Ajker Patrika

দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ৩৪
দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে

দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষের দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। ক্ষমতাসীন এই দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। ৪ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সম্মেলনের এই তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। দুই দিনব্যাপী সম্মেলন করার রেওয়াজ থাকলেও এবার জাতীয়-আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খরচ কমাতে এবং সমালোচনা এড়াতে এক দিনেই শেষ করা হবে। সম্মেলনে কোনো ধরনের জাঁকজমক হবে না। তবে  সম্মেলন সফল করতে ১১টি উপকমিটি গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। কাউন্সিলর ও ডেলিগেট তালিকা তৈরি করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলাগুলোতে। গঠনতন্ত্র মেনে জনসংখ্যার হার অনুযায়ী কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের তালিকা করে আওয়ামী লীগ।

জেলার প্রতি ২৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন করে কাউন্সিলর এবং এর দ্বিগুণ ডেলিগেট হবেন। এবার সম্মেলনে ৮ হাজার কাউন্সিলর ও ১৬ হাজার ডেলিগেট থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যথেষ্টসংখ্যক ‘সম্মানিত অতিথি’ উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন করছে আওয়ামী লীগ। দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সম্মেলন হয়েছে ৪৪টির। এর মধ্যে অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে সব সাংগঠনিক জেলাসহ সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এই রাজনৈতিক দলটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বলেই এই দলকে নিয়ে ভিন্ন ধরনের আবেগ কাজ করে অনেকের মধ্যে। এটা বলা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাসও একীভূত হয়ে আছে। তবে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক কি না, সে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি এটাও অনেকের জিজ্ঞাসা যে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসেও আমাদের দেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কেন গড়ে উঠল না? কেন রাজনীতিটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে?

আহমদ ছফার একটি কথা আছে: আওয়ামী লীগ যখন জেতে, তখন শেখ হাসিনা তথা কিছু মুষ্টিমেয় নেতা জেতেন, আর আওয়ামী লীগ যখন হারে, গোটা বাংলাদেশ তখন পরাজিত হয়। আহমদ ছফার এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন না, আবার সব মানুষ বিএনপিরও সমর্থক নন। এই দুই দলের বাইরেও রাজনৈতিক দল আছে এবং সেসব দলেরও কমবেশি সমর্থকগোষ্ঠী আছে। তবে মোটাদাগে, দেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বৃত্তে বন্দী হলেও এই দুই দলের জয়-পরাজয়ের তাৎপর্য আবার এক নয়।

বিএনপি বহু বছর ক্ষমতার বাইরে কিন্তু তাদের এই ক্ষমতায় না থাকার ক্ষতি শুধু তাদেরই। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে বলে আওয়ামী বৃত্তের কিছু মানুষের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কথা যেমন সত্য, তেমনি গোটা দেশের অগ্রগতি যে হয়েছে, সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। উন্নতি সুষম হয়নি। দেশে ধনবৈষম্য দৃষ্টিকটুভাবেই বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশে কি বড় রকম কোনো সমস্যা দেখা দেবে? যদি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে, অর্থনৈতিক নীতিতে বড় কোনো তফাত না থাকে, তাহলে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, না বিএনপি—সেটা কি বড় প্রশ্ন হওয়ার কথা?

বিভুরঞ্জন সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতির ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা। এক বছর পর দেশে আরও একটি নির্বাচন হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনেও কি আওয়ামী লীগ জিতবে, নাকি আওয়ামী লীগ হেরে গোটা বাংলাদেশকে হারাবে?

যাঁরা বাংলাদেশের পরাজয় দেখতে চান না, তাঁরা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে কৌতূহলের সঙ্গে নজর রাখছেন এই কারণে, দলটি পরবর্তী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য কাদের ওপর নির্ভর করবে, তা ঠিক হবে এই সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন বছর মেয়াদের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। আগের তিন বছর দলটি কেমন চলল, সেটা নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হওয়ার কথা।  সেখানে প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনার পর কাউন্সিলররা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পারফরম্যান্স এবং দলের সমর্থক ভোটার, স্থানীয় ও জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন নেতৃত্বকে নির্বাচিত করবেন—এটাই রীতি। কিন্তু সম্মেলনে এই রীতি কি মেনে চলা হবে?

ভোটের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয় না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন যেভাবে হয়, তাকে গণতান্ত্রিক বলা চলে না। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষিত হয়। নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনের উদ্যমই যেকোনো রাজনৈতিক দলের বড় সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের সময় কি এই বিবেচনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়?

আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন নেই, এমন নেতাদেরই কমিটিতে প্রাধান্য দেখা যায়। যৌথ নেতৃত্বের কথা বলা হয়। কার্যত তা হয় না। এতে চাপ বাড়ে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার ওপর। একজনের ওপর সব বিষয়ে নির্ভরতা ভালো নয়।

নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণে রাজনৈতিক দলগুলোর অনীহার কারণ কী—সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দল। এই দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হলে তা অন্য দলকেও প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি ‘হাত তোলা’ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখে এবং সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এককভাবে সভাপতির ওপর অর্পিত হতে থাকে, তাহলে একে কি সত্যিকার গণতন্ত্রচর্চার প্রতিফলন বলে মেনে নেওয়া যায়? শেখ হাসিনা যাঁদের বিশ্বস্ত এবং কাজের লোক মনে করেন, তাঁদেরই নির্বাচনের মাধ্যমে জিতিয়ে আনলে অসুবিধা কোথায়? বলা হবে যে কাউন্সিলররা ভোটাভুটিতে যেতে না চাইলে বা কেউ স্বেচ্ছায় কোনো পদের জন্য প্রার্থী হতে না চাইলে কী করার থাকে? এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক করা যেতে পারে। তবে সংক্ষেপে শুধু এটুকুই বলা যায় যে শেখ হাসিনা নিজে ভোটাভুটি চাইলে কাউন্সিলররা তাতে দ্বিমত করবেন—এটা কেমন যেন অস্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে হয়। নেতৃত্ব নির্বাচনে যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা না হলে আগামী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কতটুকু লাভবান হবে, তা বলা মুশকিল।

নেতৃত্ব নির্বাচন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও রাজনীতিসচেতন মহল এ ব্যাপারে নিস্পৃহ থাকতে পারে না। দলটির রাজনীতি দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে। সে জন্যই আওয়ামী লীগের নিজস্ব বিষয়েও মানুষের আগ্রহ-কৌতূহল বেশি।

২০০৯ সালে দলীয় এক সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভোগে নয়, ত্যাগে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ সরকার শাসক নয়, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চায়। দলের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতা-কর্মীর ব্যক্তিগত লোভ-লালসা বা অন্যায় আচরণের কারণে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। অসৎ পথে অর্জিত অর্থসম্পদ কিছুকাল ভোগ করা যায়। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আমাদের আগে যে দল ক্ষমতায় ছিল তারা মনে করত লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা যাবে, সুখ কেনা যাবে। যে কারণে জনগণের কথা না ভেবে অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করেছিল। তা কি তাদের কাজে লেগেছে? কাজে লাগেনি। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। (সংবাদ, ২৫ জুলাই ২০০৯) দলের সভাপতির এই বক্তব্য কর্মী-সমর্থকেরা হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন বলে কি এখন মনে হয়? ভালো কথা বলাটাই শেষ কথা নয়। কথা অনুযায়ী কাজ হয় কি না, সেটাও দেখার বিষয়। ভালো কথার মূল্য ক্ষণস্থায়ী, ভালো কাজের মূল্য দীর্ঘস্থায়ী।

২০০৯ সালের অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক সভায় বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিকে আশ্রয় দিয়ে দিনবদল সম্ভব নয়। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দিনবদলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দুর্নীতিকে চিরদিনের জন্য “না” বলতে হবে। আমরা অতীতের হানাহানি ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে ফিরে যেতে চাই না। অতীতের মতো একটি ভবন বানিয়ে দুর্নীতিকে প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক রূপ দিতে চাই না। আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে চাই।’

আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের শাসন বাংলাদেশকে সত্যি কতটুকু বদলে দিয়েছে, তার একটি হিসাব-নিকাশ কি আগামী সম্মেলনে করা হবে?

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত