Ajker Patrika

অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: পরিণতি কী?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ১৬
অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: পরিণতি কী?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আগাগোড়াই বেড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। কোন স্তরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন, কেমন মান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বজায় রাখতে হয়, কী ধরনের শিক্ষা জাতির জন্য অপরিহার্য, আবার কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতিকে কিছুই দিতে সক্ষম নয়—এর কোনো জবাব কিংবা সঠিক ধারণা দেশে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা তথা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার কোনো অভাব নেই। অধিকন্তু বলা চলে সব স্তরেই প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশিসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ কারণে ছাত্র ভর্তি করিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করতে অনেকেই টিভি ও পত্রপত্রিকায় ‘ভর্তির অপূর্ব সুযোগ রয়েছে’—এমন বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছে। গ্রামগঞ্জের নানা নামের ও ধরনের মাদ্রাসা, কেজি স্কুল, ক্যাডেট নামধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র ভিক্ষা করে চলছে। আসলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেরই কোনো অনুমোদন নেই। যে যার মতো প্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষক পরিচয়ে নিজের বেকারত্ব ঘোচাচ্ছেন, কিংবা আয়-উপার্জন করছেন। সত্যিকার শিক্ষা দেওয়ার কোনো স্বীকৃত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার মানদণ্ড দেওয়ার যোগ্যতা এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের রয়েছে কি না, তা বলা মুশকিল। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর মাদ্রাসা নিয়েও এমন অবস্থা বিরাজ করছে বললে আঁতকে উঠবেন না তো? একটু খবর নিলে জানতে পারবেন তাদের উচ্চশিক্ষা দিচ্ছে এমন সরকারি, বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সংখ্যা যেমন আপনাকে চমকে দেবে, একইভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হার, মান এবং ‘উচ্চশিক্ষার’ বিচিত্র রূপ দেখে আপনি যদি নিজেকে ধরে না রাখতে পারেন, তাহলে বোধ হয় এই বাস্তব অবস্থা না শোনাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে! তারপরও একটু ধারণা নিয়ে ভেবে দেখুন তো দেশে উচ্চশিক্ষার নামে যা আছে বা চলছে, তাকে উচ্চশিক্ষা বলা যায় কি?

প্রথমে বলে রাখি, কলেজ, আলিম, কামিল মাদ্রাসা, সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠানকেই আজকের দুনিয়ায় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আমাদের আলোচনা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। দেশে এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজের সংখ্যা ২ হাজার ২৪৯টি। এর মধ্যে ৮৫৭টি কলেজে স্নাতক, ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪ লাখ ২০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী প্রতিবছর ভর্তি হতে পারে। ঢাবির অধীনে ৭টি সরকারি কলেজে ২৬ হাজার ১৬০ আসনে প্রতিবছর ভর্তি হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ২ হাজার ২৪৯টি ডিগ্রি কলেজে বিএ পাস তথা স্নাতক পর্যায়ে কত শিক্ষার্থী প্রতিবছর ভর্তি হয়, তার পরিসংখ্যান খুব একটা স্পষ্ট নয়। দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৮টি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৬টি, সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি, সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৯৬টি, সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি, বেসরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি, সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ৫টি, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ৪৯টি, সরকারি স্নাতক নার্সিং ইনস্টিটিউট ৭টি এবং বেসরকারি ১৫টি, স্নাতক কওমি মাদ্রাসা ২০০টি ও স্নাতকোত্তর কওমি মাদ্রাসা ৩০০টি, ফাজিল-আলিয়া মাদ্রাসা ১ হাজার ২৭৮টি ও কামিল মাদ্রাসা ২১৫টি। এ ছাড়া বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দূরশিক্ষণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করছে। এর ওপর জেলায় জেলায় সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অব্যাহত আছে। মোট কত শিক্ষার্থী এতসব ধারা-উপধারার স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কিংবা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোয় স্নাতক সম্মান এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থী শহরে এবং গ্রামের বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হচ্ছে। স্নাতক পাস আগে কলেজগুলোতে যতটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হতো, এখন সেগুলোতে পড়াশোনার গুরুত্ব নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি এবং পরীক্ষার সময় উপস্থিত হয়, এর বাইরে তাদের পঠনপাঠনের কোনো স্বাভাবিক বাধ্যবাধকতা কলেজগুলোতে পরিলক্ষিত হয় না। স্নাতক সম্মান এবং মাস্টার্স পর্যায়েও বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাস্তবে ক্লাস উপস্থিতি বা নিয়মিত পড়াশোনায় প্রতিফলিত হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক সম্মান এবং মাস্টার্স পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের জন্য যেসব অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষক সংখ্যা, ল্যাব থাকা আবশ্যক, তার ন্যূনতম অনেকগুলোতেই বিদ্যমান নেই। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পঠনপাঠন বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই লক্ষ করা যাচ্ছে না।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম যতটা নিয়মিত হচ্ছে, পঠনপাঠনের বাধ্যবাধকতা এর ধারেকাছেও পরিলক্ষিত হয় না। এভাবেই স্নাতক সম্মান এবং মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রতিবছর বের হয়ে আসে, যাদের শিক্ষার মান নিয়ে হাজার রকম প্রশ্ন সর্বত্র বিরাজ করছে। নবপ্রজন্মের সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই। গবেষণা এবং মানসম্মত পঠনপাঠনের পরিবেশও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন অভিজ্ঞ এবং মেধাবী শিক্ষক-সংকটে ভুগছে।

জ্ঞানবিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার, গবেষণা এবং পঠনপাঠনের চর্চা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রদর্শনে খুব একটা সফল হতে পারছে না। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় তাল মিলিয়ে চলার মতো সুযোগ-সুবিধা পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই দিতে পারছে না, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা থেকে বেশ দূরে আছে। কলেজগুলো মানসম্মত স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পঠনপাঠন, গবেষণা দুরাশার বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আধুনিক বিশ্বে যেকোনো বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে গবেষণা অপরিহার্য অংশ। কিন্তু আমাদের দেশে দু-একটা পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু বিষয় ব্যতীত কোনো পর্যায়ের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে গবেষণা মোটেও যুক্ত নয়। শিক্ষার্থীরা মৌলিক কোনো বইপুস্তকের সঙ্গেও পরিচিত নয়। বাজারে কিছু মানহীন গাইডবই এবং সাধারণ মানের কিছু বইপুস্তক ছাড়া উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বইপুস্তক পড়ার কোনো আবশ্যকতাও পড়ে না। অনেক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেও অধীত বিষয়ের জ্ঞানদক্ষতা অর্জন থেকে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। বিষয়জ্ঞান ছাড়াও ভাষাজ্ঞান এবং উচ্চতর বিশ্লেষণাত্মক ধারণা অনেক বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম পর্যায়েও পরিলক্ষিত হয় না। সে কারণেই এদের বেশির ভাগই চাকরির বাজারে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ দেওয়ার পরীক্ষায় খুব একটা সফলতা অর্জন করতে পারে না। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে অনেকেই হয় বেকারত্ব কিংবা নিম্ন আয়ের কোনো উপার্জনে নিজেকে যুক্ত রাখার কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না। অথচ বাংলাদেশে অসংখ্য শিল্পকলকারখানা, প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতনে নিযুক্ত করে থাকে। আমাদের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের হার প্রতিবছর উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এটি এখন ২৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলেও কোনো কোনো সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। উচ্চতর সনদ ডিগ্রিধারীর সংখ্যা সীমাহীন আকারে বেড়ে যাওয়ার কারণে বিরাট অঙ্কের ঘুষ, তদবির এবং প্রভাব বিস্তার ছাড়া খুব কমসংখ্যকই একটি সাধারণ মানের চাকরি লাভে সমর্থ হয়। কেবল উচ্চতর দক্ষতায় অভিজ্ঞ মেধাবীরাই চাকরির বাজারে নিজেদের পছন্দের জায়গা খুঁজে নিতে পারছে। বেশির ভাগই শিক্ষায় দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রয়োজনীয় মান অর্জন না করায় আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো মানের সংকটে ভুগছে; বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় কোনো স্তরেই শিক্ষক পদে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে না।

তাহলে করণীয়টা কী? অবশ্যই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান শুধু বৃদ্ধিই নয়, সমতা বিধানও করতে হবে। একই সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের ধারণা ও ভাষাজ্ঞান কাঙ্ক্ষিত মানেই উন্নীত করতে হবে। উচ্চশিক্ষার বর্তমান অপরিকল্পিত অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবেই। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কারিকুলাম, বইপুস্তক, পঠনপাঠন, গবেষণায় এবং পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনা আবশ্যকীয়। স্নাতক সম্মান পর্যায়ের শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, উচ্চতর গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষক নিশ্চিত করা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিষ্কার ও ধারণার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের একাত্ম হওয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতেই হবে। শুধু সংখ্যা ও পরিমাণগত নয়; বরং গুণগত মানে প্রাধান্য দিয়ে উচ্চশিক্ষাকে প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। এই বিপ্লবে টিকে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই জ্ঞানবিজ্ঞান, উচ্চতর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন মানে চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই শিক্ষায় আর্থিক ও মানবসম্পদের অপচয় না ঘটে; বরং সমৃদ্ধিই বয়ে আনবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত