
এম আর খায়রুল উমাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) সাবেক সভাপতি। তিনি পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মী এবং কলাম লেখক। তাঁর সঙ্গে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বর্তমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতার যে বৈষম্য দেখা যায়, তার মূল কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে। জাতি তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বিএসসি প্রকৌশলী তৈরি করেছে। তাঁদের কাজ প্ল্যানিং, ডিজাইন এবং রিসার্চ। আর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী তৈরি করা হয়েছে বিএসসি প্রকৌশলীদের কাজের এক্সিকিউশন ও সুপারভিশন করার জন্য। যেহেতু শিক্ষা পৃথক, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পৃথক, ফলে ‘বৈষম্য’ কথাটা যথাযথ মনে হয় না। তবে ‘বৈষম্য’ না হলেও কাজের ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে তা প্রকাশ্য।
দেশে শিক্ষা অনুযায়ী কর্মের বিভাজন নেই। একজন অন্যের কাজের মধ্যে চলে আসছেন। দেশ যাঁকে যে কাজের জন্য তৈরি করেছে, তিনি যদি সেই কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোনো দ্বন্দ্বই থাকে না। কিন্তু দেশের সর্বত্র নিরাময়ের পথ না খুঁজে, ব্যথা প্রশমনের প্রলেপ সন্ধান করার প্রবণতা প্রকট। ফলে যুগের পর যুগ সমস্যার সমাধান হয় না। দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
‘প্রকৌশলী’ উপাধি শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার দাবি কেন করা হচ্ছে? এই উপাধি ব্যবহারে কী এমন পার্থক্য তৈরি হবে, যা উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের মাঝে সাম্য, আইনের শাসন ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা জাগিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা আমরা কখন, কীভাবে, কোথায় হারিয়ে ফেলেছি, তা বিজ্ঞজনেরাই বলতে পারবেন। সাধারণ মানুষ শুধু দেখছে সেই হারিয়ে ফেলা প্রত্যাশার বুকে পা দিয়ে একটা অভিজাত সমাজ উঠে আসছে। দেশের একশ্রেণির মানুষ নিজেকে অভিজাত করার প্রতিযোগিতায় দুই চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের নামের আগে একটা উপাধি বসিয়ে তারা যে সাধারণের থেকে আলাদা, তা বোঝাতে চায়। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত হলে আমরা এমন সব দাবি থেকে বের হয়ে আসতে পারব।
অভিজাত সমাজব্যবস্থায় উপাধির গুরুত্ব অপরিসীম। উপাধি বিক্রি করে খেতাবধারীরা সমাজে স্থান করে নেন। তাই আধুনিক সভ্যতার সব রকম সুবিধায় লালিত-পালিত ভদ্র সন্তানেরা রাস্তায় মারপিট করে, স্লোগান দিয়ে, মিছিল করে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। কেউ বিশ্বাস করে না যে প্রতিজন মানুষের কর্মই হচ্ছে তার স্বীকৃতি। দেশের প্রকৌশলীদের যে ডিগ্রি দেওয়া হয়ে থাকে, তা হচ্ছে বিএসসি-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং। এটা যদি ‘প্রকৌশলী’ উপাধিতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, তাহলে যাঁরা মাস্টার্স শেষ করেন তাঁদের উপাধি কী হবে? এ প্রশ্ন কেউ করে না। সাধারণ মানুষ শুধু দেখে, ওনারা ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করে অভিজাতের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। সে কারণেই ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা অনেকেই ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করে অভিজাত হওয়ার প্রচেষ্টায় রত।
বিএসসি প্রকৌশলীরা কেন মনে করেন যে নবম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু তাঁদের নিয়োগ দেওয়া উচিত?
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত মানবসম্পদ নিয়ে দেশের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই কোন পেশায় কত জনশক্তি প্রয়োজন, তার হিসাব কারও কাছে নেই। সে কারণে ক্ষমতার বলয়ে থাকা মানুষেরা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে তাদের ইচ্ছেমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং সে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের সনদ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যুদ্ধে নামিয়ে দিচ্ছে। আমরা এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের ফেলে দেওয়া খুব কঠিন। আমাদের দেশে অভিভাবকেরা নিজ সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত দেখতে চান। এই চাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। যেহেতু দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাই পরিকল্পনাহীন এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সীমিত, ফলে কর্মযুদ্ধে নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে বিএসসি প্রকৌশলীদের এমন দাবি স্বাভাবিক।
বিএসসি প্রকৌশলীরা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী নয়, প্রকৌশলী পদের দাবিদার। বিএসসি প্রকৌশলীরা দেশের শিল্পায়নে এবং আধুনিক কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন, বিদেশি পরিকল্পনায় যমুনা সেতুর অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্ল্যানিং করতে পারেন, অতীত বিদেশি পরিকল্পনা দেখে নিজ মেধায় তিস্তা ব্যারাজ তৈরি করতে পারেন। এ কাজগুলো শুরু করতে পারলে জনগণই স্নাতক প্রকৌশলীদের পঞ্চম গ্রেডে দায়িত্ব পালনে বাধাহীন সমর্থন দিয়ে যাবে।
আজ দেশের উন্নয়ন অবকাঠামোর কোনো জীবনমান নেই। অবকাঠামো কত দিন জীবন পাবে কেউ তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। একটাও উন্নয়ন প্রকল্প পাওয়া যাবে না, যা প্রাক্কলিত মূল্যে ও সময়ে শেষ করা গেছে। বিএসসি প্রকৌশলীরা যদি নিজেদের মেধার বিকাশ এখানে প্রয়োগ করে দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিতে ভূমিকা রাখেন, তবে জনগণই তাঁদের দাবি পূরণে এগিয়ে আসবে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সরকার সহকারী প্রকৌশলী পদের যে কোটা দিয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে একটা গোঁজামিল। বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ডের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজই এক্সিকিউশন ও সুপারভিশনের, যা ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ বিবেচনায় মাঠপর্যায়ের শতভাগ পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধিকারে থাকার কথা, সেখানে কোটা তাঁদের বঞ্চিত করেছে।
উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি ঐতিহ্যগতভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের কেন এই পদে আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন? এতে তো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা।
বাংলাদেশের শতকরা এক ভাগ মানুষও বিশ্বাস করে কি না সন্দেহ আছে যে, একজন বিশেষায়িত পেশাজীবী তৈরিতে সাধারণ জনগণের করের একটা বিরাট অংশ ব্যয় হয়। শুধু মেধা ও পারিবারিক বৈভব কাউকে পেশাজীবী করে না। একজন বিশেষায়িত পেশাজীবী তৈরি করতে পারিবারিক ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সরকারি ব্যয় হয়ে থাকে। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রতিটি পেশার মানুষের কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রতিদান দেশবাসী প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমাদের মেধাবী সন্তানেরা নিজ নিজ পেশার জন্য নির্ধারিত সুযোগ গ্রহণের চেয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে দারুণ পছন্দ করে থাকেন। জাতীয় ক্ষতি বিবেচনায় পেশা পরিবর্তনের প্রতিযোগিতা অবিলম্বে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বিএসসি প্রকৌশলীরা তাঁদের মেধা ও তত্ত্বীয় জ্ঞানের কারণে প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মক্ষেত্রে যেকোনো পদ দখলে সক্ষম, এ ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে পদ দখল করতে পারলেও তত্ত্বীয় জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ তাঁদের পক্ষে যথাযথভাবে, সুচারুরূপে করা কঠিন। কারণ, যেকোনো প্রকল্প সফল করতে তিন ধরনের পেশাজীবী প্রয়োজন হয়ে থাকে। এখানে কেউ কারও বিকল্প নয়, একে অন্যের পরিপূরক। তারপরেও বিএসসি প্রকৌশলীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি শিক্ষা অনুযায়ী কর্মকে গুরুত্ব না দিয়ে পাইলট দিয়ে গরুর গাড়ি চালাতে চায়, তাহলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানে সমস্যা হলেও করার কিছু নেই। তবে সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে দেশের চিকিৎসাসেবার যে বেহাল অবস্থা হয়েছে, এখানেও তা-ই হবে। বিদেশনির্ভরতা এখনো আছে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিএসসি প্রকৌশলীদের তুলনায় কম মূল্যায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের ভার উচ্চ সরকারি পদে আসীন বিএসসি প্রকৌশলীদের হাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত অভিজাতরা নিজের নীল রক্তকে নীল রাখার তাগিদে দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা ভুলে গেছেন। বিএসসি প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা থাকলেও কাজের ক্ষেত্র কিন্তু পৃথক নয়। মাঠপর্যায়ে যে যার পদ অনুযায়ী একই কাজ করে থাকে। এখানেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অবমূল্যায়ন। শিক্ষা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি এবং সাধারণ সম্মান শিক্ষার মতো প্রকৌশল শিক্ষাকে যদি একমুখী করা যায়, তাহলে আজকের বিভেদ নিরসন সম্ভব। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবে। তাই ‘নিজের জন্য সামনে ফাঁকা মাঠ চাই আর পেছনে যারা আছে তাদের জন্য সামান্য গলিও রাখা চলবে না’–এ মানসিকতা থেকে বিএসসি প্রকৌশলীদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তাতেই জাতি হিসেবে আমাদের মঙ্গল হবে।
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতার যে বৈষম্য দেখা যায়, তার মূল কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে। জাতি তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বিএসসি প্রকৌশলী তৈরি করেছে। তাঁদের কাজ প্ল্যানিং, ডিজাইন এবং রিসার্চ। আর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী তৈরি করা হয়েছে বিএসসি প্রকৌশলীদের কাজের এক্সিকিউশন ও সুপারভিশন করার জন্য। যেহেতু শিক্ষা পৃথক, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পৃথক, ফলে ‘বৈষম্য’ কথাটা যথাযথ মনে হয় না। তবে ‘বৈষম্য’ না হলেও কাজের ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে তা প্রকাশ্য।
দেশে শিক্ষা অনুযায়ী কর্মের বিভাজন নেই। একজন অন্যের কাজের মধ্যে চলে আসছেন। দেশ যাঁকে যে কাজের জন্য তৈরি করেছে, তিনি যদি সেই কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কোনো দ্বন্দ্বই থাকে না। কিন্তু দেশের সর্বত্র নিরাময়ের পথ না খুঁজে, ব্যথা প্রশমনের প্রলেপ সন্ধান করার প্রবণতা প্রকট। ফলে যুগের পর যুগ সমস্যার সমাধান হয় না। দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
‘প্রকৌশলী’ উপাধি শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার দাবি কেন করা হচ্ছে? এই উপাধি ব্যবহারে কী এমন পার্থক্য তৈরি হবে, যা উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের মাঝে সাম্য, আইনের শাসন ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা জাগিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা আমরা কখন, কীভাবে, কোথায় হারিয়ে ফেলেছি, তা বিজ্ঞজনেরাই বলতে পারবেন। সাধারণ মানুষ শুধু দেখছে সেই হারিয়ে ফেলা প্রত্যাশার বুকে পা দিয়ে একটা অভিজাত সমাজ উঠে আসছে। দেশের একশ্রেণির মানুষ নিজেকে অভিজাত করার প্রতিযোগিতায় দুই চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের নামের আগে একটা উপাধি বসিয়ে তারা যে সাধারণের থেকে আলাদা, তা বোঝাতে চায়। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা আমাদের মধ্যে জাগ্রত হলে আমরা এমন সব দাবি থেকে বের হয়ে আসতে পারব।
অভিজাত সমাজব্যবস্থায় উপাধির গুরুত্ব অপরিসীম। উপাধি বিক্রি করে খেতাবধারীরা সমাজে স্থান করে নেন। তাই আধুনিক সভ্যতার সব রকম সুবিধায় লালিত-পালিত ভদ্র সন্তানেরা রাস্তায় মারপিট করে, স্লোগান দিয়ে, মিছিল করে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। কেউ বিশ্বাস করে না যে প্রতিজন মানুষের কর্মই হচ্ছে তার স্বীকৃতি। দেশের প্রকৌশলীদের যে ডিগ্রি দেওয়া হয়ে থাকে, তা হচ্ছে বিএসসি-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং। এটা যদি ‘প্রকৌশলী’ উপাধিতে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, তাহলে যাঁরা মাস্টার্স শেষ করেন তাঁদের উপাধি কী হবে? এ প্রশ্ন কেউ করে না। সাধারণ মানুষ শুধু দেখে, ওনারা ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করে অভিজাতের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। সে কারণেই ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা অনেকেই ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করে অভিজাত হওয়ার প্রচেষ্টায় রত।
বিএসসি প্রকৌশলীরা কেন মনে করেন যে নবম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু তাঁদের নিয়োগ দেওয়া উচিত?
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত মানবসম্পদ নিয়ে দেশের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই কোন পেশায় কত জনশক্তি প্রয়োজন, তার হিসাব কারও কাছে নেই। সে কারণে ক্ষমতার বলয়ে থাকা মানুষেরা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে তাদের ইচ্ছেমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এবং সে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের সনদ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যুদ্ধে নামিয়ে দিচ্ছে। আমরা এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের ফেলে দেওয়া খুব কঠিন। আমাদের দেশে অভিভাবকেরা নিজ সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত দেখতে চান। এই চাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। যেহেতু দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাই পরিকল্পনাহীন এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সীমিত, ফলে কর্মযুদ্ধে নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে বিএসসি প্রকৌশলীদের এমন দাবি স্বাভাবিক।
বিএসসি প্রকৌশলীরা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী নয়, প্রকৌশলী পদের দাবিদার। বিএসসি প্রকৌশলীরা দেশের শিল্পায়নে এবং আধুনিক কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন, বিদেশি পরিকল্পনায় যমুনা সেতুর অভিজ্ঞতা থেকে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্ল্যানিং করতে পারেন, অতীত বিদেশি পরিকল্পনা দেখে নিজ মেধায় তিস্তা ব্যারাজ তৈরি করতে পারেন। এ কাজগুলো শুরু করতে পারলে জনগণই স্নাতক প্রকৌশলীদের পঞ্চম গ্রেডে দায়িত্ব পালনে বাধাহীন সমর্থন দিয়ে যাবে।
আজ দেশের উন্নয়ন অবকাঠামোর কোনো জীবনমান নেই। অবকাঠামো কত দিন জীবন পাবে কেউ তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। একটাও উন্নয়ন প্রকল্প পাওয়া যাবে না, যা প্রাক্কলিত মূল্যে ও সময়ে শেষ করা গেছে। বিএসসি প্রকৌশলীরা যদি নিজেদের মেধার বিকাশ এখানে প্রয়োগ করে দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিতে ভূমিকা রাখেন, তবে জনগণই তাঁদের দাবি পূরণে এগিয়ে আসবে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সরকার সহকারী প্রকৌশলী পদের যে কোটা দিয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে একটা গোঁজামিল। বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ডের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজই এক্সিকিউশন ও সুপারভিশনের, যা ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ বিবেচনায় মাঠপর্যায়ের শতভাগ পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধিকারে থাকার কথা, সেখানে কোটা তাঁদের বঞ্চিত করেছে।
উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি ঐতিহ্যগতভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের কেন এই পদে আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন? এতে তো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা।
বাংলাদেশের শতকরা এক ভাগ মানুষও বিশ্বাস করে কি না সন্দেহ আছে যে, একজন বিশেষায়িত পেশাজীবী তৈরিতে সাধারণ জনগণের করের একটা বিরাট অংশ ব্যয় হয়। শুধু মেধা ও পারিবারিক বৈভব কাউকে পেশাজীবী করে না। একজন বিশেষায়িত পেশাজীবী তৈরি করতে পারিবারিক ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি সরকারি ব্যয় হয়ে থাকে। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রতিটি পেশার মানুষের কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রতিদান দেশবাসী প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমাদের মেধাবী সন্তানেরা নিজ নিজ পেশার জন্য নির্ধারিত সুযোগ গ্রহণের চেয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে দারুণ পছন্দ করে থাকেন। জাতীয় ক্ষতি বিবেচনায় পেশা পরিবর্তনের প্রতিযোগিতা অবিলম্বে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বিএসসি প্রকৌশলীরা তাঁদের মেধা ও তত্ত্বীয় জ্ঞানের কারণে প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মক্ষেত্রে যেকোনো পদ দখলে সক্ষম, এ ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে পদ দখল করতে পারলেও তত্ত্বীয় জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ তাঁদের পক্ষে যথাযথভাবে, সুচারুরূপে করা কঠিন। কারণ, যেকোনো প্রকল্প সফল করতে তিন ধরনের পেশাজীবী প্রয়োজন হয়ে থাকে। এখানে কেউ কারও বিকল্প নয়, একে অন্যের পরিপূরক। তারপরেও বিএসসি প্রকৌশলীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি শিক্ষা অনুযায়ী কর্মকে গুরুত্ব না দিয়ে পাইলট দিয়ে গরুর গাড়ি চালাতে চায়, তাহলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানে সমস্যা হলেও করার কিছু নেই। তবে সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে দেশের চিকিৎসাসেবার যে বেহাল অবস্থা হয়েছে, এখানেও তা-ই হবে। বিদেশনির্ভরতা এখনো আছে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিএসসি প্রকৌশলীদের তুলনায় কম মূল্যায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের ভার উচ্চ সরকারি পদে আসীন বিএসসি প্রকৌশলীদের হাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত অভিজাতরা নিজের নীল রক্তকে নীল রাখার তাগিদে দেশ ও জাতির কল্যাণের কথা ভুলে গেছেন। বিএসসি প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা থাকলেও কাজের ক্ষেত্র কিন্তু পৃথক নয়। মাঠপর্যায়ে যে যার পদ অনুযায়ী একই কাজ করে থাকে। এখানেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অবমূল্যায়ন। শিক্ষা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি এবং সাধারণ সম্মান শিক্ষার মতো প্রকৌশল শিক্ষাকে যদি একমুখী করা যায়, তাহলে আজকের বিভেদ নিরসন সম্ভব। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবে। তাই ‘নিজের জন্য সামনে ফাঁকা মাঠ চাই আর পেছনে যারা আছে তাদের জন্য সামান্য গলিও রাখা চলবে না’–এ মানসিকতা থেকে বিএসসি প্রকৌশলীদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তাতেই জাতি হিসেবে আমাদের মঙ্গল হবে।

২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
২ দিন আগেসব মিলিয়ে ২০২৫ সাল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো ছিল না। এই বছরের ঘটনাপ্রবাহ আগামী দশকজুড়ে দেশের রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তাকে যে প্রভাবিত করবে, সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। তবে হতাশা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার ভার পেছনে ফেলে মানুষ এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায়।
চিররঞ্জন সরকার

২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর। গণতন্ত্র পুনর্গঠনের প্রত্যাশা, নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর ভাঙাগড়ার মধ্যেই ২০২৫ সাল বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে আইনের শাসন, সামাজিক সহনশীলতা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ নিয়ে।
এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা ছিল ‘মব সন্ত্রাস’ বা গণসহিংসতার বিস্তার। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বছরের প্রথম ১১ মাসেই মব আক্রমণে দেশে প্রায় ১৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটে, যা সমাজে ভয় ও অনিশ্চয়তার গভীর সংকেত দেয়। বছরের শেষ ভাগে এই সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে মব সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি চরম অস্থিরতায় পৌঁছায়। এই সময়েই দেশের অন্যতম প্রধান সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করে।
হিংসা আর সহিংসতা আমাদের বারবার স্তব্ধ করেছে। ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে কিছু উন্মত্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে জানা যায়, একটি ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এবং বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একই সময় ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়েও হামলা ও ভাঙচুর হয়, যা মুক্তচিন্তা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়।
বছরের বিভিন্ন সময়ে মব সহিংসতার আরও বহু ঘটনা ঘটে। আগস্টে রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে রূপলাল ও প্রদীপ দাস নামের দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা গণমানুষের নিষ্ঠুর মানসিকতার নগ্ন উদাহরণ হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরজুড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ও খানকায় হামলা, আগুন দেওয়া ও গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে আগুন দেওয়ার ঘটনা চরম অসহিষ্ণুতার প্রতীক হিসেবে আলোচিত হয়। জুলাই ও আগস্টে রংপুর ও খাগড়াছড়িতে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলা, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর, নভেম্বরে মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা এবং ঢাকার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। এসব ঘটনার পেছনে বিদ্বেষ, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, গুজব এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধ বড় ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক ছিল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা।
২০২৫ সাল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ছিল ব্যাপক পরিবর্তন ও অস্থিরতার বছর। এই বছরটিকে অনেকেই ‘নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের বছর’ বলে অভিহিত করেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরের প্রথম ৯ মাসেই ২৪টির বেশি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে জনতা পার্টি বাংলাদেশ, সংখ্যালঘু অধিকারকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনতা পার্টি, আমজনতার দল এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তির মতো দলগুলোও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। এই নতুন দলগুলোর উত্থান রাজনীতিকে বহুমাত্রিক করে তোলে এবং বিশেষ করে তরুণদের সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
২০২৫ সালের অন্যতম বড় রাজনৈতিক ঘটনা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বড় বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন’ ঘোষণার দাবি তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন ও দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ জারি হলে তা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনা চলতে থাকে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ‘বুলডোজার মার্চ’ নামে একটি বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ধানমন্ডি ৩২-এর বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামসহ আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট স্থাপনা। এই কর্মসূচি পুরোনো রাজনৈতিক প্রতীক ও ইতিহাসের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং সমাজকে বিভক্ত প্রতিক্রিয়ার মুখে ফেলে। একই বছরের জুলাইয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপাড়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার প্রশ্ন আবারও সামনে আনে।
২০২৫ সাল কার্যত দাবি আদায়ের প্রধান মঞ্চ হয়ে উঠেছে রাজপথ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থাহীনতা, প্রশাসনিক ধীরগতি এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অস্বচ্ছতার কারণে নানা শ্রেণি ও গোষ্ঠী তাদের ন্যায্য কিংবা বিতর্কিত দাবিগুলো আদালত বা সংলাপের টেবিলের বদলে রাস্তায় নেমে তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, চাকরিপ্রার্থী, শ্রমিক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিচয়ভিত্তিক গোষ্ঠী—সবার আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে মিছিল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি ও সংঘর্ষ। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সরকার যখন কার্যকর সংস্কার ও দৃশ্যমান ফল দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন রাজপথই হয়ে ওঠে চাপ তৈরির সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। ফলে ২০২৫ সালকে দাবি আদায়ের নামে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন, সড়কের দখল প্রতিষ্ঠার বছর বলা যায়।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর এটা হবে প্রথম জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে যেমন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা তৈরি হয়েছে, তেমনি অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও প্রবল। বিএনপি, ইসলামি দল এবং নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অংশগ্রহণে এই নির্বাচন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছর ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ নামে একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে আসে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, দ্বিকক্ষীয় সংসদ, পুলিশ কমিশন ও প্রশাসনিক সংস্কারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়।
২০২৫ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন হওয়া। তাঁর প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি এনে দেয় এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়। একই সঙ্গে বছরজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর চাপ, মিডিয়া অফিসে হামলা এবং প্রেসের স্বাধীনতা-সংকট রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তোলে।
সরকার পুরো বছর দ্বিমুখী ব্যর্থতার ভার বয়ে বেড়িয়েছে, একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরম অক্ষমতা, অন্যদিকে প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান নিষ্ক্রিয়তা। মব সহিংসতা, গুজবনির্ভর হামলা ও প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড যখন একের পর এক ঘটেছে, তখন রাষ্ট্র কার্যত দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে; অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে দেখা গেছে ধীর তদন্ত, অস্পষ্ট বক্তব্য ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি। একই সঙ্গে প্রশাসনিক, পুলিশ ও রাজনৈতিক সংস্কারের নামে যে উচ্চাশার কথা বলা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই কাগজে-কলমে আটকে থেকেছে—না গঠনগত পরিবর্তন এসেছে, না জবাবদিহির কাঠামো শক্ত হয়েছে। ফলে জনগণের কাছে সরকারের চিত্র দাঁড়িয়েছে এমন এক ব্যবস্থার, যা না পারে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, না পারে নিজেকে সংস্কার করে বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রে রূপ নিতে।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো ছিল না। এই বছরের ঘটনাপ্রবাহ আগামী দশকজুড়ে দেশের রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তাকে যে প্রভাবিত করবে, সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। তবে হতাশা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার ভার পেছনে ফেলে মানুষ এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায়। মানুষ চায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, রাজপথের হানাহানি ও সহিংসতার অবসান, সমাজে শান্তি ও স্বস্তির প্রত্যাবর্তন। দিন শেষে রাষ্ট্রচিন্তার সব জটিলতার বাইরে সাধারণ মানুষের চাওয়া খুব সামান্য—দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তা, মাথা গোঁজার নিরাপদ একটি ঠাঁই আর নির্ভয়ে ঘুমানোর অধিকার।
প্রশ্ন শুধু একটাই—এই ন্যূনতম মানবিক প্রত্যাশার জন্য দেশবাসীকে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে?
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর। গণতন্ত্র পুনর্গঠনের প্রত্যাশা, নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর ভাঙাগড়ার মধ্যেই ২০২৫ সাল বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে আইনের শাসন, সামাজিক সহনশীলতা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ নিয়ে।
এই বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা ছিল ‘মব সন্ত্রাস’ বা গণসহিংসতার বিস্তার। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বছরের প্রথম ১১ মাসেই মব আক্রমণে দেশে প্রায় ১৮৪ জনের প্রাণহানি ঘটে, যা সমাজে ভয় ও অনিশ্চয়তার গভীর সংকেত দেয়। বছরের শেষ ভাগে এই সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে মব সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি চরম অস্থিরতায় পৌঁছায়। এই সময়েই দেশের অন্যতম প্রধান সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যা সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করে।
হিংসা আর সহিংসতা আমাদের বারবার স্তব্ধ করেছে। ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে কিছু উন্মত্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে জানা যায়, একটি ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক মহলেও তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এবং বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একই সময় ছায়ানট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়েও হামলা ও ভাঙচুর হয়, যা মুক্তচিন্তা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়।
বছরের বিভিন্ন সময়ে মব সহিংসতার আরও বহু ঘটনা ঘটে। আগস্টে রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে রূপলাল ও প্রদীপ দাস নামের দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা গণমানুষের নিষ্ঠুর মানসিকতার নগ্ন উদাহরণ হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরজুড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ও খানকায় হামলা, আগুন দেওয়া ও গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাতে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে আগুন দেওয়ার ঘটনা চরম অসহিষ্ণুতার প্রতীক হিসেবে আলোচিত হয়। জুলাই ও আগস্টে রংপুর ও খাগড়াছড়িতে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলা, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর, নভেম্বরে মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা এবং ঢাকার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। এসব ঘটনার পেছনে বিদ্বেষ, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, গুজব এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধ বড় ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক ছিল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা।
২০২৫ সাল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ছিল ব্যাপক পরিবর্তন ও অস্থিরতার বছর। এই বছরটিকে অনেকেই ‘নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের বছর’ বলে অভিহিত করেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বছরের প্রথম ৯ মাসেই ২৪টির বেশি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে জনতা পার্টি বাংলাদেশ, সংখ্যালঘু অধিকারকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনতা পার্টি, আমজনতার দল এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তির মতো দলগুলোও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। এই নতুন দলগুলোর উত্থান রাজনীতিকে বহুমাত্রিক করে তোলে এবং বিশেষ করে তরুণদের সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
২০২৫ সালের অন্যতম বড় রাজনৈতিক ঘটনা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বড় বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন’ ঘোষণার দাবি তোলা হয়। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন ও দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর স্থগিতাদেশ জারি হলে তা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনা চলতে থাকে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ‘বুলডোজার মার্চ’ নামে একটি বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ধানমন্ডি ৩২-এর বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামসহ আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট স্থাপনা। এই কর্মসূচি পুরোনো রাজনৈতিক প্রতীক ও ইতিহাসের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং সমাজকে বিভক্ত প্রতিক্রিয়ার মুখে ফেলে। একই বছরের জুলাইয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপাড়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তোলে এবং সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার প্রশ্ন আবারও সামনে আনে।
২০২৫ সাল কার্যত দাবি আদায়ের প্রধান মঞ্চ হয়ে উঠেছে রাজপথ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থাহীনতা, প্রশাসনিক ধীরগতি এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অস্বচ্ছতার কারণে নানা শ্রেণি ও গোষ্ঠী তাদের ন্যায্য কিংবা বিতর্কিত দাবিগুলো আদালত বা সংলাপের টেবিলের বদলে রাস্তায় নেমে তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, চাকরিপ্রার্থী, শ্রমিক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিচয়ভিত্তিক গোষ্ঠী—সবার আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে মিছিল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি ও সংঘর্ষ। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সরকার যখন কার্যকর সংস্কার ও দৃশ্যমান ফল দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন রাজপথই হয়ে ওঠে চাপ তৈরির সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। ফলে ২০২৫ সালকে দাবি আদায়ের নামে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন, সড়কের দখল প্রতিষ্ঠার বছর বলা যায়।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর এটা হবে প্রথম জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে যেমন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা তৈরি হয়েছে, তেমনি অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও প্রবল। বিএনপি, ইসলামি দল এবং নতুন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অংশগ্রহণে এই নির্বাচন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বছর ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ নামে একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে আসে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা, দ্বিকক্ষীয় সংসদ, পুলিশ কমিশন ও প্রশাসনিক সংস্কারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামো নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়।
২০২৫ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন হওয়া। তাঁর প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি এনে দেয় এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়। একই সঙ্গে বছরজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর চাপ, মিডিয়া অফিসে হামলা এবং প্রেসের স্বাধীনতা-সংকট রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তোলে।
সরকার পুরো বছর দ্বিমুখী ব্যর্থতার ভার বয়ে বেড়িয়েছে, একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চরম অক্ষমতা, অন্যদিকে প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান নিষ্ক্রিয়তা। মব সহিংসতা, গুজবনির্ভর হামলা ও প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড যখন একের পর এক ঘটেছে, তখন রাষ্ট্র কার্যত দর্শকের ভূমিকায় থেকেছে; অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে দেখা গেছে ধীর তদন্ত, অস্পষ্ট বক্তব্য ও দায় এড়ানোর সংস্কৃতি। একই সঙ্গে প্রশাসনিক, পুলিশ ও রাজনৈতিক সংস্কারের নামে যে উচ্চাশার কথা বলা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই কাগজে-কলমে আটকে থেকেছে—না গঠনগত পরিবর্তন এসেছে, না জবাবদিহির কাঠামো শক্ত হয়েছে। ফলে জনগণের কাছে সরকারের চিত্র দাঁড়িয়েছে এমন এক ব্যবস্থার, যা না পারে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, না পারে নিজেকে সংস্কার করে বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্রে রূপ নিতে।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সাল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো ছিল না। এই বছরের ঘটনাপ্রবাহ আগামী দশকজুড়ে দেশের রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তাকে যে প্রভাবিত করবে, সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। তবে হতাশা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার ভার পেছনে ফেলে মানুষ এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায়। মানুষ চায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, রাজপথের হানাহানি ও সহিংসতার অবসান, সমাজে শান্তি ও স্বস্তির প্রত্যাবর্তন। দিন শেষে রাষ্ট্রচিন্তার সব জটিলতার বাইরে সাধারণ মানুষের চাওয়া খুব সামান্য—দুমুঠো খাবারের নিশ্চয়তা, মাথা গোঁজার নিরাপদ একটি ঠাঁই আর নির্ভয়ে ঘুমানোর অধিকার।
প্রশ্ন শুধু একটাই—এই ন্যূনতম মানবিক প্রত্যাশার জন্য দেশবাসীকে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে?
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
২ দিন আগেড. জিয়াউদ্দিন হায়দার

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
এমন সংকট-সংকুল মুহূর্তে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা জনমানসে নতুন আলো জ্বালিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলা এবং আশাজাগানিয়া এই রূপরেখা মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, নীতি ও দর্শনের একটি সুসংহত প্রতিফলন।
যেহেতু রাষ্ট্র নির্মাণের সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হলো সবার আগে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা; সেহেতু ৩১ দফার ভেতরে স্বাস্থ্যসেবা একটি কেন্দ্রীয় অক্ষরূপে স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে ২৬ নম্বর দফা, যেখানে স্বাস্থ্যসেবাকে কেন্দ্র করে যে সর্বজনীন নৈতিক অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়েছে, তা কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়; বরং রাষ্ট্র ও নাগরিক সম্পর্কের ভেতরে এক নতুন সামাজিক চুক্তির ইঙ্গিত দেয়।
২৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” ও “বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়” নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।’
এই একই দফায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা হবে; জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং দারিদ্র্যবিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে।’
এই দফায় যে চিত্র উঠে আসে তা হলো একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক, মানবমুখী রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি—যেখানে চিকিৎসা কোনো বিলাস নয়, কোনো দলীয় অনুগ্রহ নয়, বরং একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার।
এই ২৬ নম্বর দফাটি শুধু নির্বাচনমুখী প্রতিশ্রুতি নয়; এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি নৈতিক রূপরেখা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকে আর কল্যাণনীতির একটি ঐচ্ছিক উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে না; চিকিৎসা এখন রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের মৌলিক সম্পর্কের অংশ হয়ে উঠছে। তারেক রহমান যে বারবার বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু হবে না’, এটি কেবল স্লোগান নয়; বরং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তিকে সামনে আনার প্রয়াস।
চিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। এটি শুধু মানবিক বিবেচনা নয়, রাষ্ট্রের প্রতি তার আস্থারও মৌলিক নিশ্চয়তা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেল যে সামাজিক নিরাপত্তার এক ঐতিহাসিক কাঠামো, বিএনপি সেই ধারণাটিকে বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নিজের রূপরেখায় স্থাপন করেছে, যা রাজনৈতিক সাহস ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আজ যেভাবে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে, তার শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যখন অপুষ্টি, গুটিবসন্ত, ডায়রিয়া, কলেরা এবং নানা মহামারির ছোবলে বিপর্যস্ত, তখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম বাংলাদেশের আধুনিক জনস্বাস্থ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাষ্ট্র যখন নিজস্ব সক্ষমতা নিয়ে সংগ্রাম করছিল, তখন জিয়ার ১৯ দফার ভেতরে ‘দেশবাসীর ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত’ শুধু একটি রাজনৈতিক ঘোষণা ছিল না; বরং সে সময়ের বাস্তবতায় এটি ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী, প্রায় বিপ্লবাত্মক এক মানবিক প্রতিশ্রুতি।
এই ঐতিহাসিক ভিত্তি আরও দৃঢ় হয় ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির বিস্তারের মাধ্যমে। বিশেষত টিটেনাস টিকার জাতীয়করণ ও তার ব্যাপক প্রয়োগ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের মানচিত্রে অনন্য এক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। আজ তারেক রহমানের বক্তব্য ও দলীয় স্বাস্থ্যনীতি সেই ঐতিহাসিক পুঁজিকে সামনে এনে নতুন পথ দেখাচ্ছে—এটি ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের নকশা নির্মাণের একটি সুসংহত প্রক্রিয়া।
স্বাস্থ্য কেবল চিকিৎসাসেবা নয়, এটি ন্যায়বিচারের মতোই একটি মৌলিক অধিকার, একটি সামাজিক চুক্তির ভিত্তিস্বরূপ। রাষ্ট্রের মূল ভূমিকা হলো নাগরিকের জীবন রক্ষা, তার মৌলিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা তার অন্যতম স্পষ্ট প্রতিফলন।
তাই বিএনপির প্রস্তাবিত হেলথ কার্ড ব্যবস্থা, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিনা মূল্যে প্রাথমিক সেবা, ২৪ ঘণ্টার জরুরি চিকিৎসা, ওষুধের সহজলভ্যতা—এসবকে দলীয় প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। প্রকৃত অর্থে এগুলো রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের মর্যাদাবোধের প্রতিদিনের নিশ্চয়তা।
তবে এই রূপরেখাকে আরও শক্ত ভিত্তি দেওয়ার জন্য কিছু বাস্তবায়নমূলক উদ্যোগ বিবেচনায় আনা যেতে পারে। যেমন প্রতিটি জেলায় ‘হেলথ অ্যাকসেস সেন্টার’ গঠন করা যেতে পারে, যেখানে নাগরিকেরা হেলথ কার্ডের সেবা যাচাই, অভিযোগ দায়ের এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধসামগ্রী পাবে। সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়নকে যেকোনো সরকারের প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা গেলে দ্রুত দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কমিউনিটি ক্লিনিককে দলীয় প্রকল্পের বাইরে এনে জাতীয় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অংশ হিসেবে পুনর্গঠন করা উচিত, যেন এটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ভেঙে না পড়ে। স্বাস্থ্য বাজেট প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে একটি ‘নিউ ন্যাশনাল হেলথ কোর’ গঠন করা যেতে পারে, যারা জরুরি মুহূর্তে ফার্স্ট রেসপন্ডার বা গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। আর হাসপাতাল সেবার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘পাবলিক হেলথ অডিট’ বাধ্যতামূলক করা হলে জনগণের আস্থা পুনর্গঠিত হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শহীদ জিয়ার ‘ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত’-এর যে মানবিক আদর্শ, বিএনপির ৩১ দফায় তা আরও আধুনিক, ব্যবস্থাপ্রধান ও নাগরিককেন্দ্রিক আকারে ফিরে এসেছে। সরকার বদলাতে পারে, রাজনৈতিক প্রতীক পাল্টাতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও মর্যাদাই রাষ্ট্রের শেষ কথা।
তাই বিএনপির নতুন স্বাস্থ্যনীতি শুধু দলীয় ইশতেহারের অংশ নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র নির্মাণের একটি নৈতিক নির্দেশনা হতে পারে। এটি হতে পারে একটি নতুন সামাজিক চুক্তির সূচনা, যেখানে রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অপরকে পুনরায় চিনবে এবং নতুন আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে।
লেখক: উপদেষ্টা, বিএনপির চেয়ারপারসন

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
এমন সংকট-সংকুল মুহূর্তে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা জনমানসে নতুন আলো জ্বালিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলা এবং আশাজাগানিয়া এই রূপরেখা মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, নীতি ও দর্শনের একটি সুসংহত প্রতিফলন।
যেহেতু রাষ্ট্র নির্মাণের সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হলো সবার আগে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা; সেহেতু ৩১ দফার ভেতরে স্বাস্থ্যসেবা একটি কেন্দ্রীয় অক্ষরূপে স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে ২৬ নম্বর দফা, যেখানে স্বাস্থ্যসেবাকে কেন্দ্র করে যে সর্বজনীন নৈতিক অঙ্গীকার প্রকাশ করা হয়েছে, তা কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়; বরং রাষ্ট্র ও নাগরিক সম্পর্কের ভেতরে এক নতুন সামাজিক চুক্তির ইঙ্গিত দেয়।
২৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” ও “বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়” নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।’
এই একই দফায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা হবে; জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং দারিদ্র্যবিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে।’
এই দফায় যে চিত্র উঠে আসে তা হলো একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক, মানবমুখী রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি—যেখানে চিকিৎসা কোনো বিলাস নয়, কোনো দলীয় অনুগ্রহ নয়, বরং একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার।
এই ২৬ নম্বর দফাটি শুধু নির্বাচনমুখী প্রতিশ্রুতি নয়; এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি নৈতিক রূপরেখা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকে আর কল্যাণনীতির একটি ঐচ্ছিক উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে না; চিকিৎসা এখন রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের মৌলিক সম্পর্কের অংশ হয়ে উঠছে। তারেক রহমান যে বারবার বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু হবে না’, এটি কেবল স্লোগান নয়; বরং আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার নৈতিক ভিত্তিকে সামনে আনার প্রয়াস।
চিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। এটি শুধু মানবিক বিবেচনা নয়, রাষ্ট্রের প্রতি তার আস্থারও মৌলিক নিশ্চয়তা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেল যে সামাজিক নিরাপত্তার এক ঐতিহাসিক কাঠামো, বিএনপি সেই ধারণাটিকে বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নিজের রূপরেখায় স্থাপন করেছে, যা রাজনৈতিক সাহস ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আজ যেভাবে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে, তার শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যখন অপুষ্টি, গুটিবসন্ত, ডায়রিয়া, কলেরা এবং নানা মহামারির ছোবলে বিপর্যস্ত, তখন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম বাংলাদেশের আধুনিক জনস্বাস্থ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাষ্ট্র যখন নিজস্ব সক্ষমতা নিয়ে সংগ্রাম করছিল, তখন জিয়ার ১৯ দফার ভেতরে ‘দেশবাসীর ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত’ শুধু একটি রাজনৈতিক ঘোষণা ছিল না; বরং সে সময়ের বাস্তবতায় এটি ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী, প্রায় বিপ্লবাত্মক এক মানবিক প্রতিশ্রুতি।
এই ঐতিহাসিক ভিত্তি আরও দৃঢ় হয় ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির বিস্তারের মাধ্যমে। বিশেষত টিটেনাস টিকার জাতীয়করণ ও তার ব্যাপক প্রয়োগ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের মানচিত্রে অনন্য এক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। আজ তারেক রহমানের বক্তব্য ও দলীয় স্বাস্থ্যনীতি সেই ঐতিহাসিক পুঁজিকে সামনে এনে নতুন পথ দেখাচ্ছে—এটি ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের নকশা নির্মাণের একটি সুসংহত প্রক্রিয়া।
স্বাস্থ্য কেবল চিকিৎসাসেবা নয়, এটি ন্যায়বিচারের মতোই একটি মৌলিক অধিকার, একটি সামাজিক চুক্তির ভিত্তিস্বরূপ। রাষ্ট্রের মূল ভূমিকা হলো নাগরিকের জীবন রক্ষা, তার মৌলিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা তার অন্যতম স্পষ্ট প্রতিফলন।
তাই বিএনপির প্রস্তাবিত হেলথ কার্ড ব্যবস্থা, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিনা মূল্যে প্রাথমিক সেবা, ২৪ ঘণ্টার জরুরি চিকিৎসা, ওষুধের সহজলভ্যতা—এসবকে দলীয় প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। প্রকৃত অর্থে এগুলো রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের মর্যাদাবোধের প্রতিদিনের নিশ্চয়তা।
তবে এই রূপরেখাকে আরও শক্ত ভিত্তি দেওয়ার জন্য কিছু বাস্তবায়নমূলক উদ্যোগ বিবেচনায় আনা যেতে পারে। যেমন প্রতিটি জেলায় ‘হেলথ অ্যাকসেস সেন্টার’ গঠন করা যেতে পারে, যেখানে নাগরিকেরা হেলথ কার্ডের সেবা যাচাই, অভিযোগ দায়ের এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধসামগ্রী পাবে। সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়নকে যেকোনো সরকারের প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা গেলে দ্রুত দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কমিউনিটি ক্লিনিককে দলীয় প্রকল্পের বাইরে এনে জাতীয় স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অংশ হিসেবে পুনর্গঠন করা উচিত, যেন এটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ভেঙে না পড়ে। স্বাস্থ্য বাজেট প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে একটি ‘নিউ ন্যাশনাল হেলথ কোর’ গঠন করা যেতে পারে, যারা জরুরি মুহূর্তে ফার্স্ট রেসপন্ডার বা গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। আর হাসপাতাল সেবার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘পাবলিক হেলথ অডিট’ বাধ্যতামূলক করা হলে জনগণের আস্থা পুনর্গঠিত হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শহীদ জিয়ার ‘ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত’-এর যে মানবিক আদর্শ, বিএনপির ৩১ দফায় তা আরও আধুনিক, ব্যবস্থাপ্রধান ও নাগরিককেন্দ্রিক আকারে ফিরে এসেছে। সরকার বদলাতে পারে, রাজনৈতিক প্রতীক পাল্টাতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও মর্যাদাই রাষ্ট্রের শেষ কথা।
তাই বিএনপির নতুন স্বাস্থ্যনীতি শুধু দলীয় ইশতেহারের অংশ নয়; এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র নির্মাণের একটি নৈতিক নির্দেশনা হতে পারে। এটি হতে পারে একটি নতুন সামাজিক চুক্তির সূচনা, যেখানে রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অপরকে পুনরায় চিনবে এবং নতুন আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে।
লেখক: উপদেষ্টা, বিএনপির চেয়ারপারসন

দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে এটি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব নয়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে শীত তীব্র, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। সঙ্গে চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তি। তবে এই কুয়াশা যে কেটে যাবে এবং তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে, সেই সম্ভাবনার কথাও তারা বলছে।
এ কথা সবার জানা যে কুয়াশা যতই ঘন হোক না কেন, একসময় তা কেটে যায়। কিন্তু পরিবেশ যতটুকু সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, সেই সময়টুকুতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ কথাটা আবার অনেকে মনে রাখেন না। বিশেষ করে যাঁরা যানবাহন চালান। তাই এই সময়টায় দুর্ঘটনাও কম হয় না। যেমন বরিশালের মুলাদীর দুর্ঘটনার কথা বলা যায়।
২৮ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুলাদী যাওয়ার পথে মেঘনা নদীতে একটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগে নোঙর করা একটি মালবাহী জাহাজের। এতে একটি শিশুসহ অন্তত পাঁচ যাত্রী আহত হয়। দুর্ঘটনায় লঞ্চটির দোতলার বাঁ পাশের একটি অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।
২৯ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ছাপা খবরটি থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার কারণ ঘন কুয়াশা। যদিও লঞ্চের চালক সতর্কতা অবলম্বন করেছেন বলে দাবি করেন। ঢাকা থেকে লঞ্চটি যাত্রা করার পর ঘন কুয়াশার কারণে রাতে তা চাঁদপুরে নোঙর করা হয়। সকালে কুয়াশা কিছুটা কেটে গেলে ফের যাত্রা করে যানটি। পদ্মা থেকে মেঘনা নদীতে প্রবেশের সময় হঠাৎ কুয়াশা আরও বেড়ে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ভালো কথা এই যে যাত্রীদের নিরাপদে মুলাদী লঞ্চঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শীতকালে কুয়াশা বেড়ে গেলে এ রকম দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ রকম সতর্কতা সড়কপথেও জারি করা জরুরি। সবার আগে যাত্রীদের নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঘন কুয়াশায় তাঁরা ভ্রমণ করবেন কি না। যদিও যানবাহন ধীরগতিতে চলে, তবে খুব জরুরি না হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন অবস্থায় ভ্রমণ না করাই শ্রেয়।
গণমাধ্যমের খবরগুলো বলে দেয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দ্বারা প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। এসব রিকশার চালকেরা গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘন কুয়াশার সময় এই চালকেরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন না করলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যাবে না। যাত্রীদেরও উচিত হবে চালককে যাত্রা শুরুর আগে থেকেই সচেতন করে দেওয়া। কুয়াশার ঘনত্ব কেটে জনজীবনে স্বস্তি নামুক।

বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে এটি শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব নয়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে শীত তীব্র, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। সঙ্গে চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তি। তবে এই কুয়াশা যে কেটে যাবে এবং তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে, সেই সম্ভাবনার কথাও তারা বলছে।
এ কথা সবার জানা যে কুয়াশা যতই ঘন হোক না কেন, একসময় তা কেটে যায়। কিন্তু পরিবেশ যতটুকু সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, সেই সময়টুকুতে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ কথাটা আবার অনেকে মনে রাখেন না। বিশেষ করে যাঁরা যানবাহন চালান। তাই এই সময়টায় দুর্ঘটনাও কম হয় না। যেমন বরিশালের মুলাদীর দুর্ঘটনার কথা বলা যায়।
২৮ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুলাদী যাওয়ার পথে মেঘনা নদীতে একটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগে নোঙর করা একটি মালবাহী জাহাজের। এতে একটি শিশুসহ অন্তত পাঁচ যাত্রী আহত হয়। দুর্ঘটনায় লঞ্চটির দোতলার বাঁ পাশের একটি অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।
২৯ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ছাপা খবরটি থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার কারণ ঘন কুয়াশা। যদিও লঞ্চের চালক সতর্কতা অবলম্বন করেছেন বলে দাবি করেন। ঢাকা থেকে লঞ্চটি যাত্রা করার পর ঘন কুয়াশার কারণে রাতে তা চাঁদপুরে নোঙর করা হয়। সকালে কুয়াশা কিছুটা কেটে গেলে ফের যাত্রা করে যানটি। পদ্মা থেকে মেঘনা নদীতে প্রবেশের সময় হঠাৎ কুয়াশা আরও বেড়ে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ভালো কথা এই যে যাত্রীদের নিরাপদে মুলাদী লঞ্চঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শীতকালে কুয়াশা বেড়ে গেলে এ রকম দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ রকম সতর্কতা সড়কপথেও জারি করা জরুরি। সবার আগে যাত্রীদের নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঘন কুয়াশায় তাঁরা ভ্রমণ করবেন কি না। যদিও যানবাহন ধীরগতিতে চলে, তবে খুব জরুরি না হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন অবস্থায় ভ্রমণ না করাই শ্রেয়।
গণমাধ্যমের খবরগুলো বলে দেয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দ্বারা প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। এসব রিকশার চালকেরা গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘন কুয়াশার সময় এই চালকেরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন না করলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যাবে না। যাত্রীদেরও উচিত হবে চালককে যাত্রা শুরুর আগে থেকেই সচেতন করে দেওয়া। কুয়াশার ঘনত্ব কেটে জনজীবনে স্বস্তি নামুক।

দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
১৬ ঘণ্টা আগে
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
২ দিন আগেকোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আজাদুর রহমান চন্দন

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালটি বাংলাদেশের জন্য এক গভীর আলোড়ন ও পুনর্গঠনের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় এই বছরটি ছিল নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা খোঁজার, ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এবং একই সঙ্গে ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার বছর।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এ কথা শুধু রাজনৈতিক অভিঘাত বোঝাতে বলা নয়; বরং জনজীবনের নিত্য অভিজ্ঞতা, জীবিকার অনিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং দীর্ঘ অস্থিরতার পরে একটি সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থার লক্ষ্যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সত্যটি স্পষ্ট।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না, জনগণের মনের এই কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। কিন্তু কদিন ধরে শীতের জেঁকে বসা কুয়াশা দেশের জনগণকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে