমরা, ভবিষ্যতে তাঁকে কোথায় রাখব? এসব নিয়ে নতুন করে সমাজে বিতর্ক উঠেছে। আলোচনা-অনুমান হচ্ছে। সামনে এ রকম আলোচনা আরও হবে বলে মনে করছি।
বিতর্ক মানেই খারাপ নয়। ‘পাবলিক ফিগার’ বা জননেতাদের নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক থাকে। বিশ্বজুড়ে ইতিহাসবিদেরা এসবকে স্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখেন। অন্তত একটা উদাহরণ দিই। লেনিনকে পুঁজিবাদী বিশ্ব পছন্দ করছে না। বহু আগে তিনি মারাও গেছেন। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াও নেই। কিন্তু গত কয়েক বছর লেনিনকে নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি, খোদ আমেরিকায় তাঁকে নিয়ে শত শত একাডেমিক গবেষণা চলছে এখনো এবং সেসব গবেষণার মানও দুর্দান্ত। যতটুকু পড়েছি, প্রতিমুহূর্তে মনে হতো কত কম জানতাম ওনার সম্পর্কে।
একই কথা বলা যায়, এম কে গান্ধীর বেলায়। প্রতিবছর তাঁকে নিয়ে নতুন নতুন গবেষণাকাজ হচ্ছে। কেউ তথ্য-উপাত্ত হাজির করে দেখাচ্ছেন গান্ধী বর্ণবাদী ছিলেন, আবার অন্য কেউ দেখাচ্ছেন কীভাবে বিশ্বজুড়ে তাঁর আদর্শ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি এখনো বিপুলভাবে প্রাসঙ্গিক। ভারতবর্ষের গান্ধীকে নিয়ে আফ্রিকাজুড়ে কী পরিমাণ যে লেখালেখি ও গবেষণা হচ্ছে, সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় বসে আমরা অনুমানও করতে পারব না। এভাবে প্রতিদিন দুনিয়াজুড়ে ইতিহাসের গঠন ও পুনর্গঠন হয়। কোথাও কেউ সাইবার অ্যাক্ট করে সেই সব আটকানোর চেষ্টা করে না।
বাংলাদেশের পাকস্থলী এতটা শক্তিশালী নয়। এখানে বিতর্ক ও মতভেদকে নেতিবাচকভাবে দেখার রেওয়াজ। ইতিহাস নিয়ে, একাত্তর নিয়ে, মুজিবকে নিয়ে যেকোনো নতুন অনুসন্ধানের আগে ভাবতে হয় সমাজ কীভাবে নেবে সেটা, আওয়ামী লীগ কীভাবে নেবে, সাইবার অ্যাক্ট ঝামেলা করবে কি না, ডিজিটাল আইনে মামলা হবে কি না, মার খেতে হবে কি না।
অথচ বিশ্বের অন্যত্র রেওয়াজটা পুরোপুরি ভিন্ন। যে পাবলিক ফিগার বিশ্বের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতে যত প্রাসঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে তত বিতর্ক চলছে। আবার যাঁদের নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তাঁরা তত নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ‘বড় নেতা’কে নিয়ে হামেশা নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। সেসব গবেষণায় ওই মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন সত্য পাওয়া যাচ্ছে। সেসব ‘সত্য’ নিয়ে আবার পুনরায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। কেউ তাতে বাধা দেওয়ার নেই। তাতে ওই সব পাবলিক ফিগারকে নিয়ে পাঠ-পুনঃপাঠ ক্রমে বাড়ছেই। গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা পর্যন্ত বহুজনের বেলাতে এ রকমই ঘটছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বেলায়ও নিত্যনতুন সত্য খুঁজে আনছেন গবেষকেরা। প্রকাশ্যে সাবলীলভাবে সেসব প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে সেই সব ঘটনাবলি নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়ছে।
কিন্তু গত ১৫ বছর বাংলাদেশে আমরা কী দেখলাম? স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্রের আইনকানুনে রীতিমতো আবদ্ধ দেখলাম। তাঁকে নিয়ে স্তুতিই কেবল অনুমোদিত ছিল। বিপুল খরচাপাতি হয়েছে তাঁকে নিয়ে তৈরি নানান কর্মসূচিতে। টনে টনে কাগজ মুদ্রিত হয়েছে তাঁর কথায়। শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন নানা জন এসব কারবার থেকে। অথচ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ভালো একটা জীবনীও পেলাম না আমরা।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সিলেবাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর নাম ব্যবহার করে বহু বিভাগ, ‘চেয়ার’, ‘কর্নার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাঠ্যবইগুলোয় তাঁকে নিয়ে অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে এসব হয়েছে। এসবে যুক্ত থাকা, অংশ নেওয়া, উপস্থিত থাকা, সম্মতি জোগানো, অভিনন্দন জানানোকে আমলাতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় পরিণত করা হয়েছিল। তাতে ইন্ধন জোগানোর জন্য অনেক সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। এসব নিয়ে যেকোনো ভিন্নমতকে প্রায় দেশদ্রোহীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বহু বাঙালিকে তাদের নেতা মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির জনক’ ইত্যাদি না লেখার জন্য হেনস্তা করা হয়েছে। বহু আমলা এসব কাজে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দিয়ে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। যাঁদের সর্বোচ্চ যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা এসব করে সচিব, সিনিয়র সচিব হয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হয়েছেন।
কিন্তু শেষমেশ তার ফল কী হলো? নতুন প্রজন্মের ভেতর মুজিবকে স্বমহিমায় কি প্রতিষ্ঠা করা গেল? উত্তর নিশ্চয়ই সবার জানা।
গত ১৫ বছরে যারা স্কুল-কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এল, তারা তো আমলাতান্ত্রিক মুজিব-বর্ষগুলো পেরিয়ে আসা প্রাণ। তাদের কাছে তো মুজিবের কোনো সমালোচনা ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তারা তো মুজিব-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার ভেতরই বড় হওয়া মানুষ। কিন্তু তাদের এখনকার প্রতিক্রিয়া থেকে কী বার্তা পাই আমরা?
নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলা যায়, এ অবস্থার দায় কার এবং এ থেকে কোনো আত্মসমালোচনা করবে কি না তখনকার সংশ্লিষ্টরা? সেই সব আমলা এখন কোথায়? সচেতন বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এই অবস্থা তৈরির মাধ্যমে তাঁরা আসলে কার স্বার্থ হাসিল করেছেন? জীবন্ত মুজিবকে নিজেদের ইচ্ছার ফসিলে পরিণত করেছিলেন তাঁরা কার পৃষ্ঠপোষকতায়?
বিগত বছরগুলোর শেষ দিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আয়োজিত প্রায় সব কাজে সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল অতি ক্ষীণ। উচ্চপদস্থ একদল মানুষকে সামনে রেখে কিছু স্তুতিজীবী এসবে থাকতেন। প্রাণহীন এসব অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নির্ধারিত ছকে কৃত্রিমভাবে শেষ হতো।
১৯৭৫ সালে শারীরিকভাবে মারা যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নেতা থেকে তাঁকে দলীয় নেতায় পরিণত করা হয়। কার্যত তাঁকে জনগণ ও বাস্তব মানবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
স্বাধীনতাসংগ্রামী মুজিব প্রশাসকও ছিলেন কয়েক বছর। তাঁর প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনেক সমালোচনা আছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁর জীবনের সব দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলে সেসব থেকে তরুণেরা শিখতে পারত অনেক কিছু। বিশ্বে সমালোচনা ও ভুলের ঊর্ধ্বে কোনো নেতা নেই। ছিলেন না।
কিন্তু একদল তোষামোদকারী মুজিবকে সব ভুলের ঊর্ধ্বে দেখাতে গিয়ে দেবতার চরিত্র দানের চেষ্টায় তাঁকে মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এই ছিনিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল নাগরিকদের জন্য খুবই অমর্যাদাকর। তারই প্রতিক্রিয়া দেখেছি আমরা ২০২৪-এর আগস্টে।
সম্প্রতি গণ-আন্দোলনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপিত যেসব স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে, সেসব আসলে ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়া স্বাধীনতাসংগ্রামী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আক্রোশবশত হয়েছে ভাবলে ভুল হওয়ার শঙ্কা আছে। সেসব হয়েছে তাঁকে নিয়ে গত ১৫ বছর যেসব আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। তাঁকে জননেতার বদলে দেবতায় পরিণত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। তাঁকে বাংলার-মানব-সমাজ থেকে কেড়ে নেওয়ার আমলাতান্ত্রিক কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে আড়াল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। যাঁরা উল্লিখিত সাম্প্রতিক ভাঙচুরকে মুজিববিরোধী আক্রোশ আকারে দেখছেন, তাঁরা আসলে এখনকার সমাজ-মনস্তত্ত্ব পাঠ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ বলতে চাই।
প্রকৃতপক্ষে এবারের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্র ও একটা দলের হাত থেকে জনতার কাছে ফিরে আসার লক্ষণ দেখছি।
এই মুজিবকে নিয়ে মানুষ এখন ইচ্ছামতো কথা বলতে পারবে, লিখতে পারবে, প্রশংসা করতে পারবে, সমালোচনা করতে পারবে, নতুন করে অনুসন্ধান করতে পারবে, বিতর্ক করতে পারবে। কারণ তিনি তাঁদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ জন। তাঁকে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার কথা বলতে গিয়ে কাউকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে না।
মুজিবের জীবন অনুসন্ধানের বহু দিক এখনো বাকি। তরুণেরা এখন থেকে স্বাধীনভাবে সেসব খুঁজতে পারবে। বলা যায়, অবশেষে মুজিব মুক্তি পেলেন। এখন বরং দেখা দরকার এই মুজিব যেন বেহাত না হন।
একইভাবে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা ফজলুল হক, জিয়াউর রহমান, কর্নেল আবু তাহের, সিরাজ সিকদারসহ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেন সব সময় জনতার আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা-প্রশংসার জন্য উন্মুক্ত থাকেন। তাঁদের স্মরণ করার দায় যেন জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া না হয়। সেসব স্মরণ উদ্যোগ যেন সাইবার আইনের মতো সব কালো আইনের কারাগার থেকে মুক্ত থাকে।
আলতাফ পারভেজ, লেখক ও ইতিহাস গবেষক

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
বাংলাদেশে একই সঙ্গে বিপুল চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের আগস্ট। সেই সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইতিমধ্যে ভাবুকেরা লিখছেন, বলছেন। পুরো দেশ এখন তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে মেতে আছে।
এর মাঝেই এল ‘১৫ আগস্ট’। আগে থেকেই এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্পর্শকাতর দিন। আলোচিত দিন। এবারের আগস্টে এই দিনকে ঘিরে মনোযোগ, আলোচনা ও উত্তেজনা আগের চেয়ে বেড়েছে।
এসব আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ—কীভাবে আমরা দেখব তাঁকে, কীভাবে তাঁর জীবন ও মৃত্যুকে স্মরণ করব আমরা, ভবিষ্যতে তাঁকে কোথায় রাখব? এসব নিয়ে নতুন করে সমাজে বিতর্ক উঠেছে। আলোচনা-অনুমান হচ্ছে। সামনে এ রকম আলোচনা আরও হবে বলে মনে করছি।
বিতর্ক মানেই খারাপ নয়। ‘পাবলিক ফিগার’ বা জননেতাদের নিয়ে ইতিহাসে বিতর্ক থাকে। বিশ্বজুড়ে ইতিহাসবিদেরা এসবকে স্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখেন। অন্তত একটা উদাহরণ দিই। লেনিনকে পুঁজিবাদী বিশ্ব পছন্দ করছে না। বহু আগে তিনি মারাও গেছেন। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াও নেই। কিন্তু গত কয়েক বছর লেনিনকে নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখেছি, খোদ আমেরিকায় তাঁকে নিয়ে শত শত একাডেমিক গবেষণা চলছে এখনো এবং সেসব গবেষণার মানও দুর্দান্ত। যতটুকু পড়েছি, প্রতিমুহূর্তে মনে হতো কত কম জানতাম ওনার সম্পর্কে।
একই কথা বলা যায়, এম কে গান্ধীর বেলায়। প্রতিবছর তাঁকে নিয়ে নতুন নতুন গবেষণাকাজ হচ্ছে। কেউ তথ্য-উপাত্ত হাজির করে দেখাচ্ছেন গান্ধী বর্ণবাদী ছিলেন, আবার অন্য কেউ দেখাচ্ছেন কীভাবে বিশ্বজুড়ে তাঁর আদর্শ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি এখনো বিপুলভাবে প্রাসঙ্গিক। ভারতবর্ষের গান্ধীকে নিয়ে আফ্রিকাজুড়ে কী পরিমাণ যে লেখালেখি ও গবেষণা হচ্ছে, সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় বসে আমরা অনুমানও করতে পারব না। এভাবে প্রতিদিন দুনিয়াজুড়ে ইতিহাসের গঠন ও পুনর্গঠন হয়। কোথাও কেউ সাইবার অ্যাক্ট করে সেই সব আটকানোর চেষ্টা করে না।
বাংলাদেশের পাকস্থলী এতটা শক্তিশালী নয়। এখানে বিতর্ক ও মতভেদকে নেতিবাচকভাবে দেখার রেওয়াজ। ইতিহাস নিয়ে, একাত্তর নিয়ে, মুজিবকে নিয়ে যেকোনো নতুন অনুসন্ধানের আগে ভাবতে হয় সমাজ কীভাবে নেবে সেটা, আওয়ামী লীগ কীভাবে নেবে, সাইবার অ্যাক্ট ঝামেলা করবে কি না, ডিজিটাল আইনে মামলা হবে কি না, মার খেতে হবে কি না।
অথচ বিশ্বের অন্যত্র রেওয়াজটা পুরোপুরি ভিন্ন। যে পাবলিক ফিগার বিশ্বের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতে যত প্রাসঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে তত বিতর্ক চলছে। আবার যাঁদের নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, তাঁরা তত নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ‘বড় নেতা’কে নিয়ে হামেশা নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। সেসব গবেষণায় ওই মানুষদের নিয়ে নতুন নতুন সত্য পাওয়া যাচ্ছে। সেসব ‘সত্য’ নিয়ে আবার পুনরায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। কেউ তাতে বাধা দেওয়ার নেই। তাতে ওই সব পাবলিক ফিগারকে নিয়ে পাঠ-পুনঃপাঠ ক্রমে বাড়ছেই। গান্ধী থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা পর্যন্ত বহুজনের বেলাতে এ রকমই ঘটছে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলির বেলায়ও নিত্যনতুন সত্য খুঁজে আনছেন গবেষকেরা। প্রকাশ্যে সাবলীলভাবে সেসব প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে সেই সব ঘটনাবলি নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়ছে।
কিন্তু গত ১৫ বছর বাংলাদেশে আমরা কী দেখলাম? স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্রের আইনকানুনে রীতিমতো আবদ্ধ দেখলাম। তাঁকে নিয়ে স্তুতিই কেবল অনুমোদিত ছিল। বিপুল খরচাপাতি হয়েছে তাঁকে নিয়ে তৈরি নানান কর্মসূচিতে। টনে টনে কাগজ মুদ্রিত হয়েছে তাঁর কথায়। শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন নানা জন এসব কারবার থেকে। অথচ শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ভালো একটা জীবনীও পেলাম না আমরা।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সিলেবাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর নাম ব্যবহার করে বহু বিভাগ, ‘চেয়ার’, ‘কর্নার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাঠ্যবইগুলোয় তাঁকে নিয়ে অনেক প্রবন্ধ ও কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে এসব হয়েছে। এসবে যুক্ত থাকা, অংশ নেওয়া, উপস্থিত থাকা, সম্মতি জোগানো, অভিনন্দন জানানোকে আমলাতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় পরিণত করা হয়েছিল। তাতে ইন্ধন জোগানোর জন্য অনেক সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। এসব নিয়ে যেকোনো ভিন্নমতকে প্রায় দেশদ্রোহীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বহু বাঙালিকে তাদের নেতা মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির জনক’ ইত্যাদি না লেখার জন্য হেনস্তা করা হয়েছে। বহু আমলা এসব কাজে উৎসাহ ও নেতৃত্ব দিয়ে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। যাঁদের সর্বোচ্চ যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা এসব করে সচিব, সিনিয়র সচিব হয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হয়েছেন।
কিন্তু শেষমেশ তার ফল কী হলো? নতুন প্রজন্মের ভেতর মুজিবকে স্বমহিমায় কি প্রতিষ্ঠা করা গেল? উত্তর নিশ্চয়ই সবার জানা।
গত ১৫ বছরে যারা স্কুল-কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এল, তারা তো আমলাতান্ত্রিক মুজিব-বর্ষগুলো পেরিয়ে আসা প্রাণ। তাদের কাছে তো মুজিবের কোনো সমালোচনা ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। তারা তো মুজিব-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার ভেতরই বড় হওয়া মানুষ। কিন্তু তাদের এখনকার প্রতিক্রিয়া থেকে কী বার্তা পাই আমরা?
নিশ্চয়ই প্রশ্ন তোলা যায়, এ অবস্থার দায় কার এবং এ থেকে কোনো আত্মসমালোচনা করবে কি না তখনকার সংশ্লিষ্টরা? সেই সব আমলা এখন কোথায়? সচেতন বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এই অবস্থা তৈরির মাধ্যমে তাঁরা আসলে কার স্বার্থ হাসিল করেছেন? জীবন্ত মুজিবকে নিজেদের ইচ্ছার ফসিলে পরিণত করেছিলেন তাঁরা কার পৃষ্ঠপোষকতায়?
বিগত বছরগুলোর শেষ দিকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আয়োজিত প্রায় সব কাজে সাধারণ জনগণ তো দূরের কথা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল অতি ক্ষীণ। উচ্চপদস্থ একদল মানুষকে সামনে রেখে কিছু স্তুতিজীবী এসবে থাকতেন। প্রাণহীন এসব অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নির্ধারিত ছকে কৃত্রিমভাবে শেষ হতো।
১৯৭৫ সালে শারীরিকভাবে মারা যাওয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবকে জনতার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জাতীয় নেতা থেকে তাঁকে দলীয় নেতায় পরিণত করা হয়। কার্যত তাঁকে জনগণ ও বাস্তব মানবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
স্বাধীনতাসংগ্রামী মুজিব প্রশাসকও ছিলেন কয়েক বছর। তাঁর প্রশাসনিক পদক্ষেপের অনেক সমালোচনা আছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁর জীবনের সব দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলে সেসব থেকে তরুণেরা শিখতে পারত অনেক কিছু। বিশ্বে সমালোচনা ও ভুলের ঊর্ধ্বে কোনো নেতা নেই। ছিলেন না।
কিন্তু একদল তোষামোদকারী মুজিবকে সব ভুলের ঊর্ধ্বে দেখাতে গিয়ে দেবতার চরিত্র দানের চেষ্টায় তাঁকে মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এই ছিনিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ছিল নাগরিকদের জন্য খুবই অমর্যাদাকর। তারই প্রতিক্রিয়া দেখেছি আমরা ২০২৪-এর আগস্টে।
সম্প্রতি গণ-আন্দোলনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্থাপিত যেসব স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে, সেসব আসলে ১৯৭৫ সালে মারা যাওয়া স্বাধীনতাসংগ্রামী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আক্রোশবশত হয়েছে ভাবলে ভুল হওয়ার শঙ্কা আছে। সেসব হয়েছে তাঁকে নিয়ে গত ১৫ বছর যেসব আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে। তাঁকে জননেতার বদলে দেবতায় পরিণত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। তাঁকে বাংলার-মানব-সমাজ থেকে কেড়ে নেওয়ার আমলাতান্ত্রিক কর্মসূচি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে আড়াল করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে। যাঁরা উল্লিখিত সাম্প্রতিক ভাঙচুরকে মুজিববিরোধী আক্রোশ আকারে দেখছেন, তাঁরা আসলে এখনকার সমাজ-মনস্তত্ত্ব পাঠ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ বলতে চাই।
প্রকৃতপক্ষে এবারের আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানকে আমলাতন্ত্র ও একটা দলের হাত থেকে জনতার কাছে ফিরে আসার লক্ষণ দেখছি।
এই মুজিবকে নিয়ে মানুষ এখন ইচ্ছামতো কথা বলতে পারবে, লিখতে পারবে, প্রশংসা করতে পারবে, সমালোচনা করতে পারবে, নতুন করে অনুসন্ধান করতে পারবে, বিতর্ক করতে পারবে। কারণ তিনি তাঁদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ জন। তাঁকে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার কথা বলতে গিয়ে কাউকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে না।
মুজিবের জীবন অনুসন্ধানের বহু দিক এখনো বাকি। তরুণেরা এখন থেকে স্বাধীনভাবে সেসব খুঁজতে পারবে। বলা যায়, অবশেষে মুজিব মুক্তি পেলেন। এখন বরং দেখা দরকার এই মুজিব যেন বেহাত না হন।
একইভাবে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা ফজলুল হক, জিয়াউর রহমান, কর্নেল আবু তাহের, সিরাজ সিকদারসহ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যেন সব সময় জনতার আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা-প্রশংসার জন্য উন্মুক্ত থাকেন। তাঁদের স্মরণ করার দায় যেন জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া না হয়। সেসব স্মরণ উদ্যোগ যেন সাইবার আইনের মতো সব কালো আইনের কারাগার থেকে মুক্ত থাকে।
আলতাফ পারভেজ, লেখক ও ইতিহাস গবেষক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
১৫ আগস্ট ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
১৫ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
১৫ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

২০২৪ সালের ‘আগস্টে’র প্রতিটি দিন যেন এক-একটা মাসের মতো দীর্ঘ। কত কিছু যে ঘটছে প্রতিদিন। উত্তেজনায় টগবগ করছে দেশ। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের পর এমন সময় আর আসেনি এ দেশে।
১৫ আগস্ট ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫