Ajker Patrika

রহস্যময় আগুনে জ্বলত ইতালির যে গ্রাম

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১১: ৫৩
রহস্যময় আগুনে জ্বলত ইতালির যে গ্রাম

কেনেতো দি কেরোনিয়া ইতালির সিসিলির মেসিনা প্রদেশের ছোট্ট এক গ্রাম। খুব বেশি মানুষের বসবাসও নেই এখানে। সিসিলি ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা জায়গাটি কোনো কারণে অতিক্রম করলেও একবারের বেশি দুবার তাকাতেন না। তবে ২০০৩ সালের শেষ দিকে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটতে শুরু করে কেনেতো দি কেরোনিয়া গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখের সামনে কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎই বিভিন্ন জিনিসপত্র ও বাড়ি-ঘরে আগুন ধরে যেতে থাকে। বলা চলে, রহস্যময় এই আগুন ইতালি তো বটেই, গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছেই পরিচিত করে তোলে ছোট্ট এই গ্রামকে। 

চোখের সামনে এভাবে কারণ ছাড়া একটার পর একটা অগ্নিকাণ্ড দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ ভড়কে গেলেন। নানা কুসংস্কারের জন্ম দিল এটি। যাঁরা ঘটনাগুলো সরাসরি দেখেছেন তাঁদের কেউ একে শয়তানের কেরামতি বলে দাবি করলেন। কেউ কেউ আবার এর জন্য দায়ী করলেন ইউএফও, অর্থাৎ ভিনগ্রহ থেকে আসা যানকে। 

রহস্যময় আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ঘররহস্যময় আগুনের শুরু
কেনেতো দি কেরোনিয়ায় প্রথম এই সমস্যার শুরু ২০০৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে, রহস্যময় আগুন ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি জায়গায়। এতে পুড়ে যায় গ্রামটির ৯টি বাড়ি। ১৭টি পরিবারকে ঘরছাড়া হতে হয়। প্রথম আগুনের সূত্রপাত স্থানীয় বাসিন্দা অ্যান্টোনিও নিনো পেজিনোর একটি টেলিভিশন বিস্ফোরণ এবং এতে আগুন জ্বলে ওঠার মাধ্যমে। 

বড়দিনের ঠিক আগে ঘটনার শুরু। গ্রামবাসী তখন উৎসবের আমেজে ছিল। এর মধ্যেই ঘটতে থাকে একটির পর একটি ঘটনা। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি রীতিমতো ভুতুড়ে। বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া নেই এমন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে হঠাৎই আগুনের শিখা দেখা যায়। অপ্রত্যাশিতভাবে গলে যায় গ্রামের ফিউজ বাক্সগুলো। আশ্চর্যজনকভাবে দরজায় লাগানো তালাগুলো হঠাৎ ঝনঝন শব্দে কাঁপতে শুরু করে। যেন দরজা থেকে আলাদা হয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এ ধরনের একটার পর একটা ঘটনার জন্ম হতে থাকে ২০০৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় ভয়াবহ এক আগুনে গ্রামের ৩৯ জন বাসিন্দা ঘরছাড়া হয়। গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, আর ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা না থাকায় আরও বেশি হতভম্ব হয়ে পড়ে তারা। ঘরে ফিরতেই সাহস পাচ্ছিল না। মানুষ এতটাই আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যে মেয়র পেদরো স্পিনাতো ইতালির ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সঙ্গে মিলে গ্রামবাসীদের পাশের এক গ্রামের হোটেলে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। পরে জুনের দিকে কিছুটা সাহস ফিরে পান তাঁরা, ঘর-বাড়ি মেরামত করে ফিরতে শুরু করেন।

কেনেতো দি কেরোনিয়া গ্রামশয়তান প্রবেশের গুজব
গ্রামবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর পর মেয়র আগুনের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন। ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ শুরু হয় তদন্ত। এক মাস পর আবার শুরু হলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। কর্তৃপক্ষ সব ধরনের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন গ্রামের। বিদ্যুৎ বিভাগ ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলও তদন্ত শুরু করে রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে। কিন্তু এর গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান বের করায় ব্যর্থ হলো তারা। আর এই ব্যর্থতায় গুজবের ডালপালা ছড়াল। কেউ দেখলেন এতে শয়তানের হাত, কেউ আবার এর সঙ্গে জড়ালেন ইউএফওকে।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সরসিস্টস ফাদার গ্যাব্রিয়েল অ্যামোর্থ গার্ডিয়ানের কাছে দাবি করেন এই অগ্নিকাণ্ডের একটিই ব্যাখ্যা আছে, ‘এ ধরনের ঘটনা তখনই ঘটে, যখন শয়তান কোনো এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় ঢুকে পড়ে, অর্থাৎ যারা তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় তাদের।’ 

অনেক গ্রামবাসী রহস্যময় আগুনের সঙ্গে অতিপ্রাকৃত কিছুর সম্পর্ক আছে বলে দাবি করেনসাময়িকভাবে বন্ধ হলো আগুন
তবে কিছু মানুষ কেনেতো দি কেরোনিয়ার অগ্নিকাণ্ডে অতিপ্রাকৃত কিছুর প্রভাব আছে, এটা মেনে নিতে পারলেন না। সার্জিও কন্তে নামের এক টেলিকম বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকদের কাছে মত প্রকাশ করলেন, গ্রামের বৈদ্যুতিক তারগুলোর বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পরীক্ষা করে দেখেছেন তিনি। তাঁর ধারণা, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করেছে। তবে কন্তে এই প্রশ্ন তুললেও এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ না থাকায় গুরুত্ব পায়নি বিষয়টি। প্রথম অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পর ২০০৮ সালের দিকে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড কমতে কমতে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীও ভয় ও রহস্যকে পেছনে রেখে আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করলেন। একে ‘অমীমাংসিত রহস্য’ হিসেবেই বিবেচনা করল মেয়রসহ তদন্তের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। 

আবার আগুন...
কয়েকটি বছর শান্তই কাটল। তারপর ২০১৪ সালে আবারও রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে শুরু করল গ্রামে। এবার গ্রামবাসী জানাল, আসবাবপত্র, কাপড়ের গাদা এমনকি গাড়িতেও অপ্রত্যাশিতভাবে জ্বলে উঠছে আগুন। আবারও ইউএফওর উপস্থিতিসহ নানা কানাঘুষা শুরু হলো গ্রামবাসীর মধ্যে।

আগুনে পুড়ছে গাড়িএকজন গ্রেপ্তার, কিন্তু রহস্যের সমাধান হলো না
নতুন করে অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হলো, এতে হয়তো অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যাবে এই আশায়। কিছু প্রমাণও মিলল সিসিটিভি ফুটেজে। আর এভাবেই ২০১৫ সালের ৫ মার্চ নতুন অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী করে একজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার হলেন ২৬ বছরের তরুণ গিওসেপ্পে পেজিনো, অ্যান্টোনিও নিনো পেজিনোর ছেলে। তাঁর বাবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। ইতালির সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী পেজিনোরা আগুন লাগানো শুরু করেন সরকারি সহায়তা পাওয়ার জন্য। তবে নতুন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর বেশ কিছুর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিললেও ২০০৩-০৪ সালের মূল অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়ানো সম্ভব হয়নি গিওসেপ্পে পেজিনোকে। এটি অমীমাংসিতই রয়ে গেল।

আগুনে পোড়া ঘরের ভেতরে হতভম্ব এক ব্যক্তিঘটনাটা আসলে কী
এখন গ্রামটিকে এক হিসাবে ‘ঘোস্ট টাউন’ বলা যায়। মূল সড়কের দুপাশে তেমন বসতি নেই। ১৫০-এর নিচে শহরের জনসংখ্যা। তাদের বেশির ভাগ আবার বাস করে চারপাশের পাহাড়ের পাদদেশে। পেজিনো কি তবে সবগুলো অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী? যদি হয়, তাহলে কীভাবে? আচমকা, কোনো কারণ ছাড়াই চোখের সামনে অগ্নিকাণ্ডগুলো ঘটতে দেখেছে গ্রামবাসী। ওই সময় এখানে বাস করা যেসব মানুষ এখনো গ্রামেই আছেন, তাঁরা আজও ভাবেন কীভাবে লেগেছে আগুনগুলো? অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তির গ্রামে উপস্থিতির তত্ত্বটা এখনো ঘুরপাক খায় তাদের মাথায়।

শুধু স্থানীয় গ্রামবাসীর নয়, কেনেতো দি কেরোনিয়ার আগুনের রহস্য অবাক করে গোটা বিশ্ববাসীকেই। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উঠে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিভি প্রোগ্রাম দ্য আনএক্সপ্লেইনড ফাইলসে। ২০১৯ সালে কেরোনিয়ার আগুন উঠে আসে টিভি শো আনআইডেন্টিফাইড: ইনসাইড আমেরিকা’জ ইউএফও ইনভেস্টিগেশনে। কী, একটিবার সিসিলি ঘুরে আসবেন নাকি? সেখানকার অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার পাশাপাশি অমীমাংসিত এক রহস্য সমাধানেও নেমে পড়তে পারবেন। 

সূত্র: অল দেট ইন্টারেস্টিং ডট কম, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত