Ajker Patrika

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কি জনগণের সমর্থন পাবে

ড. মইনুল ইসলাম
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কি জনগণের সমর্থন পাবে

২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনের আগের রাতের ব্যাপক ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগের কারণে পৌনে পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দেশের বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেরও কূটনৈতিক আক্রমণের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করত বলে সাধারণ ধারণা থাকলেও নির্বাচনের আগের রাতে পুলিশি প্রহরায় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যালট বাক্সগুলো ভরে ফেলার যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঘটানো হয়েছিল, তার সত্যতা সম্পর্কে সিংহভাগ জনগণের মনে বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে গেড়ে বসেছে। যেভাবে এই ‘রাত্রিকালীন ব্যালট জালিয়াতি’ সম্পন্ন করে সংসদের তিন-চতুর্থাংশ আসন দখল করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট, সেটা কি এ দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি লাইনচ্যুত করে দেয়নি? এ ব্যাপারটা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় বিরাট ধস নামিয়েছে।

অতএব, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য বিপর্যয় হয়তো সারা দেশে অপেক্ষা করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও জালিয়াতি করার অপপ্রয়াস নেওয়া হলে আওয়ামী লীগের খবর আছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ এ রকম জালিয়াতি কোনোমতেই মেনে নেবে না। তারা ইতিমধ্যেই এ-ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে প্রবল চাপ দিতে শুরু করেছে। এসব চাপে কাজ না হলে তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়াও হতে পারে। অথচ আওয়ামী লীগের এবারের পৌনে পনেরো বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত প্রশংসনীয় গতিশীলতা সৃষ্টির বিষয়টিকে এই নির্বাচনী-জালিয়াতির ইস্যুটি অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। গত পৌনে পনেরো বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে, সেটা কি গুরুত্ব দাবি করে না? 

১. ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল (ইউএনইকোসক) কর্তৃক নির্ধারিত ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি’ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রি’ ক্যাটাগরিতে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ২০২৪ সালে ‘ডেভেলপিং কান্ট্রি’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির শিকার হওয়ায় ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির সুবিধাগুলো বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ বাংলাদেশের ডেভেলপিং কান্ট্রিতে উত্তরণকে দুই বছর পিছিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে।

২. বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে কিংবা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এর তালিকাটা দেখুন: পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা বিআরটি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক, মিরসরাই-ফেনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-পায়রা-যশোর রেলপথ, যমুনা রেলসেতু, পতেঙ্গা নিউমুরিং টার্মিনাল, আখাউড়া-লাকসাম ডবল লাইন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে অভূতপূর্ব গতি-সঞ্চার করেছে তা কীভাবে অস্বীকার করা যাবে? এগুলো ছাড়াও সারা দেশের গ্রাম ও শহরগুলোতে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে গত পৌনে পনেরো বছরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

৩. বাংলাদেশে পদ্মা সেতু হচ্ছে একমাত্র মেগা প্রকল্প, যেটা সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। প্রায় পৌনে চার বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত করে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে একটি ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ‘ব্ল্যাকমেলিং’য়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। এই সেতু প্রমাণ করেছে, যে দেশটিকে ১৯৭২ সালে ‘আন্তর্জাতিক বাস্কেট কেস’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, সেই দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম।

৪. বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ ২০২১ সালে বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় এসেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে যখন মহাজোট সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল, তখন জনগণের মাত্র ৪৩ শতাংশ ছিল বিদ্যুৎসুবিধার আওতায়। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল—১৪ বছরে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেকগুলো প্ল্যান্ট স্থাপন এবং সঞ্চালন লাইনের প্রসারের মাধ্যমে বর্তমান সরকার এই বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

৫. এখন বাংলাদেশে একটি কৃষিবিপ্লব চলমান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতিমালা গ্রহণের কারণেই কৃষি খাতে এই চমকপ্রদ সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছে। ২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের নিষ্ঠাবান প্রয়াসের ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মোটা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭২ সালে দেড় কোটি টন ধান লাগত আমাদের, অথচ উৎপাদন করতে পারতাম মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টন। ২০২২ সালে এ দেশে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৭ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্যের জোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতিবছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০২২ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৬০ লাখ টন। (অবশ্য প্রতিবছর আমরা ৬০-৬৫ লাখ টন গম আমদানি করি)। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়, তরিতরকারী উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও গরু-মহিষের মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ম্ভরতার দ্বারপ্রান্তে। 

৬. ১৯৮১-৮২ সালে বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান ছিল বাংলাদেশের জিডিপির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ, কিন্তু এখন তা ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

৭. বাংলাদেশ গত পৌনে পনেরো বছরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের হাতে ১৮ কোটি মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে, ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

উপরোল্লিখিত সফলতার বিপরীতে দুঃখজনকভাবে ২০১৪ সাল থেকে ৯ বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা অর্জন করে চলেছে। সর্বশেষ বিশ্বর‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ১২ নম্বর দেশ হিসেবেই নির্ণীত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই গত পৌনে পনেরো বছরে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার ব্যাপারটা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছে পুরোপুরি দৃশ্যমান। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা ‘ক্ষমতার আলাদিনের চেরাগ’ পেয়ে কোটিপতির কাতারে উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারটা লুকোনোর কোনো উপায় আছে কি? দুর্নীতির অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে বিদেশে পুঁজি পাচার এখন দেশের অর্থনীতির ‘এক নম্বর’ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর এখন কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে চলেছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি-প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থায় পৌঁছে গেছে, সেটার জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজি পাচার। পুঁজি পাচারের চাহিদার প্রধান গ্রাহক হলো দুর্নীতিবাজ আমলা, প্রকৌশলী, লুটেরা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকঋণ গ্রহীতারা। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন এবং উদার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও আমলারা যে উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে পুঁজি পাচার করে দেশে-বিদেশে আরাম-আয়েশে দিন গুজরান করছেন, সেটাও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফসল সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশে-বিদেশে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। টরন্টোর বেগমপাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম এখন দেশে আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

এর বিপরীতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-০৬ মেয়াদের জঙ্গিবাদ ও মহাদুর্নীতিবাজ অপশাসনের দুষ্কৃতিগুলো জনগণ হয়তো অনেকখানি ভুলে গেছে! বাংলাদেশকে যে ওই বছরগুলোতে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়েছিল তা কি ভুলে যাওয়া যায়? জামাআতুল মুজাহিদীনের বাংলা ভাই, ভারতের আসামের জঙ্গি সংগঠন উলফার জন্য আনীত ২০০৪ সালের এপ্রিলে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বর্বর গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের আগস্টে দেশের ৬৩টি স্থানে ৫০০ বোমা বিস্ফোরণ, কিবরিয়া হত্যা, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা—এগুলো ভোলা যায়? যুবরাজ তারেক রহমানের ‘হাওয়া ভবনের’ প্যারালাল গভর্নমেন্টের দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির অসহনীয় তাণ্ডবকে কি ভোলা যায়?

সে জন্যই আমার মনে হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মাথাপিছু জিডিপির প্রসার এবং মেগা প্রজেক্টগুলোর সুফল আগামী নির্বাচনে ঘরে তুলতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

ড. মইনুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত