Ajker Patrika

বর্গিরা থাকে ঘাপটি মেরে, রক্ত চোষে সময় পেলে

আব্দুর রাজ্জাক
আপডেট : ২১ মে ২০২২, ১২: ০৮
বর্গিরা থাকে ঘাপটি মেরে, রক্ত চোষে সময় পেলে

সেই ব্রিটিশ আমলের বর্গিদের কথা আমরা জানি। তাদের শোষণ, তাদের শাসন, তাদের অত্যাচার, জুলুমের কথা এখনো সবার মুখে মুখে। বিদেশি বর্গিদের হাত থেকে আমরা হয়তো সাময়িক মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু দেশীয় নব্য বর্গিরা তাদের চেয়েও ভয়ংকর। বলা হয়, দেশীয় সম্পদের বেশির ভাগ এই নব্য বর্গিদের হাতে। এই বর্গিদের কয়েকটি সেক্টর সম্পর্কে সবিনয়ে দু-একটি কথা বলতে চাই।

বর্তমান সময়ের আলোচিত খাত—তেল। ভোজ্যতেলের নৈরাজ্য গত দুই-তিন মাসের আলোচিত ঘটনা। তেল নিয়ে যে এই তেলেসমাতি, এর কারণ হলো দেশীয় যে পাঁচটি কোম্পানি অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করে পরিশোধিত করে, আমাদের সরবরাহ করে, তাদের হাতে তেল মার্কেট জিম্মি। এসব কোম্পানি বেশ কিছু বছর যাবৎ তাদের প্রোপাগান্ডা দিয়ে এই সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর আমাদের জাতিকে পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল করে তুলেছে। যার কারণে আমরা এখন আমাদের পূর্বপুরুষের তেল খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করে তাদের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের রক্ত এখন এরা শুষে নিচ্ছে পরিশোধিত তেল দিয়ে। এই কোম্পানিগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার দরুন আমরা সরাসরি পরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারি না।

আমরাই ছোটবেলায় দেখেছি, দেশীয় সরিষার তেল দিয়ে আমাদের চাহিদা পূরণ হতো। বোতলে করে গৃহস্থ পরিবাররা এক পোয়া, আধা সের সরিষার তেল দিয়ে সপ্তাহ পার করত। বহুজাতিক কোম্পানির বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার কারণে আমাদের সেই সুস্বাদু সরিষার তেলের খাবার থেকে বঞ্চিত হলাম।

ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে ২০০ টাকা করে মণপ্রতি এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গমের দাম বাড়ার ওপরে নির্ভর করে আটার দাম, যা আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় অত্যাবশ্যকীয়। এখন দেখা যাক এ নিয়ে কী তুঘলকি কাণ্ড ঘটে।

এখন আসা যাক পোশাকশিল্প খাত সম্পর্কে। পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তা, হর্তাকর্তা, বিধাতা বা বর্তমান কর্ণধার—সবাইকে আমরা কমবেশি চিনি। আশির দশকের গোড়ার দিকে তাঁরা প্রায় সবাই ঢাকা শহরে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঘুরে বেড়াতেন। তাঁদের বেশির ভাগই খুব একটা মেধাবী ছিলেন না। মধ্যম অথবা নিম্নমানের লেখাপড়া ও বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করলেন। কিন্তু তাঁরা কর্মোদ্যম ছিলেন। প্রথমে কারও অধীনে দু-এক বছর কাজ করে নিজেরাই আরম্ভ করলেন এই ব্যবসা। নিজেরা কারও ওপর বোঝা না হয়ে নিজেদেরই কর্মসংস্থান করলেন এবং অন্যকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলেন। এই পর্যন্ত তাঁদের সাধুবাদ জানাতেই হয়।

ওই কর্ম উদ্যোগী মানুষগুলো কেন যেন অব্যবস্থাপনা ও অসৎ উদ্দেশ্যে এবং শোষকের মানসিকতা নিয়ে তাঁদের নিজেদের সমাজের, তাঁদের চারপাশের কিছু মানুষকে শোষণ করতে আরম্ভ করলেন। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা, শুল্ক ফাঁকির টাকা আত্মসাৎ করে নিজেরা রাষ্ট্রীয় শক্তির সমান্তরাল শক্তিতে পরিণত হলেন। এসবের মূলে ছিল হঠাৎ করে হাতে লুণ্ঠিত অর্থ আসা।

যেহেতু আমাদের সমাজব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শুল্ক খাত, আয়কর খাত, পরিবহনব্যবস্থাকে কলুষিত করে তাঁরা গড়ে তুললেন একের পর এক কারখানা। আমাদের সমাজের সস্তা শ্রম ও শ্রমের কোনো মূল্য নির্ধারণ না থাকার কারণে একে পুঁজি করে তাঁরা হঠাৎ করে কোটিপতি বনে গেলেন। আত্মসাৎ করলেন ব্যাংকের তারল্য পুঁজি। দখল করলেন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও ভালো ভালো জায়গা-জমি।

এসব ভাগ্যান্বেষী মানুষ রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার দরুন কোটিপতি থেকে শতকোটি টাকা, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন। তাঁরা সংগঠন করলেন, সংগঠনকে মজবুত করলেন। তাঁরা দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেললেন। তাঁরা আছেন সংসদে, মন্ত্রিসভায়, রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বড় বড় পদে।

টাকাপয়সা নেই—এই বলে তাঁদের শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন দিতেও তাঁরা অস্বীকার করেছেন। তাঁদের নিট সম্পদের হিসাব করে দেখুন, ২০ বছর আগে যাঁর ছিল এক কোটি টাকা, তাঁর এখন শতকোটি টাকা।

স্বাস্থ্য খাতের বর্গিদের কথায় আসি। আমাদের দেশের কিছু শিক্ষিত তরুণ, তাঁরা মেধাবীও বটে, চিকিৎসাশাস্ত্রে বিদ্যা অর্জন করে মানুষকে চিকিৎসা দেবেন, এই ব্রত নিয়ে কাজ আরম্ভ করলেন। কেউ সরকারি চাকরি, আবার কেউ সরকারি চাকরি না পেয়ে ছোটখাটো ক্লিনিক বা ফার্মেসি খুলে মানুষকে সেবা দিতে আরম্ভ করলেন। মানুষের জীবনযাত্রার মান একটু উন্নত হওয়ার দরুন এসব ডাক্তার-শ্রেণির ব্যবসায়ীরা প্রথমে ছোটখাটো ক্লিনিক, তারপর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তারপর ছোটখাটো হাসপাতাল বানিয়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় চিকিৎসাব্যবস্থাকে ব্যক্তি খাতের দিকে নিয়ে এলেন। রাষ্ট্রীয় খাতের চিকিৎসকেরা পার্টটাইম কাজের অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ব্যক্তি খাতের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ফুলে ফেঁপে উঠতে সাহায্য করলেন। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা এই ব্যক্তি খাতের কাছে এখন জিম্মি। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ওই সব অসাধু ডাক্তার ও ব্যবসায়ী যতটা শোষণ করার তা করে নিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি শেষ হলে আবার হয়তো জেঁকে বসবেন।

পরিবহন খাতের দিকে আসি এবার। এখানে অনেকগুলো সংগঠন আছে—মালিক সংগঠন, শ্রমিক-মালিক সংগঠন, শ্রমিক কল্যাণ সংগঠন, খাঁটি শ্রমিক সংগঠন ইত্যাদি। এসব সংগঠনের লোকজন সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলতে পারে এক ঘণ্টার মধ্যে। এসব সংগঠনের নেতারা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেন। নেতারা কেউ ডান, কেউ অতি ডান, কেউ বাম, কেউ অতি বাম। কেউ আবার জানেনই না তিনি কে। তাঁরা শুধু প্রতিদিনের পাওনা চান। বিভিন্ন সংগঠনের নামে তাঁরা বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা তুলছেন। এখন এই দুঃসময়ে পরিবহনশ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি খারাপ বললে অত্যুক্তি হবে না।

শিল্প উদ্যোগের নামে একশ্রেণির লুটেরা শিল্পপতি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে শিল্প করেন। বাকি টাকা পাচার করে ঋণখেলাপি হয়ে বসে আছেন। নিজের সম্পত্তি বিদেশেও পাচার করছেন।

কেউবা আবার ১০ টাকার সম্পত্তি ৫০ টাকা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে বর্গি হয়ে বসে আছেন।

শিক্ষা খাতেও বর্গি তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ, কোচিং সেন্টারের নামে শিক্ষাকে কুক্ষিগত করেছেন অনেকে।

সাধারণ চোখে মনে হবে কৃষি খাতে কোনো বর্গি নেই। যদি প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন কেমন করে তাঁরা শোষিত হচ্ছেন। কৃষিপণ্য যারা পরিবহন করে, কৃষিতে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক উৎপাদন করে, বাজারজাত করে, তাদের আর্থিক অবস্থা এবং ফসল ফলান যাঁরা, তাঁদের আর্থিক অবস্থার পার্থক্য দেখলে এই খাতের বর্গিদের চিনতে কোনো অসুবিধা হবে না।

ব্যাংকিং খাতে আছে দাদনব্যবস্থা। কিছু কিছু নব্য ধনী প্রাইভেট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি খাত থেকেই ঋণ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা গড়ে তুলছেন। সেখান থেকে তাঁরা তুলে নিচ্ছেন হাজার কোটি টাকা। মুনাফা শোষিত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ছোটখাটো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

এনজিও নামক বর্গিরা কম যায় না! অনেক এনজিওর প্রধান কর্তাব্যক্তিরা আমাদের সমাজের বিভিন্ন দুর্বলতার দিক তুলে ধরে বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ এনে নিজেরাই আজ বর্গিদের ভূমিকায়। এসব এনজিওর অত্যাচারে কত যে সাধারণ নিরীহ মানুষ নিঃশেষ হয়ে গেছে বা আত্মহত্যা করেছে, তার একটা হিসাব হওয়া উচিত।

সরকারি কিছু আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেরাই নিজেদের বর্গি মনে করেন। তাঁরা কাজ করবেন বলে শপথ নিয়ে সরকারি কাজে যোগদান করেন। আর মানুষের অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কুক্ষিগত করেন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্পদ।

রাজনৈতিক বর্গিরাও এই সমাজের বোঝা। কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দলের কোনো পদ নিয়ে, নির্বাচিত হয়ে অথবা অনির্বাচিতভাবেই নিজ নিজ এলাকার ত্রাণকর্তা সেজে বসে আছেন। এলাকার সব ধরনের ঠিকাদারি কাজ, উন্নয়নমূলক কাজ, নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্যের সব কাজেই তাঁদের হাত বাড়ানো চাই।

ধর্ম ও সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ধার্মিক বর্গি সেজে সমাজকে শাসন ও শোষণ করছেন।

সাধারণ শ্রমিক জনতা, সৎ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ দেশপ্রেমিক, আপামর জনগণ যদি জেগে ওঠে, তবে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার শীর্ষ ব্যক্তি বোধ হয় এখনো সঠিক লাইনে আছেন। আশা করব, এই দুরবস্থার পর তিনি সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে, যোগ্য-মেধাবী-সৎ লোককে সঠিক জায়গায় বসিয়ে নব্য বর্গিদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবেন।

আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

হাদি হত্যা: ফয়সালসহ সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত