Ajker Patrika

গুম কমিশনের প্রতিবেদন

শব্দনিরোধক কক্ষে যমটুপি পরিয়ে ১০ কায়দায় চলত নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫২
গোপন বন্দিশালায় দেখা গেল ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতনের চেয়ার। ফাইল ছবি
গোপন বন্দিশালায় দেখা গেল ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতনের চেয়ার। ফাইল ছবি

গুম করে ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের জন্য শব্দনিরোধক বিশেষ কক্ষ তৈরি করেছিল র‍্যাব। যাতে নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীদের কান্নার শব্দ বাইরে থেকে শোনা না যায়। ভুক্তভোগীদের ১০ ধরনের শারীরিক নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনে শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হলে ওষুধ ও মলম দেওয়া হতো। এরপর শরীরের দাগ মুছলে তাঁদের জনসমক্ষে আসামি হিসেবে উপস্থাপন করা হতো।

এসব তথ্য উঠে এসেছে গুমসংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুম ও নির্যাতনের প্রাতিষ্ঠানিক দিক উন্মোচন করে প্রতিবেদনের একটি অংশ গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টের আগে যে গুমের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, তার পদ্ধতিগত চর্চা উন্মোচনের চেষ্টা করে কমিশন। গুম করে মানুষকে গোপন বন্দিশালায় মাস ও বছরের পর বছর রাখা হতো। এসব ব্যক্তিকে নির্যাতনের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছিল। এসব কক্ষ বিশেষ কায়দায় শব্দনিরোধক করে তৈরি করা হতো। নির্যাতনের জন্য সেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট দেওয়ার চেয়ার, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, হাত–পা বাঁধার বিশেষ রশি, নখ তুলে ফেলাসহ শারীরিক নির্যাতন করতে বিভিন্ন যন্ত্র রাখা হতো। এসব কক্ষ র‍্যাব ও ডিজিএফআই ব্যবহার করত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের জন্য র‍্যাব-২–এ সিপিসি ৩–এ বৈদ্যুতিক ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টিএফআই সেলে মানুষকে ঝুলিয়ে রাখার জন্য পুলি–সিস্টেম এবং একাধিক স্থানে শব্দনিরোধক কক্ষ তৈরি করেছিল তারা।

গুমসংক্রান্ত কমিশন নির্যাতনের গুম হওয়া মানুষের ওপর চালানো নির্যাতনের ১০টি দিক তুলে ধরেছে প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো—

সর্বব্যাপী অস্বস্তি সৃষ্টি করে রাখা হতো। এসব ব্যক্তিকে প্রহরীদের অর্ধেক খাবার দেওয়া হতো। নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে, তিনি কিছুই জানতেন না। দীর্ঘ সময় মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতেন তাঁরা।

ছোট বন্দিশালায় যেখানে ঘুমাত, সেখানেই টয়লেটের ব্যবস্থা। টয়লেটে বসলেও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হতো। বন্দিদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও অস্বস্তিকর ও ভীতিকর ছিল।

নারীদের জন্য গোপন বন্দিশালা ছিল আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি। নারীদের গুম করে অনেকটা ক্রুসিফাইডের মতো করে হাত দুই দিকে বেঁধে রাখা হতো। এভাবে শরীরে ওড়নাও রাখতে দিতো না তারা। নারীদের পিরিয়ডের সময় তাঁদের প্যাড দেওয়া হতো না। উল্টো পুরুষ প্রহরীরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করতেন। ২০১৮ সালে ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে গুম করে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। ওই নারীর বর্ণনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

অসংখ্য গুম হওয়া মানুষের নির্মম প্রহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপন বন্দিশালা থেকে ব্যক্তিদের নির্যাতনের জন্য শব্দনিরোধক কক্ষে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে কখনো চোখে গামছা বেঁধে, কখনো যমটুপি পরিয়ে হাত ওপরে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হতো।

২০২৩ সালে ডিএমপির সিটিটিসি ৪৭ বছরের এক ব্যক্তিকে গুম করে ১৪ দিন গোপন বন্দিশালায় রেখেছিল। ওই ভুক্তভোগী বলেন, ‘মারধরের সময় একাধিক লোক থাকত। দু-তিনজন মিলে পেটাত। মারতে মারতে বলত, তোর মাংস-হাড্ডি আলাদা করে ফেলব।’

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শরীরে একাধিক স্থায়ী আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছে কমিশন। ২০১৭ সালের ২৩ বছরের এক যুবককে অপহরণ করে গুম করে র‍্যাব-১১-এর সদস্যরা। তাঁকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে নিয়ে পা ওপরের দিকে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাঁর নাভীর দুপাশে নির্যাতনের এখনো দাগ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে বন্দী জীবনের বর্ণনা দেন এক ভুক্তভোগী। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার কাছে বন্দী জীবনের বর্ণনা দেন এক ভুক্তভোগী। ফাইল ছবি

ডিএমপির সিটিটিসিতে নির্যাতনের জন্য চারটি শিফট ভাগ করে নিতেন কর্মকর্তারা। ২০২২ সালে সিটিটিসি ৪৬ বছরের এক ব্যক্তিকে গুম করে ২৫৩ দিন আটকে রেখেছিল। তাঁকে টানা ২৪ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। এ জন্য চারটি শিফটে সিটিটিসির কর্মকর্তারা ভাগ হয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

হাত ছাদের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন, উল্টো করে বেঁধে নির্যাতন করতেন র‍্যাবের সদস্যরা। নির্যাতনের একটি কমন বিষয় ছিল নখ তুলে ফেলা। র‍্যাব সদস্যরা এই কাজ প্রায়ই করতেন। এ ছাড়াও নখের ভেতরে সুইচ ঢুকিয়ে দিতেন, বাঁশ দিয়ে নির্যাতন করতেন, বিশেষ চেয়ারে বসিয়ে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, ওয়াটারবেডিং অর্থাৎ মুখের ওপর গামছা দিয়ে ওপর থেকে পানি ছাড়া হতো। এ সময় তিন-চারজন টর্চার সেলের মেঝেতে হাত-পা দিয়ে চেপে ধরতেন। ভুক্তভোগীদের যৌন হয়রানি করা হতো। কেউ কেউ লজ্জায় কমিশনকে এই ঘটনা বলতে চাননি, তারপরও কয়েকজন বন্দী এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন কমিশনের কাছে। বন্দীদের প্রসবের সময় বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম করে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখায় অনেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। একজন তরুণকে ২০১৯ সালে গুম করে র‍্যাব-৩ ও গোয়েন্দা শাখা। তাঁকে ২০ মাস ১৩ দিন গুম করে রাখা হয়। র‍্যাবের নির্যাতনে তিনি এখন মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। একাকী হাসছেন, কথা বলছেন ও কাঁদছেন।

গুমসংক্রান্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, গুমের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ র‍্যাবের বিরুদ্ধে। তারা গুম করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গোপনে নির্যাতন করত। এ জন্য তাদের অনেক আয়োজন ছিল। নির্যাতনের পর আবার মেডিসিন দেওয়া হতো। যখন সুস্থ হতো, তখন একটি মামলা দিয়ে জনসমক্ষে আনা হতো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ৩৪৫ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৩
ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে যেন বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা হয়।

একই সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ করে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টাকারীরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা রোধে ভারত সরকার যেন বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করে এবং তাঁরা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে তাঁদের যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় এবং বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করে।

আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকমিশনারের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের কাছে এসব অনুরোধ জানানো হয় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে, ভারতে অবস্থানকারী পলাতক অপরাধী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিঘ্ন করাসহ আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার অসাধু উদ্দেশ্যে ক্রমাগতভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং তাঁর দলের সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন অনতিবিলম্বে তাঁর এবং ভারতে পলাতক তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের এসব ফ্যাসিস্ট টেররিস্ট কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল পুলিশ সরবরাহ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা ও আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন—সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ও তাঁর সহযোগীদের পুলিশ এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে কোনোভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে জন্য হামলার দিন রাতেই সবগুলো ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করা হয়। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‍্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা হলেও বারবার স্থান পরিবর্তনের কারণে এখনো তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ এরই মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজনের চলাচলের খতিয়ান বা ট্রাভেল হিস্ট্রি সংগ্রহ করেছে। এতে দেখা যায়, আইটি ব্যবসায়ী পরিচয়ে তিনি গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।

এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে—এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুমের মামলায় হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ২১ ডিসেম্বর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম করে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ২১ ডিসেম্বর।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আজ রোববার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন।

মামলার ১৭ আসামির মধ্যে আজ শুনানির সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ১০ সেনা কর্মকর্তা।

তাঁরা হলেন—র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খায়রুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল ও সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে ছিলেন তাবারক হোসেন। শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম ও পলাতক তিনজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুজাদ মিয়া।

আসামিদের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষা-বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন পলাতক রয়েছেন।

র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন।

পরে ওই দিনই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪ জন ব্যক্তিকে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৩
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার বিকেল ৪টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক জানান, বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন ইসির সিনিয়র সচিব।

আজ দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইজিপি, বিজিবির প্রধান, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, ডিএমপি কমিশনার, এনটিএমসির সঙ্গে আমরা আজ বৈঠকে বসব।’

এর আগে গতকাল শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, ইসির নিজস্ব তিন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ের সব অফিস ও কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের আইজিপি ও পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

গত শুক্রবার বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করছে ইসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২
সুদানে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী। ছবি: আইএসপিআর
সুদানে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী। ছবি: আইএসপিআর

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন এবং আটজন আহত হয়েছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে আজ রোববার এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক এই নৃশংস ড্রোন হামলাটি পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় কর্তব্যরত ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন। শহীদদের আত্মত্যাগ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় নিদর্শন হয়ে থাকবে।

ড্রোন হামলায় শহীদ হয়েছেন ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। তাঁরা হলেন নাটোরের কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (এএসসি), কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (বীর), রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা (বীর), কুড়িগ্রামের সৈনিক শান্ত মন্ডল (বীর), কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

হামলায় আহত হয়েছেন আটজন শান্তিরক্ষী। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়ার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (পিএসসি, অর্ডন্যান্স), দিনাজপুরের সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (বীর), ঢাকার কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (সিগন্যালস), বরগুনার ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (ইএমই), কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (বীর), রংপুরের সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার (ইঞ্জিনিয়ারিং), মানিকগঞ্জের সৈনিক চুমকি আক্তার (অর্ডন্যান্স) এবং নোয়াখালীর সৈনিক মো. মানাজির আহসান (বীর)।

আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সৈনিক মো. মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত তাঁর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অপর সাত আহত শান্তিরক্ষীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানান্তরিত সকলেই বর্তমানে শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত