Ajker Patrika

যে কারণে ভারত থেকে দেশে ফিরতে হলো ৮০০ পাকিস্তানি হিন্দুকে

কলকাতা প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৯: ২৪
যে কারণে ভারত থেকে দেশে ফিরতে হলো ৮০০ পাকিস্তানি হিন্দুকে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে এখন ভয়ানক মূল্য দিতে হচ্ছে পাকিস্তানের ৮০০ শরণার্থীকে। পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এ শরণার্থীদের প্রায় সবাই হিন্দু, দু-একটি শিখ পরিবারও আছে। শরণার্থী হয়ে আসা এই মানুষেরা ভারতে গিয়ে নাগরিকত্বের সোনার হরিণের দেখা পাননি। ভারতের বেসরকারি সংস্থা সীমান্ত লোক সংগঠন (এসএলএস) এ কথা জানিয়েছে। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস করে ভারত সরকার। বিতর্কিত ওই আইনে বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিষ্টান ও জৈন শরণার্থীদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেবে ভারত। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন চালু হলেও বিধি তৈরি না করায় সেটি কার্যকর হচ্ছে না। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিএএ কার্যকর করা হবে।

এসএলএস জানিয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে নাগরিকত্ব পেতে প্রায় ৮০০ হিন্দু ভারতে এসেছিলেন। পরে নাগরিকত্ব আবেদনে কোনো অগ্রগতি না দেখে ভারতের রাজস্থান থেকে ২০২১ সালে তাঁরা প্রতিবেশী দেশটিতে ফিরে যান।

অনলাইনে নাগরিকত্ব আবেদনের এ প্রক্রিয়া ২০১৮ সালে শুরু করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে নিপীড়িত হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, পারসি, জৈন ও বৌদ্ধদের করা অনলাইন নাগরিকত্ব আবেদন গ্রহণ করতে সাতটি রাজ্যে ১৬ ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর ২০২১ সালের মে মাসে গুজরাট, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে আরও ১৩ ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ নম্বর ধারার অধীন এই ছয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের আবেদনে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট অনলাইনে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে ছুটতে বাধ্য হন শরণার্থীরা। 

এসএলএসের তরফ থেকে ৮০০ ধর্মীয় সংখ্যালঘু শরণার্থীর পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার খবর প্রকাশের পর অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে হয়েছে। 

কিন্তু এতে ফিরে যাওয়া সেই শরণার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না। এসএলএস জানিয়েছে, যে শরণার্থীরা বিভিন্ন ধরনের ভিসা করিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই দরিদ্র। শেষ সম্বলটুকু নিয়েই তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন। তার পর ভারতীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দরজায় তাঁরা কড়া নেড়েছেন। অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পাননি। শুধু একটাই আশ্বাস পেয়েছেন—প্রতিবেশী দেশে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিজেপি সরকার খুবই আন্তরিক। 

সিএএ কার্যকর করা নিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ঢিলেমির অভিযোগ নতুন নয়। অভিযোগের প্রেক্ষাপটটি বুঝতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। ২০১৫ সালে ভারত সরকার যে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে, সেখানে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী দেশ (পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ) থেকে ভারতে প্রবেশ করা ছয়টি সম্প্রদায়ের লোকদের ভারতে অবস্থান করাকে আইনসিদ্ধ করা হয়। বলা হয়, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট সম্পর্কিত আইন থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই লোকেদের অধিকাংশেরই পাসপোর্টের মেয়াদ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে শুধু মেয়াদ না থাকার কারণেই পাকিস্তানে ফির যেতে হয় ৮০০ জনকে। 

আসামের ‘আমরা বাঙালি’ দলের নেতা সাধন পুরকায়স্থের অভিযোগ, হিন্দু বাঙালিদের ভাঁওতা দিচ্ছে বিজেপি। মুখে সিএএর কথা বললেও ভারতীয় হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। 

আর পাঞ্জাবে সীমান্ত লোক সংগঠনের সভাপতি হিন্দু সিং সোডার অভিযোগ, সিএএর ভরসায় বহু মানুষ পাকিস্তান থেকে ভারতে গেলেও এখন তাঁরা পাকিস্তানেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 

মুখে যে কথাই বলা হোক না কেন, বিজেপি সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনেকটা কাগজ-কলমেই থেকে গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি। অথচ সিএএ-তে বলা হয়েছিল, পাসপোর্টের মেয়াদ নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। যদিও বাস্তবে শুধু আবেদন করার জন্যই শরণার্থীদের ছুটতে হয়েছে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে। সেখানে প্রতিটি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। 

টাকার অঙ্কটি ঠিক কেমন, সে সম্পর্কে এসএলএসের সভাপতি হিন্দু সিং সোডা বলেন, ‘দশজনের একটি পরিবার হলে, সব সদস্যের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ১ লাখ রুপির বেশি খরচ হয়। অথচ শরণার্থী হিসেবে আসা এই লোকেরা ভীষণ দরিদ্র এবং এভাবে পাসপোর্ট করানোর মতো সংগতি তাঁদের নেই। আর অনলাইনে আবেদন করতে না পারলে তাঁদের নির্ধারিত কালেক্টরদের কাছে সশরীরে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হতো। এ বিষয়টিও সহজ নয়।’ 

অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজস্থানের রাজ্যসভাকে জানিয়েছিল, ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কাছে মোট ১০ হাজার ৬৩৫টি নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩০৬টি আবেদনই আসে পাকিস্তান থেকে। 

কিন্তু এসএলএস জানাচ্ছে, শুধু রাজস্থানেই পাকিস্তান থেকে আসা ২৫ হাজারের মতো হিন্দু রয়েছেন। এর একটি বড় অংশই অনলাইনে নয়, সরাসরি নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। অবশ্য কোনো তরফ থেকেই জমা পড়া আবেদনগুলোর মধ্যে কতটি প্রক্রিয়াধীন আছে, বা এগুলোর অগ্রগতি কী, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এখন বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিধি তৈরিতে আরও সময় লাগার কথা।

যদিও প্রক্রিয়াটি বেশ আগে শুরু হয়েছিল। দ্য হিন্দু জানায়, ভারতে শরণার্থী হয়ে আসা মানুষদের অধিকাংশই হয় দীর্ঘমেয়াদি ভিসা (এলটিভি), অথবা তীর্থযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ভিসা নিয়ে আসেন। এলটিভি দেওয়া হয় পাঁচ বছরের জন্য। ২০১১ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার কয়েক শ হিন্দু ও শিখকে এলটিভি দিয়েছিল। সে সময় অনেকেই তীর্থযাত্রী হিসেবে ভারতে গিয়েছিলেন। পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা ভারতে অবস্থান করছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৪ হাজার ৭২৬ জন পাকিস্তানি হিন্দুকে এলটিভি দেওয়া হয়েছিল। আর ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৬০০ জনকে এলটিভি দেওয়া হয়। সর্বশেষ মেয়াদকে বিবেচনায় না নিলে আগে দেওয়া এলটিভির সবগুলোরই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। এখন এই মেয়াদ না থাকাই নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারা-না পারার মূল মানদণ্ড হয়ে উঠেছে।

বিজেপি সরকার বরাবরই প্রতিবেশী দেশে থাকা অমুসলিম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে তারা হিন্দু কার্ডটি বিভিন্ন সময় খেলেছে। সিএএ পাস করাটাও ছিল এরই ধারাবাহিকতা। ২০১৯ সালে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে নতুন এ আইন পাসের পর গোটা ভারতে সিএএবিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। আসামে পরিস্থিতি বাজে আকার ধারণ করে। সে সময় সুপ্রিম কোর্টেও এর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। কিন্তু এত সব ডিঙিয়ে করা সিএএ আইন পাসের ছয় মাসের মধ্যে এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিধি তৈরির কথা থাকলেও আজও তা হয়নি। আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সরকার পক্ষ থেকে এ জন্য আরও সময় চাওয়ায় সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন, বিজেপি বিষয়টি জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত