Ajker Patrika

নেপোলিয়নের মিসর অভিযান যে ৭ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভব করেছিল

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২: ৪৯
নেপোলিয়নের মিসর অভিযান যে ৭ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভব করেছিল

১৭৯৮ সালে জুলাইয়ে ফরাসি জেনারেল নেপোলিয়ন বোনাপার্ট যখন মিসরে অভিযান চালান তখন সঙ্গে কেবল ১০ হাজার সৈন্যই নিয়ে যাননি; বরং সঙ্গে নিয়েছিলেন ১৫০ বিজ্ঞানীও। ওই সামরিক অভিযানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। এমন সাতটি বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার।

এক প্রত্নতাত্ত্বিক বলেন, সাভাঁ হিসেবে পরিচিত এ বিজ্ঞানীদের কাজ ছিল গবেষণা ও সম্পদ আত্মীকরণ।

এক মাস পরই, ১৭৯৮ সালের ২৩ আগস্ট কায়রোর এক বিলাসবহুল প্রাসাদে প্রথম সভার আয়োজন করে বিজ্ঞানবিষয়ক সংগঠন মিসর ইনস্টিটিউট। এ সভায় নেপোলিয়ন সংগঠনটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। বিজ্ঞান বিষয়ক এ সংগঠনটি আজও টিকে আছে।

মিসরের প্রাকৃতিক সম্পদ, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ফ্রান্সের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন নেপোলিয়ন। তিনি সাভাঁদের রুটি তৈরির চুলা ও নীল নদের পানি বিশুদ্ধকরণের মতো কাজে গুরুত্ব দিতে বলেন। 

পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা থাকায় সেসময় এ ধরনের উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করা বেশ দুরূহই ছিল। বিজ্ঞানীদের এ কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে যখন তাঁদের বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামবাহী জাহাজ মাঝ সমুদ্রে ডুবে যায়। মিসরে টানা কয়েকটি অভিযানে পরাজয়ের পর নেপোলিয়ন ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সে ফিরে যান এবং বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীকে মিসরেই রেখে আসেন। 

সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রকৌশলী, গণিতবিদ, প্রকৃতিবিদ ও অন্য বিজ্ঞানীরা তিন বছরের মতো সময় ব্য়য় করে জরিপ চালান, তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পুরাকীর্তি থেকে শুরু করে মমি এবং পাশ্চাত্যের কাছে অজানা প্রাণী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। 

তাঁদের এ কাজগুলোর কারণে বেশ কয়েকটি অভিনব আবিষ্কার সামনে আসে, প্রত্নতত্ত্বের মতো বিজ্ঞান আনুষ্ঠানিক রূপ পায় এবং মিসরের প্রতি সারা বিশ্বের আগ্রহ তৈরি হয়।

নেপোলিয়নের মিসর অভিযানে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো হলো—

 ১. রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো বিপরীতমুখী হয়
রসায়নবিদ ক্লদ–লুই বার্থোলের বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার আগে, রাসায়নিক বিক্রিয়া বিপরীতমুখী হতে পারে—এ ধারণাটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত ছিল না। 

তবে বার্থোলে এ ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার সপক্ষে প্রমাণ খুঁজে পান। ওই সময় তিনি ন্যাট্রোন উপত্যকার হ্রদে লবণ জমা হওয়া নিয়ে গবেষণা করছিলেন। 

হ্রদের চুনাপাথরগুলোর ওপর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া লবণ জমা হচ্ছিল। ন্যাট্রোন নামে পরিচিত এ লবণ মিসরীয়রা মমি করা মৃতদেহ সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করত। এটি পরিবেশ থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে চর্বি দ্রবীভূত করে। 

বার্থোলে খেয়াল করেন, চুনাপাথরের ক্যালসিয়াম কার্বোনেট লবণের সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে সোডিয়াম কার্বোনেট সমৃদ্ধ ন্যাট্রোন লবণ তৈরি করে। 

রসায়নবিদেরা জানতেন, পরীক্ষাগারে ঠিক একই বিপরীত বিক্রিয়া সম্ভব। এতে বার্থোলে বুঝতে পারেন, বিপরীত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো সম্ভব। বিক্রিয়াটি কোন দিকে সংগঠিত হবে সেটি নির্ভর করে তাপ ও এর মধ্যে একটি পদার্থের পরিমাণের ওপর। ২. প্রত্নতত্ত্ব আনুষ্ঠানিক রূপ পায়
নেপোলিয়নের সময়টায় প্রত্নতত্ত্ব আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান ছিল না। বেশির ভাগ সাভাঁরই পুরাকীর্তি নিয়ে খুব কম অভিজ্ঞতা ছিল। এখনো বালির নিচে অনেক দেব মন্দির রয়েছে যা এখনো খুঁড়ে বের করা হয়নি। 

মিসরের প্রাচীন সমাধিসৌধগুলো দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন শিল্পী ও লেখক দমিনিক ভিভাঁ দেনোঁ। তিনি নেপোলিয়নের সঙ্গে ফ্রান্সে গিয়েই তাঁর বর্ণনা ও আঁকা ছবি বই আকারে প্রকাশ করেন। বইটির নাম ‘ট্রাভেলস ইন আপার অ্যান্ড লোয়ার ইজিপ্ট’। 

নেপোলিয়নের অভিযানের সময় পর্যটকেরা মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া, কায়রো ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চল সম্পর্কে জানতেন। ওই সময় পিরামিড এবং মানুষের মুখ, সিংহের দেহ এবং ঈগলের ডানা বিশিষ্ট দেবতা স্ফিংক্স জনপ্রিয় ছিল। তবে মিসরের উঁচু অংশ এতটা পরিচিত ছিল না। 

তবে সাভাঁদের আগমনের পর চিত্র বদলে যায়। দেনোঁ তাঁর বইয়ে বলেন, ‘হঠাৎ পুরো সেনাবাহিনী এক সঙ্গে বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়...এবং আনন্দে হাততালি দেয়।’ 

দেনোঁর আঁকা থিবস, এসনা, এদফু এবং কারনাকের মন্দির এবং ধ্বংসাবশেষের ছবি ও বিবরণ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এগুলোর অনেক ছবিই ফ্যাশনেবল পেইন্টিংয়ে রূপ দেওয়া হয় এবং সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করা হয়। 

সমাধিস্তম্ভগুলোর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আরও দুটি কমিশন মিসরে ফেরত পাঠানো হয়।

নেপোলিয়নের স্থপতি ও প্রকৌশলীরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগুলোর চিত্র তৈরি করেন এবং বেশ কয়েকটি সমাধিস্তম্ভ পরিমাপ করেন। অন্যরা পিরামিডের মাপ নেওয়ারও চেষ্টা করে।  ৩. কীটপতঙ্গের শ্রেণিবিন্যাস
ফ্রান্সে ফেরত যাওয়ার পর মিসর থেকে আনা দেড় হাজার প্রজাতির কীটপতঙ্গকে সংগঠিত উপায়ে শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজন বোধ করেন জুলস সিজার স্যাভিনি। তখন এক প্রজাতির পতঙ্গ থেকে অন্য প্রজাতি পৃথক করার কোনো নিয়মতান্ত্রিক উপায় ছিল না। তাই স্যাভিনি একটি উপায় আবিষ্কার করেন। 

কীটপতঙ্গগুলোর মুখের আকৃতি দেখেই এগুলোকে বেশ কিছু প্রজাতিতে বিভক্ত করেন স্য়াভিনি। তিনি হাজারটিরও বেশি নমুনার ছবি আঁকেন। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তরুণ এ উদ্ভিদবিদ মিসরে এসে কৃমি, মৌমাছি, মাকড়সা, শামুক এবং মাছির মতো অমেরুদণ্ডী প্রাণী সংগ্রহ করেন। তিনি স্টারফিশ, প্রবাল এবং সামুদ্রিক অর্চিনের নমুনাও সংগ্রহ করেন। তাঁর শ্রেণিবিন্যাসের বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া আজও প্রচলিত। ৪. নতুন প্রজাতির কুমির
আঁতোয়া জিওফ্রে সেন্ট–হিলেয়ার নিশ্চিত ছিলেন নীল নদে দুই প্রজাতির কুমির রয়েছে। জিওফ্রেও বিভিন্ন প্রাণি সংগ্রহ করতেন। মিসরে থাকার সময় তিনি বাদুড়, বেজি, কচ্ছপ এবং আরও কিছু প্রাণি নিয়ে গবেষণা করেন। 

জিওফ্রের এতসব প্রজাতি ব্যবচ্ছেদ ও সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি ১১ বছরের একটি ছেলেকে দাস হিসেবে কিনে নিয়েছিলেন। ছেলেটিকে তিনি তাঁর কাজে সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেন। 

জিওফ্রে এত বেশি প্রাণি ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন যে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির মধ্যে একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া শুরু করেন। এ পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি ‘ইউনিটি অব প্ল্যান’ নামের আধা বিবর্তনীয় ধারণা দেন। কয়েক দশক পর চার্লস ডারউইন একই ধারণার কথা উল্লেখ করেন। 

জিওফ্রের এ তত্ত্ব অনেক বিজ্ঞানীই মেনে নিতে পারেননি। এমনকি তিনি মিসর থেকে নেওয়া মমি করা ভিন্ন প্রজাতির কুমিরও ব্যবচ্ছেদ করে প্রমাণ দেখানোর চেষ্টা করেন। 

এ কুমিরটির চোয়াল নীল নদের কুমিরের চোয়াল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বলে দাবি করেন জিওফ্রে। এ ছাড়া এ কুমিরটি তুলনামূলক কম হিংস্র ছিল। 

তবে তাঁর সহকর্মীরা কুমিরটিকে ভিন্ন প্রজাতির বলে মানতে চাননি। এর ২০০ বছর পরে জীববিজ্ঞানী ইভন হেক্কালা এবং একদল গবেষক আধুনিক কুমিরের ডিএনএ ও জিওফ্রের আবিষ্কার করা কুমিরের মমির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেন। তাঁরা দেখতে পান নীল নদে আসলেই দুই ধরনের কুমিরের বিচরণ ছিল—ক্রোকোডাইলাস নাইলোটিকাস ও ক্রোকোডাইলাস সুকুস। ৫. চক্ষুবিদ্যার আবির্ভাব
নেপোলিয়নের সঙ্গে থাকা ফরাসি চিকিৎসকেরা মিসরে অপরিচিত এক রোগের দেখা পান। এর মধ্যে একটি রোগ তাঁদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এর নাম দেওয়া হয় মিসরীয় চক্ষুরোগ যা এক ধরনের সংক্রামক রোগ। এতে আক্রান্ত হলে চোখ চুলকাতে পারে, ফুলে যেতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত হারাতে পারে। 

এ রোগটির প্রাদুর্ভাব এতই বেড়ে যায় যে ইউরোপের চিকিৎসকেরা এ রোগ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। জিওফ্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক সপ্তাহ দৃষ্টিশক্তিহীন ছিলেন। 

ততদিন পর্যন্ত চক্ষুবিদ্যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কোনো আনুষ্ঠানিক শাখা হয়ে ওঠেনি। তবে এ রোগের উৎস খুঁজে পেতে গবেষণার ফলেই এটি এক নতুন শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

অবশেষে ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ভেচ আবিষ্কার করেন সংক্রমিত চোখের পিচুটি থেকে এ রোগ ছড়ায়। ভেচ এ রোগের প্রতিকারের উপায় ও চিকিৎসা বের করেন যা আজও চক্ষুবিদ্যার ইতিহাসের মাইলফলক। ৬. হায়ারোগ্লিফ পড়ার কৌশল আবিষ্কার
মিসরের বিভিন্ন স্তম্ভের গায়ে আঁকা চিত্র—হায়ারোগ্লিফ—কয়েক শতক ধরেই মানুষের কাছে অজানা ছিল। কেউই তা পড়তে পারতো না। মিসর অভিযানের সময় ফরাসিরা যখন দ্য রোজেটা স্টোনের খোঁজ পান তাঁরা বুঝতে পারেন হায়ারোগ্লিফ অনুবাদে এটি ব্যবহার করা যাবে। 

হায়ারোগ্লিফগুলো বোঝার কারণে পণ্ডিতেরা অন্যান্য প্রাচীন মিসরীয় গ্রন্থ এবং স্তম্ভগুলোর ওপর লেখা পড়তে পারেন। 

 ১৮০১ সালে ব্রিটিশরা ফ্রান্সসের আত্মসমর্পণের সময় সাভাঁদের সংগৃহীত বেশ কয়েকটি পুরাকীর্তি নিয়ে যায়। এর মধ্যে দ্য রোজেটা স্টোন নামে একটি ফলকও ছিল। 

সে পাথর খণ্ডে মিসরীয় হায়ারোগ্লিফে তিনটি লেখা খোদাই করা ছিল—একটি ছিল মিসরীয় হায়ারোগ্লিফে, একটি হায়ারোগ্লিফ থেকে আসা মিসরীয় বক্র বর্ণ এবং অন্যটি ছিল প্রাচীন গ্রিক বর্ণে। এ তিনটি লেখার মধ্যে মিল থাকায় গবেষকেরা গ্রিক ভাষার মাধ্যমে হায়ারোগ্লিফ ব্যাখ্যা করেন। 

হায়ারোগ্লিফ ব্যাখ্যা করার জন্য ফরাসি পণ্ডিত জ্যঁ ফ্রাসোয়াঁ চ্যাম্পোলিয়নের দুই দশকের মতো সময় লেগেছিল। বর্তমানে রোজেটা স্টোন ব্রিটিশ জাদুঘরে রয়েছে।

 ৭. দ্রুত গতির ছাপা প্রক্রিয়ার জন্য খোদাই যন্ত্রের আবিষ্কার
সাভাঁর ফ্রান্সে ফেরত যাওয়ার সময় কয়েক খণ্ডে লেখা বই ‘ডেসক্রিপশন দে এজিপ্ট’ বা ‘মিসরের বর্ণনা’ নামের একটি ৭ হাজার পৃষ্ঠার বই লেখেন। এ বই ছাপানোর জন্য খোদাইয়ের কাজের শ্রম কমাতে প্রকৌশলী নিকোলাস জ্যাকস কোঁৎ একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করেন। 

শত শত ছবি ছাপার জন্য খোদাইকারীদের প্রথমে তামার পাতে তা স্থানান্তর করতে হতো। কোঁৎ–এর তৈরি যন্ত্রে আকাশ ও মেঘের মতো চিত্র খোদাই করা যেত। এতে যে কাজে ছয় থেকে সাত মাসের সময় লাগার কথা তা কেবল কয়েকদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক কিংবা শতাব্দীকাল ধরে মানবসভ্যতার নানা অধ্যায়ে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে এ বছর গবেষকেরা যেন গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব, জেনেটিক বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ২০২৫ সালে উন্মোচিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক রহস্য।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিদায়ী এই বছরটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইস্টার আইল্যান্ডের একটি খনিতে পড়ে থাকা অসমাপ্ত পাথরের মূর্তিগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, প্রাচীন পলিনেশীয়রা কীভাবে পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে বিশাল মোয়াই মূর্তি তৈরি করত।

এদিকে, ইতালির পম্পেই নগরীতে নতুন করে খননকাজ শুরু হওয়ার পর একটি পাথরের সিঁড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হওয়ার আগে শহরটি দেখতে কেমন ছিল তা জানতে সহায়তা করেছে।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ হাজার ২০০টি গর্ত নিয়েও নতুন ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। এই গর্তগুলোর নির্মাতা কারা এবং কেন এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল—ড্রোন ফুটেজ ও উদ্ভিদকণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

কিছু গবেষণা আবার নতুন প্রশ্নও উসকে দিয়েছে। যেমন—চিকিৎসা নথি না থাকায় বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেন অস্টেনের মৃত্যুর কারণ জানতে গবেষকেরা তাঁর লেখার ভাষা ও শব্দচয়ন বিশ্লেষণ করছেন।

রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন
রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন

এ বছর ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি হলো, অস্ট্রিয়ার প্রত্যন্ত গির্জায় সংরক্ষিত রহস্যময় একটি মমি। ১৭০০ সাল থেকে ‘বাতাসে শুকানো যাজক’ নামে পরিচিত এই দেহটির পরিচয় দীর্ঘদিন অজানা ছিল। আধুনিক স্ক্যান ও রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি ছিলেন ফ্রাঞ্জ জাভের সিডলার ফন রোজেনেগ নামে একজন অভিজাত ব্যক্তি। পরবর্তীতে তিনি গির্জার যাজক হয়েছিলেন। গবেষকেরা তাঁর দেহ সংরক্ষণের এক অজানা পদ্ধতি ও মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে ডেনমার্কে সংরক্ষিত হিয়র্টস্প্রিং নৌকাটির উৎস নিয়েও রহস্যের পর্দা উঠেছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের এই নৌকাটি অস্ত্রে ভরা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি দ্বীপে আক্রমণ করার উদ্দেশে যোদ্ধাদের বহন করছিল। বিশ্লেষণে একটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এটিকে তৎকালীন কোনো নাবিকের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রমাণ মিলেছে—অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ এইচএমএস অ্যান্ডিউরেন্স ভাঙা স্টিয়ারিং নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ডুবে গিয়েছিল।

১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

১৪ হাজার বছর আগে বরফ যুগের ‘টুমাট পাপিজ’ নামে পরিচিত দুটি সংরক্ষিত শাবককে এত দিন গৃহপালিত কুকুর মনে করা হলেও নতুন জেনেটিক গবেষণায় জানা গেছে, এগুলো আসলে নেকড়ে শাবক ছিল এবং মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এ ছাড়া ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান নিয়েও নতুন তথ্য মিলেছে। সেই সময়ে নিহত ফরাসি সেনাদের দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করে টাইফাসের পাশাপাশি প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা ওই বাহিনীর বিপুল প্রাণহানির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বিজ্ঞানের হাত ধরে ইতিহাসের বহু অন্ধকার কোণ আলোকিত করেছে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ ও জটিল পথচলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত