Ajker Patrika

ইন্টারনেটে পর্নোর সহজলভ্যতা শিশু-কিশোরদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সেমিনারে উদ্বেগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কমিউনিটি বেইজড চাইল্ড প্রোটেকশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ইন বাংলাদশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কমিউনিটি বেইজড চাইল্ড প্রোটেকশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ইন বাংলাদশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন শারীরিক শাস্তি বা মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এই নিপীড়নের সঙ্গে তাদের অভিভাবক, শিক্ষক বা রক্ষক হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা জড়িত। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কমিউনিটি বেইজড চাইল্ড প্রোটেকশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ইন বাংলাদশ’ শীর্ষক সেমিনারের ধারণাপত্রে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) ও ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএলের প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর নূরুল কবির। বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, লাখ লাখ শিশু তাদের পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকলেও কিশোর বিচারব্যবস্থায় শিশুদের জড়িত ২৩ হাজারের বেশি মামলা এখনো বিচারাধীন। গত বছরের তুলনায় ৭৫ ভাগ মেয়েশিশুর নির্যাতন বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩০৬টি শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।

ধারণাপত্রে নূরুল কবির বলেন, ইন্টারনেট যেমন তথ্য ও শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্টের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। পর্নোগ্রাফিক কনটেন্টের সহজলভ্যতা শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা উদ্বেগজনক। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য ইন্টারনেটের জগৎ নানা প্রলোভন ও হয়রানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের অনেক সময় বিপদগ্রস্ত করে, আবার এর নানামুখী অপব্যবহার বিপজ্জনক পরিণতি বয়ে আনে, যা তাদের ব্যক্তিত্বে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পোশাকশ্রমিকদের সন্তানেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে জানান নূরুল কবির। তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিকদের শিশুরা অধিকাংশই নিজস্ব বা সমাজভিত্তিক কোনো শিশু সুরক্ষাব্যবস্থার আওতায় নেই। ফলে তারা নানাভাবে নির্যাতন ও শোষণের কবলে পড়ছে। তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় এবং কম মজুরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবহার ও যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সরকারি সেবা এসব শিশুদের জন্য যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার না দেওয়ায় এসব শিশু মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

সেমিনারে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, পোশাকশ্রমিকদের শিশুদের নির্যাতন ও শোষণ প্রতিরোধে গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশুদের জন্য একটি শিশুবান্ধব সুরক্ষাকাঠামোর ধারণা তৈরি করতে হবে। গার্মেন্টস এলাকায় পাইলট ভিত্তিতে কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষাকাঠামো গঠন করতে হবে। আইনপ্রযোগকারী সংস্থার মধ্যে একটি বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট প্রতিষ্ঠা ও একটি শিশুবান্ধব অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে। একটি সমন্বিত জাতীয় শিশু সুরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

টিডিএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বিটিএসের পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নাঈমা হোসেন, পদ্মা অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারী কমিশনার ফারিয়া তাসনিম, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...