Ajker Patrika

‘অ্যাডাল্ট গ্যাং’-সমাচার

মহিউদ্দিন খান মোহন
‘অ্যাডাল্ট গ্যাং’-সমাচার

গত রোববার (৩১ মার্চ) আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা ‘কিশোর গ্যাং: সমস্যার গভীরে একনজর’ উপসম্পাদকীয় পাঠ করে ফোন করেছিলেন আমার সাবেক বস তাজুল ইসলাম। তিনি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর প্রেস সচিব ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মতিয়া গ্রুপ) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে বিসিএস তথ্য সার্ভিসের সদস্য হন।

তাজুল সাহেব বললেন, ‘লিখেছ ভালোই। সমস্যাও মোটামুটি চিহ্নিত করতে পেরেছ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটা বলেছ তা হলো, আজকের কিশোর গ্যাং যখন সমাজ ও রাজনীতির নেতৃত্বে উঠে আসবে, তখন কী অবস্থা হবে? কিন্তু আমরা যে এখন “অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের” খপ্পরে পড়ে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থায় আছি, তা থেকে বাঁচার উপায় কী?’ বলা নিষ্প্রয়োজন, আজকের এই নিবন্ধের অনুপ্রেরণা তাজুল সাহেবের মন্তব্য থেকে উৎসারিত।

সমাজবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত বিপথগামী কিশোর-তরুণদের অভিহিত করা হয়ে থাকে কিশোর গ্যাং হিসেবে। ওরা যেসব অপরাধমূলক কাজ করে, তার চেয়েও জঘন্যতম অনেক অপরাধ করে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষ। কখনো বিচ্ছিন্নভাবে, কখনো জোটবদ্ধ হয়ে। অপরাধীদের এই জোটকে শুদ্ধ ভাষায় বলা হয় ‘সিন্ডিকেট’। এদের সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করে আসল সিন্ডিকেটের অবমাননা করছি আমরা হরহামেশা। সবাই জানেন, সিন্ডিকেট এমন একটি সংগঠন, যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন ও অনুমোদিত হতে হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার নামটি এখন অপরাধীদের অঘোষিত সংগঠনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট’ কথাটি বললে অনেকে দুর্নীতি, কালোবাজারি, পণ্য মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি সব অপকর্মের হোতাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। অতশত প্যাঁচঘোচ বোঝেন না, এমন কেউ কেউ মন্তব্য করে বসেন, সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়েও হানা দিয়েছে! আমার মনে হয়, সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট হিসেবে অভিহিত করা বাদ দেওয়ার। পরিবর্তে ওদের ‘গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। যেমন ঘুষখোর গ্যাং, কালোবাজারি গ্যাং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী গ্যাং, অর্থ পাচারকারী গ্যাং ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এরা কিশোর নয় অ্যাডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্ক গ্যাং; যাদের অপকর্মে সমাজ আজ নরকতুল্য হয়ে উঠেছে।

এই অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের কালো থাবায় জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। এরা সমাজ, রাজনীতি, সরকারি প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ রাষ্ট্র এবং সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে থাবা বিস্তার করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বলা যায় এদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত সমাজদেহ।

এরা সমাজে অনৈতিকতা ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে। সমাজের চিহ্নিত দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তৈরি করছে অতিকায় দানব। এসব দানবকে ব্যবহার করে সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক কায়েম করছে তাদের আধিপত্য। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলার উপায় নেই। কারণ এরা এতটাই শক্তিশালী যে সাধারণ মানুষ এদের সামনে অসহায়। ফলে তাদের মুখ বন্ধ করে, চোখ বুজে কোনোরকমে দিন গুজরান করতে হচ্ছে।

রাজনীতিই সমাজকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে। একই সঙ্গে রাজনীতি একটি দেশের নাগরিকদের ভাগ্যনিয়ন্তাও। রাজনীতির কল্যাণে সমাজজীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন বা উন্নতি হবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে—এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ, অসৎ এবং সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য সীমা অতিক্রম করে গেছে। এখন আর দেশপ্রেমিক, মানবদরদি এবং নিষ্ঠাবান মানুষের ঠাঁই রাজনীতিতে নেই।

জায়গা দখল করে নিয়েছে কালোটাকার মালিক, পেশিশক্তিতে বলীয়ান দুষ্কৃতকারীদের গডফাদাররা। রাজনীতির মাঠে একচ্ছত্রাধিপত্য তাদের।

নিষ্ঠাবান, সৎ এবং জনহিতৈষী রাজনীতিকেরা হয়ে পড়ছেন অপাঙ্‌ক্তেয়। রাজনৈতিক দলগুলোয় এখন আর আদর্শের চর্চা নেই। যদিও দলগুলোর নেতা-কর্মীরা আদর্শের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। তবে বাস্তবে তাঁরা আদর্শ নামের মূল্যবোধটির ধারপাশ দিয়ে হাঁটেন না। আগে নেতারা কর্মীদের আদর্শের শিক্ষা দিতেন, দেশপ্রেম, মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখন নেতা নামধারী গডফাদাররা কর্মীদের দুষ্কর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।

টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে দমন ইত্যাদি অপকর্ম সম্পন্ন করতে নেতারা কর্মীদের অনুপ্রেরণা জোগান। আর এসব করতে গিয়ে তাদের সংঘবদ্ধ হতে হয়; যা মূলত দুষ্কৃতকারীদের গ্যাং। ভদ্র ভাষায় বলা হয় সিন্ডিকেট। এসব গ্যাং সমাজকে কলুষিত করে চলেছে।

শুধু রাজনীতি নয়, রাষ্ট্র কিংবা সমাজের সবখানে তথাকথিত সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যাবে; যা মূলত দুর্বৃত্তদের একেকটা গ্যাং। সরকারি অফিসে কোনো কাজ করাতে গেলে এর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় সহজেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটি সংহত গ্যাংয়ের সদস্য যেন। তাঁরা এতটাই সংঘবদ্ধ যে, সেখানে তাঁদেরই রাজত্ব চলে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাঁদের চেইন কাজ করে। অভিযোগ করেও কোনো ফায়দা হয় না। কেননা, ভূত তাড়ানোর ভূতের মধ্যেই যে ভূত বাসা বেঁধে বসে আছে!

তাকান অর্থনীতির দিকে। দেখবেন সিন্ডিকেট নামের গ্যাং কী অসাধারণ দক্ষতায় বাহু বিস্তার করে দখলে নিয়েছে সবকিছু। এসব মহাপরাক্রমশালী গ্যাং ব্যাংক ফোকলা করে দিয়ে দেশের অর্থ নির্বিঘ্নে পাচার করছে বিদেশে। তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর আজ অসুস্থ। একটিকে আরেকটির সঙ্গে জুড়ে দিতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। শুল্ক এবং আয়কর ফাঁকি দেওয়া আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের অলিখিত আদর্শ।

অনেকে বলেন, আমাদের দেশের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যদি সঠিকভাবে আয়কর দিতেন, তাহলে এত দিনে আরও গোটা পাঁচেক পদ্মা সেতু বানানো যেত। এমন একজন ব্যবসায়ীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি তাঁর বার্ষিক আয়ের সঠিক হিসাবমতো আয়কর দেন। ব্যবসায়ীদের এই আয়কর ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে এক দীর্ঘ গ্যাং চেইন। তাঁরা পারস্পরিক যোগসাজশে সরকারের প্রাপ্য না দিয়ে একটি অংশ নিজেদের পকেটে পুরছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারকে ফাঁকি দিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটকে স্বাস্থ্যবান করে দিচ্ছেন।

সরকারি প্রতিটি অফিসে রয়েছে সিন্ডিকেট নামের দুর্নীতিবাজ গ্যাং। এরা সরকারি কেনাকাটা, ভবন নির্মাণসহ নানা কাজে থাবা বসিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে তাদের সেই সব অপকর্মের খবর পত্রপত্রিকায় সংবাদ হয়ে আসে। ৭ হাজার টাকা দামের বালিশ, ২৭ লাখ টাকা দামের পর্দার খবর শুনে আমাদের চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু এর হোতাদের কিছু হয় না। অবশ্য থলের বিড়াল একেবারে বেরিয়ে পড়লে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেরানি আবজাল কিংবা ড্রাইভার মালেকেরা ধরা পড়েন। তবে এসব গ্যাংয়ের ‘গ্যাং লিডাররা’ বরাবর থেকে যান পর্দার অন্তরালে।

অন্য সব ক্ষেত্রের মতো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনও এখন গ্যাংকবলিত; বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব খবর প্রতিনিয়ত বাইরে আসছে, তাতে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কথাটি শুনলেই মনের পর্দায় শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকা একজন সৎ মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠত। অথচ গত কয়েক বছরে এমন কয়েকজন ভিসির পরিচয় আমরা পেয়েছি, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, তহবিল তছরুপসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই যেসব অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠেনি।

যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাগরিক তৈরি করার কথা, তার প্রধান যদি হন চরিত্রহীন, তাহলে দেশে চরিত্রবান মানুষের মঙ্গা তো পড়বেই! কয়েক দিন আগে এক প্রবীণ ব্যক্তি বলছিলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস হতো; যা আমাদের উদ্বিগ্ন রাখত। কিন্তু ইদানীং যেসব খবর পাই, তাতে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যৌনাচারের অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক কেউ নেই এই অভিযোগের বাইরে!

কিশোর গ্যাং নিয়ে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার। কীভাবে দ্রুত বর্ধমান এ ব্যাধির হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে বিশিষ্টজনেরা নানা কথা বলছেন। একই সঙ্গে অ্যাডাল্ট গ্যাংয়ের হাত থেকে জাতিকে রক্ষার উপায় খুঁজে বের করাও জরুরি।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত