Ajker Patrika

দুই কৃষকের আত্মহত্যা: তদন্ত কমিটির কাছে যা বললেন স্থানীয়রা

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ২২: ৪৫
দুই কৃষকের আত্মহত্যা: তদন্ত কমিটির কাছে যা বললেন স্থানীয়রা

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে ঘটনা তদন্ত করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর ও নিমঘুটু গ্রামে ছিলেন। গত রোববার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। 

কমিটির আহ্বায়ক কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) আবু জুবাইর হোসেন বাবলু। কমিটিতে সদস্য হিসেবে নাটোর বিএডিসির (ক্ষুদ্রসেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন আছেন। দুই কৃষকের আত্মহত্যার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উঠলেও তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বিএমডিএ’রই নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলীকে। 

এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমিটির সদস্যরা প্রথমে বিএমডিএ’র গভীর নলকূপটি পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে বসে কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ইউপি কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে অভিযুক্ত নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের দোতলা বাড়ি। এখানে আসার পর তদন্ত কমিটির কাছে সবাই ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষেই তদন্ত কমিটির কাছে সাফাই গান। 

এরপর তদন্ত কমিটির সদস্যরা মৃত কৃষক অভিনাথ মারান্ডি এবং তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডির জমি পরিদর্শনে যান। এ সময় সাখাওয়াতের চাচাতো ভাই শিহাব আলী তদন্ত কমিটিকে দুই কৃষকের জমি থেকে ঘাস তুলে দেখান। তিনি বলেন, অভিনাথ ও রবির জমির দিকে খেয়ালই ছিল না। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক কৃষক বললেন, জমিতে পানি না থাকলে ঘাস তোলা যায় না। পানি না দেওয়ার কারণে রবি ও অভিনাথ নিজেদের জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারেননি। 

পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিনাথের বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁর স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমকে ডাকেন। তিনি তদন্ত কমিটির সঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না বলে প্রথমে জানান। আঁচলে মুখ ঢেকে তিনি কাঁদতে থাকেন। পরে বললেন, মৃত্যুর আগে তাঁর স্বামী তাঁকে বলেছেন যে পানি না পাওয়ার কারণে তিনি বিষপান করেছেন। 

ঘটনার বর্ণনা দিলেন অভিনাথের ভাবি পার্বতী সরেন। তিনি বলেন, সকালে বাড়ির নারীরা আলু তোলার কাজে বের হচ্ছিলেন। তখন রবি ও অভিনাথ তাদের জানান, ১০-১২ দিন ঘুরেও তাঁরা পানি পাচ্ছেন না। তবে আজ (২১ মার্চ) তাঁদের জমিতে পানি দেওয়ার কথা আছে। তাঁরা পানি দিতে যাবেন। বিকেলে তাঁরা যখন আলু তুলছিলেন তখন শোনেন যে পানি না দেওয়ার কারণে রবি ও অভিনাথ বিষপান করেছেন। অভিনাথের ভাবি বলেন, পানির জন্য অপারেটর ঘোরান। সে কারণে দুঃখে দুজন বিষ খান। 

স্থানীয় ভ্যানচালক বাপ্পী মারান্ডি তদন্ত কমিটির সামনে বললেন, ঘটনার দিন তিনি ভ্যান নিয়ে গভীর নলকূপের সামনে দিয়ে আসছিলেন। তখন অপারেটর সাখাওয়াত তাঁকে থামিয়ে বলেন, অভিনাথ বিষ খেয়েছে। তাঁকে বাড়ি নিতে হবে। তারপর দুজনে অভিনাথকে ভ্যানে তুলে বাড়ির সামনের রাস্তায় এনে নামিয়ে দেন। 

এরপর তিনি ফুলবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে দেখেন রবিকে অসুস্থ অবস্থায় ভ্যানে আনা হচ্ছে। রবির মা তাঁকে জানান, রবিও বিষ খেয়েছে। তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার না থাকায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। পরে গ্রাম্য ওই চিকিৎসক বাড়িতে এসে রবির পাকস্থলী ওয়াশ করেন। এরপর অভিনাথের ওয়াশ শুরু হলে তিনি মারা যান। 

অভিনাথের চাচাতো ভাই মাইকেল মারান্ডি কমিটিকে জানান, তাঁরও দুই বিঘা বর্গা নেওয়া জমিতে ধান আছে। পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে তার একটা খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়েছিল। অপারেটর সাখাওয়াত সিরিয়ালের কথা বললেও সে অনুযায়ী পানি দিতেন না। এই পানির জন্যই অভিনাথ ও রবি বিষপান করেছেন। 

রবি ও অভিনাথের প্রতিবেশী মহেষন মুর্মু বললেন, তাঁর তিন বিঘা জমিতে ধান আছে। শেষবার পানি পেয়েছেন ১২ দিন পর। তিনি অভিযোগ করেন, পানি দিতে সাখাওয়াত স্বজনপ্রীতি করতেন। ওই মাঠের অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। তাঁদের পানি পরে দেওয়া হতো। 

মহেষন বলেন, ‘মাঠে তেলা মাথায় তেল দেওয়া হয়। টেলিফোনে কাজ হয়। বড় কেউ কারও জন্য ফোন করলে তাকে আগে পানি দেওয়া হতো।’ 

রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডি জানালেন, ঘটনার দিন তিনি নাটোরে কর্মক্ষেত্রে ছিলেন। মায়ের কাছে শুনেছেন যে, রবি বিষপান করে একাই বাড়ি আসেন। তারপর মাকে বলেন, ‘মা আমি পানি না পাওয়ার কারণে বিষ খেয়েছি। মা, আমি আর বাঁচব না।’ তারা পানির জন্য হাহাকারের কথা শোনালেও স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার নিজের লিখিত জবানবন্দিতে লিখেছেন, ‘জমিতে কীটনাশক দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। এখন আর পানিরও তেমন দরকার নেই।’ 

এর আগে ঈশ্বরীপুরে ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে যখন তদন্ত কমিটি জবানবন্দি নিচ্ছিল, তখন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি দাবি করেন, পানি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকেরা দেশীয় মদ পান করেন। এ কারণেই হয়তো তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। সাখাওয়াতের দোকানের ভাড়াটিয়াকে এমন মন্তব্য করতে দেখা গেছে।   ঠিকমতো পানি না দেওয়ার কারণে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ করলেও দেওপাড়া ইউপির স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য সোহেল রানা ও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হাসমত আরাও জবানবন্দি দেন যে এলাকায় পানির কোনো  সমস্যা নেই। কোনো কৃষক তাঁদের কাছে অভিযোগ করেননি। 

তদন্ত কমিটির প্রধান আবু জুবাইর হোসেন বাবলু এই গভীর নলকূপের জমি চাষের সক্ষমতা জানতে চান। তখন বিএমডিএ’র স্থানীয় জোনের সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান জানান, সক্ষমতা ২০০ বিঘা। চাষ হয়েছে ১৫০ বিঘা। অথচ দুই কৃষকের মৃত্যুর পর বিএমডিএ’র গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম গত রোববার জানান, জমি চাষ হয়েছে ২৬০ বিঘা। 

নিমঘুটু থেকে ফেরার সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান আবু জুবাইর হোসেন বাবলু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আমার হাতে সাত দিন সময় আছে। দুজনের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী হলে অবশ্যই সেটি আসবে।’

গত ২১ মার্চ রবি ও অভিনাথ বিষপান করেন। সেদিনই বাড়িতে অভিনাথের মৃত্যু হয়। দুদিন পর হাসপাতালে মারা যান রবি। মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে বিষক্রিয়ায় রবির মৃত্যু হয়েছে। দুই কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হলেও প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত হয়নি। তাদের মৃত্যুর জন্য গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে দায়ী করে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলাটি হওয়ার পরই সাখাওয়াত পালিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় বাস ধর্মঘটে অচল গণপরিবহন, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
বাস বন্ধ রেখে সড়কে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস বন্ধ রেখে সড়কে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল থেকে নতুন বাস সার্ভিস চালু করার প্রতিবাদে কুমিল্লা নগরীর তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির ফলে নগরীসহ জেলার অন্তত ৪০টি সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই নগরীর জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে আইদি পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

বাস বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির নেতারা অভিযোগ করেন, আইদি পরিবহন প্রয়োজনীয় রুট পারমিট ছাড়াই কুমিল্লার টার্মিনাল ব্যবহার করতে চাইছে, যা পরিবহন আইন ও বিদ্যমান নিয়মের পরিপন্থী।

আইদি পরিবহনের চেয়ারম্যান মীর পারভেজ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে তাঁদের বাস চলাচল শুরু হয়। তবে শুরু থেকেই একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তাঁদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। তিনি দাবি করেন, এসব বাধার কারণেই কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে রুট পারমিট ও অনাপত্তিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল ব্যবহার বন্ধ রেখে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে বাস সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি থাকলেও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের রুট পারমিট ছাড়া কোনো পরিবহন কুমিল্লার টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারে না। এর আগেও আমরা তাদের একাধিকবার সতর্ক করেছি। কিন্তু বিজয় দিবস ও বুধবার হঠাৎ প্রভাব বিস্তার করে টার্মিনালে বাস ঢুকিয়ে চলাচল শুরু করে। বৃহস্পতিবার আবার একই চেষ্টা করলে বাধ্য হয়ে ধর্মঘট পালন করা হয়।’

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেকে নিরুপায় হয়ে অটোরিকশা, মাইক্রোবাস কিংবা অন্যান্য বিকল্প যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে রওনা হন। শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ পায়।

পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত না এলে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যার সরাসরি ভুক্তভোগী হবে সাধারণ যাত্রীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হতাশা থেকে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন রুমী, ধারণা স্বজনদের

ঢামেক প্রতিবেদক
জান্নাতারা রুমি। ছবি: ফেসবুক
জান্নাতারা রুমি। ছবি: ফেসবুক

রাজধানীর জিগাতলার ছাত্রী হোস্টেল থেকে উদ্ধার হওয়া এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমীর (৩০) মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরেই তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ বেলা ১টার দিকে হাজারীবাগ থানা-পুলিশ রুমীর মরদেহ মর্গে পাঠায়।

এর আগে রুমীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমা বেগম।

একই থানার উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, রুমীর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাবার জাকির হোসেন। রুমী ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন। তবে বর্তমানে কোথায় চাকরি করতেন, নাকি বেকার ছিলেন তা জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে রুমীর চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান জানান, জিগাতলার ওই বাসার ছাত্রী হোস্টেলে থাকতেন রুমী। তার দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দুই সংসারই ভেঙে গেছে। দুই সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে রুমীর। দুই সন্তান বাবার কাছে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি রুমীর রুমমেট বাড়িতে গিয়েছে। বুধবার রাতে একাই ছিলেন রুমী। তবে একই ফ্ল্যাটে পাশের রুমে অন্য রুমমেটরা ছিলেন। রাতে গৃহকর্মী পঞ্চম তলায় তাঁদের ফ্ল্যাটের সামনে গেলে দরজা খোলা দেখতে পান এবং ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। এরপর উঁকি দিলে রুমীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনিই সবাইকে ডেকে তোলেন বলে শুনেছি।’

রুমীর মৃত্যু কারণ সম্পর্কে তাঁর স্বজনেরা বলেন, সাংসারিক বা পারিবারিক বিষয়ে হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন রুমী। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে আজ রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, রুমী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এনসিপির ধানমন্ডি শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, সড়ক অবরোধ

 রাজশাহী প্রতিনিধি
সহকারী ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার পর সড়কে অবস্থান ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চের। ছবি: মিলন শেখ
সহকারী ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার পর সড়কে অবস্থান ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চের। ছবি: মিলন শেখ

রাজশাহীতে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় অভিমুখে আয়োজিত ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী জুলাই ৩৬ মঞ্চ’-এর পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে আন্দোলনকারীরা হাইকমিশন সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জুলাই ৩৬ মঞ্চের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে নগরীর ভদ্রা মোড়ে জড়ো হন। সেখান থেকে তাঁরা ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে পদ্মা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে পদযাত্রাটি হাইকমিশন কার্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের আটকে দেয়। একপর্যায়ে জুলাই ৩৬ মঞ্চের সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। বাধার মুখে আন্দোলনকারীরা সেখানেই সড়কের ওপর বসে পড়েন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন।

আন্দোলনকারীদের পক্ষে জুলাই ৩৬ মঞ্চের সদস্য শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ভারত আমাদের দেশের ওপর নানা ধরনের আগ্রাসন চালাচ্ছে। সীমান্তে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে, নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি খুনি হাসিনাকে তারা ভারতে আশ্রয় দিয়েছে। ওসমান হাদির খুনিদেরও ভারত আশ্রয় দিয়েছে। আমরা এই ভারতীয় আগ্রাসন কোনোভাবেই মেনে নেব না।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আন্দোলনকারীরা হাইকমিশন কার্যালয় থেকে ১০০ গজ দূরে প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নগরীর ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং যান চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে সরকারি খালের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে ভাঙা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে ভাঙা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমর্দন মৌজার আবিরপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন কমপ্লেক্সের সামনে এই অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বারি। অভিযানে সরকারি মালিকানাধীন প্রায় দুই শতক জমি উদ্ধার করা হয়।

অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মো. কামাল হোসেন, সার্ভেয়ার মো. লিয়ার হোসেন এবং রশুনিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আলমগীর সোলাইমান।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বারি বলেন, জনস্বার্থে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার এবং সরকারি দখল নিরঙ্কুশভাবে বজায় রাখতে এই ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত