Ajker Patrika

উত্তরণ

মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পাল্টা ফৌজদারি মামলা করা যায়

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পাল্টা ফৌজদারি মামলা করা যায়

প্রশ্ন: আমার বাবা তাঁর তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ। আমি (মেয়ে) বাবার একমাত্র সন্তান। বড় চাচা আমার বাবাকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ভাগ দিতে নারাজ। কিন্তু সব সম্পত্তি তাঁদের তিন ভাইয়ের নামে। তবু তিনি আমার বাবাকে সম্পত্তির ভাগ দিতে চান না। সম্পত্তির ভাগ থেকে বঞ্চিত করতে তিনি একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাবার পৈতৃক বাড়ি ভাগ হয়েছে আইন অনুযায়ী। কিন্তু সেটাও তিনি মানেন না। তাঁর করা মামলায় আমরা জিতেছি। তবু তিনি থামেননি। এবার ফৌজদারি মামলা করছেন। আমার বাবা-মা সম্মানজনক পেশায় আছেন। এত মামলা আর থানায় দৌড়াদৌড়ির কারণে তাঁদের সম্মানহানি হচ্ছে। আমরা চরম বিরক্ত। এখন কী পদক্ষেপ নিলে এই জুলুমকারীর শাস্তি হবে এবং মিথ্যা মামলা বন্ধ হবে।

সাজিয়া আনজুম মিতু, যশোর।

উত্তর: পারিবারিক বিরোধ যখন দীর্ঘস্থায়ী মামলা-মোকদ্দমায় রূপ নেয়, তখন শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, সম্মানহানি ও মানসিক হয়রানিও ঘটে। এ ক্ষেত্রে আপনার পরিবার যা করতে পারে—

১. মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

আপনার বড় চাচা ধারাবাহিকভাবে ভিত্তিহীন মামলা করছেন। বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

  • ক. দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মামলা
  • কেউ উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা মামলা করলে, তার বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় ফৌজদারি অভিযোগ করা যায়। এতে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। এ ধরনের মামলা করলে আদালত বিবেচনা করবেন যে প্রতিপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতির চেষ্টা করেছে কি না।
  • খ. ১০৭/১০৬ ধারায় শান্তিভঙ্গ প্রতিরোধের ব্যবস্থা
  • কেউ যদি ক্রমাগত ঝগড়াঝাঁটি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি কিংবা অশান্তি সৃষ্টি করে, তাহলে থানা বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১০৭ ধারায় বন্ডে বাধ্য করার আবেদন করা যায়। এতে তিনি ভবিষ্যতে অশান্তি বা অবৈধ কাজ করতে ভয় পাবেন।
  • গ. মানহানির মামলা (ডিফামেশন)
  • মিথ্যা অভিযোগের কারণে কারও সামাজিক সম্মানহানি হলে, সিভিল ডিফামেশন বা ফৌজদারি মানহানি মামলা করা যায়। এতে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়।

২. সম্পত্তিসংক্রান্ত স্থায়ী সমাধান

আপনারা এরই মধ্যে জমির মামলায় জিতেছেন। তবু তিনি মানতে চাইছেন না। এ ক্ষেত্রে—

ক. ডিক্রি কার্যকর করার আবেদন

  • যে আদালত রায় দিয়েছেন, তাঁর কাছে রায় বাস্তবায়ন মামলা করতে পারেন। এতে আদালত নিজে মাঠ জরিপ, পরিমাপ বা বিভাজন করে চূড়ান্তভাবে ভাগ বুঝিয়ে দিতে পারেন। এতে খারাপ প্রভাব, জোরজবরদস্তি বা অস্বীকৃতি কোনো কাজে আসবে না।

খ. পুলিশ প্রোটেকশন চাওয়া

  • জমিজমা বুঝে নিতে বা পরিমাপ করে নিতে গেলে যদি কেউ বাধা দেয়, আদালত নির্দেশ দিলে পুলিশ প্রশাসন সরাসরি সহায়তা করবে।

৩. হয়রানি বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ

  • ক. থানায় জিডি করুন
  • ধারাবাহিক হুমকি, হয়রানি, মিথ্যা অভিযোগ—এসবের বিস্তারিত লিখে জেনারেল ডায়েরি করলে ভবিষ্যতে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।
  • খ. মানবাধিকার কমিশন কিংবা

নারী-শিশু সেল

  • যদি সামাজিক বা মানসিক চাপ অত্যধিক বেড়ে যায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা স্থানীয় প্রশাসনের সেলে আপনি অভিযোগ জানাতে পারেন।

৪. পরিবারকে মানসিক ও সামাজিকভাবে রক্ষা করতে করণীয়

আইনগত নথিপত্র, রায়ের কপি, জিডি, নোটিশ—সব সাজিয়ে সংরক্ষণ করুন। প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনের সামনে কখনো ঝগড়ায় জড়াবেন না; কারণ, তিনি সেটি নিয়েও মামলা বানাতে পারেন। সব পদক্ষেপ আইনজীবীর পরামর্শে নিন।

৫. একজন দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন

ধারা নির্বাচন, মানহানি মামলা, ডিক্রি কার্যকর—এসব প্রক্রিয়া অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া করা কঠিন।

মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে পাল্টা ফৌজদারি মামলা, শান্তিভঙ্গ প্রতিরোধ, মানহানি মামলা, ডিক্রি কার্যকর করা—এই চার পদক্ষেপ নিলে আপনার বড় চাচার হয়রানি অনেকটা কমে যাবে। এমনকি আইনি শাস্তির মুখেও পড়তে পারেন তিনি।

পরামর্শ দিয়েছেন, ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ