চিররঞ্জন সরকার

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
রাজনীতি। আকারে একটি ছোট শব্দ। তবে আজকের সমাজব্যবস্থায় শব্দটি সর্বাধিক শক্তির আধার। কারণ, গোটা পৃথিবী রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। একেক রাষ্ট্রের পরিচালনব্যবস্থা একেক রকম হলেও তাদের মূল ভিত্তি রাজনীতি। রাষ্ট্র শাসন বা পরিচালনার নীতির নামই হলো রাজনীতি—ইংরেজিতে পলিটিকস। প্রাচীন রাজতন্ত্রের দিক থেকে রাজনীতি হলো রাজার নীতি। অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে রাজা তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। রাজার কাজ হলো দেশের সবার জন্য সুখ-শান্তি এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা। সেই অর্থে রাজনীতি হলো নীতিরও রাজা।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ মনুসংহিতায় সাম দান ভেদ দণ্ড—রাজ্যশাসনের এই চারটি উপায় বা নীতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে পণ্ডিত চাণক্যও এই চারটি নীতির উল্লেখ করেন। রাজনীতির পাঠে ‘সাম’ এমন একটি উপায়, যাতে শত্রুকে বশীভূত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তোষণ এবং সন্ধিস্থাপনের কৌশল গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ‘দান’ কথার অর্থ কোনো দামি জিনিস বা স্বার্থের স্বত্ব ত্যাগ।
এটিরও চূড়ান্ত লক্ষ্য শত্রুকে বশীভূত করা। রাজনীতিতে ‘ভেদ’ কথাটি বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা বা ভেদনীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্বিধ উপায়ের সর্বশেষটি হলো ‘দণ্ড’। এই শব্দটির তাৎপর্যগত অর্থ হলো ন্যায়দণ্ড। অর্থাৎ রাজা বা শাসক দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালনে ব্রতী থাকবেন। খেয়াল করে দেখুন, প্রথমোক্ত তিনটি উপায়ের ভেতরে কিছু কূটকৌশল অবশ্যই আছে, কিন্তু শেষোক্ত উপায়ে সেসব কেমন যেন নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ রাজনীতিক বা শাসককে শেষ বিচারে ন্যায়দণ্ডটাই হাতে ধরে রাখতে হবে। তার মানে, কোনো অন্যায় শাসক নিজে করবেন না, অন্যে সেটা করার চেষ্টা করলে তিনি রুখবেন এবং তাঁর অজান্তে কোনো অন্যায় ঘটে গেলে দোষীর জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করবেন। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রনীতির এই যে চতুর্বিধ উপায়ের কথা বলা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি তার সুবিধা অনুযায়ী নীতিগুলোকে আশ্রয় করে। যেমন, ভেদনীতিতেই তার সর্বাধিক আগ্রহ। বাকি তিনটি উপায়ের মধ্যে ন্যায়দণ্ড ছুঁয়ে দেখতেও যেন আলস্য তার। অন্য দুটির প্রয়োগেও ভীষণ একচক্ষু বা নিতান্তই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়।
উল্লেখ্য, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আর এককভাবে ‘রাজনীতি’ অর্থ বহন করে না। নানা ধরনের নেতিবাচক শব্দ সংযোজিত হয়েছে ‘পলিটিকস’-এর সঙ্গে। ‘পলিটিকস’ বলতে মানুষ বোঝে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘কুটিলতা’, ‘কারসাজি’, ‘প্রতারণা’, ‘কপটতা’ ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার পলিটিকসকে ‘পলিট্রিকস’ বলে থাকেন (‘পলি’ অর্থ বহুমুখী, আর ‘ট্রিকস’ মানে কারসাজি। অর্থাৎ বহুমুখী কারসাজিই হচ্ছে পলিট্রিকস)।
অনেকেই রসিকতা করে বলেন, রাজনীতির মধ্যে পলিটিকস ঢুকে গেছে। আর গ্রামের লোকজন যাবতীয় নেতিবাচক বিষয়কে বলেন ‘পলিটিকস’। অথচ রাজনীতিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যারিস্টটল ‘পলিটিকস’ অর্থাৎ রাজনীতিকে সত্য, সুন্দর ও নৈতিকতার বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য পরে প্রাচ্যের কৌটিল্য (খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) এবং পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) রাজনীতি থেকে নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দেন। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য সব ধরনের ধূর্ততা, হিংস্রতা, অপকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন। আজ বাংলাদেশে কৌটিল্য—ম্যাকিয়াভেলি বর্ণিত রাজনীতিরই যেন মহড়া চলছে।
যাহোক, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আমাদের সমাজে অনেক বেশি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি ও সমাজে নীতি-আদর্শের বিচ্যুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিটিকস শব্দটির প্রয়োগ করা হয়। যেমন, কেউ কোথাও ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করলে বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস চলবে না।’ কেউ দুটি পক্ষের মধ্যে উসকানি দিলে, চালবাজি করলে সে ক্ষেত্রেও বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস করতে হলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব’ ইত্যাদি।
এখন আমাদের দেশে পলিটিকস মানে নোংরামি, ষড়যন্ত্র আর কপটতা। পলিটিকস যাঁরা করেন, সেই রাজনীতিবিদদের প্রতিও মানুষের আর তেমন আস্থা নেই। তাঁদের নিয়ে সবাই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন। এক মহাজন বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদেরা বিশ্বের সব জায়গায় একই রকম। তাঁরা আপনাকে বিশাল সেতু বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন, যেখানে হয়তোবা কোনো নদীই নেই’ অর্থাৎ নদী ছাড়াই রাজনীতিবিদেরা আপনাকে বড় বড় সেতু বানিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তাঁরা সব সময় জনগণকে বোকা বানিয়ে রাখতে চান। আসলে একালে ‘রাজনীতি’ শব্দটির যেন অর্থবিপর্যয় ঘটে গেছে। এখন শাসক বা ‘রাজার নীতি’ই হচ্ছে রাজনীতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই। নীতিহীনতারই অন্য নাম হয়ে গেছে রাজনীতি। অথচ রাজনীতির প্রকৃত অর্থ হলো ‘নীতির রাজা’। নীতি মানে ন্যায়। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে যা, তা-ই রাজনীতি।
সেই প্রথাগত রাজনীতি এখন যেন উল্টো পথে হাঁটছে। সবচেয়ে আজব ঘটনা হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ আনছেন! সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনছেন। খুব সামান্য, সিধেসাদা ব্যাপার নিয়েও তাঁরা নাকি রাজনীতি করতে মাঠে নেমে পড়ছেন এবং তর্জনী তুলে একে অপরকে ‘রাজনীতি করবেন না’ বলে হুংকার ছাড়ছেন। বেশ! বুঝলাম, রাজনীতি করা ভালো কিছু নয়, অন্তত তা বক্তার অনুমোদনযোগ্য নয়। রাজনীতি তো করেন না, তা হলে বক্তা-মন্ত্রী করেনটা কী! তিনি কি তাহলে রাজনীতির লোক নন?
ত্রৈলোক্যনাথ নেই বটে, তবে গল্পের গরু শুধু গাছেই নয়, সে এখন আকাশেও চরছে! আমজনতাও ‘কুম্ভীর বিভ্রাট’ গল্পের মতো হাঁ করে তা দেখছে। পেটে খিদে চাপা থাক, ঘরে বেকার বসে থাক, শিক্ষা শিকেয় তোলা থাক, দূষণ পৃথিবীর মাথা খাক, ফুটপাত চুরি যাক, মানুষ পাখির মতো পরিযায়ী হোক; এসব নিয়ে ভাবতে গেলে চলে না, এতে তো আর রাজনীতির ‘টিআরপি’ বাড়ে না। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ত থাকতে হয় তদবির, গালি, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমানি, না জানি আরও কত মানি-আনি নিয়ে।
রাজনীতিতে এখন বক্তৃতাবাজি আছে, আত্মপ্রশংসা, আত্মপ্রচার আছে, চটকদারি কথার ফুলঝুরি আছে। আছে ধর্ম, ধর্ম অবমাননা, ফেসবুক, ট্রোল, ফিতাকাটা, দড়ি, বাঁশ। কিছু নেতাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি, দড়ি টানাটানি আছে। আছে দলবদল, ভোলবদল, শিবিরবদল, সুরবদল, পালাবদল, মালাবদল। সোনার বাংলা, কেচ্ছা-কাহিনি, গালাগাল থেকে আন্দোলন, আস্ফালন, রঙ্গমঞ্চে সবই আছে। শুধু মানুষই গায়েব। মানুষ যেন পাখা গজানো পিপীলিকা মাত্র, আলোর লোভে স্রেফ আগুনে পুড়ছে! পুড়েই চলেছে। তা পুড়ুক, সবকিছু চাপা দেওয়ার জন্য ধামা আছে, আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আছে।
রাজনীতিতে এখন উপসর্গ-অনুসর্গহীন ঠিক অথবা বেঠিক, ন্যায় অথবা অন্যায় বলে কিছু হয় না। এখন একটা খুনের উত্তর আগের দুটো খুন, শ্লীলতাহানির উত্তর ধর্ষণ, ব্ল্যাকমানির উত্তর আরও ব্ল্যাকমানি, এদের আঁতলামির উত্তর ওদের ফাজলামি।
রাজনীতি এখন নীতির আলোকে জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা নয়! রাজনীতি মানে এখন নেতিবাচক অর্থে লাফালাফি করে চমক এবং ধমকের মহড়া। একই উন্নয়নসংগীত গেয়ে গেয়ে সবার মগজধোলাইয়ের চেষ্টা। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘দলীয় সংগীত’। যে সংগীত গাইলে দল খুশি হয়, সবাই সেই সংগীতই গায়। মোসাহেবি, চাটুকারিতা এখন জননীতি। রাজনীতির এই ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুবড়িতে মজে জনতা। টেক নিউজ, ফেক নিউজে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। আগে সবাই বলত, সত্যের উল্টো দিকে মিথ্যে থাকে। ইদানীং মাঝখানে অর্ধসত্য নামে বিস্ময়কর এক বিষয় এসে বিস্তর হট্টগোল বাধাচ্ছে। নৈতিকতাবাদ এবং বাস্তবতাবাদ পুরোপুরিই বাদ। শুধু রাজনীতি বললে এখন কিছু বুঝে ওঠা মুশকিল, তার সঙ্গে পলিটিকস শব্দটা লাগাতে হয়।
রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে গিয়েই কি তবে এমন সর্বনাশ ঘটল? রাজনীতি কি তার অর্থের মানবদল এবং ভোলবদল সেরে রাজপথ ছেড়ে গলিপথের অন্ধকারে পথ হারাল? নাকি বহতা নদীর মতো রাজনীতিও দুটি তীর নিয়ে চলছে, এপার ভেঙে ওপার গড়ছে? রাজনীতি কি তার রাজসিংহাসন, নীতিনৈতিকতা ভেঙে ভেঙে হিংসা, অবিশ্বাস, ষড়যন্ত্রের পলি জমিয়ে অন্য পাড়ে সমভূমি গড়ছে? নাকি রাজনীতিতে পুরোপুরিই পলিটিকসে গায়েব হয়ে গেল?
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
রাজনীতি। আকারে একটি ছোট শব্দ। তবে আজকের সমাজব্যবস্থায় শব্দটি সর্বাধিক শক্তির আধার। কারণ, গোটা পৃথিবী রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। একেক রাষ্ট্রের পরিচালনব্যবস্থা একেক রকম হলেও তাদের মূল ভিত্তি রাজনীতি। রাষ্ট্র শাসন বা পরিচালনার নীতির নামই হলো রাজনীতি—ইংরেজিতে পলিটিকস। প্রাচীন রাজতন্ত্রের দিক থেকে রাজনীতি হলো রাজার নীতি। অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে রাজা তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। রাজার কাজ হলো দেশের সবার জন্য সুখ-শান্তি এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা। সেই অর্থে রাজনীতি হলো নীতিরও রাজা।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ মনুসংহিতায় সাম দান ভেদ দণ্ড—রাজ্যশাসনের এই চারটি উপায় বা নীতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে পণ্ডিত চাণক্যও এই চারটি নীতির উল্লেখ করেন। রাজনীতির পাঠে ‘সাম’ এমন একটি উপায়, যাতে শত্রুকে বশীভূত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তোষণ এবং সন্ধিস্থাপনের কৌশল গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ‘দান’ কথার অর্থ কোনো দামি জিনিস বা স্বার্থের স্বত্ব ত্যাগ।
এটিরও চূড়ান্ত লক্ষ্য শত্রুকে বশীভূত করা। রাজনীতিতে ‘ভেদ’ কথাটি বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা বা ভেদনীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্বিধ উপায়ের সর্বশেষটি হলো ‘দণ্ড’। এই শব্দটির তাৎপর্যগত অর্থ হলো ন্যায়দণ্ড। অর্থাৎ রাজা বা শাসক দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালনে ব্রতী থাকবেন। খেয়াল করে দেখুন, প্রথমোক্ত তিনটি উপায়ের ভেতরে কিছু কূটকৌশল অবশ্যই আছে, কিন্তু শেষোক্ত উপায়ে সেসব কেমন যেন নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ রাজনীতিক বা শাসককে শেষ বিচারে ন্যায়দণ্ডটাই হাতে ধরে রাখতে হবে। তার মানে, কোনো অন্যায় শাসক নিজে করবেন না, অন্যে সেটা করার চেষ্টা করলে তিনি রুখবেন এবং তাঁর অজান্তে কোনো অন্যায় ঘটে গেলে দোষীর জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করবেন। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রনীতির এই যে চতুর্বিধ উপায়ের কথা বলা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি তার সুবিধা অনুযায়ী নীতিগুলোকে আশ্রয় করে। যেমন, ভেদনীতিতেই তার সর্বাধিক আগ্রহ। বাকি তিনটি উপায়ের মধ্যে ন্যায়দণ্ড ছুঁয়ে দেখতেও যেন আলস্য তার। অন্য দুটির প্রয়োগেও ভীষণ একচক্ষু বা নিতান্তই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়।
উল্লেখ্য, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আর এককভাবে ‘রাজনীতি’ অর্থ বহন করে না। নানা ধরনের নেতিবাচক শব্দ সংযোজিত হয়েছে ‘পলিটিকস’-এর সঙ্গে। ‘পলিটিকস’ বলতে মানুষ বোঝে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘কুটিলতা’, ‘কারসাজি’, ‘প্রতারণা’, ‘কপটতা’ ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার পলিটিকসকে ‘পলিট্রিকস’ বলে থাকেন (‘পলি’ অর্থ বহুমুখী, আর ‘ট্রিকস’ মানে কারসাজি। অর্থাৎ বহুমুখী কারসাজিই হচ্ছে পলিট্রিকস)।
অনেকেই রসিকতা করে বলেন, রাজনীতির মধ্যে পলিটিকস ঢুকে গেছে। আর গ্রামের লোকজন যাবতীয় নেতিবাচক বিষয়কে বলেন ‘পলিটিকস’। অথচ রাজনীতিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যারিস্টটল ‘পলিটিকস’ অর্থাৎ রাজনীতিকে সত্য, সুন্দর ও নৈতিকতার বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য পরে প্রাচ্যের কৌটিল্য (খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) এবং পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) রাজনীতি থেকে নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দেন। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য সব ধরনের ধূর্ততা, হিংস্রতা, অপকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন। আজ বাংলাদেশে কৌটিল্য—ম্যাকিয়াভেলি বর্ণিত রাজনীতিরই যেন মহড়া চলছে।
যাহোক, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আমাদের সমাজে অনেক বেশি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি ও সমাজে নীতি-আদর্শের বিচ্যুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিটিকস শব্দটির প্রয়োগ করা হয়। যেমন, কেউ কোথাও ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করলে বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস চলবে না।’ কেউ দুটি পক্ষের মধ্যে উসকানি দিলে, চালবাজি করলে সে ক্ষেত্রেও বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস করতে হলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব’ ইত্যাদি।
এখন আমাদের দেশে পলিটিকস মানে নোংরামি, ষড়যন্ত্র আর কপটতা। পলিটিকস যাঁরা করেন, সেই রাজনীতিবিদদের প্রতিও মানুষের আর তেমন আস্থা নেই। তাঁদের নিয়ে সবাই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন। এক মহাজন বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদেরা বিশ্বের সব জায়গায় একই রকম। তাঁরা আপনাকে বিশাল সেতু বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন, যেখানে হয়তোবা কোনো নদীই নেই’ অর্থাৎ নদী ছাড়াই রাজনীতিবিদেরা আপনাকে বড় বড় সেতু বানিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তাঁরা সব সময় জনগণকে বোকা বানিয়ে রাখতে চান। আসলে একালে ‘রাজনীতি’ শব্দটির যেন অর্থবিপর্যয় ঘটে গেছে। এখন শাসক বা ‘রাজার নীতি’ই হচ্ছে রাজনীতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই। নীতিহীনতারই অন্য নাম হয়ে গেছে রাজনীতি। অথচ রাজনীতির প্রকৃত অর্থ হলো ‘নীতির রাজা’। নীতি মানে ন্যায়। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে যা, তা-ই রাজনীতি।
সেই প্রথাগত রাজনীতি এখন যেন উল্টো পথে হাঁটছে। সবচেয়ে আজব ঘটনা হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ আনছেন! সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনছেন। খুব সামান্য, সিধেসাদা ব্যাপার নিয়েও তাঁরা নাকি রাজনীতি করতে মাঠে নেমে পড়ছেন এবং তর্জনী তুলে একে অপরকে ‘রাজনীতি করবেন না’ বলে হুংকার ছাড়ছেন। বেশ! বুঝলাম, রাজনীতি করা ভালো কিছু নয়, অন্তত তা বক্তার অনুমোদনযোগ্য নয়। রাজনীতি তো করেন না, তা হলে বক্তা-মন্ত্রী করেনটা কী! তিনি কি তাহলে রাজনীতির লোক নন?
ত্রৈলোক্যনাথ নেই বটে, তবে গল্পের গরু শুধু গাছেই নয়, সে এখন আকাশেও চরছে! আমজনতাও ‘কুম্ভীর বিভ্রাট’ গল্পের মতো হাঁ করে তা দেখছে। পেটে খিদে চাপা থাক, ঘরে বেকার বসে থাক, শিক্ষা শিকেয় তোলা থাক, দূষণ পৃথিবীর মাথা খাক, ফুটপাত চুরি যাক, মানুষ পাখির মতো পরিযায়ী হোক; এসব নিয়ে ভাবতে গেলে চলে না, এতে তো আর রাজনীতির ‘টিআরপি’ বাড়ে না। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ত থাকতে হয় তদবির, গালি, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমানি, না জানি আরও কত মানি-আনি নিয়ে।
রাজনীতিতে এখন বক্তৃতাবাজি আছে, আত্মপ্রশংসা, আত্মপ্রচার আছে, চটকদারি কথার ফুলঝুরি আছে। আছে ধর্ম, ধর্ম অবমাননা, ফেসবুক, ট্রোল, ফিতাকাটা, দড়ি, বাঁশ। কিছু নেতাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি, দড়ি টানাটানি আছে। আছে দলবদল, ভোলবদল, শিবিরবদল, সুরবদল, পালাবদল, মালাবদল। সোনার বাংলা, কেচ্ছা-কাহিনি, গালাগাল থেকে আন্দোলন, আস্ফালন, রঙ্গমঞ্চে সবই আছে। শুধু মানুষই গায়েব। মানুষ যেন পাখা গজানো পিপীলিকা মাত্র, আলোর লোভে স্রেফ আগুনে পুড়ছে! পুড়েই চলেছে। তা পুড়ুক, সবকিছু চাপা দেওয়ার জন্য ধামা আছে, আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আছে।
রাজনীতিতে এখন উপসর্গ-অনুসর্গহীন ঠিক অথবা বেঠিক, ন্যায় অথবা অন্যায় বলে কিছু হয় না। এখন একটা খুনের উত্তর আগের দুটো খুন, শ্লীলতাহানির উত্তর ধর্ষণ, ব্ল্যাকমানির উত্তর আরও ব্ল্যাকমানি, এদের আঁতলামির উত্তর ওদের ফাজলামি।
রাজনীতি এখন নীতির আলোকে জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা নয়! রাজনীতি মানে এখন নেতিবাচক অর্থে লাফালাফি করে চমক এবং ধমকের মহড়া। একই উন্নয়নসংগীত গেয়ে গেয়ে সবার মগজধোলাইয়ের চেষ্টা। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘দলীয় সংগীত’। যে সংগীত গাইলে দল খুশি হয়, সবাই সেই সংগীতই গায়। মোসাহেবি, চাটুকারিতা এখন জননীতি। রাজনীতির এই ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুবড়িতে মজে জনতা। টেক নিউজ, ফেক নিউজে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। আগে সবাই বলত, সত্যের উল্টো দিকে মিথ্যে থাকে। ইদানীং মাঝখানে অর্ধসত্য নামে বিস্ময়কর এক বিষয় এসে বিস্তর হট্টগোল বাধাচ্ছে। নৈতিকতাবাদ এবং বাস্তবতাবাদ পুরোপুরিই বাদ। শুধু রাজনীতি বললে এখন কিছু বুঝে ওঠা মুশকিল, তার সঙ্গে পলিটিকস শব্দটা লাগাতে হয়।
রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে গিয়েই কি তবে এমন সর্বনাশ ঘটল? রাজনীতি কি তার অর্থের মানবদল এবং ভোলবদল সেরে রাজপথ ছেড়ে গলিপথের অন্ধকারে পথ হারাল? নাকি বহতা নদীর মতো রাজনীতিও দুটি তীর নিয়ে চলছে, এপার ভেঙে ওপার গড়ছে? রাজনীতি কি তার রাজসিংহাসন, নীতিনৈতিকতা ভেঙে ভেঙে হিংসা, অবিশ্বাস, ষড়যন্ত্রের পলি জমিয়ে অন্য পাড়ে সমভূমি গড়ছে? নাকি রাজনীতিতে পুরোপুরিই পলিটিকসে গায়েব হয়ে গেল?
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
রাজনীতি। আকারে একটি ছোট শব্দ। তবে আজকের সমাজব্যবস্থায় শব্দটি সর্বাধিক শক্তির আধার। কারণ, গোটা পৃথিবী রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। একেক রাষ্ট্রের পরিচালনব্যবস্থা একেক রকম হলেও তাদের মূল ভিত্তি রাজনীতি। রাষ্ট্র শাসন বা পরিচালনার নীতির নামই হলো রাজনীতি—ইংরেজিতে পলিটিকস। প্রাচীন রাজতন্ত্রের দিক থেকে রাজনীতি হলো রাজার নীতি। অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে রাজা তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। রাজার কাজ হলো দেশের সবার জন্য সুখ-শান্তি এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা। সেই অর্থে রাজনীতি হলো নীতিরও রাজা।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ মনুসংহিতায় সাম দান ভেদ দণ্ড—রাজ্যশাসনের এই চারটি উপায় বা নীতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে পণ্ডিত চাণক্যও এই চারটি নীতির উল্লেখ করেন। রাজনীতির পাঠে ‘সাম’ এমন একটি উপায়, যাতে শত্রুকে বশীভূত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তোষণ এবং সন্ধিস্থাপনের কৌশল গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ‘দান’ কথার অর্থ কোনো দামি জিনিস বা স্বার্থের স্বত্ব ত্যাগ।
এটিরও চূড়ান্ত লক্ষ্য শত্রুকে বশীভূত করা। রাজনীতিতে ‘ভেদ’ কথাটি বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা বা ভেদনীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্বিধ উপায়ের সর্বশেষটি হলো ‘দণ্ড’। এই শব্দটির তাৎপর্যগত অর্থ হলো ন্যায়দণ্ড। অর্থাৎ রাজা বা শাসক দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালনে ব্রতী থাকবেন। খেয়াল করে দেখুন, প্রথমোক্ত তিনটি উপায়ের ভেতরে কিছু কূটকৌশল অবশ্যই আছে, কিন্তু শেষোক্ত উপায়ে সেসব কেমন যেন নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ রাজনীতিক বা শাসককে শেষ বিচারে ন্যায়দণ্ডটাই হাতে ধরে রাখতে হবে। তার মানে, কোনো অন্যায় শাসক নিজে করবেন না, অন্যে সেটা করার চেষ্টা করলে তিনি রুখবেন এবং তাঁর অজান্তে কোনো অন্যায় ঘটে গেলে দোষীর জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করবেন। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রনীতির এই যে চতুর্বিধ উপায়ের কথা বলা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি তার সুবিধা অনুযায়ী নীতিগুলোকে আশ্রয় করে। যেমন, ভেদনীতিতেই তার সর্বাধিক আগ্রহ। বাকি তিনটি উপায়ের মধ্যে ন্যায়দণ্ড ছুঁয়ে দেখতেও যেন আলস্য তার। অন্য দুটির প্রয়োগেও ভীষণ একচক্ষু বা নিতান্তই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়।
উল্লেখ্য, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আর এককভাবে ‘রাজনীতি’ অর্থ বহন করে না। নানা ধরনের নেতিবাচক শব্দ সংযোজিত হয়েছে ‘পলিটিকস’-এর সঙ্গে। ‘পলিটিকস’ বলতে মানুষ বোঝে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘কুটিলতা’, ‘কারসাজি’, ‘প্রতারণা’, ‘কপটতা’ ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার পলিটিকসকে ‘পলিট্রিকস’ বলে থাকেন (‘পলি’ অর্থ বহুমুখী, আর ‘ট্রিকস’ মানে কারসাজি। অর্থাৎ বহুমুখী কারসাজিই হচ্ছে পলিট্রিকস)।
অনেকেই রসিকতা করে বলেন, রাজনীতির মধ্যে পলিটিকস ঢুকে গেছে। আর গ্রামের লোকজন যাবতীয় নেতিবাচক বিষয়কে বলেন ‘পলিটিকস’। অথচ রাজনীতিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যারিস্টটল ‘পলিটিকস’ অর্থাৎ রাজনীতিকে সত্য, সুন্দর ও নৈতিকতার বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য পরে প্রাচ্যের কৌটিল্য (খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) এবং পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) রাজনীতি থেকে নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দেন। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য সব ধরনের ধূর্ততা, হিংস্রতা, অপকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন। আজ বাংলাদেশে কৌটিল্য—ম্যাকিয়াভেলি বর্ণিত রাজনীতিরই যেন মহড়া চলছে।
যাহোক, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আমাদের সমাজে অনেক বেশি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি ও সমাজে নীতি-আদর্শের বিচ্যুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিটিকস শব্দটির প্রয়োগ করা হয়। যেমন, কেউ কোথাও ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করলে বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস চলবে না।’ কেউ দুটি পক্ষের মধ্যে উসকানি দিলে, চালবাজি করলে সে ক্ষেত্রেও বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস করতে হলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব’ ইত্যাদি।
এখন আমাদের দেশে পলিটিকস মানে নোংরামি, ষড়যন্ত্র আর কপটতা। পলিটিকস যাঁরা করেন, সেই রাজনীতিবিদদের প্রতিও মানুষের আর তেমন আস্থা নেই। তাঁদের নিয়ে সবাই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন। এক মহাজন বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদেরা বিশ্বের সব জায়গায় একই রকম। তাঁরা আপনাকে বিশাল সেতু বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন, যেখানে হয়তোবা কোনো নদীই নেই’ অর্থাৎ নদী ছাড়াই রাজনীতিবিদেরা আপনাকে বড় বড় সেতু বানিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তাঁরা সব সময় জনগণকে বোকা বানিয়ে রাখতে চান। আসলে একালে ‘রাজনীতি’ শব্দটির যেন অর্থবিপর্যয় ঘটে গেছে। এখন শাসক বা ‘রাজার নীতি’ই হচ্ছে রাজনীতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই। নীতিহীনতারই অন্য নাম হয়ে গেছে রাজনীতি। অথচ রাজনীতির প্রকৃত অর্থ হলো ‘নীতির রাজা’। নীতি মানে ন্যায়। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে যা, তা-ই রাজনীতি।
সেই প্রথাগত রাজনীতি এখন যেন উল্টো পথে হাঁটছে। সবচেয়ে আজব ঘটনা হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ আনছেন! সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনছেন। খুব সামান্য, সিধেসাদা ব্যাপার নিয়েও তাঁরা নাকি রাজনীতি করতে মাঠে নেমে পড়ছেন এবং তর্জনী তুলে একে অপরকে ‘রাজনীতি করবেন না’ বলে হুংকার ছাড়ছেন। বেশ! বুঝলাম, রাজনীতি করা ভালো কিছু নয়, অন্তত তা বক্তার অনুমোদনযোগ্য নয়। রাজনীতি তো করেন না, তা হলে বক্তা-মন্ত্রী করেনটা কী! তিনি কি তাহলে রাজনীতির লোক নন?
ত্রৈলোক্যনাথ নেই বটে, তবে গল্পের গরু শুধু গাছেই নয়, সে এখন আকাশেও চরছে! আমজনতাও ‘কুম্ভীর বিভ্রাট’ গল্পের মতো হাঁ করে তা দেখছে। পেটে খিদে চাপা থাক, ঘরে বেকার বসে থাক, শিক্ষা শিকেয় তোলা থাক, দূষণ পৃথিবীর মাথা খাক, ফুটপাত চুরি যাক, মানুষ পাখির মতো পরিযায়ী হোক; এসব নিয়ে ভাবতে গেলে চলে না, এতে তো আর রাজনীতির ‘টিআরপি’ বাড়ে না। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ত থাকতে হয় তদবির, গালি, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমানি, না জানি আরও কত মানি-আনি নিয়ে।
রাজনীতিতে এখন বক্তৃতাবাজি আছে, আত্মপ্রশংসা, আত্মপ্রচার আছে, চটকদারি কথার ফুলঝুরি আছে। আছে ধর্ম, ধর্ম অবমাননা, ফেসবুক, ট্রোল, ফিতাকাটা, দড়ি, বাঁশ। কিছু নেতাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি, দড়ি টানাটানি আছে। আছে দলবদল, ভোলবদল, শিবিরবদল, সুরবদল, পালাবদল, মালাবদল। সোনার বাংলা, কেচ্ছা-কাহিনি, গালাগাল থেকে আন্দোলন, আস্ফালন, রঙ্গমঞ্চে সবই আছে। শুধু মানুষই গায়েব। মানুষ যেন পাখা গজানো পিপীলিকা মাত্র, আলোর লোভে স্রেফ আগুনে পুড়ছে! পুড়েই চলেছে। তা পুড়ুক, সবকিছু চাপা দেওয়ার জন্য ধামা আছে, আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আছে।
রাজনীতিতে এখন উপসর্গ-অনুসর্গহীন ঠিক অথবা বেঠিক, ন্যায় অথবা অন্যায় বলে কিছু হয় না। এখন একটা খুনের উত্তর আগের দুটো খুন, শ্লীলতাহানির উত্তর ধর্ষণ, ব্ল্যাকমানির উত্তর আরও ব্ল্যাকমানি, এদের আঁতলামির উত্তর ওদের ফাজলামি।
রাজনীতি এখন নীতির আলোকে জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা নয়! রাজনীতি মানে এখন নেতিবাচক অর্থে লাফালাফি করে চমক এবং ধমকের মহড়া। একই উন্নয়নসংগীত গেয়ে গেয়ে সবার মগজধোলাইয়ের চেষ্টা। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘দলীয় সংগীত’। যে সংগীত গাইলে দল খুশি হয়, সবাই সেই সংগীতই গায়। মোসাহেবি, চাটুকারিতা এখন জননীতি। রাজনীতির এই ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুবড়িতে মজে জনতা। টেক নিউজ, ফেক নিউজে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। আগে সবাই বলত, সত্যের উল্টো দিকে মিথ্যে থাকে। ইদানীং মাঝখানে অর্ধসত্য নামে বিস্ময়কর এক বিষয় এসে বিস্তর হট্টগোল বাধাচ্ছে। নৈতিকতাবাদ এবং বাস্তবতাবাদ পুরোপুরিই বাদ। শুধু রাজনীতি বললে এখন কিছু বুঝে ওঠা মুশকিল, তার সঙ্গে পলিটিকস শব্দটা লাগাতে হয়।
রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে গিয়েই কি তবে এমন সর্বনাশ ঘটল? রাজনীতি কি তার অর্থের মানবদল এবং ভোলবদল সেরে রাজপথ ছেড়ে গলিপথের অন্ধকারে পথ হারাল? নাকি বহতা নদীর মতো রাজনীতিও দুটি তীর নিয়ে চলছে, এপার ভেঙে ওপার গড়ছে? রাজনীতি কি তার রাজসিংহাসন, নীতিনৈতিকতা ভেঙে ভেঙে হিংসা, অবিশ্বাস, ষড়যন্ত্রের পলি জমিয়ে অন্য পাড়ে সমভূমি গড়ছে? নাকি রাজনীতিতে পুরোপুরিই পলিটিকসে গায়েব হয়ে গেল?
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
রাজনীতি। আকারে একটি ছোট শব্দ। তবে আজকের সমাজব্যবস্থায় শব্দটি সর্বাধিক শক্তির আধার। কারণ, গোটা পৃথিবী রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। একেক রাষ্ট্রের পরিচালনব্যবস্থা একেক রকম হলেও তাদের মূল ভিত্তি রাজনীতি। রাষ্ট্র শাসন বা পরিচালনার নীতির নামই হলো রাজনীতি—ইংরেজিতে পলিটিকস। প্রাচীন রাজতন্ত্রের দিক থেকে রাজনীতি হলো রাজার নীতি। অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে রাজা তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। রাজার কাজ হলো দেশের সবার জন্য সুখ-শান্তি এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা। সেই অর্থে রাজনীতি হলো নীতিরও রাজা।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ মনুসংহিতায় সাম দান ভেদ দণ্ড—রাজ্যশাসনের এই চারটি উপায় বা নীতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীকালে পণ্ডিত চাণক্যও এই চারটি নীতির উল্লেখ করেন। রাজনীতির পাঠে ‘সাম’ এমন একটি উপায়, যাতে শত্রুকে বশীভূত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তোষণ এবং সন্ধিস্থাপনের কৌশল গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ‘দান’ কথার অর্থ কোনো দামি জিনিস বা স্বার্থের স্বত্ব ত্যাগ।
এটিরও চূড়ান্ত লক্ষ্য শত্রুকে বশীভূত করা। রাজনীতিতে ‘ভেদ’ কথাটি বিভেদ সৃষ্টির একটি পন্থা বা ভেদনীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চতুর্বিধ উপায়ের সর্বশেষটি হলো ‘দণ্ড’। এই শব্দটির তাৎপর্যগত অর্থ হলো ন্যায়দণ্ড। অর্থাৎ রাজা বা শাসক দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালনে ব্রতী থাকবেন। খেয়াল করে দেখুন, প্রথমোক্ত তিনটি উপায়ের ভেতরে কিছু কূটকৌশল অবশ্যই আছে, কিন্তু শেষোক্ত উপায়ে সেসব কেমন যেন নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ রাজনীতিক বা শাসককে শেষ বিচারে ন্যায়দণ্ডটাই হাতে ধরে রাখতে হবে। তার মানে, কোনো অন্যায় শাসক নিজে করবেন না, অন্যে সেটা করার চেষ্টা করলে তিনি রুখবেন এবং তাঁর অজান্তে কোনো অন্যায় ঘটে গেলে দোষীর জন্য যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা তিনি করবেন। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রনীতির এই যে চতুর্বিধ উপায়ের কথা বলা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি তার সুবিধা অনুযায়ী নীতিগুলোকে আশ্রয় করে। যেমন, ভেদনীতিতেই তার সর্বাধিক আগ্রহ। বাকি তিনটি উপায়ের মধ্যে ন্যায়দণ্ড ছুঁয়ে দেখতেও যেন আলস্য তার। অন্য দুটির প্রয়োগেও ভীষণ একচক্ষু বা নিতান্তই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়।
উল্লেখ্য, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আর এককভাবে ‘রাজনীতি’ অর্থ বহন করে না। নানা ধরনের নেতিবাচক শব্দ সংযোজিত হয়েছে ‘পলিটিকস’-এর সঙ্গে। ‘পলিটিকস’ বলতে মানুষ বোঝে ‘ষড়যন্ত্র’, ‘কুটিলতা’, ‘কারসাজি’, ‘প্রতারণা’, ‘কপটতা’ ইত্যাদি। কেউ কেউ আবার পলিটিকসকে ‘পলিট্রিকস’ বলে থাকেন (‘পলি’ অর্থ বহুমুখী, আর ‘ট্রিকস’ মানে কারসাজি। অর্থাৎ বহুমুখী কারসাজিই হচ্ছে পলিট্রিকস)।
অনেকেই রসিকতা করে বলেন, রাজনীতির মধ্যে পলিটিকস ঢুকে গেছে। আর গ্রামের লোকজন যাবতীয় নেতিবাচক বিষয়কে বলেন ‘পলিটিকস’। অথচ রাজনীতিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত অ্যারিস্টটল ‘পলিটিকস’ অর্থাৎ রাজনীতিকে সত্য, সুন্দর ও নৈতিকতার বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য পরে প্রাচ্যের কৌটিল্য (খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী) এবং পাশ্চাত্যের ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) রাজনীতি থেকে নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দেন। রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য সব ধরনের ধূর্ততা, হিংস্রতা, অপকৌশল ও বিশ্বাসঘাতকতাকে তারা যুক্তিযুক্ত বলে মতামত দেন। আজ বাংলাদেশে কৌটিল্য—ম্যাকিয়াভেলি বর্ণিত রাজনীতিরই যেন মহড়া চলছে।
যাহোক, ‘পলিটিকস’ শব্দটি আমাদের সমাজে অনেক বেশি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি ও সমাজে নীতি-আদর্শের বিচ্যুতির ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিটিকস শব্দটির প্রয়োগ করা হয়। যেমন, কেউ কোথাও ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করলে বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস চলবে না।’ কেউ দুটি পক্ষের মধ্যে উসকানি দিলে, চালবাজি করলে সে ক্ষেত্রেও বলা হয়: ‘এখানে পলিটিকস করতে হলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব’ ইত্যাদি।
এখন আমাদের দেশে পলিটিকস মানে নোংরামি, ষড়যন্ত্র আর কপটতা। পলিটিকস যাঁরা করেন, সেই রাজনীতিবিদদের প্রতিও মানুষের আর তেমন আস্থা নেই। তাঁদের নিয়ে সবাই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন। এক মহাজন বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদেরা বিশ্বের সব জায়গায় একই রকম। তাঁরা আপনাকে বিশাল সেতু বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন, যেখানে হয়তোবা কোনো নদীই নেই’ অর্থাৎ নদী ছাড়াই রাজনীতিবিদেরা আপনাকে বড় বড় সেতু বানিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তাঁরা সব সময় জনগণকে বোকা বানিয়ে রাখতে চান। আসলে একালে ‘রাজনীতি’ শব্দটির যেন অর্থবিপর্যয় ঘটে গেছে। এখন শাসক বা ‘রাজার নীতি’ই হচ্ছে রাজনীতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই। নীতিহীনতারই অন্য নাম হয়ে গেছে রাজনীতি। অথচ রাজনীতির প্রকৃত অর্থ হলো ‘নীতির রাজা’। নীতি মানে ন্যায়। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে যা, তা-ই রাজনীতি।
সেই প্রথাগত রাজনীতি এখন যেন উল্টো পথে হাঁটছে। সবচেয়ে আজব ঘটনা হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে ‘রাজনীতি’ করার অভিযোগ আনছেন! সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ আনছেন। খুব সামান্য, সিধেসাদা ব্যাপার নিয়েও তাঁরা নাকি রাজনীতি করতে মাঠে নেমে পড়ছেন এবং তর্জনী তুলে একে অপরকে ‘রাজনীতি করবেন না’ বলে হুংকার ছাড়ছেন। বেশ! বুঝলাম, রাজনীতি করা ভালো কিছু নয়, অন্তত তা বক্তার অনুমোদনযোগ্য নয়। রাজনীতি তো করেন না, তা হলে বক্তা-মন্ত্রী করেনটা কী! তিনি কি তাহলে রাজনীতির লোক নন?
ত্রৈলোক্যনাথ নেই বটে, তবে গল্পের গরু শুধু গাছেই নয়, সে এখন আকাশেও চরছে! আমজনতাও ‘কুম্ভীর বিভ্রাট’ গল্পের মতো হাঁ করে তা দেখছে। পেটে খিদে চাপা থাক, ঘরে বেকার বসে থাক, শিক্ষা শিকেয় তোলা থাক, দূষণ পৃথিবীর মাথা খাক, ফুটপাত চুরি যাক, মানুষ পাখির মতো পরিযায়ী হোক; এসব নিয়ে ভাবতে গেলে চলে না, এতে তো আর রাজনীতির ‘টিআরপি’ বাড়ে না। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ত থাকতে হয় তদবির, গালি, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমানি, না জানি আরও কত মানি-আনি নিয়ে।
রাজনীতিতে এখন বক্তৃতাবাজি আছে, আত্মপ্রশংসা, আত্মপ্রচার আছে, চটকদারি কথার ফুলঝুরি আছে। আছে ধর্ম, ধর্ম অবমাননা, ফেসবুক, ট্রোল, ফিতাকাটা, দড়ি, বাঁশ। কিছু নেতাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি, দড়ি টানাটানি আছে। আছে দলবদল, ভোলবদল, শিবিরবদল, সুরবদল, পালাবদল, মালাবদল। সোনার বাংলা, কেচ্ছা-কাহিনি, গালাগাল থেকে আন্দোলন, আস্ফালন, রঙ্গমঞ্চে সবই আছে। শুধু মানুষই গায়েব। মানুষ যেন পাখা গজানো পিপীলিকা মাত্র, আলোর লোভে স্রেফ আগুনে পুড়ছে! পুড়েই চলেছে। তা পুড়ুক, সবকিছু চাপা দেওয়ার জন্য ধামা আছে, আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আছে।
রাজনীতিতে এখন উপসর্গ-অনুসর্গহীন ঠিক অথবা বেঠিক, ন্যায় অথবা অন্যায় বলে কিছু হয় না। এখন একটা খুনের উত্তর আগের দুটো খুন, শ্লীলতাহানির উত্তর ধর্ষণ, ব্ল্যাকমানির উত্তর আরও ব্ল্যাকমানি, এদের আঁতলামির উত্তর ওদের ফাজলামি।
রাজনীতি এখন নীতির আলোকে জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা নয়! রাজনীতি মানে এখন নেতিবাচক অর্থে লাফালাফি করে চমক এবং ধমকের মহড়া। একই উন্নয়নসংগীত গেয়ে গেয়ে সবার মগজধোলাইয়ের চেষ্টা। এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘দলীয় সংগীত’। যে সংগীত গাইলে দল খুশি হয়, সবাই সেই সংগীতই গায়। মোসাহেবি, চাটুকারিতা এখন জননীতি। রাজনীতির এই ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের তুবড়িতে মজে জনতা। টেক নিউজ, ফেক নিউজে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। আগে সবাই বলত, সত্যের উল্টো দিকে মিথ্যে থাকে। ইদানীং মাঝখানে অর্ধসত্য নামে বিস্ময়কর এক বিষয় এসে বিস্তর হট্টগোল বাধাচ্ছে। নৈতিকতাবাদ এবং বাস্তবতাবাদ পুরোপুরিই বাদ। শুধু রাজনীতি বললে এখন কিছু বুঝে ওঠা মুশকিল, তার সঙ্গে পলিটিকস শব্দটা লাগাতে হয়।
রাজনীতিতে পলিটিকস ঢুকে গিয়েই কি তবে এমন সর্বনাশ ঘটল? রাজনীতি কি তার অর্থের মানবদল এবং ভোলবদল সেরে রাজপথ ছেড়ে গলিপথের অন্ধকারে পথ হারাল? নাকি বহতা নদীর মতো রাজনীতিও দুটি তীর নিয়ে চলছে, এপার ভেঙে ওপার গড়ছে? রাজনীতি কি তার রাজসিংহাসন, নীতিনৈতিকতা ভেঙে ভেঙে হিংসা, অবিশ্বাস, ষড়যন্ত্রের পলি জমিয়ে অন্য পাড়ে সমভূমি গড়ছে? নাকি রাজনীতিতে পুরোপুরিই পলিটিকসে গায়েব হয়ে গেল?
চিররঞ্জন সরকার, গবেষক ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
২৫ ডিসেম্বর ২০২১
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
২৫ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
২৫ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজার মাথায় যারা কাঁঠাল ভেঙে খায়, সেই সংখ্যালঘু শোষকগোষ্ঠীর শাসক হয়ে থাকার ও অবাধ্য প্রজাকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে রাখার কলাকৌশলেরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। এর সঙ্গে ন্যায়নীতির কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
২৫ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫