Ajker Patrika

পুতিনের ইউক্রেন অভিযান কি জানুয়ারিতেই

রাজিউল হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৪৮
পুতিনের ইউক্রেন অভিযান কি জানুয়ারিতেই

২০১৪ সালে বিশ্বকে বাকরুদ্ধ করে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল রাশিয়া। ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ডটি দখলে নিতে রুশ বাহিনীর সময় লেগেছিল মাত্র ১ মাস ৬ দিন। এর পর পেরিয়ে গেছে সাত বছর। রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে কখনো উত্তেজনা বেড়েছে, কখনো কমেছে। তবে এবার যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার সঙ্গে কেবল ২০১৪ সালেরই তুলনা চলে। যদিও ওই সময় ইউক্রেন ছিল উত্তাল, দেশটির রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ সবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এবার ইউক্রেনের ভেতরে তেমন পরিস্থিতি না থাকলেও টান টান উত্তেজনা চারদিকে। ইউক্রেনবাসী ও পশ্চিমা বিশ্বের মনে আতঙ্ক, এই বুঝি গর্জে উঠল ট্যাংক, বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা।

রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে এরই মধ্যে লাখো সেনার সমাবেশ ঘটিয়েছে মস্কো। ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ সামরিক সব সরঞ্জামই মোতায়েন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আরও সেনা, সামরিক সরঞ্জাম পথে রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথার লড়াই তুঙ্গে। এর মধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কিছু ‘অসম্ভব’ দাবিনামা পেশ করেছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জেগেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কি তাহলে ইউক্রেনে আরেকটি অভিযান চালাবেন? কবে শুরু হতে পারে এই অভিযান? ইউক্রেন আক্রমণ করে তাঁর লাভ কী? ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের কারণই-বা কী?

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে রাশিয়া কী দাবি জানিয়েছে। রাশিয়া গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোকে ওই দাবির খসড়া পাঠিয়েছে। গত শুক্রবার তা প্রকাশ হয়েছে। এর থেকে জানা গেছে, ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন বন্ধের এবং প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে মস্কো। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান এমন অঞ্চলে পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে রাশিয়া, যেখান থেকে একে অপরের ওপর সরাসরি আক্রমণ করা যায়। একই সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের ইতিহাস
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকটের কারণ খুঁজতে হলে ১ হাজার ২০০ বছর আগে যেতে হবে। ইতিহাসবিদদের তথ্যমতে, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় ডনিপার নদীর তীরে নবম শতকে গড়ে ওঠে কিয়েভান রাস নামের একটি পরাশক্তি। মধ্যযুগের এই পরাশক্তি এক সময় ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করত। ১৩ শতকে মোঙ্গলদের অভিযানে এই সাম্রাজ্যের পতনের পর জন্ম হয় ইউক্রেন, রাশিয়া ও বেলারুশের। তবে ১৭ শতকের মাঝামাঝি ইউক্রেন আবার রাশিয়ার মধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করে। রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের জন্ম ১৯১৮ সালে। তবে এর চার বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্মের মাধ্যমে আবারও এক হয় ইউক্রেন-রাশিয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর দুই রাষ্ট্র আবারও আলাদা হয়।

তবে ইতিহাস, ভূরাজনীতি, ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের অনেক মিল থাকায় তারা আলাদা হয়েও কখনো সেভাবে আলাদা থাকতে পারেনি। ইউক্রেনের বাসিন্দাদের অনেকেরই ভাষা রুশ। দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ এই ভাষায় কথা বলে। যদিও ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় ভাষা ইউক্রেনীয়। দেশটিতে এই ভাষায় কথা বলে প্রায় ৬৮ শতাংশ।

সংকটের রাজনৈতিক কারণ
ইউক্রেন সংকটের পেছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির অভিলাষ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্কের সূত্রপাত ১৯৯৪ সালে। ২০০৮ সালে দেশটি ন্যাটোর সদস্য হতে আবেদন করে। বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি রাশিয়া। ২০১০ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মস্কোপন্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। এর পর ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার পথ থমকে যায়। বিক্ষোভের মুখে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশত্যাগ করেন ইয়ানুকোভিচ। এর পরপরই ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয় রাশিয়া। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিতে থাকে রুশ বাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় গত সাত বছর ধরে সেখানে সংঘাত চলছে।

পরবর্তীতে ইউক্রেন আবার ন্যাটোভুক্ত হতে সচেষ্ট হয়। গত জুনে ব্রাসেলস সম্মেলনে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করতে আবারও সম্মত হন পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা। এরপরই শুরু হয় রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা এবং পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে কথার যুদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের নারাজি বিবেচনার বিষয়বস্তু নয়।

এই সংকটের পেছনে ন্যাটোর সম্প্রসারণই একমাত্র কারণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অব ওয়ারের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, রাশিয়া এবার হয়তো ইউক্রেনের কাছ থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ডনেটস্ক এলাকা ছিনিয়ে নিতে পারে। এই এলাকা দখলে নিলেই রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়া স্থলপথে যুক্ত হয়ে যাবে। পাশাপাশি নর্থ-ক্রিমিয়া ক্যানেল নিয়ন্ত্রণে নিতে হলে রাশিয়াকে ক্রিমিয়ার উত্তরে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত খেরসন অঞ্চলও নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে। 

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রাশিয়ায় পুতিনের জনপ্রিয়তা এখন নিম্নগামী। ২০১৪ সালেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার পর পুতিনের জনপ্রিয়তা এক লাফে ৯০ শতাংশে উঠে যায় তখন। এ ছাড়া পুতিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চান। এর আগেও ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করেছেন তিনি। গত বসন্তের ঘটনাই এর সর্বশেষ উদাহরণ। ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করল রাশিয়া। জুনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের প্রথম সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর পর গত ৭ ডিসেম্বর দুই ঘণ্টাব্যাপী দুই নেতা ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক। গত ৭ নভেম্বর রাশিয়ার সোচিতেপুতিন বাইডেনকে আবারও সামনে চান। গত সপ্তাহে রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে পুতিনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের (পুতিন ও বাইডেন) আবারও সাক্ষাৎ হবে নিশ্চিত। আমি চাই সেটা।’

এ ছাড়া রাশিয়া কখনোই ইউক্রেনকে আলাদা করে দেখেনি। এটিও সংকটের একটি বড় কারণ। তার ওপর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুনরুজ্জীবিত করার স্বপ্নে বিভোর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন সম্প্রতি এক প্রামাণ্যচিত্রে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর দুর্দশা নিয়ে কথা বলেছেন। এর আগে গত জুলাইয়ে ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক দীর্ঘ নিবন্ধে তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দুই দেশের জনগোষ্ঠীকে ‘এক জাতি’ হিসেবে মন্তব্য করেন।

সংকটের অর্থনৈতিক কারণ
পুতিন বরাবরই রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিটিতে (ইএসিএ) ইউক্রেনকে চেয়েছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কয়েকটি রাষ্ট্রকে নিয়ে মস্কোর নেতৃত্বাধীন এই মুক্তবাণিজ্য জোটের যাত্রা শুরু ২০০০ সালে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম ধাপ এটি।

প্রায় সাড়ে চার কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ ইউক্রেনের রয়েছে ব্যাপক কৃষি ও শিল্প উৎপাদন। রাশিয়া স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রকে নিজের মুক্তবাণিজ্য জোটে চায়। কিন্তু কিয়েভ বারবারই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

কিয়েভভিত্তিক বিশ্লেষক আলেক্সে কুশচ অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী পল ক্রুগম্যানের তত্ত্বের উল্লেখ করে বলেন, স্বনির্ভর পর্যাপ্ত সরবরাহের বাজার গড়তে হলে ২৫ কোটির জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কাজেই রাশিয়ার ওই মুক্তবাণিজ্য জোটে ইউক্রেন ও উজবেকিস্তানকে (সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যা) প্রয়োজন। এ কারণেই এই দুই দেশকে ঘিরে এমন ভূরাজনৈতিক যুদ্ধ চলছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে শত শত ট্যাংক, স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে রাশিয়া। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, এরই মধ্যে ওই সীমান্তে ১ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়ে গেছে। জানুয়ারির শেষ নাগাদ সেখানে ১ লাখ ৭৫ হাজারের মতো সেনা মোতায়েন করা হতে পারে। 

গত বসন্তেও ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী সমরাস্ত্রসহ ১ লাখ ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের আগে-পরে কিছু সেনা অবশ্য প্রত্যাহার করা হয়। তবে সিংহভাগই থেকে যায় সীমান্তে। 

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কনরাড মুজিকার বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, ইউক্রেন সীমান্তে থেকে যাওয়া সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের সিংহভাগই রুশ সেনাবাহিনীর ৪১তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মির। সেনাবাহিনীর এই ইউনিটের সদর দপ্তর ওই সীমান্ত থেকে ২ হাজার মাইল দূরে নভসিবিরস্ক এলাকায়। এই ইউনিটের কিছু সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম সম্প্রতি বেলারুশ সীমান্তের কাছে স্মোলেনস্ক শহরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এদিকে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও রকেট আর্টিলারিসহ প্রথম গার্ডস ট্যাংক আর্মির একাংশ স্থানান্তর করা হয়েছে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পগোনভ প্রশিক্ষণ এলাকায়। সম্প্রতি ৪৯ তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মি ক্রিমিয়ার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। 

কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ক্রিমিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি ৫৮তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মির সামরিক সরঞ্জাম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া অষ্টম ও ২০তম কম্বাইন্ড আর্মস আর্মির বেশ কিছু ইউনিটও ইউক্রেন সীমান্তের কাছে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ইউক্রেনের ডনেটস্ক ও লুহানস্ক এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে হাজারো রুশ সেনা মিশে আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কবে এবং কেমন হতে পারে রুশ হামলা
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তাঁরা এখনই ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের আশঙ্কা করছেন না। কারণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা বিষয় ইউক্রেন সংকটের সঙ্গে জড়িত। তবে সবকিছু গাণিতিক হিসাবে হয় না। অন্তত পশ্চিমা দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য তো বলছে, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এমনকি নতুন বছরের গোড়াতেই, অর্থাৎ জানুয়ারি পার হওয়ার আগেই আরেকটি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের সাক্ষী হতে পারে বিশ্ব। 

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকফও সম্প্রতি বলেছেন, পরিস্থিতি বলছে, জানুয়ারির শেষ নাগাদ রাশিয়ার যুদ্ধপ্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্যও একই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বলেছেন, পুতিন এমনভাবে সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সীমান্তে স্থাপন করছেন, যেন ঝটিকা অভিযান চালিয়েই উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়।

বিবিসি জানায়, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকফ সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, এখনই আলোচনা শুরু না হলে পরিস্থিতি হয়তো ১৯৬২ সালের কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের দিকেই নিয়ে যাবে সব পক্ষকে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক যুদ্ধে প্রায় জড়িয়েই গিয়েছিল। 

এর আগে ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে রাশিয়ার ফেডারেশন কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ভ্লাদিমির জাবারফ বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এখন রুশ পাসপোর্টধারী ৫ লাখ ইউক্রেনীয় রয়েছেন। বিদ্রোহী নেতারা যদি সহযোগিতা চান, আমাদের পক্ষে তা উপেক্ষা করা কঠিন হবে।’

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর মহড়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অজ্ঞাত জায়গায় এই মহড়ার ছবি গত ১৭ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়কেমন হবে রুশ হামলা
গার্ডিয়ান জানায়, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা গত নভেম্বরে একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। এর থেকে জানা গেছে, পূর্ব দিক থেকে রুশ সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করছে। ক্রিমিয়া থেকেও মাঝেমধ্যে আক্রমণ দাগাচ্ছে তারা। এ ক্ষেত্রে ট্রান্সনিস্ত্রিয়ায় অবস্থানরত রুশ সেনারা এই আক্রমণে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া বেলারুশ থেকেও রুশ সেনারা ইউক্রেনে প্রবেশ করছে।

ট্রান্সনিস্ত্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে মলডোভার অংশ হলেও ছোট্ট ভূখণ্ডটি মলডোভার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ইউক্রেনের যে পাশে রাশিয়া, ঠিক তার উল্টো পাশে মলডোভার অবস্থান। এর পর রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, বেলারুশ ও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্ত। ইউক্রেনের বাকি সীমান্তজুড়ে কৃষ্ণ সাগর। 

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা শাখার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিরিলো বুদানফ চলতি মাসের গোড়ার দিকে বলেছেন, রাশিয়া যদি পুরোদমে আক্রমণ করে বসে, তা ঠেকানোর সামর্থ্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর নেই।

পশ্চিমাদের মনোভাব
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দাবিনামা প্রকাশের পর গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘ইউরোপীয় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আমরা গত ২০ বছর ধরেই আলোচনা করছি। কখনো এ আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, কখনো আলোচনা আটকে গেছে। তবে আমরা আলোচনার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত।’ 

তবে এর আগে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, ‘আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের বাদ রেখে কোনো আলোচনা হবে না।’

এর আগে ইউক্রেন ইস্যুতে বড় অর্থনীতির সাত দেশের জোট জি-৭ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। দেশগুলোর নেতারা বলেছিলেন, ইউক্রেন আক্রমণ করলে রাশিয়াকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

তবে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি আর দাবিনামা পেশের পর পশ্চিমাদের মনোভাবে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বিবিসি গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্র দেশগুলো সেনা না পাঠানোর সম্ভাবনাই বেশি। স্পেক্টেটর সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘ইউক্রেন ন্যাটো সদস্য নয়। কাজেই রাশিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে ইউক্রেনে কেউ সেনা পাঠাবে বলে মনে হয় না। এ কারণেই আমরা কূটনৈতিকভাবে পুতিনকে বলার চেষ্টা করছি, এ কাজ (ইউক্রেন আক্রমণ) করবেন না।’ 

বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়, রাশিয়ার দাবিদাওয়ার খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো স্বাক্ষর করবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। মস্কোও খুব ভালো করে জানে, তারা যা দাবি করেছে, তা পশ্চিমারা পূরণ করবে না। হতে পারে এই দাবি আসলে আলোচনারই একটি কৌশল। পুতিন হয়তো রুশ জনগণকে বোঝাতে চাইছেন, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যকার উত্তেজনা মস্কোর দোষে নয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএনএর রাশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কফম্যান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কোথাও বড় একটা সমস্যা আছে। রাজনৈতিক দিকটা ধোঁয়াশাপূর্ণ।’ লন্ডনের কিংস কলেজের রুশ রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক স্যাম গ্রিনের মতে, রাশিয়ার দাবি আসলে কোনো চুক্তি সম্পাদনের জন্য নয়। এটি এক ধরনের ঘোষণাই। তবে তা যে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য, তাও নয়। হয়তো ওয়াশিংটন ও অন্যদের আতঙ্কে রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ডনেটস্ক ও লুহানস্ক এখন রাশিয়ার লক্ষ্যআক্রমণ করলে রাশিয়ার পরিণতি কী হবে
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমে এসেছিল রাশিয়ার ওপর। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে এই নিষেধাজ্ঞার চেয়েও রাশিয়ার বড় মাথাব্যথা নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপলাইন। বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানিতে রাশিয়ার গ্যাস পৌঁছানোর কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইউক্রেনের ওপর দিয়ে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে না রাশিয়াকে। ফলে ইউক্রেনের ওপর সামরিক চাপ আরও বাড়াতে পারবে রাশিয়া। এ কারণেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছে ইউক্রেন।

এদিকে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোও হুমকি দিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে নর্ড স্ট্রিম-২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের কথা মস্কোকে ভুলে যেতে হবে।

সংকটের সমাধান কী
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব নয়। ন্যাটো বেশ আগে থেকেই বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া এবং পোল্যান্ডের মতো ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্র ও ন্যাটোর সদস্যগুলোকে সহযোগিতা করে আসছে।

অনেকেই মনে করছেন, ইউক্রেন ও জর্জিয়াকে একই সূত্রে গাঁথলে রাশিয়া আগ্রাসন চালানোর পথ থেকে সরে আসবে। কিন্তু আদতে তা হবে না। কারণ এই রাষ্ট্রগুলোর ব্যাপারে রাশিয়ার অবস্থান সব সময়ই স্পর্শকাতর। এই দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ইতিহাস, জনগণ, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কাজেই ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে কিছুতেই যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব নয়।

ন্যাটোর পরিসর বৃদ্ধিও কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়। কাজেই ইউক্রেন, জর্জিয়া এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়েই আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আলোচনা এমনভাবে চালাতে হবে যেন, রাশিয়াও ওই রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে একমত হয়। এ ক্ষেত্রে কেবল পুতিন-বাইডেন নয়, তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর নেতাদেরও আলোচনায় বসতে হবে। সেই আলোচনা থেকে একেবারেই নতুন, বড় ও অপেক্ষাকৃত ভালো কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, যা সব পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক হবে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত