Ajker Patrika

নবীকে (সা.) নিয়ে দুই বিজেপি নেতার মন্তব্য: বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ জানাল যেসব দেশ-সংগঠন

আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৬: ৪৭
নবীকে (সা.) নিয়ে দুই বিজেপি নেতার মন্তব্য: বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ জানাল যেসব দেশ-সংগঠন

ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি–বিজেপির দুই নেতার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ২০টি দেশ ও সংগঠন। ওই দুই নেতার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ বেকায়দায় পড়েছে মোদি সরকার। উপসাগরীয় দেশগুলোর পাশাপাশি উত্তর আফ্রিকার চারটি ও এশিয়ার চারটি দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। 

ইসলামের নবীকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র ও দলটির দিল্লি ইউনিটের মিডিয়া সেলের প্রধান নূপুর শর্মার মন্তব্যের কারণে নজিরবিহীন কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে বিজেপি সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে ওই দুই নেতার নাম উল্লেখ করা হলেও দলীয় পদবি উল্লেখ করা হয়নি। তাঁরা দুজন যে ধরনের মন্তব্য করেছেন সেটির প্রকৃতি নিয়েও কোনো আলোচনায় যায়নি দলটি। এমনকি, ভারতের যে জনগোষ্ঠী–ভারতীয় মুসলমান–ওই দুই নেতার বক্তব্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন তাঁদের উদ্দেশেও কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

অবশ্য বিজেপি বিদেশি প্রতিবাদের চাপে এরই মধ্যে নূপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং নবীন জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে। 

যেসব দেশ, সংস্থা এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে সেগুলো হলো: 

১. কাতার
নবী মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিজেপির দুই নেতার মন্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় কাতার দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তালকে তলব করে ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে। গত ৫ জুন কাতার সরকার এই পদক্ষেপ নেয়। 

এমনকি দেশটিতে সফররত ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইড়ুর কাছেও কাছেও এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন কাতারবাসীরা। জবাবে বিজেপি অনুসারীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাতার বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। টুইটারে #BycottQatarAirways এবং বয়কট কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ইত্যাদি লিখে জবাব দিচ্ছে। 

এদিকে, কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে কোনো ব্যক্তির ‘আক্রমণাত্মক টুইট’ কোনোভাবেই ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না। এসব মন্তব্য ‘বিচ্ছিন্ন অংশের’ দৃষ্টিভঙ্গি মাত্র। 

২. কুয়েত
কুয়েত সরকারও দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সিবি জর্জকে তলব করে অফিশিয়াল প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করেছে। তাতে কুয়েতের তরফ থেকে বিজেপির ওই দুই নেতা নবী মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তার দৃঢ় প্রত্যাখ্যান এবং তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দেশটি বিজেপি ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করে যে বিবৃতি জারি করেছে তাকেও স্বাগত জানিয়েছে। 

কুয়েতের এমন প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে থাকা ভারতীয় দূতাবাস কাতারে ভারতীয় দূতাবাসের মতো একইরকম বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। 

এদিকে, ওই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে কুয়েতের একটি সুপারমার্কেট সব ধরনের ভারতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। 

৩. ইরান
একই ঘটনায় গত ৫ জুন সন্ধ্যায় ইরানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গাদ্দাম ধর্মেন্দ্রকে তলব করা হয়েছিল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরান নবী মুহাম্মদ সা. নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। 

মেহের নিউজ আরও জানিয়েছে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ইসলামের নবীকে নিয়ে যেকোনো অবমাননা অগ্রহণযোগ্য। এমন এক সময় এই ঘটনা ঘটল যখন ইরানের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান ভারত সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। 

তবে এই বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানানো হয়নি। 

৪. সৌদি আরব
ঘটনার একদিন পর সৌদি আবর ওই বিতর্কিত বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে। দেশটি বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সকলের ‘ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ সা. এর অবমাননা করা হয়েছে। 

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিবৃতিতে দেশটি, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো বিদ্বেষকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান’ করার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সকল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায় এমন সব কর্মকাণ্ডকেও চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলে জানিয়েছে। 

তবে ঘটনার পর বিজেপি ওই মুখপাত্রকে বরখাস্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। 

এদিকে, সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ আলেমদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলও বিজেপির ওই দুই নেতার বিতর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। তাঁরা নবী মুহাম্মদ সা. এর চরিত্র এবং তাঁর কর্ম নিয়ে কোরআনের একটি আয়াতও উদ্ধৃত করে। 

মক্কা কর্তৃপক্ষ 
মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনা মসজিদে নববীর কর্তৃপক্ষ সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদের বাইরেও নবীকে নিয়ে ‘অবমাননাকর বক্তব্যের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রেও ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বা মন্তব্য করা হয়নি। 

৫. ওমান
ওমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি শেখ খলিফা বিন আলি আল হারদি দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমিত নারাঙকে তলব করেছিল। দেশটি জানিয়েছে, বিজেপির ওই দুই নেতার ‘আক্রমণাত্মক বক্তব্যের’ নিন্দা জানিয়েছে। ওমানও ঘটনার পর ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রে ভারত এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। 

৬. বাহরাইন
বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গত সোমবার নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছে বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বিবৃতিতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মুসলমানদের অনুভূতিতে উসকানি এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের প্ররোচনা হিসাবে নবী মুহাম্মদ সা. এর বিরুদ্ধে যে কোনো নিন্দনীয় অবমাননাকে নিন্দা করতে হবে।’ 

এ ক্ষেত্রেও ভারত এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। 

৭. আফগানিস্তান
তালেবানের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের সরকারও বিজেপির নেতাদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে বিবৃতি জারি করেছে। দেশটির সবচেয়ে বড় সংবাদ সংস্থা পাজওয়ক নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

সংবাদ সংস্থাটি তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক টুইটে বলেছেন—‘ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্তৃক ইসলামের নবী (সা.) এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই ধরনের ধর্মান্ধদের যেন ইসলামের অবমাননা এবং মুসলমানদের অনুভূতিতে উসকানি দিতে না দেওয়া হয়।’ 

আফগানিস্তানের অবস্থানের বিপরীতেও ভারত কোনো বক্তব্য দেয়নি। 

৮. ইন্দোনেশিয়া
বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা কেবল উপসাগরীয় দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল। 

দেশটি বিজেপির দুই রাজনীতিবিদ কর্তৃক নবী সা. এর বিরুদ্ধে ‘অগ্রহণযোগ্য অবমাননাকর মন্তব্যের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। 

এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিক্রিয়ার কোনো জবাব দেয়নি ভারত। 

৯. সংযুক্ত আরব আমিরাত
এ ঘটনায় উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরে বিবৃতি দিয়েছে আরব আমিরাত। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয় বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে তাঁরা ‘নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ এবং নীতির পরিপন্থী সমস্ত অনুশীলন ও আচরণ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে। 

ভারত আরব আমিরাতের প্রতিবাদেরও কোনো জবাব দেয়নি। 

১০. জর্ডান
জর্ডানও বিজেপির ওই দুই নেতার আপত্তিকর বক্তব্যের ‘শক্তিশালী ভাষায় প্রতিবাদ’ জানিয়েছে। 

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হাইথাম আবু আলফুল বলেছেন, তাঁরা ‘ইসলামি এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের লঙ্ঘনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যকে চরমপন্থা ও ঘৃণা পোষণ করে এমন একটি কাজ হিসাবে বিবেচনা করছে। 

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, বিজেপির মুখপাত্রকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ‘একটি সঠিক পদক্ষেপ’। 

জর্ডানের প্রতিক্রিয়ারও কোনো জবাব দেয়নি ভারত। 

১১. মালদ্বীপ
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি মালদ্বীপ। দেশটি বিজেপির ওই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, তাঁরা ‘অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ 

মালদ্বীপ ঘটনার পর ওই দুই নেতাকে বরখাস্ত করতে বিজেপি গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো জবাব দেয়নি। 

১২. ইরাক
ঘটনার পর ইরাক সোমবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। সেসময় ইরাক এক বিবৃতিতে বলেছে, "এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ ও অসম্মানজনক কাজগুলো ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদি এসব কাজ প্রতিহত করা না হয়, তবে তা ভয়ানক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে। যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্টের পাশাপাশি অকল্পনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেই সঙ্গে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।’ 

বাগদাদের ভারতীয় দূতাবাস কাতারের ভারতীয় দূতাবাসের অনুকরণে একই জবাব দিয়েছে। 

১৩. লিবিয়া
উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াও বিজেপির দুই নেতার বক্তব্যকে ‘অপমানজনক বক্তব্য’ বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে ভারত কোনো জবাব দেয়নি। 

১৪. পাকিস্তান
পাকিস্তান নবীর (সা.) বিরুদ্ধে বিজেপির দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে এর নিন্দা জানাতে ভারতীয় শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করেছিল। 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতীয় কূটনীতিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে—এই মন্তব্যগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং তা কেবল পাকিস্তানের নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীও ঘটনার নিন্দা করে একটি পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। 

পাকিস্তানের প্রতিবাদের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘সরকার সব ধর্মকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়। ভারত সরকার পাকিস্তানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। পাকিস্তানে ধর্মান্ধদের প্রশংসা করা হয় এবং তাদের সম্মানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। 

মিশর: ধর্মীয় ইস্যুতে নমনীয় মিশর সরকার এই ইস্যুতে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে দেশটির দুই প্রধান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে।

১৫. আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়
মুসলমানদের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ও বিজেপির দুই নেতার বক্তব্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। 
 
আল আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞ ভারতীয়’ যে মন্তব্য করেছে তা কেবল ‘চরমপন্থার সমর্থক এবং ঘৃণা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমর্থক এবং বিভিন্ন ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনুসারীদের মধ্যে শত্রুতার নীতি’ থেকেই উদ্ভূত হতে পারে। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৬. মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি
মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি শাওকি আলামও বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের ‘অপমান ঘৃণার অনুভূতিকে উসকে দেয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা বাড়ায়।’ আলাম নবী, ধর্ম, পবিত্র স্থান এবং ধর্মীয় প্রতীকগুলোর বিরুদ্ধে অবমাননাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। 

ভারত এ ক্ষেত্রেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৭. তুরস্ক
তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্য ও সাংবাদিক এবং সাবেক মন্ত্রী ওমের সেলিক বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছেন। সেলিক তাঁর টুইটারে লিখেছেন, ‘আমরা নবীর বিরুদ্ধে ভারতীয় শাসক দল–বিজেপির একজন কর্মকর্তার অবমাননাকর বক্তব্যের তীব্রতম শব্দে নিন্দা জানাচ্ছি। এটি শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যও অপমানজনক। 

সেলিক আরও বলেন, ‘তুরস্ক আশা করে—ভারত সরকার ‘ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করবে। 

এ ক্ষেত্রে ভারত কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে বলে জানা যায়নি। 

১৮. মালয়েশিয়া 
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে। 

একটি বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁরা ‘উসকানিমূলক মন্তব্য’ দেওয়ার কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার বিজেপির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ভারতকে ইসলামভীতি শেষ করতে এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে। 

ভারতীয় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

১৯. অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) 
৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতে মুসলমানদের ‘পরিকল্পিত’ হয়রানির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওআইসি ভারতে মুসলমানদের অধিকার সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ভারত সরকার ‘ওআইসি সচিবালয়ের অযৌক্তিক এবং সংকীর্ণ মন্তব্যকে’ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। 

আপত্তিজনক টুইট ও মন্তব্যগুলো ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা ওআইসি সচিবালয়কে তার সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা বন্ধ করতে এবং সমস্ত ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করব।’ 

২০. গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলও এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) মহাসচিব মহাসচিব ডা. নায়েফ ফালাহ এম আল হাজরাফ নবী মোহাম্মদ সা. এর বিরুদ্ধে ভারতীয় ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্রের বক্তব্যের নিন্দা, প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করেছেন। 

ভারতীয় প্রতিক্রিয়ায় কোনো বক্তব্য দেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত