Ajker Patrika

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে তথ্যের অবাধ প্রবাহ

ড. মো. গোলাম রহমান
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৫
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে তথ্যের অবাধ প্রবাহ

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসের অন্যতম ভাবনা হচ্ছে, আধুনিক তথ্যব্যবস্থায় বিশেষ করে ডিজিটাল তথ্যের ব্যবহারে একজন নাগরিককে কীভাবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। কিন্তু ডিজিটাল তথ্যের অধিকার কি আমাদের দেশের জনগণ আইনগতভাবে অর্জন করেছে? এদিকে একইভাবে ডিজিটাল তথ্যে জনগণের অধিকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে।

ডিজিটাল তথ্য ব্যবহারে এক ব্যক্তির নিজস্ব তথ্যের গোপনীয়তা এবং প্রতিটি দপ্তর কিংবা অফিসের ডিজিটাল তথ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স—এআই) যথেচ্ছ অনুপ্রবেশ সার্বিক তথ্যব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আমাদের সমাজে আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের বাস্তবতা বড় ধরনের সামাজিক ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইড কম-বেশি একই রকম প্রশ্নের অবতারণা করেছে। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং এই ব্যবধান অনেক বেশি। এদিকে সুশাসন নিশ্চিত করা, জনগণের অধিকার রক্ষা এবং এআইয়ের প্রভাব থেকে নৈতিক দিক অক্ষুণ্ন রেখে জনগণকে সেবা প্রদান করা—তথ্য অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই বিষয়গুলো অধিক গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনার দাবি রাখে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সুশাসন কীভাবে নাগরিকের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারে, সে ব্যাপারে অভিজ্ঞ মহলের কাজের অবকাশ রয়েছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সুশাসন তথ্য অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করবে না—এই মর্মে তার প্রতিবিধান করা। আধুনিক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজকর্ম সম্পন্ন হয়, সে ক্ষেত্রে সেই সব প্রতিষ্ঠান সরকারি কাজের ধ্যানধারণা ও নিয়মকানুন পুরোপুরি মেনে চলে না, আদর্শিকভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের ওপর এআইয়ের ব্যবহার নৈতিকভাবে পরিপালিত না-ও হতে পারে, বরং এআইয়ের অনৈতিক অনুপ্রবেশ তথ্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাহলে আউটসোর্সিংয়ের কাজকর্ম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবাধ সঞ্চরণ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাজে যেভাবে অনুপ্রবেশ করে তথ্য-উপাত্তের ওপর নিজের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, তাতে সেই সব তথ্য-উপাত্তের মৌলিকত্ব এবং তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালন উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর তাসখন্দে সমবেত হওয়ার কথা শতাধিক সদস্যদেশের। সেই সমাবেশে তাসখন্দ ঘোষণা গৃহীত হবে বস্তুতপক্ষে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি হিসেবে তাদের প্রতিশ্রুতি জনগণের তথ্য অধিকার কার্যকরভাবে প্রতিপালনের লক্ষ্যে। সেই ঘোষণায় ১২টি প্রধান সুপারিশ সন্নিবেশিত হয়েছে। সুপারিশগুলো আবর্তিত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাম্প্রতিক প্রযুক্তির উদ্ভব ও সুশাসনকে ঘিরে। জীবনমানের এই ত্রিমাত্রিক বাস্তবতাকে ঘিরে জনগণকে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে উন্মুক্ত জীবনাচারের অন্যতম বাহন হিসেবে তথ্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। তাতে করে আইনের শাসন নিশ্চিত হবে; প্রশাসনে স্বচ্ছতা আসবে এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। এই সুপারিশসমূহের মধ্যে বয়স্ক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সংখ্যালঘু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, গ্রামের মানুষ, ডিজিটাল সীমিত সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি, নিম্ন আর্থসামাজিক ব্যক্তিবর্গের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্রুত ও স্বল্প সময়ে যোগাযোগ স্থাপন, মতামত আদান-প্রদান এবং দুর্লভ তথ্য ও যোগাযোগ উপকরণপ্রাপ্তির যে সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা অকল্পনীয় এক তথ্যভান্ডার।

তথ্য অধিকার আইন জনগণের জন্য একধরনের রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, কার্যালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড, পরিকল্পনা, সেবা ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো নাগরিক কিছু জানতে চায়, তাহলে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সে প্রার্থিত তথ্য পেতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার ভোগ করার জন্য নামমাত্র মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে একজন নাগরিক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পেয়ে থাকে। তাতে করে পুরো প্রশাসনযন্ত্র জবাবদিহির মধ্যে চলে আসে। যেকোনো সময় যেকোনো নাগরিক যেকোনো অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাইতে পারে এবং পেতে পারে। তাতে করে তথ্য লুকানোর সংস্কৃতি থেকে এই সমাজ বেরিয়ে আসতে পারে। তথ্যের অংশীদারত্বে নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে। দীর্ঘকাল মনে করা হতো, কোনো অফিসের তথ্য হয়তো গোপনীয়; তথ্য যে নাগরিকদের জন্যই ব্যবহার করা হয়, তথ্য জেনে নাগরিকের জীবনমান যে পরিবর্তন করা সম্ভব— এই সুযোগই ছিল না। তথ্য অধিকার আইন চালু হওয়ার পর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সংবিধানের ৭ (১)-এ রয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ’। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ একটি মাইলফলক ঘটনা। তথ্য কবজা করে তা প্রকাশ না করার যে অবস্থা বিদ্যমান ছিল, তা থেকে বের হয়ে জনগণের সুবিধার জন্য তথ্য ব্যবহার করার আইনি ব্যবস্থা দেশের মানুষকে একটি দায়িত্বশীল অধিকার চর্চার সুযোগ করে দিয়েছে।

ইউনেসকো গত বছর তথ্য অধিকারে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করে এসডিজির ১৬.১০.২ নিরূপণে আইন প্রণয়ন ও কার্যকরণে মানসম্পন্ন ‘টুল’ বা হাতিয়ার বলে অভিহিত করেছে। ইউনেসকো সরকারি ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোকে উচ্চমানসম্পন্ন, সময়োপযোগী, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সরকারি ও বেসরকারি অফিস থেকে তথ্যপ্রাপ্তি দেশের নাগরিকদের জন্য এক অপরিমেয় শক্তি। এই শক্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সম্পর্কে জনগণকে জানতে হবে। ভালোভাবে জানতে হবে আইনের ধারা-উপধারা এবং আইনটি ব্যবহার করার কৌশল। আইন সম্পর্কে এমনিতেই জনগণের ধ্যানধারণা খুব ভালো নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের আইনের সুফল ভোগ করার প্রয়োজনীয়তা সাধারণভাবে হয়ে ওঠে না।

প্রেস তথা গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার আইন প্রচারের কথা সম্যকভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। তাঁরা শুধু তথ্য অধিকার আইনের প্রচারেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং নিজেরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্যের জন্য অনেক আবেদন করবেন, তাতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। 

আধুনিক ও প্রযুক্তিবান্ধব আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করা এবং বিদ্যমান আইনের সংস্কার ও পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে ব্যক্তি ও সংস্থার তথ্য সংরক্ষণে আধুনিক ও সময়োপযোগী আইনের প্রবর্তন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যের ব্যবহার মানুষকে উন্নত জীবনমানের নিশ্চয়তা দেয়। মানুষ নানা তিক্ততায় ঘর পোড়া গরুর মতো সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়। তাদের আইনের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করে, আইন সম্পর্কে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত