Ajker Patrika

ভিসা জটিলতায় কঠিন হচ্ছে বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ

  • জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত
  • থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য কমপক্ষে ৪৫ দিন আগে আবেদন করতে হচ্ছে
  • ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন করেছে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো
মনজুরুল ইসলাম ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ০৯: ৪১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো গত কয়েক বছরে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য। অনেকেই ভিয়েতনাম ভ্রমণের পাশাপাশি প্রতিবেশী কম্বোডিয়া ও লাওস ঘুরে আসেন। ভ্রমণে গিয়ে কেউ সেখানে থেকে যান, কেউ আবার অবৈধভাবে অন্য দেশে পাড়ি জমান। এসব কারণে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন করে তুলেছে দেশগুলো। আগে যেখানে ই-ভিসা কিংবা অন-অ্যারাইভাল সুবিধায় সহজেই ভ্রমণ করা যেত, এখন সেখানে ভিসা পেতে সময় লাগছে এক থেকে দুই মাস। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাতও হচ্ছে।

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ বা সীমিত করেছে। ফলে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে অবকাশযাপন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশীয় ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সি, এমনকি এয়ারলাইনসগুলোর ওপর।

ট্যুর অপারেটররা বলছেন, বিগত বছরগুলোয় ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশি উচ্চবিত্তের প্রধান গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অবকাশযাপনে যেতেন অনেক বাংলাদেশি। আর মধ্যবিত্তের একাংশের গন্তব্য ছিল প্রতিবেশী ভারত, ভুটান ও নেপালে; কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে বিকল্প গন্তব্য হিসেবে থাইল্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এখন সেখানে ভ্রমণের জন্য কমপক্ষে ৪৫ দিন আগে ভিসার আবেদন করতে হচ্ছে, যা সাধারণ পর্যটকদের জন্য বড় ভোগান্তি। থাইল্যান্ডের পাতায়া, ফুকেট কিংবা ব্যাংকক ছুটি কাটানোর জনপ্রিয় গন্তব্য হলেও এখন সেখানকার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার অনেক বেশি। আবার যাঁরা ভিসা পাচ্ছেন তাঁদের সময় লাগছে দেড় থেকে দুই মাস। একই অবস্থা অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশেও।

একসময় বাংলাদেশিদের জন্য ভিসামুক্ত গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় ছিল ভিয়েতনাম। কিন্তু পর্যটক হিসেবে সেখানে গিয়েও অনেক বাংলাদেশি দেশে ফেরেননি। কেউ সেখান থেকে অবৈধভাবে অন্য দেশে চলে যান। এসব কারণে দেশটি এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসাসুবিধা বাতিল করেছে ভিয়েতনাম।

একইভাবে ইন্দোনেশিয়ায়ও অন-অ্যারাইভাল ক্যাটাগরিতে আগে সহজে ভিসা মিললেও এখন সেখানে ভিসা পেতে সময় লাগছে দুই মাসের বেশি। ফিলিপাইনে আগে ১০ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন সময় লাগছে দেড় মাস।

সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াও এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা জটিলতা বাড়িয়েছে। এসব দেশেও ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে। এমনকি যাঁরা একাধিকবার দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের আবেদনও অনেক সময় বাতিল করা হচ্ছে। নতুন অনেক শর্তও আরোপ করা হচ্ছে।

দেশের পর্যটন খাতের অন্যতম সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক এবং বিজকন হলিডেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাসলিম আমিন শোভন আজকের পত্রিকাকে বলেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা রিফিউজ করছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসায় নেপাল যেতেও বাংলাদেশিরা বিমানবন্দরে নানা প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। একসময় ভিয়েতনাম অনলাইনে ই-ভিসা দিত; কিন্তু এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে। একই পথে হেঁটেছে কম্বোডিয়া ও লাওসও।

মো. তাসলিম আমিন জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস এবং মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো বাংলাদেশি পর্যটকদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শুধু ভিয়েতনামেই গত দুই বছরে ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থান করেছেন। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সহজভাবে পাওয়া ভিসা সংগ্রহ করে তা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় নিয়ে পরে ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে করে ওই সব দেশের ভিসাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রকৃত পর্যটকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধরনের অপব্যবহার ও জালিয়াতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এখন ভিসাপ্রক্রিয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে, যা পুরো পর্যটনশিল্পের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যার প্রভাবে এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকলেও বাংলাদেশিদের বিদেশে অবকাশযাপনের আগ্রহ কম ছিল।

একসময় বাংলাদেশিদের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষ করে দুবাই। মরুভূমির সাফারি, বুর্জ খলিফার সৌন্দর্য, বিলাসবহুল হোটেলে বিজনেস মিটিং—সব মিলিয়ে শহরটি ভ্রমণকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই থেকে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে দিনে গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ভিসা ইস্যু হলেও তা সাধারণ পর্যটকদের নাগালের বাইরে।

এদিকে দেশের বিত্তবান শ্রেণির বড় অংশ অবকাশের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। শেনজেনভুক্ত দেশগুলো গণহারে বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে। ২০২৪ সালেই শেনজেনভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রায় ২১ হাজার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

শেনজেন নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে গত বছর মোট ৩৯ হাজার ৩৪৫টি শেনজেন ভিসার আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৫৭টি আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়, যা মোট আবেদনের ৫৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রত্যাখ্যানের হার ছিল ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ।

মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে সহজ গন্তব্য ছিল ভারত। ভারত ভ্রমণের পাশাপাশি তাঁরা নেপাল ও ভুটানেও যেতেন, যেখানে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যেত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশিদের নেপাল ও ভুটান সফরও সীমিত হয়ে পড়েছে।

ভিসা জটিলতা বাড়ানোর তালিকায় এশিয়ার ছোট দেশগুলোও রয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমেই কমছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এখন ৯৫তম, যা উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সমান।

নোমাড ক্যাপিটালিস্ট প্রকাশিত ভিন্ন আরেকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮১তম। প্রতিষ্ঠানটির মতে, ভিসামুক্ত ভ্রমণ, কর ব্যবস্থা, বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা, দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৩৮।

কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালদিভিয়ান, থাই এয়ার এশিয়া ও এয়ার এশিয়ার জিএসএ টাস গ্রুপের পরিচালক কাজী শাহ মুজাক্কের আহাম্মেদুল হক আজকের পত্রিকাকে জানান, বর্তমানে বিভিন্ন গন্তব্যে চলা ফ্লাইটগুলোর অধিকাংশ যাত্রী প্রবাসী। পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে।

পর্যটন ও অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পর্যটক হিসেবে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি থেকে গেছেন, যা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন বা অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন।

পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পর্যটক ভিসায় বিদেশে গিয়ে ওভারস্টে, ক্ষেত্রবিশেষে থেকে যাওয়ার প্রবণতার কারণেই বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বাড়ছে এবং দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ শ্রমবাজারে আসছেন, যাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ বিদেশে যাবেন। তবে তাঁরা যেন শিক্ষিত, দক্ষ এবং বৈধ পথে যান, তা নিশ্চিত করতে হবে। ভুয়া তথ্য বা ভুয়া ভিসা ব্যবহার করে কেউ যেন বিদেশে না যেতে পারেন, সে নিশ্চয়তা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে আদালতের নির্দেশ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ এ নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ আদালতে হাদির ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি (৩৩) ১২ ডিসেম্বর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লাশ দেশে আনা হয় এবং ২০ ডিসেম্বর লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাশাত জাবীন ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন।

মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডিএনএ নমুনা সিআইডির প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।

শুনানি শেষে আদালত নির্দেশ দেন। এ ছাড়া প্রোফাইলিং ও সংরক্ষণ কার্য সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট ফরেনসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাদিকে গুলি করার পর ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটারদের উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে নতুন ওয়েবসাইট চালু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ, নারী, প্রান্তিক ভোটারসহ সব নাগরিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। ‘ফিউচার বাংলাদেশ ইউ ওয়ান্ট’ নামক এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা হবে।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও জোরদার এবং নাগরিক অংশগ্রহণকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। ওয়েবসাইটটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো—তরুণ প্রজন্মসহ সব বাংলাদেশিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। এই প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকেরা তাঁদের প্রত্যাশিত ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ সম্পর্কে সরাসরি মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।

ওয়েবসাইটটি থেকে গণতন্ত্র, সুশাসন, দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব ও নির্বাচনী অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকবে।

নির্বাচন কমিশন ও জাতিসংঘ বিশ্বাস করে, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিক অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই এই ওয়েবসাইটে নাগরিক দায়িত্ব, ভোটাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বার্তা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক হিসেবে কাজ করবে। এটি দেশের সব স্তরের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত, যা ভবিষ্যতে ইতিবাচক সংলাপ ও দায়িত্ববোধ বিকাশে সহায়ক হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনতে চলবে ১০টি বিশেষ ট্রেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহ থেকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাহিদার ভিত্তিতে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।

চাহিদার ভিত্তিতে বিশেষ ট্রেন চলবে নিম্নোক্ত রুটগুলোতে—কক্সবাজার–ঢাকা–কক্সবাজার, জামালপুর–ময়মনসিংহ–ঢাকা–জামালপুর, টাঙ্গাইল–ঢাকা–টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার–নরসিংদী–ঢাকা–নরসিংদী–ভৈরববাজার, জয়দেবপুর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়–ঢাকা–পঞ্চগড়, খুলনা–ঢাকা–খুলনা, চাটমোহর–ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট–চাটমোহর, রাজশাহী–ঢাকা–রাজশাহী এবং যশোর–ঢাকা–যশোর।

বিশেষ ট্রেন পরিচালনার কারণে স্বল্প দূরত্বের তিনটি ট্রেনের চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হবে। ট্রেনগুলো হলো—রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী–পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা–রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর–রাজশাহী)। ২৫ ডিসেম্বর এসব ট্রেনের যাত্রা এক দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।

এতে সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিশেষ ট্রেন পরিচালনা ও অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে।

স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন আচরণ বিধিমালা–২০২৫ কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করেছে দুদক। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করেছে দুদক। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের জব্দ করা চারটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুদকের কর্মকর্তারা এসব মালামাল ত্রাণ তহবিলে পৌঁছে দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আদালতের আদেশে গুলশানে অবস্থিত বেনজীর আহমেদের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও পোশাক। এর মধ্যে ছিল ১৯টি ফ্রিজ, প্রায় ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার কন্ডিশনার, আধুনিক আসবাবপত্রসহ নানা ধরনের মালামাল। এসবসহ মোট ২৪৬ ধরনের সামগ্রী ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের বসবাস করা চারটি ফ্ল্যাটে থাকা পচনশীল মালামাল এবং কিছু ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সামগ্রীর নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্য মালামাল আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণভান্ডারে জমা দেওয়া হয়।

ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা ব্যবহার্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে—১২২টি শার্ট, ২৬৬টি প্যান্ট, ৩০টি ব্লেজার, ৮টি স্যুট, ৭২২টি টি-শার্ট, ২২৪টি পাঞ্জাবি, ৪৭টি পায়জামা, ৮৮ জোড়া স্যান্ডেল, ৩৫ জোড়া কেডস, ৩৮ জোড়া জুতা, ৪৯৪টি শাড়ি, ২৫০ সেট থ্রি-পিস, ৪৯৬টি সালোয়ার-কামিজ, ২১২টি জামা, ৫৬টি জ্যাকেট, ১০৯টি বেডশিট, ৭৫টি লেডিস ভ্যানিটি ব্যাগ, ৬২২টি লেডিস টপস, ১১টি পুরুষদের সোয়েটার, ৩৪টি লেডিস সোয়েটার, ৩৫৫টি লেডিস প্যান্ট, ২৮টি লেডিস টি-শার্ট, ৩৪৭টি ওড়না, ৮৯টি শাল চাদর, ১৩২টি শীতের জামা, ১৬টি লেহেঙ্গা, ৩৪টি সানগ্লাস ও ৬৭টি ট্রাউজার।

২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

উল্লেখ্য, গুলশানের র‍্যানকন টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট একত্র করে বেনজীর দম্পতি একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন। এতে সুইমিং পুল, মিনি থিয়েটার রুম, অতিথি বিনোদনকক্ষসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা ছিল।

অনুসন্ধানী দল জানায়, ওই ফ্ল্যাটের খাট, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলমারি, ওয়ার্ডরোবসহ কিছু মূল্যবান আসবাব নিলামে তোলা হয়নি এবং ত্রাণ তহবিলেও জমা দেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই ২০২৪ সালের ৪ মে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে গোপনে দেশ ত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত