Ajker Patrika

সৃষ্টির জন্য আবশ্যক সমষ্টিগত স্বপ্ন

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ১০
সৃষ্টির জন্য আবশ্যক সমষ্টিগত স্বপ্ন

বছরের এই সময়ে বাঙালির ভাষা সংগ্রাম আর যুদ্ধ বিজয়ের স্মৃতিগুলো ফিরে আসে, বিশেষ করে এই কারণে যে সময় বয়ে যাচ্ছে অথচ অঙ্গীকার আজও অপূর্ণ কিংবা ব্যর্থ। প্রাপ্তি কেবলই স্মৃতির সুখ-দুঃখে বহমান। হ্যাঁ, অর্জন অবশ্যই ঘটেছে, যা জাতি স্বাধীন না হলে ছিল দূর-কল্পনা। যেমন অর্জন হয়েছে নগরায়ণে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, উঁচু বাড়ি আর সুপার মার্কেট। নগরের ধারণক্ষমতার বাইরে নতুন-পুরোনো গাড়ি আমদানি, পরিবেশ বিপর্যয়। মানুষ তো অবশ্যই, নগরের এমন একটি গাছ বা লতাগুল্মের সবুজ পাতা নেই, যা বিষাক্ত গ্যাস, বর্জ্য আর ধুলোয় আচ্ছাদিত নয়। ওরা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজেও স্বাভাবিক স্বাধীনতা হারিয়েছে। আগের তুলনায় জনগণের স্নায়ুর ওপর চাপ যে শত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষ অস্থির, দুশ্চিন্তায় পতিত, বলতে গেলে মানসিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় বিব্রত। জাতীয় জীবনে এই যে মানসিক বিপর্যয়, এটি জাতীয় সম্পদের বিনাশের যেকোনো মাত্রার চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয়।

আমরা বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ইতিহাসে ক্রান্তিকালের শেষ নেই। মানুষ সব সময়ই নতুন কালে পৌঁছাতে চায়। সেই পৌঁছাতে পারা না-পারাটাই বড় প্রশ্ন। স্বাধীনতার পরে আমরা কতটা এগিয়েছি, পিছিয়েছি কতটা—সেই জিজ্ঞাসা আমাদের আছে এবং থাকাটা জরুরিও বটে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে মানুষের নিরাপত্তা একেবারেই বাড়েনি। আইনশৃঙ্খলাব্যবস্থার উন্নতির জন্য পুলিশের পাশাপাশি নামানো হয়েছে র‍্যাব, চিতা, কোবরা ইত্যাদি। সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাস নির্মূল করার যে চেষ্টা, তা কোনো দেশে কখনো কার্যকর হওয়ার নয়, হবেও না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ অধ্যাপককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছিল, জয়পুরহাটে কলেজের একজন অধ্যক্ষকে হত্যা করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল, ‘বাংলা ভাই’ যাকে ইচ্ছা ধরে এনে খুন করেছে, এসব ক্ষেত্রে র‍্যাবের কোনো তৎপরতা শুরুতে ছিল না। পরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের চাপে সরকার বাধ্য হয়েছিল।

ওদিকে ক্ষমতাসীনেরা রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রয়েছে। ক্ষমতাপ্রত্যাশী এক দলে তো মা-ছেলের প্রবল প্রতাপ। শাসকশ্রেণির রাজনীতি যে আজ কতটা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে, এ তারই নতুন প্রমাণ। জনগণ এদের সঙ্গে নেই। কিন্তু জনগণের সামনে কোনো বিকল্পও নেই। বাংলাদেশের রাজনীতির আসল সংকট এটাই। অনেক হট্টগোল করে সরকার শেষ পর্যন্ত একটি দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন যে কতটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বস্তুত বর্তমান রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার কোনো কিছুর ওপরই মানুষের আস্থা নেই। তবু যে তারা টিকে আছে তার কারণ, জনগণ সংঘবদ্ধ নয়।

২. বাংলাদেশে সমস্যা অনেক, এর ভেতর একটা হচ্ছে কর্মসংস্থানের। বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং পুরোনো সংকটকে জটিল করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে। দেশে জঙ্গি তৎপরতার মারাত্মক বৃদ্ধির সঙ্গেও এই বেকার সমস্যা যে সরাসরি জড়িত, তার প্রমাণ হাতেনাতেই পাওয়া গেছে। যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছিল, তাদের প্রায় সবাই দেখা গেছে হতদরিদ্র ও বেকার। এদের সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এদের অল্প পয়সায় ভাড়া করা যায় এবং ইহকালের দৈন্য পরকালে ঘুচবে—এ আশায় এরা বোমা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কোনো সরকারই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয় না। সরকারগুলো সবই অবশ্য দেশের ধনিকশ্রেণির লোকদের নিয়ে গঠিত, যে ধনিকদের প্রধান কাজ দেশের সম্পদ বৃদ্ধি 
নয়, সম্পদ লুণ্ঠন।

সম্পদ বৃদ্ধি করতে হলে বিনিয়োগ দরকার। অনেক কিছুই বাড়ছে, বিনিয়োগ ছাড়া। অবশ্য সব বিনিয়োগই যে শুভ তা নয়, কোনো কোনো বিনিয়োগ রীতিমতো ক্ষতিকর। টাটা কোম্পানি খুব বড় আকারের বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখিয়েছিল, কিন্তু সেই উৎসাহ দেখে আমাদের উৎফুল্ল হওয়ার বিপরীতে বরং আতঙ্কিত হওয়ার পক্ষে যুক্তি ছিল। কারণ, ওই বিনিয়োগ অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ সম্পদ গ্যাস ও কয়লার ক্ষেত্রে ঘটবে, বিদেশিরা গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানিতে খুবই আগ্রহী দেখা যায় এবং তা স্থানীয় শিল্পোদ্যোগের জন্য ভীষণ রকমের বিপদ ডেকে আনবে। তাদের বিনিয়োগ আমাদের জন্য যে কেমন ভয়ংকর ব্যাপার হতে পারে, তার প্রমাণ গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় দুর্ঘটনা।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক তৎপরতার পরিণাম আমরা ভুলিনি, ভুলিনি স্থানীয় মীরজাফরদের। নানা ধরনের বহুজাতিক কোম্পানির সাম্প্রতিক আনাগোনা যদি ইতিহাসের স্মৃতিকে জাগিয়ে দেয়, তবে দোষ আমাদের নয়, দোষ তাদের, যারা আনাগোনা করছে। আর দোষ মীরজাফরদের, যারা নানাভাবে বিদেশিদের দিকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করছে।

বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগ ঘটছে মাদ্রাসা শিক্ষা ও মৌলবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রেও। ওরা এত টাকা পাচ্ছে কোথায়? পাচ্ছে সেই সব বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে, যারা চায় আমাদের দেশ পিছিয়ে থাকুক, এখানে অর্থনৈতিক বিকাশ না ঘটুক, যাতে তারা এই দেশকে নিজেদের অধীনে রাখতে পারে এবং যাতে উৎপাদনব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে গিয়ে দেশটি বিদেশিদের ক্রেতা ও ভৃত্যে ভরপুর থাকে।

জঙ্গিরা কেবল বেকার নয়, মাদ্রাসায় শিক্ষিতও বটে। বেকারত্ব এবং মাদ্রাসাশিক্ষার ভেতর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। গরিবের ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় যায়, গিয়ে বেকার হয় এবং তাদেরই একাংশ হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় জঙ্গি তৎপরতায় যোগ দেয়। এই মাদ্রাসাশিক্ষায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ চলছে এবং তার বড় ভাগ আসছে আমাদের বিদেশি শত্রুদের কাছ থেকে। এই বিনিয়োগে স্থানীয়রাও অংশ নেয়; কেউ নেয় না বুঝে, অধিকাংশই নেয় পুণ্য ও সুনামের আকাঙ্ক্ষায়। সরকারগুলোও দেখা যায় মাদ্রাসাশিক্ষায় যত উৎসাহ বোধ করে, মাধ্যমিক শিক্ষার বেলায় ততটা করে না। তাতে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যায় যে এরা আর যা-ই হোক দেশপ্রেমিক নয়। শিক্ষা দেওয়ার নাম করে এরা অনুগত ও পঙ্গু মানুষ উৎপাদনে আগ্রহী।

বর্তমান সরকার অবশ্য আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তথাকথিত ‘একমুখী’ শিক্ষা প্রবর্তনের নাম করে তারা মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে মাদ্রাসার স্তরে ঠেলে নামিয়ে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষার একটি ‘সমন্বয়’ ঘটানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও মস্ত বড় বিনিয়োগ তারা ঘটিয়েছে।

আমরা একমুখী শিক্ষা অবশ্যই চাই; কিন্তু সেই একমুখী শিক্ষা হচ্ছে ইংরেজি, বাংলা ও মাদ্রাসা যে তিন ধারার শিক্ষা, এদের এক করার এবং সেই একত্রকরণের ভিত্তিতে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থারই প্রথম কথা হওয়া দরকার; আমাদের সংবিধানেও ওই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার রয়েছে। কিন্তু যা গড়ে উঠেছে তা হলো, তিনমুখী ব্যবস্থা; সরকার চাইছিল তিনমুখীকে দুইমুখী করতে—যার একটি হবে ইংরেজি মাধ্যমের, অপরটি মাধ্যমিক+মাদ্রাসার। সমাজে যেমন ধনী ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণির বিভাজনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে, শিক্ষাক্ষেত্রকেও তেমনি সেই চেষ্টারই অংশ হিসেবে ব্যবহার করাটাই ছিল সরকারের অভিপ্রায়। ওদিকে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সামাজিক বিনিয়োগ ঘটেছে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। এই শিক্ষা পেয়ে যারা বেরিয়ে আসছে এবং আগামী দেনে আসবে, তারা হবে ফাঁপা ও উৎপাটিত। মা-বাবা পয়সা ঢেলে এই রকমের কৃত্রিম মানুষ তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন।

শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টাটার হাত থেকে আমরা আপাত রেহাই পেয়েছি। সরকার বলছে স্থগিত করা হয়েছে মাত্র, বাতিল করা হয়নি। বাতিলও হবে, যদি প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। আসল কথা ওইটাই, প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কিন্তু প্রতিরোধ তো যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন নতুন সৃষ্টিরও। সৃষ্টির অংশ হিসেবেই প্রতিরোধ চাই। আর সৃষ্টির জন্য আবশ্যক সমষ্টিগত স্বপ্ন।

লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত