আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের পর তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর দাদা হাজী সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তাঁর জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি।
খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এর পর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন।
১৯৬০ সালের আগস্টে যখন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়, তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডিএফআইয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। খালেদা জিয়ার এক ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁর কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৩০ মে, ১৯৮১ সাল। যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো, তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশুসন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে কাটছিল তাঁর সাধারণ জীবন। রাজনীতি, ক্ষমতা বা দলের নেতৃত্ব—কোনো কিছুর প্রতিই তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে টেনে নিয়ে গেল এক কঠিন রাজনৈতিক পথে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে।
জিয়াউর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তখন বিপর্যস্ত এবং নেতৃত্বশূন্য। দলের নেতারা ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত, আর তাঁদের মধ্যে কোন্দলও ছিল প্রবল। এই পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ৭৮ বছর বয়সী এবং রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হিসেবে বিবেচিত আব্দুস সাত্তারকে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পছন্দ করতেন। কারণ, তাঁরা জানতেন, তাঁর দুর্বল চিত্তের কারণে সামরিক বাহিনীর জন্য ক্ষমতা দখল করা সহজ হবে।

বিএনপিতে যখন কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক করার আলোচনা চলছিল, ঠিক তখনই সামরিক ও শাসকচক্রের মনে সবচেয়ে বড় ভয় তৈরি হয় খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারণ, দলের একটি অংশ মনে করত, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য খালেদা জিয়াই ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তাঁর 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা' বইতে লিখেছেন, ‘বেগম জিয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইতেন, তাহলে অন্য কারো প্রার্থী হওয়ার তখন আর প্রশ্ন উঠতো না।’ কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের ইচ্ছানুযায়ী তড়িঘড়ি করে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মানসিক ধকল এবং পারিবারিক অনীহার কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার কোনো আগ্রহ ছিল না। তিনি হয়তো ভাবতে শুরু করেছিলেন, রাজনীতি মানুষকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর বাবাও মেয়ের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না।
তবে বিচারপতি সাত্তারের বার্ধক্য এবং দল পরিচালনায় অসন্তোষের কারণে তৎকালীন বিএনপির একাংশ তাঁকে রাজনীতিতে আনার পরিকল্পনা করে। দলের নেতা-কর্মীরা দিনের পর দিন তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি দলের হাল না ধরলে বিএনপি টিকবে না। দলীয় ঐক্যের জন্য 'আপস ফর্মুলা' হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। কারণ, তিনি ক্ষমতা দখলের দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং জানতেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে।
কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, নুরুল ইসলাম শিশু, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, জমির উদ্দিন সরকার এবং মওদুদ আহমদের মতো সিনিয়র নেতারা তাঁকে রাজনীতিতে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

অবশেষে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকালে তিনি প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য দেন।
১৯৮২ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে আবার চরম বিভক্তি দেখা দেয়। খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার—উভয়ই প্রার্থী হন। বিচারপতি সাত্তার তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনুরোধ জানালেও খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত দলের ঐক্যের স্বার্থে তিনি তাঁর প্রার্থীর পদ প্রত্যাহার করেন।
কিন্তু এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাত্তারের রাজনৈতিক গুরুত্ব এতে সম্পূর্ণ ফুরিয়ে যায়। আনুষ্ঠানিক চেয়ারম্যান সাত্তার থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।
১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন হন এবং এপ্রিলের প্রথম দিকে বর্ধিত সভায় ভাষণ দেন। এক বছরের মধ্যেই, ১৯৮৪ সালের ১০ই মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। মওদুদ আহমদ দাবি করেন, এই পদে তাঁকে দেখতে সামরিক বা গোয়েন্দা বিভাগ কেউই চায়নি, কিন্তু দলের কর্মীদের চাপে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়।

চেয়ারম্যান হওয়ার পর খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও তিনি আন্দোলন থেকে সরে যাননি।
জেনারেল এরশাদের পতনের পর, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিজয় লাভ করে। রাজনীতিতে আসার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬—দুই মেয়াদে সরকার পরিচালনা করে।
রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, খালেদা জিয়া তার সবগুলোতে জয়ী হয়েছেন। তবে ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয় এবং বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর দলটি আরও গভীর সংকটে নিপতিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলাগুলো শেষ জীবনে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
২০১৮ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি হন এবং পরে নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে থাকলেও নানা বিধিনিষেধের কারণে রাজনীতিতে অংশ নিতে বা বিদেশ যেতে পারেননি। এমন চিকিৎসার জন্যও তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। অবশেষে গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করা হয়। এরপর ৭ আগস্ট তিনি মুক্তি পান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গৃহবধূর এমন চমকপ্রদ উত্থান ও আপসহীন সংগ্রাম বহু বিতর্ক সত্ত্বেও ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: 'বিএনপি: সময়-অসময়', লেখক: মহিউদ্দিন আহমদ; 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা', মওদুদ আহমদ, বিবিসি

বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের পর তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর দাদা হাজী সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তাঁর জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি।
খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এর পর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন।
১৯৬০ সালের আগস্টে যখন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়, তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডিএফআইয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। খালেদা জিয়ার এক ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁর কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৩০ মে, ১৯৮১ সাল। যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো, তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশুসন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে কাটছিল তাঁর সাধারণ জীবন। রাজনীতি, ক্ষমতা বা দলের নেতৃত্ব—কোনো কিছুর প্রতিই তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে টেনে নিয়ে গেল এক কঠিন রাজনৈতিক পথে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে।
জিয়াউর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তখন বিপর্যস্ত এবং নেতৃত্বশূন্য। দলের নেতারা ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত, আর তাঁদের মধ্যে কোন্দলও ছিল প্রবল। এই পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ৭৮ বছর বয়সী এবং রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হিসেবে বিবেচিত আব্দুস সাত্তারকে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পছন্দ করতেন। কারণ, তাঁরা জানতেন, তাঁর দুর্বল চিত্তের কারণে সামরিক বাহিনীর জন্য ক্ষমতা দখল করা সহজ হবে।

বিএনপিতে যখন কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক করার আলোচনা চলছিল, ঠিক তখনই সামরিক ও শাসকচক্রের মনে সবচেয়ে বড় ভয় তৈরি হয় খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারণ, দলের একটি অংশ মনে করত, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য খালেদা জিয়াই ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি। প্রয়াত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ তাঁর 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা' বইতে লিখেছেন, ‘বেগম জিয়া যদি প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চাইতেন, তাহলে অন্য কারো প্রার্থী হওয়ার তখন আর প্রশ্ন উঠতো না।’ কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের ইচ্ছানুযায়ী তড়িঘড়ি করে বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মানসিক ধকল এবং পারিবারিক অনীহার কারণে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসার কোনো আগ্রহ ছিল না। তিনি হয়তো ভাবতে শুরু করেছিলেন, রাজনীতি মানুষকে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর বাবাও মেয়ের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না।
তবে বিচারপতি সাত্তারের বার্ধক্য এবং দল পরিচালনায় অসন্তোষের কারণে তৎকালীন বিএনপির একাংশ তাঁকে রাজনীতিতে আনার পরিকল্পনা করে। দলের নেতা-কর্মীরা দিনের পর দিন তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি দলের হাল না ধরলে বিএনপি টিকবে না। দলীয় ঐক্যের জন্য 'আপস ফর্মুলা' হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়া হয়। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। কারণ, তিনি ক্ষমতা দখলের দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং জানতেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে।
কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন, নুরুল ইসলাম শিশু, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, জমির উদ্দিন সরকার এবং মওদুদ আহমদের মতো সিনিয়র নেতারা তাঁকে রাজনীতিতে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

অবশেষে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকালে তিনি প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য দেন।
১৯৮২ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে আবার চরম বিভক্তি দেখা দেয়। খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার—উভয়ই প্রার্থী হন। বিচারপতি সাত্তার তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনুরোধ জানালেও খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। শেষ পর্যন্ত দলের ঐক্যের স্বার্থে তিনি তাঁর প্রার্থীর পদ প্রত্যাহার করেন।
কিন্তু এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। সাত্তারের রাজনৈতিক গুরুত্ব এতে সম্পূর্ণ ফুরিয়ে যায়। আনুষ্ঠানিক চেয়ারম্যান সাত্তার থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।
১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন হন এবং এপ্রিলের প্রথম দিকে বর্ধিত সভায় ভাষণ দেন। এক বছরের মধ্যেই, ১৯৮৪ সালের ১০ই মে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। মওদুদ আহমদ দাবি করেন, এই পদে তাঁকে দেখতে সামরিক বা গোয়েন্দা বিভাগ কেউই চায়নি, কিন্তু দলের কর্মীদের চাপে তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়।

চেয়ারম্যান হওয়ার পর খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও তিনি আন্দোলন থেকে সরে যাননি।
জেনারেল এরশাদের পতনের পর, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির বিজয় লাভ করে। রাজনীতিতে আসার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তাঁর নেতৃত্বেই বিএনপি ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬—দুই মেয়াদে সরকার পরিচালনা করে।
রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, খালেদা জিয়া তার সবগুলোতে জয়ী হয়েছেন। তবে ২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার একের পর এক বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয় এবং বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের পর দলটি আরও গভীর সংকটে নিপতিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলাগুলো শেষ জীবনে তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
২০১৮ সাল থেকে তিনি কারাবন্দি হন এবং পরে নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে থাকলেও নানা বিধিনিষেধের কারণে রাজনীতিতে অংশ নিতে বা বিদেশ যেতে পারেননি। এমন চিকিৎসার জন্যও তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। অবশেষে গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করা হয়। এরপর ৭ আগস্ট তিনি মুক্তি পান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গৃহবধূর এমন চমকপ্রদ উত্থান ও আপসহীন সংগ্রাম বহু বিতর্ক সত্ত্বেও ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: 'বিএনপি: সময়-অসময়', লেখক: মহিউদ্দিন আহমদ; 'চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা', মওদুদ আহমদ, বিবিসি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
৩ ঘণ্টা আগে
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি নির্ধারণে আয়োজিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল।
ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ও কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকবই খোলা হবে।
সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।
সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’
স্মৃতিচারণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ উনার সাথে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এ সময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য জানিয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি নির্ধারণে আয়োজিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল।
ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক ও কাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’
সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়েও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকবই খোলা হবে।
সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
মির্জা ফখরুল জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও এর সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।
সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’
স্মৃতিচারণা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ উনার সাথে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এ সময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডন
৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
৩ ঘণ্টা আগে
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
দলীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে তাঁর রক্তচাপ কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হয়। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে হাজারো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে বন্দিদশায়। পাঁচবার কারাবরণ করা এই নেত্রীর জেলজীবন ছিল আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসার পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়েছেন তিনি। এই সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর—এই তিন দফায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সেসব ক্ষেত্রে তাঁকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা সম্ভব হয়নি, তবে এই গ্রেপ্তারগুলোই তাঁকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তাঁকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে বন্দী রাখা হয়।
জেলখানায় দুই ঈদ: এই কারাবাসকালে তিনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা—উভয় উৎসবই নির্জন প্রকোষ্ঠে পালন করেন। ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন।
সন্তানদের বন্দিত্ব ও শোক: সেই সময় তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোও কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মাত্র ৬ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের লাশ দেখার অনুমতি পান। প্রায় ৩৭২ দিন বন্দী থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
জিয়ার জেলজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।
একমাত্র বন্দী: একটি বিশাল পরিত্যক্ত কারাগারে তিনি ছিলেন একমাত্র বন্দী। সেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি ও গৃহবন্দিত্ব: ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির সময় সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে তাঁর সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। কিন্তু ফিরোজা বাসভবনে থাকলেও সেটি ছিল মূলত একধরনের গৃহবন্দিত্ব। সেখানে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরপরই রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে তাঁর দণ্ড মওকুফ করা হয়। দীর্ঘ আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের পর গত ২৭ নভেম্বর তিনি সব মামলা থেকে সসম্মানে খালাস পান। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে তিনি অন্তত এই সান্ত্বনা নিয়ে গেছেন যে তিনি একটি স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করছেন।
খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নারী শিক্ষা প্রসারে উপবৃত্তি চালু, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির এক অনন্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
দলীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে তাঁর রক্তচাপ কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হয়। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে হাজারো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে বন্দিদশায়। পাঁচবার কারাবরণ করা এই নেত্রীর জেলজীবন ছিল আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
১৯৮২ সালে রাজনীতিতে আসার পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়েছেন তিনি। এই সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর—এই তিন দফায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও সেসব ক্ষেত্রে তাঁকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা সম্ভব হয়নি, তবে এই গ্রেপ্তারগুলোই তাঁকে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তাঁকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে বন্দী রাখা হয়।
জেলখানায় দুই ঈদ: এই কারাবাসকালে তিনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা—উভয় উৎসবই নির্জন প্রকোষ্ঠে পালন করেন। ঈদের দিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন।
সন্তানদের বন্দিত্ব ও শোক: সেই সময় তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোও কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর মাত্র ৬ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি মায়ের লাশ দেখার অনুমতি পান। প্রায় ৩৭২ দিন বন্দী থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
জিয়ার জেলজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।
একমাত্র বন্দী: একটি বিশাল পরিত্যক্ত কারাগারে তিনি ছিলেন একমাত্র বন্দী। সেখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটে। পরে তাঁকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি ও গৃহবন্দিত্ব: ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির সময় সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে তাঁর সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। কিন্তু ফিরোজা বাসভবনে থাকলেও সেটি ছিল মূলত একধরনের গৃহবন্দিত্ব। সেখানে বাইরের কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এরপরই রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে তাঁর দণ্ড মওকুফ করা হয়। দীর্ঘ আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের পর গত ২৭ নভেম্বর তিনি সব মামলা থেকে সসম্মানে খালাস পান। মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে তিনি অন্তত এই সান্ত্বনা নিয়ে গেছেন যে তিনি একটি স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করছেন।
খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নারী শিক্ষা প্রসারে উপবৃত্তি চালু, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডন
৬ ঘণ্টা আগে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
২ ঘণ্টা আগে
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় তাঁর অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
দেশের এই রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে একজন ‘অভিভাবকের’ মৃত্যুতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল একদিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয় গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে।
সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’
স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এসময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাঁর চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক যাত্রায় তাঁর অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
দেশের এই রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে একজন ‘অভিভাবকের’ মৃত্যুতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শুরুতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও আগামীকাল একদিনের সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় যা পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোকের তিন দিন দেশের সব সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে আগামীকাল দেশের প্রতিটি মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয় গুলোতেও আয়োজন হবে বিশেষ প্রার্থনার।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে।
সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজা সম্পর্কিত বিষয়ে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’
স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সর্বশেষ ওনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে, এসময় তাঁর উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তাঁর চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডন
৬ ঘণ্টা আগে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
৩ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন। ফেনী থেকে বগুড়া, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম—তাঁর জনপ্রিয়তা দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রমাণিত হয়েছে। ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই বিজয়ী হওয়ার এই কীর্তি দেশের ইতিহাসে বিরল।
নির্বাচনের পরিক্রমা: ১৯৯১ থেকে ২০০৮
১৯৯১: প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও রাজকীয় প্রত্যাবর্তন
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে লড়ে সব কটিতে বিপুল ভোটে জয়ী হন।
আসন: বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮।
ফলাফল: এই জয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছিল।
১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি): স্বল্পস্থায়ী ষষ্ঠ সংসদ
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
আসন: ফেনী-১ ও ২, বগুড়া-৭, সিরাজগঞ্জ-২ ও রাজশাহী-২।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই সংসদেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয় এবং মাত্র ১১ দিনের মাথায় তিনি পদত্যাগ করে গণতন্ত্রের নতুন পথ প্রশস্ত করেন।
১৯৯৬ (জুন): প্রতিকূল পরিবেশেও অটুট জনপ্রিয়তা
১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও খালেদা জিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১।
ফলাফল: পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই তিনি বিজয়ী হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করেন।
২০০১: রেকর্ড ভোটে বিজয় ও তৃতীয় মেয়াদ
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২।
পরিসংখ্যান: এই নির্বাচনে তিনি প্রতিটি আসনে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পান। বিশেষ করে বগুড়া-৬ আসনে তিনি ২,২৭,৩৫৫ ভোট (৭৮.৯%) পেয়েছিলেন। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৮: আইনি সীমাবদ্ধতা ও নিরঙ্কুশ আধিপত্য
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজনের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে লড়ার বিধান করলে তিনি বাধ্য হয়ে আসনসংখ্যা কমিয়ে আনেন।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
ফলাফল: বরাবরের মতো তিনটি আসনেই তিনি বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হন। বগুড়া-৬ আসনে তিনি ১,৯৩,৭৯২ ভোট এবং বগুড়া-৭ আসনে ২,৩২,৭১৬ ভোট পান।
কেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, খালেদা জিয়ার এই দীর্ঘকালীন অজেয় থাকার মূলে রয়েছে তাঁর ‘আপসহীন’ রাজনৈতিক অবস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কখনোই অসংযত কথা বলেননি। তাঁর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আচরণ ও দৃঢ়তা ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে টেলিভিশনে দেওয়া তাঁর একটি ভাষণ তৎকালীন সব রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিয়েছিল।’
একনজরে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস:

জনগণের প্রতি অটল অঙ্গীকার এবং দেশপ্রেম তাঁকে দল-মতনির্বিশেষে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক অপরাজেয় নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যতবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ততবারই বিজয়ী হয়েছেন। ফেনী থেকে বগুড়া, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম—তাঁর জনপ্রিয়তা দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রমাণিত হয়েছে। ৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই বিজয়ী হওয়ার এই কীর্তি দেশের ইতিহাসে বিরল।
নির্বাচনের পরিক্রমা: ১৯৯১ থেকে ২০০৮
১৯৯১: প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও রাজকীয় প্রত্যাবর্তন
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে লড়ে সব কটিতে বিপুল ভোটে জয়ী হন।
আসন: বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮।
ফলাফল: এই জয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছিল।
১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি): স্বল্পস্থায়ী ষষ্ঠ সংসদ
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশগ্রহণ করে। সেই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
আসন: ফেনী-১ ও ২, বগুড়া-৭, সিরাজগঞ্জ-২ ও রাজশাহী-২।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই সংসদেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয় এবং মাত্র ১১ দিনের মাথায় তিনি পদত্যাগ করে গণতন্ত্রের নতুন পথ প্রশস্ত করেন।
১৯৯৬ (জুন): প্রতিকূল পরিবেশেও অটুট জনপ্রিয়তা
১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও খালেদা জিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১।
ফলাফল: পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই তিনি বিজয়ী হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করেন।
২০০১: রেকর্ড ভোটে বিজয় ও তৃতীয় মেয়াদ
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২।
পরিসংখ্যান: এই নির্বাচনে তিনি প্রতিটি আসনে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পান। বিশেষ করে বগুড়া-৬ আসনে তিনি ২,২৭,৩৫৫ ভোট (৭৮.৯%) পেয়েছিলেন। এই জয়ের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৮: আইনি সীমাবদ্ধতা ও নিরঙ্কুশ আধিপত্য
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজনের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে লড়ার বিধান করলে তিনি বাধ্য হয়ে আসনসংখ্যা কমিয়ে আনেন।
আসন: বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
ফলাফল: বরাবরের মতো তিনটি আসনেই তিনি বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হন। বগুড়া-৬ আসনে তিনি ১,৯৩,৭৯২ ভোট এবং বগুড়া-৭ আসনে ২,৩২,৭১৬ ভোট পান।
কেন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী?
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, খালেদা জিয়ার এই দীর্ঘকালীন অজেয় থাকার মূলে রয়েছে তাঁর ‘আপসহীন’ রাজনৈতিক অবস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কখনোই অসংযত কথা বলেননি। তাঁর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আচরণ ও দৃঢ়তা ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে টেলিভিশনে দেওয়া তাঁর একটি ভাষণ তৎকালীন সব রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিয়েছিল।’
একনজরে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস:

জনগণের প্রতি অটল অঙ্গীকার এবং দেশপ্রেম তাঁকে দল-মতনির্বিশেষে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক অপরাজেয় নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডনি, লিভার, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো পুরোনো নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফুসফুস ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ, নিউমোনিয়া এবং কিডন
৬ ঘণ্টা আগে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন’ নেত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
৩ ঘণ্টা আগে
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন তিনি।
৩ ঘণ্টা আগে