Ajker Patrika

আগে তো নয় মণ ঘি জোগাড় হোক

মহিউদ্দিন খান মোহন
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১১: ৫৬
আগে তো নয় মণ ঘি জোগাড় হোক

২ অক্টোবর আজকের পত্রিকায় আমার লেখা ‘বিএনপির কাঁধে ফের সংস্কারের ভূত!’ শিরোনামের নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরিচিত অনেকেই ফোনে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই বলেছেন, সঠিক সময়ে আমি একটি সঠিক বিষয় তুলে ধরেছি; যা বিএনপিকে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়তা করবে। আমি তাঁদের বলেছি, বিএনপি তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে নিজেদের সিদ্ধান্তে। সেখানে আমার নিবন্ধ তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে, এমনটি আমি মনে করি না। তবে আমি মনে করি রাষ্ট্র সংস্কারের যে অবিমৃশ্যকারী ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে বিএনপি সময়ের অপচয় করছে, তাতে তাদের লোকসান বৈ লাভ হবে না। অবশ্য কেউ কেউ আমাকে এই বলে অভিযুক্ত করেছেন, আমি নাকি বিএনপিকে পেছন থেকে ছোরাবিদ্ধ করার চেষ্টা করছি। তাঁদের আমি স্পষ্ট করেই বলেছি, যেহেতু আমি এই দলটির সঙ্গে একসময় সম্পৃক্ত ছিলাম, তাই পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

নিবন্ধটি পাঠান্তে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তাঁর প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন মেসেঞ্জারে। সহৃদয় পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তাঁর পাঠানো প্রতিক্রিয়াটি এখানে হুবহু তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন, ‘চমৎকার লেখা। এ প্রসঙ্গে আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের যুগান্তকারী পরিবর্তন (ফেডারেটেড স্ট্রাকচার) আনতে গেলে কেউ কেউ রেফারেন্ডামের বিষয়টিও সামনে আনতে পারেন। তদুপরি বাংলাদেশের মতো একটি সদৃশ দেশে ফেডারেটেড ব্যবস্থা আদৌ প্রযোজ্য হবে কি না, কিংবা এই ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বাংলাদেশকে বহুধাবিভক্ত করে ফেলবে কি না, সেসব মারাত্মক তাত্ত্বিক প্রশ্নও সামনে চলে আসতে পারে। যারা এসব কথা প্রচার করছে, তারা কি একবারও এ সকল প্রশ্নের গভীরে গিয়েছে?’ সংগত কারণেই ভদ্রলোকের নামোল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। কেননা, তাঁর নামটি আমি যদি খোলাসা করি, তাহলে পরক্ষণেই তাঁর ঘাড়ে শাস্তির খড়্গ নেমে আসতে পারে। কারণ, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য প্রাণপাত আন্দোলনরত বিএনপির অভ্যন্তরে এখন গণতন্ত্রের আকাল চলছে। সেখানে চলছে এক ব্যক্তির শাসন। তাঁর অঙ্গুলি হেলনে কেউ কেউ উঠে যাচ্ছেন পর্বত-শৃঙ্গে, আবার কেউ কেউ মুহূর্তেই পতিত হচ্ছেন ভূতলে।

হাজার হোক ভদ্রলোক এই কঠিন রাজতন্ত্রের মধ্যেও দলটির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য পদে বহাল আছেন। আমার কারণে তাঁর ক্যারিয়ারের ক্ষতি হোক, তা আমি চাই না। তবে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো যে অত্যন্ত যুক্তিসংগত এবং বিএনপির জন্য অতীব জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিএনপির মিডিয়া সেল নামের নয়া দোকানটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যে তত্ত্বটি বাজারে সেল করার চেষ্টা করছে, তা কতটা বাস্তবসম্মত, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।

আমরা সবাই কমবেশি জানি কোন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট থাকে। যেসব দেশে ফেডারেল পদ্ধতির সরকার রয়েছে, সাধারণত সেই সব দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট রাখা হয়। অবশ্য ফেডারেল সরকারব্যবস্থা ছাড়াও দু-একটি দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট রয়েছে; যা দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একাধিক প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রগুলোর পার্লামেন্ট হয় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারতকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এসব দেশে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’ গঠিত ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ ও ‘সিনেট’ নিয়ে। সেখানে সিনেট উচ্চকক্ষ। আবার ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ‘কমন্স সভা’ গঠিত ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ’ ও ‘হাউস অব লর্ডস’ নিয়ে। ভারতের পার্লামেন্টের দুটি অংশ—রাজ্যসভা ও লোকসভা। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল পদ্ধতির সরকার থাকলেও যুক্তরাজ্যে, অর্থাৎ গ্রেট ব্রিটেনে তা নেই। তা সত্ত্বেও সেখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিদ্যমান। সাধারণত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট যেসব দেশে রয়েছে, সেই সব দেশের নিম্নকক্ষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত আর উচ্চকক্ষের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা রাজা-রানি কর্তৃক মনোনীত হন। তা ছাড়া, ওই সব দেশের বেশির ভাগ কয়েকটি প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত।

বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। ফেডারেল পদ্ধতির সরকার এখানে নেই। তা ছাড়া, আমাদের সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনভাবে বিন্যস্ত যে এখানে চাইলেই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সাধারণত সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন—এমন সব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সরকার বা রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনীত করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এ মুহূর্তে তা কতটুকু সম্ভব, তা-ও বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সম্ভবত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে জনৈক আইনজীবী দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের ফর্মুলাটি দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া সেটা কয়েকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞকে দিয়েছিলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে, বাংলাদেশে এর সম্ভাব্যতা কতটুকু, তা যাচাই করে দেখতে। তাঁরা একটি রিপোর্টও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে প্রযোজ্য বলে বিবেচিত না হওয়ায় ডিপ ফ্রিজের তলায় ঠাঁই পেয়েছিল। ওই সময় আমি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে জেনেছিলাম, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রায় সবাই এ প্রস্তাবকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘অবাস্তব’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

কেউ কেউ এ-ও বলেছিলেন যে জাসদের তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খানের ব্রেইন চাইল্ড এই পরিত্যক্ত তত্ত্ব বিএনপি বাস্তবায়ন করতে যাবে কোন দুঃখে। তাঁরা এটাও বলেছিলেন, সিরাজুল আলম খানের এই তত্ত্ব যারা একসময় ফেরি করত, সেই জাসদ এখন বহুধাবিভক্ত এবং ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বিস্মৃত হয়েছে। জাসদের সেই অলীক স্বপ্ন কেন বিএনপি বাজারজাত করবে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রায় ১৩ বছর পর যখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের জন্য বিএনপি সংগ্রামে লিপ্ত, তখন হঠাৎ করে আবার সেই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির দায়িত্ব কেন তারা কাঁধে তুলে নিল, তা অনেকেরই বোধগম্য নয়।

বিএনপির ওই শীর্ষস্থানীয় নেতা অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির অবতারণা করেছেন, তা গায়ের জোরে ঠেলে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ফেডারেটেড ব্যবস্থা আদৌ প্রযোজ্য হবে কি না এবং এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা বাংলাদেশকে বহুধাবিভক্ত করে ফেলবে কি না। অত্যন্ত সংগত প্রশ্ন সন্দেহ নেই। কেননা, বাংলাদেশের মতো এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফেডারেল পদ্ধতির কোনো কিছু অঙ্গীভূত করতে গেলেই নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেরই জানা আছে, জাসদের ওই তাত্ত্বিক নেতা বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার তত্ত্বও একসময় হাজির করেছিলেন। তাঁর সেই তত্ত্ব নিয়ে জাসদ ছাড়াও আরেকটি দল কিছুদিন চোঙা ফুঁকেছিল। তবে ওই ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডত্বকে যে হুমকির সম্মুখীন করে তুলতে পারে, সে আশঙ্কা বোধকরি প্রবক্তাদের মনে আসেনি।

রাষ্ট্র সংস্কারের মতো একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ যে এতটা সহজ নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন দুইভাবে সম্ভব—এক. সমাজবিপ্লব ঘটিয়ে, দুই. নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে। বিএনপির বর্তমান বাস্তবতায় তা যে কতটা অসম্ভব, সেটা বোধকরি পুনর্বার বলার প্রয়োজন পড়ে না। আর সে জন্যই পুরোনো প্রবাদের অনুকরণে বলা যায়, আগে তো নয় মণ ঘি জোগাড় হোক। তারপর নাহয় রাধাকে নাচানোর কথা চিন্তা করা যাবে।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত