Ajker Patrika

ইসলামে আত্মহত্যার ভয়াবহ শাস্তি

মুনীরুল ইসলাম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩: ৩২
ইসলামে আত্মহত্যার ভয়াবহ শাস্তি

আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সারা বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে আত্মহত্যা করে। সে হিসাবে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক এবং প্রতি বছর আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ গবেষণা জরিপ চালানো হয়। ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়, তাদের ৭৫ শতাংশই স্বল্পোন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বেশ কয়েকটি দেশে এ প্রবণতা কম বলে গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। আত্মহত্যার কারণ একেক দেশে একেক রকম এবং তা সেই দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে দেখা গেছে, যাদের বয়স ৭০ বছর কিংবা তার বেশি, তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আর ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বিশ্বে বেশি। আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য লেখালেখি, সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। একজন মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। 

আত্মহত্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন, সাংসারিক দ্বন্দ্ব-কলহে পড়ে অতিরিক্ত রেগে যাওয়া, নিজের কাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু লাভ করতে গিয়ে নিরাশ বা বঞ্চিত হওয়া। লজ্জার ও মানহানিকর কোনো কিছু ঘটে যাওয়া বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হওয়া, অভাব, দারিদ্র্যের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হওয়া প্রভৃতি। আবার নারীদের মধ্যেই আত্মহত্যার হার বেশি। 

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ। শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ। সকল উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। সব শ্রেণির মানুষকেই একদিন মরতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তার পর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৫৭) 

মানুষের এই শরীর-প্রাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে আমানতস্বরূপ। এই শরীর-প্রাণ নিয়ে মানুষের যেমন খুশি তেমন ব্যবহারের অধিকার নেই। একমাত্র আল্লাহই মানুষের জীবন-মৃত্যু দানকারী। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৬) 

সুতরাং বোঝা গেল, মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। কেউ যদি নিজেই নিজের মৃত্যু ঘটায়, তবে সে অনধিকার চর্চাই করবে। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিণাম ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। যে কেউ জুলুম করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ২৯-৩০) এই আয়াতের এক তাফসির অনুযায়ী এখানে আত্মহত্যার কথাই বোঝানো হয়েছে। হাদিস গ্রন্থগুলোতে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আত্মহত্যার বেশ কয়েকটি হাদিস এসেছে। (ইবনে কাসির, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির)

অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫) 

ধৈর্যহারা হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তবে ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ বিপদে-আপদে ধৈর্যহারা হবে না। ইমানদার চরম বিপদেও আল্লাহর ওপর ভরসা করবে। কোনোভাবেই নিরাশায় হাবুডুবু খেয়ে এ মহাপাপের পথ বেছে নেবে না। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ যাবতীয় অপরাধ মার্জনা করেন।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩) 

আত্মহত্যা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে গেছেন। হজরত জুন্দুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, একজন ব্যক্তি জখম হলে, সে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস: ১২৭৫) 

যে ব্যক্তি যেভাবে আত্মহত্যা করবে, পরকালে আল্লাহ তাকে সেভাবে শাস্তি দেবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৩৩, মুসলিম, হাদিস: ১২৭৬) 

হজরত জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলো, যে লোহার ফলা দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬২৪) তবে ইসলামি আইনবিদেরা বলেন, আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য মহানবী (সা.) এমনটি করেছেন। অর্থাৎ, সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ও ধর্মনেতারা জানাজায় অংশ না নিলেও সাধারণ মানুষ তার জানাজা ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করবে। 

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে অনুমান করা যায়, আত্মহত্যা করা কত বড় পাপ এবং আত্মহত্যাকারী কত জঘন্য পাপী। যার শাস্তি হলো জাহান্নাম। আত্মহত্যা ইহকাল-পরকাল উভয়টি ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ সবাইকে এই মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০৫ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৪ মিনিট
ফজর০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৫ মিনিট
জোহর১১: ৫৭ মিনিট০৩: ৩৯ মিনিট
আসর০৩: ৪০ মিনিট০৫: ১৫ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৭ মিনিট০৬: ৩৬ মিনিট
এশা০৬: ৩৭ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়তে হয়

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বিলাপ কিংবা উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকারে আসে না; বরং তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোয়া এবং তাঁর ভালো গুণগুলো স্মরণ করাই প্রকৃত কল্যাণকর।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০)

কারও মৃত্যুর পর তাঁর পাশে উপস্থিত হলে লাশ দেখার সময় দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোগী কিংবা মৃতের কাছে উপস্থিত হলে ভালো কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলবে, ফেরেশতারা তার ওপর আমিন বলবেন।’

এই অবস্থায় এই দোয়া পড়া সুন্নত—‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবান হাসানাহ।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭)

পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবীগণ নিজেদের এবং সমস্ত মুমিনের জন্য যেভাবে দোয়া করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

হজরত নুহ (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও-ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও; আর যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে এবং সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ: ২৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করবেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বিষয় নিশ্চিত ও অলঙ্ঘনীয়—তা হলো মৃত্যু। মানবজীবনের এই অনিবার্য পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এই চিরন্তন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষাই পবিত্র কোরআন আমাদের দিয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াবি জীবনকে শুধু পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যেখানে মৃত্যুই হচ্ছে এই পরীক্ষার অবসান এবং পরকালীন জীবনের সূচনা।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমান: ১৮৫)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও।’ (সুরা নিন্দা: ৭৮)

মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই বিচ্ছেদ-কষ্টে ব্যথিত মন থেকে তাদের জন্য কল্যাণ কামনার অনুভূতি জাগা স্বাভাবিক। মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল।

রাসুলুল্লাহ (সাধারণ) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল অব্যাহত থাকে—সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ১৬৩১)

রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃতদের জন্য যে দোয়া করতেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আজাবিল কাবরি ওয়ামিন আজাবিন নার।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন—যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়। তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন। হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন এবং কবর ও দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার দিনে আত্মশুদ্ধির ১০ নির্দেশনা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত

আজ জমাদিউস সানি মাসের চতুর্থ জুমা। এদিনটি একজন মুমিনের জীবনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ সুযোগ। এ বরকতময় দিনে নিজের ইমান, আমল ও চরিত্রকে নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আজকের জুমার বিশেষ আমলি দিকনির্দেশনাগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. জুমার দিনের মর্যাদা অনুধাবন: জুমা মুমিনের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এদিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দীর্ঘ দোয়ায় মগ্ন হওয়া এবং জুমার খুতবা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।

২. সালাতে খুশু-খুজু অর্জন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায়ের পাশাপাশি জুমার নামাজে আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। নামাজকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সংযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

৩. কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক: নিয়মিত তিলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআনের অর্থ ও শিক্ষা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কোরআনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সন্তানদের কোরআন শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা আমাদের কর্তব্য।

৪. তাওবা ও আত্মপর্যালোচনা: অতীতের গুনাহের জন্য আন্তরিক অনুতাপ এবং প্রকাশ্য-গোপন সব পাপ থেকে ফিরে আসার দৃঢ়সংকল্প করতে হবে। প্রতিদিনের আমল নিজে নিজে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা আত্মশুদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

৫. সবর, তাওয়াক্কুল ও তাকওয়া চর্চা: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ইমানের দাবি। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহভীতি (তাকওয়া) বজায় রাখতে হবে।

৬. পরিবারে ইসলামি পরিবেশ প্রতিষ্ঠা: পরিবারে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা এবং স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি। পারিবারিকভাবে নামাজ ও নিয়মিত দ্বীনি আলোচনার চর্চা করা একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

৭. সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিকতা: প্রতিবেশীর হক আদায় করা, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।

৮. দুনিয়াবিমুখতা ও আত্মসংযম: অতিরিক্ত ভোগবিলাস ও অপচয় পরিহার করে সহজ-সরল ও সংযত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে হবে।

৯. ইসলামের মহান মনীষীদের অনুসরণ: ইসলামের মহান মনীষী ও সালাফদের জীবন থেকে সংযম, ত্যাগ ও পবিত্রতার শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের মূল্যবোধ ও ইমান রক্ষায় সচেতন থাকা প্রয়োজন।

১০. নতুন আমলি অঙ্গীকার: প্রতিটি জুমাকে আত্মশুদ্ধির একটি মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। ছোট হলেও নিয়মিত ভালো আমলের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং গুনাহমুক্ত জীবনের পথে অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞাই হোক আজকের জুমার শিক্ষা।

হে আল্লাহ, আপনি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করুন। জমাদিউস সানি মাসের এই বরকতময় চতুর্থ জুমাকে আমাদের জীবনে হেদায়েত ও কল্যাণের মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত