Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: জানার আছে যা যা

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১৪: ৩৯
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: জানার আছে যা যা

একদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী নির্বাচন। দুই বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্পর্কে নিজেদের মনোভাব জানাতে আগামীকাল ৮ নভেম্বর ভোট দেবেন দেশটির জনগণ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চার বছর মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে যেহেতু এই নির্বাচন হয়, তাই একে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়। ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা যাচাইয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি।

মধ্যবর্তী নির্বাচন কি?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই নির্বাচন। সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ- দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করে কংগ্রেস। এজন্য দুটি কক্ষ আলাদাভাবে কাজ করে। কোন আইনগুলো অনুমোদনের জন্য সিনেটে উঠবে তা নির্ধারণ করে নিম্নকক্ষ।

কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নির্ধারণে দুই বছর পর হয় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন।  ডেমোক্র্যাট না রিপাবলিকান- এবার কাদের দখলে থাকছে কংগ্রেস, তা কালকের ভোটে নির্ধারিত হবে। 

কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ৫৩৫ জন। এর সিনেটের সদস্য ১০০ জন, বাকিরা প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য দুজন করে সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে, যারা সিনেটর হিসেবে পরিচিত এবং ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে পারে, তবে উচ্চকক্ষ সিনেট ধরে রাখতে পারে ডেমোক্র্যাটরা। ছবি: টুইটার

জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে প্রতিনিধি পরিষদ 
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আছেন ৪৩৫ জন। প্রত্যেক সদস্য তাদের অঙ্গরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা দুই বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। এই পরিষদের সবগুলো আসনের জন্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে। 

এবার জিতবে কারা
ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দুই বছর ধরে হাউস ও সিনেট উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। ফলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য আইন পাস করা অনেকটা সহজ ছিল। তবে ডেমোক্র্যাটরা খুব স্বল্প ব্যবধানে কংগ্রেস দখলে রেখেছে, যা মধ্যবর্তী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছে। জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, তবে সিনেট ধরে রাখতে পারে ডেমোক্র্যাটরা। 

সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রে যে দল হোয়াইট হাউসে থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে থাকে। কাজেই রিপাবলিকানরা তাদের আসনসংখ্যা বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জনপ্রিয়তাও অনেকটা কমেছে। তাঁর প্রতি সমর্থন গত আগস্ট মাস থেকেই ৫০ শতাংশের নিচে নেমেছে। ফলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের জনপ্রিয়তায়ও ভাটা পড়তে পারে। 

গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যু
অভিবাসন, অপরাধ এবং জীবনযাত্রার ব্যয়- ২০২২ সালের শুরু থেকেই মনে হয়েছে এই তিন সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রের বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এসব সমস্যা রিপাবলিকানদের ভোটে জয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে।  

তবে জুনে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল, যখন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট দেশটির গর্ভপাত সুরক্ষা আইন বাতিল করে। নারীদের গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করে ডেমোক্র্যাটরা এবং এটিকে অনেক প্রচারণায় কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে দলটি। 

প্রেসিডেন্টের বাকি মেয়াদ কেমন যাবে তা এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলের ওপর নির্ভর করবে। ছবি: টুইটারকিন্তু সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব এখন অনেকটা ম্লান। রিপাবলিকানরা মূল্যস্ফীতি, অভিবাসন ও সহিংস অপরাধের মতো বিষয়ের দিকে মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা করছে ভোটারদের। 

মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব
মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রেসিডেন্টের বাকি মেয়াদ কেমন যাবে তা অনেকাংশে নির্ধারিত হয়। আর এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেলে বিভিন্ন ইস্যুতে বেকায়দায় পড়বেন জো বাইডেন। কংগ্রেসে অনেক আইন পাসে বাধার সম্মুখীন হতে পারে বাইডেন প্রশাসন। 

ডেমোক্র্যাটরা যদি কংগ্রেসে দখল ধরে রাখতে পারে, তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা চালিয়ে যেতে, সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি প্রসারিত করতে, গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণকে কঠোর করতে সক্ষম হবেন। 

আর যদি রিপাবলিকানরা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেয়, তাঁরা বাইডেন প্রশাসনের এজেন্ডাগুলোকে থামিয়ে দিতে পারবে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। ফলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটাল হিলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার তদন্ত মাঝপথেই আটকে দিতে পারবে। 

২০২৪ সালের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিপরীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পও লড়বেন বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন। ছবি: এএফপিএ ছাড়া আগের কিছু ইস্যুতে নতুন তদন্ত শুরু করতে পারে রিপাবলিকানরা- যেমন, চীনের সঙ্গে জো বাইডেনের ছেলের কথিত ব্যবসায়িক লেনদেন বা আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। এমনকি রিপাবলিকান আধিপত্য ইউক্রেনের জন্য সহায়তা দেওয়ার মতো বাইডেনের বৈদেশিক নীতিকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে। 

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে প্রভাব পড়বে
মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হলেই সবার নজর যাবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার দৌড়ে কে থাকতে পারে, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিতে পারবে। ২০২০ সালের লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে পারে আগামী নির্বাচনে, কারণ এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প—দুজনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থিতপ্রার্থীদের কর্মকাণ্ড ঠিক করবে, তিনি নির্বাচনে লড়তে রিপাবলিকানদের সমর্থন পাবেন কিনা। কাজেই এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল যে ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- সে কথা বলাই যায়। 

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন তামান্না-ই-জাহান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আল-জাজিরা
ছবি: আল-জাজিরা

১৫ বছর আগে আজকের এই দিনটিতেই (২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর) তিউনিসিয়ার তরুণ এক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে আত্মাহুতি দেন। তাঁর এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিস্ফোরণ ঘটায়। বেকারত্ব, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি মানুষের ক্ষোভ রাস্তায় নেমে আসে। ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত এই আন্দোলনে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় একের পর এক পতন ঘটে দীর্ঘদিনের শাসকদের। দেড় দশক পর ক্ষমতাচ্যুত সেই নেতারা এখন কোথায়, কেমন আছেন, জেনে নেওয়া যাক—

জিনে আল আবিদিন বেন আলি (তিউনিসিয়া)

একসময় তিউনিসিয়ার নিরাপত্তা প্রধান ছিলেন বেন আলি। পরে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং একপর্যায়ে নিজেকে আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে একনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাঁর ২৩ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও দুর্নীতি, বৈষম্য ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ চরমে পৌঁছেছিল।

প্রকাশ্য দিবালোকে শরীরে পেট্রল ঢেলে বুয়াজিজির আত্মহত্যার পর টানা বিক্ষোভ সীমা ছাড়িয়ে গেলে ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি তিউনিসিয়া থেকে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বেন আলি। পরে তিউনিসিয়ার আদালত তাঁকে তাঁর অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে সেই সাজা কখনো কার্যকর হয়নি। ২০১৯ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকা অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়।

হোসনি মুবারক (মিসর)

১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৩০ বছর মিসরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন দেশটির সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান হোসনি মুবারক। জরুরি আইন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি মিসরে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের ১৮ দিনের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হন মুবারক। বিক্ষোভকারীদের হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে তাঁকে প্রথমে যাবজ্জীবন দেওয়া হলেও পরে সেই রায় বাতিল হয়। দুর্নীতির মামলায় কিছু সময় আটক থাকার পর ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান। ২০২০ সালে রাজধানী কায়রোতে তাঁর মৃত্যু হয়।

আলি আবদুল্লাহ সালেহ (ইয়েমেন)

১৯৭৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর ইয়েমেন শাসন করেছেন আলি আবদুল্লাহ সালেহ। দেশটির জটিল উপজাতীয় ও সামরিক রাজনীতির দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আরব বসন্তের ঢেউ লাগে ইয়েমেনেও। ২০১১ সালে বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছাড়লেও তিনি হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোট বাঁধেন এবং ২০১৪ সালে সানা দখলে সহায়তা করেন। পরে সেই জোট ভেঙে গেলে ২০১৭ সালে হুতি বাহিনীর হাতেই তিনি নিহত হন।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)

১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ৪২ বছর লিবিয়া শাসন করেন গাদ্দাফি। তেলের সম্পদ দিয়ে তিনি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ২০১১ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে বিক্ষোভ শুরু হলে তা দ্রুত গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ন্যাটোর বিমান হামলা ও বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রায় সেই বছরের আগস্টেই রাজধানী ত্রিপোলির পতন ঘটে। অক্টোবরে নিজ শহর সির্তে বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ে গাদ্দাফি নিহত হন।

বাশার আল আসাদ (সিরিয়া)

২০০০ সালে সিরিয়ার ক্ষমতায় আসা বাশার আল আসাদ তাঁর পিতা হাফেজ আল আসাদের উত্তরসূরি। ২০১১ সালে দেশটির কিশোরদের লেখা সরকারবিরোধী গ্রাফিতি থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরে তা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের আকস্মিক অভিযানে দামেস্কের পতন ঘটে। আসাদ পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যায় এবং সেখানে এখন নির্বাসিত জীবন-যাপন করছে।

আরব বসন্ত শাসকদের পতন ঘটালেও বহু দেশে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তির স্বপ্ন এখনো অধরাই গেছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নজর এড়িয়ে কীভাবে তেল পাচার করে ভেনেজুয়েলার গোপন নৌবহর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যকার উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াত করা তেলবাহী জাহাজ ঠেকাতে নৌ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য মূলত ভেনেজুয়েলার তথাকথিত ‘ঘোস্ট শিপ’ বা ভুতুড়ে জাহাজগুলো—যেগুলোর মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গোপনে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল মজুতের দেশ ভেনেজুয়েলার সরকারি ব্যয়ের বড় অংশই তেল রপ্তানির আয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর ওপর কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বৈধ পথে দেশটির তেল রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার বিকল্প পথ হিসেবে গড়ে তোলে এক গোপন নৌবহর—যা ‘ঘোস্ট ফ্লিট’ বা ‘ভুতুড়ে নৌবহর’ নামে পরিচিত।

সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল স্থানান্তর করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার জলসীমায় বা দেশটির দিকে অগ্রসরমাণ প্রায় ৮০টি জাহাজের মধ্যে ৩০ টির বেশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায়। ট্রাম্প এই জাহাজগুলোকেই টার্গেট করে ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক নৌ অবরোধের’ ঘোষণা দিয়েছেন।

২০১৯ সালে প্রথম দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছিল। তবে ছয় বছর পর আবার তা বেড়ে দৈনিক প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে। এটি ১৯৯৮ সালের সর্বোচ্চ ৩০ লাখ ব্যারেলের তুলনায় অনেক কম হলেও ধীরে ধীরে রপ্তানি পুনরুদ্ধার প্রমাণ করে—মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না।

ভেনেজুয়েলা একা নয়; রাশিয়া ও ইরানও একই কৌশল ব্যবহার করছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের হিসাব অনুযায়ী—বিশ্বে প্রতি পাঁচটি তেলবাহী জাহাজের একটি কোনো না কোনোভাবে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পরিবহনে জড়িত।

এই ভুতুড়ে জাহাজগুলো সাধারণত ঘনঘন নাম ও পতাকা বদলায়, স্বয়ংক্রিয় পরিচয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) বন্ধ রাখে কিংবা পুরোনো স্ক্র্যাপ করা জাহাজের পরিচয় ব্যবহার করে—যেগুলোকে বলা হয় ‘জম্বি শিপ’। অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করে তেলের প্রকৃত উৎস আড়াল করা হয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী নৌ উপস্থিতি, বিশেষ করে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড বিমানবাহী রণতরীর নেতৃত্বে ক্যারিবীয় অঞ্চলে অভিযান, এই গোপন তেল বাণিজ্যের পথ সংকুচিত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এতে ভেনেজুয়েলার ‘ঘোস্ট ফ্লিট’-নির্ভর তেল রপ্তানি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১০
আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ‘আলাদা’ করে দিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর হুমকির জবাব দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশে কিছু রাজনীতিকের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ অব্যাহত থাকলে ভারত চুপ থাকবে না এবং উচিত শিক্ষা দেবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে হিমন্ত বলেন, ‘গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে বারবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে যুক্ত করার আলোচনা চলছে। কিন্তু ভারত একটি বিশাল দেশ, পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। বাংলাদেশ কীভাবে এমন চিন্তা করতে পারে?’

হিমন্ত আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশের মধ্যে ‘খারাপ মানসিকতা’ কাজ করছে এবং ‘তাদের এত বেশি সাহায্য করা উচিত নয়’।

হিমন্ত বলেন, ‘তাদের খুব বেশি সাহায্য করা উচিত নয়। তারা যদি ভারতের প্রতি এমন আচরণ করে, তাহলে আমরা যে চুপ করে থাকব না—সেই শিক্ষা দেওয়া দরকার।’

এর আগে গত সোমবার এক সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করে না, যারা ভোটাধিকারকে বিশ্বাস করে না, মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এই দেশের সন্তানদেরকে বিশ্বাস করে না, আপনারা যেহেতু তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে, বাংলাদেশে আমরা তাদেরকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেব।’

চলতি বছরের শুরুতে ভারতের তথাকথিত ‘চিকেনস নেক’ করিডরকে লক্ষ্য করে দেওয়া হুমকির বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, যাঁরা নিয়মিত ভারতের চিকেনস নেক করিডর নিয়ে হুমকি দেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত—বাংলাদেশেরও দুটি চিকেনস নেক রয়েছে, যা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমটি হলো, ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর বাংলাদেশ করিডর, যা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কোনো বিঘ্ন ঘটলে পুরো রংপুর বিভাগ বাংলাদেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

দ্বিতীয়টি হলো, মাত্র ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম করিডর, যা দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ভারতের চিকেনস নেকের চেয়েও ছোট এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রাজধানী ও রাজনৈতিক রাজধানীর মধ্যে একমাত্র সংযোগস্থল।

হিমন্ত আরও দাবি করেন, সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’ ইতিমধ্যে ভারতের শক্তিমত্তা প্রমাণ করেছে। তাঁর ভাষায়, বাংলাদেশকে ভারত আক্রমণ করার আগে ১৪ বার পুনর্জন্ম নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং ভারতের সঙ্গে এর তুলনা করা যায় না।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো পথ নেই। আমরাই সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিএনএন প্রতিবেদন

হিমালয়ের গহিনে চীনের মহা শক্তিধর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে রহস্য ও উদ্বেগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর তীব্র বাঁকেই গড়ে উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সিএনএন
তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর তীব্র বাঁকেই গড়ে উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সিএনএন

চীনের জনবহুল এলাকা থেকে শত শত মাইল দূরে, দুর্গম হিমালয় অঞ্চলের এক প্রত্যন্ত নদীর তীব্র বাঁকে গড়ে উঠতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রায় ১৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিমাণে ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বের যে কোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। কিন্তু প্রকল্পটি যতটা উচ্চাভিলাষী, ততটাই বিতর্কিত। কারণ এটি ঘিরে রয়েছে ব্যাপক গোপনীয়তা, পরিবেশগত ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, চলতি বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং তিব্বতে এক বিরল সফরে গিয়ে প্রকল্পটি ‘দৃঢ় ও কার্যকরভাবে’ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিব্বত এমন এক অঞ্চল, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার নামে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করছে চীন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীর নিম্নাঞ্চলে নির্মাণাধীন ওই প্রকল্প প্রকৌশলগত দিক থেকে হবে অতুলনীয়, তবে একই সঙ্গে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ!

এই নদী হিমালয়ের বরফগলা জলধারার অংশ এবং এটিকে বলা হয় ‘এশিয়ার জলভাণ্ডার’। এখানে নদীটি মাত্র ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মিটার ঢালুতে নেমে এসেছে। এই বিপুল উচ্চতা-পতন কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের ভেতর সুড়ঙ্গ কেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে চীন। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে বছরে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় থ্রি গর্জেস ড্যামের উৎপাদনের প্রায় তিন গুণ।

চীন যুক্তি দিয়েছে—এই প্রকল্প কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক হবে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির যুগে এটি দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করবে। তবে এতে বড় ধরনের পরিবেশগত ঝুঁকি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই অঞ্চলের বিরল বনভূমি, জীববৈচিত্র্য এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা।

তবে এই উদ্বেগের ব্যাপ্তি আরও বিশাল। কারণ এটির প্রভাব নিয়ে বড় উদ্বেগ রয়েছে চীনের সীমান্তের বাইরেও। ইয়ারলুং সাংপো নদীই ভারতের ব্রহ্মপুত্র এবং পরে এটি বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। এই নদীর ওপর নির্ভর করে কোটি কোটি মানুষ—মাছ ধরা, কৃষিকাজ ও জীবিকার জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, পলিবাহিত ব্যবস্থা ও জলজ প্রতিবেশকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা এখনো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।

ভারতের গণমাধ্যম ইতিমধ্যেই প্রকল্পটিকে সম্ভাব্য ‘পানি বোমা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কারণ এটি চীন-ভারত বিতর্কিত সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সতর্ক করে বলেছেন, চীন চাইলে পানি আটকে বা হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে অঞ্চলটিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীই ভারতের ব্রহ্মপুত্র এবং পরে এটি বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। ছবি: সিএনএন
তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীই ভারতের ব্রহ্মপুত্র এবং পরে এটি বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। ছবি: সিএনএন

তবে বেইজিং এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দশকের পর দশক গবেষণা করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর জন্য প্রকৌশল নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষায় পূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, প্রকল্পটি নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর (ভারত ও বাংলাদেশ) ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য বিনিময় করা হবে।

তবু বাস্তবে প্রকল্পের নকশা ও কার্যপ্রণালি সম্পর্কে খুব কম তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। উন্মুক্ত উৎস, স্যাটেলাইট চিত্র ও গবেষণা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এটি হবে বাঁধ, জলাধার ও পাহাড়ের নিচে সুড়ঙ্গের একটি জটিল নেটওয়ার্ক—যার বিস্তৃতি প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাঁচটি ধাপে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হলেও, কোন এলাকায় কত জমি ডুবে যাবে বা কত মানুষ স্থানচ্যুত হবে, তা স্পষ্ট নয়।

এই অঞ্চলটি ভূমিকম্প প্রবণ। ভূমিধস, বরফগলা হ্রদের বিস্ফোরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখানে অবকাঠামোর জন্য বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা প্রকৌশলীরা দক্ষ হলেও, হিমালয়ের মতো জটিল ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে এত বড় প্রকল্পের ঝুঁকি এড়ানো প্রায় অসম্ভব।

এদিকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন শুরু হয়েছে। মনপা ও লহোবা নামে দুটি ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষদের বসতভিটা ছেড়ে নতুন এলাকায় যেতে হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে—‘স্থানান্তরের জন্য কৃতজ্ঞ’ লেখা ব্যানারসহ ট্রাকে করে মানুষ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে, এই প্রকল্প চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও জ্বালানি উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক হলেও, এর সামাজিক, পরিবেশগত ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বচ্ছতা ও আন্তর্দেশীয় সহযোগিতা ছাড়া এই প্রকল্প ভবিষ্যতে শুধু বিদ্যুৎ নয়—নতুন সংঘাতও উৎপাদন করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

নিরাপত্তা শঙ্কায় ইসিতে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও রেহা কবির সিগমা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত