চিররঞ্জন সরকার

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই। মহামারির হাত ধরেই পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইউরোপ বারবার মহামারির আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চতুর্দশ শতকের আলোচিত মহামারি ‘গ্রেট প্লেগ’ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’, তাতে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মারা যায়। আর সেই বিভীষিকার ক্ষণেই সেখানে পয়দা হয় পুঁজিবাদ। এত লোক মারা যাওয়ায় সেখানে একদিকে সামন্তপ্রভুদের ভূমিদাসের সংখ্যা কমে যায়, অনেক শ্রমজীবী ‘মুক্ত’ হয়ে এদিক-ওদিক চলে যায়, আর কাজের মানুষ কম মেলায় মজুরিও কিছুটা বেড়ে গেল। অন্যদিকে অনেক জোতদার মারা যাওয়ায় প্রচুর জমি খালি পড়ে থাকে। তখন এগিয়ে আসে যাদের হাতে টাকা ছিল তারা এবং বড় বড় জমি নিয়ে, বেশি বেশি মজুরি দিয়ে অনেক মজুর নিয়োগ করে কৃষিতে পুঁজিবাদের বীজ বপন করে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় থেকে বড় বড় সব ‘কোম্পানি’ও তৈরি হয়, যে কোম্পানি বা করপোরেট সংস্থাগুলো পরবর্তীকালে পুঁজিবাদকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবার মারাত্মক প্লেগ এসেছিল সতেরো-আঠারো শতকে। তখন পুঁজিবাদী কৃষিব্যবস্থা ছারখার হয়ে যাওয়ার ফায়দা তোলে কারখানা-মালিকেরা। নতুন নতুন আবিষ্কার হওয়া যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের কায়দা তত দিনে তাদের আয়ত্তে এসে গেছে। আর আসতে শুরু করেছে সস্তায় কলোনির কাঁচামাল। পুঁজিবাদ এবার মড়কের কাঁধে চড়ে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে।
সেই সময় মড়ক ছড়ায় মূলত উপনিবেশ বা কলোনিগুলোয়। একদিকে পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিজ্ঞান যেমন উপনিবেশের প্রজাদের গিনিপিগ বানিয়ে রোগারোগ্য বিষয়ে অগাধ জ্ঞান আহরণ করে, অন্যদিকে সেই জ্ঞানকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে ব্যবহার করে সেই প্রজাদের ওপরে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক আধিপত্যকে আরও পাকাপোক্ত করেন সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা। মাঝখানে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থান। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে ভিন্ন প্রক্রিয়ার শাসনব্যবস্থা চালু। পুঁজিবাদের অবাধ প্রবাহে খানিকটা প্রতিরোধ!
কিন্তু বাস্তব থেকে শিক্ষা নিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই পুঁজিবাদ আরও পরিণত হয়ে ওঠে। পুরোনো ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বোঝাকে ঝেড়ে ফেলে বিশ্বজোড়া করপোরেট-বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়া উপনিবেশবাদ গড়ে ওঠে। এই নতুন প্রক্রিয়ায় দুনিয়াদারি চালাতে গিয়ে উদ্ভাবন করা হলো ‘উন্নয়ন’ আর ‘বিশ্বায়ন’-এর নতুন দর্শন, যার মায়ায় বশ হলো জগতের মানুষ। এদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারও বিপর্যয় ঘটে গেছে। পালটা কোনো দর্শন নেই, যে স্পর্ধার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারে। চীন তত দিনে জেনে গেছে, ‘ইট ইজ গুড টু বি রিচ’ বড়লোক হওয়া দোষের নয়। কিউবার মতো দু-একটা ছোটখাটো দেশকে বাদ দিলে ঘাড়-ত্যাড়ামি করার মতো আর কেউ নেই। এর মধ্যে বজ্রাঘাতের মতো এল আরেক মহামারি এইডস। প্রথমদিকে একটু হকচকিয়ে গেলেও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করল নয়া ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ। তার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মায়া-কাজল এঁকে চলল এইডস নিয়ন্ত্রণের বিশ্বায়ন। এই নতুন দর্শন অনুসারে আগেকার ‘কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ’ অচল হয়ে গেল। রোগ নিরাময়, মারি-মুক্তি, কোনো কিছুই আর ‘জনসেবা’র ঘোমটা পরে রইল না। সরাসরি সুর ধরল, মাল ছাড়ো, রোগ সারাও। মড়কের থেকে মুনাফা আদায় করল পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই মড়ক দমনের, কোনো চরম ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তার ছোট-বড় প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার, কোনো সংলাপ তৈরি করার। সবটাই একতরফা। উল্টো দিকে, জনগণের ‘দেশপ্রেমের’ দায় তার সব নিদান বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার। যেমন মেনে নিতে হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার সব দৌরাত্ম্য, তেমনি মানতে হবে ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কারণ, পুঁজিবাদ সাপ হয়ে কাটে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। সে নিজেই রোগ বয়ে আনলেও তা সারানোর কায়দাও সে-ই একমাত্র আবিষ্কার করতে পারে। আর মারির বিষকে ব্যবহার করতে পারে তার নিজের দুরারোগ্য ক্ষতের ওপরেও মলম লাগাতে। এবার, এই করোনাকালে সে তাই করতে চলেছে।
অন্তত দশ বছর ধরে পুঁজিবাদ একটা গাড্ডায় পড়ে রয়েছে। সেই গাড্ডা থেকে এবার সে উঠে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে করোনার কাঁধে চড়ে। গল্পটা সবাই জানে। তবু আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৮-০৯ সালে সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদের সংকট নেমে এসেছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল, বহু লোকের চাকরি গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর সরকারগুলোকে বাজারে বিস্তর টাকা ঢেলে মন্দা সামাল দিতে হয়েছিল। তার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে। না হলে সেবার যে দেশগুলোর গায়ে তেমন আঁচ লাগেনি, যেমন ভারত, ব্রাজিল ও চীন, আগামী সংকটে তারাও ঝলসে যেতে পারে। সেই আগামী সংকটও প্রায় ঘাড়ের ওপর চলে এসেছিল। আমেরিকার সঙ্গে চীনের শুল্কযুদ্ধে কারোরই হার-জিত কিছু বলা যাচ্ছিল না। এশিয়ার অর্থনীতির হাল ডুবুডুবু। ইউরোপের অর্থনীতি নিশ্চল, তার অগ্রগতির ইঞ্জিন জার্মানির শিল্পক্ষেত্রে ভাটা লেগেছে। জাপানের অর্থনীতিও ক্রমেই কুঁকড়ে ছোট হয়ে আসছিল।
এখন এই সবকিছুর দায় কেয়ার অব করোনাভাইরাস। করোনা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ত্রাতা হয়ে এসেছে যেন। হ্যাঁ, ইউরোপ-আমেরিকায়ও মানুষ মরেছে। মানুষ তো মরবেই, এর মধ্যে কিছু রথী-মহারথীও থাকবে, কিন্তু তাতে ক্ষতি কী, ব্যবস্থাটা তো বাঁচবে! এই মড়কের কালেও পুঁজিবাদ তার ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী দুনিয়ার দখলে থাকা প্রযুক্তি আর অনলাইন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা ও অর্থনীতির, তখন এই মহামারি যেন পৌষ মাস হয়ে এসেছে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। যেসব দেশ ও কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দাঁও মারছে।
বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে যে কয়টি কোম্পানির কোভিড টিকা বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হলো–অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, ফাইজার-বায়োএনটেকের কমিরনাটি, মডার্নার টিকা। এর পরেই রয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-কোরভি, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা জানসেন। কেবল ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকা বিক্রি করে সম্মিলিতভাবে প্রতি মিনিটে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার মুনাফা করছে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় তাদের আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি।
গত বছর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। করোনার টিকার বদৌলতেই তাঁরা এটা অর্জন করেছেন। ধনীদের তালিকায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টেফান ব্যানচেল ও বায়োএনটেকের সিইও উগুর সাহিন। দুজনের সম্পদ প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের মতো। এ ছাড়া কাগজে-কলমে চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং মডার্নার শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরাও ধনীদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থাগুলোর কাছে করোনাভাইরাস হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। এই বিশ্বব্যাপী সংকট তাদের বিক্রয় ও মুনাফা বিপুল বাড়িয়ে তোলার মোক্ষম সুযোগ। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বড় করপোরেট ফার্মা কোম্পানির ছোঁয়াচে রোগের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণায় কোনো আগ্রহ নেই। ছয়ের দশক থেকেই করোনাভাইরাস গোত্রের সার্স বা মার্সের সন্ধান পাওয়া গেলেও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা যায়নি কেন? আসলে তাদের পছন্দ রোগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবনে পয়সা ঢালা। আমরা যত বেশি অসুস্থ হব, তারা তত বেশি মুনাফা করবে। আমরা সুস্থ থাকলে তারা যে অসুস্থতা বোধ করবে–এ কথা বলাই বাহুল্য!
কাজেই করোনায় বড়লোকেরা আরও বড়লোক হচ্ছে, ধনবৈষম্য বাড়ছে, বড়লোকেরাই কেবল সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে; কিন্তু গরিবেরা তেমন কিছু পাচ্ছে না। কাজ হারাচ্ছে, চরম দুর্দশায় নিপতিত হচ্ছেন–এসব বলে মাতম করে কোনো লাভ নেই। দেশে এবং বিশ্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা বদলের উদ্যোগ না নিলে এসব চলতেই থাকবে।
চিররঞ্জন সরকার:গবেষক ও কলামিস্ট

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই। মহামারির হাত ধরেই পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইউরোপ বারবার মহামারির আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চতুর্দশ শতকের আলোচিত মহামারি ‘গ্রেট প্লেগ’ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’, তাতে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মারা যায়। আর সেই বিভীষিকার ক্ষণেই সেখানে পয়দা হয় পুঁজিবাদ। এত লোক মারা যাওয়ায় সেখানে একদিকে সামন্তপ্রভুদের ভূমিদাসের সংখ্যা কমে যায়, অনেক শ্রমজীবী ‘মুক্ত’ হয়ে এদিক-ওদিক চলে যায়, আর কাজের মানুষ কম মেলায় মজুরিও কিছুটা বেড়ে গেল। অন্যদিকে অনেক জোতদার মারা যাওয়ায় প্রচুর জমি খালি পড়ে থাকে। তখন এগিয়ে আসে যাদের হাতে টাকা ছিল তারা এবং বড় বড় জমি নিয়ে, বেশি বেশি মজুরি দিয়ে অনেক মজুর নিয়োগ করে কৃষিতে পুঁজিবাদের বীজ বপন করে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় থেকে বড় বড় সব ‘কোম্পানি’ও তৈরি হয়, যে কোম্পানি বা করপোরেট সংস্থাগুলো পরবর্তীকালে পুঁজিবাদকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবার মারাত্মক প্লেগ এসেছিল সতেরো-আঠারো শতকে। তখন পুঁজিবাদী কৃষিব্যবস্থা ছারখার হয়ে যাওয়ার ফায়দা তোলে কারখানা-মালিকেরা। নতুন নতুন আবিষ্কার হওয়া যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের কায়দা তত দিনে তাদের আয়ত্তে এসে গেছে। আর আসতে শুরু করেছে সস্তায় কলোনির কাঁচামাল। পুঁজিবাদ এবার মড়কের কাঁধে চড়ে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে।
সেই সময় মড়ক ছড়ায় মূলত উপনিবেশ বা কলোনিগুলোয়। একদিকে পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিজ্ঞান যেমন উপনিবেশের প্রজাদের গিনিপিগ বানিয়ে রোগারোগ্য বিষয়ে অগাধ জ্ঞান আহরণ করে, অন্যদিকে সেই জ্ঞানকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে ব্যবহার করে সেই প্রজাদের ওপরে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক আধিপত্যকে আরও পাকাপোক্ত করেন সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা। মাঝখানে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থান। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে ভিন্ন প্রক্রিয়ার শাসনব্যবস্থা চালু। পুঁজিবাদের অবাধ প্রবাহে খানিকটা প্রতিরোধ!
কিন্তু বাস্তব থেকে শিক্ষা নিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই পুঁজিবাদ আরও পরিণত হয়ে ওঠে। পুরোনো ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বোঝাকে ঝেড়ে ফেলে বিশ্বজোড়া করপোরেট-বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়া উপনিবেশবাদ গড়ে ওঠে। এই নতুন প্রক্রিয়ায় দুনিয়াদারি চালাতে গিয়ে উদ্ভাবন করা হলো ‘উন্নয়ন’ আর ‘বিশ্বায়ন’-এর নতুন দর্শন, যার মায়ায় বশ হলো জগতের মানুষ। এদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারও বিপর্যয় ঘটে গেছে। পালটা কোনো দর্শন নেই, যে স্পর্ধার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারে। চীন তত দিনে জেনে গেছে, ‘ইট ইজ গুড টু বি রিচ’ বড়লোক হওয়া দোষের নয়। কিউবার মতো দু-একটা ছোটখাটো দেশকে বাদ দিলে ঘাড়-ত্যাড়ামি করার মতো আর কেউ নেই। এর মধ্যে বজ্রাঘাতের মতো এল আরেক মহামারি এইডস। প্রথমদিকে একটু হকচকিয়ে গেলেও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করল নয়া ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ। তার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মায়া-কাজল এঁকে চলল এইডস নিয়ন্ত্রণের বিশ্বায়ন। এই নতুন দর্শন অনুসারে আগেকার ‘কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ’ অচল হয়ে গেল। রোগ নিরাময়, মারি-মুক্তি, কোনো কিছুই আর ‘জনসেবা’র ঘোমটা পরে রইল না। সরাসরি সুর ধরল, মাল ছাড়ো, রোগ সারাও। মড়কের থেকে মুনাফা আদায় করল পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই মড়ক দমনের, কোনো চরম ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তার ছোট-বড় প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার, কোনো সংলাপ তৈরি করার। সবটাই একতরফা। উল্টো দিকে, জনগণের ‘দেশপ্রেমের’ দায় তার সব নিদান বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার। যেমন মেনে নিতে হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার সব দৌরাত্ম্য, তেমনি মানতে হবে ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কারণ, পুঁজিবাদ সাপ হয়ে কাটে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। সে নিজেই রোগ বয়ে আনলেও তা সারানোর কায়দাও সে-ই একমাত্র আবিষ্কার করতে পারে। আর মারির বিষকে ব্যবহার করতে পারে তার নিজের দুরারোগ্য ক্ষতের ওপরেও মলম লাগাতে। এবার, এই করোনাকালে সে তাই করতে চলেছে।
অন্তত দশ বছর ধরে পুঁজিবাদ একটা গাড্ডায় পড়ে রয়েছে। সেই গাড্ডা থেকে এবার সে উঠে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে করোনার কাঁধে চড়ে। গল্পটা সবাই জানে। তবু আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৮-০৯ সালে সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদের সংকট নেমে এসেছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল, বহু লোকের চাকরি গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর সরকারগুলোকে বাজারে বিস্তর টাকা ঢেলে মন্দা সামাল দিতে হয়েছিল। তার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে। না হলে সেবার যে দেশগুলোর গায়ে তেমন আঁচ লাগেনি, যেমন ভারত, ব্রাজিল ও চীন, আগামী সংকটে তারাও ঝলসে যেতে পারে। সেই আগামী সংকটও প্রায় ঘাড়ের ওপর চলে এসেছিল। আমেরিকার সঙ্গে চীনের শুল্কযুদ্ধে কারোরই হার-জিত কিছু বলা যাচ্ছিল না। এশিয়ার অর্থনীতির হাল ডুবুডুবু। ইউরোপের অর্থনীতি নিশ্চল, তার অগ্রগতির ইঞ্জিন জার্মানির শিল্পক্ষেত্রে ভাটা লেগেছে। জাপানের অর্থনীতিও ক্রমেই কুঁকড়ে ছোট হয়ে আসছিল।
এখন এই সবকিছুর দায় কেয়ার অব করোনাভাইরাস। করোনা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ত্রাতা হয়ে এসেছে যেন। হ্যাঁ, ইউরোপ-আমেরিকায়ও মানুষ মরেছে। মানুষ তো মরবেই, এর মধ্যে কিছু রথী-মহারথীও থাকবে, কিন্তু তাতে ক্ষতি কী, ব্যবস্থাটা তো বাঁচবে! এই মড়কের কালেও পুঁজিবাদ তার ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী দুনিয়ার দখলে থাকা প্রযুক্তি আর অনলাইন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা ও অর্থনীতির, তখন এই মহামারি যেন পৌষ মাস হয়ে এসেছে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। যেসব দেশ ও কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দাঁও মারছে।
বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে যে কয়টি কোম্পানির কোভিড টিকা বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হলো–অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, ফাইজার-বায়োএনটেকের কমিরনাটি, মডার্নার টিকা। এর পরেই রয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-কোরভি, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা জানসেন। কেবল ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকা বিক্রি করে সম্মিলিতভাবে প্রতি মিনিটে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার মুনাফা করছে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় তাদের আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি।
গত বছর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। করোনার টিকার বদৌলতেই তাঁরা এটা অর্জন করেছেন। ধনীদের তালিকায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টেফান ব্যানচেল ও বায়োএনটেকের সিইও উগুর সাহিন। দুজনের সম্পদ প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের মতো। এ ছাড়া কাগজে-কলমে চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং মডার্নার শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরাও ধনীদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থাগুলোর কাছে করোনাভাইরাস হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। এই বিশ্বব্যাপী সংকট তাদের বিক্রয় ও মুনাফা বিপুল বাড়িয়ে তোলার মোক্ষম সুযোগ। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বড় করপোরেট ফার্মা কোম্পানির ছোঁয়াচে রোগের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণায় কোনো আগ্রহ নেই। ছয়ের দশক থেকেই করোনাভাইরাস গোত্রের সার্স বা মার্সের সন্ধান পাওয়া গেলেও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা যায়নি কেন? আসলে তাদের পছন্দ রোগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবনে পয়সা ঢালা। আমরা যত বেশি অসুস্থ হব, তারা তত বেশি মুনাফা করবে। আমরা সুস্থ থাকলে তারা যে অসুস্থতা বোধ করবে–এ কথা বলাই বাহুল্য!
কাজেই করোনায় বড়লোকেরা আরও বড়লোক হচ্ছে, ধনবৈষম্য বাড়ছে, বড়লোকেরাই কেবল সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে; কিন্তু গরিবেরা তেমন কিছু পাচ্ছে না। কাজ হারাচ্ছে, চরম দুর্দশায় নিপতিত হচ্ছেন–এসব বলে মাতম করে কোনো লাভ নেই। দেশে এবং বিশ্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা বদলের উদ্যোগ না নিলে এসব চলতেই থাকবে।
চিররঞ্জন সরকার:গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই। মহামারির হাত ধরেই পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইউরোপ বারবার মহামারির আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চতুর্দশ শতকের আলোচিত মহামারি ‘গ্রেট প্লেগ’ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’, তাতে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মারা যায়। আর সেই বিভীষিকার ক্ষণেই সেখানে পয়দা হয় পুঁজিবাদ। এত লোক মারা যাওয়ায় সেখানে একদিকে সামন্তপ্রভুদের ভূমিদাসের সংখ্যা কমে যায়, অনেক শ্রমজীবী ‘মুক্ত’ হয়ে এদিক-ওদিক চলে যায়, আর কাজের মানুষ কম মেলায় মজুরিও কিছুটা বেড়ে গেল। অন্যদিকে অনেক জোতদার মারা যাওয়ায় প্রচুর জমি খালি পড়ে থাকে। তখন এগিয়ে আসে যাদের হাতে টাকা ছিল তারা এবং বড় বড় জমি নিয়ে, বেশি বেশি মজুরি দিয়ে অনেক মজুর নিয়োগ করে কৃষিতে পুঁজিবাদের বীজ বপন করে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় থেকে বড় বড় সব ‘কোম্পানি’ও তৈরি হয়, যে কোম্পানি বা করপোরেট সংস্থাগুলো পরবর্তীকালে পুঁজিবাদকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবার মারাত্মক প্লেগ এসেছিল সতেরো-আঠারো শতকে। তখন পুঁজিবাদী কৃষিব্যবস্থা ছারখার হয়ে যাওয়ার ফায়দা তোলে কারখানা-মালিকেরা। নতুন নতুন আবিষ্কার হওয়া যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের কায়দা তত দিনে তাদের আয়ত্তে এসে গেছে। আর আসতে শুরু করেছে সস্তায় কলোনির কাঁচামাল। পুঁজিবাদ এবার মড়কের কাঁধে চড়ে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে।
সেই সময় মড়ক ছড়ায় মূলত উপনিবেশ বা কলোনিগুলোয়। একদিকে পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিজ্ঞান যেমন উপনিবেশের প্রজাদের গিনিপিগ বানিয়ে রোগারোগ্য বিষয়ে অগাধ জ্ঞান আহরণ করে, অন্যদিকে সেই জ্ঞানকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে ব্যবহার করে সেই প্রজাদের ওপরে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক আধিপত্যকে আরও পাকাপোক্ত করেন সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা। মাঝখানে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থান। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে ভিন্ন প্রক্রিয়ার শাসনব্যবস্থা চালু। পুঁজিবাদের অবাধ প্রবাহে খানিকটা প্রতিরোধ!
কিন্তু বাস্তব থেকে শিক্ষা নিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই পুঁজিবাদ আরও পরিণত হয়ে ওঠে। পুরোনো ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বোঝাকে ঝেড়ে ফেলে বিশ্বজোড়া করপোরেট-বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়া উপনিবেশবাদ গড়ে ওঠে। এই নতুন প্রক্রিয়ায় দুনিয়াদারি চালাতে গিয়ে উদ্ভাবন করা হলো ‘উন্নয়ন’ আর ‘বিশ্বায়ন’-এর নতুন দর্শন, যার মায়ায় বশ হলো জগতের মানুষ। এদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারও বিপর্যয় ঘটে গেছে। পালটা কোনো দর্শন নেই, যে স্পর্ধার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারে। চীন তত দিনে জেনে গেছে, ‘ইট ইজ গুড টু বি রিচ’ বড়লোক হওয়া দোষের নয়। কিউবার মতো দু-একটা ছোটখাটো দেশকে বাদ দিলে ঘাড়-ত্যাড়ামি করার মতো আর কেউ নেই। এর মধ্যে বজ্রাঘাতের মতো এল আরেক মহামারি এইডস। প্রথমদিকে একটু হকচকিয়ে গেলেও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করল নয়া ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ। তার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মায়া-কাজল এঁকে চলল এইডস নিয়ন্ত্রণের বিশ্বায়ন। এই নতুন দর্শন অনুসারে আগেকার ‘কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ’ অচল হয়ে গেল। রোগ নিরাময়, মারি-মুক্তি, কোনো কিছুই আর ‘জনসেবা’র ঘোমটা পরে রইল না। সরাসরি সুর ধরল, মাল ছাড়ো, রোগ সারাও। মড়কের থেকে মুনাফা আদায় করল পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই মড়ক দমনের, কোনো চরম ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তার ছোট-বড় প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার, কোনো সংলাপ তৈরি করার। সবটাই একতরফা। উল্টো দিকে, জনগণের ‘দেশপ্রেমের’ দায় তার সব নিদান বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার। যেমন মেনে নিতে হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার সব দৌরাত্ম্য, তেমনি মানতে হবে ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কারণ, পুঁজিবাদ সাপ হয়ে কাটে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। সে নিজেই রোগ বয়ে আনলেও তা সারানোর কায়দাও সে-ই একমাত্র আবিষ্কার করতে পারে। আর মারির বিষকে ব্যবহার করতে পারে তার নিজের দুরারোগ্য ক্ষতের ওপরেও মলম লাগাতে। এবার, এই করোনাকালে সে তাই করতে চলেছে।
অন্তত দশ বছর ধরে পুঁজিবাদ একটা গাড্ডায় পড়ে রয়েছে। সেই গাড্ডা থেকে এবার সে উঠে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে করোনার কাঁধে চড়ে। গল্পটা সবাই জানে। তবু আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৮-০৯ সালে সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদের সংকট নেমে এসেছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল, বহু লোকের চাকরি গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর সরকারগুলোকে বাজারে বিস্তর টাকা ঢেলে মন্দা সামাল দিতে হয়েছিল। তার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে। না হলে সেবার যে দেশগুলোর গায়ে তেমন আঁচ লাগেনি, যেমন ভারত, ব্রাজিল ও চীন, আগামী সংকটে তারাও ঝলসে যেতে পারে। সেই আগামী সংকটও প্রায় ঘাড়ের ওপর চলে এসেছিল। আমেরিকার সঙ্গে চীনের শুল্কযুদ্ধে কারোরই হার-জিত কিছু বলা যাচ্ছিল না। এশিয়ার অর্থনীতির হাল ডুবুডুবু। ইউরোপের অর্থনীতি নিশ্চল, তার অগ্রগতির ইঞ্জিন জার্মানির শিল্পক্ষেত্রে ভাটা লেগেছে। জাপানের অর্থনীতিও ক্রমেই কুঁকড়ে ছোট হয়ে আসছিল।
এখন এই সবকিছুর দায় কেয়ার অব করোনাভাইরাস। করোনা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ত্রাতা হয়ে এসেছে যেন। হ্যাঁ, ইউরোপ-আমেরিকায়ও মানুষ মরেছে। মানুষ তো মরবেই, এর মধ্যে কিছু রথী-মহারথীও থাকবে, কিন্তু তাতে ক্ষতি কী, ব্যবস্থাটা তো বাঁচবে! এই মড়কের কালেও পুঁজিবাদ তার ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী দুনিয়ার দখলে থাকা প্রযুক্তি আর অনলাইন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা ও অর্থনীতির, তখন এই মহামারি যেন পৌষ মাস হয়ে এসেছে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। যেসব দেশ ও কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দাঁও মারছে।
বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে যে কয়টি কোম্পানির কোভিড টিকা বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হলো–অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, ফাইজার-বায়োএনটেকের কমিরনাটি, মডার্নার টিকা। এর পরেই রয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-কোরভি, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা জানসেন। কেবল ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকা বিক্রি করে সম্মিলিতভাবে প্রতি মিনিটে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার মুনাফা করছে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় তাদের আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি।
গত বছর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। করোনার টিকার বদৌলতেই তাঁরা এটা অর্জন করেছেন। ধনীদের তালিকায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টেফান ব্যানচেল ও বায়োএনটেকের সিইও উগুর সাহিন। দুজনের সম্পদ প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের মতো। এ ছাড়া কাগজে-কলমে চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং মডার্নার শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরাও ধনীদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থাগুলোর কাছে করোনাভাইরাস হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। এই বিশ্বব্যাপী সংকট তাদের বিক্রয় ও মুনাফা বিপুল বাড়িয়ে তোলার মোক্ষম সুযোগ। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বড় করপোরেট ফার্মা কোম্পানির ছোঁয়াচে রোগের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণায় কোনো আগ্রহ নেই। ছয়ের দশক থেকেই করোনাভাইরাস গোত্রের সার্স বা মার্সের সন্ধান পাওয়া গেলেও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা যায়নি কেন? আসলে তাদের পছন্দ রোগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবনে পয়সা ঢালা। আমরা যত বেশি অসুস্থ হব, তারা তত বেশি মুনাফা করবে। আমরা সুস্থ থাকলে তারা যে অসুস্থতা বোধ করবে–এ কথা বলাই বাহুল্য!
কাজেই করোনায় বড়লোকেরা আরও বড়লোক হচ্ছে, ধনবৈষম্য বাড়ছে, বড়লোকেরাই কেবল সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে; কিন্তু গরিবেরা তেমন কিছু পাচ্ছে না। কাজ হারাচ্ছে, চরম দুর্দশায় নিপতিত হচ্ছেন–এসব বলে মাতম করে কোনো লাভ নেই। দেশে এবং বিশ্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা বদলের উদ্যোগ না নিলে এসব চলতেই থাকবে।
চিররঞ্জন সরকার:গবেষক ও কলামিস্ট

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই। মহামারির হাত ধরেই পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইউরোপ বারবার মহামারির আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছে। চতুর্দশ শতকের আলোচিত মহামারি ‘গ্রেট প্লেগ’ বা ‘ব্ল্যাক ডেথ’, তাতে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ মারা যায়। আর সেই বিভীষিকার ক্ষণেই সেখানে পয়দা হয় পুঁজিবাদ। এত লোক মারা যাওয়ায় সেখানে একদিকে সামন্তপ্রভুদের ভূমিদাসের সংখ্যা কমে যায়, অনেক শ্রমজীবী ‘মুক্ত’ হয়ে এদিক-ওদিক চলে যায়, আর কাজের মানুষ কম মেলায় মজুরিও কিছুটা বেড়ে গেল। অন্যদিকে অনেক জোতদার মারা যাওয়ায় প্রচুর জমি খালি পড়ে থাকে। তখন এগিয়ে আসে যাদের হাতে টাকা ছিল তারা এবং বড় বড় জমি নিয়ে, বেশি বেশি মজুরি দিয়ে অনেক মজুর নিয়োগ করে কৃষিতে পুঁজিবাদের বীজ বপন করে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় থেকে বড় বড় সব ‘কোম্পানি’ও তৈরি হয়, যে কোম্পানি বা করপোরেট সংস্থাগুলো পরবর্তীকালে পুঁজিবাদকে দুনিয়াময় ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আবার মারাত্মক প্লেগ এসেছিল সতেরো-আঠারো শতকে। তখন পুঁজিবাদী কৃষিব্যবস্থা ছারখার হয়ে যাওয়ার ফায়দা তোলে কারখানা-মালিকেরা। নতুন নতুন আবিষ্কার হওয়া যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদনের কায়দা তত দিনে তাদের আয়ত্তে এসে গেছে। আর আসতে শুরু করেছে সস্তায় কলোনির কাঁচামাল। পুঁজিবাদ এবার মড়কের কাঁধে চড়ে সাম্রাজ্যবাদী হয়ে ওঠে।
সেই সময় মড়ক ছড়ায় মূলত উপনিবেশ বা কলোনিগুলোয়। একদিকে পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিজ্ঞান যেমন উপনিবেশের প্রজাদের গিনিপিগ বানিয়ে রোগারোগ্য বিষয়ে অগাধ জ্ঞান আহরণ করে, অন্যদিকে সেই জ্ঞানকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে ব্যবহার করে সেই প্রজাদের ওপরে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শারীরিক আধিপত্যকে আরও পাকাপোক্ত করেন সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা। মাঝখানে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থান। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশে ভিন্ন প্রক্রিয়ার শাসনব্যবস্থা চালু। পুঁজিবাদের অবাধ প্রবাহে খানিকটা প্রতিরোধ!
কিন্তু বাস্তব থেকে শিক্ষা নিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই পুঁজিবাদ আরও পরিণত হয়ে ওঠে। পুরোনো ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের বোঝাকে ঝেড়ে ফেলে বিশ্বজোড়া করপোরেট-বাণিজ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে নয়া উপনিবেশবাদ গড়ে ওঠে। এই নতুন প্রক্রিয়ায় দুনিয়াদারি চালাতে গিয়ে উদ্ভাবন করা হলো ‘উন্নয়ন’ আর ‘বিশ্বায়ন’-এর নতুন দর্শন, যার মায়ায় বশ হলো জগতের মানুষ। এদিকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারও বিপর্যয় ঘটে গেছে। পালটা কোনো দর্শন নেই, যে স্পর্ধার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে পারে। চীন তত দিনে জেনে গেছে, ‘ইট ইজ গুড টু বি রিচ’ বড়লোক হওয়া দোষের নয়। কিউবার মতো দু-একটা ছোটখাটো দেশকে বাদ দিলে ঘাড়-ত্যাড়ামি করার মতো আর কেউ নেই। এর মধ্যে বজ্রাঘাতের মতো এল আরেক মহামারি এইডস। প্রথমদিকে একটু হকচকিয়ে গেলেও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে তাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করল নয়া ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ। তার অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের মায়া-কাজল এঁকে চলল এইডস নিয়ন্ত্রণের বিশ্বায়ন। এই নতুন দর্শন অনুসারে আগেকার ‘কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ’ অচল হয়ে গেল। রোগ নিরাময়, মারি-মুক্তি, কোনো কিছুই আর ‘জনসেবা’র ঘোমটা পরে রইল না। সরাসরি সুর ধরল, মাল ছাড়ো, রোগ সারাও। মড়কের থেকে মুনাফা আদায় করল পুঁজিবাদ।
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই মড়ক দমনের, কোনো চরম ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তার ছোট-বড় প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার, কোনো সংলাপ তৈরি করার। সবটাই একতরফা। উল্টো দিকে, জনগণের ‘দেশপ্রেমের’ দায় তার সব নিদান বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার। যেমন মেনে নিতে হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার সব দৌরাত্ম্য, তেমনি মানতে হবে ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। কারণ, পুঁজিবাদ সাপ হয়ে কাটে, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ে। সে নিজেই রোগ বয়ে আনলেও তা সারানোর কায়দাও সে-ই একমাত্র আবিষ্কার করতে পারে। আর মারির বিষকে ব্যবহার করতে পারে তার নিজের দুরারোগ্য ক্ষতের ওপরেও মলম লাগাতে। এবার, এই করোনাকালে সে তাই করতে চলেছে।
অন্তত দশ বছর ধরে পুঁজিবাদ একটা গাড্ডায় পড়ে রয়েছে। সেই গাড্ডা থেকে এবার সে উঠে আসার প্রাণপণ চেষ্টা করছে করোনার কাঁধে চড়ে। গল্পটা সবাই জানে। তবু আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ২০০৮-০৯ সালে সারা পৃথিবীতে পুঁজিবাদের সংকট নেমে এসেছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল, বহু লোকের চাকরি গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর সরকারগুলোকে বাজারে বিস্তর টাকা ঢেলে মন্দা সামাল দিতে হয়েছিল। তার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে এবার ঢেলে সাজাতে হবে। না হলে সেবার যে দেশগুলোর গায়ে তেমন আঁচ লাগেনি, যেমন ভারত, ব্রাজিল ও চীন, আগামী সংকটে তারাও ঝলসে যেতে পারে। সেই আগামী সংকটও প্রায় ঘাড়ের ওপর চলে এসেছিল। আমেরিকার সঙ্গে চীনের শুল্কযুদ্ধে কারোরই হার-জিত কিছু বলা যাচ্ছিল না। এশিয়ার অর্থনীতির হাল ডুবুডুবু। ইউরোপের অর্থনীতি নিশ্চল, তার অগ্রগতির ইঞ্জিন জার্মানির শিল্পক্ষেত্রে ভাটা লেগেছে। জাপানের অর্থনীতিও ক্রমেই কুঁকড়ে ছোট হয়ে আসছিল।
এখন এই সবকিছুর দায় কেয়ার অব করোনাভাইরাস। করোনা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ত্রাতা হয়ে এসেছে যেন। হ্যাঁ, ইউরোপ-আমেরিকায়ও মানুষ মরেছে। মানুষ তো মরবেই, এর মধ্যে কিছু রথী-মহারথীও থাকবে, কিন্তু তাতে ক্ষতি কী, ব্যবস্থাটা তো বাঁচবে! এই মড়কের কালেও পুঁজিবাদ তার ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী দুনিয়ার দখলে থাকা প্রযুক্তি আর অনলাইন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা ও অর্থনীতির, তখন এই মহামারি যেন পৌষ মাস হয়ে এসেছে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। যেসব দেশ ও কোম্পানি টিকা তৈরি করেছে, তারা সবাই অর্থনৈতিকভাবে দাঁও মারছে।
বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে যে কয়টি কোম্পানির কোভিড টিকা বেশি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হলো–অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, ফাইজার-বায়োএনটেকের কমিরনাটি, মডার্নার টিকা। এর পরেই রয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-কোরভি, রাশিয়ার তৈরি স্পুটনিক-ভি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা জানসেন। কেবল ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকা বিক্রি করে সম্মিলিতভাবে প্রতি মিনিটে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার মুনাফা করছে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় তাদের আয় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি।
গত বছর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীদের তালিকায় যাঁরা নাম লিখিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। করোনার টিকার বদৌলতেই তাঁরা এটা অর্জন করেছেন। ধনীদের তালিকায় যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টেফান ব্যানচেল ও বায়োএনটেকের সিইও উগুর সাহিন। দুজনের সম্পদ প্রায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের মতো। এ ছাড়া কাগজে-কলমে চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং মডার্নার শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরাও ধনীদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থাগুলোর কাছে করোনাভাইরাস হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। এই বিশ্বব্যাপী সংকট তাদের বিক্রয় ও মুনাফা বিপুল বাড়িয়ে তোলার মোক্ষম সুযোগ। খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বড় করপোরেট ফার্মা কোম্পানির ছোঁয়াচে রোগের প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণায় কোনো আগ্রহ নেই। ছয়ের দশক থেকেই করোনাভাইরাস গোত্রের সার্স বা মার্সের সন্ধান পাওয়া গেলেও এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা যায়নি কেন? আসলে তাদের পছন্দ রোগ নিরাময়ের জন্য উদ্ভাবনে পয়সা ঢালা। আমরা যত বেশি অসুস্থ হব, তারা তত বেশি মুনাফা করবে। আমরা সুস্থ থাকলে তারা যে অসুস্থতা বোধ করবে–এ কথা বলাই বাহুল্য!
কাজেই করোনায় বড়লোকেরা আরও বড়লোক হচ্ছে, ধনবৈষম্য বাড়ছে, বড়লোকেরাই কেবল সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছে; কিন্তু গরিবেরা তেমন কিছু পাচ্ছে না। কাজ হারাচ্ছে, চরম দুর্দশায় নিপতিত হচ্ছেন–এসব বলে মাতম করে কোনো লাভ নেই। দেশে এবং বিশ্বে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা বদলের উদ্যোগ না নিলে এসব চলতেই থাকবে।
চিররঞ্জন সরকার:গবেষক ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

পুঁজিবাদের মূল কথাই হচ্ছে মুনাফা বা লাভ। মারি-মড়ক-যুদ্ধ থেকেও পুঁজিবাদ মুনাফাই পেতে চায়। আর মহামারির সঙ্গে পুঁজিবাদের নাড়ির যোগ তার জন্ম থেকেই।
২৬ জানুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫