জাহীদ রেজা নূর

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই রয়ে গেল অমীমাংসিত।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়েও সে রকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।
দুই. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে যে উত্তরটি সাধারণত পাওয়া যায়, তা হলো–পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থানরত বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন সময় তাঁদের হত্যা করা হয়।
এ ভাবনাটি অজ্ঞতার ফসল। ১৪ ডিসেম্বর যে একটি প্রতীকী তারিখ, সেটা অনেকেই জানেন না। এর আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। তবে হ্যাঁ, ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করা হয় বলে দিবস হিসেবে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নৃশংসতার পটভূমি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বুদ্ধিজীবী দিবসের গুরুত্ব বোঝা যাবে না। মনে হবে, হঠাৎ করে বেছে বেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শুধুই ১৪ ডিসেম্বরে। এটা যে সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধির ফসল, সেটা তাতে ঢাকা পড়ে যায়।
তিন. একাত্তরের নয় মাস ধরেই বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলেছে। শুধু বাঙালি নয়, এই ভূখণ্ডে যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস, তারাও এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। মার্চ থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। সে সময় পাকিস্তানিরা নির্বিচারে মানুষ মেরেছে। কিন্তু জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টা ছিল অন্য রকম। এ সময়টিকে বলা হয় ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন। দেশে অবস্থানরত সাড়ে ছয় কোটি মানুষ সুযোগ পেলেই মুক্তিবাহিনীর জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ফলে আরও বেশি নৃশংস হয়ে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। ছোট কোনো সূত্র পেলেই তারা পাকড়াও করতে শুরু করে গ্রামবাসীকে, হত্যা করতে থাকে। তারা তাদের সহযোগী দালাল শান্তি কমিটি, রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ‘খোঁজ ও খতম’-এর পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজাকার সদস্যদের বেশির ভাগ ছিল অশিক্ষিত। কিন্তু ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে যে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরে, তারা ছিল শিক্ষিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত দালালেরা তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক সচিব রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করেন। এই তালিকায় দেশের অনেক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীর নাম ছিল। আলবদর সদস্যরা এই তালিকায় আরও অনেক নাম যুক্ত করে।
চার. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন যাঁরা, শুধু তাঁদের নাম এই তালিকায় ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগপর্যন্ত যাঁরা বিভিন্নভাবে জাতীয় আন্দোলনের রসদ জুগিয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন এই তালিকায়। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তালিকা। শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিকিৎসকসহ বহু পেশার মানুষকেই হত্যার তালিকায় রাখা হয়েছিল।
এ কারণেই দেখা যায়, ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল হানাদারদের অনেক যাচাই-বাছাইয়ের ফল, আলবদরদের মাধ্যমে তালিকাকে আরও সুচারু করায় ডিসেম্বরে তা হয়ে ওঠে বাঙালিকে মেধা ও মননশূন্য করার শক্তিশালী অস্ত্র। ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাঁরাই, যাঁরা বহুদিন ধরে দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, স্বাধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
পাঁচ. নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ তাদের ভয় বাড়িয়ে দেয়। রাজাকারদের মনেও ভয় এসে বাসা বাঁধে। ঢাকা শহরে ক্র্যাক প্লাটুনের হামলা এই ভয়কে আতঙ্কে পরিণত করে। এরপর ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে যে যৌথ বাহিনী গঠিত হলো, তার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকা আর চীনের সাহায্যের আশায় বসে থাকেন। এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেওয়া একের পর এক ভেটো পাকিস্তানকে নিঃস্ব করে তোলে। পাকিস্তান বুঝে যায়, এই ভূখণ্ডকে আর দখলে রাখা যাবে না।
তখনই পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার আর আলবদরদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়। তারা একের পর এক বৈঠক করে ঠিক করে, পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলবদররা থাকবে বুদ্ধিজীবীদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। ১০ ডিসেম্বর দিনের বেলায় রাও ফরমান আলী পিলখানায় গিয়ে কাদালেপা মাইক্রোবাসগুলো দেখে আসেন। সে রাতেই এই শকুনের দল বেরিয়ে পড়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নেই তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তারা প্রথম আসে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করতে, এরপর সৈয়দ নাজমুল হক আর আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে। পরদিন তারা অপহরণ করে নিজামুদ্দীন আহমদকে। এবং তার পরদিন ১৩ ডিসেম্বর অপহৃত হন সেলিনা পারভীন। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে, তাঁদের সবাই ছিলেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের প্রতি যে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রোশ ছিল, সেটা বোঝা যায় মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের সময়টিতেই। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও দ্য পিপলস পত্রিকায় গোলা ছুড়ে অফিসগুলো ভস্মীভূত করেছিল। তাই প্রাথমিক ক্রোধের শিকার হলেন সাংবাদিকেরা। শহীদুল্লা কায়সারও সাংবাদিক। তাঁকে অপহরণ করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষককে অপহরণ করা হয় এই দিনটিতেই। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রাশীদুল হাসান, আনোয়ার পাশাসহ অনেকেই এদিন অপহৃত হয়েছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর অপহৃত হন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি এবং আলীম চৌধুরী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপহৃত হন ড. আবুল কালাম আজাদ।
সব বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা গেল না। কিন্তু তাঁরা সবাই অকুতোভয়ে নিজ জাতি, স্বাধিকার আন্দোলন, জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এই দেশপ্রেমই ছিল পাকিস্তানি ও তাদের দালাল রাজাকার-আলবদরের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।
তালিকায় থাকা সবাইকে হয়তো খুঁজে পায়নি শ্বাপদেরা, কিন্তু যেটুকু ক্ষতি তারা করতে পেরেছিল, সেই শূন্যতা ছিল অসীম।
ছয়. এই নামগুলোর সঙ্গে শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ আরও অনেকের নাম যুক্ত হলে দেখা যাবে, এই মানুষগুলো দেশকে নিয়ে ভাবতেন। জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাঁদের ছিল অবদান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অংশ নিয়েছেন। শত্রু-পরিবেষ্টিত অবস্থায় সিরাজুদ্দীন হোসেন লিখেছেন ‘এত দিনে’ শিরোনামে সম্পাদকীয়, যাতে কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগকে যে কারণে দোষ দেওয়া হচ্ছে, সেই একই দোষে দুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, তা নিয়ে তিনি লিখছেন ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’; শহীদুল্লা কায়সার গোপনে লিখতে শুরু করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উপন্যাস ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’, আনোয়ার পাশা লিখেছেন ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। তাঁদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছে ছিল, দেশের ভেতরের ইতিহাসটি লিখবেন। এ জন্য তথ্যও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু তাঁদের বাঁচতে দেওয়া হলো না।
সাত. পাকিস্তানিরা ঠিক করেছিল, কাদের হত্যা করা হবে। যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, যাঁরা হিন্দু, যাঁরা আওয়ামী লীগকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের তালিকায়। অর্থাৎ পাকিস্তানিরা এই বঙ্গে পোড়ামাটি নীতিই নিয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তাতে যাঁরা শহীদ হন, তাঁদের প্রত্যেকেই হতে পারতেন জাতির দিকনির্দেশক।
বড় দুর্ভাগ্য আমাদের, তাঁদের সেই কীর্তির কথা তুলে আনার জন্য তেমন কোনো গবেষণা চোখে পড়ে না। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নিরর্থক প্রচারণার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল বুদ্ধিজীবীদের কাজগুলোর সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করানো। কেন তাঁরা অনন্য, সে তো তাঁদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশিত। সেটা প্রকাশ করলেই বরং সত্যিকার অর্থে তাঁদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। নইলে কয়েকটি অর্থহীন গালভরা বুলি দিয়ে যান্ত্রিকভাবে দিনটিকে স্মরণ করা চলতেই থাকবে। শুরুতে যে কাল্পনিক তরুণের কথা বলেছিলাম, তাঁকে তো প্রকৃত তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে অন্য সবকিছুর মতোই এ শুধু লোকদেখানো শোকে পরিণত হবে।
লেখক: জাহীদ রেজা নূর উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই রয়ে গেল অমীমাংসিত।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়েও সে রকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।
দুই. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে যে উত্তরটি সাধারণত পাওয়া যায়, তা হলো–পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থানরত বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন সময় তাঁদের হত্যা করা হয়।
এ ভাবনাটি অজ্ঞতার ফসল। ১৪ ডিসেম্বর যে একটি প্রতীকী তারিখ, সেটা অনেকেই জানেন না। এর আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। তবে হ্যাঁ, ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করা হয় বলে দিবস হিসেবে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নৃশংসতার পটভূমি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বুদ্ধিজীবী দিবসের গুরুত্ব বোঝা যাবে না। মনে হবে, হঠাৎ করে বেছে বেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শুধুই ১৪ ডিসেম্বরে। এটা যে সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধির ফসল, সেটা তাতে ঢাকা পড়ে যায়।
তিন. একাত্তরের নয় মাস ধরেই বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলেছে। শুধু বাঙালি নয়, এই ভূখণ্ডে যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস, তারাও এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। মার্চ থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। সে সময় পাকিস্তানিরা নির্বিচারে মানুষ মেরেছে। কিন্তু জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টা ছিল অন্য রকম। এ সময়টিকে বলা হয় ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন। দেশে অবস্থানরত সাড়ে ছয় কোটি মানুষ সুযোগ পেলেই মুক্তিবাহিনীর জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ফলে আরও বেশি নৃশংস হয়ে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। ছোট কোনো সূত্র পেলেই তারা পাকড়াও করতে শুরু করে গ্রামবাসীকে, হত্যা করতে থাকে। তারা তাদের সহযোগী দালাল শান্তি কমিটি, রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ‘খোঁজ ও খতম’-এর পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজাকার সদস্যদের বেশির ভাগ ছিল অশিক্ষিত। কিন্তু ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে যে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরে, তারা ছিল শিক্ষিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত দালালেরা তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক সচিব রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করেন। এই তালিকায় দেশের অনেক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীর নাম ছিল। আলবদর সদস্যরা এই তালিকায় আরও অনেক নাম যুক্ত করে।
চার. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন যাঁরা, শুধু তাঁদের নাম এই তালিকায় ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগপর্যন্ত যাঁরা বিভিন্নভাবে জাতীয় আন্দোলনের রসদ জুগিয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন এই তালিকায়। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তালিকা। শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিকিৎসকসহ বহু পেশার মানুষকেই হত্যার তালিকায় রাখা হয়েছিল।
এ কারণেই দেখা যায়, ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল হানাদারদের অনেক যাচাই-বাছাইয়ের ফল, আলবদরদের মাধ্যমে তালিকাকে আরও সুচারু করায় ডিসেম্বরে তা হয়ে ওঠে বাঙালিকে মেধা ও মননশূন্য করার শক্তিশালী অস্ত্র। ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাঁরাই, যাঁরা বহুদিন ধরে দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, স্বাধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
পাঁচ. নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ তাদের ভয় বাড়িয়ে দেয়। রাজাকারদের মনেও ভয় এসে বাসা বাঁধে। ঢাকা শহরে ক্র্যাক প্লাটুনের হামলা এই ভয়কে আতঙ্কে পরিণত করে। এরপর ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে যে যৌথ বাহিনী গঠিত হলো, তার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকা আর চীনের সাহায্যের আশায় বসে থাকেন। এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেওয়া একের পর এক ভেটো পাকিস্তানকে নিঃস্ব করে তোলে। পাকিস্তান বুঝে যায়, এই ভূখণ্ডকে আর দখলে রাখা যাবে না।
তখনই পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার আর আলবদরদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়। তারা একের পর এক বৈঠক করে ঠিক করে, পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলবদররা থাকবে বুদ্ধিজীবীদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। ১০ ডিসেম্বর দিনের বেলায় রাও ফরমান আলী পিলখানায় গিয়ে কাদালেপা মাইক্রোবাসগুলো দেখে আসেন। সে রাতেই এই শকুনের দল বেরিয়ে পড়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নেই তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তারা প্রথম আসে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করতে, এরপর সৈয়দ নাজমুল হক আর আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে। পরদিন তারা অপহরণ করে নিজামুদ্দীন আহমদকে। এবং তার পরদিন ১৩ ডিসেম্বর অপহৃত হন সেলিনা পারভীন। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে, তাঁদের সবাই ছিলেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের প্রতি যে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রোশ ছিল, সেটা বোঝা যায় মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের সময়টিতেই। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও দ্য পিপলস পত্রিকায় গোলা ছুড়ে অফিসগুলো ভস্মীভূত করেছিল। তাই প্রাথমিক ক্রোধের শিকার হলেন সাংবাদিকেরা। শহীদুল্লা কায়সারও সাংবাদিক। তাঁকে অপহরণ করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষককে অপহরণ করা হয় এই দিনটিতেই। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রাশীদুল হাসান, আনোয়ার পাশাসহ অনেকেই এদিন অপহৃত হয়েছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর অপহৃত হন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি এবং আলীম চৌধুরী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপহৃত হন ড. আবুল কালাম আজাদ।
সব বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা গেল না। কিন্তু তাঁরা সবাই অকুতোভয়ে নিজ জাতি, স্বাধিকার আন্দোলন, জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এই দেশপ্রেমই ছিল পাকিস্তানি ও তাদের দালাল রাজাকার-আলবদরের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।
তালিকায় থাকা সবাইকে হয়তো খুঁজে পায়নি শ্বাপদেরা, কিন্তু যেটুকু ক্ষতি তারা করতে পেরেছিল, সেই শূন্যতা ছিল অসীম।
ছয়. এই নামগুলোর সঙ্গে শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ আরও অনেকের নাম যুক্ত হলে দেখা যাবে, এই মানুষগুলো দেশকে নিয়ে ভাবতেন। জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাঁদের ছিল অবদান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অংশ নিয়েছেন। শত্রু-পরিবেষ্টিত অবস্থায় সিরাজুদ্দীন হোসেন লিখেছেন ‘এত দিনে’ শিরোনামে সম্পাদকীয়, যাতে কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগকে যে কারণে দোষ দেওয়া হচ্ছে, সেই একই দোষে দুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, তা নিয়ে তিনি লিখছেন ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’; শহীদুল্লা কায়সার গোপনে লিখতে শুরু করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উপন্যাস ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’, আনোয়ার পাশা লিখেছেন ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। তাঁদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছে ছিল, দেশের ভেতরের ইতিহাসটি লিখবেন। এ জন্য তথ্যও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু তাঁদের বাঁচতে দেওয়া হলো না।
সাত. পাকিস্তানিরা ঠিক করেছিল, কাদের হত্যা করা হবে। যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, যাঁরা হিন্দু, যাঁরা আওয়ামী লীগকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের তালিকায়। অর্থাৎ পাকিস্তানিরা এই বঙ্গে পোড়ামাটি নীতিই নিয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তাতে যাঁরা শহীদ হন, তাঁদের প্রত্যেকেই হতে পারতেন জাতির দিকনির্দেশক।
বড় দুর্ভাগ্য আমাদের, তাঁদের সেই কীর্তির কথা তুলে আনার জন্য তেমন কোনো গবেষণা চোখে পড়ে না। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নিরর্থক প্রচারণার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল বুদ্ধিজীবীদের কাজগুলোর সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করানো। কেন তাঁরা অনন্য, সে তো তাঁদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশিত। সেটা প্রকাশ করলেই বরং সত্যিকার অর্থে তাঁদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। নইলে কয়েকটি অর্থহীন গালভরা বুলি দিয়ে যান্ত্রিকভাবে দিনটিকে স্মরণ করা চলতেই থাকবে। শুরুতে যে কাল্পনিক তরুণের কথা বলেছিলাম, তাঁকে তো প্রকৃত তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে অন্য সবকিছুর মতোই এ শুধু লোকদেখানো শোকে পরিণত হবে।
লেখক: জাহীদ রেজা নূর উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই রয়ে গেল অমীমাংসিত।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়েও সে রকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।
দুই. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে যে উত্তরটি সাধারণত পাওয়া যায়, তা হলো–পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থানরত বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন সময় তাঁদের হত্যা করা হয়।
এ ভাবনাটি অজ্ঞতার ফসল। ১৪ ডিসেম্বর যে একটি প্রতীকী তারিখ, সেটা অনেকেই জানেন না। এর আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। তবে হ্যাঁ, ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করা হয় বলে দিবস হিসেবে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নৃশংসতার পটভূমি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বুদ্ধিজীবী দিবসের গুরুত্ব বোঝা যাবে না। মনে হবে, হঠাৎ করে বেছে বেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শুধুই ১৪ ডিসেম্বরে। এটা যে সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধির ফসল, সেটা তাতে ঢাকা পড়ে যায়।
তিন. একাত্তরের নয় মাস ধরেই বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলেছে। শুধু বাঙালি নয়, এই ভূখণ্ডে যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস, তারাও এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। মার্চ থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। সে সময় পাকিস্তানিরা নির্বিচারে মানুষ মেরেছে। কিন্তু জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টা ছিল অন্য রকম। এ সময়টিকে বলা হয় ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন। দেশে অবস্থানরত সাড়ে ছয় কোটি মানুষ সুযোগ পেলেই মুক্তিবাহিনীর জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ফলে আরও বেশি নৃশংস হয়ে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। ছোট কোনো সূত্র পেলেই তারা পাকড়াও করতে শুরু করে গ্রামবাসীকে, হত্যা করতে থাকে। তারা তাদের সহযোগী দালাল শান্তি কমিটি, রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ‘খোঁজ ও খতম’-এর পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজাকার সদস্যদের বেশির ভাগ ছিল অশিক্ষিত। কিন্তু ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে যে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরে, তারা ছিল শিক্ষিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত দালালেরা তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক সচিব রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করেন। এই তালিকায় দেশের অনেক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীর নাম ছিল। আলবদর সদস্যরা এই তালিকায় আরও অনেক নাম যুক্ত করে।
চার. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন যাঁরা, শুধু তাঁদের নাম এই তালিকায় ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগপর্যন্ত যাঁরা বিভিন্নভাবে জাতীয় আন্দোলনের রসদ জুগিয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন এই তালিকায়। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তালিকা। শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিকিৎসকসহ বহু পেশার মানুষকেই হত্যার তালিকায় রাখা হয়েছিল।
এ কারণেই দেখা যায়, ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল হানাদারদের অনেক যাচাই-বাছাইয়ের ফল, আলবদরদের মাধ্যমে তালিকাকে আরও সুচারু করায় ডিসেম্বরে তা হয়ে ওঠে বাঙালিকে মেধা ও মননশূন্য করার শক্তিশালী অস্ত্র। ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাঁরাই, যাঁরা বহুদিন ধরে দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, স্বাধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
পাঁচ. নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ তাদের ভয় বাড়িয়ে দেয়। রাজাকারদের মনেও ভয় এসে বাসা বাঁধে। ঢাকা শহরে ক্র্যাক প্লাটুনের হামলা এই ভয়কে আতঙ্কে পরিণত করে। এরপর ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে যে যৌথ বাহিনী গঠিত হলো, তার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকা আর চীনের সাহায্যের আশায় বসে থাকেন। এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেওয়া একের পর এক ভেটো পাকিস্তানকে নিঃস্ব করে তোলে। পাকিস্তান বুঝে যায়, এই ভূখণ্ডকে আর দখলে রাখা যাবে না।
তখনই পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার আর আলবদরদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়। তারা একের পর এক বৈঠক করে ঠিক করে, পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলবদররা থাকবে বুদ্ধিজীবীদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। ১০ ডিসেম্বর দিনের বেলায় রাও ফরমান আলী পিলখানায় গিয়ে কাদালেপা মাইক্রোবাসগুলো দেখে আসেন। সে রাতেই এই শকুনের দল বেরিয়ে পড়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নেই তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তারা প্রথম আসে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করতে, এরপর সৈয়দ নাজমুল হক আর আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে। পরদিন তারা অপহরণ করে নিজামুদ্দীন আহমদকে। এবং তার পরদিন ১৩ ডিসেম্বর অপহৃত হন সেলিনা পারভীন। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে, তাঁদের সবাই ছিলেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের প্রতি যে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রোশ ছিল, সেটা বোঝা যায় মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের সময়টিতেই। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও দ্য পিপলস পত্রিকায় গোলা ছুড়ে অফিসগুলো ভস্মীভূত করেছিল। তাই প্রাথমিক ক্রোধের শিকার হলেন সাংবাদিকেরা। শহীদুল্লা কায়সারও সাংবাদিক। তাঁকে অপহরণ করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষককে অপহরণ করা হয় এই দিনটিতেই। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রাশীদুল হাসান, আনোয়ার পাশাসহ অনেকেই এদিন অপহৃত হয়েছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর অপহৃত হন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি এবং আলীম চৌধুরী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপহৃত হন ড. আবুল কালাম আজাদ।
সব বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা গেল না। কিন্তু তাঁরা সবাই অকুতোভয়ে নিজ জাতি, স্বাধিকার আন্দোলন, জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এই দেশপ্রেমই ছিল পাকিস্তানি ও তাদের দালাল রাজাকার-আলবদরের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।
তালিকায় থাকা সবাইকে হয়তো খুঁজে পায়নি শ্বাপদেরা, কিন্তু যেটুকু ক্ষতি তারা করতে পেরেছিল, সেই শূন্যতা ছিল অসীম।
ছয়. এই নামগুলোর সঙ্গে শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ আরও অনেকের নাম যুক্ত হলে দেখা যাবে, এই মানুষগুলো দেশকে নিয়ে ভাবতেন। জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাঁদের ছিল অবদান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অংশ নিয়েছেন। শত্রু-পরিবেষ্টিত অবস্থায় সিরাজুদ্দীন হোসেন লিখেছেন ‘এত দিনে’ শিরোনামে সম্পাদকীয়, যাতে কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগকে যে কারণে দোষ দেওয়া হচ্ছে, সেই একই দোষে দুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, তা নিয়ে তিনি লিখছেন ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’; শহীদুল্লা কায়সার গোপনে লিখতে শুরু করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উপন্যাস ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’, আনোয়ার পাশা লিখেছেন ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। তাঁদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছে ছিল, দেশের ভেতরের ইতিহাসটি লিখবেন। এ জন্য তথ্যও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু তাঁদের বাঁচতে দেওয়া হলো না।
সাত. পাকিস্তানিরা ঠিক করেছিল, কাদের হত্যা করা হবে। যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, যাঁরা হিন্দু, যাঁরা আওয়ামী লীগকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের তালিকায়। অর্থাৎ পাকিস্তানিরা এই বঙ্গে পোড়ামাটি নীতিই নিয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তাতে যাঁরা শহীদ হন, তাঁদের প্রত্যেকেই হতে পারতেন জাতির দিকনির্দেশক।
বড় দুর্ভাগ্য আমাদের, তাঁদের সেই কীর্তির কথা তুলে আনার জন্য তেমন কোনো গবেষণা চোখে পড়ে না। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নিরর্থক প্রচারণার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল বুদ্ধিজীবীদের কাজগুলোর সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করানো। কেন তাঁরা অনন্য, সে তো তাঁদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশিত। সেটা প্রকাশ করলেই বরং সত্যিকার অর্থে তাঁদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। নইলে কয়েকটি অর্থহীন গালভরা বুলি দিয়ে যান্ত্রিকভাবে দিনটিকে স্মরণ করা চলতেই থাকবে। শুরুতে যে কাল্পনিক তরুণের কথা বলেছিলাম, তাঁকে তো প্রকৃত তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে অন্য সবকিছুর মতোই এ শুধু লোকদেখানো শোকে পরিণত হবে।
লেখক: জাহীদ রেজা নূর উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই রয়ে গেল অমীমাংসিত।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়েও সে রকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।
দুই. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে যে উত্তরটি সাধারণত পাওয়া যায়, তা হলো–পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অবস্থানরত বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন সময় তাঁদের হত্যা করা হয়।
এ ভাবনাটি অজ্ঞতার ফসল। ১৪ ডিসেম্বর যে একটি প্রতীকী তারিখ, সেটা অনেকেই জানেন না। এর আগে থেকেই বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। তবে হ্যাঁ, ১৪ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করা হয় বলে দিবস হিসেবে এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নৃশংসতার পটভূমি সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বুদ্ধিজীবী দিবসের গুরুত্ব বোঝা যাবে না। মনে হবে, হঠাৎ করে বেছে বেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শুধুই ১৪ ডিসেম্বরে। এটা যে সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধির ফসল, সেটা তাতে ঢাকা পড়ে যায়।
তিন. একাত্তরের নয় মাস ধরেই বাঙালি নিধনযজ্ঞ চলেছে। শুধু বাঙালি নয়, এই ভূখণ্ডে যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস, তারাও এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি। মার্চ থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের সময় আরও অনেকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামেনি। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তা পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। সে সময় পাকিস্তানিরা নির্বিচারে মানুষ মেরেছে। কিন্তু জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়টা ছিল অন্য রকম। এ সময়টিকে বলা হয় ‘সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয়’। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন। দেশে অবস্থানরত সাড়ে ছয় কোটি মানুষ সুযোগ পেলেই মুক্তিবাহিনীর জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। ফলে আরও বেশি নৃশংস হয়ে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। ছোট কোনো সূত্র পেলেই তারা পাকড়াও করতে শুরু করে গ্রামবাসীকে, হত্যা করতে থাকে। তারা তাদের সহযোগী দালাল শান্তি কমিটি, রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ‘খোঁজ ও খতম’-এর পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজাকার সদস্যদের বেশির ভাগ ছিল অশিক্ষিত। কিন্তু ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে যে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরে, তারা ছিল শিক্ষিত। শিক্ষিত-অশিক্ষিত দালালেরা তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়ক হয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক সচিব রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরি করেন। এই তালিকায় দেশের অনেক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীর নাম ছিল। আলবদর সদস্যরা এই তালিকায় আরও অনেক নাম যুক্ত করে।
চার. মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন যাঁরা, শুধু তাঁদের নাম এই তালিকায় ছিল না। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগপর্যন্ত যাঁরা বিভিন্নভাবে জাতীয় আন্দোলনের রসদ জুগিয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন এই তালিকায়। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের তালিকা। শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিকিৎসকসহ বহু পেশার মানুষকেই হত্যার তালিকায় রাখা হয়েছিল।
এ কারণেই দেখা যায়, ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল হানাদারদের অনেক যাচাই-বাছাইয়ের ফল, আলবদরদের মাধ্যমে তালিকাকে আরও সুচারু করায় ডিসেম্বরে তা হয়ে ওঠে বাঙালিকে মেধা ও মননশূন্য করার শক্তিশালী অস্ত্র। ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাঁরাই, যাঁরা বহুদিন ধরে দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, স্বাধিকার আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।
পাঁচ. নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল কমে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ তাদের ভয় বাড়িয়ে দেয়। রাজাকারদের মনেও ভয় এসে বাসা বাঁধে। ঢাকা শহরে ক্র্যাক প্লাটুনের হামলা এই ভয়কে আতঙ্কে পরিণত করে। এরপর ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে যে যৌথ বাহিনী গঠিত হলো, তার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আমেরিকা আর চীনের সাহায্যের আশায় বসে থাকেন। এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দেওয়া একের পর এক ভেটো পাকিস্তানকে নিঃস্ব করে তোলে। পাকিস্তান বুঝে যায়, এই ভূখণ্ডকে আর দখলে রাখা যাবে না।
তখনই পাকিস্তানি বাহিনীর অফিসার আর আলবদরদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়। তারা একের পর এক বৈঠক করে ঠিক করে, পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলবদররা থাকবে বুদ্ধিজীবীদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। ১০ ডিসেম্বর দিনের বেলায় রাও ফরমান আলী পিলখানায় গিয়ে কাদালেপা মাইক্রোবাসগুলো দেখে আসেন। সে রাতেই এই শকুনের দল বেরিয়ে পড়ে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে।
একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নেই তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তারা প্রথম আসে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করতে, এরপর সৈয়দ নাজমুল হক আর আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে। পরদিন তারা অপহরণ করে নিজামুদ্দীন আহমদকে। এবং তার পরদিন ১৩ ডিসেম্বর অপহৃত হন সেলিনা পারভীন। লক্ষ করলেই দেখা যাবে, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁদের অপহরণ করা হয়েছে, তাঁদের সবাই ছিলেন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের প্রতি যে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রোশ ছিল, সেটা বোঝা যায় মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের সময়টিতেই। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও দ্য পিপলস পত্রিকায় গোলা ছুড়ে অফিসগুলো ভস্মীভূত করেছিল। তাই প্রাথমিক ক্রোধের শিকার হলেন সাংবাদিকেরা। শহীদুল্লা কায়সারও সাংবাদিক। তাঁকে অপহরণ করা হয় ১৪ ডিসেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষককে অপহরণ করা হয় এই দিনটিতেই। মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রাশীদুল হাসান, আনোয়ার পাশাসহ অনেকেই এদিন অপহৃত হয়েছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর অপহৃত হন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি এবং আলীম চৌধুরী। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে অপহৃত হন ড. আবুল কালাম আজাদ।
সব বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা গেল না। কিন্তু তাঁরা সবাই অকুতোভয়ে নিজ জাতি, স্বাধিকার আন্দোলন, জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এই দেশপ্রেমই ছিল পাকিস্তানি ও তাদের দালাল রাজাকার-আলবদরের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।
তালিকায় থাকা সবাইকে হয়তো খুঁজে পায়নি শ্বাপদেরা, কিন্তু যেটুকু ক্ষতি তারা করতে পেরেছিল, সেই শূন্যতা ছিল অসীম।
ছয়. এই নামগুলোর সঙ্গে শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জি সি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ আরও অনেকের নাম যুক্ত হলে দেখা যাবে, এই মানুষগুলো দেশকে নিয়ে ভাবতেন। জাতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তাঁদের ছিল অবদান। অবরুদ্ধ নগরীতে বসেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অংশ নিয়েছেন। শত্রু-পরিবেষ্টিত অবস্থায় সিরাজুদ্দীন হোসেন লিখেছেন ‘এত দিনে’ শিরোনামে সম্পাদকীয়, যাতে কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগকে যে কারণে দোষ দেওয়া হচ্ছে, সেই একই দোষে দুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো, তা নিয়ে তিনি লিখছেন ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’; শহীদুল্লা কায়সার গোপনে লিখতে শুরু করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা নিয়ে উপন্যাস ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’, আনোয়ার পাশা লিখেছেন ‘রাইফেল রোটি আওরাত’। তাঁদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছে ছিল, দেশের ভেতরের ইতিহাসটি লিখবেন। এ জন্য তথ্যও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু তাঁদের বাঁচতে দেওয়া হলো না।
সাত. পাকিস্তানিরা ঠিক করেছিল, কাদের হত্যা করা হবে। যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, যাঁরা হিন্দু, যাঁরা আওয়ামী লীগকে কোনো না কোনোভাবে সমর্থন করেছেন, তাঁরা সবাই ছিলেন সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের তালিকায়। অর্থাৎ পাকিস্তানিরা এই বঙ্গে পোড়ামাটি নীতিই নিয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তাতে যাঁরা শহীদ হন, তাঁদের প্রত্যেকেই হতে পারতেন জাতির দিকনির্দেশক।
বড় দুর্ভাগ্য আমাদের, তাঁদের সেই কীর্তির কথা তুলে আনার জন্য তেমন কোনো গবেষণা চোখে পড়ে না। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নিরর্থক প্রচারণার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি ছিল বুদ্ধিজীবীদের কাজগুলোর সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করানো। কেন তাঁরা অনন্য, সে তো তাঁদের কর্মকাণ্ডেই প্রকাশিত। সেটা প্রকাশ করলেই বরং সত্যিকার অর্থে তাঁদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। নইলে কয়েকটি অর্থহীন গালভরা বুলি দিয়ে যান্ত্রিকভাবে দিনটিকে স্মরণ করা চলতেই থাকবে। শুরুতে যে কাল্পনিক তরুণের কথা বলেছিলাম, তাঁকে তো প্রকৃত তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে অন্য সবকিছুর মতোই এ শুধু লোকদেখানো শোকে পরিণত হবে।
লেখক: জাহীদ রেজা নূর উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই র
১৪ ডিসেম্বর ২০২১
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই র
১৪ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই র
১৪ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

২০২১ সালে এসে কোনো এক তরুণ যদি প্রশ্ন করে, কী ঘটেছিল একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, তাহলে অনেকেই ঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। পারবেন না, কারণ জাতির সেই চরম ভয়াবহতা নিয়ে মানুষের আবেগ কাজ করে বটে, কিন্তু সত্যিই কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা নেই বললেই চলে। মুক্তিযুদ্ধের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেল, কিন্তু বহু প্রশ্নই র
১৪ ডিসেম্বর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫