Ajker Patrika

ডা. জাফরুল্লাহ: একজন জনস্বাস্থ্য চিন্তক ও তাঁর অবদান

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৪: ৪৪
ডা. জাফরুল্লাহ: একজন জনস্বাস্থ্য চিন্তক ও তাঁর অবদান

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মূলত একজন ভাস্কুলার সার্জন। সারা জীবন ভেবেছেন জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে। ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্টদের অন্যায় আধিপত্য এবং চিকিৎসাকে বাণিজ্যে পর্যবসিত করার প্রবণতার বিরুদ্ধে তিনি লড়েছেন। বহির্বিশ্ব তাঁকে চেনে একজন বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংগ্রাম শুরু হয় মূলত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালের মার্চে ব্রিটেনে বসবাসরত ১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে। সেই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন ডা. এএইচ সায়েদুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একই বছরের মে মাসে এমএ মোবিন ও জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার করার জন্য ভারতে আসেন। 

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তখন যুক্তরাজ্যে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়ছেন। চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই ফিরে আসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে।

মুজিবনগর সরকারের সহায়তায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘরে গড়ে তোলেন ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল। এই হাসপাতালের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন সেনাবাহিনীর ডাক্তার সিতারা বেগম।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও ডা. জাফরুল্লাহর বড় ভূমিকা ছিল।

স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল স্থানান্তরিত হয় ঢাকার ইস্কাটন সড়কে। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে গ্রাম উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রূপে গড়ে তোলার জন্য ‘চল গ্রামে যাই’ স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন নামকরণ করা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজ হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান।

চিকিৎসা সেবার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিল না এমন নারীদের মাত্র কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েই ফিল্ড হাসপাতালে সেবার কাজ করেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। মূলত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি গড়ে তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়েই যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব- সেটি করে দেখিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

তাঁর এই অভিযাত্রা এবং অর্জন চিকিৎসা বিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিবন্ধটি প্রকাশের পর প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ধারণাটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। 

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ও শিক্ষাজীবন
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী গৃহিনী। মা–বাবার দশ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তাঁর স্কুল ছিল ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউট। এরপর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মেডিকেলে পড়ার সময়ই তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

মানুষের অধিকার আদায়ের ব্রত নিয়েই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেছেন তিনি। কোনো অন্যায়ই সহ্য করেননি কখনো। ঢাকা মেডিকেল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। 

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৬৪ সালে এমবিবিএম পাস করেন। এরপর সাধারণ সার্জারি ও ভাস্কুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস পড়াকালীনই শুরু হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে চলে আসেন ভারতে।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে তাঁর ভাবনা
মানুষের রোগ হবে এটিই স্বাভাবিক- এমনটাই বলতেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কিন্তু সব মানুষের স্বাস্থ্য পরামর্শ এবং চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লড়াই করেছেন আজীবন।

স্বাস্থ্য সেবার জন্য সব ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রিধারী বা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক অপরিহার্য বলে মনে করতেন না তিনি। স্বল্প শিক্ষিত মানুষকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস করতেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি সেটি প্রমাণ করে দেখিয়েছেনও।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর কোনো উদ্যোগকে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করতে চাননি। তাঁর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কর্ম কৌশল ও উদ্যোগ সরকারই যেন সারা দেশে প্রয়োগ করে- এটিই তিনি চাইতেন।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান
ডা.  জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথম স্বাস্থ্য বিমা চালু হয়। যার সুফল এখন বহু মানুষ পাচ্ছেন।

স্বাধীনতার পর দেশের ওষুধের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানির। তখন বাজারে ৪ হাজার ধরনের ওষুধ ছিল। এর প্রায় সবই  আমদানি করা হতো। ওষুধের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। 

হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে, ১৯৮২ সালে জাতীয় ওষুধ নীতি সেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। এই ওষুধ নীতি দেশি কোম্পানিগুলোকে ওষুধ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। দেশে তৈরি হওয়া ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ হয়। এই ওষুধ নীতিই দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। এই নীতির ফলস্বরূপই বাংলাদেশ এখন ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ। 

এই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

এই ওষুধ নীতি নিয়ে বিরোধের জেরেই বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বা বিএমএ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

দেশের মানুষকে স্বল্প মূল্যে ওষুধ দেওয়ার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ওষুধ কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বৈশ্বিকভাবে বিকল্প স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন আয়োজন করে। এর বিকল্প হিসেবে কয়েক বছর পর পর আয়োজন করা হয় পাবলিক হেলথ অ্যাসেম্বলি বা জনগণের স্বাস্থ্য সম্মেলন। পিপলস হেলথ মুভমেন্ট নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এর আয়োজক। এই সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।
ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। 
১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। 
কানাডার ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। 
যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ ২০২২ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘এনআরবি লিবারেশন ওয়ার হিরো ১৯৭১’ পুরস্কার দেয়।
তিনি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য।

গবেষণা ও বক্তৃতা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ৫০টির বেশি দেশে বিভিন্ন সম্মেলন এবং সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নিয়েছেন। একাধিক দেশকে জাতীয় ওষুধ নীতি তৈরিতে পরামর্শ দিয়েছেন। 
তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে অন্যতম ‘রিসার্চ: অ্যা মেথড অব কলোনাইজেশন’। এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। এরপর বাংলা ছাড়াও ফরাসি, জার্মান, ইতালি, ডাচ, স্পেনিস ও একাধিক ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

আলোচিত-সমালোচিত এক স্বাধীন চিন্তার মানুষ
ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর নির্দিষ্ট কোনো মতের রাজনীতির সঙ্গে থাকেননি। তবে তাঁর রাজনৈতিক মত প্রভাব ফেলেছে সব সময়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু ও সহযোদ্ধারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইংল্যান্ডে থাকার সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রকাশ্যে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। এর বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভারতে আসেন। 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে বহনকারী হেলিকপ্টারে হামলা হয়েছিল। সেই হেলিকপ্টারে জাফরুল্লাহ চৌধুরীও ছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোগিতায় সাভারে গড়ে তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর অম্ল-মধুর সম্পর্কের কথা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণে বঙ্গবন্ধুকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন।

তবে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর বাকশালের বিরোধিতা করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তীতে জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে দাঁড়ালে তাঁর হয়ে কাজ করেছেন। 

সখ্য ছিল দুই সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এইচএম এরশাদের সঙ্গেও। এক সময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিএনপি এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

তবে সামরিক শাসকদের সময়েই স্বাস্থ্য নীতি, ঔষধ নীতি ও নারী শিক্ষা, এমনকি সহজে দেশের মানুষের জন্য পাসপোর্টের ব্যবস্থা করতে সরকারকে রাজি করানো এবং প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণে সরকারকে প্রভাবিত করতে জাফরুল্লাহ ভূমিকা অনস্বীকার্য।

রাজনীতিতে সর্বশেষ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। এ নিয়ে অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর জেরে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলার ঘটনাও ঘটে। বেশ কিছু মামলাতেও তাঁকে আসামি করা হয়।

দেশে কোভিড মহামারির সময় সরকারের মহামারি মোকাবিলা কৌশল ও পদক্ষেপ এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত টেস্ট কিট ব্যাপক আলোচনায় আসেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শুরু থেকে সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবই প্রকাশ করা হয়েছে। 

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনের শেষ বছরগুলোতে রোগ–ব্যধির সঙ্গে লড়েছেন। নিজেই দীর্ঘদিন জটিল কিডনি রোগে ভুগেছেন। সাশ্রয়ী ডায়ালাইসিসের জন্য গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ১০০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট তৈরি করেছেন। 

মানুষ যাতে প্রতিস্থাপনের জন্য সহজে কিডনি পেতে পারে সেজন্য দেশের আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে এসেছে ডা. জাফরুল্লাহ। একটি ক্যানসার হাসপাতাল করারও ইচ্ছা ছিল।

চিকিৎসার জন্য কখনো বিদেশে যেতে রাজি হননি। এমনকি বিনা খরচে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব পেয়েও শুধু বিদেশে যেতে হবে বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের জন্য দেশেই কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে যেতে চেয়েছিলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী চিকিৎসা নিয়েছেন সব সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের হাসপাতালেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ট্রাস্টি হিসেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহিতা এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপোযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে শনিবার বেলা দুইটায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩২
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে এনে আগামীকাল শনিবার বেলা দুইটায় নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে নামাজে জানাজা বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় যারা অংশ নিতে আসবেন তারা কোনো প্রকার ব‍্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন‍্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাঙচুর ও লুটতরাজকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান ছায়ানটের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ছায়ানট ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটতরাজের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের প্রতি সংগঠনটি এই আহ্বান জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুকে উপলক্ষ করে একজোট লোক ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা ছয়তলা ভবনের সব সিসি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ, প্রক্ষালণ কক্ষ এবং বহু বাদ্যযন্ত্র, মিলনায়তন, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। সার্ভারসহ ছায়ানটের কিছু বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত সাতটি ল্যাপটপসহ গোটা চারেক ফোন ও কিছু হার্ডডিস্ক লুট করেছে। তাদের ভাঙচুরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

‘ছায়ানট একটি স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ছায়ানট কোনো সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান নেয় না। সুতরাং, ছায়ানট আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবে এবং সংগীত ও শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় এই সাময়িক বিঘ্নের দ্রুত প্রতিকার করতে বদ্ধপরিকর।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ছায়ানটের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়, সংগীত-সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে ছায়ানট। ছায়ানট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে প্রয়াসী। আমরা ওসমান হাদির মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত। কিন্তু ওই সূত্র ধরে ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো, তা মোটেই বোধগম্য নয়। হয়তো পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতিচর্চার বিরোধী গোষ্ঠী।’

সংগীতশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, ছায়ানট এই উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে সমাদৃত। বাংলা গানের চর্চা বিস্তৃতির পাশাপাশি স্বাধীনতা-সংগ্রামে ছায়ানটের ভূমিকাও সারা বিশ্বে স্বীকৃত। তাই ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে এই নিন্দনীয় হামলা মাতৃভূমি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বিশ্বে।

দেশ ও বিদেশ থেকে যে অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে ছায়ানট কৃতজ্ঞ।

বাঙালির আবহমান সংগীতসংস্কৃতির সাধনা ও প্রসারে ছায়ানট তার স্থির প্রত্যয় যাত্রায় অবিচল থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত